ইপেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ২০১

ইপেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ২০১

 তারুণ্যের শিল্প সরোবর ।। বর্ষ ৮ম ।। সংখ্যা ২০১,

শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ , ০৭ পৌষ ১৪৩০, ০৮ জমাদিউস সানি১৪৪৫

খানাবাড়ির প্যানপ্যানানি

খানাবাড়ির প্যানপ্যানানি

 



খানাবাড়ির প্যানপ্যানানি

হাফিজুর রহমান


গ্রামের সবচাইতে বড়ো বাড়িটাই খানাবাড়ি। এই বাড়ির মানুষগুলো শিক্ষা-দীক্ষা, বংশ পরিচয়, সম্পদ - প্রভাব, সকল ক্ষেত্রেই আশপাশের আট-দশটা গ্রামের মানুষগুলোর তুলনায় সব দিক থেকে এগিয়ে থাকার কৃতিত্ব ধরে রেখেছে, দীর্ঘদিন থেকে। বিশাল বড় একটি বাড়িতে বসবাস করে এক’শোরও বেশি সদস্যের একটি পরিবার। এক হাঁড়ির রান্না করা খাবার খায় সকালে একসাথে বসে, পাকা ঘরের দীর্ঘ বারান্দায় পাটের তৈরি চট বিছিয়ে। এলাকার বাইরের অজানা কেউ দেখলে খুব সহজেই ভেবে নিবেন, হয়তো গ্রাম্য আয়োজনে কোন বড়সড় বিয়ে অনুষ্ঠানের খাওয়া-দাওয়া চলছে।

উত্তরণ

উত্তরণ



উত্তরণ

মুহাম্মাদ রাহাতুল ইসলাম 


আজকের সকালটা বেশ মনোরম। সাদা ধূতি পরে খালি গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে পুকুর ঘাটে বসে আছেন হেমাকান্ত রায়। অন্য অন্য দিন মাছ ধরার বড়শি সাথে থাকলেও আজকে বসে আছে একদম খালি হাতেই। পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে ভাবছেন কিছু একটা। হঠাৎই সাইকেলের ক্রিং ক্রিং বেল শুনে পিছনে তাকালেন। একগাল হেসে বলে উঠলেন ; আরে ফরিদ না-কি? কি অবস্থা তোমার? চিঠি পত্র আসলো না-কি কিছু? ফরিদ উত্তর দেয়; আজ্ঞে হ্যা। উপর ওয়ালার ইচ্ছায় ভালোই আছি। হেম বাবুর হাসির সাথে তাল মিলিয়ে একটু হেঁসে নিলো পোস্টমাস্টার ফরিদ। গাছের সাথে সাইকেল দাঁড় করিয়ে হেমাকান্ত রায়ের পাশে এসে দাড়ায়। তারপর পুরাতন সেই ব্যাগ হাতড়ে হেম বাবুর হাতে তুলে দিলো একখানা হলুদ খামের চিঠি।

চিঠিটা হাতে নিতেই কেন জানি ফ্যাকসে হয়ে গেলো হেমাকান্ত রায়ের হাস্যজ্বল মুখ। একটু আগেই যা প্রভাতের প্রথম রশ্মির ন্যায় চকচক করছিলো। তিনি চিঠি পড়তে জানেন। এমনকি গুছিয়ে লিখতেও পারেন। তবুও কিছুটা শঙ্কিত হয়ে জিগ্যেস করলেন; রফিক! চিঠিটা কে পাঠিয়েছে? হাসির রেখা স্বস্থানে রেখে উত্তর দেয়; ঐতো শষীভূসন আছে না আমাদের নিমাই বাবুর ছেলে, ভিলেতে থাকে সে। কিছুটা স্থির হওয়ার ভান করলেন কিন্তু পুরোপুরি ব্যার্থই হলেন হেম বাবু। এই পর্যন্ত তিন তিনটি চিঠি এসেছে এই একই নামে। তিনি বহু চেষ্টা করেও এই নামের কারও চেহারা স্মরণে আনতে পারলেন না। তবে এই নামে নিমাই ঘোষের একটা ছেলে আছে তা তিনি জানেন লোকমুখে। কখনো চোখে দেখা হয়েনি। যে নিমাই ঘোষকে খাজনা না আদায় করার দায়ে প্রহার করে মেরে ফেলেছিলেন।

পদাবলি : ০১

পদাবলি : ০১

 




কার্তিকের আকাশ

অলোক আচার্য


একা থাকতে শিখে গেছি

বেহুলাও একাই ছিল মৃত স্বামীর পাশে

গাঙুরের জলে।

হেমন্তে মরা কার্তিকের আকাশে যেভাবে

ঝুলে থাকে নিঃসঙ্গ চাঁদ 

কোনো রাত জাগা যুবকের বুকে।


পদাবলি : ০২

পদাবলি : ০২

 



সফলতা বঞ্চিত জীবন

মাঈনুদ্দিন মাহমুদ


সফলতা বঞ্চিত জীবনে

বোবা কান্নায় ছেয়ে গেছে উদীয়মান বৃক্ষ।

অসার অপরিপক্বতা লাবণ্য হারিয়েছে জীবনের স্বাদ।

ক্ষীণ হয়ে এসেছে, দিগন্ত পেরিয়ে শৃংখ চূড়ায়

আরোহনের মোহনীয় সদিচ্ছা।

এখন পরন্ত বিকেল

ওপাড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করাই বাঞ্চনীয়।

লাভ ক্ষতির হিসাবে, কী আর আসে যায়

অর্ধমৃত হ্রদপিন্ডে আলেয়া তার আলো আর নাই বা ছড়ালো।


পাহাড়ের ডাক

পাহাড়ের ডাক

 



পাহাড়ের ডাক

রাশেদ সাদী


রাত আড়াইটা। প্রধান সড়ক দিয়ে একটা মালবাহি ট্রাক আসে আর চলে যায়। এরপর দীর্ঘ নিরবতা। বসন্তের ফুরফুরে জ্যোৎ¯œায় ফিনফিনে বাতাস বয়ে যায়। দুটো বিড়াল ঝগড়ায় মেতে ওঠে। ফের সব আগের মতো, নীরব। 

এমন নীরবতা ঘুমহীন রাত ইস্পাতরে ফলার মতো বুকে বিধে অস্বস্তি দিতে থাকে। বালিশ উলটা-সিধা করে, এপাশ-ওপাশ করেও আরামপদ একটা অবস্থান পাই না। ঘুম আসে না। 

অন্ধকার ঘরে রেলিং গলে আলোর কতগুলো স্তম্ভ মেঝেতে পড়ে আছে। তাতে কতগুলো পাতা কাঁপছে। এই দূর পাড়াতের পাদদেশে অপরিচিত হোটেলে শুয়ে ভাবতে চেষ্টা করি আসলে আমি এখানে কেন? 

কিন্তু কেন যেন ভাবনাটা কিছুতেই শরীর পায় না। শুধু ফসকে যায়। ঠিক যেন পাহাড়ের মেঘের মতো। নাকে মুখে এসে ঠেলা মারছে, কিন্তু ধরতে গেলেই কিছু নেই। বরং পা-টাও যেন ফসকে যাচ্ছে। চেতনার পাহাড় থেকে কখন যেন হঠাৎ পা হড়কে যায়; পড়ে যাই ঘুমের নিঃসীম আধারে।