পদাবলি

পদাবলি


শিশমহল-২৩
মঈন মুনতাসীর

এই সময়ের ব্যস্ত সময়
আমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে-
আমার রক্ত থেকে।
ও প্রসিদ্ধ ঝড়,
ও উন্মুক্ত লালজমিন,
বলো, আমাকে কী দিয়ে সান্ত¡না দেবে !

উপমার ডালপালা
দ্বীপ সরকার

শিল্পী হতে গেলে বুঁদ হওয়া গিটারের ঋণ চাপে আমার কপালে,
সেকারণেই কোকিলের জবানে টিকে গেলো রুনার বিস্তীর্ন গলার কৃতিত্ব,
আমার আর শিল্পী হওয়া হলোনা-
সময়ের ঠোঁটে তাই ফুটলো হাহাকার ।

অভিনেতা হতে চেয়ে সালমানের মরদেহে পশম খুঁটেছি বহুকাল,
কুক্ষিগত মাদুরে লুকিয়ে রেখেছে অভিজ্ঞতার বিপ্লব
অতঃপর পারিনি নৃত্যের তালে ঢেউ ঢেউ খেলতে- তার মতোন ।

জয়নুলের বাবুই চোখে চোখ মিলিয়ে চিত্র আঁকতে চেয়েছি তার মতোন,
কিন্ত বিবশ হাতে তুলিসমূহ ছিচকে মেঘের ঘোরে
হারিয়ে যেতে থাকলে নিঃশেষ হয়ে গেলো শিল্পীত মোহ ।

অতঃপর কবি হওয়ার লোভে
প্রকৃতির ছিরিছাদে যাপমান জ্যামিতির ইতিহাস,
বৃত্তের বাইরে উস্কানির মাদকতায় ভরপুর অনুভূতির চারাগাছ !
কৃষিকলম খুঁটে খুঁটে যন্ত্রণাগুলো উবে তোলা শিখলো আমার কবিতারা...

এলার্জিফোবিয়া
রেহেনা মাহমুদ

এলার্জির ভয়ে বেরুলে না
মাখলে না গায়ে পরাগ রেনু
ফুলটি তোমার জন্যই ফুটেছিল,
পাঁপড়ি মেলেছিল এ বসন্তে তুমি ছোঁবে বলেই
বাউরি বাতাসে হলদে রেনু উড়িয়েছিল
তুমি দরজা সেঁটে রইলে
ডানা মেলে উড়লে না তার জমিনে
অথচ একটু সাহসী হলেই পেয়ে যেতে
এ ফাগুনের শ্রেষ্ঠ উপহার,
হতে পারতো ফুলটির সফল পরাগায়ন ।

দূরে কোথাও
মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম

আজ থেকে তুই একলা থাকিস!
আজ থেকে তুই একাই দেখিস পিচঢালা পথ,
কেমন করে চলছে পথিক ভরদুপুরে,
                     কেমন করে মেলছে পাখি নিজের ডানা।

একটা ঘুড়ি উড়েই চলুক নাটাই বিহীন।
একটা মানুষ ইচ্ছে করেই মেরে ফেলুক ইচ্ছেটাকে।

আজ থেকে তুই গোপন রাখিস খুনের হিসাব!
আজ থেকে তুই নষ্ট করিস উতল হাওয়া, জ্যোৎস্না-রেণু,
সুখের অুসখ জায়নামাজে লুটিয়ে দিয়ে,
                বুকের শরম উদোম করিস, খুব নিশীতে।

একটা বাউল ঘর ভুলে থাক অকারণে;
একটা জীবন ভাসতে থাকুক দূরে কোথাও, বেখেয়ালে।

তিন বসন্ত
মোঃ ওবায়দুল হক

হাতের তালুতে ঘুরতে থাকা লাঠিমের সুড়সুড়িতে বিকেলের ঠোঁটে মৃদু হাসি;
অধর চূড়াই হারিয়ে দিশা থেমে গেছে বাতাসের গতিপথ;
কাশফুলের নিরবতা খুলে দেয় প্রেম দ্বার!
সন্ধ্যার সোনালী রোদ রাতের হাতছানিতে বিলীন হয়ে যেতে দেখি রোজ;
কিন্তু আপনাকে ছাদে আসতে দেখিনা আর !
নরম আলো আর আপনার খোলা চুল বিকেল প্রেমি করে তুলছিলো আমায়!
আশা দিয়েছিলেন শাড়ি চুড়ি পরে বাসন্তি হয়ে আসবেন !
চৈতালি রায়, তিন বসন্ত খেয়ে ফেলেছেন, আজও কথা রাখেননি ।


তোমার জন্য
স্বপন শর্মা

কুকুরটা দেখেছ নিশ্চই?
                       বেওয়ারিশ;
            ফুটপাতে
        বাজারের অলিগলি,
ডাস্টবিন কিম্বা কসাই খানার পাশে।

আমার জীবনটা ঠিক এমন
তোমার প্রেমের টানে অথবা ভালোবাসায়
ঘুরে ফিরে বার বার এখানে আসে।

 তুমি দেখেছ নিশ্চই!
    গাছের মগডালে,
                       মৌচাকে;
    কিভাবে মাছি করে মধু আহরণ;
তেমন করে পেতে চেয়েছি; তোমার মন
চাতক যেমন করে থাকে পানির জন্য
তোমায় একবার দেখে আমি হই ধন্য।

তুমি নিশ্চই জানো রজকিনির ইতিহাস
আমি চাইনি হতে সে রকম চন্ডিদাস।







পরলোকে চলে গেলেন বেলাল চৌধুরী

পরলোকে চলে গেলেন বেলাল চৌধুরী


বেলাল চৌধুরীর দু’টি কবিতা

নারীটি যখন নদী হয়ে গেল

সে কি তার মৃত্যু দৃশ্যে
পেয়েছিল পরিপূর্ণতা, কে জানে!
না হলে ঠোঁটের কোণে চিলতে হাসিটি
কি করে ফুটিয়ে তুলেছিল ঐ বিভ্রম ; ---

নগ্ন পদযুগল যেন নীরবে কওয়াকয়ি করছিল
এসেছি ঢের দূর, আর নয়,
নদীটি বহে যাচ্ছিল আপন মনে
এঁকে বেঁকে হেলায় ফেলায় . . .
ভরা জোয়ারের টানে গেল ভেসে
জ্যোত্স্না উদ্ভাসিত চরাচরকে আঁধারে ডুবিয়ে।



সেই সুখ

প্রতি মুহূর্তে বদলায় জীবন
পৃথিবী অনুভব করে বিচিত্র অভিজ্ঞতা
পাখিরাও এ ডালে ও ডালে ঘুরে ঘুরে দেখে
কখনও আটকে যায় মাঝ মাঠে
শিকারি সঠিকভাবে চলতে বাধা পায়
বদলে যায় তার স্নায়ু হাতের আঙ্গুল
নিশানা মস্তিষ্কের হোঁচটও খায় কখনও।

কিন্তু কি আশ্চর্য একমুহূর্ত এলো এখানে
আমার জীবনে যা লিখা হয়ে গেল নিদ্বর্ধিায়
হৃদয়ের খাতায় রচিত হলো কাব্যগ্রন্থ অন্তরে
শরীরের ভাঁজে ভাঁজে অনুভূত হল স্পন্দন।

জানতে চাও সেটি কি এমন অভিনব
অনুভব! শুনে রাখ সুদর্শন সুদীর্ঘ অপেক্ষার সাম্পানে
চড়ে বিশ বছর পর তোমাকে যা দেখছি মনে হচ্ছে সেই সুখ
তুমি একটুও বদলাওনি পুরোপুরি আলোর মতন।
যেন আগেরই সেই সুখ।



লাশের মিছিল

লাশের মিছিল


লাশের মিছিল
দাউদুল ইসলাম


প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে ঝরছে তরতাজা প্রাণ। মশা মাছির মতন নির্বিচারে জীবন দিচ্ছে মানুষ! এ যেন মহাসড়কের মহাব্যাধি! এর যেন কোন প্রতিষেধক নাই , নাই কোন প্রতিরোধক। ফলে এই মহামারি এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে সমাজের সকল শ্রেণীর  পেশার মানুষ। কারণ আমরা সকলেই এসব যানবাহনের যাত্রী, সমাজের ডাক্তার ,ইঞ্জিনিয়ার, উকিল  মোক্তার, শিক্ষক ছাত্র/ছাত্রী, কৃষক শ্রমিক, চাকুরীজীবী, পেশাজীবী, নারী পরুষ অর্থাৎ সকলকেই তো কোন না কোন যানবাহনে উঠতে হচ্ছে,হোক তা প্রাইভেট অথবা পাবলিক। যেহেতু সমস্যাটা সড়ক ব্যবস্থাপনায় , সড়ক নিয়ন্ত্রণের সেহেতু আপনি যেই কোন যানবাহনের যাত্রী হোন না কেন আপনি মৃত্যুর মহাসড়কে পা রাখলেন।
কিন্তু কেন?
অনেকেই কথায় বলে “এক্সিডেন্ট মানে এক্সিডেন্ট, এইটা কি কেউ ইচ্ছে করে করে?”
কথাটির যুক্তি থাকলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই যুক্তি টি সম্পূর্ণ ভুল! বরং এই যুক্তি থাকার কারণে দুর্ঘটনার দায়ী ব্যক্তিরা সড়ক ব্যবহারে অবহেলা ও বেপরোয়া হতে উৎসাহ পায়, সুযোগ পায়।
“ইচ্ছে করে দুর্ঘটনা করিনি/ করনি” এমন উক্তির জন্যই আমাদের দেশের সকল শ্রেণীর যান চালক গন একটু বেশীই অবহেলা ও দৌরাত্ম মানসিকতা লালন করে।
তার উপর  তাদের রয়েছে রাঘব বোয়াল টাইপের ছত্রছায়া! আইনের ফাঁক পোকর তো রয়েছেই সেই সাথে যোগ হয়েছে চালকদের তথাকথিত কমিটি /সমিতি, ইউনিয়নের জোর।যেমন একজন চালক ১০০% তার অবহেলা বা দাম্ভিকতার ধরুন একটি দুর্ঘটনার জন্ম দিলো, কিছু হতাহত হলো, সে কোন ভাবে পালিয়ে তার সমিতির ধাতস্থ হলো, ব্যাস!যেহেতু সেই সমিতির নেতা ক্ষমতাসীন দলের ( বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাই হয়)নেতা, সেহেতু তার হাত স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশীই লম্বা। কারণ এসব নেতারা সড়কের রাজা, আর সড়ক মানে রাজ পথ > রাজ পথ মানে নানান আন্দোলন সংগ্রামের ময়দান, সুতরাং যেই নেতার দখলে এই ময়দান সেই নেতার হাত এম পি, মন্ত্রী, উকিল, ব্যরিষ্টার অব্ধি থাকেই। আর নেতার যেহেতু এতো লম্বা হাত দু চার টা দুর্ঘটনা বা মানুষ মৃত্যুর ঘটনা তো তার কাছেই কিছুই না। এই হচ্ছে আমাদের সড়ক, মহাসড়কের যান চালকদের মাস্তানি আর দৌরাত্ম্যর মূল কাহিনী।
   এখন আসুন সড়ক/ মহাসড়কের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কারীদের দায়িত্ব, কর্তব্য, ক্ষমতা, আর সততার দিকে একটু তাকাই-
আমি যেহেতু ঢাকা চট্টগ্রামের মত শহরে থাকি না, একটি মফস্বলে থাকি আর রোজ
নিজেই বাইক নিয়ে চলাফেরা করি সেহেতু আমি আমার চলাচলের সড়ক টুকুর চিত্র যা দেখে আসছি তাই তুলে ধরবো-
চট্টগ্রাম শহরের আগে অর্থাৎ সিটি গেট থেকে ফেনী শহরের আগ পর্যন্ত যদি হিসেব করি তাহলে অন্তত ৪/৫ টি পুলিশ চেক পোষ্ট চোখে পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী এক্টিভ দেখা যায় মিরসরাই তে, বিশেষ করে রামগড় রোড় ও এশিয়ান হাইওয়ের সংযোগ স্থল হচ্ছে বারৈয়ার হাট বাজার, এই বাজারের দু পাশে তিন দিকে হচ্ছে গাছ ব্যবসায়ীদের দোকান, দু দিকে রয়েছে বাঁশ এর কাজ কারবার। রামগড়/ খাগড়াছড়ি হচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের জন্য স্বর্গের সড়ক, কারণ এই পথে প্রতিদিন শত শত পাহাড়ি গাছ, বাঁশ, ফল ফলাদির ট্রাক যাতায়াত করে। আর এসব ট্রাক মানেই নিঃশর্ত চাঁদা! কোন কথার প্রয়োজন নাই, কোন ধর কষাকষির প্রয়োজন নাই, নির্দিষ্ট  কয়েক টা স্থানে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হাজির থাকেন, আর যানবাহন চালক/হেলফারেরা তৈরি থাকেন কথিত হ্যান্ডশেকের জন্য। এই যে কয়েক স্থানে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হাজির থাকেন তাদের সবার সাথে কিন্তু হ্যান্ডশেক হচ্ছে না, এদের এক ধাপ হচ্ছে আগত বাহন টি কে সিগনাল দেয়া, আরেক ধাপ হচ্ছে নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডশেক টা করা। আরেক ধাপ আছে যারা শুধু রেড়ী থাকেন দৌড়ানোর প্রয়োজনে দৌড়োবার জন্য।
এই যে মেকানিজম টা- এর টোটাল প্রভাব টা পড়ে মূল সড়কের উপর, কারণ মহাসড়কে একটি গাড়ি যেখানে ব্রেক করে সেখানে অটোমেটিকলি পেছনের গাড়ী গুলো স্লো গতি অথবা ডান বাম করতে হয়, ফলে যানজট বা ও দুর্ঘটনার আরেক টি কারণ হচ্ছে এই ট্রাফিক হ্যান্ডশেক মেকানিজম । এখানে আরেকটি প্লাস পয়েন্ট রয়েছে, এই রামগড় বা বারইয়ারহাট সংযোগ সড়ক হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে আসা চোরা চালানের রুট। সুতরাং বিজ্ঞ পাঠক বুঝতেই পারছেন এই সড়কের মর্ম কতটা!...
সেই যাই হোক
আমাদের আম জনতার এসবে কোন লেনা দেনা নাই। মাঝে মধ্যে একটু যানজট সইতে হয় এই যা-
কিন্তু এই মেকানিজমের কারণে যে  সড়ক/ মহাসড়ক গুলো আক্রান্ত হচ্ছে অসম্ভব এক মহামারি ব্যাধিতে। আর এই ব্যাধির মরণ কামড় কতটা নির্মম তা আমরা ইতিমধ্যেই হাতে কলমে দেখেছি, দেখছি। বিষয় টা হচ্ছে চালকেরা অসম্ভব গাদ্দার,দাম্ভিক, আর ক্ষমতাধর!
কেন?
কারণ যেহেতু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার টাকার গোলাম, যেহেতু স্থানীয় নেতা, পাতি নেতারা তার ভাই- দলীয় ভাই, লাঠিয় ভাই; যেহেতু এসব ভাইয়েয়া এম পি, মন্ত্রীর কোরামীয় ভাই, রাজ পথের সৈনিক, দলবাজির ভাই।
 সেহেতু-
“ আমারে আর পায় কে? কন হালা আছে আমার হাত ধরে, ব্যাটা বাল ফালা গা...”


ইত্যাদি মনোভাব সংশ্লিষ্টদের জন্য একেবারেই সস্তা! এবং কি এসব স্থানীয় চালক
( টেম্পো, সি এন জি অটোরিকশা, পিক আপ ভ্যান, সেইফ লাইন, ভটভটি, মোটর বাইক চালক, বাস, মিনিবাস ) ইত্যাদি চালক গনের বেশীর ভাগেরই সঠিক ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই। বিশেষ করে মফস্বল সড়কের যানবাহন গুলোর চালকদের বেশীর ভাগই রিক্সা ড্রাইভিং করতো, দু’চার দিন কোন বন্ধু সি এন জি চালকের সাথে থেকে সেও ড্রাইভার সেজে যায়। এসব স্থানীয় চালক গন যখন সড়কে দৌরাত্ম্য চালায় তখন বাহির থেকে আসা কোন ট্রাক না বাসের চালক দের কোন তোয়াক্কাই করেনা  স্থানীয় ক্ষমতার বলে। আর ট্রাক/পিকাপ/বাস চালকেরা সেটা সহজে মানতে পারেনা ফলে সড়কে এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয় এবং ফলাফল দাঁড়ায় এক একটি পরিবারের নিঃস্ব হবার ইতিহাস।
এই তো সে দিন মিরসরাই আবু তোরব প্রফেসর কামাল উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষের প্রাণ গেলো সেইফ লাইনে, জানা গেছে যেই বাহন টির সাথে তার সংঘর্ষ হয় স্রেফ দৌরাত্ম বজায় রাখার কারণেই তা হয়। এর এক সপ্তাহ পরই-
গত ১৩ই এপ্রিল বারইয়ার হাট করের হাট রুটে যে দুর্ঘটনা ঘটে তা আরো মর্মান্তিক
একটি বাই বাহি ট্রাকের ধাক্কায় একিই পরিবারের চারজন, দু জন মারাত্মক আহত আর বাকী দুজন পিঠাপিঠি ভাইএর মৃত্যু।
    এভাবে প্রতিদিন শুধু মিরসরাইতেই  কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটছে। এমন কোন দিন নাই যে দিন কোন দুর্ঘটনার খবর আসছে না, প্রতিদিন কোন না কোন পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে, প্রতিদিন কেউ না কেউ পঙ্গু হচ্ছে। শুধু দুর্ঘটনা বলে দিনের পর দিন এসব মৃত্যুকে সস্তা করে তুলছে, যাদের অবহেলায় চাকার নিচে পিষ্ট হচ্ছে মানুষের জীবন তাদের একশ জনের জীবনের মূল্য একজন দুর্ঘটনা কবলিত মানুষের সমান হবেনা !
সমান হবেনা এক মিশুক মুনিরের অথবা এক তারেকের জীবনের সাথে একশ জন চালকের জীবন!
সমান হবেনা এখন বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রের জীবনের সাথে একশ জন চালকের জীবন!
সমান হবেনা একজন অধ্যক্ষ আমিনুর রসুলের ছাত্রের জীবনের সাথে একশ জন চালকের জীবন!
  গাড়ীর চালকেরা গাড়ীর স্টিয়ারিং এ বসলেই যেন দানবের রূপ নেয়, ইচ্ছে মতন আচরণ- অসদাচরণ তো আছেই, এক হাতে মোবাইল, এক হাতে সিগারেট নিয়েও গাড়ী চালাচ্ছে এবং কি একিই অবস্থায় গাড়ী অভারটেকিং ও করতে দ্বিধা করেনা। যাত্রীরা গাড়ীতে ধূমপান করে না অথচ গাড়ির ড্রাইভার হেল্পার সুপারভাইজারেরা দেদারচে ধূমপান করে। ট্রাক ড্রাইভারদের নেশা গ্রস্ত অবস্থায় গাড়ী চালানোর বিষয় টা যেন একেবারে নিয়ম করা, যেন গাড়ি চালাতে হলে নেশা করেই চালাতে হয়।মহাসড়কে সি এন জি অটো রিক্সার বিধি নিষেধের পর এসব চালকেরা যেন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, সেই সাথে যেহেতু মহা সড়কে চলবে না সেহেতু “যেমন তেমন ড্রাইভার সিএনজি চালাতে পারবে” এমন মানসিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রতিটি সড়কে মহাসড়কে সি এন জি অটো রিক্সা না চললেও গ্যাসের জন্য তারা রাস্তায় উঠছে,আর এই অল্প সময়েও অনেক দুর্ঘটনার জন্ম দিয়েছে। সি এন জি অটো রিক্সা না চললেও সাধারণ রিক্সা কিন্তু ঠিকই চলছে, ভটভটি বা নসিমন গুলো বিনা বাঁধায় চলছে। এই ভটভটি বা নসিমন গুলো সবচেয়ে বেশী মরণ-ঘাতী, এদের না আছে সড়কে চলাচলের মত উপযুক্ত বাহন, না আছে চালকের অনুমতি, অথচ প্রায় দেখা যায় পাঁচ ফুট বাহনে ২০ফুট লম্বা রড বোঝাই করে উল্কার মত ছুটছে। এসব বাহন গুলোর উপযুক্ত ব্রেক নাই, হর্ন নাই, সিগনাল লাইট নাই, চালকের নিজের কোন সেপ্টি নাই। ইদানীং সাধারণ রিক্সা গুলোতে সংযোজন হয়েছে ব্যাটারি, রাতের বেলায় এরা যে লাইট জ্বালায় তাতে বিপরীত দিকের বাহন গুলোর চালকের খুব সমস্যা হয়, কারণ রিক্সার স্টিয়ারিং হাতল যে উঁচুতে হয় তাতে যদি এলইডি লাইটের মত লাইট জ্বলে তাতে বিপরীত দিক থেকে আসা বাহন গুলোর চালকের চোখের উপর সরাসরি আলোটা পড়ে, এরা আবার রিক্সাতে অধিক সাউন্ডের হর্ন লাগায়, কেউ কেউ আবার সাউণ্ডবক্স লাগিয়ে গান বাজায়। এতে শব্দ দূষণ ও সত্যিকার প্রয়োজনীয় হর্নের গুরুত্ব নষ্ট হচ্ছে। এভাবে আমাদের সাধারণ মানুষের অনুভূতি , বিবেক ভোঁতা হয়ে গেছে।

আমরা এখন যতো মৃত্যুর খবর শুনি তাতে আমাদের ভ্রু কুঁচকায় না, মনে হয় স্বাভাবিক কোন খবর।
ইন্দ্রিয়গুলো আগের মত আবেগে আক্রান্ত হয় না। নয়ন, মন পাথর হয়ে গেছে, ভোঁতা হয়ে যাওয়া অনুভূতিতে মানুষের মৃত্যু আর আগের মতো ভাবায় না। শুধু সাময়িক এক ধরনের যন্ত্রণা দেয়। যে যন্ত্রণায় মিশে থাকে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে না পাওয়ার ব্যর্থতার কথা। বারবার বহু আলোচনা, যুক্তি, তর্ক, বহু লেখালেখি বহু টকশো হয়েছে এই সড়ক দুর্ঘটনার উপর। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
 আমাদের পার্শ্ববর্তী সীতাকুণ্ড থানার চিত্র আরো করুণ-
গত তিন মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী এ তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশের হিসেব অনুযায়ী গত তিনমাসে সীতাকুণ্ড অংশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ জন, একবছরে ১৪২ জন নিহত হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে হতাহতের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।
“অদক্ষ ও লাইসেন্স বিহীন চালকদের বেপরোয়া যান চালনা এবং মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে অব্যবস্থাপনাই এর জন্য দায়ী।”
আমাদের দেশে এসব সড়ক/ মহাসড়কে যারা যানবাহন চালায় তারা বেশিরভাগই অশিক্ষিত। গাড়ি চালানোর সঠিক সাইড, গতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয় জানে না বললেই চলে। জানলেও আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে তার মারপ্যাঁচে ঠিক নিজেকে বের করে নেয়। ফলে এত এত দুর্ঘটনা ঘটলেও শাস্তির খবর আসে হাতেগোনা। অথচ চালকের ভুলেই কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার হার বেশি থাকে। কিন্তু শাস্তির ক্ষেত্রে তা লঘু অপরাধে পরিণত হয়।
“দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই”!
এই ধরণের মন্তব্যের জোরে দুর্ঘটনার জন্য দায়ীরা বহাল তবীয়তে একের পর ঘটনা করতেই থাকে।

আমরা এর থেকে মুক্তি চাই।
আমরা নিরাপদ সড়ক চাই। জীবনের নিরাপত্তা চাই।
আর এই নিরাপত্তা এই নিশ্চয়তা কেবল মাত্র সড়ক মহা সড়কের যান চালকেরাই দিতে পারে।
কেমন হবে-
যদি প্রতিটি ড্রাইভার সু শিক্ষিত, সু প্রশিক্ষিত,ও সদাচারী হয়-
যদি তারা তাদের পেশা কে সম্মান দেয়, নিজেদের একটা স্ট্যাটাস একটা স্টাইল মেইন্টেইন করে।
যদি চালকেরা নিজেদের মধ্যে অহেতুক প্রতিযোগিতা না রাখে, দাম্ভিকতা আর দৌরাত্ম্য মনোভাব পরিহার করে।
যদি প্রতিটি চালক সড়ক আইন মেনে চলে আর সড়কের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যদি যান চালক দের অহেতুক হয়রানী না করে।
যদি প্রতিটি যান বাহনের মালিক চালকের উপর আর্থিক ও মানসিক চাপ না দেয়।
যদি প্রতিটি যাত্রী এসব চালক ও তাদের সহযোগীকে সম্মান করে।
যদি নির্দিষ্ট গতি মানা হয়, নির্দিষ্ট স্থানে স্টপেজ ও পার্কিং হয়, চালকদের নির্দিষ্ট সময় সীমার ডিউটি হয়-
আর যদি এসব কিছুর উপর থেকে অশুভ রাজনীতির কালো হাত সরে যায়। ঘুষ, চাঁদা বাজি নিপাত যায়।
যদি পথচারীরা নির্বিঘ্নে চলার জন্য ফুটপাত পায়, রাস্তা পারাপারে যদি সকলে আইন মানে , জেব্রা ক্রসিং বা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে-
তাহলে কেমন হবে?
এই ভাবনা গুলো কোন অস্বাভাবিক ভাবনা নয়। এগুলোই একটি সভ্য দেশের  যোগাযোগ ব্যবস্থার নিয়ম।
একটা জাতি কখনোই সভ্য নয় যতক্ষণ না সে তার করনীয় ও বর্জনীয় বিষয় গুলো না জানবে।
আমরা ডিজিটাল হচ্ছি, স্টাইলিশ হচ্ছি, স্মার্ট হচ্ছি অথচ আমরা সভ্য হচ্ছি না।
আসুন দয়া করে নিজেকে সভ্য হিসেবে উপস্থাপন করি।
অন্যের ক্ষতি যেন না হয় এই মনোভাব কে লালন করি। তাহলে সমাজ , সংসার, সড়ক, অফিস- আদালত, হোটেল রেস্তোরা, পার্ক, রাস্তা ঘাট, রাত –দিন, সকাল বিকাল সবকিছু উপভোগ্য হয়ে উঠবে।আনন্দময় হয়ে উঠবে।

সবার প্রতি শেষ বারের মত মিনতি করছি-
আসুন নিজেকে ভালবাসি, অন্যের উপকারে আসি, দেশের মঙ্গলে কাজ করি, নূন্যতম প্রতিদিন অন্তত এক মিনিট করে ভাবি কি করলে সোনার দেশ গড়া যাবে।



গল্প : তাজমহল

গল্প : তাজমহল


তাজমহল
নবাব আব্দুর রহিম

তিথির মনটা সকাল থেকেই ভারি ভারি ছিল। একরাশ বিষন্নতা ছেয়ে আছে তার চোখেমুখে। কিন্তু এখনকার ঘটনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। ও তো কোনমতেই নয়।

তিথি আমার বান্ধবী। ছোট থেকেই একসাথে বেড়ে উঠেছি, একসাথে পড়ালেখা করছি। আমরা দুইজনেই সামনে বছর এসএসসি পরীক্ষা দিব। কাহিনী কয়েকমাস আগে শুরু। শৈশব পেরিয়ে যখন কৈশরের গোধূলিলগ্নে দাঁড়িয়ে নবযৌবনের অপেক্ষায়। যে সময় মনের বাগানে অচেনা অজানা কিছু ফুল পাপড়ি মেলে। ভালোলাগা- ভালোবাসার দোদুল দোলায় মন দুলতে থাকে এমন এক সময়ে আমরা দুইজনেই উপনীত হয়েছি।
আমাদের স্কুল বাসা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। খাঁড়ি আর পুল পার হয়ে বিশাল এক আমবাগানের মধ্য দিয়ে সোজা একটা রাস্তা চলে গেছে। তারপর অন্য এক গ্রাম। এই লম্বা পথটা সবসময় নির্জন থাকে। সাধারণ মানুষের চলাচল অনেক কম। এ গ্রামে স্কুল না থাকায় ওখানেই সবাইকে যেতে হয়। আর আমবাগানের পাশে আরেকটা গ্রাম আছে। ও গ্রামের ছেলেরা এ রাস্তার পাশে একটু ফাঁকা জায়গায় ক্রিকেট খেলে। আর কেউ কেউ রাস্তায় আড্ডা দেয়। বিশেষ করে স্কুল শুরু-শেষের সময়ে।
ছেলেদের অনেকে সাইকেল নিয়ে যায়। আমি হেটেই যাই। হেটে যাওয়া আসা করলে বন্ধুদের সাথে গল্প করা যায়। যদিও তিথিই এর প্রধান কারন। সেদিন সকালে ক্লাস যাওয়ার পথে একটা ছেলেকে দেখলাম তিথির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। অস্বাভাবিক নয়। অসম্ভব সুন্দরী তিথি অনেকের আড়চোখের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকে সবসময়। তবুও তখন কেন জানি আমার বুকের ভেতর কী যেন মোচড় দিয়ে উঠে!
সেদিন থেকে যাওয়া আসার পথে সবসময় ছেলেটা দাঁড়িয়ে থাকত। সুদর্শন হওয়ায় আমি খুব হিংসে করতাম।  কয়েকদিন যেতে না যেতেই তিথিও ওর এরকম আচরণে রেসপন্স করতে লাগলো। ছেলেটা তিথিকে উদ্দেশ্য করে আকার ইঙ্গিতে অনেক কথা বলত।
এক শনিবার আমার খুব জ্বর আসলো। সারাদিন উঠতে পারিনি। ক্লাস বাদ গেল। পরদিন কিছুটা সুস্থ হলে ক্লাস এ্যাটেন্ড করলাম। যাওয়ার সময় তিথি আমার সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে চাইল। জানিনা কেন তিথির সাথে সময় কাটাতে আমার অনেক ভালো লাগে। খুশি হলাম। আমরা সবার পিছনে হাটছি।
তিথি আমাকে বলল: অপূর্বকে চিনিস ? ওই যে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকে ছেলেটা!
: না তো।
ও আমাকে ডানদিকে ইশারা করে বলল ওর বাড়ি এদিকে! নাম অপূর্ব।
আমি বললাম তুই কিভাবে জানলি ?
বলল যে ওই নাকি এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের ছেলে।
: রিয়্যালি ? তোর এত খোঁজ নেয়াও হয়ে গেছে? প্রেমে পড়েছিস নাকি ?
কথায় কেমন একটা টান দিয়ে বলল, আসলে তা না। কাল অপূর্ব আমাকে প্রোপোজ করেছে!
এই বলে সে মুচকি হাসছে। আমি পুরাই হা হয়ে গেছি। আমি এতদিন তিথির সাথে আছি। সে না আমাকে বুঝল, না আমার ফিলিংসগুলোকে। কিন্তু এই ক’দিনের দেখা একটা ছেলের প্রোপোজালে এত খুশি খুশি লাগছে তাকে!
আমি বললাম: তুই কিছু বলেছিস নাকি ওকে ?
বলল: প্লিজ কাউকে বলিস না। আমি কিন্তু এ্যাক্সেপ্ট করিনি এখনও।
: আর বলতে হবেনা। তোর এতদিনের বন্ধু আমি। তোর ফিলিংস আমি বুঝিনা?
অনেক কষ্ট পেলাম। বুঝতে না দিয়ে তাকে বললাম: দেখ! রিলেশন করবি না করবি সেটা তোর ব্যাপার। আমি কিছু বলব না। তবে বুঝে-শুনে ওদিকে পা দিস। আর ওই গ্রামের জানলে তোর বাপ- মাও মেনে নিবেনা!
: হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয়না শুভ! মানবেনা কেন!?
: সেটা না। তারপরেও...
: থাক তোকে ভাবতে হবেনা। শুধু কাউকে বলিস না তাহলেই হল।
তিন মাস কেটে গেল। তিথি এখন আমার মন থেকে অনেক অনেক দূরে। প্রয়োজন ছাড়া আর কথাও হয়না। আজ সকালে আমাকে বলল: কি করব শুভ! কিছু ভাল্লাগছেনা।
আমি উৎসুক হয়ে জানতে চাইলাম কি হয়েছে! সে বলল কিছুক্ষণ আগে অপূর্ব তাকে ফোনে জানাল তার বাপ- মা তার জন্য বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। আজকেই বিয়ের ডেট ছিল।
একটু পরই বিয়ের জন্য চলে যাবে!
আমি অবাক হয়ে বললাম, তোকে আগে বলেনি কেন?
কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, জানিনা! ও আমাকে তার সাথে পালিয়ে যেতে বলছিল।
আমি বললাম, পালিয়ে কি হবে!? আর এখন কি করবি তুই?
ও কাঁদতে লাগলো। বলল, কি করব!? ভাগ্যে ছিল! আমি মা বাপের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করতে পারবো না; ওকে বলে দিয়েছি।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। কি বলব! এ কঠিন সমস্যার সমাধান দেয়া আমার পক্ষে কোন মতেই সম্ভব নয়।
তার অন্ধকার সময়ের সব খবরই আমার জানা আছে। অপূর্বের সাথে ওর রিলেশনের কারণে ও তো আমার থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। তবে এসময়ে অপূর্ব’র বন্ধু রাশেদের সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক হয়েছে। তার কাছ থেকে তিথি আর অপূর্বের সব খবর পাই। যার অনেকটা রঙিন, জাঁকজমকপূর্ণ মনে হলেও ছিল অন্ধকার। অপূর্বের বাড়ি থেকে কিছু দূরে বসবাসহীন একটা বাড়ি ছিল। সে আর তার বন্ধুরা বলত ‘অপূর্বের তাজমহল’। তবে এই তাজমহল আর শাহজাহানের তাজমহলের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। এ তাজমহল শুধু অবৈধ আর অনৈতিক সম্পর্কের নিদর্শন।
রিলেশন শুরুর কয়েকদিন পরেই অপূর্ব তাকে তাজমহলে নিয়ে যায়। প্রথমে তিথি সংকোচ বোধ করলেও পরবর্তীতে অপূর্বের সাথে পুরোপুরি মিশে গিয়েছিল। সপ্তাহে দু’তিন দিনই তাদের গন্তব্য থাকতো তাজমহল।
কিন্তু তার চেয়েও বড় একটা বোমা বিস্ফোরিত হল এখন। আমি বন্ধুদের সাথে নুমান মামার দোকানে বসে আছি। তিথি ওর ছোটবোনকে কিছু কিনে দেয়ার জন্য দোকানে এসেছে। এমন সময়ে তিনটা কার ওখান দিয়ে পার হয়ে গেল। অপূর্বের বিয়ের গাড়ি ছিল! এক বন্ধু ঠাট্টা করে বলল, ‘মেম্বারের ব্যাটা পঙ্খীরাজ চড়ে গিয়েছিল বউ আনতে’! আরেকজন বলল, ‘আরে এর আগে তো ওর বিয়ে হয়েছিল পায়ে হেঁটেই! খড়ের গাদায় গ্রামেরই এক মেয়ের সাথে ধরা পড়েছিল! পরে তালাক দিয়েছিল।’
আমি জানতাম এটা। তিথি জানতো কিনা জানিনা! জানাতেও পারিনি কোনদিন। ততক্ষণে দেখলাম তিথি ঢলে পড়ে গেছে! অপূর্ব তাকে এটাও জানায়নি বুঝি!!







অণুগল্প : প্রেম হয়ে যায়

অণুগল্প : প্রেম হয়ে যায়


প্রেম হয়ে যায়
মাহবুব এনামী

সুনাইনার ফেসবুক ওয়ালে কবিতা পড়ে মুগ্ধ হয় কবিমানস রাজ। ২টা শব্দ ঠিক করার জন্যে সুনাইনাকে ইনবক্স করে।পরস্পর শাবিপ্রবিতে পড়ে এবং ব্যাচমিট,শুধু এটুকুই পরিচয় ছিল।ইনবক্সে চ্যাটিং হল আসর থেকে মাগরিব,ছেলেটা শুধুই বাঁকা বাঁকা উত্তর দিয়ে যাচ্ছিল।সুনাইনার আহ্বানে গোল চত্ত্বরে এল রাজ।রাজের মটকু সহপাঠীর সাথে আড্ডা দিচ্ছিল সুনাইনা।রাজ তার ২বন্ধুকে নিয়ে মটকুর ওপর পাশে বসল।লাজুক রাজ মাথা নিচু করে স্ক্রিনে তাকিয়ে এতক্ষণের চ্যাটিং কনভারসেশন গুলো দেখছে আর মৃদু হাসছে।কী বলবে,কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবে বালিকার সামনে?কিছু ভেবে না পেয়ে মনে পড়ছে 'ভয়ঙ্কর সর্দিকাশি' উপন্যাসের কয়টা লাইন,"বোকা হয় চালাক, চালাক হয় বোকা...."

এভাবে কতক্ষণ কেটে যাবার পর সুনাইনার পাশ থেকে সামির দাঁড়িয়ে সহাস্যে বলতে লাগল,"রাজ বন্ধু,ইনা(সুনাইনা থেকে নাইনা,নাইনা থেকে ইনা) তোর হাসির ওপর ক্রাশ। "এ সুবাধে মটকুর ঘোষণা,"তাহলে ত রাজের ট্রিট হবে,কী বলিস তোরা?হ্যা হ্যা ট্রিট হবে,ট্রিট হবে....।"
রাজঃ-দেখ ভাই,আমি ওসব ক্রাশ টাশ বুঝিনা,আমি যা জানি,ক্রাশ মানে কোন কিছু কড়মড় শব্দে ভেঙে যাওয়া।যেমন টঝ ইঅঘএখঅ ক্রাশ...।তোরা সব কটা পাগল,তাই তোদের ট্রিটমেন্ট দরকার।চল চটপটির দোকানে তোদের ট্রিট করাব!

তিন-চার ঘণ্টা আগেও যে মেয়েটিকে অচেনার ভান করে পাশ কাটিয়ে যেত,এখন সে মেয়েটি তার ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু।ইনা যে শুধু তার হাসির ওপর ক্রাশ নয়,তাকে ভালোবেসে ফেলেছে তাও বুঝে নিয়েছে রাজ(সারা রাতের চ্যাটিং থেকে)।

কিন্তু রাজের মানসপটে অন্য একটি ছবি আঁকা।গাউন পরা লম্বা-চওড়া,এলো চুলে,সোনালী খালি পায়ে সী বীচে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ বিভোর হয়ে থাকা মেয়েটির ছবি।যাকে দেখে কবি কবি ভাব জেগে উঠবে।হাত নেড়ে ইশারা করবে,হাই!চমকে গিয়ে হাসি মুখে মেয়েটিও বলবে,হাই!সহাস্যে বেলজ্জায় সোনালী পা বাড়াবে রাজের দিকে।পরস্পর পরিচিত হবে,বাতাসে চুলগুলো মুখে পড়বে,বার বার হাত দিয়ে সরাবে,নেইলপলিশ বিহীন নোখগুলো হবে রক্তলাল,উপরে সামুদ্রিক শামুকের মত শুভ্র......।

সাম্প্রতিক ২৬সেকেন্ডে দুনিয়া পাল্টে পৃথিবী করে ফেলা প্রিয়া প্রকাশের চোখের ইশারার মত রাজের ভাবনাকেও পাল্টে দেয় সুনাইনা।"আমি নারী প্রেম দিয়ে করব বিশ্ব জয়।প্রেম করে না,প্রেম হয়ে যায়,প্রেমে পড়ে যায়।"কথাগুলো আজ রাজের কাছে সচ্ছ সত্য।



গল্প : সখ্যতার সঙ্গিনী

গল্প : সখ্যতার সঙ্গিনী


সখ্যতার সঙ্গিনী
সাদিক আল আমিন

এখানে মরুভূমির মতো গলা শুকোনো রোদ, ভরদুপুরে সবুজ রঙ থেকে হালকা টিয়েতে রুপান্তর হয় যুবক বয়সী পাতাগুলো। ফাঁকা চারপাশ সারি সারি বিন্যস্ত বাড়িগুলোতে কিছুটা পূর্ণ। এক মাইলের মতো ভেতরে ঢুকলে তখন দেখা যায় আবাদি জমির বিস্ফোরণ। মস্ত এলাকা জুড়ে খাঁ খাঁ মাঠসমুদ্র। বৈশাখের শুরুতে এখন গাছপাকা ফল, জমিতে প্রাপ্তবয়স্ক হতে শুরু করা হলুদ-সবুজাভ ধান, গ্রামের বুক ছুঁয়ে চলে যাওয়া শান্ত শীতল নদী। সবকিছুর সাহচর্যে এসেছিলো লাবণ্য। অনেকটা নিজের ইচ্ছায়, কিছুটা নিতুর প্রলোভনে পরে; তার মুখে মামার বাড়ির গ্রামের বর্ণনা শুনে। আজ মধ্যসকালে পল্লবপুরে এসে পৌঁছেছে দুজন। নিতুর থেকে শোনা তার মামাবাড়ি সম্বন্ধীয় বর্ণনা নিরপেক্ষই মনে হয়েছে লাবণ্যর কাছে। এক্ষেত্রে প্রথমে তার মনবাসনা কিছুটা আঁচ করতে পেরেই বায়ু বদলের প্রস্তাবটা দিয়েছিলো নিতু। লাবণ্যও রাজি হয়েছিল এক বাক্যে। ইদানীং মন খুব বেশি নষ্টালজিয়া হতে চায়। তার ক্ষেত্রে তাই হওয়াতে এখানে আসা। এছাড়াও মনপটে অঙ্কিত গ্রাম্য সভ্যতাকে বাস্তব রুপ দিতে আসাটাও অন্যতম কারণ। কারণ খুঁজতে গেলে ঢের মিলবে। ছোট থাকতে দেশের বাড়ি যেতো সে। ছোটদের সাথে পালা করে খেলতো চি-বুড়ি, কানামাছি। এখন সবাই বড় হয়ে গেছে। দুয়েক বছর আগে দাদা মারা যায়। দাদি যাও বেঁচে আছে মনমরা হয়ে থাকে সবসময়। তার চোখেমুখে মৃত্যুদূতের হাসি প্রতিফলিত হয় প্রতিদিন। দাদিবাড়ি গিয়ে আর তৃপ্তি পাওয়া যায়না আগের মতো। নিতুর মামাবাড়িতে এসে সেই ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে ভেবেই এখানে আসা। এসেই গ্রাম্য লাবণ্যরুপে ডুবে লাবণ্য। নিতুর মামার বাড়িটা খুব বেশি স্বচ্ছল নয় আবার খুব একটা নিশ্চলও নয়। গ্রামীণ জীবনের মধ্যবিত্ত বাড়িগুলো যেমন হয়, চতুর্দিকে খড় বেড়া আর বাশের ঘেরার পরে মাথার ওপর ত্রিভুজাকার টিনের ছাউনি, যেন মনে হয় ভিটেরাজ্যের প্রভু। সেরকমই বাড়িটা নিতুর মামাদের। বিস্তর এলাকাজুড়ে উঠোন। মোরগ-মুরগি আর হাঁস-গরুর পালন। বেশ পরিচ্ছন্ন এবং তকতকে। শুধু বাড়ি দেখে লাবণ্যর মন ভরলোনা। বাইরের পুরো গ্রামটা দেখেই তবে স্বস্তি। তার এ উৎকণ্ঠা মুখে না বললেও মামী বুঝতে পারলেন। তিনি বিকেলের দিকে তাকে পুরো গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলে আশ্বস্ত করলেন। কিন্তু রাখাল মন গোয়ালে বাধা থাকতে চায়না। তার তখনি গ্রামটা ঘুরে না দেখলে যেন অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে এমন ভাব। লাবণ্য বেরিয়ে পড়ে একাই। তার চোখে দেখা পুরনো গ্রাম্য ইতিহাস কি এখনও বহাল আছে কালের পরিক্রমাতেও? নাকি ভ্রষ্ট ছোঁয়ায় আধুনিক হচ্ছে? দেখার খুব ইচ্ছে করে। হাঁটতে থাকে কাচা রাস্তা ধরে। হাতের ডানে বিশাল জমিমাঠ, বামে লিচুর বাগান, সাথেই লাগানো কবরস্থান। সিদ্ধান্ত নিলো, গ্রামটা একাই ঘুরে দেখবে। লাবণ্যর চোখে বিস্তর জমি ধরে না। সীমা পেরিয়ে চলে যায়। সেও চায় এ সীমানা কতোদূর তা দেখতে। হাতের দুপাশে পাকাপ্রায় ধানের জমির মাঝখানের আল ধরে হাঁটে লাবণ্য। মামাবাড়ি থেকে অনেকটা পথ পেরিয়ে এখন এদিকে এসেছে। শুধু রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে দেখা হবেনা কিছুই। তার ইচ্ছে সবকিছু খতিয়ে দেখার। শকুনচক্ষে সবকিছু অবলোকনের অভিযানে নেমেছে সে। দুধারে আধাপাকা ধানবাড়িতে পানি দেওয়া। মাটি পানি মিলে কাদা। লাবণ্যর একবার পা পিছলায় আর কাদায় পড়ে পা। থকথকে নোংরা হয়ে যায়। উচ্চবিলাসী দেমাগি কেউ হলে এতে ঘৃণায় নাক সিটকাতো নিজের পরিচ্ছন্নতার প্রশ্ন তুলে। লাবণ্যর তেমন কিছু মনে হয়না। বরং ভালোই লাগে নিজেকে মাটির খুব কাছাকাছি একজন মানুষ মনে করে। মাটির সোঁদা গন্ধ পেয়ে আনন্দিত হয়; পুলকিত বোধ করে এই ভেবে যে, এজন্মে আর গ্রামের এতো কাছে আসতে না পারলেও কোনো আফসোস থাকবেনা আজকের মতো এতো নিবিড়ভাবে নিজেকে প্রকৃতির সাথে মেশাবার কারণে। পা থেকে কাদা মোছার কোনো প্রবণতা দেখায় না। আরো যেন ইচ্ছে করে কাদার মধ্যে গড়াগড়ি খেতে। সোজা আলপথ ধরে হাঁটতে থাকে। এ গ্রাম আজ সে চক্ষুতৃষ্ণায় পান করবে। একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কম করে হলেও দু মাইলের মতো হেঁটেছে এ পর্যন্ত। খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে নিলে মন্দ হয়না। কিছু দূরে একটা মাঝারি আকারের আমগাছ দেখা যায়। গ্রীষ্মের শুরুতে আম ধরেছে কিছু কিছু। আমও ধানের মতো আধা কাচা আধা পাকা। আহা, কী সমতুল্যতা! লাবণ্য বিশ কদমের মতো হেঁটে আমগাছটার ছায়ায় এসে অবসাদহেতু আশ্রয় নেয়। চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয় একবার। দেখে, আমগাছের ওপারের ঢালু জমিতে একটা জোয়ানমতো ছেলে কাজ করছে। শ্যামলা গায়ের রং। রোদ চকচকে আলো পড়ে শ্যামলা পিঠ উজ্জ্বল তামাটে বর্ণ ধরেছে। এ ধরণের দৃশ্য আজকালকার দিনে খুব কম দেখতে পাওয়া যায়। নিজেকে সৌভাগ্যিনী ভাবতে থাকে সে। নিতুর কথা ভুলে যায়। অনেক জমি পার হয়ে এতোদূর এসেছে। বাড়ি ফেরার পথও মনে নেই। কোথায় কোন বাঁক যে মিলিয়ে গেছে তারও কোনো ইয়ত্তা নে। পেছনে ফিরে তাকায় লাবণ্য। নাহ্, ফেরা হবেনা মনে হয় আজ আর। অথচ সেজন্য কোনো উদ্বিগ্নতাও কাজ করেনা মনের ভেতর। সবুজ প্রকৃতির মিলনমেলায় হারিয়ে গিয়ে এখন আনন্দিতই বেশ। কতোদিন হলো এরকম খোলামেলাভাবে প্রকৃতির সাথে মিশতে পারেনি। আসতে পারেনি প্রকৃতির এতো কাছে! সে তীক্ষ্ণ চোখে কাজ করে যাওয়া জোয়ান ছেলেটার দিকে চেয়ে রয়।  তার শ্যামলা পিঠে পড়া উজ্জ্বল সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে পড়ছে লাবণ্যের ম্লান চোখে। দূর থেকে দেখে বিরানভূমিই মনে হয়েছিলো তার। আমগাছের নিচের দিকের জমিগুলো উত্তরের দিকে ঢালু হয়ে যাওয়ায় দূর থেকে বোঝা যায়নি। এখানে এই ছেলেটার কাজ করে যাওয়া দেখে করুণা হয়। তার কোনো গ্রাম্য বন্ধু বা পরিচিত কেউ নেই। যত বন্ধুবান্ধব সব শহরের। ছেলেটাকে দেখে মনে সখ্যতা জাগে। ইচ্ছে হয় তাকে সঙ্গী করার। কিন্তু তার মনস্তত্ত্বের সাথে কি এই ছেলেটার মনস্তত্ত্বের মিল থাকবে! অমিল থাকারও কথা নেই অবশ্য। সে গ্রাম পছন্দ করে আর ছেলেটাও গ্রামীণ। কিন্তু সমস্যা হলো মন জানতে পারাটা। লাবণ্য কি ছেলেটার মনের কাঠিনত্য কিংবা সরলতার কথা বলতে পারবে! পারবে না। তার সাথে সখ্যতা করতে এখানেই দ্বিধা হয়। যদি বেঁকে বসে! তার মতো শহুরে সুন্দরী রমনী দেখে যদি তার মনে কুটিলতা বা মন্দবুদ্ধির উদয় হয়! তখন সখ্যতার জায়গায় অসখ্যতা হবে। এদিকে খেয়াল দিতে হবে তাকে। প্রশ্রয় দেওয়ার মাত্রাটা নিম্নসীমায় রাখতে হবে। লাবণ্য ছেলেটাকে ডাকার কথা ভাবে। কিন্তু আগ বাড়িয়ে ডাকতে গেলেও সমস্যা। ভুল বুঝে ফেলতে পারে। একমনে কাজ করে যাওয়া গ্রাম্য জোয়ানটাকে তার উপস্থিতি জানান দেওয়ার জন্য আমগাছটা ধরে আস্তে ঝাঁকি দেয় লাবণ্য। কিছু পাতা ঝড়ে পড়ে। ঢালু জমি থেকে কোমর সমান উপরে তাকায় জোয়ান কৃষক। কাজে বিঘ্ন ঘটে। ওপরে আমগাছ। সেখান থেকে পাতা ঝরার শব্দ কানে এসেছে তার। ওপরে তাকায়। একজন দাঁড়িয়ে। ফর্সা শরীরে রোদ লেগে লাল টকটকে হয়ে গেছে। আর কয়েকটা মেয়ের মতো এই মেয়ে নয়। টানা চোখের সীমায় আটকা পড়ে যায় তার প্রাথমিক হোঁচট। লাবণ্য অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্যপাশে। এতক্ষণ যে লাবণ্য তাকে অনুসরণ করছিলো, তার শ্যামবর্ণ পিঠের উজ্জ্বল রশ্মিকে চোখে পুরছিলো সেসব খেয়াল করেনি সে। এখন আচমকাই মেয়েটার হকচকিয়ে যাওয়া চেহারা দেখে বুঝতে পারে সে বেশ অনেক সময় ধরেই তার কাজ করা দেখছে। জোয়ান কৃষক মনে মনে চিন্তিত বেশ, মেয়েটাকে তো চেনা যায় না। এদিকে এসেছে কি করতে! দেখে তো মনে হয় গ্রাম্য এলাকায় কখনো আসেনি। রোদের চটা সহ্য করতে না পেরে সাদা মুখ লাল হয়ে গেছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লাবণ্যর দিকে তাকায় সে। বুকের ভেতর দপদপ করে লাবণ্যর। চারদিকে বিরানভূমি। কেউ নেই আশেপাশে। গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জমিক্ষেতের এইদিকে তারা দুজন। ছেলেটাকে ডাকা কি তার ঠিক হলো? তার চাহনিতে কোনো আন্তরিকতা খুঁজে পায়না লাবণ্য। বরং দেখতে পায় সারা মুখজুড়ে কৌতূহল। কৌতূহল মানুষকে অপকর্মে লিপ্ত করতে সিংহভাগ দায়িত্ব বহন করে। এখনকার দিনে কাউকে বিশ্বাস করা যায় না। যদি কিছু করে বসে! ছেলেটাকে এগোতে দেখল সে। কাস্তে হাতে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। হয়তো কিছু বলবে। খারাপ মতলবের আঁচ পেলে তখন না হয় কিছু করা যাবে। আপাতত চুপ করে থাকাই ভালো। লাবণ্য চুপ থাকে। ওদের মধ্যবর্তী দূরত্ব কমতে থাকে। গা উদোম, লুঙ্গি পরা জোয়ান কৃষক এগিয়ে আসে আমগাছের দিকে। বুক টিপটিপ করছে তখন লাবণ্যর। রৌদ্রতেজে তা আরো বেড়ে গিয়ে বাইরে শোনা যায়। শব্দ হয় ধকধক। এতো উদ্বিগ্ন হবারও তার কথা নয়। ছেলেটি চলে আসে লাবণ্যর কাছে। জানতে চায় সে এই জায়গায় নতুন এসেছে কিনা। লাবণ্য মুখ ঘুরিয়ে উত্তর দিতে চেষ্টা করে, 'হ্যাঁ, এই গ্রামে আমি নতুন। আমি নিতুর বান্ধবী। ওর মামার বাসায় বেড়াতে এসেছি। সাত্তার আঙ্কেল ওর মামা হন।' এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে কথাগুলো। অবিরত প্রশ্নপর্ব এবং বারবার উত্তরপর্ব তার ভালো লাগেনা। আব্দুস সাত্তারের নাম শুনে জোয়ান ছেলেটা একটু ভক্তির মুখভঙ্গি করলো। আব্দুস সাত্তার হলেন এই গ্রামের প্রবীণ এবং সকলের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। সে যেন পুরোপুরি চিনতে পেরেছে এমন ভঙ্গিতে বলে, 'আইচ্ছা, আপনে তাইলে সাত্তার মৌলবির বাড়িত আইছেন। নিতু আফার বান্ধবী লাগেন?' লাবণ্য কোনো উত্তর দেয় না। ছেলেটা বলে, 'আমার নাম হইলো গিয়া হাবু। হাবু সরকার। সক্কলে হাবু বইলা ডাকে।' 'ও আচ্ছা', লাবণ্য সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয়। ছেলেটার সহজ সরল ভঙ্গির কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়না যে সে তার কোনো ক্ষতি করতে পারে। তবুও সতর্ক থাকতে সমস্যা নেই। শক্তভাবে কথা বলে লাবণ্য। মুখে গাম্ভীর্য ধরে রাখে। হাবু বলে, 'আপনে এহাই বাইর অইছেন কেন? নিতু আফা কই?' 'সে তার মামীর সাথে, রান্নাকাজে তাকে সহায়তা করছে', বলে লাবণ্য। হাবু মাথা চুলকোয়। প্রকাশ্যে তো এমন শিক্ষিত একটা মেয়ের সামনে মাথা চুলকোনো যায়না! তাই গোপনে করে কাজটা; ভাবে, সহায়তা মানে কি? শুদ্ধ বাংলাটা সে জানেনা। লাবণ্য কি বললো ভালোভাবে বুঝতে পারেনা সে। আবার জিজ্ঞেসও করতে পারেনা কি বললো! সম্মানে লাগে। মনে মনে ভাবে হাবু, এবার সাত্তার মৌলবির কাছে কিছু শুদ্ধ বাংলা শিখতে হবে। শহরের লোকেরা যেমন বলে।


হাবু সরকার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলে, 'আফা আপনে বাড়ি যাইবেন না? এহানে তো খুব রইদ। আপনের গা পোড়ে না?' হাবুর কথা লাবণ্যর কানে পৌঁছায় না। আনমনা হয়ে চারিদিকে তাকায় সে। দক্ষিণের কোণ ঘেঁষে চলে গেছে নদী। শান বাঁধানো হয়েছে ওদিকটায়। নদীর পাড়ে গ্রাম। বস্তির মতো সারি সারি লোকজনদের বসবাস। দূর জমিবাড়ি থেকেই সবকিছু অবলোকনে সমর্থ হয় লাবণ্য। মনে পড়ে, দেশের বাড়িতে একবার তার সমবয়সী ছেলেমেয়েদের সাথে নদীতে নেমেছিল। বুক সমান পানি। সাঁতার জানতোনা লাবণ্য। পানি বুক পর্যন্ত থাকার পরও ভয় করতোনা তখন। এখন হয়তো হাঁটুজলে নামতেই দ্বিধা করবে। তখন বয়সটাই ছিলো সেরকম। ভয়ের জ্ঞান তখনো মস্তিষ্কে ধাতস্থ হয়নি। হাবু সরকার একটু জোরে কাশি ঝেড়ে দেয়। লাবণ্যর চেতনা ফেরে। এতোক্ষণ হয়তো হাবু তাকে কিছু বলছিলো। কি বলছিলো তা জানতে চায়না সে। জানতে চাইলে হাবু তার অবচেতন মন সম্পর্কীয় দুর্বলতা সম্পর্কে জেনে যেতে পারে। তখন রসিয়ে রসিয়ে গল্পে মজাবে আর সেও আনমনা হয়ে তার নির্দেশগামী হবে, তার কল্পনায় বিচরণ করবে। না, তা হতে পারেনা। লাবণ্য এমন ভান করে যেন সে তার কথা শুনেছে। গম্ভীর ভঙ্গিতে হাবুকে বলে, 'আমাকে তোমাদের গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখাবে?' এমন রুপবতী একটা মেয়ে এরকম প্রস্তাব করায় যে কেউ-ই প্রথম মুহূর্তেই রাজি হয়ে যেতে পারে। কিন্তু হাবু দোটানায় পড়ে। সময় নিয়ে ভাবে, আজকে একটা প্রহর নষ্ট করলে তার পরবর্তী চাষাবাদের কোনো ক্ষতি হবে কিনা। না, তেমন একটা ক্ষতি হবেনা। কাল খুব ভোরে আইল পাড়া শুরু করলে ঘাটতিটা মোচন করা যাবে। তারপর দ্বিতীয় মুহূর্তে উত্তর দেয়, 'জ্বে আফা, অবশ্যি দেখাবো। বহুত সুন্দর আমাগো গেরাম। আপনে আহেন এইদিকে। রইদে একদম পুইড়া যাইতেছেন।' হাবু লাবণ্যকে জমিবাড়ি থেকে কাচা রাস্তায় নিয়ে আসে। কাদা পায়েই হাঁটে লাবণ্য। ছেলেটা পুরোপুরি সখ্যতার সঠিক সঙ্গী নয়। সে শুধু তার সুশ্রী মুখটাই দেখেছে, আপাদমস্তক চোখে নেয়নি। তার কাদামাখা পা গোচরে আনেনি। জমির সীমান্তে রাস্তায় এসে পড়ে তারা। হাবু বলে, 'এহানে একটু থামেন। আমি বাড়ি থাইকা আইতাছি।' লাবণ্য হ্যাঁ সূচক ইশারায় মাথা নাড়ে। হাবু সরকার বাড়িতে যায় যাত্রাপূর্ব প্রস্তুতিস্বরুপ ভালো লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে আসার জন্য।
কিছু সময় নিয়ে তারপর ফিরে আসে হাবু। সুন্দরী এক নারীর সাথে গ্রাম ভ্রমণে বেরোবে সে। নিজেকে একটু পরিপাটি না দেখালে তো মানায় না। হাবুর অদক্ষ সাজগোজ দেখে মুচকি হাসে লাবণ্য। ছেলেটা নতুন গেঞ্জি পড়েছে, লুঙ্গি পড়েছে, মুখে গলায় পাউডারের হালকা পরশ। বেশ সুদর্শনই দেখাচ্ছে তাকে। হাবুকে লজ্জা দিতে চায় সে। লজ্জা দিতে পারলে ছেলেটার আস্পর্ধার সীমা কিছুটা সংকুচিত হয়ে যাবে। যার আস্পর্ধার সীমা যত বেশি তার পরক্ষতি সাধনের মাত্রাও তত বেশি। লাবণ্য মুচকি হেসে হাবুর দিতে তাকিয়ে বলে, 'সেজে এসেছো নাকি?' হাবু লজ্জা পায়। লাবণ্য তাকে তুমি তুমি করে বলছে এ জন্যও, আবার তার সাজগোজের প্রশংসা করছে সে জন্যই। দুটো কারণে একসাথে লজ্জা পেয়েছে সে। লাবণ্যর মতো যদি তার মুখটা ফর্সা হতো তাহলে নির্ঘাত লাল হয়ে যেত। কিন্তু শ্যাম বর্ণ হওয়ায় মুখাকৃতিতে ধরতে না পারলেও হাবুর অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বিনীত ভঙ্গিতে হাসায় লাবণ্য বুঝে ফেলে লজ্জার আবির্ভাব। ধাপে ধাপে এগোচ্ছে সে। প্রশ্রয় না দিয়ে, নিজের দুর্বলতা জানতে না দিয়ে, লজ্জা দিয়ে, গাম্ভীর্যতা ধারণ করে হাবুকে আয়ত্বে আনতে হবে। এমনটাই চিন্তা করে রেখেছে। আমগাছ তলায় হালকা ছায়ার প্রত্যাশায় যখন সে পথগামী হলো, স্বল্প দূরত্বে থাকা হাবুর কাস্তে হাতে তার দিকে চিন্তিত ভঙ্গিতে চাওয়া আর নিকটে আসার প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপের ঝংকার তার কানে বেজেছে। মনে ধরেছে হাবুকে। নেই কোনো নাগরিক অতিব্যস্ততা কিংবা কৃত্রিম হৃদয়ে বশবর্তী করার কোনো বদ মতলব ছেলেটার মধ্যে। বুঝতে পেরেছে একটু একটু। তবুও কলস বাজিয়ে নেওয়াই ভালো। লাবণ্য বাজিয়ে নিচ্ছে-- প্রতিধাপে, সময়ে সময়ে। হাবুর লজ্জা কাটতে সময় লাগে। সময়ের পিঠ চাপড়ে দিয়ে ভাবে অনেক বিলম্ব করেছে উত্তর দিতে। চটজলদি বলে ফেলে, 'ইয়ে মানে..ওই ইকটু আরকি আফা।' অতিদ্রুত বলে ফেলায় কথাগুলো যান্ত্রিক শোনায়। লাবণ্য হয়তো তার কথা বুঝতে পায় অথবা পায় না। বুঝতে না পেলেও সে ধরণেরই কিছু উত্তর স্বরচনা করে মনগোচর করে; কারণ স্বরচিত উত্তর কখনো কর্ণগোচর হয়না। লাবণ্য কিছুটা দার্শনিকও বটে। সূক্ষ্ম বিষয় খুব কমই তার নাগালের বাইরে যায়। একটা বিষয় সে লক্ষ্য করেছে। হাবু নিজের বাসায় গিয়ে পরিপাটি হয়ে সেজে এলো, পরিষ্কার হয়ে এলো গ্রামভ্রমণের উদ্দেশ্যে। লাবণ্যকে নিয়েই তো যাবে সে। অথচ মেয়েটার পায়ে এখনো যে অসতর্কতাবশত আলের ধারে পা পড়ে যাওয়ায় চিটচিটে কাদা ভরে আছে, সেটা হাবুর দৃষ্টিগোচর হয়না! এক্ষেত্রে হাবুর সূক্ষপোলব্ধির অভাব অনুভব করে লাবণ্য। এর আগেও এমন উপলব্ধির সূক্ষ্ম বিচারজালে ফেসেছে হাবু। যখন লাবণ্য তাকে গ্রামটা ঘুরিয়ে আনার কথা বলেছিল, তখন সে কিছু বিলম্ব করেছিল সিদ্ধান্ত জানাতে। এটাই লাবণ্য লক্ষ্য করেছে। যাই হোক, প্রাথমিক পরীক্ষায় কিছুটা ছাড় তো দেওয়াই যায়। পরে সুদক্ষ দার্শনিক বানিয়ে নিলেই হলো। লাবণ্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হাবুর কিছু বলার আশায়। যদি কাদামাখা পা তার চোখে পড়ে! কিন্তু তা হলোনা। হাবু নিশ্চুপ লজ্জামুখ দাঁড়িয়ে রইল। ব্যর্থ সময়ের পিঠে এবার হাত চাপড়ালো লাবণ্য। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, 'চলো'।
তারা দুজনে পাশাপাশি, কিছু দূরত্ব বজায় রেখে হেঁটে চললো পূর্বদিকের কাচা রাস্তা ঘরে। আধঘণ্টার মতো হেঁটে তারপর নদীর পাশে জেগে ওঠা বসতবাড়িগুলোর কাছে পৌঁছল। পায়ে ব্যথা ধরেছে বটে। কিন্তু কোথাও বসবার জো নেই। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হচ্ছে এখন। সবাই নিজের ঘরে। নিস্তব্ধ কাকডাকা দুপুরের অবসাদ গুটিয়ে এখন বিকেল নামতে শুরু করেছে চিলের ডানার নিচে আশ্রয় নেয়ার মতো। লাবণ্যর হাঁটতে হাঁটতে থেমে পড়া দেখে আর ঘন ঘন প্রশ্বাসের শব্দ শুনে হাবু তার ক্লান্তির মাত্রা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা করে নিলো। না জানি কেন কিছুটা শঙ্কিত হয়ে লাবণ্যকে বললো, 'আফা কোথাও বইবেন?' লাবণ্য হাত নেড়ে তার অসম্মতির কথা জানিয়ে দিলো। কেবল তো নদীপাড় এসেছে, এখনো পুরো গ্রাম দেখা বাকি।  খানিক জিরিয়ে তারা আবার হাঁটতে লাগল। রাস্তা নদীর দিকপ্রবাহ বরাবর বেঁকে গেছে। নদীর গতিপথ যেদিকে, ক্ষুদ্র অনুসারী কাচা রাস্তাও সেদিকে গেছে। হয়তো নদীর সাথে নিজেকে তুলনা করতে চায়, নয়তো নদীর ভৃত্য সেজে তার সাথেসাথে চলার দৃশ্য দেখাতে চায়। হাবু গ্রামের ছেলে। পুরো গ্রামটা কয়েকবার পাক দিলেও তার ক্লান্তি খুব একটা আসবেনা কিন্তু লাবণ্য বড়ো নিস্তেজ, গ্রামের একটি অংশ দর্শনেই তাকে ক্লান্তিবোধ গ্রাস করেছে। যতোটা ভেবেছিল আগে, যে গোটা গ্রামটা দেখেই তবে বাড়ি ফিরবে, তেমনটা মনে হয় এখন আর সম্ভব না। এ গ্রাম বিস্তর। তবে গ্রামের এই বিস্তারিত গদ্যের প্রভাবে দর্শনশাস্ত্রের কোনো ক্ষতি হয়নি। লাবণ্য ঠিকই দার্শনিক বেশে হাবুর আরেকটা ভুল ধরতে সক্ষম হয়েছে। এতো ক্লান্ত হয়ে থেমে যাওয়ায় এবং খুব কাছাকাছি বাড়িগুলোর পাশে থাকার পরেও হাবু একবারও কোনো একটা বাড়ি থেকে একগ্লাস ঠান্ডা পানি এনে তাকে পান করানোর প্রয়োজনবোধ করেনি। গ্রাম্য ছেলেরা যেমনি সরল তেমনি অথর্ব। মনে মনে গালি দেয় লাবণ্য। পূর্ব থেকে বামে বেঁকে গিয়ে রাস্তা পড়েছে দক্ষিণে। হাবুর গ্রাম্য ভাষার শুদ্ধ বক্তব্য অনুযায়ী সেদিকে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অকৃত্রিম রুপধারা রয়েছে। যা দেখলে পরে দেখতেই চাবে এ মন। জুড়োবেনা কখনো। কিন্তু মন না জুড়োলে আর এসব সৌন্দর্য দেখেই বা কি লাভ! লাবণ্য ভাবে হাবুকে নিয়ে। আর ভাবে আগের কথাও। সহপাঠী রুদ্র তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো। আরো অনেক প্রস্তাব এসেছে তার কাছে। সব বড় বড় পেশাদার। কিন্তু লাবণ্য অর্থ দেখেনি, দেখেছে দর্শন। তার যাচাই বাছাইয়ে কেউ টিকেনি। কেউ তার সখ্যতার সঙ্গী হবার যোগ্যতা রাখেনি। কারো দর্শনধারীতে দোষ তো কারো গুণবিচারীতে। হাবুর অতো দোষ ধরা পড়েনি। যদিও হাতেগোনা কয়েকটা আছে! লাবণ্য তার বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করে এসব শুধরে নেবে। অন্যদিকে হাবু সরকারও ভাবে লাবণ্যকে নিয়ে। মেয়েটাকে তার খুব ভালো লেগেছে। যদিও সে মেয়েটার যোগ্য নয় তবুও সাত্তার মৌলবিকে একবার বলে দেখতে হবে। ভাগ্য ভালো থাকলে যদি চিরতরে সে তার সখ্যতার সঙ্গিনী হয়ে যায়! মনের আনন্দে লাফায় হাবু। লাবণ্য ভাবে, মনের দিক থেকে হাবু স্বচ্ছ এবং বিনীত। সাদা মনে কোনো কাদা নেই আরকি। মনের সব কাদা সে ধুয়ে ফেলেছে। কিন্তু লাবণ্যর পায়ে যে এখনো কাদা! পায়ের কাদা না হয় পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা যাবে কিন্তু মনের কাদা কিভাবে ধোবে? সে নিজের ভেতর মনবাক্য রচনা করে, 'হাবু সরকার, তোমাকে দর্শনশাস্ত্রে জয়ী হয়ে আমার মনে জন্মানো তোমার ভুলস্বরুপ একগাদা কাদাও যে ধুয়ে ফেলতে হবে!'