ইপেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ১০৫

ইপেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ১০৫
তারুণ্যের শিল্প সরোবর ।। ধানশালিক ।। সংখ্যা ১০৫
বৃহস্পতিবার, ০৩ জানুয়ারী, ২০১৯






















DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

শিশুটি কি মুক্তিযোদ্ধা ছিল ?

শিশুটি কি মুক্তিযোদ্ধা ছিল ?


শিশুটি কি মুক্তিযোদ্ধা ছিল ?
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ।
রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। উত্তাল জনসমুদ্র।

সেখান থেকে কালজয়ী এক উচ্চারণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ।’

এরপর ২৫ মার্চ হানাদাররা চালালো অপারেশন সার্চ লাইটের নামে গণহত্যা। রক্তাত্ত হলো বাংলার আকাশ, মাটি আর পানি । চোখ দিয়ে শুধু দেখা যায় লাশ আর লাশ। শহীদদের পবিত্র লাশ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলো যে মানুষেরা.. সেই মুখগুলি, তাদের কল্পনা আর বাস্তবতা থমকে দাঁড়ালো।
কিন্তু থমকে দাঁড়ালোনা সময় । বাংলার দামাল ছেলেরা।
মুক্তিযুদ্ধ চলছে ।
একদল লড়ছে সম্মুখ যুদ্ধে । আরেক দল উদ্বাস্তের বোঝা মাথায় নিয়ে লড়ছে জীবনযুদ্ধে ।
চৌধুরী পরিবার । পরিবারে মা, বাবা । চাচা, দাদি। আরেকটা শিশু। নিষ্পাপ চাঁদের মতো শিশু । খুব আদর করে তার নাম রেখেছে স্বাধীন । পরাধীন দেশে জন্ম কিন্তু মা বাবা স্বাধীনের মধ্যে দেখেছে স্বাধীনতার অপূর্ণ স্বপ্ন, বিশ্বাস আর বাস্তবতা । খুব বেশিদিন হয়নি মাতৃগর্ভ থেকে বের হবার । হামাগুড়ি দেওয়া শেষ করে এক পা দু’পা করে চলা শুরু করেছে । মায়ের মায়াবী চোখ পর্যবেক্ষণ করে সন্তানকে । পড়িস না বাবা, একটু দেখে চল সোনা । যাদু আমার । আমার বাপ্ ।
খান সেনারা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে । পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারছে । কি শিশু, কি নারী, কি বৃদ্ধ কোনো মাফ নেই । এর সাথে লোভ, লালসা আর অত্যাচার । পাকিস্তানী জান্তার কালো হাত নারীর স্বপ্নকে অভিশপ্ত করেছে প্রতিমুহূর্তে । বাবার স্বপ্ন । মায়ের স্বপ্ন । বোনের স্বপ্ন। ভাইয়ের স্বপ্ন। ভেঙে চুরমার হয়েছে নিমিষেই ।
স্বাধীন জন্মের পর থেকেই খুব কাঁদতো । কেন কাঁদতো হয়তো কেউ জানতোনা । কিন্তু সময়ের ঘড়ির কাটা জানতো। পরাধীনতার আর্তনাদ শিশু স্বাধীনকেও আষ্টে পিষ্টে চেপে ধরেছিলো । মুক্ত জানালা । মুক্ত বাতাস । মুক্ত জীবন । সবকিছু হাতড়ে বেরিয়েছে হয়তো অবুঝ স্বাধীন অবচেতন মনে ।
স্বাধীন কাঁদে আর কাঁদে । কি এক প্রচন্ড ক্ষুধার আর্তনাত তাকে তাড়িত করে বেড়ায় । স্বাধীনের স্বাধীনতা পাবার ক্ষুধা।
স্বাধীনদের গ্রামে হায়েনাদের দল খুব তাড়াতাড়ি আসবে বলে খবর ছড়িয়ে গেলো । কেউ কেউ বললো ওরা গ্রামে ঢুকে পড়েছে। চারিদিকে নিরস্ত্র মানুষের আতংক আর হাহাকার ।
একদল লোক গ্রামের মেঠো পথ ধরে রওয়ানা হয়েছে ভারতের দিকে । সবাই বলছে ওরা রিফ্যুজি । কিছুই নিতে পারেনি তারা । কেউ উদোম গায়ে, কেউ ঘটি বাটি হাতে, কেউ বুড়ো মা বাবাকে কাঁধে তুলে, কেউ সন্তানকে ঘাড়ে উঠিয়ে ছুঁটে চলেছে পাশের দেশে । প্রতিবেশীদের দেশ । কিন্তু পৌঁছাতে পারবে কিনা কেউ জানেনা । এখানে ওখানে কাপুরুষ পাকি জান্তারা লুকিয়ে আছে । সাথে জুটেছে এদেশের কিছু বেজন্মা । আগাছা কিংবা পরজীবী । সবার দৃষ্টি বাঙালিদের উপর ।
চৌধুরী বাড়ির আশেপাশের লোকজন স্বাধীনের কান্নায় ভীত হয়ে পড়লো । এতো চিৎকার দিয়ে একটা শিশু কাঁদতে পারে সেটা না শুনলে বোঝা কঠিন ।
ভয়টা এজন্য বাচ্চাটার কান্না শুনে খান সেনারাদের হাতে মরতে হয় কিনা । প্রতিবেশীদের কেউ কেউ স্বাধীনের মাকে বললো বাচ্চাটার শ্বাস রোধ করে মেরে ফেলুন । ওর জন্য কি আমরা মরবো । আপনার বয়স তো বেশি না বেঁচে থাকলে আরো বাচ্চা কাচ্চা হবে । একজনকে মেরে ফেলে যদি আমরা সবাই বাঁচতে পারি সেটা তো পাপ বলা যায়না ।
একেকজনের একেক মত । এক জীবন থেকে আরেক জীবন যেন মতামতের ভিতর দিয়েই চলে যায় ।
কিন্তু মা । মা তো মা’ই । মায়ের অন্তর শুধু মা জানে আর কেউ জানেনা । একটা শুন্যতা । সেখান থেকে একবিন্দু রক্ত । সেই রক্ত থেকে মায়ের ভিতরে তিলে তিলে বড় হতে থাকে আরেক জীবন । মা যাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে । এরপর নাড়ির বন্ধন । এ যেন গড়বার ভাঙবার নয় ।
কথাটা শুনে মা কাঁদে আর কাঁদে । মায়ের কান্না যে কতটা আপন, কতটা একান্ত তা হয়তো কেউ বুঝবেনা । সন্তানের দিকে তাকান মা । আধু আধু বুলি, মা, মা, মা.....। মায়ের মন কম্পিত হয় । যেমন কম্পিত হয় পৃথিবী, মাটি যখন নড়েচড়ে উঠে ।
বাচ্চাটাকে মেরে ফেলুন, ফেলুন বলছি , অসহায় কিংবা জীবনের স্বার্থপরতায় যখন মানুষ চেঁচিয়ে উঠে । মা সন্তানের মুখটা আলতোভাবে চেপে ধরে। নিজের কাপড়ের ভিতরে ঢেকে রাখে সন্তানককে । যেন কেউ আর ঐ খারাপ কথাটা বলতে না পারে ।
মা কখনো পারেনা তার সন্তানকে মেরে ফেলতে । মায়ের ভিতরের জীবিত সত্তার নাম সন্তান । মা সবাইকে মুখের উপর বলে দেয়, আমার জীবন থাকতে আমার যাদুর কোনো ক্ষতি হতে দিবোনা । মায়ের জেদের কাছে সবাই হার মানে ।

