পদাবলি

পদাবলি


মুষ্টিভিক্ষা প্রেম
ফখরুল হাসান

স্তনের কালো বৃত্তের পুরোহিতরা প্রেম জুয়াড়ী
স্তনবৃত্তের সুইচ টিপে জ¦ালিয়ে দেয় যৌন বারুদ।
কথার জাদুতে কামনার জোয়ার তুলে ম্যাজিকওয়ালারা
কুলকুল জল তরঙ্গে শস্য বুনে অসংখ্য যুবক,
দুই উরুর মাঝে ডুবে মুক্তা খোঁজে দস্যু ডুবুরী।
ভ্রমণে উরুদ্বয়ে নি¤œ ভাগে জ¦ালায় নগ্ন টর্চলাইট।
ধৈর্যহীন যুবক, ঠোঁটে ঢেলে দেয় সোহাগের বিষ
নাভির গর্তে যে খুঁজে শান্তির ছায়া, সে পাগল।
নারীর ঘ্রাণে যার তুমুল নেশা হয়, সে জন্মান্ধ বধির।
চোখের নদীতে ¯œান করে, লোভী বাউ-ুলে বাউল।
প্রেমিক তাই তোমার কাছে একমুষ্টি প্রেম ভিক্ষা চাই।


মহেশখালীল মুখ   
মিজান মনির

সমুদ্রের গর্জন দূর পাহাড়ে প্রতিধ্বনি তুলে
ছড়িয়ে পড়ে তামাম লোকালয়ে-জেলেদের ছোট্ট নৌকো
দোলখায় ঢেউয়ের পরতে পরতে,
তেমনি সারাক্ষণ দোলা দেয় হৃদয়ে আমার মহেশখালীর চিহ্ন।
পাহাড়ের সব নীল অশ্রু ঝর্ণাধারার মতো গড়িয়ে পড়ছে নীচে
মিশে যেতে সমুদ্রের সাথে।
তদ্রুপ অশ্রু ঝরে গড়াগড়ি করে বুকে আমার
শুধু মহেশখালীর রুপের লাবণ্যময়ী ভালবাসার টানে।
পাহাড়ের শুষ্ক ঠোঁটে আনমনা হয়ে খেলা করে মেঘের ছায়া,
সূর্যাস্তের ক্লান্ত আলো
সমুদ্রের গর্জনের সাথে মিশে যায়
রুপালী সৈকতের কাছে।
এমনি আনমনা থাকে দু’নয়ন আমার
ভাসে শুধু মহেশখালীর মুখ।


পাতা বাহার
দাউদুল ইসলাম

জলসা ঘর আহবান করছে নতুন সাজসজ্জায়, অজর গানে, নিপুণ নৃত্যে,
গরগরে চেতনায়, দীর্ঘ পুরনো জল সাগরে... সুরে- ছন্দে মোহিত
হেরেমের অন্দরে! আসুন, পরম অভিসারে
নবালোকের সুষম বণ্টনে ভাসুন প্রাচীন রওশনে!... আসুন সুনসান জ্যোৎস্নায়;
দুধে আলতার মিশ্রণে অভিভূত হওন! সুরভিত হওন!
ঘুঙুর তালে সমাহিত মন। মদন মোহন দোলায় সৃজন রজনী...
পর্দার আড়ালে মিথের দর্শনে উদ্ধার করুন সম্প্রীতির মর্ম, শিল্পের বাণী, রমণীয়া মন;
স্বর- সরলার টানে হয়ে উঠুন আসরের মধ্যমণি। কর্পোরেট মোড়ল।
সবার অগোচরে হয়ে উঠুন সুযোগ সন্ধানী শিকারি!... গোপন মন্থনে
মোক্ষগ্রাসে, পরম সৌষ্ঠবের সূক্ষ্ম সূত্র ধরে খুলে ফেলুন বন্ধনীর গিট...নন্দনসাধনে!

ভাববেন না-
আপনাকে অভিনন্দন জানাতে জমকালো আয়োজনের অভাব হবেনা।
সমাজ সৃজনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফুটবে আপনার আদর্শের বাহার, পাতা বাহারে...



স্নেহের ধারাপাত
বিটুল দেব

স্নেহের ধারাপাতে জমিয়েছে পিতামহ সমাজের মর্যাদা । তিলে-তিলে গড়ে তুলে সামাজিক সন্মান । দাপটে চলেছে ফুলিয়ে বুক । স্বয়ং বিগ্রহ হয়ে হৃদয়ে স্থাপন করেছে মমতার মন্দির । প্রতিটা মধুর কথায় আদর্শের আবাস ধ্বনি ছুঁয়ে দেয় অন্তর । সেই গাল্পিক দাদা ভাই দান করতে শিখিয়ে ছিল দয়া । বুকে জড়িয়ে নিতো পাহাড়ের ঝোপ-ঝাড়, লতা-পাতা আর বিশাল বট বৃক্ষ ।
বুদইল্লার বাপ ব্যতীত পৈতৃক আদর্শের বীজ সকল সন্তানের অন্তরে নিহিত হয়নি । শাদামাটা বুদইল্লার বাপ মনে করে, ভিটে মাটিতে সন্ধ্যা প্রদীপ চেয়ে-চেয়ে মৃত্যুতে  সাধের সুখ আছে ।
না হয়, সেও অনন্যা কাকের ন্যায় নগরে বাসা বুনার বাসনায় মগ্ন থাকতো ।  




হিসেব করা হয়নি
শরীফ সাথী

শুধু ভালোবেসে গেলাম।
প্রতিদানে কতটুকু পেলাম
হিসেব করা হয়নি।
আঘাতের পরিমাণ হয়তো;
চোখে ক্ষয়ে ক্ষয়ে
দু’গাল বেয়ে বেয়ে
বুকের সাগরে ঢেউ তুললো,
আনন্দের পরিমাণ
দু ঠোঁট হেসে হেসে
ভালবেসে প্রকাশ করলো কিনা?
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
দেখা হয়নি?



অনন্ত দুই হাত
 মহাজিস মণ্ডল

যে নদী কাছে আসে ভালোবেসে অপার
অনেক দূরের রঙ হয় তো তখন বিকেল
একটা সে েেকান পাখি একটা সে গান গায়
জীবনের জানালা খুলে বসে থাকে অঢেল আলো

কত শব্দ কত শূন্যতার জন্ম হলে
দিনের খোলসে বাড়ে দিন রাতের খোলসে রাত
শান্তি শুধু চেয়েছি আবাদ শান্তির পারাপার
আজো আছে হূদয় বাড়িয়ে তার অনন্ত ওই দুইহাত !


কবিতার শহরে
সাঈদ চৌধুরী

এই কবিতার শহরটি এমন হয়েছে
এখানে কাকেরা খাবার পায়
শিশুগুলো দাঁড়িয়ে থাকে অসহায়ের মত
এক পাশে আলাপ হয় বিয়ে বাড়ির দাওয়াতের,
কোন জমকালো জলসা ঘরের অথবা মদ্যপ কোন নগ্ন পার্টির
শিশুগুলোর দৃষ্টি তখন রসালো আলাপে
তারা ঐ সভ্য লোকগুলোর রসালো আলাপ খায়
মুখে খাবারের রুচিতে লালা ভরে ওঠে
তারপর প্রশান্তির ঢোক গেলে
অভিজাত খাবারের তীব্র গন্ধের কথা মনে করে
কাক একটি কালো পাখি বিশেষ
ময়লায় তার বিচরণ, ময়লায় তার বসত
এখন এই শহরে ময়লার স্তুপে সদ্যজাত মানব ভ্রুণ
অথবা শিশুর কোমল দেহ পলিথিন পেচানো হয়ে পড়ে থাকে
আগে শকুন খেতো পার্থক্য শুধু এখানেই
এখন কাকে খায়
অসম প্রতিযোগীতার ফলগুলোর বিস্তৃতি
সভ্যতার দেয়ালকে আঠালো করে
আর মানবতা নামক চিরাচরিত নিয়মটি
বিতারিত হয়
এভাবেই হয়ে আসছে, হয়ত এভাবেই হবে
তবুও আমরা নিজেদের মানুষ বলতে শিখি
পেশাদারিত্বের বিদ্যালয়ে গিয়ে....!!


