ই-পেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ১২৬

ই-পেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ১২৬
তারুণ্যের শিল্প সরোবর ।। ধানশালিক ।। সংখ্যা ১২৬
বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০১৯















জলপাই রঙের দুঃখ

জলপাই রঙের দুঃখ


জলপাই রঙের দুঃখ
শফিক নহোর

আষাঢ় মাস ঘরের ঢোয়া একদিন গোবর দিয়ে লেপলে এক বেলার বেশি থাহে না। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নেয়। জল বসন্তের মতো টেকরা-বেগরা দাগ হয়ে থাহে ।
আমার জল্লাদ শাশুড়ি তবুও বলবে,
আলপনা, বৌমা তোমার মা কাজকর্ম শিখাই নাই। কেমন করে ঘরের ঢোয়া লেপো এক দিনের বেশি থাহে না, কাম চোর কোথাকার।
আমি কথা না শোনার ভান করে মনের আনন্দে কাজ করে যাচ্ছি, সকালে একমুঠো চাউল
চাবিয়ে দুপুর পার করছি , শরীরের তেজ নাই আজ। রাতে জানোয়ার টা তিন-চারবার কাছে টানবে। আজ থেকে শুরু হয়েছে রক্ত ভাঙা । চোখ ঘুম ঘুম ভাব ধরছে ,খুব ক্ষুধা লাগছে। শাশুড়ি  সকালবেলা খাওয়াদাওয়া শেষ হলে। পাতিলের ভেতরে হাতের আঙুল দিয়ে, চাপ দিয়ে ভাতে হাতের ছাপ বসিয়ে রাখে। আমি যাতে চুরি করে একমুঠো ভাত না খেতে পারি।
খুব আউশ করে বাপের বাড়ি থেই-ক্যা এক খান শাড়ি আনছিলাম, গোসল করে কাপড় ছাড়াইয়া দিবার পরে সন্ধ্যায় শাড়ি খান অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেলাম না । আমার সাধের শাড়ি কিডা চুরি করছে, তা আমি জানি । একথা প্রমাণ করতে গেলে স্বামীর ভাত খাওয়া আমার জনমের মতো বন্ধ হয়ে যাবে। এ কথা সে কথা ভাবতে ভাবতে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হল। ঘরের ঢোয়া ঠিক  আগের মত হয়ে গেল।
জমিন থেকে আমার স্বামীর আসার সময় হল। দু'ঘরের মাঝখান থেকে জোড়ে একটা ডাক দিবে, আলপনা,
আমার জন্ন্যি এক গিলাশ পানি নিআঁয়।
বুকের ভিতরে আমার ছ্যাঁত করে ওঠে। কাঁপা-কাঁপা হাতে পানির গিলাস তার সামনে ধরলে, ঢকঢক করে পানি খেয়ে আমার হাতে গিলাস দেয়, নিজের কাঁধের গামছা দিয়া মুখ-মোছে, আমার দিকে চোখ বড় করে চ্যাঁয় । গোরুর চাড়িতে পানি দে। দেখিস না সারাদিন গোরু পানি না খেয়ে পেট কেমন পড়ে আছে শি¹ির গোরুর চাড়িতে পানি-দে কচ্ছি।
হারামজাদী মাগি বৃষ্টির ভেতর ধ্যান ধরে বসে আছিস ক্যানলো। বৃষ্টিতে সবকিছু ভাসাই নিয়ে গেল। কাপড়চোপড় গুলি ঘরে তোল, পোড়ামুখী
এমন আনমনে হয়ে গিয়েছিলাম, আমার জল্লাদ শাশুড়ি জোরেশোরে ডাক না দিলে বুঝতেই পারতাম না, কখন যে এমন অন্যমনস্ক হয়ে বসেছিলাম। শ্বশুর সারাদিন বারান্দায় শুয়ে চিৎকার করবে, আমার শাশুড়ি একবারও অসুস্থ মানুষ টাকে দেখতে আসবে না। পিছনের দরজা দিয়ে রান্না ঘর, কোনাকাঞ্চছি যাবে, তবুও স্বামীর দিকে ফিরে তাকাবে না। পাষাণ একটা মানুষ। ‘ছোট বেলায় আমার শাশুড়ির মুখে মধু-দিয়েছিল না বলে তার মুখের সব কথা নিম পাতার মত।’
এমন খারাপ মানুষ আমি জীবনে ও দ্যিহি নাই।
শ্বশুর সারাদিন বিছানায় শুয়ে চিৎকার করে এক গিলাস পানি চাইলে, এ বাড়িতে কেউ নিয়ে দিবে না। বাঁদির মত আমি সারাদিন এ বাড়িতে খাটুনি করে কিছুই জোটেনি আমার কপালে। এ সংসারে এসে জীবনটা একেবারে জলাঞ্জলি দিয়ে দিলাম। ভরাপুরা গোলাম, চোখে দেখে না সারাদিন এ সংসারে কি ভাবে খেটে মরি। ওর বাপ হয়েছে, আমার জানের আজরাইল আমি মরতেও পারছিনা কিছু বলতে ও পারছি না, আমার গলায় বিঁধে আছে পুঁটি মাছের কাঁটার মত। বুড়া মরলে তবুও একটু বাঁচতাম। সকালে ওঠে সারা বাড়ি ঝাড়– দেওয়া গরু ছাগল বের করা, বাসনকোসন ধোয়া, বুড়ার গু,মুত ধোয়ান আমার হয়েছে যতো জ¦ালা।
আল্লাহ্ এত মানুষের মরণ দেয় আমারে চোখে দেখে না, বাজারের ব্যাগ ছিঁড়া হলে বাজার করে কোনদিন পোষায় না, সংসারের আয় উন্নতি হয় না। মানুষটা সারাদিন মাঠে কাজ করে, সংসারের দামি জিনিস পত্র নবাবের বোন চুরি করে, তার শ্বশুর বাড়ি পাঠায়, তার  সঙ্গে যোগ হয়েছে আমার নিজের শাশুড়ি। ছেলের চেয়ে মেয়ে আপন হয়েছে,  ‘এক চোখে তেল আর এক চোখে পানি বিক্রি করে আমার দজ্জাল শাশুড়ি।’  
নাঙল জোয়াল গোয়াল ঘরে নাই রাখতে, আমার শাশুড়ি তার ছেলের কানঙানোনি দিচ্ছে,
কাশেম তোর শ্বশুরবাড়ি থেকে  লোক আসছিল, খালি হাতে, বল বাজান,
কেউ কারো বাড়িতে খালি হাতে যায়, ছোটলোক কোথাকার?
তোমরাই তো আমার বিয়ে দিছো, তারা গরিব মানুষ, টাকা পাইবো কই, তাছাড়া তো আলপনাদের, বাড়ির লোকজন কেউ খারাপ নাুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুু।
ইরে আল্লাহ্ রে, আমার কাশেম কয় কি? তোরে কি যাদু টাদু কিছু করছে না কি রে বাজান, আজই তোকে আমি মান্নান কবিরাজের কাছে নিয়ে যাবো। সর্বনাশ কেবা কথা কচ্ছিসরে গ্যাদা।
মাগি পোদ্দার বাড়ি পুকুর ঘাটে গোসল করে সন্ধ্যায় ভিজে কাপড়ে যেভাবে নাদুস নুদুস পাছা দুলিয়ে  পাট ক্ষেতের আইল দিয়ে আসে, কবে যেন শুনি। মাগিরে পাট ক্ষেতে নিয়ে বেহুঁশ করে ফেলে রাখছে। মুল্লিক বাড়ির ছাওয়াল পল এখন যে খারাপ হয়েছে। আমার ছাওয়ালের যাদু করে একে বারে বস করে ফেলছে, এর মজা আমি দেখাবো।
কল পারে পানি পড়ার শব্দ শুনতে পেয়ে, আমার শাশুড়ি এগিয়ে এসে বলল,
আলপনা, ঢেঁকিতে ধান ভানতে হবে। তাড়াতাড়ি কিছু কাঁথা-কাপড় পরিষ্কার করে আমার সঙ্গে চলো। মুখখানি এমন কালো করে রাখবে মনে হবে গেরন  লাগছে।
আমার শাশুড়ি আমার কাজ মন্দ চোখে দেখবে, আমার কোন কাজ তার পছন্দ হবেনা। যখন যে কাজ করব তার একটা ভুল ধরবেই  এটা তার স্বভাবজাত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
সকাল, সন্ধ্যা, রাতে সব সময় একই কথা,
বৌমা বাঁজা বাচ্চা কাচ্চা হয়না। ছেলেরে অন্য জায়গায় বিয়ে দিবে ।
 আমার আড়ালে আবডালে অনেক কথা হয়। কিছু কথা কানে আসে ; ‘তখন মনে হয় সীসা গরম করে আমার কানের ভেতরে কেউ ঢালছে হরদম।’
ভাবি, তুমি কিন্তু ভাইকে বলবে, রফিককে যেন হাতঘড়ি কিনে দেয়। আমার স্বামী স্কুলের মাস্টার, তার হাতে ঘড়ি না থাকলে মানায়, সময় দেখে স্কুলে যাবে আসবে। আমাদের সংসারে নতুন অতিথি আসবে। তার জন্যি কত কিছু করতে হচ্ছে। তুমি বাঁজা, কখনো তোমার বাচ্চা কাচ্চা হবে না। ভাইকে বলো না কিছু জমি রফিকের নামে লিখে দিতে। মা তোমার ভয়ে, ভাইজানকে কিছু বলে না ।
মা আমারে ভয় পায়!
ভাবি তুমি এমন অবাক হয়ে চেয়ে রইলে কেন?
আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। আমি শেফালিকে কোন জবাব না দিয়েই ঘরে চলে গেলাম।