স্বাধীনের বাবা কিছুদিন মুক্তিযুদ্ধে যাবে বলে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল । শরীরটা রোগা রোগা । শরীরে পরিশ্রমের দাগও পড়েছে । মুখটা একটু দেবে গেছে । চোখের নিচে হালকা কালি পড়েছে ।
মা আর বউয়ের পীড়াপীড়িতে আর যুদ্ধে যাওয়া হয়নি কিন্তু তা বলে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা থেমে যায়নি ।
চৌধুরী পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় তারা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিবে । হায় বিধাতা নিজের দেশ, মাটি ছেড়ে আজ যেতে হবে বন্ধুদের দেশে।
শরণার্থীর অনেক বড় দলের সাথে তারা যোগ দেয় । এরপর খালি পায়ে মাইলের পর মাইল হেটে চলা । ক্লান্ত শরীর । অভুক্ত পেট । মন ভেঙে যায় ক্ষনে ক্ষনে কিন্তু স্বপ্ন আর আশা ভাঙ্গেনা ।
স্বাধীন অভুক্ত । মায়াবী নিস্পাপ শুকনো চোখ দেখে কান্না বেরিয়ে আসতে চায় । কিন্তু ক্ষুধা পিপাসা কান্না বের হতে দেয়না ।
খবর আসতে থাকে বিভিন্ন জায়াগায় হানাদার আর তাদের এ দেশের সঙ্গীরা শরণার্থী দলের উপর আক্রমণ চালিয়ে গণহত্যা করছে ।
আতংকিত সবাই । তবুও বিশ্বাস টেনে নেয় শরণার্থীর দলকে । পায়ের চামড়া ছিড়ে বেরিয়ে আসতে চায় । প্রখর রোদ গ্রাস করে শরীরের চামড়াকে আগুনের দাবদাহে । তারপরও চলা রিফ্যুজিদের । পথ যেন ফুরায় না কিন্তু সময় ফুরিয়ে যায় ।
একটা জায়গায় এসে থমকে যায় স্বাধীনের পরিবারসহ শরণার্থীদের দল । সামনে দেখতে পায় দানবদের । সেই দানবদের সাথে বিশ্বাসঘাতকদের ।
থমকে যায় সময় । থমকে যায় জীবন । থমকে যায় আশা, বিশ্বাস আর স্বপ্ন ।
স্বাধীনের বাবাকে টেনে হিচড়ে দাঁড় করায় আরো অনেক যুবকদের সাথে । কাপড় দিয়ে চোখ বাধে সবার । আতংক আর অজানা আশংকায় স্বাধীনের মা নির্বাক হয়ে যায় ।
এবার হানাদাররা লাইন করে সারি সারি দাঁড়ানো চোখ বাধা যুবকদের গুলি করতে থাকে ।
লুটিয়ে পরে কিছুক্ষন আগে জীবন্ত স্বপ্ন দেখা মানুষেরা । রক্ত আর রক্ত । আর্তনাদ আর চিৎকার। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লাল শাড়ি পড়া নববধূ বউ থেকে বিধবা হয় । তখনও হাতের মেহেদির রং আর পায়ের আলতা দৃশ্যমান ছিল । কিন্তু সব কিছু বিবর্ণ হলো মুহুতেই । সম্পর্কের পর সম্পর্কে ছেদ বিচ্ছেদ । সন্তান হয় বাবা হারা । মা বাবা হয় সন্তান হারা ।
এবার স্বাধীনের বাবার পালা । স্বাধীন কাঁদছে । স্বাধীনের দাদি অজ্ঞান হয়ে গেছে ।
বন্ধুকের গুলি তাক করা হয়েছে । ট্রিগারে চাপ দেওয়া হলো । বিকট শব্দ ।
স্বাধীনের বাবা তার কি হলো । সে কি শহীদ হলো আজ । তার রক্ত কি রঞ্জিত করলো মেঠোপথ । চোখ বন্ধ সবার ।
চোখ খুলছে সবাই । স্বাধীনের বাবা বেঁচে আছে ।
যখন খান সেনারা ট্রিগারে চাপ দিয়েছে । তখন কে যেন একজন বলেছে । মেরো না, মেরো না, ওর নিস্পাপ সন্তানটার দিকে একবার তাকাও । মাসুম বাচ্চা । তখন যে ট্রিগারে চাপ দিয়েছিলো, তার চোখ স্বাধীনের দিকে গেলো, হাতটা কেন যেন কেঁপে উঠলো । লক্ষচ্যুত হলো শয়তানের বুলেট ।
এর পর রেগে শয়তানটা উম্মাদ হয়ে গেলো । এরপর বেয়োনেড দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে লাথি দিয়ে ফেলে দিলো স্বাধীনের বাবাকে ।
এরপর অন্যদের একে একে মেরে ফেললো । ঠিক এসময় কারা যেন বলে উঠলো মুক্তি মুক্তি পালাও পালাও ।
মুক্তিযোদ্ধারা এসে গেছে । বাংলার বীর সন্তানেরা । বীর বাঙালিরা ।
খান সেনারা ভয়ে পালিয়ে গেলো । রেখে গেলো রক্তে ভেজা শহীদের ।
কাছে গেলো মুক্তিযোদ্ধারা । স্বাধীনের বাবার হাতটা ধরে দেখলো এখনও সেখানে জীবন আছে ।
স্বাধীনের বাবা বেঁচে গেলো । এখন ভারতের শরণার্থী শিবিরে ।
স্বাধীনের মা ভাবছে । আমার সন্তানকে যদি সেদিন গলাটিপে মারতাম তবে আজ আমি বিধবা হতাম । স্বাধীনের দাদি হারাতো সন্তান । ভাই হারাতো ভাইকে । স্বাধীন হারাতো বাবাকে ।
কি জানি কি হয়েছিল । কেন স্বাধীনকে দেখার পর বুলেট লক্ষচ্যুত হলো । কেন শয়তানের হাত কেঁপে উঠলো । যে স্বাধীনকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো সেই স্বাধীন বাঁচালো আরেকটি প্রাণ । বেঁচে গেলো একটি পরিবার ।
তবে কি স্বাধীন মুক্তিযোদ্ধা ছিল ?
জানেনা কেউ । অনেক রাজাকার আজ মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে । মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার হয়েছে ।

এখন সময় ভাবে সেদিনের শিশুটি কি মুক্তিযোদ্ধা ছিল ।

গড়িয়ে যায় সময় গাড়ির চাকার মতো ।
স্বাধীনের মায়ের আর সন্তান হয়নি । স্বাধীন এখন তার সব । সময় গড়িয়েছে আর গড়িয়েছে। মা ভাবছে স্বাধীনকে যদি সেদিন মেরে ফেলা হতো তবে তার পৃথিবীতে আর কেউ থাকতোনা । একাকী নির্বাসিত হতো তার জীবন দুর্বিষহ যন্ত্রনায় ।
সময় বলছে নিঃশব্দে ‘স্বাধীন’ তোমরা শিশু ছিলে । তোমার নাম সার্থক হয়েছে স্বাধীন, তুমি তো আজ স্বাধীন। তুমি স্বাধীন একটি দেশ পেয়েছো, মানচিত্র পেয়েছো। তোমার মতো আরো অনেক স্বাধীন আজ বড় হয়েছে। সন্তানের পিতা হয়েছে । প্রজন্মের পর প্রজন্ম তৈরী হয়েছে। এবার তাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাও । বঙ্গবন্ধুর গল্প । তবেই না দেশপ্রেম আর গর্বিত বাংলাদেশ।

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

ধারাবাহিক উপন্যাস : উর্মিলা নগরে থাকে : পর্ব ১০

ধারাবাহিক উপন্যাস : উর্মিলা নগরে থাকে : পর্ব ১০

(গত সংখ্যার পর)
‘আমাকেও তো ও কিছু বলেনি।’ রুবী বলে।
‘এই মেয়ে, না বললে কিন্তু বিরিয়ানি পেটে থেকে টেনে বের করব।’ নাজনীন আপা বলে।
‘দিদি, সত্যি আমি তাকে কিছুই বলিনি। বাড়ি থেকে নগরের জন্য ট্রেন ধরব বলে বাবাকে প্রণাম করতে গেছি তখন তাকে কথা দিয়েছি নিজকে রক্ষা করার যোগ্যতা যেন ঈশ্বর আমায় দেন।’
‘ঈশ্বর বেছে বেছে তোমাকে দিয়েছেন। আমাদের দেবেন না।’ মিতালী হতাশ কণ্ঠে বলে।
‘নিশ্চয় দেবেন।’
‘তুমি সঠিক কথা বললে না উর্মিলা।’
মিতালী দিদি উষ্মা প্রকাশ করে।
‘দিদি আমি গ্রামের মেয়ে। শিক্ষা কম। তবে এটুকু কথা দিতে পারি, জাকির সাহেব কেন, কোনও নষ্ট মানুষ এ অফিসের কারো চুল স্পর্শ করতে পারবে না। তাদের গোখ্রা দিয়ে কামড়ে দেব।’ বলতেই উর্মিলা কেঁদে ফেলে। মিতালী দিদি, নাজনীন আপা চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে উর্মিলাকে জড়িয়ে ধরে।
‘ব্রাভো।’
নাজনীন আপা  বলে, ‘পূর্ব জন্মে আমরা এক মায়ের পেটের বোন ছিলাম।’
উর্মিলা অল্পক্ষণ ঢুকরে ডুকরে কাঁদল। মাথা হাতিয়ে বুকে টেনে নিল মিতালী দিদি।
‘যা এখন টেবিলে যা। ভালো না লাগলে বাসায় চলে যেতে পারিস।’
চোখ মুছতে মুছতে মিতালী দিদির রুম থেকে বেরিয়ে আসে উর্মিলা।


১১.

