ইপেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ২০২

ইপেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ২০২

 তারুণ্যের শিল্প সরোবর ।। বর্ষ ৮ম ।। সংখ্যা ২০২,

শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১৪ পৌষ ১৪৩০, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৫
























সৈয়দ শামসুল হক : বাংলা সাহিত্যের বিরলপ্রজ প্রতিভা

সৈয়দ শামসুল হক : বাংলা সাহিত্যের বিরলপ্রজ প্রতিভা

 

    সৈয়দ শামসুল হক [জন্ম: ২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫, মৃত্যু: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬]


সৈয়দ শামসুল হক

বাংলা সাহিত্যের বিরলপ্রজ প্রতিভা

সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান



আমি জন্মেছি বাংলায়

আমি বাংলায় কথা বলি।

আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি।

চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।

তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে?

সৈয়দ শামসুল হক

[জন্ম: ২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫ মৃত্যু: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬]

অবুঝ দিনের গল্প

অবুঝ দিনের গল্প

 



অবুঝ দিনের গল্প

যাকারিয়া মুহাম্মদ


বারান্দায় চেয়ার টেনে বসে আছি। ছোট বাটন ফোন দিয়ে টেক্সটে কথা বলছি। কার সাথে কথা বলছিলাম ঠিক মনে নেই। সূর্য মাথার উপর আগুন ঢালছে তখন। ছোট বোন খেলনার চুলায় ডেগ বসিয়ে কী যেন রান্না করছে। আম্মা ওকে দেখে রাখতে বলে গেলেন। গরমে আমার কপালের ঘাম কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা করে। উঠোনের রেন্ট্রি গাছের ডালে একটা ঘুঘু ডেকে যাচ্ছে একা একা, কী করুণ তার সেই ডাক। আমি টেক্সটের রিপ্লাই দিচ্ছি। আর এদিকওদিক চোখ বোলাচ্ছি আলতো করে ।

পদাবলি : ০১

পদাবলি : ০১

 



দীর্ঘশ্বাস

মাসউদ মাহমুদ


বুকারণ্যে তিরতিরে কেঁপে উঠে দুঃখপল্লব

চোখের কোটরে হাহাকার জমে, জেগে উঠে বেদনারা

নোনাজলের দরিয়া উপচে বেরোয় ,

রক্তাক্ত রঙচটা চোখ অপলক চেয়ে রয় কেবল

ঐ শুষ্ক মাংসল কংকাল শরীরে।

পদাবলি : ০২

পদাবলি : ০২

 



নাম না জানা পাখি 

রুদ্র সুশান্ত


আমাদের বাড়ির আনাচে-কানাচে ঘুরে একটি রাঙ্গা পাখি, 

পাখিটার নাম জিজ্ঞাসিলে বলে- দাঁড়াও; সুরে বলে ডাকি।


আহা কি সুর মিষ্টি মধুর, অবচেতনে সুখ পাই নির্ভেজাল,

এত মধুর সুর, দেহ থেকে প্রাণ কাড়ে আজন্ম কাল। 


তবে দাঁড়ায় শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের উপর,

চমৎকার মিষ্টি সুরে শিশির উড়ে গড়ায় দুপুর। 


নাম বলে না পাখি।

তবুও আশ্চর্য রকম চমকপ্রদো হয়ে চেয়ে থাকি।


চোখের গোলাপি বিন্দু হতে বিচ্ছুরিত প্রেম আমাকে আরো কাছে ডাকে,

এতো মায়া এতো প্রেম এতো মোহ সব ছেড়ে চলে যাই, তবুও অল্প বাকি থাকে। 


রহস্যাবৃতা

রহস্যাবৃতা

 


রহস্যাবৃতা

সোহেল বীর


নতুন মোবাইল ফোন কেনার পর মিসড্ কল দিতে খুব ভালো লাগত। অন্যরকম অনুভূতি কাজ করত নিজের ভিতর। বিষয়টা দারুণ উপভোগ করতাম আমি। আন্দাজে নম্বর তৈরী করে মিসড্ কল দেওয়াটা ছিল আরও বেশি উপভোগ্য। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ভালো লাগাটা বিষাদে পরিণত হলো। ভাবনার নদীতে জোঁয়ার বইতে শুরু করল। মিসড্ কল দেওয়াটা অন্যের মতো আমার কাছেও কেমন যেন বিরক্তিকর মনে হতে লাগল। সিদ্ধান্ত নিলাম আর কাউকে মিসড্ কল দেবো না। বন্ধ করে দিলাম অন্য নম্বরে মিসড্ কল দেয়া। কিন্তু নিজে মিসড্ কল দেয়া বন্ধ করলেও অন্য নম্বর থেকে ঠিকই মিসড্ কল আসতে শুরু করল। হিতে বিপরীত। 

বিশ্বদ্যিালয়ের আবাসিক হলের সামনে গোল চত্বরে একা একা বসে আছি। একটু দূরে কপোত কপোতিরা বসে গল্প করছে। আমার একাকি বসে থাকাটা কারো কারো কাছে হাসির উদ্রেগ হয়েছিল বটে। তাতে কি? আমার সঙ্গী ওই নীল আর পশ্চিমাকাশের গোধূলী। গোধূলী তার পূর্ণ যৌবন নিয়ে হাজির হয়েছে এতক্ষণে। খুব আপন মনে যুবতী গোধূলীকে উপভোগ করছি। এমন সময় একটি অপরিচিত নম্বর থেকে পরপর তিনটি মিসড্ কল আসলো আমার মোবাইলে। কল ব্যাক করব কিনা ভাবলাম। শেষমেশ আমার মোবাইলে কিছু ফ্রি মিনিটের সদ্ব্যবহার করতে ফোন দিলাম। ফোন দিতেই চিকন সুরের কন্ঠ বেঁজে উঠল আমার কানে। কিছুটা ইতস্ততের সাথে তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমি খুলনা থেকে বলছি কিনা। আমি হ্যা সূচক উত্তর দিতেই তিনি বললেন তিনি আমার বান্ধবীর ছোট বোন। তার বড় বোন নাকি আমার সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসিতে পড়ে। আমি তার বোনের নাম জানতে চাইলাম। তিনি আমাকে কথা না বলার হুমকি দিয়ে বললেন আমি যেন তার বোন সম্পর্কে কোনোকিছু জানতে না চাই। বুঝতে পারলাম নাম জানতে চাওয়াটা হয়তো আমার অপরাধ হয়ে গেছে। বিষয়টা আমার কাছে কেমন যেন রহস্য মনে হতে লাগল। আমি ‘আপনি’ সম্বোধন যেন না করি সেজন্য মেয়েটি আমাকে অনুরোধ করল। আমিও সুবোধ বালকের মতো তার অনুরোধের ঢেঁকি গিললাম। এরপর থেকে মেয়েটি আমাকে নিয়মিত মিসড্ এবং কল দুটোই দিতে লাগল। তবে সে সবসময় তার সুযোগ ও ইচ্ছেমতো কথা বলত। 

তার সিমটা বন্ধ থাকে সব সময়। আমি ইচ্ছে করলেও তার সাথে কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল না। যখন আমার সাথে তার কথা বলতে ইচ্ছে হতো তখন সে নাকি কিছু সময়ের জন্য সিমটা তার বাসার মোবাইল ফোনে ভরে আমার সাথে কথা বলত। এভাবে দিন যত যেতে লাগল আমার কাছে তার কল দেয়ার মাত্রাটা বাড়তে লাগল। ভেবে কূল পাই না, মেয়েটি কেন আমার সাথে কথা বলে, কী চায় সে আমার কাছে। সবকিছুই আমার কাছে কেমন যেন রহস্য মনে হতে লাগল। তার সম্পর্কে কোনোকিছু না জানিয়ে মেয়েটি দিনের পর দিন আমার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে লাগল। আমিও তার কথার ¯্রােতে গা ভাসিয়ে দিলাম। 

মেয়েটির বোনের সম্পর্কে জানতে ব্যাকুল হয়ে উঠল মন। আমার জানা মতে আমাদের সাথে ছয়জন মেয়ে পড়ে। তাদের কারোরই ছোট বোন নেই। তাই মেয়েটির বোন কে, তা জানার আগ্রহটা আরও বেড়ে গেল। আমি নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রায়ই বলতাম, ‘তোমার বোন আমাদের সাথে, না আমাদের জুনিয়র ব্যাচের কেউ?’ কারণ, আমরাই তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে সিনিয়র ব্যাচ। মেয়েটি নিশ্চিত করে কিছু বলত না। বলত তার বোনের সাথে সম্পর্ক তেমন ভালো না থাকায় সে সঠিক জানে না আসলে তার বোন কোন বর্ষে পড়ে। কৌতূহলটা বেড়ে গেল দ্বিগুণ। 