ছোটবেলায়, মা বাবাকে হারিয়ে ছিলাম, ভেবেছিলাম। শ্বশুর, শাশুড়িকে নিজের বাবা মায়ের মতো দেখব। কিন্তু? এসে যা পেয়েছি, পুকুর ভর্তি কুমির। মা মরে যাবার আগে জলপাই রঙের এক খান শাড়ি আমাকে দিয়েছিল।
সেই শাড়ির লোভ আমার শাশুড়ি সামলাতে পারেনি। চুরি করে তার মেয়েকে দিয়েছে। শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে আছে আমার মায়ের ভালবাসা। মায়ের শাড়ি ছুঁয়ে দেখলে মনে হয়, মাকে ছুঁয়ে দেখছি ; সেই শাড়ির কষ্টটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয় ক্ষণে-ক্ষণে। আমার শাশুড়ি নিজেরে ছেলেকে ঠকিয়েছে , ছেলের বউকে ঠকিয়ে, অনাগত যে আসবে তাকে ঠকিয়েছে, শেফালির স্বামীর নামে যেদিন জমি রেজিস্ট্রেশন করল,  ঠিক তার দুদিন পরে, আমার বমিবমি ভাব, টকের প্রতি লোভ বেড়ে গেল। বুঝতে বাকী রইল না, আমি মা হতে চলছি, হায়রে নিয়তি। সবাই মা হলেও সত্যিকার মা কেউ-কেউ হতে পারে না। আমার শাশুড়ি এক চোখে তেল এক চোখে পানি বিক্রি করেছে। শেফালি আজ আমার চুরি হয়ে যাওয়া জলপাই রঙের শাড়ি পরে ওর শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে মা হতে; আমি পথের দিকে  অপলক চেয়ে রইলাম, আমার চোখ জলে ভরে আসছে, সবকিছু মলিন মনে হচ্ছে আমার কাছে।

অন্যরকম ভ্রমন অভিজ্ঞতার নাম : চলনবিল

অন্যরকম ভ্রমন অভিজ্ঞতার নাম : চলনবিল


অন্যরকম ভ্রমন অভিজ্ঞতার নাম
চলনবিল
 
মোছাঃ হালিমা

জীবনের প্রথম ভ্রমনের অভিজ্ঞতা লিখতে বসলাম। আলোআঁধারি স্মৃতি কে আশ্রয় করে লেখা শুরু। কিছু ঘটনা মনে আছে, আর কিছুটা আবছা। পুরোনো স্মৃতি বা ঘটনা লিখতে বসলে এই একটাই সমস্যা। আচ্ছা যাই হোক! বই আর খবরের কাগজ পড়ে চলন বিলের কথা কতদিন আগে যে জানতে পেরেছিলাম সে কথা মনে আসছে না কিন্তু মেঘাচ্ছন্ন হালকা কুসুমের মতো আকাশ ও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চলন বিলের সৌন্দর্য দেখার আগ্রহ ছিল বহু দিনের। সেই আগ্রহ থেকেই ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলায় কালিনগর গ্রামে একজন আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া। আর সেই আত্মীয়র নাম ছিল হৃদয় মোল্লা। তিনি আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে গেলেন এবং তার স্বজনদের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সবার ব্যবহার  অতি মধুর ছিল। তারপর অল্প সময়ের মধ্যেই একজনের সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো আমার। শুনেছিলাম নাটোরের মানুষ আত্মীয়দের সেবা যত্ন করতে খুবই ভালোবাসে। আজ বুঝতে পারলাম সেই কথাটা পুরোপুরি সত্য। তারা আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসার সহিত দুপুরের খাবার খাওয়ালেন। এবং আরাম করার জন্য বিছানা পেতে দিলেন কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর  সেই বন্ধু এসে আমাকে বলল  তাড়াতাড়ি রেডি হন  আপনার সেই কাঙ্ক্ষিত আগ্রহের বস্তুর নিকট  আমরা এখনি বের হবো। কথাটা শুনতেই  আমার মনে অন্য রকম আনন্দ দোলা দিতে লাগল  মনে হচ্ছিল আমি যেন পুরো মহাবিশ্বকে জয় করে ফেলেছি। কিন্তু তখনই আকাশের দিকে তাকাতেই দেখলাম গুড়ি গুড়ি কিছু মেঘ আকাশের বুকে জমা হতে শুরু করেছে। যাক মেঘ নিয়ে আর চিন্তা করলাম না। ও একটা কথা লিখতে লিখতে ভুলেই গেলাম সেই বন্ধুর নাম ছিল মিজান। হঠাৎ পিছন থেকে মিজান এসে বলল চলেন? আমিও  সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে  চলন বিলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে বেরিয়ে পড়লাম। একটা কথা  বলে রাখি  গ্রাম অঞ্চলে  এখনো সেই ভাবে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। তাই মানুষের চলাচলের জন্য প্রধান বাহন এখনো ভ্যান রিক্সা ইত্যাদি। তাই আমাদেরও ভ্যানে করে রওনা করতে হলো।

পথে যেতে যেতে মিজান ভ্যান চালকের সাথে বিভিন্ন ধরনের গল্প বলতে শুরু করল । তার মধ্যে একটা ছিলো পাট বেচাকিনা নিয়ে। যেহেতু বর্ষাকাল এই সময় নাটোরে প্রচুর পরিমাণে পাটের ফলন হয়। কিন্তু কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য আগের মত এখন আর পায়না। মিজান তখন আমাকে প্রশ্ন করল  কেমন লাগছে? তখন আমি তার প্রশ্নের  জবাবে বললাম  অসাধারণ লাগছে।  চারপাশের প্রকৃতি,  রাস্তার দু’পাশের নুইয়ে পড়া পাতাগুলো দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন এক স্বপ্নপুরী।  আর আমি সেই স্বপ্ন পুরীর ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। কালিনগর থেকে সিংড়া যাবার সময়  আত্রাই নদীর পাশ দিয়ে যেতে হয়। বর্ষাকাল হওয়ার দরুন নদীর পানি ফুলে ফেঁপে উঠেছে সেই দৃশ্য আমার মন কে বারবার আকৃষ্ট করছে। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর আমরা সিংড়া বাসস্ট্যান্ডে  পৌছালাম। সেখানে গিয়ে অসাধারণ একটা বিষয় খেয়াল করলাম। সেটা হচ্ছে  মানুষের চলাচলের জন্য ফুটওভার ব্রিজ করে দেওয়া হয়েছে।  একটু আমি হেঁটে যেতেই চলন বিল গেট পর্যন্ত ভ্যান পাওয়া গেল । ভ্যানে চড়ে চরনবিল গেটে গিয়ে দেখলাম অসংখ্য দর্শনার্থী উপচে পড়া ভিড়। হঠাৎ ভ্যান চালক বলে উঠলো বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে মানুষের কাছে চলনবিল পর্যটন কেন্দ্র ব্যাপক পরিচিত। আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন তাই  প্রায় সকলেই পরিবার আত্মীয়-স্বজন নিয়ে এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে এসেছে। তার জন্য একটু বেশি ভিড়। যাই হোক চলন বিলের গেটের সামনে যেতেই বড় বড় অক্ষর এ লেখা চলন বিল গেট। কিন্তু তখন মিজান বলে উঠলো এখান থেকে আরও তিন কিলোমিটার ভিতরের দিকে যেতে হবে তাহলেই তুমি চলন বিলের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। যাই হোক তারপর মিজান আর একটি ভ্যান নিল এবং ভ্যানে চড়ে যেতে যেতেই হঠাৎ বাজ পড়ার শব্দ শুনতে পেলাম এবং চারদিক থেকে হিমেল হাওয়া শরীরকে ঠান্ডা করে দিয়ে চলে গেল। তারপর দেখলাম চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে একটু ভয় করছিল তখন আমার। ধীরে ধীরে খুব জোরে বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। বাতাসের সাথে বৃষ্টির ফোটা শরীরে এসে পড়তে লাগলো। তখন আমরা রাস্তার ধারের ছাউনিতে আশ্রয় নিলাম । ১০ মিনিট পর বৃষ্টি থেমে গেল মনটা একটু তখন হালকা লাগছিল। যাক আবার আমরা রওনা হলাম সেই কাঙ্খিত গন্তব্যস্থলে। গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর সময় অনেক গুলো ছোট বড় ব্রিজ দেখতে পেলাম। ব্রিজ এর চারপাশে মানুষ বসে অপরূপ সৌন্দর্যে আভা উপভোগ করছে। আরেকটু সামনে যেতেই নৌকা, শাপলা, ফুল এবং মাছের ভাস্কর্য দেখতে পেলাম। চলন বিলের মাঝে দেখতে অতি সুন্দর লাগছিল। দেখলাম আশেপাশে পিকনিকের নৌকো দিয়ে ভরে রয়েছে। আরেকটু সামনে যেতেই দেখলাম একটি গেট এবং সাইডে টিকিট কাউন্টার। গেটে লেখা ছিল চরনবিল পর্যটন কেন্দ্র ভিতরে ঢোকার জন্য প্রত্যেকের জন্য ৩০ টাকা টিকিট ধার্য করা ছিল।আগ্রহের সহিত টিকিট কাটার পর ভিতরে বিভিন্ন খাবারের দোকান, নাগরদোলা শিশুদের জন্য আলোকসজ্জার অসাধারণ ব্যবস্থা ছিল। সেখান থেকে বের হয় আমরা হাটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে সামনে একটা বাদামের দোকান পরল আমি এবং মিজান বাদাম কিনে খেতে খেতে আবার হাঁটতে শুরু করলাম।

সামনে যেতেই দেখলাম ডিঙ্গি নৌকার বাহার তখন মিজন নৌকা ওয়ালাকে বলল নৌকা কি আপনারা ভাড়া দেন। তখন নৌকা ওয়ালা জবাব দিল হ্যাঁ। আমরা নৌকা ভাড়া দেই। তখন আমি মিজান কে বললাম চলো আমরা একটু চলনবিল পানি উপভোগ করি। তখন দুজনেই নৌকাতে উঠে পড়লাম এবং মাঝি নৌকা ছেড়ে দিল বাতাস থাকার কারণে মাঝি নৌকার পাল তুলে দিল। কিছুদূর যাওয়ার পরে মাঝি  ভাওয়াইয়া গান ধরল গানটা ছিল এইরকমঃ ও মাঝি বাইয়া যাও রে অকুল দরিয়ার মাঝে আমার ভাঙ্গা নাও রে মাঝি বাইয়া যাও রে। অসাধারণ কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর  আমাদের কিনারায় নামিয়ে দিল। তখন আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম ছোট বড় বৃদ্ধ যুবক সবাই সকল ভেদাভেদ ভুলে এক অন্যরকম আনন্দ উপভোগ করছে সে আনন্দটা বলে বুঝানোর মতো নয়। হঠাৎ আমার আকাশের দিকে চোখ পড়ল চোখ পড়তেই দেখলাম এক ঝাঁক পাখি তাদের নিয়মে আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। সেই দৃশ্যটা ও ভুলার মত নয়। ফেরার সময় আমরা অনেক গল্প করলাম তখন মিজান আমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিল আর সেগুলো হলোঃচলন বিল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বৃহৎ বিল। চলন ববিললের আয়তন ১০৮৫ বর্গ কিলোমিটার এটি রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ এবং পাবন জেলা জুড়ে বিস্তৃত । চলন বিলের সার্বিক গভীরতা ৪মিটার এবং গড় গভীরতা ২মিটার। চলন বিলের মোহনীয় সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। এই বিলে বালিহাঁস, গাংচিল, পানকৌরি প্রভূতি রংবেরঙের পাখি বাস করে। তাছাড়া চলন বিল হল মাছের ভান্ডার। এখানে শোল, টাকি, টেংরা, চিংড়ি, গজার,  চিতল, সিং, বোয়াল, দারকিনা, পুটি, সহ নানা ধরনের নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। তাছাড়া বাংলাদেশের কৃষি খাতের ফলনের বড় একটা অংশ চলন বিলের কৃষকরাই সরবরাহ করে। এখানকার মানুষরা সাবলীল। তারা একে অপরের সাথে মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসে।
আমি তথ্য গুলো শুনে খুবই আনন্দ পেলাম চলনবিল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার জীবনের সবগুলো ভ্রমণের অভিজ্ঞতার চাইতে ভিন্ন। চলনবিল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমি আ¤্রত্রু মনে রাখব। কারণ আমি শিহরিত, আমি বিমোহিত চলনবিল তোমার সৌন্দর্যে।

দু’টি কবিতা

দু’টি কবিতা


দু’টি কবিতা
মাহমুদুল ইসলাম রায়হান

অ-মানুষ

এ শহরের মানুষগুলো দেখতে অবিকল আমার মত
আনন্দ পেলে আমি যেমন হাসি, তারাও তেমন।
কষ্ট পেলে কাঁদে
খিদে পেলে খেতে বসে  
হাত দিয়ে খাবার তুলে, মুখে গুঁছে দিলে পেট ভরে।
অভাব হলে ভিক্ষা খোঁজে
মসজিদ বা মন্দিরে
ফানাহ'র লোভে
ুুকোরআন, গীতা, বাইবেল পড়ে
ধর্মগ্রন্থ যার আছে যত।
কই? আমি তো মানুষ নয়
তবে কেন মানুষগুলো দেখতে হুবহু আমার মত?

আচ্ছা! মানুষ বলে কাকে? সংজ্ঞাটাই বা কে জানে?
মানুষ সংজ্ঞাটা কি আমার মধ্যে পড়ে?

এ যেমন আমি বিশ্বজিৎ হত্যার ঘাতক।
রিফাতের নির্মম মৃত্যু'র দৃশ্য
নিরবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে যাওয়া এক দর্শক।
আমার গুলিতে মৃত্যু'র সুধা পান করেছে
সদ্য জন্ম নেওয়া, এক নব জাতক।
আমার দেওয়া কেরোসিনেরর আগুনে পুড়ে মরেছে
আমার ভাই ফুলন।

আমার জন্যই স্বাধীন দেশে পরাধীন জনগন।
আমিই অভিজিত, নাদিয়া, রাজন
নাম না জানা, আরো কতজনের মৃত্যু'র কারণ।
আমি ছেলের সামনে এক মায়ের ধর্ষক,
ভাইয়ের সমনে বোনের।
আমার ইশারায় ওরা গুজব কে পুঁজি করে
জীবন নিয়েছে রেণ্’ুর।

আমি সিরাজ উদ্দৌলাহ, আমি ন্যায়ের প্রতীক
আমিই ধর্ষক, ধর্ষিতা নুসারাত, তন্’ুর।
মায়ের পেটে থাকা এক শিশু পুড়ে মরেছে
আমার লাগানো আগুনে।
এখনো বলতে অনেক কিছু বাকি
যা কিছু করেছি যত
বলুন! আমার মধ্যে কি মানুষ সংজ্ঞাটা পড়ে?
না পড়লে, তবে কেন মানুষগুলো দেখতে
আমার মত?

আচ্ছা দেখুন, মানুষ সংজ্ঞাটা কি আমার মধ্যে পড়ে?
আমি বাসের চাকায় পিষ্ট হওয়া মীম-সাদিকের লাশের কফিন দেখে
মুখের উপর অট্ট হাসির মিছিল ডাকা শাহজান।
আমি তরুণী’র বুক তাক করে
কনুই দিয়ে অনৈতিক স্পর্শ দিয়ে যাওয়া এক পুরুষ।
মানুষ সংজ্ঞাটা দেখে বলুন!
আমি কি মানুষ? আমি কি মানুষ? আমি কি মানুষ?
মানুষ না হলে, তবে কেন মানুষগুলো দেখতে আমার মত?
তাহলে কি আমি অ-মানুষ!

ভুল বানানে মানুষ

এই! তুমি না পুরুষ?
তো?
একটা মানুষকে কয়েকজন মিলে মারছে!
মারুক।
একটা চোখ গলে রুক্ষ মাটির বুক ভিজিয়ে দিয়েছে!
দ্যাক।
আর লাঠির আঘাতে মাথাটা থ্যেৎলে গেছে!
যাক।
বাধা দিবে না?
নাহ।
কেন; তুমি না পুরুষ?
নাহ! ভুল বানানে মানুষ।

তাহলে ছবি তোলো, ভিডিও কর। আর তা ইউটিউব, টুইটার, ফেইজবুক, হোয়াটস্এ্যাপে ছাড়লে বাহ্ বা আর হাজার হাজার লাইক কমেন্ট পাবে!
ঐটা আমার কাজ না।
তো কার?
যারা কা-পুরুষ। ভয়ে বাধাও দিতে পারে না, আবার অ-মানুষ হয়ে যাবে ভেবে মারতেও পারে না।

তাহলে কি তনু, নুসরাত
মীম সাদিক, রিফাত
আর তসলিমা রেণ্’ুর মত
আরেক টা মানুষটা মরবে?
হ্যাঁ! মরবে তো।
কেন মরতে হবে?
অ-মানুষের পৃথিবীতে মানুষ হয়ে জন্মেছে বলে।

আর কা-পুরুষরা?
ওরাও মরবে।
কিভাবে?
তুমি বোধহয় খবর শুনো না, বা পত্রিকার পাতায় একদিনও চোখ রাখোনি। শিরোনামে লেখা থাকবে ‘কালসাপের সংগমকালীন সময়ে ছবি বা ভিডিও করতে যেয়ে কালসাপের দংশনে এক তরুণ বা যুবকের
মৃত্য।
তাহলে পৃথিবী?
হুমায়ূন আজাদের লেখা কবিটা পড়োনি। সবকিছু  নষ্টাদের অধিকারে যাবে’।
তাহলে তুমি কি, মানুষ নাকি পুরুষ?
বলছি নাহ! ভুল বানানে মানুষ। ভুলের কারণে আজো মানুষ হতে পারিনি। সুবোধের ঘুম ভাঙলে আমিও মানুষ হবো।
সুবোধ কোথায় ঘুমায়?
আমার ভেতর।
তুলে নাও!
নাহ! ও নিজেই উঠবে।
মানুষটা মরে যাচ্ছো তো!
মরুক।
তোর আর তোর সুবোধের উপর আল্লাহ’র গজব পড়ুক ।

পদাবলি : ০১

পদাবলি : ০১


অপেক্ষায় থাকি
স্বপন শর্মা

তোর থাকা, না-থাকা দিনগুলো নিয়ে বসে আছি,
ছেঁড়া সম্পকের প্রতিটি খাঁজে নোনা গন্ধ
সদ্য জন্ম নেওয়া ছোট্ট নদীতে ভেলা ভাসিয়ে,
স্বেচ্ছায় চলে গেলি যেদিন।

সেই প্রাচীন ঢেউয়ের স্রোত আটকে তোকে জানানো হলো না
আকাশ কোনদিনই আমাদের ছিল না,
তবু দ্যাখ প্রথম পুরুষের মতো ক্যামন দিগন্ত শুয়ে আছে ...

তোর চলে যাওয়ার পর
একা সেই চার দেয়ালের মস্ত এজলাস, সেই নুন হলুদের বেহাগ যাপন;
নিজের চোখ বেঁধে নিজের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা।

স্মৃতি গুলোকে নিয়ে
শহরের চারদিকে ডোরাকাটা হরিণ ছানার মতো ছুটি
ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে খুব গোপনে তাদের শুইয়ে আসি জংধরা বেঞ্চে।

শব্দহীন কিছু কথার টুকরো তুলে রাখি;
যদি কখনো ফিরে আসো দাবী নিয়ে...


কিছু কথা একান্তই গোলাপের
রতন রায়

ভাঙা পদ্ধতি,
ঝরে গেল অসংখ্য তাজা প্রাণ।
রাষ্ট্রের শোকসভা,
কারো কারো প্রতিবাদ ।
ব্যস,
দ্বায় ঢাকে নতুন ইস্যুতে।

রূপকথার গল্প শুনে আমরা ঘুমাতে যাই,
খেলনা পিস্তুলে হয় বিমান ছিনতাই।

তবু, চেপে যান, সুখী হোন সূত্র মেনে,
চিঠির যুগে ফিরে প্রেমের কবিতা লিখুন অজান্তে।
নতুবা সিম কোম্পানির ডাকাতির মধ্যেও
ফোনালাপ চালান,
যা কিছু একান্তই গোলাপের!



নিরুত্তাপ
সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা

অযাচিত কোলাহল দেখে নিরুত্তাপ হয়ে চেয়ে থাকি,
খুঁজে পাই নানা সূত্রে গাথা জীবনের উপপাদ্য!
প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির ছন্দের দ্বন্দে মিলেছে উৎপাদক,

অভিমান আর অনুযোগে থাকা সময়গুলোকে একত্র করে,
ফুলে ফেঁপে ঘটেছে অনাহুত এই বিস্ফারণ!
পলকে পলকে সময়ের তাসের গ্রাসে,
হারিয়ে যায় সকল বিরহের বিচলিত উত্তাপ।
সত্য মিথ্যের প্রভেদ স্পষ্ট হয়ে,
জানান দেয় নতুন প্রভাতী সূর্য।
সোনালী আভায় যখন সূর্য দেয় ধরা,
লব্ধি বলের প্রভাবে হঠাৎ
ভুল ভাঁঙে সশব্দে!
কল্পিত অধরাকে ছোঁয়ার স্বপ্নে হয় অসাড়,
ভাঁঙনের শব্দে সবাই এখন মৌন!



অজ্ঞাত এক উপমা
নাসিমা হক মুক্তা

শব্দের সাথে খেলি ঢেউ জাগা নদীর কল্লোলে
তার অতলে খুঁজে রোমকূপ
শিল্পের মত সাজায় প্রণয়।’
দেহের গহ্বরের আদ্যোপান্তে
অন্তমিল ঘটায়
সুুউচ্চ পর্বত থেকে গড়িয়ে পড়া জল
বেয়ে বেয়ে খায় ঝর্ণাফল।

ছলছল ছন্দে বিদ্যাচর্চা
জলপ্রপাতের হুহু বেজে ওঠে
অজ্ঞাত এক উপমা
রোমাঞ্চিত তৃষ্ণায় শুধুই ওষ্ঠের চুম্বন খুঁজে।

দীর্ঘ পথ হেঁটে-যখন মরুর প্রান্তে এসে
ফুল, পাখি ও গাছের কথা লিখি
ঠিক তখনই
ঘুঙ্গুর তুলে এক বিষপিপঁড়ে বিদ্যা;
পাড়া জুড়ানোর কথায়
ফুল চন্দন ছিঁটায়-শুধুই খাতার পৃষ্ঠায়।

ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছো জীবন
তারিক ফিজার

আমার জীবন গতরাতে ফুঁ দিয়ে উঁড়িয়ে দিয়েছো, নারী!
পেঁজা তুলোর মতো আমি এখন ভাসছি ফারুকপুরের উদ্ধত পদ্মপুকুরে;
একটু আগেই আমি - ছাদে নেড়ে দেওয়া
তোমার প্রথম পরা লাল রেশমি শাড়ি ছুঁয়ে এলাম;
গমস্ত শাড়ী জুড়ে বেদনার নীল পাড়, ঠিক আমার মায়েরই মতো।
আমার মায়ের মতো এখন তুমিও একজন রমণী!
তোমার শাড়ির গোছায় ঝন্ ঝন্ চাবির শব্দ,
তুমি স্পষ্ট  শুনতে পাও অনাগত সনÍানের হাতে
বেজে ওঠা সাইকেলের টুংটাং ধ্বনি। কি ব্যস্ত তোমার জীবন!
আমি কম্পিউটারের ব্যাকবাটনের মতো
টিপ দিয়ে ফিরে যাই – স্মৃতিতে স্মৃতিতে।
দিয়াবাড়ি, রমনা পার্ক, উত্তরার রেস্টুরেন্ট...
নেইল কার্টার কেটে নেয় আমার চোখ,
দু'চোখে স্বপ্ন নেই, শুধু ঘুম নিঝ্ঝুম সমস্ত রাত।

বেকার
সোমা মুৎসুদ্দী

আর কত পায়ের স্যান্ডেল ছিড়লে
বলতে পারেন একটা ভালো

চাকরি পাবো
আর কত পাউরুটি, কলা খেলে
একটা ভালো চাকরি জুটবে কপালে
আর কত যোগ্যতার পরিচয় দিলে
একটা ভালো চাকরি পাওয়া
যেতে পারে
এই ঢাকা শহরে
আমার কেউ নেই
না আত্মীয় না প্রিয়জন
কেউ নেই
শুধু জানি, কোন এক গাঁয়ে
আমার, ভালো একটি
চাকরি পাবার অপেক্ষা
বসে আছে আমার মা, বাবা
ছোট ভাই, বোন
সামনে অন্ধকার জানি
এই অন্ধকারেও কেউ
হাত বাড়াবেনা আমার দিকে
আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে
এই শহরে, টাকা ছাড়া কিছু হয়না
মামা ছাড়াও না
অভিজ্ঞতা ছাড়াও কিছু হয়না
কিন্তু এই মুহূর্তে দারিদ্র্যতার মতো
বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া
আমার ঝুলিতে আর কিছুই নেই
আমি যে ভবিষ্যৎ হীন হতাশাগ্রস্থ’
এক বেকার

পদাবলি : ০২

পদাবলি : ০২


কবিতা ও প্রেম
রামপ্রসাদ সূত্রধর

রাত যখন গভীর হয়
চারদিকে যখন কালো আঁধার ঘিরে আসে
পাখিরা যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়
তখনে তোমার কথা আরো বেশী মনে পড়ে কেন?
তাহলে কি আমি তোমারে ভালোবাসি...?
তোমার চাদের মত উজ্জলময় রূপ
আমাকে পাগল করেছে
স্পন্দন শিহরণে মুখরিত হয়েছে
কেন এমন অনুভূতি...?
কবিতা চুপ করে থেকো না
কিছু একটা বলো আমি শুনতে চাই।
তোমার নির্বাক মুখের কথা
যে কথা আমাকে শুধু ভাবায়
মাঝে মাঝে কাঁদায়ও
হৃদয় কে ক্ষত বিক্ষত করে তুলে
এই কি ভালোবাসা..?
নিরবে শুধু ব্যথাহত করে
হৃদয় কে রিক্ত করে তুলে মন কে মর্মাঘাত করে
যে যন্ত্রনা শুধু দেহ কে দাহন করে ফেলে
এই কি ভালোবাসা...?
কবিতা কিছু একটা বলো চুপ করে থেকো না
আমি একদিন মরে যাবো
ডাইরির পাতায় সাক্ষী দিবে
আমার প্রেমের পরিচয় কালো কালির চিহ্ন
জীবন ফিরে পাবে বিশ্ব নিখিলে
কবিতা তুমি কত কবি কে ঠকিয়েছো...
আমাকে ঠকাতে পারবে না
কারণ আমি তোমাকে অন্ধের মত ভালোবাসি।

দর্শন
শাবলু শাহাবউদ্দিন

দেখেছি দর্শনের পাতা
আছে লেখা হাজার হাজার কথা
মানুষে মানুষ মিলে, লিখেছে দর্শন দিলে
রাজ্য জাতে কত ভেদাভেদ তাহাতে
কী দর্শন দিনে রাতে রচিছে সবার সাথে ?

নাই সমাধান দর্শন আন
দর্শন ধর্ষণে জাতে
লোকে থাকবে কেন তার সাথে?

কালে কালে হাজার পাতার তালে
ধর্ম কর্ম মনুষ্য জাতি
মিশেছে মৃত্তিকা আছে তাদের সাথি,
মন আর হৃদয়ে আছে বিবেক কী ভাই
দর্শনের সেথায় পায় না কী ঠাঁই।

চাষ করি হৃদয়ে বিবেকের গাছ
লাগবে না আর কিছু, ভাল থাকার মাস।



আমি তাকেই ভালোবাসবো
কাব্য কবির

আমি তাকেই ভালোবাসবো যার মন
সাদা খইয়ের মতো, যে প্রজাপতি
ভালোবাসে, ফুলকে ভালোবাসে।
যে চাঁদের নরম জোছনা ছুঁয়ে মনের খামে
জমা রাখে।

শিশির ভেজা ঘাসের উপর হাঁটতে
যে ভালোবাসে, পাখিদের মিষ্টি গান,
ঘাস ফড়িং এর নাচ দেখতে খুব
ভালোবাসে। বিকালের ভেজা রোদে
যে আমার হাত ধরে হাঁটবে নদীর কূলে,
যার শ্রাবনের মেঘের মতো কালো চুল,
মায়াবী হরিনীর মতো যার চোখ,
যার মন বসন্তের টুকটুকে লাল
পলাশ ফুলের মতো
আমি তাকেই ভালোবাসবো,
আমি তাকেই ভালোবাসবো।

আমাদের চাহিদা
আহমাদ সোলায়মান

লাশের মত স্বপ্ন আর হতাশার লাশ
তোমার দৃষ্টির প্রতিটি ভাঁজে মেঘের পাহাড়
নদীর মত জল কখনো ছিল না আমার

রাতের চাহিদা মেটাতে অন্ধকার আসে
যেমন , বাসর বিছানায় আসে বর-
বিছানা আর বর, দুইয়ের চাহিদায় পারস্পারিক
অথচ, তুমি আর আমি
কাছাকাছি আসি
দূরত্ব বাড়ানোর চাহিদায়!

যদিও সে যুদ্ধ আমাদের স্পর্শ করে না
হাসনাত আসিফ কুশল

এখনো মিছিলের শ্লোগান শোনা যায়
সমবেত মানুষের ময়দানে।
এখনো নগ্নপদ প্রভাতফেরি দেখি
শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে
যেন পুষ্পস্তবক অর্পণের
প্রতিযোগিতায় ক্যাডাররা,
উল্লাসে নেতারাও।

ভুল বিপ্লবে প্রগতি সংহারের
সংসদে অভাব যেন আস্থাভাজনের।
জনসভায় জনদরদীর অভিনয়ে
বিশাল সমাবেশের উদ্যানে
মহানায়কেরা স্মরণীয় বরণীয়!

বারবার এই মিছিলের সামনের কাতারে
এরাই আসে আবার এরাই
টেবিলের নিচে উপার্জন করে।

তবুও আমাদের জন্যই এরা
কখনো হয় নেতা
কখনো সন্ত্রাসী
কখনো প্রতিবাদী!

মার্কস, দস্তয়ভস্কি, মাও সে তুং এর
ধুয়া তুলে এরা কখনো পাজেরো চালায়
কখনো টয়োটা চালায়
কখনো এদের অসাম্প্রদায়িকতার ব্যানারে
সাম্প্রদায়িকতার ঝড় ওঠে।

তবুও তৈলমর্দনকারীরা এখনো ক্লান্ত হয় নি!
স্বৈরাচারীরা এখনো ক্ষান্ত হয় নি!
বিরোধী দলের ভ্রান্তনীতি এখনো পুরনো হয় নি!
প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর থেকেও নিভে যায় নি
যুদ্ধের আগুন!
যদিও সে যুদ্ধ আমাদের স্পর্শ করে না!

একটি সস্তা প্রেমের ইতিহাস

একটি সস্তা প্রেমের ইতিহাস


একটি সস্তা প্রেমের ইতিহাস
রাকিব ইমতিয়াজ

এক কাপ চা। চায়ের কাপ মুখের মধ্যে দিয়ে চোখ পড়লো তোমার দিকে। তুমি সস্তা একটা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে বাজারে যাচ্ছো। তোমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিই তুমি। প্রতিদিন বিকেলের পর আর তোমায় দেখতে পাই না। কোথায় যেন হারিয়ে যাও। তোমায় প্রায় দেখি একটা হোটেলের সামনে দিয়ে যেতে, ওইটাই তোমার একমাত্র চলার রাস্তা। কোন এক অজঁপাড়া গায়ের অষ্টম শ্রেণি পাশ করা মেয়ে তুমি
বাবা নেই পেটের তাগিদে শহরে এসেছো। তোমাদের বস্তির সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটিই তুমি। মাঝে মাঝে তোমাকে কাঁচপুর ব্রীজের মধ্যে পাওয়া যায় রাত ১০ টার পর, কেন জানি শুধু পায়চারি কর। কীভাবে তুমি তোমার পরিবার টা চালাও ভাবতেই সত্যি অবাক হয়ে যাই। তুমি সবার রিক্সায় উঠতে পারো, কিন্তু আমার রিক্সায় তোমায় কখনো উঠাতে পারিনি। কখনো তোমায় মুখ ফুটে বলতে পারিনি যে আমি তোমায় কতটায় ভালোপাই। ভয় হতো বলতে গেলে যদি রিক্সাওয়ালা বলে অপমান কর। তোমার হয়তো জানা দরকারর ঢাকা শহরের রিক্সাওয়ালারা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সকালে আবার তোমার দেখা পাই। চুল গুলো ভিজা হয়তো স্নান করে বাজারে যাচ্ছো। ডাকতে না চেয়েও কেন জানি মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল.........
‘শিউলি, ও শিউলি। একটু হুইনা যাও।
‘কন, কি কইবেন।
‘তোমারে একটু রিক্সায় কইরা বাজারে নিয়া যাই।
‘না, লাগবো না।
‘তোমারে কিছু কতা কইতাম......?
‘কি কইবেন জলদি কন, তাড়া আছে।
‘তোমারে আমার খুব বালা লাগে। আমি তোমারে খুব বালা পাই। তুমি চাইলে তোমার মার কাছে প্রস্তাব পাঠামো।
‘দেহেন, এগুলা আমার বালা লাগে না।
চলে গেলে...........
নীল আকাশের সাদা সূর্যস্নির ভাঁজে ভাঁজে তুমি কী যেন খোঁজো। কিসের এত উদাসীনতা। এই যে, আমি আছি। আমার দিকে তাকাও। কথা বলো...
দিন যায়......তুমি নির্বাক থেকে নির্বাকতর হও............
মহল্লা ছেড়ে দূরে গিয়ে রিক্সা চালানো শুরু করি। সন্ধ্যায় সূর্য নিজের ঘরে চলে যায়, চাঁদ নেমে আসে বাড়ির উঠানে।
ক্লান্ত শরীরে বসে পড়ি ফুটপাতে। সামনে ‘ছাবাক আবাসিক হোটেল (ইন্টাঃ)।
সামসু আসলো......!!!!
কিরে বইসা আছস কেন।
বালা লাগে না।
চল।
কই..?
তোরে আইজ স্বপ্নের দেশের নিয়া যাইমো।
হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় হোটেলে। আমাকে এক রুমে দিয়ে সামচু অন্য রুমে চলে যায়। আমার সামনে বসে আছে এক অল্প বয়সী তরুনী। মুখের মধ্যে কষ্টের চাপ স্পষ্ট। মেয়েটাকে দেখে আকাশ ভেঙ্গে পড়ল মাথায়। সে আর কেউ নয় আমার শিউলি।
আমার সেই সস্তা প্রেমের প্রেমিকা একজন পতিতা। সে চায়না কারো স্বপ্নের নায়িকা হয়ে থাকতে। নীরবে চাপা পড়ে যায় আমার সেই সস্তা প্রেমের ইতিহাস।


শুভ জন্মদিন মোহাম্মদ অংকন

শুভ জন্মদিন  মোহাম্মদ অংকন


শুভ জন্মদিন
মোহাম্মদ অংকন

ধানশালিক ডেস্ক :
৭ই নভেম্বর তরুণ লেখক মোহাম্মদ অংকন -এর শুভ জন্মদিন। তিনি চলনবিল অধ্যূষিত নাটোরের সিংড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)’তে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিষয় নিয়ে স্নাতক শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখির মাধ্যমে তিনি এখন পরিচিত মুখ। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার পাতাগুলো তার একচ্ছত্রে দখলে। শুধু তাই নয়, ভারত, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন বাংলা পত্রিকায় লিখেন। প্রতিদিন কোনো না কোন পত্রিকায় কলাম, গল্প, কবিতা, ছড়া, কৌতুক, ভ্রমণ ও বিভিন্ন ফিচার প্রকাশ হচ্ছে। অমর একুশে বইমেলা ২০১৯ এ প্রকাশ হয় তাঁর প্রথম শিশু-কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘দুষ্টুদেরও বুদ্ধি আছে’।

জন্মদিন পালনের অনুভূতি জানতে চাইলে তরুণ এই লেখক বলেন, ‘জন্মদিন আসা মানে মৃত্যুর দিন এগিয়ে আসা। তাই জন্মদিন পালনে আগ্রহবোধ খুবই কম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর মানুষের শুভেচ্ছা পাই; কল, বার্তা পাই- এগুলোতেই সন্তুষ্ট আমি।’

মোহাম্মদ অংকন -এর লেখালেখির প্রায় এক দশক পেরিয়েছে। তরুণ এই লেখক অনবরত লিখে চলেছেন। আগামী বইমেলায় কোনো বই প্রকাশ হচ্ছে কি’না এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ‘ঋজু প্রকাশ থেকে ‘এক রাজ্যে দুই রাজা’ শিরোনামে একটি শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ আসছে। আরও দু’টি শিশুতোষ গল্পের বই আসতে পারে। অন্যধারা পাবলিকেশন্স থেকে আসছে সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ। এছাড়া বেশ কয়েকটি যৌথ বই আসছে। আমার আত্মবিশ্বাস, পাঠকমহলে আমার বইগুলো গ্রহণযোগ্যতা পাবে।’

তরুণ এই লেখক লেখালেখি করে ইতোমধ্যে বেশ সম্মানিত হয়েছেন, পেয়েছেন বিভিন্ন পুরষ্কার। পেয়েছেন অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা, অর্জন করেছেন সু-পরিচিতি। লেখক অংকন’র ২২ বছর পূর্ণ হওয়ায় আমাদের পক্ষ থেকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। শুভ জন্মদিন।

লেখালয় সাহিত্য সম্মাননা ২০১৯ পেলেন তরুণ লেখক : আজহার মাহমুদ

লেখালয় সাহিত্য সম্মাননা ২০১৯ পেলেন তরুণ লেখক : আজহার মাহমুদ



লেখালয় সাহিত্য সম্মাননা ২০১৯ পেলেন তরুণ লেখক 
আজহার মাহমুদ

ধানশালিক ডেস্ক :
গত ১৩ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত হয় মাসিক লেখালয়ের বর্ষপূর্তি উদযাপন ও লেখালয় সাহিত্য সম্মাননা ২০১৯। বিকেল ৫ ঘটিকায় চকবাজারস্থ’ দিদার মার্কেটের পাশে নাহার প্লাজা ভবনের ৩য় তলায় যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার হল রুমে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়।

প্রথমবারের মতো সম্মাননা দিতে এসে মাসিক লেখালয় চমক সৃষ্টি করেছেন। দিয়েছেন তরুণদের সম্মাননা। লেখালয় সাহিত্য সম্মাননা ২০১৯, পেলেন তরুণ লেখক, আজহার মাহমুদ, নুরুল আজিম ইমতিয়াজ, ও আবদুল হামিদ। এবং লেখালয় বর্ষসেরা আলোকচিত্রীর পুরুষ্কার পেলেন, তিন তরুণ আলোকচিত্রী।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সহকারি সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সিনিয়ার মেডিকেল অফিসার ডাঃ সাজিয়া আফরিন। যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক সাঈদুল আরেফীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিশু সাহিত্যিক ও আলোর পাতার সম্পাদক এমরান চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন, ইমরান হোসাইন। এছাড়া সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মাসিক লেখালয়ের সম্পাদক শওকত আলী।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, তরুণদের এ সম্মাননা সত্যি অনেক আনন্দের। আমি তরুণ লেখক আজহার মাহমুদকে জানি। সে খুব ভালো লিখে। তার লেখা বাংলাদেশের বেশ কয়েকটিতে প্রকাশ হয়। আমি সেগুলো পড়ি। এই যে তার মেধা এবং উৎসাহ এটা যেন হারিয়ে না যায় আমাদের সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের এসব তরুণদের পাশে থেকে তাদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। লেখলায় সাহিত্য সম্মাননা যারা পাচ্ছে তারা সবাই খুব ভালো লেখক। লেখালয় পরিবারকে ধন্যবাদ তারা যোগ্য লেখকেই সম্মানিত করছে।
তরুণদের উদ্দেশ্য করে অন্য বক্তারা বলেন, তরুণরা যদি লেখালেখি করে তবে সমাজ ও রাষ্ট্র আরও উপকৃত হবে। বক্তারা আরও বলেন তারা যেন বেশি বেশি বই পড়ে এবং তাদের জানার পরিধিকে আরও সম্বৃদ্ধি করে।
সম¥াননা পেয়ে আজহার মাহমুদকে তার অনুভূতি জানাতে বললে তিনি বলেন, লেখালেখির অনুপ্রেরণা আমি বাবার কাছ থেকেই পেয়েছি। আমি যখন ৪র্থ শ্রেণীতে পড়তাম তখন থেকে আমার বাবা আমাদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রবন্ধ লিখতে দিতো। সেখান থেকেই আমার যাত্রা শুরু।
আমার এই অল্প বয়সে যে সম্মাননা আমি পেয়েছি সেটা আমাকে আরও অনেক দূরে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। এজন্য আমি লেখালয় পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ।