পদাবলি

পদাবলি



অদ্ভুত শূণ্য
শারমিন আক্তার

‘তুমি’ এবং ‘শূন্য’ কে গুন দিলে
‘শূণ্য’ই হয়।
কেমন এক অথর্ব সম্পর্ক ঘিরে রয়েছে আমাদের।
যোগ-বিয়োগ করে দেখি আমিহীন তুমি বেশ নির্বিকার, পরিপাটি।
শেষমেশ ছুটে যাই পেছন-পেছন
ভীষণ গাঢ় এক গুমোট বাঁধা অন্ধকারে-
হাতড়ে ফিরে কুড়িয়ে আনা বিরহে শুধু কান্নার রং,
মিলে মিশে বেদনা-নীল এক মহাশূন্য যেন।
এখন ঠিক ঠিক বুঝতে পাই-
আমি কোন স্বাভাবিক ‘শূণ্য’ নই, ‘তুমি’ পরিত্যাক্ত এক অদ্ভুত ‘শূণ্য’!!

অনুভব করি
রেজাউল রেজা

তোমার অনুপস্থিতি অনুভব করি চলতে পথে।
অনুভব করি
অনুভব করি

একলা চলি কলেজ রোডে
একলা বসি মাঠে !

খুব করে অনুভব করি তোমার অনুপস্থিতি।
অনুভব করি
অনুভব করি...

তুমি বিহনে হাতরে মরি!


মুনাফা সমেত অবহেলা 
মাহদী হাসান

আমরা চলেছি কালের খেয়ায় শুধুই দু’চোখ বুঁজে
সময়ের চেয়ে বড় শিক্ষক, পাবো না কোথাও খুঁজে।
নিয়তির স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছি, আমাদের পথচলা
জিকির ফিকির হারিয়ে ফেলেছি, হারাইনি ছলা কলা।

হোঁচট খেয়ে শিখেছি আমরা, শিখিনি তো কভু দেখে
ভবিষ্যতের কেতন উড়িয়ে, ছুটিতেছি রঙ মেখে।
স্রোতের মতো সময় গিয়াছে, ফিরিয়া আসেনি কভু
অতীতের স্মৃতি চির ভাস্বর, চোখ খোলে নাই তবু!

আকাশ সমান স্বপ্ন দেখেছি— চলি নাই সেই পথে
সুযোগ পেয়েও উঠা হয় নাই, যুগের সত্য রথে।
ঘুমে ঢুলুঢুলু আমাদের চোখ, হয়নি তো চেয়ে দেখা
তাইতো ফোটেনি ভোরের আকাশে আলোক দীপ্ত রেখা।

অবহেলা করে কাটিয়ে দিয়াছি কত ক্ষণ কত বেলা,
ফিরে পাবো জানি মুনাফা সমেত, প্রতিদানে অবহেলা।


কাল হয়েছে আমার
শরীফ সাথী

সাফ জানিয়ে দিয়েছে সে, আর আসবেনা।
আমাকে নাকি তার, এখন আর ভালোলাগে না।
আমার হাসি আমার চাহনি আমার কণ্ঠ,
তাকে আর তৃপ্তিভেজা সুখে পরিণত করতে পারেনা।
আসলে আমি আজও বেকারই রয়ে গেলাম।
সে এখন খুব সুখী। পছন্দ মত জব পেয়েছে।
দীর্ঘদিনের সোনালী স্বপ্ন দেখা আজ কাল হয়েছে আমার।


প্রিয়জন
রামপ্রসাদ সূত্রধর

কেহ চায় কেহ হয় না আমারে
ভালেবাসি আমি কাহারে।
গেল জনম বৃথা সংসার তথা
অবহেলে বৃথা।

হৃদয়ে প্রেমের মন্দির দেবতা কই?
প্রাণে -মনে কাহারে লই
সুরে-সুরে গানে-গানে
প্রাণে-প্রাণে ছন্দে-ছন্দে

প্রেম রোমাঞ্চে জাগো মন তার উরসে
ভুবনে তুমি মরণে তুমি
বাস করো গো আমাতে
তুমি আমার প্রিয়জন।


দু’টো ফুল
খায়রুল আলম রাজু

এক খন্ড সবুজ ভূমি- এ যেনো পুষ্প কানন;
তেরো শত নদী এর প্রাণ, লালন করা মধু!
তুমি আর আমি সেই কাননের ফুল-
দু’টো গোলাপের মতো, সুবাসিত...

যদিওবা আমরা মানুষ ফুল নয়,
তবুও জীবন ফুলের মতোই নিষ্পাপ-
আমরা ফুল, পুরো পৃথিবী তার শাখা-প্রশাখা...  
ঝরণা ধারা সুবাসিত ঘ্রাণ, শীতল  বায়ু এর শেখড়...

তাই  তো বলি, ফুলকে ভালোবেসো;
কখনো ছিঁড়ো না, কেননা ফুল ফুলের প্রেমিক!
যেমন তুমি আর, তেমনি ফুলও ফুল...
 


আমি
সোহেল রানা


আমি চাই না কেউ আমাকে ভালোবাসুক
ভালোবাসা পাওয়ার আশাও নাই, যোগ্যতাও নাই।
আমি চাই না কেউ আমাকে দাক্ষিণ্য করুক
কিংবা করুণার হাত প্রসারিত করুক।
আমি চাই সবাই ভালো থাকুক...
আমার চাওয়া না চাওয়ায় অবশ্য কারো কিছু এসে যায় না
কারোর চাওয়ায় কারো পাওয়া হয় না।
আমি চাই নিজের মতো থাকতে, স্বাধীনভাবে বাঁচতে-
কবিতা সাজাতে, গল্প করতে, হাসতে, কাঁদতে
আমি চাই কবিতার সাথে সংসার করতে
আর পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে।
আমি চাই না কেউ আমাকে ভালোবাসুক।
আমি চাই প্রকৃতির খোলা আকাশের নিচে
অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে আর পূর্ণিমার আলোর মাঝে
নিজেকে বিলিয়ে দিতে।
আমি চাই না কেউ আমার প্রতীক্ষায় থাকুক
ফুল কিংবা কাঁটা বিছিয়ে রাখুক।
আমি চাই না কেউ কেন আমার জন্যে আদাজল খেয়ে নামুক
আমি তো কারো কাছে তৃষ্ণার জল চাই না।




ওপার
দিপংকর দাশ

ঘাটে নৌকো নেই
যেতে হবে ওপারে
কেউ একজন ডেকে বলছে
‘ও বাবু মশাই, এনেছো কি কড়ি?
নইলে যে আসবে না ঐ তরী।’

পকেটে হাত দেই
কিন্তু তার তলা ছেঁড়া
ভিতর পকেটেও খুঁজলাম
নেই, কোনো কড়ি নেই।
মন খারাপ,
ঘাট ছেড়ে চলে আসার চেষ্টা।

পিছন থেকে আবার বলছে,
‘ও বাবু মশাই, এ ঘাটে যে আসে
সাধ্য নেই তার ফিরতি চলে যায়।
ওপারে যেতেই হবে তোমায়
নৌকোয় কিংবা সাঁতরে।’


মাঠের কৃষক
শাহিন আলম

তোমাকে সৃষ্টির পর ঈশ্বর বললেন-
তুমি লোভনীয়
আমাতে তিনি জাগালেন তোমাকে ছুঁয়ে দেয়ার লোভ
আমি লোভাতুর হয়ে জন্মালাম।

আমাদের সৃষ্টির পর ঈশ্বর বললেন
প্রত্যেক প্রাণীকে তিনি পাঠিয়েছেন জোড়ায় জোড়ায়
আমি খঁড়কুটো এনে বাসা বাঁধলাম
সামনের ফাল্গুনে তুমি আসবে ভেবে
শীতের রাতগুলো কাটালাম একলা একা।

তোমাকে পাঠানোর পর ঈশ্বর বললেন-
তোমার ভিতরে তিনি লুকিয়ে রেখেছেন শান্তি।
আমি পৃথিবীর তাবৎ শাস্ত্র ছুঁড়ে ফেলে
সকল সাধনার মন্ত্র ভুলে গিয়ে
ফিরে এলাম তোমার কাছে।

আমাকে ডেকে ঈশ্বর জানালেন
তোমাতে আমি ইচ্ছামাফিক করতে পারি চাষ
আমি মাঠের কৃষক হয়ে
কাদা জলের পরশ মেখে কাটিয়ে দিলাম জীবন।  



কলোসিয়ামের বিষ
শম্পা মনিমা

স্বচোক্ষে দেখলাম,
প্রতিহিংসা মধ্যে
মৃত্যু নিয়ে সব
গোল হয় গাঁথছে
বিষের জয়জয়কার।

খারাপ কে?
তারারা খারাপ হয়না,
শত্রুকে সবাই তাড়ায়
ওটাই আমাকে বন্ধু ডাকে।

খোঁজ নিয়ে এলাম
কোথায় রয়েছে টাটকা বিষ
জাতিস্মর নই
বিশ্বাস ভাঙার মৃত্যুদের বুঝতে পারিনি তাই,
বিষের স্বাদ কেমন?

রুটি ছুড়ে দিয়েছে তিতুস
নখ, দাঁত দিয়ে কু-লী পাকিয়ে
সন্ধ্যে হওয়া গাছটাকে
খাচ্ছে  শিরা-উপশিরার সাপ
বয়সের গাছ, পাথর- থাকি এদের সঙ্গে আজ।

আগুনে পোড়ে না কলোসিয়াম
পোড়ায় প্রাণীজগৎ,
পোড়ে শান্তি,
পোড়ে জ্বালা,
শেষ দেখে এলাম হেসে বলল শেষ কথা।


আমি খুঁজছি কার হাত 
নূরনবী সোহাগ

শরীরমুখো জ্বর
ভাসিয়ে নিলো আঙ্গুলের আদর
বিশ্রী উত্তাপে
ঢাকা পড়ছে বোধ
আঙ্গুল বাড়াই
আনুমানিক কপাল বরাবর
তোমার দেয়া উষ্ণতার
তলানি যদি পাই
এইভাবে দিনরাত একাকার
কেউ কি বুঝতে পারছো!
নোনা উত্তাপে ডুবে ডুবে
আমি খুঁজছি কার হাত



অনন্তের সন্ধান 
মোস্তফা কামাল  

নিরন্তর ছুটে চলেছি-
গোপন আঁধার পথের সুলুক সন্ধানে
প্রথা বিরোধী নবজীবনের আহ্বানে
লক্ষহীন সুলক্ষণ সময়ের পদচিহ্ন ধরে,
দুরন্ত দুর্গম বন্ধুর আঁকা বাঁকা পথে।

রণক্লান্ত পথিক আমি
উদ্দেশ্যহীন সুতাকাটা ঘুড়ির মতো
অন্ধ স্রোতের টানে অবিরাম চলছি
জীবন শুরুর তেজোদিপ্ত মনে
জমেছে ক্লান্তি, ঘুণে ধরা ইচ্ছেগুলো
জমেছে না পাবার অপূর্ণতা।

নিরন্তর ছুটে চলেছি-
সহজ স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাকুলতায়
কলঙ্কের কালিমা উপেক্ষা করে
স্বপ্নের সবুজ ছোঁয়া অবুজ স্পর্শে
চরম স্পর্ধার চিত্রকল্প হাতে নিয়ে
পুরানো শাস্ত্রের জমাট বাঁধা গ্রানাইট
ভেঙ্গে সংস্কার আচারের বিপরীতে
বিশুদ্ধ মানবিক গুণে ঋদ্ধ হয়ে
মুক্তবুদ্ধির তুখোড় পুনরুত্থান  সন্ধানে।

তার পরেও চলছি-
হাজার বছরের ইতিহাস হয়ে
হারানোর কিছু নেই বলে।
লক্ষ নেই স্বপ্ন নেই তবুও চলা
চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে
সামনে এগিয়ে চলা
পিছনে রেখে পদচিহ্নের বক্ররেখা।


ধারাবাহিক উপন্যাস : জোসনা রাতে জাগে প্রাণ : পর্ব ০৭

ধারাবাহিক উপন্যাস : জোসনা রাতে জাগে প্রাণ : পর্ব ০৭



জোসনারাতে  জাগে আমার প্রাণ
আবুল কালাম আজাদ

[গত সংখ্যার পর]
রাত সারে তিনটা। হুমায়ূন ফকির বলল, স্যার, আমরা কিন্তু শেষ প্রহরে প্রবেশ করেছি।
কেমনে বুঝলে?
দেখেন একটু একটু বাতাস বইতে শুরু করেছে। বাতাসে সামন্য শোঁ শোঁ শব্দ। আলোটা কেমন যেন ভৌতিক।
লেখক তো শেষ রাত সম্পর্কে এমন কথাই বলেছিলেন। তুমি তো লেখকের কোনো লেখা পড়ো নাই, অথচ তোমার কথা.......। বোঝা গেল, লেখকদের লেখার সবটা কল্পনা নয়।
অবশ্যই নয়, কল্পনাকে পুঁজি করে অত বড় লেখক হওয়া যায় না।
ইউ আর রাইট।
আরেকটা ইংরেজি শিখলাম।
শুধু তো জ্যোৎস্নাই দেখলাম, স্মৃতিতে গেঁথে রাখার মত বিশেষ কিছু করলাম না।
স্যার, আমরা অবসরে গান গাই। আমি গীতিকার, হাবিব সুরকার, আর জাফর গায়ক। ভাবের সময় তিনজনই এক সাথে গাই। স্যার, আজ ছাড়া জীবনে কোনোদিন জ্যোৎস্না নিয়া ভাবি নাই। অথচ অনেক আগেই জ্যোৎস্না নিয়া একটা গান বাঁধেছি। শুনবেন স্যার?
কেন শুনবো না? জাফর গা-তো গানটা।
জ্যোৎস্না মাখা চাঁন্দি রাইতে
আমার পরাণ করে আঁইঠাঁই
এই দুনিয়ায় আমি আবার
মানুষ হইতে চাই।।
মায়ের কোলে ছোট্ট শিশু চাঁন্দের পানে চেয়ে,
খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে
মা ওঠে গান গেয়ে-
আয় আয় চাঁদ মামা
টিপ দিয়ে যা
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।
মাগো একবার কোলে তুইলা নাও
চাঁন্দি রাইতে গান শুনাইয়া যাও
মাগো তুমি গান শুনাইয়া যাও
গান শুনাইয়া নতুন জনম দাও।
জ্যোৎস্না মাখা চাঁন্দি রাইতে
আমার পরাণ করে আঁইঠাঁই
এই দুনিয়ায় আমি আবার
মানুষ হইতে চাই।।
গানটা শুরু করেছিল জাফর। সে এক লাইন গাইতেই হাবীব আর হুমায়ূন তার সাথে কন্ঠ তুলল। তিন জনের কন্ঠ মিলল খুব। সুরটা খুবই দুঃখ ভেজা। মনের নিদারুন আকুতি যেন বেরিয়ে আসছে সুর হয়ে।
নিলয় আর অন্তর হাত তালি দিেেত গিয়েও থেমে গেল। কারণ, ওরা দেখল তাদের তিনজনের চোখেই পানি। কেউ যখন কাঁদছে তখন হাত তালি দেয়া ঠিক হবে না।
বাবা বললেন, তোমাদের মনের আকুতি আমি বুঝতে পেরেছি।
হুমায়ূন বলল, কী আকুতি বুঝলেন স্যার?
এই জীবন থেকে তোমরা মুক্তি চাও। তোমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চাও।
জ্বি স্যার, কিন্তু সেটা আর আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমরা রাতের বেলা বনদস্যু। দিনের বেলা এলাকার সন্ত্রাসী। সাধারণ মানুষ আমাদের ভয় পায়। আর আমরা পুলিশের ভয়ে অস্থির থাকি। বিশ্বাস করেন স্যার, একটা ভিখারীর জীবন আমাদের কতটা টানে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। বাকি জীবনটা যদি ভিখারী হয়েও কাটাতে পারতাম.......।
তোমাদের জন্য কিছু করতে পারলে আমার খুব ভাল লাগত। কিন্তু আমি খুব দূর্বল একজন মানুষ। অর্থ এবং ক্ষমতা দুই দিকেই দূর্বল। দূর্বল মানুষরা অন্যের জন্য তেমন কিছু করতে পারে না।
স্যার, ভোর হয়ে গেছে। আমরা এখন উঠবো। আপনারা কি আবার কখনো এখানে জ্যোৎস্না উপভোগ করতে আসবেন?
এখনই তা বলতে পারছি না। হয়তো আসবো।
স্যার, আগামি পূর্ণিমায় আবার আসেন। তখন বেশ শীত থাকবে। শীতের কুয়াশায় মোড়া জ্যোৎস্না দেখবেন স্যার। স্যার, ম্যাডামকেও নিয়ে আসবেন। যদি আমাদের বিশ্বাস করতে পারেন। স্যার....এই যে আপনার পা ছুঁয়ে.........।
আহ! আমি তোমাদের বিশ্বাস করেছি। তোমাদের অবিশ্বাস করার কিছুই নেই। আমি শুধু বিশ্বাস করি না এদেশের রাজনৈতিকদের। তারাই এ দেশটাকে যত ভাবে সম্ভব ডোবাচ্ছে। নাকানি-চুবানি খাওয়াচ্ছে। আজ জিপিএ-৫ এর বন্য বয়ে যাচ্ছে। এও এক ধরনের ডোবানো। আজ ধর্মান্ধরা মাথা তুলে সুশিক্ষিতদের মাথায় কোপ হানছে। এও এক ধরনের ডোবানো। আজ আমাদের শিল্প-সাহিত্য-ইতিহাস-ঐতিহ্য-বিজ্ঞানচেতনা বিনষ্ট হচ্ছে। এও এক ধরনের ডোবানো।
স্যার, কুকুর মানুষকে কামড়ায় আবার প্রভূর জন্য জীবন দেয়। আমরা আপনার জন্য জীবন দিতে পারব।
আমি তোমাদের প্রভূ?
জ্বী স্যার, আপনি আমাদের জ্যোৎস্নায় বনপ্রকৃতি দেখা শিখিয়েছেন। আপনি আমাদের শিক্ষক।
আমি তোমাদের জ্যোৎস্না দেখা শেখালাম কিভাবে? আমি তো সব হুমায়ূন আহমেদের কথা বলেছি।
আমরা কি কোনোদিন তাঁর নাম জানতে পারতাম? স্যার, আবার....আর একবার.....।
অন্তর বলল, আমি মাকে বলবো আপনাদের কথা। আমি মাকে আনতে চেষ্টা করব।
হুমায়ূন দুই হাতে অন্তর আর নেহালকে বুকে জড়িয়ে ধরল।  

