দীর্ঘ কবিতা : প্রিয় পাখি সারস







প্রিয় পাখি সারস
সাদিক আল আমিন

এসো তবে পাখি সারস-
কিছু পারিবারিক আলাপচারিতা হয়ে যাক
উদাসীন অশ্বত্থের নিচে জেগে থাকে যেসব
ব্যতিগ্রস্থ ঘাসেদের উম্মাদ কেশরের মতো জীবন
তাদের নিয়ে কিছু মূল্যবান মুহূর্ত ব্যয় করি
তবে হ্যাঁ, ঘরে ফিরে যেনো না শুনি চারুলতার সরব অভিযোগ
তুমি দিয়োনা যেন তাকে কোনো নালিশ, যে লোকটা
ইদানীং ভীষণ অসামাজিক হতে শুরু করেছে !

যে মায়ের প্রসববেদনা প্রথম গর্ভ থেকেই দারুণ নীল
অস্ফুট যন্ত্রণায় যেসব পিতার সামর্থ্য ঝড়ে পড়ে সবুজপত্র ঘাসের বুকে
তারপর জন্ম নেয় তোমার মতো দুরন্ত বিহঙ্গ পাখি
তুমি তাদের মর্মদহন বোঝো ? পিতামাতার ?
অথবা পরাগায়ণ হবে এমন বিকেলে
সকল সিদ্ধান্ত, বস্তুগত আলোচনা শেষে-
স্বল্পদৈর্ঘ্য দূরত্বে কোনো ফুলের সান্নিধ্যে যেতে না যেতেই
যারা ভ্রমরের নেশায় মেতে ওঠে- তাদের কথা
ভেবেছো কি কখনো ? পাখি সারস ?

এই নীল বেদনা বস্তুত আর্তনাদের স্বীকারোক্তি...
এতে নেই কোনো ‘ব্যথার দান’ অন্তিম প্ররোচনা
কেবলমাত্র বহুযুগ ধরে ঘটে আসছে এমন মতান্তরের দায়ে
তুমি হয়ে উঠছো জলজ্যান্ত এক যন্ত্রপাখি-
শুধু খাদ্য যোগানেই সীমিত থেকে-  সুখনীড়ে ফিরছো

হে পাখি সারস ! কখনো পর্যবেক্ষণক্ষম দৃষ্টির প্রশ্রয়ে
ভেবে দেখো কিছু লাজুক সন্ধিক্ষণ-
কাঁচা বেলের স্বাদ নিতে যে বালিকাটি আজ বিকেল থেকেই
ছুটে চলেছে গ্রামান্তরে, তরুণ সবুজ ঘাসে ঘাসে-
গন্ধভরা সর্ষে তেলের ঝাঁঝে আর মুখরোচক লবণে
মিশিয়ে খেতে চায় কৎবেল- অথচ কোথাও কোনো
সম্ভাবনার লক্ষণ না দেখে যে ফিরে যেতে থাকে
ধূলিমাখা পায়ে- ফরিদ মিয়ার বাড়ির পাশের
সাঁকোর কোলে ভর দিয়ে- নিলাজ সন্ধ্যেবেলা যে বালিকাটি
ফিরে যায় ঘরে- তার কি কখনো বেলের সাধ মিটবেনা !
বলো পাখি সারস- যে দুরন্ত পাখিটির জন্যে তুমি
এতোকাল হতব্যস্ত হয়ে তৃণ যোগাড় করে গেলে-
সেই সারসী কি পারতোনা হতে এক নিষ্পাপ বালিকা ?

আরো কিছু আক্ষেপ শোনাই তোমাকে...
ডালিমপাড়ার মেয়ে আক্তারা পারভীন-
এক সন্ধ্যেবেলা, যাত্রাগানের দিনে আমাদের গ্রামের স্কুলমাঠে এসে
বারোমিশালি খেতে খেতে খুব সলজ্জ নিয়ন্ত্রণে
তীরের মতো দুটো চোখ আমার দিকে ছুড়ে মেরেছিল
আর উদ্দম তর্জনী তার বেখেয়ালি বারোমিশালির সাথে
শাদা দাঁতের নিচে চাপা পড়ে যায়-
বলো পাখি সারস- তুমি কি কখনো প্রত্যাশা করোনি
কোনো উদাসীন সারসিনীর খেয়ালি মনের বিষ !

আরো কিছু কথা তোমাকে বলা যেতে পারে, তাই
আজকের জন্য সংক্ষিপ্ত রাখছি এ আলোচনা
কথন যখন বিস্তর হয়, তখন পর্যায়ক্রম মানা ভালো
যেমন ‘অধ্যবসায়’ রচনার প্রতিটি পয়েন্টের জন্য বাতেন স্যার আমাদের
আলাদা আলাদা নম্বর দিতেন ।

আরো এক সন্ধ্যে ঘনিয়ে এলো...
দু’টো ভিন্ন সত্তার জন্যে এ মন অবিরত চঞ্চল
বাড়ি ফেরা দরকার- পাখি সারস, খুব সম্ভব তুমিও
আমার মতো করে ভাবতে শিখে গেছো-
চারুলতার কোনো অভিযোগ হয়তো শুনবোনা আর কোনোদিন !
তুমিও নিশ্চয়ই গিয়ে বলবেনা- লোকটা ভীষণরকম
নস্টালজিক হতে হতে তোমাকেই ভুলে গেছে !








শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট