ই-পেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ১২৪

ই-পেপার : ধানশালিক : সংখ্যা ১২৪
তারুণ্যের শিল্প সরোবর ।। ধানশালিক ।। সংখ্যা ১২৪
বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট, ২০১৯































আষাঢ়ের এক সন্ধ্যায়...

আষাঢ়ের এক সন্ধ্যায়...




আষাঢ়ের এক সন্ধ্যায়...
 কৌশিক সূত্রধর 

সারাদিন সূর্যের দেখা মিলল না, বৃষ্টিও নিল না বিশ্রাম। বিরামহীন মেঘের কান্নায় বাড়ির সামনে খালটি উপচে উঠেছে। যেন নিজের ক্ষুদ্রত্ব অতিক্রমের গৌরবে ভাসছে সে।
ঝিরঝির বাতাসের সাথে আমার ঘরের জানালার পাশে গিয়ে দাড়ালাম।
একটু একটু বৃষ্টির ছিটে এসে আমাকে ছুতে যাচ্ছে।
জানালা বন্ধ করলাম না,  ঘরের আলোও জ্বালালাম না। কিছুক্ষন পর পর মনে হলো অন্ধকারের আচলে সূর্যের চোখ ফোটে চপলা বিদ্যুৎ এর খেলা শুরু হয়েছে। প্রকৃতিকে শান্ত ও স্নিগ্ধ মনে হতে লাগল। একদিকে সন্ধ্যার অন্ধকার অন্যদিকে বৃষ্টির প্রচন্ডতা এ-দুয়ে মিলে কী চমৎকার এ সন্ধ্যা প্রকৃতির আবির্ভাব ঘটেছে।
ধীরে ধীরে অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসছে। বৃষ্টির ফোঁটা আর দেখা যাচ্ছে না। বৃষ্টি পতনের সুর আর দৃশ্য দেখতে খুবই ভালো লাগছিলো। প্রকৃতির এক অজানা মুক্তি যেন মানব মনকে উদাস করে বসিয়ে রাখে জানালার পাশে।
তেমনি উদাসীনতা আমাকেও ভর করলো।
কিছুতেই জানালার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারলাম না। এমনি সময় বিরহীদের বোধ হয় মনে জেগে উঠে পুরানো স্মৃতি।
ধীরে ধীরে সন্ধা হাজির হলো।
জানালা থেকে আমার পড়ার টেবিলে চলে এলাম। আলো জ্বালালাম, এমনি সময়ে ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ আমার মনকে মাতাল করে তুলল। ছুটে গেলাম জানালার পাশে। আপন মনে গুণ গুণ করে আমি গেয়ে উঠলাম বর্ষার গান। সাথে সাথে রাজ্যের আরও যত গান, আরও যত সুর সব যেন আমার মনের মধ্যে এসে ভর করলো।
বৃষ্টির শব্দকে মনে হলো মহা আর্কেস্টার পরিবেশন সুর হয়েছে।
এ সর্বগ্রাসী বাদল ধারার মহান সিমফানী বিশ্ব ঐক্যের ও মহাবাদকের অভাবনীয় দক্ষতার প্রতীক বলে আমার বোধ জন্মালো। কেন যেন দর্শন শাস্ত্রের মতো আমার মনে হতে লাগল এ বিশ্ব সংসারে আমরা কেন এবং কিই বা আমাদের করনীয়। সে বর্ষণমুখর সন্ধায় বৃষ্টির শব্দে যেন আমি আত্মহারা হয়ে গেলাম।
মনে হলো পৃথিবীতে প্রকৃতির এই বৃষ্টিভেজা রূপের চেয়ে আর ভালো কিছু সৃষ্টি হয়নি, যা দেখে চোখ ফেরানো যায় না।

মির্জানগর , আটিগ্রাম, মানিকগঞ্জ

বর্ষা এসেছে তুমি খবর পাও মা !

বর্ষা এসেছে তুমি খবর পাও মা !




বর্ষা এসেছে তুমি খবর পাও মা!         
রোকেয়া রিক্তা           

মা, আজ আবার বর্ষা এসেছে। ঝমঝম করে সময়ে অসময়ে বৃষ্টি নামে। ঘন কালো মেঘে সমস্ত আকাশ ছেয়ে যায়। মেঘের গর্জন তো নয়, যেন দৈত্যর গলা ছেড়ে হাঁক। কান তালা পড়ে যায়। আমার খুব ভয় করে মা!একা একা থাকতে পারিনা মোটেও। আকাশে যখন কালো মেঘে ছেয়ে যায়; ঝমঝম করে বৃষ্টি নামে, তখন তোমাকে খুব মিস করি মা। তোমার নীল শাড়িটা বুকের মধ্যে শক্ত করে ধরে থাকি। তোমাকে যেমন জড়িয়ে ধরতাম, তেমনি দু’হাতে শক্ত করে আঁকড়ে পড়ে থাকি তুমি তুমি গন্ধমাখা শাড়িটা। তবুও ভয়ে কাঁপতে থাকি। মেঘের গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজের সাথে সাথে লাফিয়ে উঠি প্রতিবার। চোখদুটো বন্ধ করে থাকি তবুও বিজলির ঝিলিকের সাথে যেন ঝলসে যায় চোখ দুটো।

আগের দিনগুলোতে তো তোমার বুকের মধ্যে মুখ গুজে পড়ে থাকতাম। তুমি কেমন আরো শক্ত করে চেপে ধরতে মেঘ গর্জে ওঠার আগে আগে। আজকে জানো প্রতিবার আমি লাফিয়ে উঠি একলা ঘরে। তুমি খবর পাও মা বৃষ্টি নামলে? ঝমঝম শব্দ শুনতে পাও? মেঘের আকাশ ফাটানো গর্জন, বিদ্যুতের চোখ ঝলসানো চমক পাও মা? জানো মা, আজো আমি বৃষ্টির সাথে কান্নার শব্দ শুনতে পায়। বৃষ্টির ওপারে কারা কাঁঁদে অমন করে খুব দেখতে ইচ্ছে করে! খুব কষ্ট হয় আমার। বৃষ্টির সময়টুকু তোমাকে ছাড়া আমার মোটেও চলে না গো মা!
আগে তো তুমি কানের কাছে মুখ রেখে কত কত গল্প বলতে, না আসতো কান্নার আওয়াজ, না আসতো মেঘের গর্জন। দিব্যি ঘুমিয়ে পড়তাম। তুমি বুঝতে পারো মা, বৃষ্টি নামলে? তখন কি তোমার কষ্ট হয় আমার জন্য ? আমার মতো তোমারও কি কান্না পায়? দেখছো তো  মা, আমি দিব্যি দিন কাটিয়ে দিচ্ছি তোমাকে ছাড়া! শুধু মেঘের গর্জনের বেলা তোমার শক্ত হাতের বেড়ির মধ্যে একবার ঢুকতে ইচ্ছে করে। কখন যে অজান্তে কেঁদে ফেলি তোমাকে ডেকে ডেকে। তুমি রাগ করো নাতো মা! কি কবরো বল, বর্ষাকাল টা যে মোটেও কাটে না তোমাকে ছাড়া।