দীপু ভাই এয়ারপোর্ট থেকে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। মা-বোনের সঙ্গে দেখা করার জন্য। ফিরবে তিন দিন পর। বেবী আপা এক ঘণ্টার জন্য অফিসে এলেও উর্মিলার সঙ্গে কথা হয়নি। শিমু দিদি যেন ঝড়, ভীষণ বেগে কথার ফুল ফোটাচ্ছে। সবই ফিলিপাইনের  সম্মেলনকে কেন্দ্র করে। আর রাস্তাঘাট মানুষ জীবনযাপনের যে বর্ণনা দিচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ফিলিপাইনের অর্থনীতি নিয়ে পিএইচডি করবে। দীপু ভাইয়ের প্রতি অভিযোগের অন্ত নেই। একেবারে মাকুন্দা পুরুষ। সারাক্ষণ সম্মেলনকেন্দ্রিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। একটি বাঁকা চোখ দিয়ে নতুন জায়গার কোনো কিছুই দেখার সময় হয়নি। আর বেবী আপাই কেমন! সারাক্ষণ বেচারাকে কাজ দিয়ে রেখেছে। প্রতিনিয়ত ঘ্যানর ঘ্যানর করেও একদিন শপিংয়ে নিতে পারিনি। বলতে বলতে একটি করে রঙ  ম্যাচিং করা লিপিস্টিক ধরিয়ে দেয় অফিসের মেয়ে সদস্যদের। ছেলেদের জন্য একটি করে টাই আর জাকির সাহেবের জন্য পারকার কলম।
‘জানিস, জাকির স্যারকে বললাম আত্মজীবনী লিখতে।  নইলে ভদ্রলোকের এমন অনুকরণীয় চরিত্র সম্পর্কে মানুষ জানবে কী করে?’
‘জাকির স্যারের এখন কোনো কিছু জানার দরকার নেই। দেবী মনসা কখন সুতানলি সাপ পাঠিয়ে ছোবলে নীলাক্ত করে, তা চিন্তা করতে করতে সময় চলে যাবেÑবলে মিতালী সিকদার হাসতে থাকে। শিমু দিদি কিছুই বুঝতে পারে না।
‘উর্মিলা সংবাদ আছে।’ শিমু দিদি বলে।
তাল দেয় মিতালী সিকদার ‘কোনসে সে খবর?’
‘প্লেনে বেবী আপা জিজ্ঞেস করে উর্মিলা কেমন।’
আমি বলি, ‘ওকে থাপ্পড় মারা উচিত।’
বেবী আপা অবাক চোখে তাকিয়ে বলে, ‘কেন?’
‘ওর বেশি মমতা।’
বেবী আপা বলে, ‘মমতা না থাকলে ও মানুষকে নিয়ে ভাববে কখন?’
আমি মনে মনে বললাম, আর হইছে!
‘ঠিক বলিনি উর্মিলা।’ শিমু দিদি উর্মিলার মুখের দিকে স্থির তাকায়।
‘জি ঠিক বলছেন।’ উর্মিলা মাথা  নাড়ে।
‘জি না ঠিক বলিনি। মাতৃকুল বেবী অনেক বিষয়ে তোমাকে যোগ্য মনে করে। আফসোস।’
‘কেন। দিদি।’
‘এই মেয়ে তুমি বুঝবে না।’
শিমু আপা ইত্যাকার বিষয় নিয়ে কলকল করতে থাকে। অফিসের সবাই জানে শিমু বেবী আপার বিশ্বস্ত হাত।
আজ উর্মিলা প্রথম কলেজে যাবে। আজ থেকে ওর ক্লাস শুরু। সকালে ঘুম থেকে উঠতেই বুক মোচড় দেয়। আজ দীপু ভাই নেই এই শহরে। যে ওর লোকাল গার্জিয়ান। হাহাকার করে ওঠে। এরকম কী ভেবেছে ও।
বেবী আপাকে বলতে হবে। নিজের   ভেতরে অন্যরকম একটা হাওয়া বইতে থাকে। কী মাস! এপ্রিলের ঊনত্রিশ। মধ্য বৈশাখ। গাছে গাছে পাতা ঝরার গান। রবি ঠাকুর বলেছেন, ‘ঝরা পাতা গো আমি তোমাদের দলে।’
হালকা আকাশি রঙের টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি পরে উর্মিলা অফিসে যায়। চুড়ো করে চুল বাঁধা। কপালে লাল খয়েরি টিপ।
ঢুকতেই রুবী বলে, ‘আগুনমুখী?’
উর্মিলা না শোনার ভান করে। উর্মিলা ও রকম।
মিতালী দিদি বলে, ‘হ্যালো নাইস গার্ল? সুইট।’
নাজনীন আপা বলে, ‘কার যে কপাল পুড়বে, কে জানে?’
শিমু দিদি বলে, ‘যাও জাকির সাহেবকে বলে আসো। আমি উর্মিলা। শুভপুর থেকে এসেছি। দেখুন তো আপনার পছন্দ হয়েছে কিনা? শালা বদ।’
‘দিদি আমি কাঁদব কিন্তু।’
‘তুই কাঁদ!
অফিস সুনসান নীরবতা। বেবী আপা এখনও আসেনি।
হঠাৎ উর্মিলার মনে হয় আজ দীপু ভাই কী বলতো!
‘দেবী হেলেন, হঠাৎ করে বঙ্গ ললনা হয়ে গেছেন?  গ্রিক নওজোয়ানদের কী হবে?’
অজান্তেই হাসি পায় ওর।
দীপু ভাইয়ের নায়ক-নায়িকা পুরাণ থেকে উঠে আসে। ওরা সবাই অপ্সরা। প্রিয়দর্শিনী।
সাড়ে বারোটার দিকে বেবী আপা আসে। তার একটু পর পিয়ন দিয়ে ডেকে পাঠায় উর্মিলাকে।
বুকের ভেতর আগের মতো দুরু-দুরু ভাব নেই। যেন বিক্ষিপ্ত বাতাসের পর শান্ত-সমাহিত প্রকৃতি।
উৎফুল্ল চিত্তে বেবী আপার রুমে ঢুকতেই বেবী আপা খুব অবাক নয়নে তাকিয়ে বলে, ‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে উর্মিলা।
উর্মিলা লজ্জা পায়। মাথা নিচু করে বলে, ‘আপা ভালো ছিলেন তো?’
‘ভালো! তবে বয়স বাড়ছে টুকটাক ঝামেলা তো লেগেই আছে।’
‘আপা, আজ আমার কলেজের প্রথম ক্লাস। আপনাকে প্রণাম করতে এসেছি।’
‘প্রিন্সিপাল ডলি আমাকে টেলিফোন করেছিল! কলেজে শুধু পড়াশোনা করবে? কোনো পলিটিক্স না। তোমার পড়াশোনাটাই প্রয়োজন!’
‘জি আপা।’
‘একদিন তো আমাকে মুক্তি নিতে হবে?’
‘কেন?’
‘ও তুমি বুঝবে না। বাবাকে চিঠি লিখে দাও।’
উর্মিলা বেবী আপার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘যোগ্য হয়ে ওঠো। জগত এমনি সুন্দর হয়ে উঠবে।’
উর্মিলা আবেগে কেঁদে ফেলে। বুকে টেনে নিয়ে বেবী আপা বলে, ‘ফ্রাইডেতে তুমি আমার সঙ্গে থাকবে। সময় মতো আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেব। আর এটা নাও। তোমার জন্য। এটা রুবীর।’ দুটো প্যাকেট হাতে নিয়ে বেবী আপার রুম থেকে বের হয়ে দীপু ভাইয়ের রুম ক্রস করতেই ডাক এল, ‘দেবী এদিকে একটু আসতে হয় যে! কত দিন দেখিনি! চোখ খাক হয়ে আছে। ওমা, এ  যে দেবী নীল মেনকা!’
প্যাকেট দুটো টেবিলে রেখে দীপু ভাইয়ের মুখোমুখি বসে উর্মিলা।
‘আহা। আপাই দিয়েছে! আমি বেঁচে গেছি। কিছুই কিনতেও পারিনি। শুধু মা-র জন্য শাড়ি ও আসমার জন্য থ্রিপিস। সময় কোথায়?’
‘আপনার না আগামীকাল আসার কথা।’
‘ছিল। ভাবলাম দেবীর আজ প্রথম ক্লাস।’
‘এত দয়া দেখাবেন না।’
‘দয়া দেখাব কী! ভয়ে আছি।’
‘কেন?’
‘কখন আবার গোখরা দিয়ে কামড়ে দেন।’
উর্মিলা অবাক হয়। এ কথা দীপু ভাইয়ের কাছে পৌঁছে গেছে।
‘ভোটাভুটি হলে তো নির্ঘাত পাস। একমাত্র জাকির স্যারের ভোট পাবেন না।’
‘আপনার ভোট পাব?’
‘আমি ভুজঙ্গদের ভোট দেই না। মমতাময়ীদের দেই।’
‘ও।’ উর্মিলা আদ্রকণ্ঠে বলে ওঠে।
‘আপনি যে সুন্দরীÑতা শাড়ি না পরলে বুঝতে পারতাম না। তা সুচিত্রা দেবী, বাঙালি উত্তম কুমারকে তো মনে রাখেন নাই।’
‘আমি ঢোল নিয়ে বলব, মনে রেখেছি মনে রেখেছি। তাছাড়া মনে রাখার দরকার কী?’
‘ওভাবে বলবেন না। বুদ্ধের মতো গৃহত্যাগী হব।’ দীপু ভাই মৃদু হাসে।
‘সে সুযোগ নেই। মা-আসমা আপনাকে ছাড়বে কেন?’
দীপু ভাই উদাস হয়ে যায়! পিনপতন নীরবতা। উর্মিলা বুঝতে পারে দীপু ভাইয়ের ক্ষতস্থান আঁচড়ে দিয়েছে কেউ।
‘আমি বুঝতে পারিনি। ক্ষমা করবেন।’
উর্মিলা হাত জোড় করে।
‘না না আপনি ঠিক বলেছেন। ওরা আমাকে ছাড়বে কেন?’ দীপু ভাইয়ের কণ্ঠ আর্তনাদের মতো শোনায়। উর্মিলার নিজেকে তিরস্কৃত করতে ইচ্ছে করে। নিজেকে পাপিষ্ঠ মনে হয়। একটি প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে দীপু ভাই বলে, ‘কিছুই কিনিনি। সময় ছিল না। মা-র আসমার জন্য ঢাকায় এসে কিনেছি। আপনার এবং রুবীর জন্যও তাই।’
‘দরকার ছিল না।’
‘ছিল।’
‘আপনি কলেজ পর্যন্ত আমার সঙ্গে যাবেন?’
‘না।’
‘কেন?’
‘বেবী আপা বারণ করেছে।’
‘ও।’
‘অন্য কিছু ভাববেন না। বলেছে, উর্মিলাকে একা একা হাঁটতে দাও।’
‘ও।’ বলেই উঠে পড়ে উর্মিলা।
গিফটের প্যাকেট বগলদাবা করে রুম থেকে বের হয়।
মিতালী দিদি উচ্চস্বরে বলে, ‘আমি কেন উর্মিলা হইলাম না।’