   (৮)
বাসায় ফেরার দুই দিনে একবারও মা কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
অন্তর নিজে থেকে কিছু বলবে কিনা তা বুঝতে পারছে না। কারণ মা’র মুখটা থমথমে। বাবা দিব্যি অফিস করছে।
দু’দিন পর অন্তর গেল বাবার ঘরে। কোনো গল্প-টল্প করতে নয়, একটা প্যারাগ্রাফ লেখার জন্য। এ্যা মুন লিট নাইট। একটি জ্যোৎস্না রাত। বাবা বলল, পুরো একটা জ্যোৎস্না রাত বনে কাটিয়ে, আমার কাছে এসেছিস এ্যা মুন লিট নাইট প্যারাগ্রাফ লিখতে?
ইংরেজিতে লিখতে হবে তো। আমি কি আর অত শব্দ জানি? গ্রামারেরও একটা ব্যাপার আছে।
আচ্ছা, তুই লিখে নিয়ে আয়। আমি ভুল-চুক ঠিক করে দিব।
অন্তর চলে যাচ্ছিল। বাবা বলল, আর শোন, তুই যে একটা গল্প শুরু করেছিলি সেটা দ্রুত শেষ কর। এখন থেকে নিয়ম করে কিছু কিছু লিখবি। পড়বি, দেখবি, শুনবি আর লিখবি। আমার খুব ইচ্ছে করছে যে লিখি, কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না। তুই লিখলে লেখক না হলেও লেখকের বাপ তো হতে পারব। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবো।
অন্তরের ভেতর কিছুটা বিস্ময়। বাবা আমূল বদলে গেছে। ক’দিন আগেও যে মনে করতো, লেখক হওয়া মানে ফেসে যাওয়া, লাইফ ত্যাজপাতা হয়ে যাওয়া। যতবড় লেখক, জীবন ততবড় ত্যাজপাতা। আর এখন.....! বদলানো ভাল। মানুষ বদলায়। কিন্তু এরকম রাতারাতি এতটা বদলানো ভাল না।
তারপরও অন্তর কিছু না বলে নিঃশব্দে যাচ্ছিল, বাবা ডাকল, শোন....।
অন্তর থামল। থেমে পেছনে তাকাল। বাবা বলল, তোর মা কিছু জানতে চায়নি?
কী বিষয়ে?
এই যে আমরা পুরো একটা রাত বনে......।
না, কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
আশ্চার্য!
আমি কি নিজে থেকে কিছু বলবো, বাবা?
বলা উচিত। এত বড় একটা অভিজ্ঞতার কথা মাকে জানাবি না?
কিন্তু মা’র মুখটা কেমন থমথমে।
তাহলে একা একা বলতে যাসনে, আরাম পাবি না। দেখি সময় সুযোগ বুঝে দু’জন মিলে কথা বলবো।
সময়-সুযোগ খুঁজতে খুঁজতে চলে গেল আরও তিন দিন। সময় থাকলে মা তেমন সুযোগই দেয় না যে, কথাটা তোলা যায়।
শেষে বাবা রাতে খাবার খেতে বসে নিজেই কথাটা তুলল। তুলল একটু অন্যভাবে-মানে ইনডাইরেক্টলি। মা একটা তেলাপোকা দেখে চমকে উঠেছিল। বাবা বলল, সামান্য একটা তেলাপোকা দেখে এভাবে চমকে ওঠো, তোমার দিকে যদি কেউ গুলি ভরা পিস্তল তাক করে বলতো-এই মান্দারপুত, যা আছে বাইর কর, তখন কী করতে?
মাজেদা হি হি করে হেসে উঠল। মা বড় চোখ করে বাবার দিকে তাকাল। বলল, হঠাৎ পিস্তলের প্রশংগ কেন?
না এমনি। তুমি তেলাপোকা দেখে চমকে উঠলে কি না।
তেলাপোকার সাথে পিস্তলের সম্পর্ক থাকতে পারে না। আমার দিকে কে গুলি ভরা পিস্তল তাক করবে?
একটা এক্সাম্পল আর কি।
আমার মনে হয় অবশ্যই তোমার মিরকাত আলীর কাছে যাওয়া উচিত।
একটা মিথ্যা দশবার উচ্চারণ করলে সত্যের মত হয়ে যায়। তুমি যেভাবে আমাকে মানসিক রোগি বলছো তাতে অন্যরা শুনলে........।
তুমি স্বাভাবিক আচরণ করছো না।
আমি স্বাভাবিক আচরণ করছি। অস্বাভাবিক আচরণ করছো তুমি।
আমি?
হ্যাঁ তুমি, একটা পুরো মুন লিট নাইট আমরা বাপ-বেটা বনে কাটিয়ে এলাম। এ ব্যাপারে তুমি কিছু জানতে চাইলে না।
এ ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
আগ্রহ থাকাটা কি স্বাভাবিক নয়?
তুমি এখন আমাকে অস্বাভাবিক প্রমাণ করতে চাইছো?
আমি তা চাইছি না, তুমি নিজেই তা প্রমাণ করছো।
আমি প্রমাণ করছি?
অবশ্যই, মানুষ হল জগতের সবচেয়ে কিউরিয়াস প্রাণী।
অন্তর ফস করে বলে বসল, বাবা, কিউরিয়াস অর্থ কী?
মনে হচ্ছে তুই ইংরেজিতে উইক। এই পরিচিত শব্দটার অর্থ তোর জানা থাকার কথা। ভোকাবুলারি ইনক্রিজ করার চেষ্টা কর। প্রতিদিন ডিকশনারি থেকে বিশটা করে শব্দ পড়ে আমাকে জানাবি। খাওয়া শেষ হলে ডিকশনারি খুলে দেখে নিবি কিউরিয়াস অর্থ কী?
কিউরিয়াস অর্থ কি আগ্রহী বা অনুসন্ধিৎসু এরকম কিছু?
ঠিক আছে।
বাবা পূর্বের কথায় ফিরে গেল, যা বলছিলাম, মানুষ হল জগতের সবচেয়ে কিউরিয়াস প্রাণী। কিউরিয়াস বলেই মানুষ এতদূর আসতে পেরেছে, না হলে এখনও বাঁদর হয়েই ডালে ডালে ঝুলতো। আর মানুষের মধ্যে নারী জাতি হল অধিক কিউরিয়াস-বিশেষ করে স্বামী-সন্তানের ব্যাপারে। এতবড় একটা ঘটনা.......।
আমি অপার আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করছি, বলো তো তোমাদের জঙ্গলে মুন লিট নাইট কেমন কাটল?
চমৎকার একটা রাত কাটিয়েছি। এক কথায়, তুলনাহীন। যদি আমাকে কেউ প্রশ্ন করে, তোমার জীবনের স্মরণীয় রাত কোনটা? আমি নির্দিধায় এই রাতটার কথাই বলবো। তারখিটা আমি ডায়েরিতে টুকে রাখতে চেয়েছিলাম। পরে রাখিনি। ভেবে দেখলাম, এরকম একটা তারিখ যদি ডায়েরিতে টুকে রাখতে হয় তাহলে সেটা আবার স্মরণীয় হল কিভাবে। অন্তর তুই কি তারিখটা ডায়েরিতে টুকে রেখেছিস বাবা?
না রাখিনি। যদি কখনো স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েও যায় তাও তারিখটা আমার মনে থাকবে। ধরো, আমি সব ভুলে গেছি। বাপের নাম, মায়ের নাম এমনকি নিজের নাম পর্যন্ত। তখন কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে-আচ্ছা, তোমার মায়ের নামটা কী? আমি অবলিলায় বলে দেব এই তারিখটার কথা।
মা কড়া কন্ঠে বলল, তুইও তোর বাপের মত এক্সট্রা কথা বলতে শুরু করেছিস। তোকেও মিরকাত আলীর কাছে নিয়ে যাব। বাপের মত হবার চেষ্টা করবি না। বাপকা বেটা হবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। ছেলেরা হবে মায়ের মত, আর মেয়েরা হবে বাপের মত। তুই-ই শুধু ব্যতিক্রম। বাপ নেউটা হয়েছিস। ভাগ্য ভাল যে, কোনো গুন্ডা-পান্ডা তোদের দেখেনি, তাহলে স্মরণীয় রাত না হয়ে মরণীয় রাত হয়ে যেত।
[ক্রমশ...]

পিতাকে নিয়ে সন্তানের শূন্যতা বোধ

পিতাকে নিয়ে সন্তানের শূন্যতা বোধ



পিতাকে নিয়ে সন্তানের শূন্যতা বোধ 
বাসার তাসাউফ

ফজলুল কবিরী

এই বইয়ের লেখক বাসার তাসাউফের পিতা মাজু উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল। আর দশটা সন্তানের মতো তিনি পিতার মৃত্যু সহজে মেনে নিতে পারেননি। ভীষণ মর্মাহত হয়েছেন, ভেঙ্গে পড়েছেন, ছোট্ট শিশুর মতো চিৎকার করে কেঁদেছেন; তবু বুকের ভেতরের হাহাকার দমাতে পারেন নি। মনে হয়েছে, বুকের ভেতরে যেন দীর্ঘ একটা শ্বাস বাঁইকুড়ালি বাতাসের মতো ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে। সেই শূন্যতা আর হাহাকারের দীর্ঘশ^াসটি বুকের ভেতর থেকে বের করে বাতাসে উড়িয়ে দিতেই তিনি ‘পিতৃশোক ও দীর্ঘশ^াসের গল্প’ গল্পগ্রন্থটি লিখেন।
তিনি লিখেছেন, ‘আমার পিতা ছিলেন একজন কৃষক, একজন শ্রমিক, একজন জেলে এবং আরও বিচিত্র ধরনের কাজ তিনি করেছেন। গল্প-কবিতা বুঝতেন না; কিন্তু আমি চর্চা করি বলে ভালোবাসতেন। প্রতিবছর বইমেলায় প্রকাশিত আমার নতুন বইটি তাঁর হাতে তুলে দিতাম, তিনি নেড়েচেড়ে দেখতেন, খুশি হতেন। এই কারণে লেখালেখির প্রতি আমার ঝোঁক আরও বেড়ে গিয়েছিল। আমি পড়ালেখায় তেমন ভালো ছিলাম না। স্কুলে গণিত, ইংরেজি, ইতিহাস কোনো বিষয়ই ভালো লাগত না। তবে বাংলা বিষয়ের প্রতি বিশেষ টান ছিল। আবেগ ও ভালোবাসাও ছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে ঘিরে। আমি কখনও সিগারেট খাইনি, পানও মুখে তুলিনি কোনোদিন। কোনো কিছুর প্রতি আমার আসক্তি ছিল না; কিন্তু বই পড়া আর ডায়েরিতে রোজনামচা লেখার অভ্যেস ছিল। এই অভ্যেসটাই আমার জীবন বদলে দিয়েছে।
পিতার মৃত্যুর পর আমি অপ্রকৃতস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম, গভীর বিষাদে ডুবে যাচ্ছিলাম অহর্নিশি, অসীম শূন্যতা ঘিরে ধরেছিল আমাকে। সেই শূন্যতা এতই প্রকট আকার ধারণ করেছিল যে আমার কোনো কিছু ভাবতে, এমনকি নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হত। কারও পিতা চিরতরে হারিয়ে গেলে সন্তানের মনে কী রকম কষ্ট হয়Ñ আমি তা বুঝেছি। একই সঙ্গে আমি এ-ও বুঝেছি, জীবন যখন কাউকে নিচের দিকে টানতে থাকে, সে অবস্থায়ও সব ভেঙেচুরে ওঠে আসা ভীষণ কষ্টকর, বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়াও যেন যায় না। আমি বুঝেছি, জেনেছি, শিখেছিÑ জীবন একটা সমুদ্রতীরের বালুচর মাত্র। এ ছাড়া পিতার মৃত্যু আমাকে আরও অনেক কিছুই শিখিয়েছে। আমি যখন প্রবল আবেগে ভেঙ্গে পড়েছিÑ তখন নিজেকে বারবার বোঝাতে চেষ্টা করেছি; কিন্তু বোঝাতে পারিনি। তবে আমি কারও সাথে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলিনি। নীরবে সয়েছি। হঠাৎ একদিন আমার মাথায় আসে পিতৃশোক ভাগ করার যেহেতু কেউ নেই আর যেহেতু আমার লেখালেখির অভ্যাস আছে; পিতাকে নিয়ে একটি গল্প লেখা যাক। এভাবেই ‘পিতৃশোক ও দীর্ঘশ^াসের গল্প’ লেখা হয়েছে।
বাসার তাসাউফ ছোটগল্পের যে জমিনে পায়চারী করেন, তাতে আমাদের চেনা-জানা গ্রাম ও সংস্কৃতি তীব্রভাবে উঠে আসে। গল্পের চরিত্রে এসে ধরা দেয় জগামাঝির মতো সরল ও দরিদ্রপীড়িত অথচ প্রকৃতির মহৎ সন্তান। আবার কখনও দেখা যায় হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতাই গল্পের মূল চরিত্র। তার সরল ও নির্মেদ ভাষাশৈলীতে কখনও বাবা, কখনও দাদি কিংবা কখনও বৃদ্ধাশ্রমে জীবনের শেষসময়ের গ্লানিময় দিনগুলো পার করতে থাকা মানুষের অন্তর্বয়ানে উঠে আসে আমাদের যাপিত জীবনের সুখ ও শোকগাথা। গল্পের নিরন্তর প্রবাহকে ধরে রাখতে পারার ক্ষমতা সব লেখকের থাকে না। এটা শেষপর্যন্ত একটা সংগ্রাম। লেখক গল্পের নিরন্তর সংগ্রামে সর্বদা ব্যাপৃত থাকুক এই প্রত্যাশা পাঠকের থাকবে। বাসার তাসাউফের ‘পিতৃশোক ও দীর্ঘশ^াসের গল্প’ বইয়ের গল্পগুলো সেই দাবী করে। বইটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করেছে শুদ্ধপ্রকাশ।



বইয়ের নাম: পিতৃশোক ও দীর্ঘশ্বাসের গল্প
লেখক: বাসার তাসাউফ
ধরন: ছোটগল্প
প্রকাশক: শুদ্ধ প্রকাশ
প্রচ্ছদ: চারু পিন্টু
দাম: ১৬০ টাকা



জীবনঘনিষ্ট ভাবচরিতার্থে পটু শব্দশিল্পী

জীবনঘনিষ্ট ভাবচরিতার্থে পটু শব্দশিল্পী





জীবনঘনিষ্ট ভাবচরিতার্থে পটু শব্দশিল্পী
সাইয়্যিদ মঞ্জু 

মাহমুদ নোমান

মায়ের মুখের কথা বলতে এখন অনেক রক্তমাংসে গড়া মানুষের সম্মানবোধে আটকায়! যা যেকোনো সৃজনশীলতায় দুষ্টতার পরিচয়বাহী এবং সেটি ধ্বসে যায় সৃষ্টির কিছুদিন পরেই। কেননা একজন গর্ভধারিণী মা তাঁর ছেলের ভাষা বা বোধের প্রথম ও প্রধান শিক্ষিকা। তাই কোনো সৃজনশীল মানুষের পরিচয়দানকারী যখন নিজের মায়ের মুখের কথা বা তাঁর আশপাশের পরিবেশ- পরিস্থিতিলব্দ জ্ঞান-বোধ সৃজন কর্মে অস্বীকার করে অথবা অন্যজনের এহেন কর্মকা-ে বরঞ্চ নাক ছিটকায় তখন ওনাকে দুষ্কৃতিকারী এবং প্রচুর সন্দেহ করি। এসব কথা বলবার এতো তোড়জোড়ের কারণ একটা- সম্প্রতি কবি সাইয়্যিদ মঞ্জুর কাব্যগ্রন্থ’ ‘আমার সমুদ্রশিরা’ পাঠ নেওয়ার পরবর্তী ভেতরকার কেউ বলতে বাধ্য করেছে। এককথায় সাইয়্যিদ মঞ্জু মায়ের সেই আদর্শ ছেলে। সাইয়্যিদ মঞ্জুর ভাষাজ্ঞান, বোধ বা কল্পনাবল গর্ভধারিণী মায়ের আশপাশ ঘিরেই। তাই সাইয়্যিদ মঞ্জুর কাব্যিকতা সুদূরপ্রসারী এবং মজবুদ পিলারে সমৃদ্ধশালী; এজন্য সাইয়্যিদ মঞ্জুর কাব্যভুবণে পাঠক নির্দ্বিধায় প্রবেশ করবে। কোনো ভুলযোগে পাঠক বিভ্রান্ত হবে না। এটাই সাইয়্যিদ মঞ্জু আশ্বস্ত করতে পেরেছে তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ’ "আমার সমুদ্রশিরা" এর মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত, এই নিজস্বতাকে কে কীভাবে শিল্পিত রূপ দি”েছ সেখানে একেকজন একেকজন থেকে ভিন্নতর হয়ে যায়। উপর্যুপরী সাধনার বিবিধ পরীক্ষা দিতে হয়। যেমন পরিবার বা আমার কাছে যত পোশাকআশাক আছে সেখান থেকে সবচেয়ে ভালোটাই বা মানানসই পোশাকটি পরিধান করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবো। তেমনি আপনার পরিবার বা আপনিও একই কাজ করবেন। এটাই হচ্ছে শিল্পিত উপস্থাপনা। এখানেই সাইয়্যিদ মঞ্জুকে প্রতিশ্রুতিশীল মনে হয়েছে...

০২.
সাইয়্যিদ মঞ্জুর কবিতার ভাষাটা প্রাঞ্জল আন্তরিকতায় ও সংবেদনশীল, জীবন জীবিকার সাথে ভাবপূর্ণ; মুহূর্তে নাড়িয়ে দিতে সক্ষম পাঠকের অনুভূতি, যখন বলেন-
জেলে ভাই, কেন মারো তারে অপয়া বলে
সে যে সমুদ্রের ঝাড়ুদার।
           - কাছিম পাঠ;  ৩০ পৃ.)
সাইয়্যিদ মঞ্জু জীবনঘেঁষা নয়, জীবনঘনিষ্ট ভাবচরিতার্থে পটু। কোনো কল্পনারসে টলে যায় নি, বক্তব্যে বেশ সুস্থি’র। সমুদ্রপাড়ের কবি সাইয়্যিদ মঞ্জুর কবিতা সমুদ্রের সৌন্দর্যের চেয়ে তা-বতা বেশি উন্মোচিত হয়েছে এবং এটিই স্বাভাবিক। সমুদ্রপাড়ের মানুষের নানাবিধ দুঃখ-দুর্দশা সাবলিলতায় ফুটে উঠেছে। তবে উগ্রতায় নয়, মোলায়েম সুরে....

সাইয়্যিদ মঞ্জু আমার সমুদ্রশিরা" কাব্যগ্রন্থে’র প্রায় কবিতায় গদ্যছন্দে নিজের মতো করে কথা বলেছেন। আনুষাঙ্গিকতাকে তেমন পরোয়া করেনি, চিত্রকল্পের ভাসানো খেলায় উপমার মৃদু অলংকারিত্বে কবিতাগুলোর সাজসজ্জা, কিছু পঙক্তি উল্লেখ করলে পাঠকমাত্রই বুঝবেন -

ক.
ইলিশ-রূপচাঁদার ক্রন্দন টুনার জালে
বিপদের ফাঁদে কাছিমও
অহর্নিশ মৃত্যু সাইরেন অগভীর সমুদ্রজলে
ভয়ঘুম লইট্যা, পাইস্যা, চুরি, চিংড়ির আলয়ে
         - ভয়ঘুম; ৪৫ পৃ.)
খ.
রঙিন অথবা সাদাকালো তফাত বুঝি না
কালের অন্তরাল শুধু সেকাল আর একাল
             - কালের অন্তরাল; ৪৪ পৃ.)
গ.
প্রার্থনার স্বরে খুঁজি এই ঠিকানা
আর্তনাদের ভাষায় অন্তিম কোনো মুহূর্তের কাছে
আবারো সেই কোলাহলের ভেতরে রেখে গেছি আমাকে।
           - ঠিকানা; ৪৩ পৃ.)
ঘ.
নিশ্বাসও গুম হয় বুকের তীব্র যন্ত্রনায়
পালাবো কোথায় আছে কি কোন অচেনা প্রান্তর
তোমার রচিত পৃথিবী অথবা বুকের জমি।
             - ক্লান্তির নোঙর; ১৮ পৃ.)

এতোকিছুর পরেও সাইয়্যিদ মঞ্জু একজন সুপ্রীত রোমান্টিসিজমের কাব্যপ্রতিভা। ভালোলাগাকে সৌন্দর্যের প্রলেপে নান্দনিকতার রূপদান দারুণ অর্থবহ -
প্রাণটারে তুই জমা রাখিস বুকের গহীনে
ফিরে আসি যদি তবে ফেরত চেয়ে নিব
বাঁকখালী তোর বুকে।
                         - চুম্বনচিহ্ন; ৩১ পৃ.)

আমার তো কেবল ফিরে ফিরে আসে হলদে হাতে
অকস্মাৎ স্পর্শ হয়ে যাওয়া তৃষ্ণা।
                      - অস্পর্শী বিস্মৃতি ; ৪০ পৃ.)

সবশেষের কথাটি হলো, সাইয়্যিদ মঞ্জুর কবিতা উপরোল্লিখিত শেষ লাইন- ‘অকস্মাৎ স্পর্শ হয়ে যাওয়া তৃষ্ণা’ যেন... কবিতার সংজ্ঞাও অনেকটা তেমনি, তবুও যে তৃষ্ণা বাড়ে, বাড়ন্ত তৃষ্ণার মোজেজা আত্মস্থ’ করতে হলেও পড়তে হবে সাইয়্যিদ মঞ্জুর ‘আমার সমুদ্রশিরা’ ...


শিল্পীর তুলে আমার দুঃখ আঁকা

শিল্পীর তুলে আমার দুঃখ আঁকা



শিল্পীর তুলে আমার দুঃখ আঁকা

ইজাজ আহমেদ মিলন

মেহেদী ধ্রুব

ইজাজ আহ্মেদ মিলন একধারে কবি, সাংবাদিক ও গল্পকার। তাঁর লেখার প্রধান নিয়ামক দেশ-কাল-সমাজের বহুমাত্রিক অসঙ্গতি, অতৃপ্ত আত্মার চাওয়া-পাওয়ার বৈপ্যরীত্যে বেঁচে থাকার তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণা, ব্যক্তি মানুষের বেদনাবোধ, একাকিত্ব ও নৈঃসঙ্গ্য-বিলাস, সমাজের নিচুতলার মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম, তাদের মর্মবেদনা, কখনো দ্রোহী মনোভাব, শরীরী ও অশরীরী প্রেম, কখনো বিরহের আর্তি ও প্রকৃতির নানামাত্রিক অনুষঙ্গ। ‘জন্মান্ধ চোখের মতো শুষ্ক পৃথিবী’ তাঁর প ম কাব্যগ্রন্থ, যেখানে এসব চেতনা প্রতিভাত হয়েছে; যেখাবে প্রাধান্য পেয়েছে ব্যক্তির নিঃসঙ্গতা, বেদনাবোধ, প্রেম-বিরহ ও দ্রোহের সেতুবন্ধ। আলোচ্য গ্রন্থ’ মোট কবিতা আছে ১০০ টি। দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় প্রত্যেকটি কবিতা এক পৃষ্ঠার মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে, আবার কোনো কোনো কবিতা অর্ধেক পৃষ্ঠার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, বর্তমান সময়ে দীর্ঘ কবিতার বিপরীতে ছোটকবিতার যে ট্রেন্ড দাঁড়িয়ে গেছে কিংবা কখনো কখনো জাপানি হাইকু বা ম্যাক্সিম স্টাইলে যে ধরনের কবিতা লেখার চেষ্টা চলছে বা হচ্ছে ‘জন্মান্ধ চোখের মতো শুষ্ক পৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থে’ও হালের এ ট্রেন্ড প্রতীয়মান। কবি ইজাজ মিলনের চোখে এ পৃথিবীতে সুখকর কিছু নেই, পৃথিবীর প্রত্যেক পরতে পরতে সমস্যা বাসা বেঁধেছে। এক ফোঁটা পানির জন্য মরুভূমির কোনো প্রাণি যেভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরে, কবির দেখা পৃথিবীও মরুভূমির কোনো প্রাণির মতো, যে প্রাণি পানির অভাবে যন্ত্রণায় ছটফট করছে, যেখানে কবির পৃথিবী জলহীন, জন্মান্ধ চোখের মতো শুষ্ক। কবির কাছে আরো মনে হয়, এ পৃথিবীর কোথাও নেই বিশুদ্ধতার কোনো উদাহরণ, প্রেম-প্রকৃতির মর্মে মর্মে তীব্র যন্ত্রণা, নিঃসঙ্গতার অনুবাদ। এ গ্রšে’র কবিতাগুলোর নাম দেখেই এসব বিষয়-আশয় সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। প্রাসঙ্গিকভাবে কিছু নাম পড়া যাক : নৈঃশব্দের আলিঙ্গন, একমুঠো অন্ধকার, নিরাশা ও দুঃখের প্রাচীর, দুঃখী প্রেমিক, কিছু অন্ধকার, শোকার্ত ভায়োলিন, আমার দীর্ঘশ্বাসে, শূন্যতার মাতম, দুঃস্বপ্নের মিছিল, দীর্ঘ দেহের শূন্যতা, শতাব্দীর নিদ্রাহীন অসুখ, আমার দুঃখগুলো কেমন আছে, দুঃখের মিনার, জীবনের ধূসরতা, শোক বাক্য, দরদের দুঃখগুলো, আমি ফিরে আসি ঘর শূন্য, মৃত্যুর দখলে, দুঃখের নদীতে ভেজাও, তোমার দুঃসময়, সন্ধ্যাগুলো বড্ড একা ও মানচিত্রের দুঃখের রাজ্য নেই। এভাবে আরো পড়া যেতে পারে, প্রায় সবগুলো নামের মধ্যেই একটা দুঃখবোধ,  একটা বেদনাবোধ, একটা দ্রোহ বা প্রেম-বিরহের ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। এ নামগুলো পড়লে হয়তো বাংলা সাহিত্যের দুঃখবাদী কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের কথা মনে পড়বে; কবিতার দ্রোহ ও প্রেমের কথা পড়লে হয়তো ষাট-সত্তর দশকের কবি নির্মলেন্দু গুণ, শহীদ কাদরী, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লার কথা মনে পড়বে। কিš‘ শেষ পর্যন্ত পড়ার পর মনে হবে এ স্বর, এ সুর একান্তই ইজাজ আহ্মেদ মিলনের। গ্রš’ পাঠান্তে পাঠক এ সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন যে, এ কবিতা যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত বা ষাট সত্তর দশকের কবির কবিতা না, এ কবিতা একুশ শতকের এক তরুণ কবির কবিতা, যে কবির জন্ম, বেড়ে ওঠা কিংবা হয়ে ওঠা বেদনাকে আলিঙ্গন করে, দুঃখের ঠোঁটে চুম্বন করে; কিš‘ এখানে লক্ষ্যণীয় যে কবির এ দুঃখ-বেদনা শেষ পর্যন্ত দেশ-কাল-সমাজের সাথে মিশে সাধারণ্যের হয়ে যায়; অর্থাৎ ব্যক্তির বেদনাবোধ, আত্মগ্লানি ও আত্মমর্যাবোধ মানবিক মানুষের একান্ত মনের কথা হয়ে ওঠে।  
ইতোমধ্যে উল্লিখিত হয়েছে যে, এ গ্রন্থে’র কবি দ্রোহ, নিঃসঙ্গতা, প্রেম-বিরহ ও অভিমানের খেয়ায় চড়ে বেড়ান; সেই চড়ে বেড়ানোর দোলায় দোলায়িত হয়ে ওঠে বর্তমান সমাজ বাস্তবতার নগ্নতা, হিংস্্রতা ও পাওয়া না-পাওয়ার ইশতিহার ও অজানা দুঃখের প্রহর। প্রসঙ্গত কিছু কবিতার দিকে নজর দেয়া যাক : প্রথম কবিতা ‘নৈঃশব্দের আলিঙ্গন’-এ কবির উ”চারণ, ‘শিল্পীর তুলিতে আমার দুঃখ আঁকা’। কবির এ দুঃখবোধ ও বেদনাবোধ পুরো গ্রš’জুড়ে দেখা যাবে, তবে এ দুঃখ সর্বদা যন্ত্রণা দেয় না, সর্বদা পোড়ায় না, কখনো কখনো এ দুঃখ আবিষ্ট করে, এ দুঃখ নিয়ে যায় এক মায়া জগতে, আ”ছন্ন করে রাখে এক অজানা দুঃখের কুহকে; তবে এ কুহকের মধ্যেও এক ধরনের প্রশান্তি আছে, লীলাময় সৌন্দর্য আছে। ফলে ক্রমান্বয়ে কবি ইজাজ মিলন আত্মস্বীকারোক্তি ও আত্মবিশ্বাসের সাথে মনের কথা বলে যান। ‘অভিশাপ মিশে গেছে মেঘের পালকে’ কবিতায় কবির প্রেম ও দীর্ঘশ্বাস অভিশাপ হয়ে মিশে যা মেঘের পালকে, সেই পালকের আঁচড়ে কবির হৃদয়ে দহনের দাগ পড়েনি, পচনের চিহ্ন পড়েনি; বরং সেখানে আছে প্রেম ও বোধের আগুনে পুড়ে যাবার দুর্মর আকাক্সক্ষা, আর আছে এক অভিমানী সুর, ‘আমি কাকে অভিশাপ দেবো !’ নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া, প্রেম-ধর্ম-সম্পর্ক ও সংসার-ধর্মের সাথে বোঝাপড়া, কঠোর পরিশ্রমের পরে প্রাপ্য স্বীকৃতি পাবার জন্য আত্মবিশ্বাসী উ”চারণ লক্ষ করা যায়; ‘কতটা পথ হাঁটলে পথিক হবো’ কবিতায় দেখা যাবে সেই বোধের দৃপ্ত উ”চারণ, এ ঘুণেধরা সমাজ-সংসার ও রাষ্ট্রের বানানো নিয়মের বিরুদ্ধে কবির সত্য চরণ বা হৃদয়ের আর্তি ও নিদারুণ প্রশ্ন, ‘হে বিচারক ! কতটা পথ পাড়ি দিলে/অবশেষে আমি পথিক হবো?’ প্রচলিত সমাজকে চ্যালেঞ্জ করে কীভাবে টিকে থাকতে হয়, কীভাবে প্রথার বিরুদ্ধ¯্রােতে ভাসতে হয়, কীভাবে নিজের অহম ও ক্রোধের আগুনে পুড়ে সমস্ত দুঃখ-বেদনা ও অনিয়মের মুখোমুখি হতে হয় কবি তা ভালো করে জানেন, আর জানেন বলেই তাঁর সাহসী উ”চারণ, ‘আজও বেরুতে পারিনি সেখান থেকে/নেভাতে পারিনি কেউ/আমার ক্রোধের আগুন।’ এ ক্রোধের আগুন কখনো শান্তির নদীতে নিয়ে যায় কবিকে, আবার সেই দুঃখের ক্ষত থেকে সৃষ্টি হয় আরেক নদী; কবির ভাষায় ‘এখানে নদী ছিল না কখনো/অথচ এখন লবণাক্ত পানির দখলে/ক্ষত থেকে সৃষ্টি হওয়া একটি নদী।’ সৃষ্ট নদীর বুকে সাঁতার কেটে কবি দেহমনকে শান্ত করেন; কেননা সমস্ত দুঃখ ও যন্ত্রণাকে সহ্য করার অসধারণ ক্ষমতা নিয়ে জন্মিয়েছেন; ফলে বেদনার কোনো আগুন তাঁকে ভষ্ম করতে পারে না, বরং সেই আগুনে পুড়ে নিজেকে খাঁটির সোনর মতো পরিশুদ্ধ করেন, হয়ে ওঠেন আরো খাঁটি; কবির ভাষায়, ‘আগুন আমাকে ভষ্ম করে না...আমি তালিম নিই বিশুদ্ধ জীবনের’।
আলোচনায় উল্লিখিত চরণগুলো লক্ষ করলে অনুধাবন করা সহজ হবে যে, কবি ইজাজ আহ্মেদ মিলনের কবিতার ভাষা ও ছন্দ সহজ, সরল ও সাবলীল, যা পাঠককে তৃপ্তি দিবে। সাম্প্রতিক কবিতাচর্চার দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, উত্তর-আধুনিক কবিতার নামে প্রায়শই যে দুবোর্ধ্য কবিতা লেখা হ”েছ বা যে কবিতার চর্চা চলছে, বা যেসব কবিতা লেখার চেষ্টা চলছে, ইজাজ মিলনের কবিতা সেই ট্রেন্ড থেকে ভিন্ন মাত্রায় চলে। এখানে বরং সাবলীল শব্দ, প্রতীক ও মুগ্ধ অলংকারের মাধ্যমে দেশ-কাল-সমাজের ক্ষত, ব্যক্তির নিঃসঙ্গতা, একাত্বিবোধ, বেদনাবোধ, প্রেম-বিরহ ও প্রতিবাদের সুর পরিলক্ষিত হয়। ফলে যেকোনো কাব্যপ্রেমিক মানুষের কাছে ‘জন্মান্ধ চোখের মতো শুষ্ক পৃথিবী’ যে সুপাঠ্য হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। 




চিরস্মরণীয়, বিস্ময়কর সাহিত্য প্রতিভা হেলেন কেলার

চিরস্মরণীয়, বিস্ময়কর সাহিত্য প্রতিভা  হেলেন কেলার



চিরস্মরণীয়, বিস্ময়কর সাহিত্য প্রতিভা 
হেলেন কেলার

সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান

‘আমার দৃষ্টিদ্বয় তারা সরিয়ে নিল
যেখানে যা হওয়া উচিত ছিল
কিন্তু আমি স্মরণ করি মিল্টনের স্বর্গখনি,
আমার শ্রবণদ্বয় তারা সরিয়ে নিল
যেখানে যা হওয়া উচিত ছিল
বিটোফেন এসে মুছালো আমার চোখের পানি।
-হেলেন কেলার
(জন্ম: ২৭ জুন ১৮৮০ ইং- মৃত্যু: ১ জুলাই ১৯৬৮ ইং)

শারীরিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের অনেকেই প্রতিনিয়ত হতাশায় ভোগে। কেউ কেউ হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে জীবনের অবসান ঘটাতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আর প্রতিবন্ধী হলে তো কোন কথাই নেই। সমাজের মানুষের করুণা নিয়েই প্রতিবন্ধীদের সারাটি জীবন বেঁচে থাকতে হয়। প্রতিবন্ধীদের বিধাতার চরম অভিশাপ হিসেবে দেখা হয়। তবে এই ধারণাটি মিথ্যা প্রমাণ করতে কিছু ব্যতিক্রম নজির থাকে, যা আমাদের কাছে হয়ে উঠে অবাক বিস্ময়। পৃথিবীর বুকে এমন কিছু বিস্ময়কর প্রতিভার আবির্ভাব ঘটে, যা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও অনেকেই নিজ প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর বুকে এমন কিছু অনন্য কীর্তি রেখে রাখেন, যা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষেরও চিন্তার বাইরে। এমনি এক অবাক বিস্ময়কর প্রতিভার নাম হেলেন কেলার। তিনি ছিলেন একজন দৃষ্টি, বাক ও শ্রবণশক্তিহীন প্রতিবন্ধী। তবে নিজের শারীরিক অক্ষমতার জন্য তিনি দমে যাননি। বরং নিজের ভেতরের সুপ্ত প্রতিভা দিয়ে পৃথিবীর বুকে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। এই মহীয়সী নারী একাধারে ছিলেন একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিক, মানবতাবাদী সমাজকর্মী, রাজনীতিবিদ ও জনপ্রিয় বক্তা। শারীরিক সব অক্ষমতাকে প্রচন্ড মানসিক শক্তি দিয়ে কিভাবে জয় করতে হয়, তিনি সেটা শিখিয়ে গেছেন। পৃথিবীর সকল প্রতিবন্ধীদের অনুপ্রেরণা ও আত্মবিশ্বাসের নাম হেলেন কেলার। সারা বিশ্ব জুড়ে আছে তার বিরল প্রতিভার খ্যাতি। অনন্য সাহিত্য প্রতিভা দিয়ে সাহিত্যিক হিসেবে পৃথিবীর বুকে নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখে গেছেন। সাহিত্যিক হেলেন কেলারের রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ১২ টি। এর মধ্যে প্রধান গ্রন্থ গুলো হচ্ছে ‘দি স্টোরি অফ মাই লাইফ, লেট আস হ্যাভ ফেইথ, দি ওয়ার্ল্ড আই লিভ ইন, ওপেন ডোর ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অভিশপ্ত বিড়ম্বনা জীবনের বিষাদের ওপর একটি চলচ্চিত্র (ডেলিভারেন্ট-১৯১৯) নির্মাণ করেন। এই চলচ্চিত্রে তার নিজের ভূমিকায় তিনি নিজেই অভিনয় করেছেন। অসম্ভবকে সম্ভব করা হেলেন কেলার বলতেন, ‘অন্ধত্ব নয়, অজ্ঞতা ও অনুভূতিহীনতাই দুনিয়ার একমাত্র দুর্ভেদ্য অন্ধকার।

১৮৮০ সালের ২৭ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা তাসকাম্বিয়া গ্রামে হেলেন কেলার জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আর্থার কেলার এবং মায়ের নাম কেইট অ্যাডামস। পিতা আর্থার কেলার ছিলেন সামরিক বিভাগের একজন অফিসার। পিতামাতার খুব আদরের সন্তান ছিলেন হেলেন। শৈশবে তিনি ছিলেন ভীষণ চঞ্চল প্রকৃতির কিন্তু তার এই চঞ্চলতা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মাত্র ১৯ মাস বয়সেই হেলেনের জীবনে একটি মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে। গোসল করানোর সময় মায়ের কোল থেকে হঠাৎ পড়ে যান শিশু হেলেন। সেই আঘাতে সাময়িক জ্ঞান হারানোর পর তা ফিরে এলেও তার মা লক্ষ্য করলেন তার আদরের সন্তানের দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি একেবারেই লোপ পেয়েছে। নিরুপায় পিতামাতা তখন শরণাপন্ন হলেন ডাক্তারের নিকট। ডাক্তার অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানালেন তার এই শারীরিক বিপর্যয়ের কারণ হলো মস্তিষ্ক ও পাকস্থলীর আঘাত। মা-বাবা প্রাণপ্রিয় কন্যার জীবনের আশা-ভরসা ছেড়ে দিলেও একেবারে ভেঙে পড়েননি। হেলেনের চিকিৎসা করা শুরু করেন। বহু চিকিৎসার পর হেলেনের জীবন রক্ষা পায়। কিন্তু তার কথা বলা, শোনা এবং দেখার শক্তি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। ছয় বছর বয়সে হেলেনকে নিয়ে পিতা আর্থার যান ওয়াশিংটনের আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের কাছে। ইনিই হলেন যোগাযোগ প্রযুক্তির অগ্রদূত টেলিফোন আবিষ্কারক বেল। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বেল জানালেন হেলেন আর কোনোদিন চোখে দেখতে এবং কানে শুনতে পারবে না। তবে গ্রাহাম বেল হেলেনের তীক্ষè বুদ্ধিমত্তা দেখে আর্থারকে হেলেনের জন্য যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পরামর্শ দিলেন। যাতে স্বাভাবিক জীবনের কাছাকাছি একটি সুন্দর জীবন ফিরে পেতে পারে হেলেন।

বেলের পরামর্শ অনুযায়ী বোস্টনের পার্কিনস ইন্সটিটিউশনে হেলেনকে ভর্তি করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটির কাজ ছিল অন্ধদের শিক্ষাদান করা। এর প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তার হো হেলেনের শিক্ষা গ্রহণের ভার নিজ হাতে তুলে নেন। তিনি হেলেনকে স্নেহ দিয়ে লেখাপড়া শেখাতে শুরু করেন। কিন্তু অকস্মাৎ ডাক্তার হো মারা গেলে হেলেনের পিতামাতা পুনরায় তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েন। তখন পার্কিনস ইন্সটিটিউশনের নতুন ডিরেক্টর পদে দায়িত্ব নেন মাইকেল এ্যাগানোস। তিনি হেলেনের সমস্ত কথা শুনলেন এবং অ্যানি সুলিভ্যান ম্যানসফিল্ড নামের এক গৃহশিক্ষিকার হাতে হেলেনের জীবনকে আলোকিত করার দায়িত্ব দেন। অ্যানির কাছে শিশু হেলেন হাতে স্পর্শের মাধ্যমে জগত চিনতে লাগলেন। আস্তে আস্তে হেলেন অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সব শিখে নিতে থাকেন। লুই ব্রেইল আবিষ্কৃত ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে হেলেন লেখাপড়া শিখতে শুরু করেন। কয়েক বছরেই হেলেন ইংরেজি, ল্যাটিন, গ্রীক, ফরাসি এবং জার্মান ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে সে ব্রেইল টাইপ রাইটারে লিখতে শেখে। হেলেন এগারো বছর বয়সে এক বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে কথা বলার চর্চা করতে থাকে। ধীরে ধীরে চিকিৎসার মাধ্যমে তার বাকশক্তি অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ১৯০০ সালে হেলেন রেডক্লিফ কলেজে ভর্তি হন। সেখানে বিশ্বখ্যাত লেখক মার্ক টোয়েনের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। ১৯০৪ সালে হেলেন প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিশ বছর বয়সে হেলেন সাহিত্য, দর্শন, ধর্ম, ইতিহাসে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। কলেজে পড়াকালীন তিনি লিখেন তার প্রথম আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘ঙঢ়ঃরসরংস’। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি লিখেন তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'ঞযব ংঃড়ৎু ড়ভ সু ষরভব'ষরভব'। যেখানে তিনি তার জীবনের বিপর্যয়, লড়াই, অ্যানির কাছ থেকে শিক্ষালাভ, তার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসার জীবনচিত্র তুলে ধরেন তার অপূর্ব লেখনীতে। আর এই রচনার মধ্য দিয়ে তিনি ব্যাপক খ্যাতিও অর্জন করেন। লোকের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে হেলেনের নাম। বলতে গেলে, এই গ্রন্থ রচনার পরেই তিনি একজন সুপ্রতিষ্ঠিত লেখিকা হয়ে উঠেন। তারপর হেলেনকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তখন ছিল শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যাবার। হেলেন একের পর এক গ্রন্থ রচনা করেন এবং তার প্রতিটি গ্রন্থ পাঠকের মাঝে ব্যাপক সাড়া সৃষ্টি করে। জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে হেলেন সাংবাদিক পেশায় তার কর্মজীবন শুরু করেন। ভালোই চলছিল সবকিছু কিন্তু রাজনৈতিক প্ররোচনায় হেলেনের লেখার নামে বিভিন্ন সমালোচনা ও কুৎসা রটতে থাকে। তারপর হেলেন ঠিক করলেন সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে দেবেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়া এবং তা থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে জীবনধারণ করবেন। তার বক্তৃতায় সূক্ষ্মতা ও চিন্তার গভীরতা দেখে মুগ্ধ হন শ্রোতারা। কিছুদিনের মধ্যেই হেলেনের অসংখ্য অনুরাগী ভক্ত তৈরি হয়। সেই সময়ে আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় বক্তা মার্ক টোয়েনের সহযোগিতা পান। একই মঞ্চে টোয়েনের পাশাপাশি হেলেনও বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পান। ক্রমেই হেলেন একজন জনপ্রিয় বক্তা হয়ে উঠেন। বিভিন্ন দেশ হতে বক্তব্য প্রদানের জন্য হেলেনের আমন্ত্রণ আসতে থাকে। তিনি যখন যে দেশ গিয়েছেন, সে দেশের মানুষই তাকে অকুণ্ঠ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় সিক্ত করেছে। এভাবেই দেশ-বিদেশে বাড়তে থাকে তার অনেক অনুরাগী ভক্তের সংখ্যা। এই  বিস্ময়কর নারীর প্রতিভা দেখে রাষ্ট্রনায়ক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই মুগ্ধ হতেন। তিনি প্রচন্ড রাজনীতি সচেতন ছিলেন। নারীদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে তিনি ছিলেন সোচ্চার। সবাইকে লিঙ্গগত বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানাতেন। সর্বোপরি, নিজের কঠিন জীবন সংগ্রামের গল্প বলে সাধারণ মানুষের মনে আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রাণিত জোগাতেন।

হেলেন দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও সঙ্গীত উপভোগ করার এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল। স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও বেশি সঙ্গীত উপভোগ করতেন। বাদ্যযন্ত্রের ওপর হাত রেখেই বলতে পারতেন কী ধরনের সুর বাজছে। গায়ক-গায়িকার কণ্ঠে হাত দিয়ে অনায়াসে বলতে পারতেন কী সঙ্গীত গাইছে। তার এমনই আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল যে, বহুদিনের পরিচিত মানুষের সঙ্গে করমর্দন করে বলে দিতে পারতেন তার পরিচয়। দৃষ্টিহীন হয়েও তিনি নৌকা চালাতে, নদীতে সাঁতার কাটতে পারতেন, খেলতে পারতেন দাবা ও তাস। এমনকি তিনি সেলাই পর্যন্ত করতে পারতেন। হেলেন সমাজসেবার ব্রত নিয়ে তার মতো আরও যারা বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রয়েছেন, তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করে গেছেন। ১৯১৫ সালে জর্জ কেসলারকে সঙ্গে নিয়ে হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সংস্থাটি এখনও বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। হেলেন এই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও পৃথিবীর বহু দেশের বিভিন্ন সংস্থার সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বক্তৃতা দিয়ে যা অর্থ পাওয়া যেত, তা দিয়ে বিভিন্ন দেশে পঞ্চাশটিরও বেশি অন্ধদের কল্যাণার্থে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন হেলেন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য পেয়ে হাজার হাজার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ শিক্ষালাভ করেছে। নিজেকে সফলভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে। হেলেন রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও লেখালেখি করেছেন। তিনি ছিলেন আমেরিকান সোশ্যালিস্ট পার্টির সমর্থক। ১৯০৯ সালে তিনি এই পার্টিতে যোগ দেন। তিনি আয়ের সুষম বণ্টন দেখতে চাইতেন। ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অসমতার শেষ দেখাই ছিল তার ইচ্ছা। তার বই ‘আউট অব দ্য ডার্ক’-এ এই ইচ্ছার কথা লিখে গেছেন তিনি। প্রতিটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি ইউজিন ভি ডেবসের সমর্থন পেয়েছিলেন। ১৯১২ সালে তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ডে যোগ দেন। তিনি ছিলেন একজন প্যাসিফিস্ট এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার জড়িত থাকার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তবে ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের অনুরোধে হেলেন বিভিন্ন হাসপাতালে যুদ্ধাহত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিক ও সৈনিকদের দেখতে যেতেন এবং শান্তি ও আশার বাণী শোনাতেন।

হেলেন কেলারের সাথে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুসম্পর্ক ছিল। রবীন্দ্রনাথ হেলেনকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। নোবেল প্রাপ্তির পর আমেরিকার এক সম্মেলনে বক্তৃতা দেয়ার আমন্ত্রণ পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। হেলান কেলারের সাথে সেখানেই তার পরিচয়। হেলেন রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে শান্তিনিকেতনে যাওয়ার আমন্ত্রণ পান। তবে রবীন্ত্রনাথ ঠাকুরের জীবিত থাকা অবস্থায় হেলেন শান্তিনিকেতনে আসতে পারেননি। ১৯৫৫ সালে ভারতে আসেন হেলেন। সেই সময়েই দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় হেলেনকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। ১৯৫০ সালে হেলেনের পঞ্চাশ বছরের কর্মময় জীবনকে সম্মান জানাতে প্যারিসে এক বিরাট সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। তখন তার বয়স সত্তর বছর। ১৯৫৯ সালে হেলেন জাতিসংঘ কর্তৃক বিশেষ সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই হেলেন কেলার চলে যান পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান। তবে তিনি পৃথিবীর মানুষের কাছে আজও বিস্ময়কর প্রতিভা। হেলেন কেলার এমনই এক নাম যা অন্ধ, বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধী মানুষের কাছে এক আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। যুগে যুগে এই মহীয়সী নারীর রেখে যাওয়া দৃষ্টান্তই হোক সকলের পথচলার মন্ত্র। প্রচ- ইচ্ছেশক্তি মানুষকে যে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, তার এক জ্বলন্ত উদারহণ হেলেন কেলার। তিনি কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ভরে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান
কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
সম্পাদক, ত্রৈমাসিক আমাদের গল্পকথা।
চৌধুরীপাড়া, মালিবাগ, ঢাকা।