জানো কাল কি হয়েছিল?  বৃষ্টি তো নামল আকাশ ভেঙে। ঝমঝম ঝমঝম করে! তোমার শাড়িটায় মুখ লুকিয়ে  পড়ে আছি। বৃষ্টির ওপার থেকে সেই ভেসে আসছে চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ। আর বসে থাকতে পারলাম না। কে কাঁদে অমন করে আজ দেখবোই। বারবার মনে হচ্ছে আকাশ থেকে দৈত্য নেমে সবাইকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আর সবাই বাঁচার তাগিদে প্রাণপনে চিৎকার করছে। তুমিও যেন আছো ওদের সাথে।
ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম। তালসারি ছাড়িয়ে সোজা বড়ো রাস্তা। নাহ কেউ নেই। তবে কি সবাইকে ধরে নিয়ে গেল দৈত্য! কোথাও কেউ নেই। চারপাশে শুধু রুপালী বৃষ্টি আর বৃষ্টি। তোমার বাড়িটা ও দেখা যাচ্ছে না। রাস্তা থেকে তো মাত্র সামান্যই দুরে থাকো তুমি। বৃষ্টির ওপারে পড়ে গেলে কেন তবে? আরো দৌড় দিলাম। শুধু কান্না আর বৃষ্টি চারপাশে।
হঠাৎ করে বৃষ্টি ধরে এলো। চারপাশটা কেমন ঝকঝকে থকথকে। ধোয়া পাতার সবুজের সে কি চমক! আমি পাকা পুলের মাথা অব্দি পৌছে গেছি। কোথাও কোন জনপ্রাণী নেই। তোমায় বলবো কি মা, সত্যিই কোন জনপ্রাণীর সাড়া নেই কোথাও! সত্যিই যেন দৈত্যটা সব কিছুু সাবাড় করছে বৃষ্টির আড়ালে বসে! না কি আমি অজানা কোন দেশে এসে পড়েছি পথ ভুলে! পেছনে ফেলে যাওয়া রাস্তা ধরে আবারও দৌড়।বাবলা তলার ধারে আসতেই তোমার বাড়িটা চোখে পড়ল। বুনো লতার সাদা সাদা ফুল পড়ে আছে সবুজ ঘাসের উপর। ভেঙেপড়া দেওয়ালের উপর দিয়ে কিযে সুন্দর দেখতে লাগছিল তোমার ঘর। তুমি ওখানেই থাকো মা?

তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম। হঠাৎ দুটো বাইক আমাকে ক্রস করে ছুটে গেল। বৃষ্টিতে কোথাও আটকে ছিল বোধ হয়। কয়েকটা ভ্যানগাড়ি ও যেতে দেখলাম। হাসি পেল আমার, মনে হলো এইবুঝি দৈত্য ওদের ছেড়ে দিয়েছে। যে যার কাজে যাচ্ছে এবার। বৃষ্টিতে যে ভিজেভিজে একাকার হলাম, তুমি রাগ করোনি তো মা! সরি বলেছি কিন্তু। কি করবো বলো, বর্ষার সন্ধ্যেটা বড্ডো তোমায় মনে করিয়ে দেয় রোজ রোজ! তুমি তুমি গগন্ধমাখা শাড়িটাও আর আমার কান্না আটকে রাখতে পারে না যে তখন!

বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০১

বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০১



নোনাজলে হৃদমাজার ডুবে যায়
রুদ্র সাহাদাৎ

বৃষ্টির জল দেখে- শিখেছি কান্না
                          জীবন্মৃত মানুষ
আকাশের কান্নায় গতকাল সারারাত আমিও কেঁদেছি
কেউ দেখে না -কেউ বুঝেনা
পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা
জানে পাগলামন, জানে ঈশ্বর

বৃষ্টির জলে বন্যা হয় দেশে, দেখে সবাই

চোখের নোনাজলে হৃদমাজার ডুবে যায়
কেউ জানে না, জানে শুধু পুড়া দু’চোখ....



সেদিন টিএমটিতে বৃষ্টি নেমেছিলো 
শাহীন মাহমুদ 

চোখের কোণে অশ্রু জমালে
জলধমেঘ এক অলক্ষুনের বিকেলে
টিএমটি রেস্তোরার জনাকীর্ণ দোতলায়
ক’ফোটা চোখের জল
অতঃপর-বৃষ্টি।
হৃদয়ের এপার ওপার
বেয়োনেটের আঘাতে থেঁতলানো বৃষ্টি।  
তোমার চোখের জল একদিন নদী হলো
নদী থেকে সাগর আবার সাগর থেকে মহাসাগর
এমন পুঞ্জবর্ষণ চাইনি প্রিয়তমা ।
মেঘের নদী আমিও পাড়ি দিতে জানি
প্রশান্ত জলাশয় বুকে ধরেছো
অথছ মৃদু মৃদঙ্গের বোলে দিশেহারা।
হায় প্রিয়তমা
বৃষ্টির পর-দেখে নিও অলকমেঘ
আবার ফিরে এসো এই টিএমটি তে
কোন এক মুমূর্ষু বিকেলে;এই শিল্পকলার পাড়ে
আবার লাবণ্য আর অমিত হয়ে বসবো দুজন
কোন এক তুমুল বৃষ্টিতে ।


বৃষ্টিতে হয় ফুলের বিয়ে
মিসির হাছনাইন

ফুল গাছটার বিয়ে হয়ে গেল
আষাঢ় আসেনি তবুও বৃষ্টির দিন ফেল
পানিতে ভেসে আসলো কেয়াফুলের নাও
সারাটা দিন বৃষ্টি হলো কোন দেশে যাও?
ফুলেরা সব উঠলো বলে- বিয়ের গান গাও..

লাল শাড়িতে সেজেছে টুকটুকে লাল বউ
তেঁতুল বনে নাচছে ফুল শত ফুলের ঢেউ
সারাটা দিন বৃষ্টি হলো ফুলের দল গাইলো..

বনের পাখিরা সব ভিজে গেলো
পানিতে ভেসে ঝরাপাতারা এলো
ফুল গাছটার বিয়ে হয়ে গেলো।

বৃষ্টিতে হয় ফুলের বিয়ে
কাজ নাই তাই বিয়ে দেখি,
চোখ না ফেরানো এক নারীর মতন
ফুলগাছটা সাজলো।

শুনতে পাই হৃদয়ের সেতারে
রিয়াদ হোসেন আরমান

আকাশে ঘোলাটি মেঘের ঘনঘটা,
দুর্যোগে প্রকৃতি খানিকটা ফিকে হয়ে এসেছে!
যেন দূরাগত থেকে অবলা নারীর অবয়বের মতো দেখা যাই সবকিছু।
বিকেল বেয়ে নেমেছে ঘোর অন্ধকার!
অনবরত মুষলধারে ঝরছে যেন- আষাঢ়ের বৃষ্টি,
জোনাকিরা ছুটে চলেছে বেনুবনের পথটি ধরে,
এদিকে নিবো নিবো হয়ে জ্বলছে কবরস্থানে- জালানো হারিকেলটি।
পথের দু ধারে পানি টেটুম্বুর, রাস্তা-ঘাট একদম ফাঁকা।
জনসাধারণ বিজলীর রশ্মিতে লেপ গুটিয়ে ঘুমে বিভোর!
শুধু শোনা যাই ব্যাঙ্গের ঘ্যাঁঙোর ঘ্যাঙ গান;
আমি ঘরে বন্ধি একা, রোয়াকে দাড়িয়ে দেখছি বাইরের ঝড়ো হাওয়া।
হঠাৎ মনে পড়ে যাই, রবি ঠাকুরের ‘আষাঢ়’ কবিতাটি!
ছন্দে ছন্দে ভেসে ওঠে- বর্ষণ মুখর দিনটির প্রতিচ্ছবি!
শুনতে পাই হৃদয়ের সেতারে;- মেঘবালিকার ঘুঙুরের ঝুপ ঝুপ শব্দ।
টিনের ছালে ঝরছে যেন অষ্ট প্রহর!


ভেজা বর্ষা কিংবা পাথুরে হৃদয়
যাহিদ সুবহান

বাইরে রেখো না পা আজ
আছে ভয় হারিয়ে যাবার
আষাঢ়ের এই ভেজা বর্ষায়
তোমাকে পেলে বৃষ্টির জল
হয়ে যাবে মাতাল প্রেমিক
সকল নিষেধ অমান্য করে
ছুয়ে যাবে লাউয়ের ডগার মত
নুপুর পড়া তোমার দুটি পা
বাইরে যেওনা এই আষাঢ়ে
পিছু নেবে ঝড়ো হাওয়া
কী হবে তখন তোমার?
পাখিরাও জেনে যাবে যখন
বৃষ্টির প্রেমে পড় তুমিও
আর তোমার পাথুরে হৃদয় ...



সমর্পণ
আশরাফুল মন্ডল

পেরিয়ে এসেছি তাচ্ছিল্যময় চৌকাঠ
শুকনো চামড়ায় গজিয়েছে রোঁয়া
খিদেজর্জর দিনগুলো নিয়ে গেছে
গর্তের ইঁদুর

পার হওয়া সহজ নাকি
হাতড়াচ্ছি স্বজন ডাকা স্বর
ঠান্ডা বাতাস এলেই ভেসে ওঠে বাঁশতলা
খড়ো চাল দাওয়া উঁচু ঘর

সারারাত আমাকে ভেজাও মাটির ঘ্রাণ
বোজা চোখের হ্রদে জলের শব্দ শুনি
এসো খিদেয় ঠাসা উদোর
এসো মাটির দাওয়া
গ্রহণ করো আমার সমর্পণ



মেঘের ডাকে
সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা

কালো মেঘের প্রবল দাপট ঝড়ো বাতাস বয়,
মেঘগুলো আজ থমকে গিয়ে ঈষাণ কোণে রয়।

গুড়–ম গুড়–ম মেঘের ডাকে বিজলী আকাশময়,
একটু পরে থেমে থেমে, কাঁপছে ভূবনময়,
ঝুম্ বরষা গাইছে গান টিনের চালে পড়ে,
কদম গাছের ডাল ভেঁঙেছে খেয়ালী এ ঝড়ে।
ফোঁটায় ফোঁটায় বারি ধারা মাধবীলতা নড়ে,
মধুর এমন পরশ পেয়ে সুখের জীবন গড়ে।
কুঞ্জলতা ভিজছে একা কাঁপছে থরে থরে,
শেষ আষাঢ়ে নাইতে হবে, বলছে সমস্বরে।
লিলিরা সব দলে দলে হাসছে টবের পরে,
ছোট্ট ভেজা টুনটুনিটা তবুও খেলা করে।

বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০২

বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০২



বৃষ্টি এবং অন্যান্য
রেবেকা ইসলাম

তুমুল উত্তেজনার বৃষ্টিতে
মাঝে মাঝে তুমি ঘরটাকে পাহাড় বানিয়ে ফেলো,
তারপর চূড়োয় উঠে যাও নিশ্চিন্তে
আকাশ ছুঁয়ে দেখ একলাই,
আমি তখন চলে যাই সমান্তরালে
কাল্পনিক অপেক্ষার সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে,
ভাঁটফুলের সাথী হয়ে
নীল কন্টিকারি ফুলের কাঁটায় আহত হয়ে
ছাতিমতলায় শুয়ে বলি
গ্রাস করো, গ্রাস করো আমাকে,
এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলি
সার সার স্মৃতির চতুর্কোণ পা-ুলিপি,
নদীতীরের পলিমাটির মতো নমনীয়
ভাঁজকরা সুখ- দুঃখের এলিজি,
যা ছিল দুজনার একান্ত,
তারপর ফিকে হয়ে আসে কস্তুরির ঘ্রাণ,
ভেসে আসা শুদ্ধ কল্যাণ রাগের সুরের সাথে
মহাশূন্যের গর্ভে বিলীন হয় মূহুর্তগুলো,
ঘন হয়ে আসে প্রকৃতির ঘুমঘুম ছবি
পাখির দল ঘরে ফিরে যাবে বলে।


কাগজের নৌকা
ইয়াসিন আরাফাত

কালো মেঘ উড়ে এসে শিরশিরি বাতাসে,
আলো নিয়ে উড়ে গেল গাঢ় নীল আকাশে।
নিজ নিজ নীড়ে বসে পাখি ছানা  ডাকছে,
আউশের ক্ষেতে উঠে সোনা ব্যাঙ হাঁকছে।

ভ্রমরেরা ছুটে আসে আঁকা বাঁকা ছন্দে,
বেলি, চাঁপা, জুঁই, কেয়া, কামিনীর গন্ধে।
ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পানি তালপাতা পিছলে,
আয় খোকা ঘর ছেড়ে তার সাথে ভিজলে।

উঠানের কূল ঘেঁষে বুক ভরা আশাতে,
পিঁপড়েরা বসে আছে যেতে হবে বাসাতে।
কাগজের নৌকাটা নিয়ে আয় জলদি,
ছোট ছোট প্রাণীগুলো খেয়াঘাটে বন্দি।


জলপুকুর
সিহাব

মেঘদুপুরে আকাশ কালো, রাত্তিরেতে বৃষ্টি এলো,
কোন সকালে আসবে তুমি! ঝুম বর্ষায় ভিজিয়ে দেব।
স্মৃতিমাখা কদমের ডালে একজোড়া শালিক বসে ছিল,
একটা বাতাস মবে হলো আবার যেন বৃষ্টি এসেছে,
আবার কোথায় উড়ে গেল সেই শালিকের জোড়া,
আজ মেঘ হয় বৃষ্টি জলপুকুরে জমে ব্যাঙের খেলা,
কোন সকালের আলসেমিতে ভাঙ্গল ছেলেবেলা,
ভাবতে ভাবতে আধার হলো বৃষ্টি এলো নেমে,
হাত বাড়িয়ে ভেজাবো ভেবে বৃষ্টি গেছে থেমে,
হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুতে বড্ড মায়া হয়,
কবে ভিজাবো একযুগল হাত, একরাশ হাসি।

জলের তৃষ্ণা
আবুল বাশার শেখ

এতো জল তবুও তো তৃষ্ণা মিটেনা
হাহাকার এই জল নিয়ে।
ক্রুদ্ধ আকাশ ফেলছে সব জল
ক্ষুধিত মাটি ভোগ করে
যৌবনহারা খাল, বিল, হাওড়, বাওড়, নদী কিংবা
উত্তাল সাগরও গ্রহণ করে আকাশের ফেলে দেয়া জল।
বলতে পারো এতো জলেও তৃষ্ণা মিটেনা কেন!
অজ্ঞতা চৌদিকে দাপিয়ে বেড়ায় সবক্ষনে
পশুত্ব জেগেছে এখানে ওখানে সবখানে।
শিঁকড় ভুলা গাছ দিনে দিনে সবুজের শত্রু
যান্ত্রিক সভ্যতার পদাঘাতে হচ্ছে মস্তিষ্ক বিকৃত,
জলের তৃষ্ণা হাওয়ার বুকে হাহাকার করে
প্রকৃতির পরতে পরতে জলের তৃষ্ণা।







কাটে অবসাদ
শাহানারা ঝরনা 

মনকথা নিয়ে ছোটে মায়াবতী মেঘ
দেখে মন ভরে তবু বাড়ে উদ্বেগ
বৃষ্টিরা ছোঁয়া দেয় বালিকার গায়
বুনো বুনো সুখগুলো দূরে ভেসে যায়।

কেউ কেউ মোনালিসা প্রেমে দেয় ডুব
কারো বাড়ে ব্যাকুলতা কারো জ্বালা খুব
ভিনদেশি পথিকের চোখ ভরা জল
অসময়ে বনপাখি করে কোলাহল
মানবিক হয়ে কেউ করে দুখী ভাব
কারো ব্যথা দেখে হাসে বাবু বিবিসাব
শাদা নীল কষ্টেরা বোনে মিহিতাঁত
মিনতির জলে ভেজে পাললিক রাত।

মাঝে মাঝে বেড়ে যায় নাগরিক ঋণ
ঋতুমেয়ে কাছে আনে জলে ভেজা দিন
বালিকার দিনগুলো আশা নিরাশার
মৌসুমি সুরে হেসে দোলে বারবার
বরষার জলধারা ডাকে আয়-আয়
শুচিতার মনবাঁশি বাজে নিরালায়
নূপুরেতে বাঁধা পড়ে জলছবি দিন
দেখে বুঝে কেউ হয় উদাসে মলিন।

বালিকার চোখে ভাসে কার কালো চোখ?
সে কি বলে, ‘এই মেয়ে-তোর ভাল হোক?
হয়তো-বা, কিংবা সে থাকে নীরবেই
অভিমানী হয়ে ভাবে তাঁর কেউ নেই!
 নিয়ে হাসি, সুখ, দুখ, জয়-পরাজয়
বালিকারা এভাবেই চিরসুখী হয়
মুঠোতেই ধরে রাখে সূর্য ও চাঁদ
বৃষ্টির জলে কাটে সব অবসাদ।



অতৃপ্ত ঝড়ের সকাল
ফারুক মোহাম্মদ ওমর 

বৃষ্টি এলেই আমি ব্যস্ত হই
তোমার ভালোবাসায়
অথচ তুমি প্রতারণায় গিলে খাও
আমার ঔরসজাত প্রজন্ম ।

সেদিন দুপুরে তোমার মুখে বৃষ্টির জলছাপ দেখে
বললাম ওগো পুত্রবতী,
এসো আলিঙ্গন করি আসমানী প্রেমে
যদি ত্রিশ বছর সময় দাও
তোমায় দেব নতুন প্রজন্ম এইসব ফুলের বাগান ।
তুমি মুখ ফিরিয়ে জিতে যাও
আমি হেরে যাই দেখি অতৃপ্ত ঝড়ের সকাল।

বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০৩

বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০৩



বৃষ্টিবন্দনা
সাব্বির হোসেন

ক্লান্ত দেহটাকে সবুজ গালিচায় পেতে দিয়েছি
অপলক দৃষ্টিতে তপ্ত রৌদ্রে উদাস ঘুঘুর মতো,
আমি চেয়ে আছি মেঘপুঞ্জের আসমানে
খাঁ খাঁ করা মরিচিকায় হা করে জল খোঁজে কাক পক্ষী ও সবুজ পতঙ্গ।

চোখ খুলে দেখি হঠাৎ শীতল হাওয়ায় দোল খায় ডালে ডালে গুচ্ছ কাঠগোলাপ
ঝুম বৃষ্টিতে স্বপ্ন দেখি গাঁয়ের মেঠো পথে দাঁড়িয়ে ধরে আছি কোন এক রমনীর হাত,
কালো মেঘের আড়ালে মুখ লুকিয়ে দেখি সূর্যের তেজহীন রেখা
বর্ষণসিক্ত ভেজা শরীরে একবার বলে উঠুক রমনী; আমাকে ছেড়োনাকো একা।

বলি চেয়ে দেখো আজ; নিস্ফলা মাঠ হাসছে নতুন যৌবনে
কচি বালকেরা মাতিয়েছে শূন্য উদ্যান কাচা মাটির ঘ্রাণে,
আহা! একি শীতল পরশ বর্ষা ধৌত দিনে বাংলার খালে বিলে
নগ্ন পায়ে চলো দুপা এগোই তোমার নূপুরের তালে তালে।

রমনী; তুমি ছেড়ে দাও তোমার অন্ধকার শিল্পের খোঁপা
জলসিক্ত চুলে আমি গুজে দেবো আমার কাঠগোলাপের থোকা,
উড়ে আসে ভীনদেশী পাখি আর লজ্জা ভেঙ্গেছে শাপলা সালুক
এই বাদল দিনে রমনী তোমার সবটুকু চাওয়া পাওয়া শুুধুই আমার হোক।


এক পশলা বৃষ্টি দিও
সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান

তুমি এমন একটা আকাশ দিতে পারবে কি আমায়?
যে আকাশে মেঘ থাকলেও চাঁদ তারা ঢাকা থাকবে না।
তুমি এমন কিছু বাতাস দিতে পারবে কি আমায়?
যে বাতাসে ধূলো উড়লেও বৈশাখী ঝড় বয়ে যাবে না।
তুমি এমন একটি সাগর দিতে পারবে কি আমায়?
যে সাগরে ভয়ংকর ঢেউ থাকবে কিন্তু আমি ডুবে যাব না।
তুমি এমন একটি ভালোবাসা দিতে পারবে কি আমায়?
যে ভালবাসায় বিরহ থাকবে কিন্তু তুমি হারিয়ে যাবে না।
নয়তো এক পশলা বৃষ্টি দিতে পারো কি আমায়?
যে বৃষ্টিতে আমি কাঁদবো কিন্তু কেউ তা দেখবে না।


জানালার কাঁচে রেখে এসেছি 
মোস্তফা হায়দার 

সে দিন জলের কাপড় খোলে
আকাশের চাদরে রেখেছি দু’জনের হাত
ঘনমেঘের ঘনঘটায় বকেরা দিশেহারা
বাতাসের গায় ওড়ে চলেছে বিশ্বাসহীনতা!

সন্ধার পূর্বেই এক ঝাঁক বোকার দল এসে
আঁড়ি পেতে শাড়িতে দিয়েছে টান
চশমার ফ্রেম ভেঙ্গে লুটিয়ে পরে জলের পাদুকায়
সন্ধ্যার লাইটের কথা মনেই ছিল না সেদিন।

বিশ্বাস আর মৌনতার মিছিলে
সে দিন হেরে গেছে বুকপকেটের ভালোবাসা
ঈশ্বরে কাবু হওয়া চেতনার বারান্দায় দেখি
ভুল মানুষের ভুলের ইশারা!

হারিয়ে গেছি সে দিন জলের সোহাগে
বাসের জানালার কাঁচে রেখে এসেছি
লুকিয়ে ইশারা করা এক বিস্ময়ের নাম
আজো মনে পড়ে জলে গতর খোলার দৃশ্য!

আর এসো না! হয়ত হবে না চোখাচোখি
দৃশ্যের মায়ায় পড়ে লিখে যাবো শেষটুকু
কখনো মনে পড়লেই মোরাকাবায় পাবে
মনে রেখো ধ্যান আর মননেই জলের ক্বদর


বৃষ্টিবিহীন আষাঢ়ের দুপুরে
মাহমুদ নোমান 

হলুদের পাতা কুঁটছে কেউ
বটকীর ঠুঁটে,
বরুণো দাপিয়ে বেরুচ্ছে
জলীয় ধোঁয়া-
জিওল মাছের ঝোল
মাটির চুলায় বুদ্বুদে,
বড্ড মেজাজি সুবাতাসে
দুলে ওঠছে বাগানবাড়ির শায়ের
কাফী রাগে-
নয়া জলপাই রঙের পাতায়
খামচি দেওয়া রোদ,
বাড়িয়ে দিচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ
নাকফুলে চকমকে হেসে
চিনচিন ব্যথায় খোঁজে,
কারো বাড়িয়ে দেওয়া
অমন কাতর হাত...

তুমি সেই ধূমায়িত মেঘ
বাবুল চৌধুরী

ধূমায়িত মেঘ যাকে বলে, জীবনের যাঁতাকলে
তাকে কোথাও দেখিনি।
করোটির ভেতর থাকে সজল মেঘেরা দলেবলে
মেঘ পরবাসী তা জানি।
টাপুর-টুপুর শুনবো ইচ্ছে হলে, কতো ছলেবলে
তোমাকে দেই  হাতছানি।
তুমিই খরা তুমিই মেঘ, যাই তোমার কলরোলে-
তুমি দরোজা খোলনি।
উন্মাদ মেঘ হয়ে সেদিন আকাশ ছাড়িয়ে গেলে
ছাই হয়েছিলে নিজের অনলে।

বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০৪

বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০৪




নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
সাদিক আল আমিন 

এইতো যখন সন্ধ্যের মেঘেরা ঢলতে লাগলো ভেজানোর নেশায়,
তখন আমি রবিউল স্টোরে, রঙ চায়ের ঘ্রাণে ডুবে একাকার
নারায়ণপুর আমার পরিচিত অসুখ, কতো ত্রস্তদিনের অহংকার!
সয়ে নিয়ে আছি বহুকাল থেকেই...

স্কুলমাঠের সামনে ইতস্তত এদিকওদিক দেখা কিছু নতুন মুখ দেখে
নস্টালজিক আমি এইসব রৌদ্রছোঁয়া বৃষ্টির ভরাবুক কান্নায়
খুঁজতে থাকি কোনো কলহাস্য আবেগ, কোনো কাঁটাহীন ফুল
প্রাথমিক পড়ুয়া ছাত্রীদের চুলে গোঁজা; হাতে শাপলা, মৃদুহাসি ঠোঁটে...

তৃতীয় শ্রেণী, বাংলা, উপস্থিত বারো জন, ছাত্র সাত, ছাত্রী পাঁচ
হলুদ সব অনুচ্চ হাই আর লো বেঞ্চ, নিকশ ব্ল্যাকবোর্ড, সাদা চক
আজ আমি এক পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, তৃতীয় শ্রেণীতে বসে
চকচকে স্লেটে লিখছি বর্ণমালা, বাইরে বৃষ্টি, বাংলা আপা শেফালি
পড়াতে থাকেন ...

হাতে রঙ চায়ের তীব্র ঘ্রাণের সাথে সাথে সয়ে যায় এইসব দিনযাপন
জল আর কাদার রন্ধ্রে মিশে যেতে যেতে ভাবি, কখনো কি
এই বৃষ্টির আগমনী মেঘেদের মতো কোনো সহপাঠিনীকে
ভিজে ভিজে মাঝপুকুর থেকে একটি শাপলা এনে দেবার অদ্ভুত নেশায় বুঁদ হয়ে ছিলাম?


আঙ্গুলের ডগায় শীত
সাকিব শাকিল

নাকফুল পড়ে গ্যালে ভাঁটফুল জন্ম নেয়
আঙ্গুলের ডগায় শীত নামে আষাঢ়ে বিকেলে
এইসব বিধবা দিনে কার ঘরে জল ঢুকে পরে;
অপেক্ষার করাঘাতে তার ঝরে যায় বিষণœ মৌরিফুল।

করগুণে প্রণয়ী মাস পিছনে ফেলে
ভালবাসার ব্যাগে করে কিনে আনি
ভিজে মেঘের প্যারাগ্রাফ।



মেঘবালিকা
সামিমা বেগম

বর্ষা এলে, মেঘবালিকা ফেলে চোখের জল
জলের বুকে জলকেলিতে মত্ত শতদল।
কদম, কেয়া মিষ্টি হেসে গন্ধ বিলায় সুখে
মেঘবালিকা রূপে আমার সোহাগ বাড়ে বুকে।

দূর আকাশে মেঘবালিকা উড়ায় মেঘের ভেলা
সূয্যিমামা নিত্য করে লুকোচুরি খেলা।
হরিৎ বরন গাছেরপাতা সতেজ পাখা মেলে
মনের সুখে ব্যাঙ-ব্যাঙানি ডোবার জলে খেলে।

বৃষ্টিজলে নাইতে নামে খোকা-খুকুর দল
মেঘবালিকা নিয়ে আসে অথৈ পানির ঢল।
সবার মনে ইচ্ছে জাগে জলে ভাসাই গা,
বাঁশবাগানে আলো খুঁজে শাদাবকের ছা।

মেঘবালিকা ধরার বুকে বৃষ্টি হয়ে আসে
মনটা কেমন মেতে ওঠে ছন্দ অনুপ্রাসে।
এমন দিনে হৃদয় মাতে মেঘবালিকার রূপে
ইচ্ছে করে পদ্য লিখি মন থাকে না চুপে।


আষাঢ়ে পাগলামি 
তপনকান্তি মুখার্জি 

এ এক অন্য আষাঢ়- অন্য বর্ষা ।
পাগলাঘন্টি বাজিয়ে নামে মনমুলুকে ,
বৃষ্টির ছাঁটে হাঁটে আকুল বিশ্বাস,
গহন নিশ্বাস আর নিশির আহ্বান।
মনের আঁচলে ওড়ে পিপাসিত যৌবন ,
পাগলেরা অংক কষে ধারাবাহিক সুরে ।
বৃষ্টি ঝরে চলে, আষাঢ়ে পাগলামিও ।

বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০৫

বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০৫



বৃষ্টিধারা
দিবাকর মণ্ডল

ঐ শনশন বায়ু ঘনঘন বাজিছে- বাতাস বহিছে
কড়কড় রবে বজ্র ঘোষণা, গুরু গম্ভীরে গাহিছে--
                                            কে গান গাহিছে !
আসমান হল সহসা উতলা ,                                                  
শুরু হল যেন মহাকাল খেলা,
                         চকচকি করে তরবারি খোলা
                                  অসুরের মাথা কাটিছে ।

শুরু হল ধারা পাগলের পারা ছুটিছে-
                                     ধারা বহিছে ।
নদী ফুলে ফুলে মহা কলরবে নটরাজ সেজে ধাইছে-
                                         কোথায় বহিছে ?
তরু শাখাশাখি নর্তনশীলা
মেলে দিয়ে পাখা করে কত খেলা
আষাঢ়ের শেষে পড়ে থাকে বেলা-
                               সবুজের ধারা ভাসিছে।

চোখের জলে বৃষ্টি ঝরে
রফিকুল নাজিম

আকাশতলে বৃষ্টি জলে ব্যাঙের ডাকাডাকি
খেলার মাঠে হল্লা শৈশব কাদায় মাখামাখি।

অলসবেলা কাটে হেলায় ঘরের দাওয়ায় বসে
বৃষ্টি এসে ভেজায় উঠোন সুখের হিসেব কষে।

উজান জলে পুঁটিমাছের লুটোপুটি খেলা
আমের শাখে জামের রঙে হৈচৈ সারাবেলা।

পাটের আঁশের মিষ্টি ঘ্রাণে মাতাল ছেলেবেলা
কাশবনে চোখাচোখির লুকোচুরি খেলা।

বাদলা দিনে মায়ের হাতের শিমের বিচি ভাঁজা
দাদুর ঘরে গল্প জুড়ে ভাবছি আমিই রাজা!

টিনের চালায় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি যখন ঝরে
সেই বিহানের উষ্ণছোঁয়া উদাস মনে পড়ে।

এখন আমার শ্রাবণ আসে মেঘের পালকি চড়ে
বর্ষা গেলেও আমার চোখের বৃষ্টি কেন ঝরে?



এক বরষায়
আরিফুর রহমান  

বৃষ্টি পোহাতে চাইলে রঙ মাখতে হয় শরীরে, মনে-
মেঘের রঙ, কাদা মাটির রঙ।

বিবাহযোগ্য মেয়েটি ক্যাফেটেরিয়ায়,
প্রেমিকের মুখোমুখি, এক আকাশ মেঘ চোখে-মুখে!

কনে দেখা আলোয় অপেক্ষারত ছেলেটি স্বপ্ন বুনছে।
দূর থেকে ছুটে আসছে শ্রাবণঘন বৃষ্টি।
প্রিয় ব্ল্যাক কফি রেখে আসা ক্লান্ত দুটো পা থেমে যায় নতুন ঠিকানায়।

মেলে ধরা একটা ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে,
ওরা কেবল শুনতে পায়, ছুপ্ ছুপা ছুপ্ ছুপ্ ঝুপ্ ঝুপা ঝুপ্ ঝুপ্

পেছনে ঝরে যায় ফেলে আসা সময়ের নানা রঙ।



মনখারাপের বৃষ্টি যখন নামলো
অমিতাভ মীর

মনখারাপের বৃষ্টি যখন নামলো চোখের পাতায়,
ঝুলবারান্দার শার্শিতে বৃষ্টিকণা  স্মৃতিগুলো হাতায়।
কাজল মেঘের অভিমানে আকাশ পাগলপারা,
ঝমঝমিয়ে মাটির বুকে নামলো শ্রাবণধারা।

মাটির দহন নিভলো যখন শ্রাবণ ধারায় ডুবে,
আমার বুকের সুপ্ত সুখ তখনই গেল উবে।
ছলছলিয়ে চোখের আকাশ ঝরছে নিরবধি,
কলকলিয়ে উঠলো দুলে বুকের গহীন নদী।

সেদিন এসেছিলো পাশে কেউ গভীর ভালোবেসে,
ভুল বুঝে সেও গেল চলে আনমনে বাঁকা হাসি হেসে!
গরম কফির ধোঁয়ায় স্মৃতির আবেশ জুড়ায়,
ঝুলবারান্দার শার্শিতে বৃষ্টিকণা স্মৃতিগুলো হাতায়।

অঝর ধারার বর্ষণমুখর এক উদাসী সন্ধ্যায়,
ভেজামন নিয়ে কেউ এসেছিলো আমার আঙিনায়।
মজেছিলো দু’টি ঠোঁট গরম কফির কাপের ছোঁয়ায়,
বুকের নদীর পাড় ভেঙেছিলো সেই শ্রাবণ সন্ধ্যায়।

তারপর কেটে গেছে অনেক বর্ষণমুখর শ্রাবণ,
বুকের নদীর পাড় ভাঙে আজো চোখের প্লাবন।
আজ মন বেসামাল মনখারাপের শ্রাবণ সন্ধ্যায়,
ঝুলবারান্দার শার্শিতে বৃষ্টিকণা স্মৃতিগুলো হাতায়।

বৃষ্টি নামে
হামীম রায়হান   

বৃষ্টি নামে থেমে থেমে,
বাইরে যাওয়া দায়,
আকাশ ফুটো করলোটা কে!
তার তো দেখা নাই।
কচুর পাতায় বৃষ্টির জল
করছে কেমন টলমটল,
ঠাণ্ডা জলে কাটছে সাঁতার
কৈ, মাগুর আর শিঙের দল।
ডুব সাঁতারে পুকুর পেরোয়
হাঁসের দুষ্ট ছানা,
নীল-আকাশি রঙে দেখো
সাজে কচুরিপানা।

বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০৬

বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া  : ০৬



এসিডিক   বৃষ্টি
সাব্বির শাওন

আমাদের শহরে আজও বৃষ্টি নামে
ভাতের পাতিলের তলার মতো পুড়ে প্রথম আসমান।

পরপর দু’দিন যোহরের ওয়াক্তে তোমার বার্তা এল-
বৃষ্টির ফোঁটায় বিদ্ধ হচ্ছে কক্স-বাজারের জমিন, আর আমার হৃদযন্ত্র
বিজলির তাপে পুড়ে গেছে এয়ারটেলের নেটওয়ার্ক।
তাকিয়ে দেখি...
রাজউক জোনাল অফিসের বন্ধ সিঁড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে দু’টি মানুষের ছায়া
ছেলে ছায়াটা মেয়ে ছায়ার গালে চুমু খায়-
রোদের তাপে লবন জমে আমার ঠোঁটে।
এই প্রথম আজ অনুভব করলাম বৃষ্টিতে সালফার থাকে
রাজউক জোনাল অফিসে যেতে উদ্দত হলে পুড়ে গেল দু’টি চুল!
আমাদের শহরের নিখোঁজ ছাতাটা তোমার কাছে
মনে আছে আমরা কাছাকাছি থাকলেই বৃষ্টি নামত!



বন্যা 
শরীফ সাথী

উতলা নদীর ঢেউ, বেবাগা বৃষ্টির ছন্দ
আনন্দ ঢলে বিভোর। পাগলের মত উন্মাদ,
ভেঙে বাঁধ ক্ষেতের ফসল খেতে মরিয়া।
জলে জল সমতল করে
ক্ষমতার অপব্যবহারে ঘরবাড়ি চুবিয়ে
নিরীহ সহজ সরল মানুষকে বানভাসি করতে ব্যস্ত।
আমি গরীব আমি অসহায়!
বন্যা বন্যারে তুই থাম
আমি আর পারি না।





মেঘের শাড়ি পরনে
মজনু মিয়া 

অপরুপা মেঘ কন্যা তার পরণে মেঘ শাড়ি
হিমেল হাওয়ায় দোলে দোলে যাচ্ছে ফিরে বাড়ি।
উল্টা সূর্য্যের ঝিলিক লেগে রং ধনু রং সাজে
কভু ঝরে কভু পড়ে নানান রুপের মাঝে।

আয় ছুটে আয় আমার বাড়ি ভাঙ্গা ঘরে থাকি
সূর্য্যালো ঠিকরে পড়ে আর মেঘেরা দেয় ফাঁকি।
লাগছে ভালোই তোমার বাহার চুমু দিয়ে যাও মুখ
দুচোখ ভরে দেখি তোমায় শান্তি পাক তৃষ্ণার বুক।

আসো যদি আমার বাড়ি দেবো ভালোবাসা
মেঘকন্যা গো দিয়ও না কষ্ট  পূরাও মন আশা।



মনের জানালা
সোমা মুৎসুদ্দী

তোমার বাড়ি নীল আকাশে,
তোমার বাড়ি মেঘে।
তোমার বাড়ি আমার মনে,
আমার সব আবেগে।
তুমি আমার স্বপ্ন মধুর,
স্বপ্নেরি হাত ছানি।
তুমি আমার দোল-দোলানো,
ছোট্ট হৃদয় খানি।
যেখানেই থাকি তোমার কথা,
শুধুই আমি ভাবি।
তোমার জন্য মনের জানালা,
প্রতিদিনই খোলা রাখব।

উপাখ্যান
সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা

ভুবন বিচ্ছিন্ন এক নিঃসঙ্গ কপোতের মতো
উড়ে উড়ে দেখেছি কত নদী আর
সমতলের আবারিত সবুজ।
শ্যাম ঘন সব বনরাজি আর
কতো সুবিশাল পাহাড়,
শব্দ করে ছুটতে দেখেছি কতো
উপলময় ঝর্নার খেয়ালী পথ চলা,
কতো নদী গিরিপথ ধরে বয়ে যায় ভরা বর্ষায়,
অব্যক্ত কতো অশ্রু ঝরতে
দেখেছি ফোঁটায় ফোঁটায়।
অপন আবহে অল্প অল্প করে পাঠ করেছি
সজল চোখে কতো হৃদয়ভাঙার গল্প!
উম্মাদের মতো সাময়িক দ্রোহের আছে
বিচিত্র কতো উপাখ্যান!
আনত নয়নে গড়তে দেখেছি কিছু সুখের নীড়,
জীবনের এই বোধে অসীম বিচিত্রতায়
স্তব্দ হয়ে তাই চেয়ে থাকা।
সৃজনকর্মে হারিয়ে যেতে দেখেছি
কতো প্রসেনিয়াম মন!
তখনো একা ছিলাম, শুধু অন্ধ অনুগামী হয়ে;
জাগতিক নিয়মের এই গতিপথ ধরে
একাকী পরিভ্রমন করে গেলাম ।
কতো সহস্র ফেনায়িত ধবল সামূদ্রিক ঢেউ
বিলীন হয় শুষ্ক বেলাভূমিতে!
এভাবেই ঘটে চলে কতো
বর্ণাঢ্য জীবনের বর্ণহীন চিরপ্রস্থান!

বৃষ্টিস্নাত দিন

বৃষ্টিস্নাত দিন


বৃষ্টিস্নাত দিন
মোহাম্মদ ছানা উল্যাহ

সকাল ৯টা বাজার আগে স্কুলের ড্রেস পড়ে রওনা দিতাম, স্কুল ১০টা থেকে। বর্ষার দিনে স্কুলটা কে মনে হতো সীমাহীন দুরে। পথিমধ্যে সঞ্চয়ন মাঠ (বর্তমানে বায়তুন নুর জামে মসজিদ যেখানে অবস্থিত)। জামা টা খুলে, সেই জামা দিয়ে বই, খাতা, পেন্সিল, রাবার কে পেচিয়ে পলিথিনের ব্যাগে ভরে কোন গাছের নিচে রেখে নেমে যেতাম মাঠে। কখনো কখনো কোন বড় ভাই, কোন মুরব্বি শরীর খারাপ করবে বলে মেরে, জোর করে মাঠ থেকে তুলে দিত। কখনো কখনো এই খেলা চলত দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত।

বৃষ্টিস্নাত যেদিন স্কুল বন্ধ থাকতো সেদিন বহুরূপী মাঠ, সঞ্চয়ন মাঠ বা স্কুল মাঠে খেলা শুরু হতো সকাল বেলা। ১০/১১ বা ১২টায় আর তা শেষ হওয়ার কোন টাইম টেবিল ছিল না। কর্দমাক্ত হাঁটু পানিতে খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে দেওয়া হতো খাওয়ার বিরতি। এই বিরতিতে মাঠেই বন, বিস্কুট, কলা, পানি খেয়ে আবার খেলা শুরু। যা চলত সেই সন্ধ্যা পর্যন্ত। সারাদিন খেলার পরে বাসায় গেলে শুরু হতো বাবা/মায়ের বকা/বেতের খেলা।
সেই বৃষ্টির দিন গুলো খুব মনে পড়ে।

এখনো বৃষ্টি হয়, বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে অফিসে যাই। মাথায় দুফোঁটা পানি পড়লেই শরীর খারাপ করে। সর্দি, জ্বর, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি।

পার্থক্য টা তরুণ, যুবক থেকে মাঝ বয়সী।



লুইজালে’র মাহমুদ নোমান

লুইজালে’র  মাহমুদ নোমান



লুইজালে’র 
মাহমুদ নোমান

অমিত গোস্বামী 

নন্দিতা ও শিবপ্রসাদ পরিচালিত ‘বেলাশেষে’ সিনেমাটা দেখেছেন ? ইউটিউবে আছে। অভ্যাস বনাম প্রেম এই দ্বন্দ্বের ওপরে ছবি। লেখার ক্ষেত্রে গদ্যরচনা অনেকটা অভ্যাস, কিন্তু কবিতা রচনার সাথে প্রেমের তুলনা করা যায়। কারণ ছোট পরিসরে বেশি সূক্ষ্মতা দাবী করে। গতকাল এই ‘বেলাশেষে’ ছবিটি দেখতে দেখতে কবি মাহমুদ নোমানের প্রকাশিতব্য কবিতা সংকলন ‘লুইজালে’র কথা মনে পড়ল। প্রথমত নামটা অসাধারণ। এপার বাংলায় তথাকথিত এলিট কবিরা এর অর্থ বুঝবেন না। কিন্তু কবিতা পড়ার পরে বুঝবেন। মাহমুদ নোমানের সাথে আমার কখনও দেখা হয় নি। ফেসবুকে ওর কবিতা পড়েছি। ভাল লেগেছে। সে কথা বলেছিও। কিন্তু সে যখন ‘লুইজালে’র পা-ুলিপি পাঠালো খুব একটা গুরুত্ব দিই নি। কিন্তু পা-ুলিপি খুলে বসতেই কবিতাগুলি আমাকে বেশ টেনে ধরল। বুঝলাম স্বল্প পরিসরে শব্দ নিয়ে খেলার মুন্সিয়ানা সে ভালই রপ্ত করেছে। তাহলে কি সে এমন কবিতা লিখেছে যা জয় গোস্বামী, রুদ্র, শ্রীজাত বা কামাল চৌধুরীর আবির্ভাব লগ্নের কবিতার সাথে তুলনীয়? নাহ, তা নয়। তবে ভাল কবিতার আক্রার বাজারে তার আবির্ভাব অবশ্যই সাড়া জাগানো।
মাহমুদ নোমান একটি অনলাইন পত্রিকার সাথে কথা প্রসঙ্গে বলেছেন ‘কবিতায় শব্দের ব্যবহারে আমি যে ভাষায় বেড়ে উঠেছি তাকে অস্বীকার করি নি। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার আমি কবিতার বাক্যে জুড়ে দিয়েছি পুরোপুরি আনন্দে’। এখানেই নোমানের অকপট স্বীকারোক্তি। এখানেই মাহমুদ নোমান সার্থক। তাই ও লিখতে পেরেছে-
‘আমি মরলে সিনার উপর রুয়ে দিয়ো মান্দার ফুলের গাছ। /
লাল টুকটুকে ফুল ফুটেছিলো বেহেশতের জমিনে,/
গায়ে যুবতী কাঁটা বিঁধেছে এ কলিজায় ফাগুনের মুরালি বাতাসে।/
ফেসবুক এখন অনেক নতুন ফর্ম, অনেক নতুন ভাবনার ভার্চুয়াল পৃষ্ঠপোষক। কখনও কখনও কবিদের নাম গৌণ হয়ে যায়। শব্দ বা ছন্দগুলো জেগে থাকে পাঠকের মনে বহুকাল। বিশুদ্ধবাদীরা নাক কুঁচকোতেই পারেন। কিন্তু সময়ের বহমানতা অনেক সো-কল্ড নন-সিরিয়াস প্ল্যাটফর্মকেও সিরিয়াস করে তোলে। ফেসবুকের একটা বড় সুবিধে, ইমিডিয়েট ফিডব্যাক। মাহমুদ নোমান এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করেছেন নিজস্ব স্টাইলে। সেক্স নিয়ে তার সরাসরি সাহসী মস্তব্য যে কোন স্বাভাবিক মননের মানুষকে মুগ্ধ করবেই।
‘চৈত্র ষোড়শীর স্তন দেখাল ডুবুডুবু পুকুরের জলে...’
বাঙালি কবিরা মধ্যরাতের জোছনায় দাঁড়িয়ে থাকা নিয়তির সামনে ঘাড় গুঁজে বসে লিখে চলেছেন। দেবী নিয়তি মাঝে মাঝে এক বাটি খাবার, এক ঘটি জল এগিয়ে দিচ্ছেন। এই ঘটিবাটিই হল বাংলা কবিতার একটা লাইফলাইন। তাই মাহমুদ নোমান তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন ‘বাবার সংসারের উদাসীনতায় লেখাপড়ায় অতদূর এগোন গেল না। আর্থিক অস্বচ্ছলতা আমাকে সাহিত্যের বিভিন্ন পাঠে বেশ ভুগিয়েছে। কোন সাহিত্যের আড্ডায় এ পর্যন্ত যাই নি বা কারো পরামর্শ আমি পাই নি’। তথাকথিত পড়াশোনায় এগোন বা না এগোন কোন বিষয় নয়। কিন্তু কবিতা পাঠের ক্ষেত্রে শিক্ষার প্রয়োজন আছে। কবিতা পড়ার একটা পাঠ কিন্তু নিতেই হয়। সে জন্যে পরামর্শ বা গুরু প্রয়োজন। এই পাঠ পেলে নোমান লিখতেন না এই পঙ্ক্তিটি।
‘চ-ালি মেঘ দেখে দেখে চাষা
ধানের গলা কাটছে,
তপ্ত বালুকণার জলে...’

তর্ক করা যায়। কিন্তু পাঠকের চিত্রকল্প নির্মাণে বাধা সৃষ্টিকারী শব্দ এড়িয়ে যাওয়া ভাল। বাংলা কবিতায় এখন অনেক জ্ঞানীগুণীজন। কেউ বেঁচে আছেন চামচে পরিবৃত দোহারিদের নিয়ে, কেউ বেঁচে আছেন ফেসবুকে অন্যকবিদের স্রেফ খিস্তি করে। অন্যদের অকবি, আধা কবি বা ল্যাদা কবি বলে নিজেদের প্রকৃত কবি বলে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টায়। কিন্তু শেষ কথা বলেন পাঠক। কে কী তার নির্বাচন হয় পাঠকের হাতে। মাহমুদ নোমান আশা রাখি এই ধরনের আক্রমনের সামনে ভবিষ্যতে পরবেন। কিন্তু পীড়িত হবেন না। হবেন না যে তার প্রমাণ তিনি অবশ্য রেখেছেন। তার সাহসী সংলাপ...
‘মাকে যেদিন পতিতালয় থেকে আসতে দেখেছিল বরুণ-
কথারা অমনি এতিম হয়ে গিয়েছিল।‘
ফেবুতে নজর রাখলে চোখে পড়বে কবিতা নিয়ে হরেক কিসিমের খিল্লি খলবল করছে। কবিতা নিয়ে একশত আট প্রকারের গ্রপ। কবিতার পেজ। লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়। এই বন্যা প্রবণতা মাথায় রেখেই কি না কে জানে, সে দিন এক ফেবুকবি পোস্ট করেছিলেন, ‘এসো কমেন্ট এসো লাইক রাশি রাশি/নিসর্গের বিবমিষায় কবিতা আজ বানভাসি।’ এই চক্করে মাহমুদ নোমানের পড়লে চলবে না। পুরস্কারের প্রত্যাশায় ঘুরলে চলবে না। তাকে লিখতে হবে। সবকিছুই লিখতে জানতে হবে। মনে রাখতে হবে তার কাজ শুধু লেখা এবং ফলের আশা না করেই। মা ফলেষু কদাচন। অনেক লিখলে অনেকে তাকে ‘সবজান্তা’ বা ‘অলরাউন্ডার’ বলতেই পারে। তাতে আশা করি তার সাহিত্য অঙ্গনের কোন ঘাস ছিন্ন হবে না। কাজেই এবার মাহমুদ নোমানের ‘চরৈবেতি’ বলে এগিয়ে চলার পালা এবং কোন দিকে না তাকিয়েই....