তিনটের মধ্যে বাসায় ফেরে। পাঁচটার মধ্যে কলেজে ঢুকতে হবে। রুবীর গিফট প্যাকেট ওর বিছানায় রেখে নিজের প্যাকেট খুলে ভয়ানক অবাক হয় উর্মিলা। বেবী আপা দিয়েছেন, পাইলট ভি কলম আর একটি লেদার মোড়ানো ডায়েরি। সাথে ছোট একটি চিরকুট। তাতে লেখা রয়েছে, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো তারিখ দিয়ে  লিখে রাখবে।’
দীপু ভাই দিয়েছেন, কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’, কবি আবুল হাসানের ‘রাজা যায় রাজা আসে’, কাব্যগ্রন্থ। কবিতার সাত-পাঁচ না বুঝে আবুল হাসানের কবিতা পড়তে থাকে, সে এক পাথর আছে  কেবলি লাবণ্য ধরে, উজ্জ্বলতা ধরে আর্দ্র, মায়াবী করুণ... (চলবে)

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

শব্দমিছিল : স্নিগ্ধা বাউল

শব্দমিছিল  : স্নিগ্ধা বাউল


শব্দমিছিল
স্নিগ্ধা বাউল

পাল

যতগুলো কবিতায় মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে
শুষ্কতার সঙ্গে এসেছে রুগ্ন পাতা খসার শব্দ
তাদের ঘুমের গান
আঙ্গুলের শীতলতম স্থবিরতায় কফিনের পেরেক
আর কিছু চিমনির শরীরের ধোঁয়ায় চলে যাবার গল্প;
ধবধবে কাফনের শুভ্রতম কবিতা 
অবাক সুন্দর ছিল ওখানে মৃত্যু!

জীবন- খুরাকি এখানে আমি, 
প্রতিদিন জানালায় আমি ভোর দেখি
 অদ্ভুত ভালোলাগায় আবিষ্কার করি নিজেকে;
পর্দা দুলে উঠে দূরের জাহাজের নিশানায়
সেখানে রোদ পোহায়  আমাদের নগ্নতম শরীর
জীবনের গান আমাদের কণ্ঠে মায়ার মতো বাজে
জন্মের চিৎকারে কেঁপে উঠে আগত বসন্তের বীণা 
জীবন বলে এমন  জীবনের মায়া রেখে যাই 
আরও  জীবনের প্রত্যাশায়।


বসত

আমাদের দূরত্ব  ক্রমশ বাড়ছে
চুইয়ে  পড়ছে আশ্বিনের কুয়াশা যেন
অব্যক্ততার ঘর দোর বারান্দায়-
পাতা জমার উঠুনে বিলীন হয়
পায়ের পাতাগুলো বহুদিন;

আমরা ক্রমশ সরে পড়ছি
কথা জমছে যত, অকথাই
ফুটছে এখানে;

আমরা সরে এসেছি সেখানে
প্রতিদিন সরে যেতাম যেখানে।


আমাদের বাড়ি

এইখানে এলেই সমস্তটা কেটে পড়ে
ঠিক কাঠবাদামের গাছগুলো
যতটা লম্বা হয়ে ছুঁয়েছে জংধরা  গ্রিল
চারতলার ছোট ছোট কামরায়;
শরীরের গন্ধে ভেসে যায় আপনতার মোহ
আর  অপরজিতার লতাগুলো প্রতিদিন
বেড়ে উঠতো মায়ের ওমের মতো
দীর্ঘ বাহু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নীল পদ্মের
সে, যেন কৌরবের ছায়াদল;
অবাধ্যতার ইতিহাসে সরে যায় তারা
গাছ আর ছায়া সমান্তরালে
তরতর করে অমিলগুলো
চারতলার সিঁড়ি অবশ পায়ে নেমে আসে
গাছগুলোর কাছে পুরাতনের মায়ায়
আবরণে ছুঁয়ে যায় আমাদের বসত ।

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

শব্দমিছিল : শঙ্খচূড় ইমাম

শব্দমিছিল : শঙ্খচূড় ইমাম



শব্দমিছিল
শঙ্খচূড় ইমাম

ঈর্ষাপুর

ফলত ক্ষেতের মরটশুঁটিতে যে ঢেউ লেগে থাকে তা ভরদুপুরের বিরাম চিহ্ন। একটা ঘুঘুর কথাই ধরো- শোকাচ্ছন্ন দিনে তার কোনো মৃত্যু নেই। কোনো হাসপাতাল নেই। একরোখা দূরত্বে যেতে যেতে ফ্লাশ নেয় নিজের শহরে। তবু আয়নার মতো বস্তু তার কাছে সর্বদাই নস্যি। কেননা সে জানে, যে কৃষক মাটি খুঁড়ে এনেছে এই মটরশুঁটি সে কেবলই ভেঙে যায় রুই-কাতলার দেশে।

আমাদের ঘৃণা আছে, ক্রোধও। এসব লাল ফিতার ম্যাট্রিক্স পেরিয়ে পাখিযান উড়ে যায়, নুয়ে পড়ে, কোথাও কোনো স্তনের বোঁটা খোঁজে। দূরন্ত জ্বর এলে ফের একা হতেই ভালোবাসে। হয়তো মানুষের পথ থেকে সরে গিয়ে উড়ে যায় ঈর্ষাপুরে।


স্নিগ্ধ ছুরি

প্রার্থনা করো- দুরূহ ঈর্ষার
যেখানে তোমার সমস্ত স্নিগ্ধ
আমাকে ছুরিকাঘাত করতে করতে
বেরিয়ে পড়তে পারে এমন
ব্রহ্মা-ের বাইরে...


দীর্ঘ এক কালো মাছ

নির্দ্বিধায় প্রচ্ছন্ন প্রচ্ছদে-
রঙিন হয়ে আসে
প্রজাপতিপথ

এই মনোহর লোভ ও লালসার
আয়ু ভেঙে
কে সাঁতরে উঠেছে
অই অব্দি

যদি মরে যায়- তুমুল রাতের
হেলেঞ্চা-হিজল
বুঝে নেবো-
সংকটের উপাখ্যানে
আমিও ছিলাম দীর্ঘ এক
কালো মাছ!


DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

শব্দমিছিল : বেবী সাউ

শব্দমিছিল :  বেবী সাউ




শব্দমিছিল
বেবী সাউ 

শিল্পী

ধারালো ছুরির কাছে
আমার সমস্ত উপাসনা তুলে ধরি

মৃদু নুপূরে বাজে শহরের চাঁদ
মন্দিরের নকশা

নতজানু চোখে দেবী হয়ে উঠি
গিটারের তারে ক্ষতধরা হাত

কল্পিত ভুলের মাশুলে জেগে ওঠে প্রেমবাক্য
তোমার

দলমার ছায়াচিত্রে নিপুণ কৌশল
সীমাবদ্ধ উৎসবে নুন-দাগ
মানগো ব্রীজে ঝুলতে থাকে শিকারীর পোষা আত্মহত্যা

হাততালি দেয় ক্ষুধিত পৌরুষ

অলকানন্দা ভরে আছে ঘাম রক্তজলে
নিদারুণ

হাজার যোনীচিহ্নে তুমি তখন
ঈশ্বর হয়ে ওঠো



মিথ্যা

বৃষ্টি হলেই নৌকা গড়ো তুমি, কাগুজে। হেলতে দুলতে রং-ভরা নৌকো সেসব আমার চিলতে রোদ ভিজিয়ে দেয়। সরসর করে মেঘমল্লার বাজে গ্যালাক্সি ফোনে। মাইথোলজি রাক্ষসীর করুণ চোখ সাঁতার শেখে তখন। তখন হ্যান্ডসেটের চৌকাঠে স্বপ্ন আর মায়া; মায়া আর খড়কুটোর সংসার। ধীরে ধীরে বৃষ্টি কমে। ধীরে ভাঙে নৌকোর মাঝি । সোনাভ্রমে উঠে আসে নিকেলের টিন। সেই দাঁড় ভাঙা পাঠাতনে, গড়ে তোলা পা, পড়ে আচানক। এরপর আমাদের ক্ষীণজীবি সস্তান সমস্ত আত্মহত্যা ভেঙে, কুকুর সঙ্গে নিয়ে সেই যে বেরিয়ে গেল!
সেই দিন থেকে, মিথ্যা মিথ্যি মা-বাবারা, তাদের সন্তানের নাম রেখে গেছে যুধিষ্ঠির।



উৎসব

তুমি চুপ থাকলে
ধীরে ধীরে চৌকাঠে এসে বসি

নীরবতায় নামে টুপটাপ ঘোরের
সংসার
আসবাবে লেগে থাকা নৌকো

অভিযোগের আলোয় মুক্ত সেইসব মানুষেরা

দীর্ঘ অবসরের ছাদে ফুলের গাছ
রোপণ করে

কোকিল ডাকছে পৃথিবীর প্রাচীনতম পেঁপেগাছে

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw


শব্দমিছিল : নকিব মুকশি

শব্দমিছিল : নকিব মুকশি


শব্দমিছিল
নকিব মুকশি

গান ও নৃত্য

ঝরে যদি-
কাপড় নিংড়ানোর কৌশল—স্ব-তিমি, জটাভুল...
তীরের ছায়ায় জ্বর ও ফেনার রশ্মি- হাওয়া গান
জাগে যদি-
সমস্ত মীনও ঢেউয়ের মৃদুস্বর- ঘড়িফুল
তবে সমস্ত ভৈরব জুড়ে তখন যুগপৎ-
বসন্ত-বর্ষার দ্বৈরথ- ফুলপাতা ও কোরকের বান

কুয়োর পাতা ও ঘাসে-
মাছের স্নান শুঁকিয়ে ফেলে সমস্ত গন্ধও প্লাবন
গানও নৃত্যের ক্লাইমেক্সে
ঢলে পড়ে কুয়াও ফল, দিনের সমস্ত মুরোদ

দিনভর রাতেরা ঘুমায়, আর রাতভর দিনেরা জাগে
সমস্ত ঘুমের নিপুণ ভানে


ফ্যাসিবাদ

কুশির- মূলত এক তূণ- শিকারীর রক্ষাকবচ...


