পদাবলি-৫১ তম সংখ্যা

পদাবলি-৫১ তম সংখ্যা



ডোম সিরিজ ১১
গিরিশ গৈরিক

মরণের জলে সূর্য ডুবে গেলে
সেই সূর্যকে মনে হয় ক্যারামবোর্ডের লালগুটি
কিংবা সূর্যের অপেক্ষায় ডেকে ডেকে রক্ত করা লাল মোরগের ঝুঁটি।

ক্যারামবোর্ডের লালগুটি ভেবে সূর্যকে-কে খেলে মহাবিশ্ব ক্যারামে
আমি তারে দেখিবার চাই-নাকি আমি সেই
যারে আমি দেখিবার জিজ্ঞাসনে ব্রত-অথবা সে নেই।

একদিন আমি-সূর্য ও লালগুটি পাশাপাশি রেখে
কবিতায় খেললাম অবিরাম।
সেইদিন থেকে সূর্য ও লালগুটি এক হয়ে ডুবলো তোমার হৃদয়ে
আমি বললাম : মানবী-কী যেন তোমার নাম!

হুমায়ূন আহমেদ’র উৎসর্গলিপি- সুখী ফয়সাল

হুমায়ূন আহমেদ’র উৎসর্গলিপি- সুখী ফয়সাল




নন্দিত নরকে
নন্দিত নরকবাসী মা-বাবা, ভাইবোনদের

বাসর
স্নিগ্ধা করিম
আমার উৎসর্গপত্রগুলি সে খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে। আমি না-কি উৎসর্গপত্রে অনেক মজা করি। তার ধারণা কোন একদিন তাকে একটি বই আমি উৎসর্গ করব। সেখানে অনেক মজার কথা থাকবে।
বই উৎসর্গ করা হলো।


এই মেঘ, রৌদ্রছায়া
ছবি পাড়ায় আমার ছোট্ট একটা অফিস আছে। সেই অফিসে রোজ দুপুরবেলা অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ উপস্থিত হয় এবং হাসিমুখে বলে, ভাত খেতে এসেছি। সে আসলে আসে কিছুক্ষণ গল্প করার জন্যে। ইদানীং মাহফুজ খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুপুরবেলা তার হাসিমুখ দেখতে পাই না। মাহফুজ কি জানে, প্রতিদিন দুপুরে আমি মনে মনে তার জন্যে অপেক্ষা করি !


বহুব্রীহি
জনাব আবুল খায়ের
অভিনয় যাঁর প্রথম সত্তা
অভিনয় যাঁর দ্বিতীয় সত্তা


কাঁসার বাটি-এইচ এম সিরাজ

কাঁসার বাটি-এইচ এম সিরাজ



দূরগ্রামে এক কবিরাজের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভাবীর ছেলেটা সেখানে সকালে গিয়েছিল। ছেলেটার সব সমস্যা বইয়ের মুখস্তপড়ার মতো গড়গড় করে সে বলে দিয়েছে। মানুষ তার কাছে অমাবস্যার মুখ নিয়ে যায় আর ফিরে আসে চাঁদমুখ নিয়ে।
দীর্ঘদিন রোগে ভুগতে কারই বা মন চায়? এই ডাক্তার, সেই ডাক্তার দেখিয়ে জীবনটা তার তিক্ত হয়ে গেছে। কিছুদিন ভালো যায় আবার হঠাৎ করেই রোগটা তারে ধরে বসে। তার কাছে এতো ভোগাভোগি আর ভালো লাগে না। মানুষ নানা ঘাট ঘেটে যখন সমাধান না পায়, তখন যে যা বলে তাতে বিশ্বাস করে বসে। বাঁচতে সবাই চায়। মানুষ বাঁচার জন্য বিশ্বাস পাল্টাতেও দ্বিধা করে না। আরোগ্য লাভের আশা মানুষের আজন্মকাল।
আরোগ্য লাভের কিঞ্চিত আশা বুকে বেঁধে বিকালে রওয়ানা দিয়ে প্রদীপ বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায় রাতে। খুব ভোরে উঠে ভাতিজাসহ প্রদীপ মোটরবাইকে চড়ে বসে। কবিরাজ আজ প্রদীপের ভাতিজার চিকিৎসা দেবেন। খুব সকালে গিয়ে সেখানে হাজির হতে না পারলে সিরিয়ালে পিছনে পড়তে হবে। তখন ফিরতে বিকাল হয়ে যেতে পারে।
একগ্লাস পানি পান করে যাত্রা। প্রথমে দেড় কিলোমিটারের মতো ইটের জাম্পিংরোড অতিক্রম করে ভাঙাচোরা পিচের রাস্তা পার হয়ে হাই-রোড। হাই-রোডের স্বাস্থ্যফিগার ভালো। চেহারা দেখলেই বোঝা যায় হার্বাল চিকিৎসার মতো স্বাস্থ্য পুনর্গঠন করা হয়েছে। আমাদের দেশের রাস্তাঘাটের এই এক অবস্থা। হার্বাল চিকিৎসার টনিক মেডিসিনের মতো টনিক সামগ্রী দিয়ে রাস্তার স্বাস্থ্য গঠন করা হয়। কিছুদিন পরে আবার রোগীদের ভগ্ন-স্বাস্থ্যের মতো রাস্তা-ঘাটও ভগ্ন-স্বাস্থ্য ফিরে পায়। স্বাস্থ্যবান রাস্তার ওপর দিয়ে মোটরবাইক শা-শা শব্দে গন্তব্যের দিকে ছুটে চললো। পাঁচ-ছয় কিলোমিটার যাওয়ার পরে আবারো এলাকার পিচের ভাঙা রাস্তা। তারপরে আবারো দুই কিলোমিটার পরে ইটের জাম্পিংরোড। মনে হয় রাস্তার ভেতরে স্প্রিং বসানো।
কবিরাজ বাড়ির সামনে গিয়ে যখন বাইক থামলো তখন ঘড়ির কাঁটা সকাল ছয়টার ঘর ছুঁয়েছে। বাড়ির সামনে নতুন পাকা মসজিদ। পাশে পুকুর। অপর পাশে একটা দোকানও আছে। বাড়ির সামনে একটা ছোট ঘর। এইসব এলাকায় ঘরটিকে ‘কাছারি ঘর’ বলে। এখানে বসেই কবিরাজ রোগী দেখেন। রোগীরা এখনো কেউ আসেনি। বসার জন্য কয়েকটা প্লাস্টিকের চেয়ার রাখা আছে। কাছারি ঘরের উত্তরপাশে ছোট একটা বারান্দায় মহিলাদের বসার ব্যবস্থা আছে। হুজুরের বসার টেবিল বরাবর উত্তরপাশে একটা জানালা। সেই জানালা দিয়ে হুজুর আর রোগিনীদের সাক্ষাত হয়, চিকিৎসা হয়। সেখানে দুইজন মহিলা ইতোমধ্যে এসে বসে রয়েছে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-র কবিতায় অস্তিত্ব চেতনা-সাইফুজ্জামান

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-র কবিতায় অস্তিত্ব চেতনা-সাইফুজ্জামান




সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সব্যসাচী লেখক। গদ্য ও কবিতায় অসাধারণ সৃষ্টি তাকে স্মরণীয় করেছে। পূর্ব-পশ্চিম উপন্যাসে ইতিহাসের ধারাবাহিক ঘটনাবর্ত উপস্থাপিত হয়েছে। বাঙালির সংগ্রাম, শৌর্যবীর্য, আত্মত্যাগ, দিনযাপন, প্রেম, বিরহ সমাজ রূপান্তরের কাহিনী বিস্তৃতভাবে বিবৃত হয়েছে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তাঁর রচিব উপন্যাস আত্মপ্রকাশ। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: একা এবং কয়েকজন (পৌষ ১৩৫৭), আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি (মধ্য চৈত্র ১৩৭২), বন্দী জেগে আছো (ফাল্গুন ১), আমার স্বপ্ন (বৈশাখ ১৩৭৯), সত্যবদ্ধ অভিমান (বৈশাখ ১৩৮০), জাগরণ (হেমবর্ণ ২৫ বৈশাখ ১৩৮১), দাঁড়াও সুন্দর (১৩৮২, মন ভালো নেই (আষাঢ় ১৩৮৩), এসেছি দৈব পিকনিকে (১৩৮৪) দেখা হলো ভালোবাসা বেদনায় (জ্যৈষ্ঠ ১৩৮৬), স্বর্গ নগরীর চাবি (১৩৮৭) সোনার মুকুট থেকে (চৈত্র ১৩৮৮)। কিশোর উপন্যাস: ভয়ংকর সুন্দর। নীল লোহিত, সনাতন পাঠক এবং নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে অসংখ্য রচনা তিনি সৃষ্টি করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পঞ্চাশ দশকে কবিতার স্বতন্ত্রধর্মী বক্তব্য ও ‘কৃত্তিবাস পত্রিকা’ সম্পাদনার মাধ্যমে সাহিত্যাঙ্গনে বিশেষভাবে আবিভূত হন। তার রচিত কবিতায় কাহিনী বিস্তার, সৌরভ মাদকতা ও আকর্ষণ দীপ্র। অন্তস্পর্শী ভাষা, বক্তব্যের দীপ্য উপস্থিতি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাকে সৌন্দর্যমি ত করেছে। সুনীল ছন্দ্র ও ছন্দহীন কবিতার রচয়িতা হিসেবে সমান জনপ্রিয়। ভ্রমণ বিলাসী কবি স্বদেশ থেকে বিশ্বব্রহ্মা- পর্যন্ত সঙ্গী থেকেছেন স্বপ্ন, দুরন্ত প্রেমময় স্বাধীন সত্তার সাথে। ‘একা ও কয়েকজন’ প্রথম কাব্যগ্রন্থে তার একাকীত্ব যন্ত্রণা, অভিমান, অতলস্পর্শী আকাক্সক্ষার কাছে সমর্পিত হয়েছিল। স্বপ্নতাড়িত সুনীল প্রকৃতি, নারী ও বেদনাবিধুর সত্তায় গ্রথিত হয়ে যে কবিতা রচনা করেছেন তা পাঠকের চেতনাকে সম্মোহিত করে। ক্লেদাক্ত জীবনকে অগ্রাহ্য করে তিনি ক্রমাগত স্বপ্ন ও সৌন্দর্যের কাছে ফিরে গেছেন। জীবনকে আবিষ্কার করা তার প্রধান কাজ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসংখ্য কবিতার মধ্য থেকে কিছু কবিতা নিয়ে এই রচনার সূত্রপাত। হৃদয়স্পর্শী কবিতা সুনীলকে নতুনভাবে বার বার উদ্ভাসিত করে। এই সব কবিতা কালের প্রবাহে দিন দিন উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।

পঙতিমালা-৫০তম সংখ্যা

পঙতিমালা-৫০তম সংখ্যা


এই সংখ্যায় পদাবলী লিখেছেন- 
আকাশ মামুন, ফারহানা সুমি, লুৎফুন নাহার লোপা, জোবায়ের মিলন, মিসির হাছনাইন, বিটুল দেব, নাবিল তুরাব, আকিব শিকদার, মিশির হাবিব, আহমাদ মেহেদী এবং 
উষার মাহমুদ।
_________________________


শীতকাল
ফারহানা সুমি

আপনার সঙ্গে ধান ক্ষেতে হাঁটবার কথা  ছিল শীতকালে।  ক্যালেন্ডারে  ঝরে পড়া শুরু করেছে কোয়াশা, তারিখ ভিজেছে দু’ এক হল।
এখানে শীতকাল শুধু ক্যালেন্ডারেই নেমে আসে,  কোথায় যেন মেলেনা কোয়াশা, ভেজা ঘাস... ঘাস বলেও  কিচ্ছুটি নেই শহরের শরীরে।  শুধু কাগজ শুয়ে থাকে বাসার চারপাশ ঘাসেদের মত সবুজ বিহীন।

একটি মৃত্যুর কিচ্ছা-আশিক বিন রহিম

একটি মৃত্যুর কিচ্ছা-আশিক বিন রহিম


এক
গল্পের শুরুটা হতে পারতো চাঁদগঞ্জের জেলা কারাগার দিয়ে। স্টেশনের একজন পাগল হত্যার দায়ে সাংবাদিক তারেক মাহমুদ হাজতের নবাগত কয়েদী। কিন্তু ময়না নামের ভবঘুরে পাগলীর জন্ম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে। তাই ঘটনার বাহাত্তর ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও তারেক মাহমুদের হাতে এখনো হাতকড়া পড়েনি। তাছাড়া ময়নার মৃত্যু অনেকটা অনিবার্য ছিলো বলে লোকের ধারণা। স্টেশনে পা ফেলেছে এমন কোনো মানুষ নেই, যে ময়নার মৃত্যু চেয়ে খোদার কাছে অাপিল করেনি। সর্বশেষ পঁচিশটা দিন আর রাত সে প্লাটফর্মের কংক্রিটের উপর পরে ছিলো। তার ওপর এক পলক দৃষ্টি রেখে অনেকেই বলতেন ‘এতো কষ্ট না দিয়া আল্লায় অরে লইয়া যাইতে পারে না?’ একরাতে সত্যি সত্যিই ময়নাকে আল্লাহ্ নিয়ে গেলো। কিন্তু আল্লাহর কাছে ময়নার এই চলে যাওয়াকে ভোলা দা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। স্টেশনের ঝাড়ুদার ভোলা লাশের মুখে চুনের মতো সাদা লালা দেখেছিলো। ফর্সা রংয়ের ময়নার মুখটা ‘মরার পরে নাকি পাতিলের তলার মতো কালো দেখা গছে। পৃথিবী দেখার পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতা থেকেই তার ধারণা ‘ময়নারে কেউ বিষ খাওয়াইয়া মারছে’। কিন্তু ঝাড়ুদার বলে ভোলার কথা কেউ আমলে নেয়নি।

অনুবাদ কবিতা: হাফিজ ইকবাল ও মীম মিজান

অনুবাদ কবিতা: হাফিজ ইকবাল ও মীম মিজান


পত্র
আমি আকাশ থেকেও কঠিন নিরাশ হব
হে বন্ধু,
নৈরাশ্য, নৈরাশ্য
তুমি কি জানো?
এখানে মেঘ কোনো বর্ষণ করেনা
সূর্য আলো দেয়না
নতুন কোনো চারাগাছ রোপিত হয়না
ভূমি ফাঁপা ও ফাকা
একটি শুষ্ক তৃণও নেই
নিরাপত্তায়
লাঙ্গলের ফলার কোনো চিহ্ন নেই
আমি আকাশ থেকেও কঠিন নিরাশ
হ্যাঁ!
এই নিস্তব্ধ মরুভূমিতে
একজনকে স্মরণ করি।

শহীদুল জহির বাংলা গদ্য সাহিত্যে নব্য ধারার প্রবর্তক- ---মীম মিজান

 শহীদুল জহির বাংলা গদ্য সাহিত্যে নব্য ধারার প্রবর্তক- ---মীম মিজান



বাংলা গদ্য সাহিত্যে যিনি স্বল্প অথচ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি হলেন শহীদুল জহির। তিনি ১৯৫৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার নারিন্দার ৩৬ ভূতের গলিতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তার নাম ছিল মোহাম্মদ শহীদুল হক। তার পিতা এ কে নুরুল হক ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা ও মা ছিলেন গৃহিনী। তার পৈতৃক বাড়ি ছিল সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার হাশিল গ্রামে। তার দাদা জহিরউদ্দিন (সম্ভবত তিনি তার জহির নামটি তার দাদার কাছ থেকে নিয়েছিলেন) ছিলেন স্কুলশিক্ষক ও তার দাদী জিন্নাতুন নেসা। তার নানা ছিলেন সিরাজগঞ্জের আমলাপাড়ার আজিমুদ্দিন আহমেদ ও নানি হামিদা বেগম, যাদের কাছে তিনি প্রায়ই বেড়াতে যেতেন। শহীদুল জহির তার স্কুলজীবন শুরু করেছিলেন ঢাকার ৩৬ রাঙ্কিন স্ট্রিটের সিলভারডেল কেজি স্কুলে, পরবর্তীতে ঢাকা, ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহ, সাতকানিয়া ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলে পড়েছেন। সাতকানিয়া মডেল হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি পাশ করেন ও ঢাকা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ও বারমিংহাম ইউনিভার্সিটিতেও পড়ালেখা করেন। তিনি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে সহকারী সচিব পদে যোগ দেন। ২০০৮ এ তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব পদে কাজ করে গেছেন।