কুয়াশাভেজা বৃক্ষদের হৃদয়-উঞ্চতা

 কুয়াশাভেজা বৃক্ষদের হৃদয়-উঞ্চতা

                                                                                                           প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ : : গুপু ত্রিদেবী

কুয়াশাভেজা বৃ্ক্ষদের হৃদয়-উঞ্চতা
ইলিয়াস বাবর

শহরকে কেমন যেন হৃদয়হীনা প্রেমিকার মতোন লাগে আজকাল! হৈ-হুল্লোড়, জ্যাম, ছোটাছুটি, দৌড়, প্রতিযোগিতা... এসব। অথচ কোন এক শীতমগ্ন ভোরে স্বপ্ন দেখি, এই শহরেরই এক কোণে ব্যাচেলর বাসার সস্তায় কেনা খাটে শুয়ে। নগরের সব রাস্তা মিলেছে লালদিঘীর মাঠে। সড়কদ্বীপগুলোয় হলুদাভ-সবুজ পাতা নিয়ে জেগে আছে কতিপয় নাগরিক গাছ। তাদের হাবভাব গ্রামীণ অথচ স্বতঃস্ফূর্ত। গাছেরাও আশ্চর্য শৃংখলায় এভাবে পরস্পরে লাগোয়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে! কানাকানি চলছে তাদের, শুরু থেকে শেষ অবধি। একটি রাস্তা, যেটা রাহাত্তারপুল থেকে গেছে গন্তব্যে, তার বুকে করে সারথি হই আমিও। গাছের পাতায় তখন জমতে শুরু করে কুয়াশা। কিছু পাতায়, কিছু ছুঁইয়ে পড়ছে রাস্তায়, কংক্রিটে। গাছেরা জুড়ে দেয় কিছু পংক্তি। তারা নাকি আগের জন্মে মানুষ হতে চেয়েছিল, পারেনি। তাদেরই অগ্রভাগের বৃক্ষটি দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিল, বৃক্ষ হওয়াই ঢের ভালোÑ পারতপক্ষে কারো লাভ করতে না পারি, ক্ষতি তো হবে না! এ্যা, মানুষেরা কী করে দেখোনি? মানুষেরাই তো কথা না রাখার প্রচলন করছে এই ধরায়... গায়ক-বৃক্ষ গলা ছেড়ে মুক্তির গান গাওয়ার পরেই তাদের শরম শরম লাগে। কিছুক্ষণ আগে তার সাথে যোগ হওয়া শিক্ষানবিশ-গায়ক, আধা-শিক্ষিত গায়ক-বৃক্ষেরা নিজেদের জিহ্বায় কামড় বসায় নিজেদেরই লাজে। পস্ট মনে পড়ে এখন রঙ্গের টাইম নয়! হর্ষ-কোরাসে মত্ত হবার সময় নয় বাপু, গাইলে মর্সিয়া গাওÑ বৃদ্ধবৃক্ষটি বলে ওঠে। তখন ওদেরই একজন বলে যায়Ñ গ্রাম ও শহরের তফাত। বর্ষা ও গ্রীষ্মের বন্দনা। মানুষ ও বিশ^াসঘাতকের জেনেটিক যোগ-বিয়োগ। তারা কাছাকাছি হতে থাকে লালদিঘীর, চিনতে থাকে মানুষের উপসর্গ। সবচেয়ে বয়সে কম কবি-বৃক্ষটি সবাইকে অবাক করে দিয়ে আবৃত্তি করতে থাকেÑ ‘এই সব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে;/ বাইরে হয়তো শিশির ঝরছে, কিংবা পাতা,/ কিংবা প্যাঁচার গান; সেও শিশিরের মতো, হলুদ পাতার মতো।/ শহর ও গ্রামের দূর মোহনায় সিংহের হুঙ্কার শোনা যাচ্ছে/  সার্কাসের ব্যথিত সিংহের।/ এদিকে কোকিল ডাকছে পউষের মধ্য রাতে;/ কোনো-একদিন বসন্ত আসবে বলে?/ কোনো-একদিন বসন্ত ছিলো, তারই পিপাসিত প্রচার?/ তুমি স্থবির কোকিল নও? কত কোকিলকে স্থবির হয়ে যেতে দেখেছি,/ তারা কিশোর নয়,/ কিশোরী নয় আর;/ কোকিলের গান ব্যবহৃত হয়ে গেছে।’ হঠাৎ করেই যেন তাদের হৃদয়ে জেগে ওঠে আবার মিলিত হবার বাসনা। বৃক্ষসকল ঘোষণা শুনতে চায় সমুখে থাকা তাদেরই গুরুকণ্ঠে। যে ঘোষণা ঋতুহত্যার বিচারের, যে ঘোষণা নদীহত্যার, যে ঘোষণা মানুষের চেহারায় শিয়াল হয়ে বসবাসের। আশ্চর্য, আপনি চুপ করে আছেন জনাব! কম বয়েসী যে বৃক্ষটি এতক্ষণ কবিতার ঘোরে ছিল, সে-ই বলেÑ মানুষ মানুষ করো না, মানুষ না থাকলে তোমাদের দাম দিত কে? নগরের দামি এই জায়গায় তোমাদের বাসিন্দা করলো তো মানুষেরাই! সমবেত বৃক্ষ সমাবেশে নেমে আসে হীমশীতল নিরবতা। অতঃপর চলতে থাকে চোখ দেখাদেখি, চোখ টিপাটিপি...

ভোরটা ক্রমশ সকালের আমন্ত্রণ রক্ষা করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। আমি, সেই একাÑ যার কি না কোনদিনই কোলবালিশ নেয়ার অভ্যেস ছিল না, সে-ই খাটের পাশে রাখা বইয়ের স্তুপ থেকে আরামচে বুকে টেনে নেয় কতিপয় কঠিন কিতাব। বাইরের দুধসাদা কুয়াশার রেশে তখন ঘর  যেন কোল্ড স্টোর! আলগোচে টেনে নেই কম্বলটি। আমার বেহুশ হৃদয়টি তখন হয়তো গেয়ে উঠতে চায়Ñ ব্যাচলরের সম্বল, একটা বালিশ-কম্বল! হিহিহি, কবি হয়ে উঠছি মনেহয়! মনের কি আর সেন্সর আছে? সে যা চায়, যা বোধগম্য, রীতিসিদ্ধÑ সবটাই করে বসে আমার অজান্তে। ঠিক তখনই নস্টালজিয়া নামের ব্যাধিটি আমার কাঁধে সওয়ার হয়ে যায়। সে ফিরে যায় শৈশবের শীতকালে। ন্যাড়াবিলের মাঝ বরাবর যে অস্থায়ী পথরেখা তৈরি হতো, তার সামনে ছেড়ে দেই থুরথুরে হাঁটতে থাকা ভাইপোকে। সে আক্কেলগুনে পথরেখা ধরে হেঁটে যায় জালিয়াখালী বাজারে। থলে ভরে নিয়ে আসে শীতকালীন সবজি। টাইম বাজারের পূর্বদিকে, যেখানটায় জমে আছে ইকোপার্কÑ তার আশেপাশের বেলেমাটিতে বেড়ে ওঠা সবজি বাগানের দিকে মন দিয়ে তাকালে জীবনে আর কিছু দেখা লাগে তার! বেগুন-মূলা-কফি, করলা, হরেক রকম শাকে ভরা একেকটা জমি যেন স্বর্গের সবুজ টুকরো। তা-ই সকাল সকাল চলে আসে জালিয়াখালী বাজারে। আমার ভাইপো সবজির সাথে আনে ধনেপাতা। এত্তটুকুন ছেলে পারলো কেমন? এ্যা! তাকে দেখেই আমার জেঠা নাকি কানে শুনিয়ে বলে, বরবাদ গেল আমাদের ছেলেরা, খালি ঘুম আর ঘুম। দেখ তো নাতিটা কেমন চালাক... পথরেখা আঁকা জমির এককোণায় সমবয়েসীরা বসে যাই আগুন পোহাতে। তা আগুন আর লাকড়ি কোথাই? ওই যে ধান-কাঁটা ন্যাড়া আছে না! কেউ একজন লুকিয়ে রান্নাঘর থেকে নিয়ে আসে লাইটবক্স। বেশ, ধুমছে চলে আগুন পোহানো। যারা বকা-গালি দিত আমাদের এসব কান্ড দেখে, তারাই হয়তো আগুনের ধোয়ার আমন্ত্রণে চলে আসে আমাদের দিকে। আমরা তাদের একটু সাইট দেই, অগ্রজ বলে। হাত-পা গরম করে, নিজেকে চ্যাকে নিয়ে চলে যায় মাঠে, বাজারে, ব্যবসায় কিংবা অন্য কাজে। ওদিকে আমার ঘুম গভীরতর হতে হতে স্বপ্নটার শেষ দেখতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে।



গাছেরা আনন্দ কিংবা দুঃখের কথা ভুলে গিয়ে নজর দেয় নিজেদের দিকে। ভাবনায় যোগ হতে থাকে লম্বাটে অথচ কালো একটা দীর্ঘশ^াস। কার দোষ দেই এতক্ষণ? মানুষ! নিজেদের সৌন্দর্য-আকরে মৃত্যুবারতা বয়ে যায় তা খেয়াল করেছো কেউ? ক’দিন আর? সামনের সপ্তাহেই হয়তো ঝরে যাবে নিজেদের অস্থিত্ব বিপন্ন করে। নতুন অতিথি আসবে সেই কবে, কোকিলের যাক শুনে! কিছুই করার নেই, যে যাবে সে যাবেই; এটাই তো বৃক্ষসমাজের নিয়ম, রীতি বলেই মেনে নিয়েছি আমরা। পুরনো পাতা না ছড়ালে নুতন পাতা আসবে কোত্থেকে? পাশের বৃক্ষটি তখন পাল্টা প্রশ্ন করে,  সাপের খোলস বদল দেখেছো, কখনো? খানিক ভ্যাবাচেকা খেয়েই তার পাশের যুবক বৃক্ষটি বলে, দেখেনি। তবে রাস্তার মোড়ে কবিরাজের দাবাই বিক্রি দেখেছি, যেখানে সাপের কথা বারবার বলতে শোনা যায়। সাপের মতো মিলন... হিহিহি রব উঠে চারদিক থেকে। অপ্রয়োজনে খিলখিলিয়ে হাসা মানে অশ্লীলতার ইঙ্গিত। ঠোঁটকাটা বৃক্ষটি বলে, নিজেরা করবে, তলেতলে জল খাবে; আর আমরা বললেই যত দোষ! আরেক দফা হাসির তোড়ে লালদিঘী ময়দান কেঁপে উঠে। যোগ হতে থাকে মিলনের আকাঙ্খায় জড়ো হতে থাকা বৃক্ষদের মিছিল।

বাড়তে থাকে কুয়াশার প্রেম। দলবেধে জড়িয়ে ধরে বৃক্ষকে, বাড়িকে, মানুষকে... আমার তখন লোভ লাগে নগরের মোড়ে মোড়ে বসা ভাপাপিঠায়লা হতে। বেকারের দিনে ও ব্যবসাটা মন্দ হতো না। কেউ একজন জিজ্ঞেস করলেই টুপ করে বলতে পারবো, ঐতিহ্য রক্ষা করার কারবারে নামছি ভাই, কি আর করা চুরি তো করছি না; বাটপারি শিখিনি কখনো তারচে ভাপাপিঠা বিক্রি করাই ভালো। চারদিকে লোক ভিড় করবে, কেউ একজন বলবে, মামা দেন, তাড়াতাড়ি দেন। টোকাই যাদের নাম দিয়েছে নাগরিকেরা, তাদের ডেকে হয়তো দু-চারটা পিঠা ফ্রিতে খাইয়ে আনন্দ পাবো। তারা আমাকে বলবে, দেখছেন মামা, মানুষেরা কিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করছে! খালি ক্যামেরাতে মুখ দেখায়, আমরা গেলে কয়, ধুর, বাগ এখান থেকে... মুখচেনা মানুষদেরই তারা কাপড় দেয়, পাতলা পাতলা কম্বল দেয়... আমি একটা দীর্ঘশ^াস ছাড়ি। আমি কি কোনদিন কাউকে শীতবস্ত্র দিতে পারবো? যে পারে না দিতে, তার কি বড় কথা মানায়? নিজের ছায়াতেই থুথু ছিটাই আমি। যাক বাবা, ওরাও বোঝে যত ভগবাজি। কেউ একজন হয়তো গায়ের আধপুরনো গরমজামাটি দিয়ে দেবে কাউকে, গম্ভীর একটা পোজ দিয়ে ছবিটা আপলোড দেবে ফেসবুকে। আমরা বাহবা দেব। কেউ একজন আবার রাগ করবে, কমেন্ট না করার অভিযোগে।


সমবেত বৃক্ষরা পরামর্শে বসে কী করা যায় এই মরা-মৌসুমে! পাতারা ঝরে যাবে যাক। কী করা যায়, বলুন তো? নেতাগোছের এক বৃক্ষ সবাইকে চোখ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে শুরু করে তার ভেলকিবাজি। হলুদাভ পাতাগুলো তখনো শংকিত, কী হচ্ছে আসলে! চোখ খোলার পরেই আবিস্কার করে, তাদের শক্ত ঢালগুলো হয়ে গেছে একেকটা পাখি। তারা অতিথি পাখির দলে মিশে যায় নিমিশেই। গানের সাথে, উড়ার সাথে, তাদের পথ ভাঙার সাথেই মাটিতে নেমে আসে কবিতার লাইন। গায়ের বধূরা, যারা কিনা মাথায় ওড়ানা না তোলার অপরাধে বকা শোনে শাশুড়ির কাছে, তারাই মোটা কাপড় আর শালে নিজেদের রক্ষা করে। এই সুযোগে শহরের দামি শপিংমলগুলোয় বেড়ে যায় শালের চাহিদা। চড়াদামে কখনোবা ডিসকাউন্টে বিক্রি হয় শাল, দেদারচে। যে পুরুষেরা শাল পড়লে কবি কবি লাগতো তাদের এখন প্রেমিকের মতোন লাগে। অথচ এসব প্রেমিকের বুকে তখন বৃষ্টির প্রার্থনা। বৃষ্টি মানে রাস্তার বিরক্তকর ধূলো মরে যাওয়া, বৃষ্টি মানে আরো ঘনিষ্ঠ হওয়া, আরো আরো শীতলগ্ন হওয়া। বৃক্ষদের পাতা ঝরে যাওয়া, আমের বাগানে মুকুল আসা। আর? আমাদের বিবাহিত প্রেমিকাদের বাড়ি থেকে শ^শুড়বাড়িতে পিঠাপুলি যাওয়া। বাউন্ডুলেদের অবাক চোখে চেয়ে থাকা।



স্বপ্নটা আর দীর্ঘ হতে চায় না। স্বপ্নেরও বুঝি বিরক্তি আসে? মেবি! নিমিষেই জড়ো হওয়া সড়কদ্বীপের বৃক্ষরা বিছিন্ন হয়ে যায় নিজেদের মতো। তারা চলে যায় যার যার ঠিকানায়। ধপাস করে আমি পড়ে যাই, ফ্লোরে। ভেঙে যায় ঘুম। কী হলো আমার! আশ্চর্য, কেউ শোনে না আমার কথা। রুমমেটরা মিনমিনে স্বরে বলতে থাকেÑ ‘ঘোরে তারা শুকনো পাতার পাকে/ কাঁপন-ভরা হিমের বায়ুভরে।/ ঝরা ফুলের পাপড়ি তাদের ঢাকে/  লুটায় কেন মরা ঘাসের’পরে।/ হল কি দিন সারা।/ বিদায় নেবে তারা?/ এবার বুঝি কুয়াশাতে/ লুকিয়ে তারা পোউষ-রাতে/ ধুলার ডাকে সাড়া দিতে চলে/ যেথায় ভূমিতলে/ একলা তুমি, প্রিয়ে,/ বসে আছ আপন-মনে/ আঁচল মাথায় দিয়ে?/ মন যে বলে, নয় কখনোই নয়/ ফুরায়নি তো, ফুরাবার এই ভান।’





গল্প- দাহ

গল্প- দাহ


দাহ
আহমদ মেহেদী


গ্রামাঞ্চলে বেকার ছেলেদের বিশেষ করে শিক্ষিত বেকার যারা তাদের প্রতি সমাজের কিছু টাউট শ্রেণীর মুরুব্বিদের কত  অদ্ভুত অভিযোগ আর কুদৃষ্টি । যেন বেকাররা তাদের ঘরের ভাতে ভাগ বসাবে এমন অবস্থা। ভিলেজ পলিটিক্সের মধ্যে কারুকাজ গুলো চোখে পড়ে তা হল ওমকের ছেলেটি কি করে চলে? কি করছে? এত দামি লুঙ্গি-শার্ট পরে, মোবাইলে কথা বলার এত টাকা কোথায় পায়? এতশত কল্পনা-জল্পনা নিয়ে রোজ চায়ের দোকানে বাাকি চা খেতে দেখা যাায়। মেম্বার-চেয়ারম্যানদের চামচারা এক্ষেত্রে পিএএইচডি ডিগ্রিধারী। তাদের কারও কারওর চুলায় আগুন একবেলা জললে ও আরেকবেলা জলে না। তারা আদৌ ভাবতে শিখেনি যে একজন বেকার ছেলের ও বাবা-মা আছে , হয়তো কেউ লেখাপড়া করছে, কেউ সবেমাত্র পাশ করেছে, চাকরি -বাকরি পেলে কি আর এভাবে বসে থাকবে? এরকম মানসিক অত্যাচারে জর্জরিত আমাদের গ্রামেরই একজন  মানিক। এ বছর ডিগ্রি পাশ করেছে। কুমিল্লায় লজিং আর টিউশনি করে নিজেকে চালিয়েছে দীর্ঘ সাত বছর ধরে । সেই দিনগুলো অনেক বেদনার ছিল। বাড়ি থেকে নামমাত্র টাকা নিত সে। পায়ে একজোড়া সান্ডাক জুতা আর এক বন্ধুর দেওয়া জিন্স এবং টিয়া রংয়ের টি শার্টটিই ছিলো তাঁর একমাত্র ভালো পোশাক। হাতে টাকা না থাকলে কলেজে যেতে পারত না। বেশিরভাগই কলেজের বাসে যেতে হতো। বাসে উঠে পোশাকের জন্য সহপাঠীদের বাঁকা চাহনি আর টিসকারির জন্য ও  দুঃখবোধ কম ছিলো  না।  পাশ করে একটি চাকরির জন্য দিনরাত ছুটতে ছুটতেই এক বছর শেষ হতে চলল। এরই মধ্যে তার মেঝো কাকা ঢাকায় একটি   পদে চাকরি পাইয়ে দিলেও চাচির বিড়ম্বনায়  ছয় মাস করেই ছেড়ে দেয় সে। পারেনি অথচ তারই কাকা এলাকায় প্রচার করেছিল-‘ ভাতিজা কে কত ভালো একটা চাকরি দিলাম; করল না, কোন খানে পাইল্লা কালা হয় না ’ বুঝলেন ভাই। শেষ পর্যন্ত নিজের কাকা দোকান-পাটে তার অকর্মা কপালকে হাজার গালি দিয়েই তবে  ক্ষান্ত হলেন। তাদের  দু’গন্ডডা  জমি ছিল, বোনের বিয়ের সময় এক গন্ডা  বিক্রি করতে হয়েছিল । তার চাপাচাপিতে তাঁর বাবা নাকি বলেছেন একটি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করতে পারলে বাকিটুকুও বিক্রি করে দিবেন।
আমি বেকার মুক্ত হয়েছি গত সেপ্টেম্বরে। একটি এনজিও তে চাকরি করছি।  চলে যাচ্ছে কোন রকম। মানিকের। সাথে পাতলা পাতলা যোগাযোগ হতো।  স্নেহের হাত বাড়িয়ে দিলাম একসময়কার আমাদের গ্রামের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রটিকে। অভাবের কারনে যার সাধের মেধাকে হোচট খেতে হয়েছে বারবার, অবশ্য এতিম হলে ভিন্ন ব্যাপার । একদিন অফিসে কাজ করার সময়  কল আসায় স্যার কে বলে বাহিরে গেলাম-হ্যালো,কে? - আসসালামু আলাইকুম ভাই, আমি উওর পাড়ার মানিক। -ও মানিক, কি খবর তোমার? তুমি কই আছ এখন? -ভাই বাড়িতে আছি,ভাই আপনার সাথে একটা কথা বলতাম। -হুঁ বল না ! -কবে বাড়িতে আসবেন? - বৃহঃ বার, আমাকে ঢাকায় যেতে হতে পারে, যদি ঢাকায় না যাই তাহলে ত অবশ্যই যাব। -বৃহঃ  রাতে ব্রিজে গিয়ে আপনাকে কল দেব। - আচ্ছা ঠিক আছে।
লাইন কেটে কাজে মনযোগ দিলাম আবার।




ঢাকায় যাইনি, বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। বাসে উঠেই জানালার পাশে বসতে চাইলাম কিন্তু আজ সিটই পেলাম না। একজন মুরুব্বি কন্ডাক্টারকে সিট দিতে পিড়াপিড়ি শুরু করলে পাশের সিটের আরেকজন ব্যঙ্গ করে বলছে -‘সিট ত আছেই, খালিয়েনা নাই’। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। গ্রামের রাস্তায় হাটছি আর ভাবছি; রাত দশটা বাজতে না বাজতেই ঘুমের জন্য ছটফটানি শুরু করে দেয় গ্রাামের কাজের  মানুষগুলো। ইদানিং কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। দোকানগুিিলতে নির্ববাচন  আর  রোহিঙাদের খবর দেখছে মন দিয়ে!
রাতে খাবার পর পুকুরের ঘাটলায় বসে আছি এমন সময় বাবা আমার মোবাইলটা নিয়ে এলেন। বাবা -অনেকক্ষন ধরে ফোনটা বাজছে, নে ধর। -মানিক হবে হয়তো। -ও তোকে বলতে ভুলে গেছি মানিকের বাবা  এসেছিল গতকাল,তুই নাকি মানিকের একটা চাকরির কথা বলেছিলি তাকে? -হ্যাঁ বাবা, বলেছিলাম।হঠাৎ  বাবা কেন জানি তার সাথে চলতে মানা করেন  এখনো জানতে পারিনি। পরে শুনি  ভাগিনা সজল তার প্রেমিকাকে  তুলে নিয়ে গেছে।  মামলাও হয়ে গেছে। লোকজন বলাবলি করছে আমাকেও  আসামি করা হবে তাই বাবার এমন আদেশ। বাবার চিন্তা আমাকে যেন প্যাচে না আবার ফালায়। বাবা বলে কথা!  -বাবাকে আশ্বন্তকরে, ঘুমানোর আগেই ঔষধ খেয়ে নিতে বলাতে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি শোবার  ঘরে চলে গেলেন।

গত কয়েকদিন ধরে মানিকের সাথে কথা বলতে চেষ্টা করছি কিন্তু তাঁর মোবাইল বন্ধ। একদিন বিকেলে কম্পিউটার  সেন্টারে গেলাম  ইমেল করার জন্য, বাবার মত বয়সী লোকটি টাইপ করে চলেছেন আর আমি পাশে বসে দেখছি (তাঁর মেশিনের মত হাতের কারিশমা দেখে মুগ্ধই হলাম)। এসময় মোবাইলে রিং বেজে উঠায় আমি সেন্টার থেকে বের হয়ে গেলাম।
-হ্যালো বলার আগেই ওপার থেকে বলল, ভাই আমি মানিক।
-ও মানিক তুমি, তোমার নাম্বার বন্ধ কেন? তুমি ভালো আছ? -ভাই এখন থেকে এই নাম্বারে কথা হবে, ঐ নাম্বারে মেম্বারের ছেলে হুমকি দেয় -গালাগালি করে তাই বন্ধ করে দিয়েছি! -তুমি এখন কই আছ? - কারো কাছে বইলেন না, আমি এখন  নোয়াখালী আছি সজলের এক বন্ধুর বাসায়। -আরে না কি বল তুমি। -ভাই আপনার না একজন ক্লাসমেট আছে এডভোকেট? -  সে নাকি লন্ডনে আছে বর্তমানে তাঁর পিএইচডি করার কাজে। সে আসতে দেরী হবে। -ভাই আপনি কিছু মনে করবেন না, আপনি শুধু শুধু আমার জন্য মামলা খেলেন, যে কাজ জীবনে হয়নি! -আরে না, দুএকটা মামলা না খেলে নাকি সাহস হয়না (হাহাহা)। -তারপর ও ভাই আমার সাথে চলেন বলেই তো! চিন্তা করনা, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। -আচ্ছা সজল কই? -সে কক্সবাজার আছে, ভাই শুনলাম মেম্বার রে  নাকি পিটিয়ে ছে খুব  ? -হুঁ, হয়তো তিনি আর ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারবেন না। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে, সজলের নাম শুনলেই এলাকায় কেউ আৎকে উঠছে  আবার কেউ কেউ তাঁর চৌদ্দগোষ্ঠীকে গালাগালি করছে। চেয়ারম্যান ও  হতবাক সজল্লাইর এতবড় সাহস? তিনি নাকি দেখে নিবেন!  -ছোট ভাইয়ের কাছে যা শুনলাম বুঝেছ? -তো ভাই আপনার শরীরের অবস্থা ভালো? -হ্যাঁ, ভালো। -ঠিক আছে মানিক তুমি ভালো থেকো, তোমার নাম্বারটা সেভ করে রাখলাম। -আর সজলের সাথে কথা হলে বলবে আমাকে ফোন দিতে। -আচ্ছা ভাই।
সবমিলিয়ে পাঁচটি মামলা হয়েছে সজল আর মানিকের নামে সাথে  গং। চেয়ারম্যান সজল ও মানিকের বাবাকে  এলাকায় অনেক  হুমকি- ধামকি  এমনকি মেরে ফেলার ও ভয় দেখায়  মেম্বারের মেয়েকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য।  পরের মামলায় আমাকে আর জড়ানো হয়নি। মেম্বারের ছেলেই কাজটি করেছিল। আমাকে মামলা দেয়ার কারনে সে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল আর বলেছিল -তুমি এলাকায় আসবে, তোমার কোন সমস্যা নাই। মনে নাই তুমি একদিন আমাকে কলেজে মারের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলে? যাই হোক মানুষ মানুষের উপকার মনে রাখে না এযুগে তা ভুল প্রমাণিত হল ফিরোজের কথায়।




শোনা  কথা। সজল তখন ছোট ছিল, সবেমাত্র থ্রি তে পড়ে। বাজারে মসজিদের পাশে তাদের তিন শতক জায়গা ছিল। তাঁর বাবা জুতা -ব্যবসা করতেন। টাকা -পয়সার কারনে তিনি এই জায়গায় একটি ঘর ও তুলতে পারেননি। ঠিক তখনই মেম্বারের ক্ষমতার দাপটে তাদের জায়গাটা ভোগ -দখল করে আছেন ষোল বছর ধরে। বাবার প্রতি সমাজের বিচার, তাদের নিজস্ব জায়গা আর পরের! এটা কেমন বিচার? এসব জিজ্ঞাসা পোষে মনে চাপা -ক্ষোভের জন্ম হয়েছিল ষোল বছর আগে। আজ যা ঘটেছে তা ঐ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
চেয়ারম্যান গ্রাম্য -সালিশের মাধ্যমে নিজের মনমতো  সমাধান  করতে চেয়েছিলেন। যে সমাজ সজলদের পিষ্ট করে দিতে চায় সে সমাজ থেকে সজলরা ও অনেক কিছু শিখে ফেলে। সজল শুধু চেয়ারম্যান কে বলেছিল- মেম্বারের  অবস্থা ত দেখেছেন? নতুন করে খেলতে চাইলে আমি রাজি (হাহাহা)। -চেয়ারম্যান নিশ্চুপ।
এরপর  সজল  তাঁর মেয়ে কে ফিরিয়ে  দেয় , কিন্তু রোকছানা সজলকে সত্যি  ভালবেসে ফেলে।  বাজারের ঐ জায়গাটা খালি করে দিতে বাধ্য হয় মেম্বার ।  নিজের জায়গা এখন সত্যিই নিজের!

চেনা মানুষ গুলো দুরে থাকলে মন কেমন জানি করে ওঠে। সজল আর মানিক দুজনেই ফিরেছে। গ্রামের ভালো-মন্দ বিচার করে। সময়ের পরিক্রমা মানুষকে অনেক  বদলে দেয়। তাদের আজ কোন মামলা নেই ; মেম্বার কে সজল উন্নত চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তুলে। পরস্পরের  কোন বিরোধ নেই। ছায়া -ঘেরা গ্রামটিতে যেন শান্তির দূত নেমে এসেছে ! বাজারের জায়গায় সজল একটি শপিংমল দেয়।  ফিরোজ কে একটি দোকান একেবারেই উইল করে দিয়ে দেয়, মনিরাকে গ্রামের সকল কে নিয়ে বিয়ে করে সে। মানিককে একটি ভালো চাকরি দিয়ে দেয়। আমার জন্যে ও চেষ্টা করছে। এভাবেই কিছু মানুষ রূপী দেও অন্যায় আর ব্যাবিচার দেখা ছেলেবেলা থেকেই নিজ- ভুবনে একটি দাহ তাকে সত্যিকারের মানুষ করে তুলেছে । সমাজের এমন দাহে যেন আর কেউ না পুড়ে সেই চেষ্টাই করে চলেছে সজল। অবিচার  থেকে মুক্তি পেলেই সমাজ হবে সুশৃঙ্খল, কেটে যাবে অন্ধকার। ন্যায় আর মনুষ্যত্ব জেগে উঠবেই ;  মানুষের ভালোবাসাই পৃথিবীর দামী সম্পদ  যা পথ খুজেঁ দেয় সমাজের নিভু নিভু আলোগুলি কে। সেই আলোর ঝলকানিতে পুড়ে যাক ঘাপটি মেরে থাকা সকল আধার  মানুষের জীবনের!





গল্প- সত্তা

গল্প- সত্তা


সত্তা
তামান্না তাবাসসুম

‘পার্থ ভাইয়া, সুকন্যার নামে আমার এত্তো এত্তো নালিশ আছে । সে ফেসবুকে ছবি দেয় না মানলাম , তাই বলে আমাকে ইনবক্স করতেও তার অসুবিধা? আমার বাসায় দাওয়াত দিলাম, এলো না, তার নাকি মানুষের সঙ্গ ভাল লাগে না। আমি ওর বাসায় আসতে চাইলাম, তাতেও নারাজ!’
‘দেখো মৌ, তুমি ওকে তোমার আর পাঁচটা বন্ধুর সঙ্গে মেলাতে পারো না...তোমাকে বুঝতে হবে ব্যাপারটা।’
‘সেটা তো বুঝিই। যাইহোক, আপনাদের বিয়েতে তো আমি সাক্ষী হয়ে আছিই। তখনি দেখা হয়ে যাবে। হি হি হি...’
‘আরে, তোমার হাসির শব্দ একদম সুকন্যার মতো !’
‘কিন্তু ও তো...’
‘শোনো, আমি একটু ব্যস্ত ...পরে ফোন দিচ্ছি।’
সাত দিন পার হলো। রাতে ঘুম আসছে না মৌর। শুধু পার্থ’র কথা মনে পড়ছে। সেই সাথে কাজ করছে অপরাধবোধের অস্বস্তি। তারা একে অপরের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে না তো? কিন্তু পার্থ তার পরিবারের বাইরে গিয়ে সে একটা বাকপ্রতিবন্ধি মেয়ের হাত ধরেছে, আর ঐ মেয়েটি মৌয়েরও বান্ধবী; হোক না ফেসবুকে; এই ভাবনা মৌকে বার বার অস্বস্তিতে ফেলে।
এমন সময় পার্থর ফোন। ধরবে কি ধরবে না ইতস্তত করতে করতে ধরেই ফেললো।
‘সরি, এতো রাতে ডিসর্টাব করলাম,’ পার্থ বললো।
‘কোনও দরকার ছিলো?’
মৌর হঠাৎ এমন শক্ত প্রশ্নে একটু ধাক্কা খেল পার্থ।
‘তোমাকে ধন্যবাদ দেয়ার ছিল, তুমি আমার অনেক বড় একটা উপকার করেছ।’
মৌ অবাক। ‘মানে? আমি আবার কবে আপনার উপকার করলাম?’
‘আমাকে বড় ধরনের মানসিক সমস্যাথেকে তুমি বের করে এনেছ মৌ,’ পার্থ দম নিয়ে বললো।
‘আপনার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না...’
‘শোনো মৌ, সুকন্যা আসলে মানে... আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে এখন, ঘুমাও... রাখি।’ লাইন কেটে দিল পার্থ।
তারপর থেকে সুকন্যার ফেসবুক আইডি ডিএকটিভেটেড। পার্থও মৌকে অদ্ভুতভাবে এড়িয়ে চলে।

পার্থর কথা; মৌ এর সাথে কথা হওয়ার পর থেকে একদিনও শান্তিতে থাকতে পারছি না। ছোটবেলা থেকে খুব কড়া শাসনে মানুষ হওয়ায় কারো সাথে সহজে মিশতে পারি না। খুব চুপচাপ লাজুক স্বভাবের ছেলে আমি। আমার মাথায়ও এই বয়সের আর সবার মত রাজনৈতিক, রোমান্টিক ইত্যাদি অনেক ধরনের চিন্তা ঘুরপাক খায়। সেগুলো নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলতে পারি না। ফেসবুকে একবার দেশ নিয়ে একটা স্ট্যটাস দেওয়ায সব ক্লাসমেটরা হাসাহাসি শুরু করে দেয়। ব্যাপারটা ছিল এমন, আমাদের ক্লাসের হাবা-গোবাটা আবার এত কঠিন কথাও বলে!
কিন্তু আমার আবেগগুলো শেয়ার করতে খুব ইচ্ছা হয়। আমারও ইচ্ছে হয় রাজনৈতিক বা পারিপার্শিক কোনো ইসুতে ঝাল মিটিয়ে একটা স্ট্যটাস দিতে । হঠাৎ কি মনে করে একটা ফেইক আইডি খুলে ফেললাম। কিন্তু স্ট্যাটাসে কারো কাছে তেমন রেসপন্স পাই না। তখন ভাবলাম, মেয়ের নামে আইডি খুললে হয়তো অনেক রেসপন্স পাবো। তাই করলাম!
কিন্তু ব্যাপারটাকে যতটা সোজা ভেবেছিলাম, তা নয়। অনেকেই আমার সাথে কথা বলতে চায়, দেখতে চায়। বারবার এড়িয়ে চলি। ফলে অনেকেই আমাকেফেইক ভাবতে থাকে। কিন্তু কারো সঙ্গে কথা বলা কোনোভাবেই সম্ভব না কারন পক্সি দেয়ার মত কোন মেয়ে বন্ধু আমার নেই। এর আগে একবার এক তামিল নায়িকার ছবি দিয়ে ধরা খেয়েছিলাম, তাই সেটাও রিস্কি।

অগত্যা খুব করুণ একটা গল্প বানালাম। ইনডায়রেক্টলি নিজেকে বাক-প্রতিবন্ধী বললাম। বিভিন্ন গ্রুপে আর পেইজে পোষ্টটা ছড়িয়ে দিলাম। সারাদিনে অনেক মানুষ আমাকে ইনবক্স করে সমবেদনা জানায়, যে কোনও প্রয়োজনে পাশে থাকতে চায়। আমার ভেতরে যে এতো বাস্তববাদী লেখনীশক্তি আছে, এটা আবিষ্কার করে নিজেই অবাক হলাম!
একদিন আমি হুট করে নিজের আসল আইডির সাথে ফেইক আইডির ‘ইন এ রিলেশনশিপ’স্টাটাস দিয়ে দিলাম। যা হবার তাই হলো; বন্ধু মহলে বেশ আলোচনায় এলাম। মনে মনে যেমন মেয়ে আমার জীবনে চাইতাম, নিজের সুকন্যা নামের ফেইক আইডিকে তেমনি রূপ দিলাম । এক আইডি থেকে অন্য আইডির ওয়ালে আদান প্রদান হতে থাকলো ভালবাসার পংক্তিমালা। এভাবে কখন যে নিজের সৃষ্ট চরিত্রের প্রেমে নিজেই পড়ে গেলাম টেরই পেলাম না ! এমন কি দুই ফোনে দুই আইডি থেকে ইনবক্সে চ্যাটিং করতে থাকলাম ঘন্টার পর ঘন্টা !
সুকন্যা আইডিতে লগ ইন করার পর আমি হয়ে যাই অন্য এক মানুষ, অন্য এক স্বত্বা। বিভিন্ন ইস্যুতে প্রচুর শেয়ার হয় আমার স্ট্যটাস, লাইক কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়।
কিন্তু আমার সামনে এখন বিরাট যুদ্ধ। আমি জানি, প্রেমিকের কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে ভালোবাসার প্রতি, মানুষের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল মৌ । সুকন্যার এত কষ্টের পরেও এগিয়ে যেতে দেখে নিজেকে অনেক সুখী মনে হয়েছে তার। সুকন্যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী হয়। আমার আর সুকন্যার জুটিকে দেখে তার মনে হয়েছে, সত্যিকার ভালোবাসা বলতে দুনিয়ায় এখনো কিছু আছে। সেভাবেই মৌর সঙ্গে আমার আলাপচারিতা।
মৌ এর সাথে কথা বলার পর, তাকে দেখার পর থেকে আমার মনে হয়েছিল, মনের মাধুরী মিশিয়ে যে নারীকে লালন করেছি এতোটা দিন, মৌ যেন তারই বাস্তব প্রতিমা। অবশেষে এই কোণঠাসা ছেলেটির জীবনে সত্যিই কেউ এলো! আস্তে আস্তে আমি নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকি। সুকন্যা আর মৌর চ্যাট হিস্ট্রি পড়তে থাকি। কি সরল মনে বিশ্বাস করে নিচ্ছে সে সুকন্যার সব কথা!
বুঝতে পারি মৌও আমার প্রতি দুর্বল। কিন্তু এই ভয়ংকর সত্য জানার পর মৌ কি পারবে স্বাভাবিক থাকতে? আমাকে বিশ্বাস করতে?
নাহ, মৌর ঘৃণার পাত্র হওয়া চলবে না। মৌর উদ্দেশ্যে নীরবে ক্ষমা চেয়ে আমি হারিয়ে যাওয়াই ভাল মনে করলাম ।

গল্প- ইশারা

গল্প- ইশারা



ইশারা
সাজ্জাক হোসেন শিহাব

সরস চ্যাটিংয়ের শুরু থেকে হাসছে সদ্য বাবা হওয়া হাসান। তার হাসি কিছুতেই থামছেনা। ঘোরও। সে এখন কী করবে তাও বুঝে উঠতে পারছেনা। কোনমতেই না। কিছুক্ষন আগে যার সাথে হাসানের ফেসবুকে চ্যাটিংয়ের দরুন এমনটি ঘটেছে সে আর কেউ না। সে হাসানের একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া চার ব্যাচের জুনিয়র এক মেয়ে। নাম রেবেকা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রেবেকা, হাসানের সাথে মাঝেমাঝে কথা বলতো। তা ছিলো শুধুই ক্যাম্পাসের বড়ো ভাই হিসেবে এবং সময়টাও ছিলো মাত্র দেড় বছরের মতো। একাডেমিক গ-ি পেরুলেও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে তারা প্রায় একে অপরকে হাই, হ্যালো করতো। কিন্তু রেবেকা আজকের মতো এমন ধাঁচে হাসানের সাথে কথা বলতো না। হাসান প্রথমে রেবেকার এরুপ চ্যাটিং দেখে রসিকতা ভেবেছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা এক গম্ভীর কথোপকথনে রুপ নেয়। এর আগেও ফেসবুকে রেবেকা হাসানকে নক করলেও আজকের নক করার ধরণটা একটু  ভিন্ন ছিলো। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে হাসান সাধারণত নিজের মোবাইলে ফেসবুক খুলে। মুহূর্তেই অগুনতি নোটিফিকেশান আসে। লাইক-কমেন্টের ফিরিস্তি নিয়ে যেনও স্বয়ং মার্ক-জুকারবার্গ হাজির হয়। নোটিফিকেশানে ঠিকঠাক না নজর দিলেও মেসেজ অপশানে ঠিকই চোখ আটকে রাখে হাসান। কারণ এখানে অনেক সময় অনেকেই তাকে বিপদে-আপদে খোঁজে। অনেক বার্তা এসেছে আজকের আধুনিক পোস্টেও। প্রাক্তন প্রেমিকা থেকে শুরু করে অফিসের সুন্দরী সহকর্মী পর্যন্ত আছে তালিকায়। হাসান সববার্তা খুঁটে খুঁটে পড়ে। এতো খবরের ভিড়ে তার চোখ আটকায় রেবেকার কথায়। রেবেকা হাসানের ফেসবুক-ইনবক্সে লেখেছে-আমি জানি, আমাকে আপনি ভালোবাসেন। খুব বেশি ভালোবাসেন।  হাসান রেবেকার এমন কথা দেখে কী বলবে তা বুঝতে পারে না। একটু ভাবনায় পড়ে সে। কিছুদিন আগে রেবেকার স্বামী বিদেশে গেছে। উচ্চ শিক্ষার আশায়। কতদিন আর হবে। বড়োজোর সাত মাস। স্বামীর অবর্তমানে রেবেকার এমন কথা মোটেও ভালো ঠেকলও না হাসানের। হাসান দেখছে, রেবেকা নামের পাশের বাটন সবুজ রংয়ের। এর মানে রেবেকা অনলাইনে আছে। তাই সৌজন্যতার খাতিরে হাসান লেখলো- এতদিন পরে বুঝলে? হাসানের বউ-বাচ্চা শ্বশুর বাড়ি গেছে। পুরো বাড়ি ফাঁকা। বাড়িতে বউ থাকলে হাসান কখনই এমনটি লিখতো না। হয়তো অন্যভাবে রেবেকার কথার উত্তর দিতো। কিন্তু সে এখন একটু সাহস নিয়ে রসিকতার আশ্রয় নিয়েছে। কারণ, বউয়ের অবর্তমানে শয়তান তার মনে একটু সাহস জুগিয়েছে। হাসানের মাঝেমাঝে এমনটি ঘটে। সে রেবেকার ফিরতি উত্তরের অপেক্ষায় আছে। ফেসবুক মানুষের মনের কথা বাইরে আনে। ব্যক্তিত্যকে প্রকাশ করে দেয়। ওপাশে বসে রেবেকা যে লেখছে, তাও বুঝা যাচ্ছে। হাসান চেয়ে থাকে। কিছুক্ষনপর রেবেকার উত্তর আসে-আমি আগেই বুঝেছি। যেদিন আমি ক্যাম্পাসে প্রথম গেলাম সেদিনই আমার দিকে আপনি কেমন ড্যাপ ড্যাপ করে তাকালেন, তখনই আপনার চোখের ভাষা আমি বুঝেছি। জানেন কিনা জানি না, না জানলে জেনে রাখেন। মেয়েদের একেকটা চোখ একেকটা রাডার। শক্তিশালী রাডার। এই রাডারে সহজেই পুরুষের মনের কথা ধরা পড়ে। হাসান একটু স্মৃতির সরুপথ আবিষ্কার করার চেষ্টা করে। সত্যিই কি রেবেকার সাথে এমনটি ঘটেছিলো? কতো মেয়ে দেখেই তো এরুপ ঘটে, ঘটেছে। তাই বলে রেবেকার সাথে! কিছুতেই হাসান কিছু মনে করতে পারলো না। কিন্তু রেবেকার কথার সাথে সুর মিলিয়ে উল্টো বলল-ঐদিন আমার মতো তুমিও আমার দিকে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকালেই তো ল্যাটা চুকে যেতো। আজকে হয়তো আমরা এক ঘরেই থাকতাম। এভাবে কষ্ট করে চ্যাটিং করতে হতো না। একটু দুষ্টুমি করে বলে হাসান। রেবেকা সাথে সাথে লেখে-সময় তো চলে যায়নি। জীবনও ছোটো না। একদম ছোটো না। হাসান উত্তর দেয়- তা ঠিক। জীবন একদম ছোটো না। আবার বড়োও না। রেবেকার বিদ্যুৎ বেগে উত্তর আসে- ঠিক বলেছেন। কষ্টে থাকলে, জীবনকে দীর্ঘ এক নদী বলে মনে হয়। আর সুখে থাকলে মনে হয়, জীবন খুবই ছোটো। হাসান, রেবেকার কথার মানে বুঝার চেষ্টা করে। তাহলে রেবেকা কী কষ্টে আছে? সে কি সেটাই বুঝালো? হাসান নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করে। কিছুক্ষণ থেমে আবার ভাবে- কিন্তু রেবেকার তো কোনও কষ্ট থাকার কথা না। তার জানা মতে রেবেকার কোনও কিছুর অভাব নেই। তাই হাসান একটু পরে রেবেকাকে লেখে- জীবনকে তোমার দীর্ঘ বলে মনে হচ্ছে কেনও? আর তোমার এতো কষ্টই বা কিসের? তোমার স্বামী তো এখন কোরিয়ায় গেছে। দুদিন পর তুমিও যাবে। টাকা-পয়সা, ঘর-বাড়ি তোমার কোনও কিছুর অভাব নাই। এতো চিন্তা কিসের তোমার? রেবেকার ওপাশ থেকে এবার কোনও উত্তর আসে না। হাসান গলার ভেতর থেকে কথা বের করে বেশ জোরে নিজেকেই বলে- আমি কি রেবেকাকে কষ্ট দিয়ে দিলাম! এরপর সে রেবেকাকে আবার লেখে- কী হলো ? থেমে গেলে যে!  আমি কি তোমাকে কষ্ট দিলাম? তাহলে আমায় ক্ষমা করে দিও, রেবেকা। এবার রেবেকার উত্তর আসে- একেবারেই না। যাইহোক, আমার ছেলে কেমন আছে? হাসান উত্তর দেয়- বেশ ভালো আছে। ওর মায়ের সাথে ও এখন ওর নানুর বাড়ি আছে। ওপাশ থেকে সাথে সাথে উত্তর ফিরে আসে- বেশ। আপনি বাড়িতে তাহলে একা? আমার ছেলেকে কাছে রাখেননি! আমার ছেলে কি খুব জ্বালায়? হাসান বলে- একটু একটু জ্বালায়। আমার ছেলে খুবই স্মার্ট। একটু একটু জ্বালা তো সহ্য করতে হবেই। কী বলেন হাসান? স্যরি হাসান ভাই? রেবেকা, হাসানকে ভাই বলে। কিন্তু আচমকা হাসান দেখে তার খটকা লাগে।  কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর দেয়- তা তো অবশ্যই। বাবা হয়েছি, ছেলের জ্বালা তো একটুআধটু সহ্য করতেই হবে। রেবেকা উত্তর দেয়- আমার ছেলে রাতে কখন ঘুমায়? রাত দশটায়। হাসান উত্তর দেয়। আমার ছেলে তো বেশ লক্ষ্মী। বাহ। দেখতে হবে তো ছেলেটা কার! হাসান এবার খেয়াল করে, রেবেকা প্রতিটি কথায় আমার ছেলে,আমার ছেলে বলছে। হাসান একটু বিরতি দেয়। সে কোনও কিছু লেখেনা। ওপাশ থেকে আবার কথা আসে- আমার ছেলের বাবা কখন ঘুমায়? হাসান এমন প্রশ্ন দেখে একটু থমকে যায়। তার শরীর যেনও কেমন কেমন করে। হাসান কী বলবে বুঝে উঠতে পারে না। অন্যপ্রান্ত থেকে আবার রেবেকার প্রশ্ন আসে- নাকি ছেলের মায়ের জ্বালায় ঘুম আসে না? এবার হাসান, রেবেকার প্রশ্নের উত্তর মজা করে দেয়- তা তো ছেলের মা ভালো জানে। সাথে সাথে রেবেকার কাছ থেকে লাভ স্টিকার আসে। রেবেকা আর হাসানের চ্যাটিং চলছে। এটা সেটা কতো কী। রাত এগারটো পর্যন্ত চলতে থাকে তাদের সরস চ্যাটিং। রেবেকা হাসানকে এক পর্যায়ে লেখে-ছেলের বাবার বুঝা উচিত, এতো রাত পর্যন্ত জেগে থাকা ছেলের মায়ের জন্য অসম্ভব। হাসান উত্তর দেয়- হক কথা। তাহলে ঘুমিয়ে পড়া উচিত। রেবেকা সাথে সাথে উত্তর দেয়- ছেলের মায়ের কিছু চাওয়া-পাওয়া থাকে। আপনার মতো রসকষহীন মানুষ এই রসবোধ সহজে বুঝতে পারেনা। আর যদি বুঝেই থাকে, তবে কালরাতে যেনও আমার সাথে দ্যাখা করে।

আমার বাড়িতে। রেবেকা নিজের বাড়ির ঠিকানা পাঠিয়ে দেয়। এই বলেই রেহেনা চ্যাটিংয়ের সব কথোপকথন ডিলিট করে দেয়। শুধু বাড়ির ঠিকানা ছাড়া। এরপর রেবেকা অফলাইনে চলে যায়। এমন ঘটনার পর কোনো পুরুষের চোখে ঘুম আসার কথা না। হাসানের চোখেও ঘুম এলো না। হাসান প্রায় একটা নির্ঘুম রাত কাটালো। পরেরদিন সে অফিসে যায় না। বাড়িতে বসে থাকে। সারাদিন ধরে রেবেকাকে সে অনলাইনে পায় না। অবশেষে সন্ধ্যার সময় হাসান রেবেকাকে একবার অনলাইনে পায়। রেবেকা অনলাইনে এসেই হাসানকে নক করে- আপনি এখনও আসলেন না! আমি আপনার অপেক্ষায় আছি। একথা লেখেই সে আবার অফলাইনে চলে যায়। আর সে অনলাইনে আসেনা। হাসান অনেক চিন্তায় পড়ে যায়। সত্যিই কি রেবেকা আমার জন্য অপেক্ষা করছে? কেনও করছে? ক্যাম্পাসে কতো ছেলেকে দেখেছি রেবেকার জন্য অপেক্ষা করতে। আজ রেবেকা আমার জন্য অপেক্ষা করছে কেনও! এসব হাবিজাবি চিন্তা শেষে হাসান রেবেকার বাড়িতে না যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। এর কিছুদিন পরে রেবেকা কোরিয়ায় চলে যায়। তার স্বামীর কাছে। তার কিছুদিনের মধ্যেই রেবেকা হাসানকে ফেসবুকে ব্লকড করে দেয়। হাসানের কাছে এই কারণটা অজানা যেমনটি অজানা রেবেকার নিমন্ত্রণ কারণ। রেবেকার ইশারা-মানে বুঝা হাসানের জন্য বড্ডই কষ্টকর ছিলো। রেবেকা কি মজা করেছিলো? নাকি সত্যি সত্যি তার ইশারার অন্য একটা মানে ছিলো। নিশ্চয় দ্বিতীয় কারণটা হবে। তাহলে হাসানকে কেনও রেবেকা ব্লকড করলো? এই উত্তর আজও পায়নি হাসান। হয়তো হাসান আর কখনও এই উত্তর পাবেনা। এটাই হাসানের আক্ষেপ।

বৃষ্টিভেজা আমি আছি !

বৃষ্টিভেজা আমি আছি !


বৃষ্টিভেজা আমি আছি !
শাহমুব জুয়েল

আহা তুমি কেমন ঘামিয়েছো, চোখ কেমন লাল হয়ে ওঠেছে; তুমি কেমন হাঁফাচ্ছো; তোমার কী কিছু হলো, হয়েছে তো, কী, বলা যাবে না । তুমি না আসলে কী  ! বোঝার ক্ষমতা এখনো হয়নি আমার। পৃথুলতা খসে যদি আবার জন্মি আমি তাও হয়তো বুঝবো না কোনদিন
একটু অপেক্ষা করো ঠিক ধরে নেবে ঠিক কী হয়েছিলো আমার। তাই, হুম ঠিক তাই- দম নিয়ে দ্যাখো--
দ্যাখো পুবকোনে কেমন হয়ে গেলো;
মাঠে বা রাস্তায় কোথাও কারো চিহ্ন আছে শুধু তুমি আছো দ্যাখো, দ্যাখো আরে দ্যাখো না ! কেমন হয়ে গেলো
রাত হয়েছে বুঝি, ওরে আকাশ আর মাটি একহয়ে গেলো, আমি আর তুমি তাই ধরি চেপে যাই ঝড়োহাওয়ায় ভেসে;ধুম বৃষ্টির চুম্বন শেষে, কেশগুচ্ছের মাঝমুখিসিঁথির চমকে চলি বাদলদিনে, গুমগুম বিজলীর ডানায় , চিবুক বেয়ে গড়ায় আধফোঁটাজল, ঝড় ওঠে উন্মুখ মনগহীনে মুখোমুখি হই, কেবল হাতের পাঁচখুটিতে দশদশায় ছুটি মোহকার্ণিশে
সে তুমি আর আমি- জলের মিছিল, আমাদের উল¬াস
   তির্যক জলহোলি- খামছে ধরেছে তোমায় আমায় নড়ছে গাছেরা ঠিকে আছে চিহৃতিশরীর,
নিউটনের তৃতীয় সূত্র মনে আছে তোমার, কী যেন ঠিক যেমন আমি তোমারদিকে ঠিক সব নিছের মায়ায়, আর তস সইছে না, অমনি তোমার কাঁপুনি, চুপ, ক্যানো পাগলামো করোনা- জ্বর আসবে। তাই। হুম। যদি তাই হয় সে তোমার জন্য। চলো ঘরে ফিরি, এসো - চাবিটা তোমার কাছে, দাও-
তালা খুলতেই পাশফিরে দেখি আমি আছি !