রক্তগান্ধার

উড়ছে-  ভেতর-মথে,  উড়ছে- সারসরঙ...
উড়ছে- টায়ার বায়ু- তাপ-শলাকার ভিতর
গাছের ঘড়ির নৃত্য, গারাদের েেশার...

কোনো এক জীবন- ঘুরছে- মর্মতলে
কোনো এক লেদার মেশিন- অবিরাম...

রাষ্ট্রের খোঁয়া- গত দীর্ঘ পীড়ার মক্কেল
পড়ে আছে ধুলির দপ্তরে- আঁকছে মনে
কেউ তো অচল পিতলের মুদ্রা পুরাণ...


এখানে সাধারণ- ক্লাউন-চাপা- নিউজপ্রিন্ট...
খাবি খেতে খেতে দেখে-
রিউমার ছড়ানো সন্ধ্যায় কার যেন আজানে
পাকে- হলুদ পরানের ফল, উজানরেণু...


শাল্মলির শ্বাসে ফুটছে কার রক্তগান্ধার...?
পত্র রথে ফুস ছেকে, কেমন সেজাদরেল?
জিরাফের পিঠে- কোনো একক্লাইন্ট-নির্মুখ...
বৃদ্ধ সন্ধ্যার রাগে ফ্যাসিবাদ-রঙের তূণ
ঘ্রাণ নিধনের উৎসব ডেকেছে...! কে সে?

গরাদ-চিড়িয়া-রাহুর শোরে ঝরে দিনমান
কোথাও অবিরাম- রক্তগান্ধার ও ধস্ত গান...

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

শব্দমিছিল : রবিউল আলম নবী

শব্দমিছিল : রবিউল আলম নবী





শব্দমিছিল
রবিউল আলম নবী

বিশ্বাস

বিশ্বাস করতে করতে মরে যাবো বলেই এ তল্লাটে এসেছিলাম। নদী ভেঙে গেছে, কথা রাখেনি পার। পার বেঁকে গেছে, কথা রাখেনি নদী। তাই বলে কি বিশ্বাসেও বাঁক নেবো আমি? নিইনি।

হয়তো কোথাও একটা পাহাড় আছে। তার ভেতর জমছে আদ্যিকালের দুঃখ। একদিন ফেটে যাবেই। কী মিরাকল ঘটবে ভাবতে পারছো? নিশ্চয়ই একদিন সে জলধারা নদী হয়ে ছুটে আসবে এ তল্লাটে। দেখবে আমার পার বাঁকেনি। আমার নদী ভাঙেনি।

এরপর মরে যাবো খুব নিঃশব্দে। একা। ঈশ্বরের মৃত্যু একাই হয়।

তাই বলে কি আর কেউ এ তল্লাটে আসবে না? আসবে। ফরহাদ আসবে। চ-ীদাস আসবে। শাজাহান আসবে।

পৃথিবীর প্রত্যেকটি নদীর নাম যমুনা।
পৃথিবীর প্রত্যেকটি পাহাড় ফরহাদ কাটবে।
পাহাড়ে বসে নদীতে ছিপ ফেলবে চ-ীদাস।

ফরহাদ একজন ঈশ্বর। সে পাহাড় কাটতে জানে। সে আদ্যিকালের দুঃখকে গলগল বের করবে কেবল নদী হতে। নদীর ধারার সাথে এ তল্লাটে এসে একটা প্রাসাদ বানাবে। তারপর ছিপ ফেলে মাছ ধরবে।

কিছুরই বিনাশ নেই। না বিশ্বাস, না মৃত্যুর। একটা নদী ভেঙে গেলে দশটা নদী এসে লাফিয়ে পড়বে পায়ের কাছে। একটা পার বেঁকে গেলে বিশটা পার গজিয়ে ওঠবে নদীদের শরীরে শরীরে।

বিশ্বাসে মেলে প্রেম, প্রেমিকা অবিশ্বাসী হোক।


অটোবায়োগ্রাফি

কিছুই মুখস্থ থাকে না। গতকাল মনে করি তো শৈশব ভুলে যাই। ভুলতে ভুলতে ভাঙামগজ থেকে তুলে আনি রৌদ্রদগ্ধ একটি দিন। (পিতা ছিপ নিয়ে দৌঁড়–চ্ছেন তল্লা কুড়ের দিকে)। ভুলে আনি ২০০৪ সন (বস্তা হাতে দাঁড়িয়ে আছি ইউনিয়ন পরিষদ)।

কিছুই মুখস্থ থাকে না। ফেরিওয়ালা দিন, বান্নি বান্নি শিশুযুগ। মুখস্থ থাকে না প্রাগৈতিহাসিক সুখ।

সব ছাপিয়ে জেগে ওঠে পিতার বেতন নেই অথচ মাতার অসুখ।


বাংলাদেশ

পাহাড়ে দশ টুকরো মানুষ মেলে
সমতলে দুতিন টুকরো কম-বেশি হতে পারে
সমুদ্রে ভাসে ব্যবচ্ছেদ লাশ।

এটা গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রেরও হতে পারে

আসুন, জানাজায় দাঁড়াই
গণকবরেরও অধিকার আছে ওয়ারিশ দেহ ধারনের।

টুডু হত্যা
সাংমা হত্যা
হাসদা হত্যা
এসব নিয়ে একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হতে পারে
হাসান রেজাউলকে বলে রাখবো

এসো একটা এক্সিবিশন দিই রানাপ্লাজা কেন্দ্রিক

আমরা ফিলিস্তিন নিয়ে কথা বলবো না
সুনামগঞ্জ ডুবে গেছে
নেত্রকোনা চোখের কোণের মতো জল টলমল
কুমিল্লার মেয়েটার কী খবর
আবারও লাশ তুলতে হবে নাকি গণপ্রজাতন্ত্রী?

হাসান রেজাউলকে বলবো
জলপুত্রের পর ক্যান্টনমেন্টকে যেন মঞ্চে নিয়ে আসে।


DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

শব্দমিছিল : অয়ন আহমেদ

শব্দমিছিল : অয়ন আহমেদ


শব্দমিছিল
অয়ন আহমেদ

বন চলে আসে

রক্তিম শরাফ কাচ বনে বিঁধে আছে কোথায়
দুপুরের মনের ভিতরে চকচকে-
আকাশ-ফলার তরুণী এক আঙ্গুলের সলতেতে
রমণী ঘুরায়, চাবিগুচ্ছের মতো,
দ্যুতির ঢঙের ভিতরে। মুদ্রায় দরোজার
অলিক ফালি রূপে খুলে গেছে। তবু
মেঘের গভীরে বিমানের জেটের আওয়াজ
শব্দদের ফালে বেরোয়। সুতির্যক সুচির
পিন-রমণী। চিঠি ডাকে পিয়নের দৈর্ঘ্যের
আলোয়। ভোর-ভোর বন চলে আসে।



মিতালীটা

চা খেতে খেতে
খেতে খেতে চা
বাষ্পের ভেতরে
মিতালীর মুখটা
পাগলী মতো,
হঠাৎ হেসে ওঠে-
ঠোঁট পোড়ে
ছলকে-


উছলকে মিতালীটা

একটু কাছ থেকে দূর
দেখার মতো
একটা কাচ আমায় দেখে
অদূর অদূর ভাবনা কিম্বা
একটা গল্পের মতো আমাকে
খা-ব অংশে অচেনা

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

শব্দমিছিল : মঈন মুনতাসীর

শব্দমিছিল : মঈন মুনতাসীর


শব্দমিছিল
মঈন মুনতাসীর

শিশমহল-২

এই অনভ্যস্ত জীবন আমার কাম্য ছিলো না।
আমি অভ্যস্ত ছিলাম না রক্তপানে,
অভ্যস্ত ছিলাম না আকাশের বৈরিতায়।
মাথায় বর্ম লাগিয়ে যুদ্ধ করায়
আমি একেবারেই অনভ্যস্ত।
শুশুকের কসম,
যখন তারা ভেসে ওঠে আর শ্বাস নেয়।
চাঁদের সাথে সঙ্গমে একেবারেই অনভ্যস্ত আমি!


শিশমহল-৩

ভক্ত-মুরিদ থাকলে যদি উঁচু হয়ে যায় সুফিবাদি সমাধি-
আমাকে কবর দিও মাটির দুই আস্তরণ নিচে।
আর জেনে রেখো-
শুদ্রই আমার জাত।


শিশমহল-৪

তোমার ভূলুণ্ঠিত শরীর,
ভূলুণ্ঠিত পতাকা আর সার্বভৌমত্বের সীমারেখা দেখে-
আমি সূর্য দেবতার প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছি,
আগুনের উপাসনা ছেড়ে দিয়েছি-
এই এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে।



শিশমহল-৬

এই রং-বাজারে আসার আগে
জানতাম না এখানে এতো ভিড়,
এখন দেখি-
এখানে হরেক রকম মানুষ আর খেলনা পাওয়া যায়।

না, আমাকে মদ পান করতে বলো না,
যথেষ্ট নেশা জমে আছে আমার ভেতরে।
আর এই নেশার ঘোর কাটতে-
মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আমার।

আমার রক্তে, মাংসে আর বাহুতে নেশা
আমার ঠোঁটে, চোখে আর চুম্বনে নেশা
আমার কাঁধে, পিঠে আর কলিজায় নেশা
সুতরাং, দয়া করো-
আজ আর আমি মদ পান করছিনা।
মৃত্যুর পর দেখে নিও-
আমি নিজ হাতে মদ ঢেলে খাবো।

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

শব্দমিছিল : নাজমুল আহসান

শব্দমিছিল : নাজমুল আহসান


শব্দমিছিল
নাজমুল আহসান

গোলাপের মতো ফুলে উঠি

গোলাপের মতো ফুলে উঠি
কিস্তির পাটাতন ভেঙে গেলে নিলামে
বিক্রি করে দেই যাযাবর জীবন
কে যেন বলেছিলো শ্যাওলার মতোই তো ছিলে
কেন বেছে নিলে পতঙ্গ এমন
অবারিত সবুজের মাতাল সৌরভে সেই থেকে
লেগে থাকে বিষাদ এমন
কে আমি- কবে থেকে জানতাম; ভুলে গেছি
জেনে গেছি সেই থেকে স্মৃতিরা এমন
ব্যথাতুর বেদনার আর্তি


কি সব আগুন জীবন

কি সব আগুন জীবন
মমতার মতো কোমল, আর-
কবিতার মতো শিল্প চাদরে জড়িয়ে রাখে
তোমার দ্যুতির উঠোন
উঠোন বালক হয়েই থাকি
লুকিয়ে রাখি স্মৃতির ঊর্ণজাল

তোমার স্পর্শে আগুনেরা কথা বলে
কুয়াশা ফুলের গন্ধে মাতিয়ে রাখি অঙ্গন
এতো পঙ্কিলতা আমি কোথায় লুকোই
কোন আঁধারে ঢেকে
রাখি তোমার আলোড়িত গন্তব্য এমন


ক্রমশ জলের দিকে

ক্রমশ জলের দিকে যাচ্ছি
নদী পাহাড়, অরণ্যকে পেছনে ফেলে
আমি ক্রমশ জলের দিকে যাচ্ছি

একটি অনিরাময়যোগ্য ব্যাধি ঢুকে গেছে
কতিপয় মুদ্রিত বেদনায়- অগোচরে
পেছনে অবিনাশী সুখ ডাকে জমজ আলোয়
শুনিনা কিছুই, দেখার চোখ রেখেছি ঢেকে
নন্দিত চেতনায়
আমি ক্রমশ জলের দিকে যাচ্ছি

রাতের উরুসন্ধি থেকে রতিচিহ্ন মুছে গেলে
পাথরের চোখ থেকে ধেয়ে আসে যাতনা
আমি তখন হেঁসেলের দুঃখ নিয়ে উড়ে যাই
মাছরাঙা পাখি ক্রমশ জলের দিকে...

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

শব্দমিছিল : মঈন ফারুক

শব্দমিছিল  : মঈন ফারুক


শব্দমিছিল
 মঈন ফারুক

আমার দাঁড়ানোর অভ্যেস

ছোটবেলায় মার্বেল খেলার চত্বরে আমার দাঁড়ানোর অভ্যেস-
দেখতাম, পদস্থলের চিহ্ন থেকে ছোড়া মার্বেল দূরত্ব উজিয়ে
গন্তব্যের দিকে ধীরেধীরে গর্তের মুখে অগ্রসর হয়ে
চারিদিকে পাক খাচ্ছে, কার্ণিশে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।

আমাকে বড়বেলায় পৌঁছে দিচ্ছে মার্বেল-
যেমন আমার চোখ দাঁড়াতো গর্তের চারপাশে,
যেমন পরাবাস্তবতা টেনে নিয়ে যাওয়া আমার অভ্যেস;
এখন বড়বেলায় গড়িয়ে গড়িয়ে
আমি গর্তের দিকে যাই ছোটবেলার মার্বেলের মত- 
কার্ণিশে গিয়ে আমি দাঁড়িয়ে থাকি, আমার দাঁড়ানোর অভ্যেস।


আমার হাঁটার অভ্যেস

ছোটবেলায় বড়-বড় বিল আমার হেঁটে পার হওয়ার অভ্যেস-
দেখতাম, বৃক্ষ ওল্টো দিকে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ফিরে দেখে
পথে পড়ে থাকা পেছন হেঁটে আসা দূরে সরে সরে ক্রমাগত
সামনের পথ বেড়ে যাচ্ছে, মোনালিসার মত মুখ বাঁকাচ্ছে।

আমাকে বড়বেলায় পৌঁছে দিচ্ছে হাঁটা
যেমন আমার চোখ দাঁড়াতো পথের দূরদিগন্তে
যেমন পথের মত এলোমেলো পড়ে থাকা অভ্যেস;
এখন বড়বেলায় চলতে চলতে
আমি অবিরাম পথেই থমকে গিয়ে ছোটবেলার বৃক্ষের মত
ফিরে ফিরে পেছন দিকে হাঁটতে থাকি, আমার হাঁটার অভ্যেস।


কে যেন আছে

গুপ্তচরের মত কে যেন লুকিয়ে আছে
আমার ভেতর, কে যেন আছে
কে যেন চেহারাটাকে টেনেটুনে হাসিয়ে দেয়
কে যেন কাঁদিয়ে দেয়
কে যেন বিষণœ করে রাখে চেহারাটাকে
কে যেন আমার ভেতরে বসে আমাকে আঁকে
ভেতরটাকে কে যেন নেড়েচেড়ে দেয়
ঠোঁট ও ডানায় খুনসুটি দেয়
মুখের কাছে কথা ঠেলে দিয়ে কে যেন লুকিয়ে আছে
আমার ভেতর, কে যেন আছে।

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw


শব্দমিছিল : মাহমুদুর রহমান

শব্দমিছিল : মাহমুদুর রহমান


শব্দমিছিল
মাহমুদুর রহমান

জন্মদিন

শৈশবের একটি জন্মদিনে মা আমার বাম গালে চুমু খান এবং আমাকে একটি রঙীন কাগজে মোড়া সমুদ্র উপহার দেন। যার উপরের ট্যাগে লেখা- আবেগ।
বাবা আমার পিঠ চাপড়ে একটি পাহাড় উপহার দিলেন। আর বললেন- ওর ডাকনাম আত্মবিশ্বাস। ওকে কখোনো হারিয়ে ফেললে এই সমুদ্রে ভেসে যাবি। 
আজ বহুকাল আমি আমার পাহাড় ও সমুদ্রকে খুব নির্জনে আগলে রাখছি। সম্প্রতি আমি খুব উদ্বেলিত এই পাহাড় ও সমুদ্রকে নিয়ে। কেবল একরাশ হারিয়ে যাবার ভয়।
কারণ আমার শেষ জন্মদিনে রূপা ডাকযোগে একটি দুঃখ নামের নদী পাঠিয়েছে। নীরব বহতা নদী এতটা শক্তিশালি জানা ছিলনা।


অপরাহ্ন

ভাত ঘুম গাঢ় হয়ে সর জমে এলে, উঁকি দিয়ে দেখে যায় কেউ। বিকেলটা শুয়েছিল ল্যান্ডস্কেপে; আরো দীর্ঘ তাই।
শৈশবের হাতে পরা পাঁচ আঙ্গুলের রিঙ চিপস, তুমি সন্ধ্যে বেলায় এসে খাও।
নিম আর শিরিষ বান্ধবী হলে দেবদারু রোদে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। এইসব দৃশ্য ভেবে কখোনো কখোনো তুমি বৃক্ষ ওঠো। সবুজ কলাপাতা বেনীতে দোল খায় কার্তিকের উঠোন। সুপুরির শুকনো খোলায় আমাদের সীমানা প্রাচীর।
বিষন্ন ফসলের মাঠ, নিসঙ্গ বাড়িটা এক সদ্য কিশোরী যেন....
তোমার আলতা রঙ পা জলথই পুকুর। হাঁসেদের চইচই রুপোর নুপুর।
হালটের ধূলি পথে গভীর ক্লান্তি নামে, বোঝে তবু তারা। বাবার কাঁধে চড়ে যে শিশুটি মেলা থেকে ফেরে, তার থেকে সুখী পৃথিবীতে কেউ।


অরু আপা

অরু আপার আকাশ জুড়ে কাক ডাকে। সে মানত করে শাহ পীরের সিরনি। উঠোনের তারে ঝোলে ভেজা লাল ব্লাউজ। আমাকে মিষ্টি করে ডাকে।
আপার জন্যে ভাসি এক পৃথিবী সমুদ্র। ছুটি তিমিরের নীল নির্জন অরণ্য। এক একটি অখন্ড দুপুর।
হঠাৎ সন্ধ্যায় তবু বেজে ওঠে যুবকের সাইকেল বেল। তাহার বুকের অনাগত রিঙটোন।
খুলে যায় আপাদের ভেজানো কপাট। অনায়াস ঢুকে পড়ে দুধশাদা মেঘ। 
যুবক আদতে একটি তুলে রাখা বেডশীট। ঘন্টা পড়লে বালক নৈঃশব্দে ঢেকে যায়।