মেয়েটির বোনের সম্পর্কে যখনই জানতে চাইতাম তখনই সে প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলার চেষ্টা করত। একদিন তো বলেই ফেলল আমি কেন এত তার বোন সম্পর্কে জানতে চাই। সে আমাকে অভিমানের সুরে বলল, ‘আমার সাথে কথা বলতে আপনার ভালো লাগে না? যদি ভালো না লাগে তবে আমি আর কোনোদিন আপনাকে ফোন দিব না!’ আমি সব সময়ই তার কথার যথার্থ মূল্য দেওয়ার চেষ্টা করতাম, কেন তা জানি না। তাই বললাম, ‘না, তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগবে না কেন? খুব ভালো লাগে।’ তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলাম মাত্র। 

মাঝে মাঝে তার সাথে আমার দীর্ঘক্ষণও কথা হতো। কথা বলার বিষয়টা থাকতো এই যেমন মেয়েটিকে আমার কেমন লাগে, আমি কোন ধরনের মেয়েকে পছন্দ করি ইত্যাদি। আমি কোনো মেয়েকে ভালোবাসি কিনা সেটাও জানতে চাইল একদিন। আমি বলেছিলাম, ‘না’। উত্তরটা শুনে মনে হলো সে একটু খুশিই হলো। কেন খুশি হলো তা জানতে পারলাম না। তবে সে আমাকে নিশ্চিত করল যে, এই ধরনের ছেলেদের নাকি তার খুব পছন্দ- যারা প্রেম করে না! কিন্তু আমার ভিতর জন্ম নেয়া রহস্যের জট খুলতে পারলাম না কোনো মতে। মেয়েটির বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে সে বললো পাংশাতে। রাজবাড়ি জেলার একটি উপজেলা পাংশা। পাংশায় আমি অনেকবার গেছি। আমার সেজমামা পাংশা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের স্যার। মামার বাসায় মাঝে মাঝে বেড়াতে যেতাম। পাংশায় বাড়ি কথাটি শোনার পর তার  সম্পর্কে জানতে আরও বেশি অস্থির হয়ে পড়লাম।

বেশ ক’দিন মেয়েটার কোনো খোঁজ পাই না। ভাবলাম একটাবার খোঁজ নিই- অসুখ বিসুখ হলো কিনা। তাকে ফোন দিলাম। কেমন আছে, কোথায় আছে জানতে চাইলাম। সে বলল, ‘ঝিনাইদহে’। ঝিনাইদহে! আমি বেশ অবাক হলাম! ভাবলাম, মেয়েটির সাথে দেখা করার দারুণ সুযোগ! মনটা কেন জানি মেয়েটির সাথে দেখা করার জন্য আস্ফালন করতে লাগল। কারণ একটাই- কৌতূহল। তাছাড়া কেন জানি মেয়েটিকে আমার ভালো লাগতে শুরু করেছে। 

শব্দমালা : আসআদ শাহীন

শব্দমালা : আসআদ শাহীন

 



শব্দমালা

আসআদ শাহীন



অনুবর্র হৃদয় ভূ-খণ্ড


অনুবর্র হৃদয় ভূ-খ-ে চাষাবাদ হয় নি বহুদিন,

ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে চাষীর জরাজীর্ণতার উত্থান-

প্রকট প্রণয়-খরায় ফেটে চৌচির হৃদয়-জমিন,

প্রেমের বারিধারা সিঞ্চনে হয়ত হবে অবসান।


খরা তপ্ত হৃদয়-ভূমিতে ফলাবে কে প্রেমফসল?

সেইজনের প্রতীক্ষায় অনুবর্র হলো হৃদয় ভূ-খ-,

চাষীর চাষাবাদে ঘটছে কেবল-ই বিহ্বল-বিফল;

যবনিকাপাতে স্বস্তির ঢেকুরে তীব্র হতাশার দ্বন্দ।