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

শব্দমিছিল : রোমেনা আফরোজ

শব্দমিছিল : রোমেনা আফরোজ

শব্দমিছিল
রোমেনা আফরোজ

শরণার্থী জীবন

জীবনের ভেতর আরেকটা জীবন, যেখানে বয়স বাড়ে না।  পৌঢ় বলতে ওখানে কোন শব্দ নেই। সেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে  প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। ভীষণ আঁকাবাঁকা রাস্তা। এ পাশ থেকে বোঝা যায় না বাঁকের অন্যপাশে ঠিক কী আছে, কতটা অন্ধকার! তবুও থামার লক্ষণ নেই। চলছি তো চলছি। একা একা। তুমি বলতে এত দিন যাদের বুঝেছি, তারা যেন সোনার হরিণের খোঁজে। এতটা বস্তুবাদী মানুষ কী করে হয়! এই যে তোমাকে ডাকছি, অনুচ্চস্বরে, ডালপালা নড়ে উঠল, আকাশের এক বুক কান্না এসব মতিভ্রম নয়। একজন মানুষ যখন সমাজ থেকে  দূরে সরে যায় তখন সেই শূন্যস্থান পূরণ করে নেয় প্রকৃতি। আজকাল শরীর কথা বলে না। ক্রমশ মন দখল করে নিচ্ছে শেকড়বাকড়। এই দখলদারিত্ব এতটাই ধীরে ধীরে যে তুমি বুঝলে না, শেষ বৃষ্টিপাতেই ক্ষতি হয় অধিক। ঠিক এই জায়গায় এলে মনে হয়, মানুষ নিতান্ত একা। সামাজিক জীব বলে সারাক্ষণ যে ধর্মীয় গ্রামোফোন বাজে আসলে তা বাইরের রূপ। যেমন পানামাসিটির এক পায়ের সাঁকো।  তারপর আর কোন রাস্তা নেই। ঢেউ এর পর ভাসমান রাত্রি।  আশ্চর্য সব সেলাইয়ের দাগ নিয়ে স্থবির হয়ে আছে জনজীবন।  কেউ জানে না, পাশের মানুষটিও ঠিক তার মতন একা। এই একাকীত্বের দায়ভার কি নেবে  না পুঁজিবাদ? আলো যতটা কাছে তারচেয়েও অধিক কাছে বসে থাকে ফস্টাস।  এই আগুনমুখো শিশুটিই যেন আজকের যিশুখ্রিস্ট।  তাকে দু’হাতে তুলে নিলে  গ্রাস করে নেয় ফসলের মাঠ। আর ফেলে দিলে আঁকড়ে ধরে দু’পা।  কেউ থাকুক কিংবা না থাকুক, স্নায়ুভর্তি বিষ পিঁপড়ে। নিজস্ব বলতে যেটুকু পথ দৌড়ে এসেছি তাতে কোন ছন্দ নেই। পায়ের কাছে এক জোড়া খঞ্জর।  হয় তাতে আত্মাহুতি দেবো  নয়তো  খুনের রক্তে নতুন করে  লেখা হবে শরণার্থী  জীবন।


আমাদের স্বপ্নগ্রাম

অরণ্যের মত আপন কেউ নেই। এখানে সেখানে পড়ে আছে কয়েকটি স্ত্রীপালক।  এতটা জেদ নিয়ে কার কাছে যে যাই? ঐ যে রেললাইন।  সেদিন ট্রেনের তলায় মাথা দিয়ে মরেছিল যে মেয়ে তার নামটা জানিস বুবলি? সে কী জেদ! এভাবেই মৃত্যুরা ছায়া হয়ে নেমে আসে উপত্যকায়। মায়ের ছায়া ভর্তি উঠোন।  পুকুরপাড়ে ছিঁড়ে যাওয়া ব্লাউজটাকে মনে হয় পতাকা। বড় দাদি নুয়ে নুয়ে হেঁটে যাচ্ছেন কলতলার দিকে। তার হাতে গত বছরের শাড়ি। তাতে রঙ নেই। রঙের কৌটোটা কোথায় রেখেছিস অরণ্য? যা। চলে যা।  নতুন রাস্তা ধরে না হোক, পুরাতন রাস্তার  অনর্থক দিনগুলি ফেলে ঊর্ধ্বলোকে।  হায় ইকারাস! প্রস্থানের ভঙিমা একইরকম  ন্যুব্জ। অভিন্ন গড়নের। এটাই নাকি পেশাদারিত্বের লক্ষণ । তুই কি অফিস শেষে ফিরে আসবি এ পথে? পাতা কুড়াবো।  কচি হেমলক পাতা। এই শহরে সবুজ নেই। আর্যরা এখন গ্রামে থাকে।  হয়তো  গ্রাম ছেড়ে আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে একজন মানুষ ঘুমায়। খিদে পেলে তড়িৎগতিতে হাওয়া বদলায়। বারবার পিছুটান । ঘন্টা বাজে না। বিভেদের গান। এক একদিন খেয়াল হয়, আমার বলে কিছু নেই। স্কুল থেকে এই পর্যন্ত মন দখল করে  আছে ময়ূরপঙ্খি  ঘুড়ি।  ঘুড়ি কি জানে, ক্লাস্টোফোবিয়ার ঘরগুলি কতটা বুদবুদময়!  বিষাদের এক পা ধরে আছে খনা। তুই এসব চোরাবালিতে পা ফেলিস না। চলে যা। সামনের সিগনাল ফেললেই নতুন কর্মসূচী। যারা শরীরের ভার উত্তোলন করতে জানে না তারা কেবল পাথর ঠেলে। আমি পাথর নই, নিজেকে ভাঙছি। একটু একটু করে ক্ষয়, অপচয়। রিপভ্যান উইঙ্কেলের মত ঘুমপন্থী রাতে হারিকেন জ্বেলে দেখি, চাঁদ নেই। রাত আছে। বিষয়-সম্পত্তি বলতে, ভাঙা ডুবোনৌকা। জলে ভেসে গেছে বৈঠা। যেমন ভেসে যায় আমাদের স্বপ্নগ্রাম। 


মৃত্যুসংবাদ

আনুমানিক এক বছর, তোমাদের বাড়ির ওদিকে যাওয়া হয় না। পথেঘাটে আগের মত আর দেখাও হয় না আমাদের। এভাবেই ভুলে থাকি বাগানবাড়ি।  স্নায়ুর ভেতর পানপতঙ্গের গান।  প্লেটোর ব্যর্থতা কি আমাকেও  কাঁদাবে সমানভাবে? ঘন বরফের নিচে ঘুমিয়ে আছে আটলান্টিস।  চল নামি, পাহাড়ি অন্ধকারে। হাতড়ে চিনে নেই আশ্চর্য সব জন্মদাগ। ততক্ষণে রোদপাখিদের মিশিয়ে দাও স্নানের জলে। শরত শেষে বনপথে দ্রুত  নেমে আসে বধিরতা।  সন্ধ্যা প্রাক্কালে এই যে বিদ্যুৎতার তাতে কাতর হও। খিদে সেও তো এক মহাপ্লাবনের নাম। কেউ ভেসে যায়। কেউ তর্ক করে। বিবাদে লিপ্ত মানুষের মৌলিক চাহিদা বলে কিছু নেই

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

শব্দমিছিল : কবির কল্লোল

শব্দমিছিল : কবির কল্লোল



শব্দমিছিল
কবির কল্লোল

ধরো

ধরো এই হাত দু’টি, আর ধরো পা
ধরো মানে মনে করো, হাতেনাতে না

ধরো প্রিয় হাত নেই, পা-ও গেছে কেটে
ধড় আছে, মাথা নেই, পেট গেলো ফেটে

কিংবা মাথাটা আছে, ভুঁড়িটুড়ি নাই
ধরো বেল টুপ করে পড়লো মাথায়

মাথা আছে, হুশ নেই, মাথার কী কাজ?
মাথায় পরানো হলো হীরকের তাজ

ধরো এক চোর এলো, তাজ নিতে গিয়ে
ভুল করে চলে গেলো মাথাটাই নিয়ে

তোমার কিছুই নেই- রক্ত.. মাংস.. হাড়..
পড়ে আছে রেখে যাওয়া হীরার পাহাড়

ধরো ফের চোর এলো, চোরের গ্রীবায়
তোমার হারানো মাথা পষ্ট দেখা যায়

হীরা নিয়ে পালাচ্ছে, চোরটাকে ধরো
চোর..চোর.. নিজেকেই চোর মনে করো

চোরের পিছনে তুমি, তুমিটাই চোর
ধরো এই ধরাধরি পুরোটাই ঘোর

ভোরবেলা ঘোর কেটে ভেঙে গেলো ঘুম
সূর্যকে মনে হলো ডিমের কুসুম

ডিমের কুসুম দেখে খিদে পেলো ধরো
ডিম নেই, মুরগি এক আছে বড়সড়

কিন্তু মোরগ নেই এই তল্লাটে
আবার ঘুমিয়ে পড়ো ঘোরলাগা খাটে

রক্তজবা

রক্তজবা ফুটেছে রাজপথে
কংকিরিটে, পিচের শাখায় শাখায়
ফুটেছে বাঁ পকেটে শ্বেত শার্টের
দ্বাদশ শ্রেণীর পাজামা ওড়নাতে

রক্তজবা লেপ্টে চাকার দাঁতে
নর্দমাতেও পাপড়ি থোকা থোকা
জলকামানে ধুচ্ছে কারা বুকের
ঘেঁষটে থাকা থ্যাঁতলানো লাল রেণু

রক্তজবা ফুটছে ট্রাকের শিঙে
দড়িছেঁড়া ষাঁড়ের মতো যানে
অথচ তার ফোটার কথা ছিল
ক্লিপের বোঁটায় রাইকিশোরীর কানে


পাখিতে বিস্কুট ফেলে যায়

ইচ্ছে হয় ফিরে যাই লণ্ঠনের দিনে
পাখিতে বিস্কুট ফেলে যাক
একখানি তিনচালা ঘর, খড় থেকে কেন্নো পড়–ক
ঝিঁঝিঁপোকা দিক রেলডাক

মাড়ের গন্ধ নাকে লাগে
তুশ পোড়ে, পাতা পোড়ে, ধোঁয়া ধোঁয়া ঘ্রাণ
তালপাতা ছাউনির নিচে
আম্মা, আরেকবার উনুন জ্বালান

স্বরে অ-তে অভিনয় শুরু
স্বরে আ-তে আম্মা ও আমি
‘আশ্বিন গেলো, কার্তিক গেলো
মা লক্ষ্মী ঘরে এলো’, আম্মা, আপনি অন্তর্যামী

উশখুশ বালকের বুকে
ক্রিং ক্রিং সাইকেল থমকে দাঁড়াক
বৌছির আহবান রুখে দিক অদৃশ্য আঙ্গুল
পাখিতে বিস্কুট ফেলে যাক।

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

শব্দমিছিল : দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম

শব্দমিছিল : দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম


শব্দমিছিল
দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম

সীমান্ত যে রকম

একদিন সীমান্তকে মনে হত পাঁচিল। উঠোনের পর বিস্তার
একদিন যারা এখানে বিকেলের আসর মাতিয়েছিলো
তাদের মুখ ঠোঁট দেখে মনে হত পড়শি মুখচ্ছায়া
অলস সমুদ্রের ভাষা তারাও জানে। তারাও কথা বলে
শূন্যে ভাসমান, আর হাওয়া টেনে নিয়ে যায় বহুদূরে...
যে শুনিয়েছিল পরপর বিবাহ বাসর আর শূন্যতা
ঊৃষ্টি নামা দিঘিতে জলের সুঘ্রাণ, পাশ ধরে চলা নীরবতা,
তার মুখ আজ যদি মনে করি, একটি পাখি মনে পড়ে
একটি চেয়ারের গল্প, হাত ফস্কে যাওয়া চায়ের কাপ
পরিচিত আবহ বদলে যায়, দৃশ্যপটে ভিড় করে শ্মশান যথা
আজ বহুদিন পর বিকেলকে মনে হচ্ছে দ্বিধাবিভক্ত,
জন্মের প্রথমভাগে সে, আবার পথ দেখায় মৃত্যুর ওপার
শাদা পালকের মতো দিকবিদ্বিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা
গল্প সম্ভার হাহাকার তুলে তৃষ্ণার্ত বুকের ভিতর।
আর মনে হতে থাকে সব সরে গেছে, উঠোন, দিঘি জল
মনে হতে থাকে তার মুখ, দিকভ্রান্তির থেকে এসেছে
হৃতস্পন্দনের অতি কাছে, সন্তর্পণে তুলে দিচ্ছে সীমান্ত
মানচিত্র আরো সন্নিকটে, হয়তো নয়।
পাঁচিল আজ বুকের ‘পর...


একদিন কবিতা লেখা না হলে

একদিন কবিতা লেখা না হলে ভৌতিক অন্ধকারে
মূর্তিমান হয়ে দাঁড়ায় পুরনো অশ্বথ গাছ,
এই রাজপথের বুক চিঁড়ে কার কান্না শোনা যায়
অলৌকিক সব নির্জনতা দৃশ্যবন্দি হয়, দুরত্ব বাড়ে
পথ ফুরিয়ে যায়, গাছের আড়াল থেকে
কে ঢিল ছুঁড়ে, শরীর ভেদ করে বুকের ভেতর
আরো আরো অস্থিরতা বাড়ে, অসুখের মতো-
আর তোমাকে মনে পড়ে, না লেখা কবিতার মতো
এদিক সেদিক আবর্তিত, রাত্রিচর গাঢ় হয় খুব


সকাল দেখা

পরিত্যক্ত ঝুড়িকে এমনভাবে টানে যেন আটকে থাকা গাড়ি
নিয়ে যেতে হবে গন্তব্যে আজ এখুনি।
তখনও অনেক ভোর, অনেক ঘুম নিয়ে পৃথিবী শুয়ে আছে
বাগানের চৌকিদারদের চোখ নুয়ে পড়া ক্লান্তি স্পষ্ট
এর ভেতর ঢুঁকে পড়ে তারা, একজন দু’জন এবং মা
কারো চোখে স্বপ্ন নেই, কেবল মুহূর্তকে জড়িয়ে ধরে বাঁচা
কারো চোখে নেই বেদনা আর বকেয়া ঘুমের বিলাপ,
একটি কুকুর পাশ কেটে দৌড়ে যায়,
দূর থেকে যখন কেউ ডাকে নিঃশব্দে
আর আলো ঢুকতে শুরু করে এই বৃত্তের ভেতর,
তাদের চোখে আলো নেই, কেবল পালক খসা এক খেলা
তাদের দ্রুতবেগ চলাচল নেই, জড় এক আচ্ছন্নতা দিচ্ছে পাহারা
পরিত্যক্ত জীবনকে এমনভাবে টানে যেন নিয়ে যেতে হবে
এই বৃত্তের বাইরে,
আরো অন্ধকার যেখানে
কোন একদিন।
বাতাবিলেবুর গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র, আর মানুষেরা ঢুকছে

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw


শব্দমিছিল : পলিয়ার ওয়াহিদ

শব্দমিছিল  : পলিয়ার ওয়াহিদ

শব্দমিছিল
পলিয়ার ওয়াহিদ


নিরাকার

আমি যার প্রেমে পড়ি-
তার আছে ফলের দোকান

যে আমার প্রেমে পড়েছিল-
তিনি এক মাংসের দোকানী

আমাদের ভালোবাসার যিনি মালিক-
তার আছে পাখির আড়ৎ
খাঁচার স্কুলে তাই ভর্তি হচ্ছে পালক!

রোদের দিকে মুখ করে বসো

তুমি একটা নকল মানুষ বন্ধু
নিজের দিকে তাকিয়ে হাসো
রোদের দিকে মুখ করে বসো
শীতের দিকে খানিকটা হেঁটে যাও

তোমার দোচালা ঘরের বারান্দায়
স্বর্গীয় স্মৃতির পায়চারি বাড়াও
সবাই তোমাকে যতটা চেনে
জানেও যতটা, তা কি সত্যি তুমি?
অভিনীত মিথ্যেগুলো ফিকে কেন আজ?

নিজেকে আবিস্কার করো
আর হা করে পৃথিবীর দিকে তাকাও
তোমার মুখে মেঘ জমে গেছে
যা কখনো বৃষ্টি হয়ে ঝরবে না
কারণ তুমি ওয়াটার লেভেলকে
প্রতারণার প্রলেপ দিয়ে ঢেকে রেখেছো।

কাছের মানুষ বলে কেউ নেই তোমার
বন্ধু বলে তোমার ছিল না কেউ
মেদুর করুণাকে তুমি সবসময় প্রেম ভেবেছো
নিজের সোহাগী উলঙ্গপনাকে যতই গোপন করছো
ততই লোকের সামনে তোমার আদুরে বেহায়াপনা
প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে!

শুধু সারাদিন নামিদামী বই পড়ে
গায়ে সুগন্ধি আতর মেখে
লুকিয়ে রাখা যায় না মনের দুর্গন্ধ
মানুষে তোমার ঘৃণা
তা না হয় তোমার কাছে প্রবোধ হয়ে থাক
কিন্তু সর্বশেষ মানুষ ছাড়া কার কাছে
আশ্রয় খোঁজো তুমি?

আচ্ছা, এইটা তোমার স্বভাব কিংবা অভ্যাস
আমি না হয় মেনেই নিলাম
কিন্তু যাদের কাছে আমাকে ছোট করছো
তারা আগে থেকেই জানে
আমি একটা ছোটলোক
নিজের সুড়ঙ্গ তুমি নিজেই কাটছো। 

তোমার সবচেয়ে গোপন কক্ষের চাবি
লোকের আঁচলে আঁচলে ঘুরছে
তাই নিজেকে কীভাবে সুরক্ষা দেবে
সেটা ভেবেই একবার নিজের মুখোমুখী হও।

তোমার প্রতি আমি আজও কৃতজ্ঞ
না এটা বলতে আমার মোটেও লজ্জা করছে না
কিন্তু তাই বলে তোমার সব অন্যায়
মেনে নিতে পারি না আমি মাথা পেতে
তোমার মুখোমুখী হতেও চায় না মন
ইচ্ছে নেই তোমার মৃত মুখ দেখবারও
আর দুঃসংবাদবাহী যে কাক
সে আমার বাসার ঠিকানা ভুলে যাক!

না তোমাকে এখন ভালোবাসি
ঘৃণা করার যোগ্যও নও তুমি
শুধু তোমার নামটা মনে পড়লে মুখে থু থু জমে
শুধু তুমি মানুষের মতো দেখতে
তাই ক্ষমা করেছি অনেক
যাক এটা ভেবে সুখী হও যে
কাউকে কখনো আর তোমার নামটা বলব না!

কোবিও নির্ধারিত

নবীর মতোন কোবিও নির্ধারিত জমজ পরান
তাকে পাঠানো হয়, পাঠ নিতে
যাবতীয় বেদনা, গ্লানি আর বিষের সমান
কেউ তা লিখে রাখে দর্ষিত সাপের ফনায়
কেউ কেউ সরিষার ক্ষেতে আর ফুলের খামার

DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw