কালো চশমায় রঙিন স্বপ্ন!



কালো চশমায় রঙিন স্বপ্ন! কাজী তানভীর

সম্ভাবনার এক  টগবগে তরুণের নাম সাজিদ।
মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সাজিদ সবার বড়। পড়া-শোনার ফাঁকেফাঁকে পরিবারের অনেকটা কাজ বাবার সাথে তাকেও জোগান দিতে হয়।  ছোট থেকে-ই বিশাল বিশাল স্বপ্ন নিয়ে মনোরাজ্যে ঘুরে বেড়ায়। বাবার অপ্রচুর আয়ে আর কতই বা কী স্বপ্ন দেখা! বাবার সীমিত আয়ে বিরাট একটি পরিবারের ভরণ-পোষণ। কতই না কষ্ট বাবার।  কালো চমশমায় রঙিন স্বপ্ন দেখে কী হবে আর! আখের আগামীটা কালোময় দাঁড়াবে।
এত সবের পরেও সাজিদের স্বপ্ন দেখতে কোন প্রকার অলসতা নেই! সাজিদের ভাবনা, স্বপ্ন দেখতে তো আর টাকা লাগে না! দেখতে থাকি, হয়তো একদিন স্বপ্নের দোরে সফলতা কড়া নাড়বে! ভাবারি কথা। কারণ, পড়া-শোনায় সাজিদ অনেক ভালো। চিন্তা চেতনাও সবার চেয়ে আলাদা। বন্ধু-পড়ার সবার ফিউচার প্লেন, কেউ ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কিছু। কিন্তু সাজিদের ইচ্ছে সে একজন ভালো মানোবিজ্ঞানী বা চিত্ত বিজয়ী একজন মহান মানুষ হবে । যার দ্বারা মানুষের মনের রাজা হতে পারে, মানুষের চিত্ত জয়ী করতে পারে, মানুষকে সত্যের সন্ধান দিয়ে অসৎ এর রাজ্য থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে।   তাই সে নাস্তার টাকা জমিয়ে গল্প,উপন্যাস,কবিতা,ছড়া ইত্যাদি বই বাজার থেকে সদায় করে আনতো। বাবা-মা না দেখে মত কাপড়ের ভেতরে করে নিয়ে গিয়ে রেখে দিতো ডেক্সের ভেতর।  সদা তালা লাগিয়ে রাখতো ডেক্সে, যাতে কেউ দেখে না ফেলে।
এসব বই পড়ার সময় কই!  সবসময় পরিবারের কাজে! ভালো করে কলেজের পড়াগুলো পড়ার সুযোগ মিলে না। সাজিদ খুব একটা মজার ফন্দি করেছে। "হুম। সুযোগ পেয়েছি, রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে যাবে, তখন বাড়ির অদূরে বাঁশ বাগানের খোলা মাঠটিতে চলে যাবো, আর সেখানেই পড়বো। নিঝুম রাত, জোছনাভরা আকাশ। হৈচৈহীন পরিবেশ। সব মিলে বাঁশতলার  রাতগুলো প্রকৃতির দারুণ পরিবেশন। মজার মজার গল্প, উপন্যাস, ছাড়া,কবিতাগুলো পড়তে কতই না মজার! পরিবেশটাতে সাজিদে অন্ত্যরাজ্য বয়ে যাচ্ছে প্রফুল্লতার আভা। খোরাক মিলছে বই পিপাসাক্ত হৃদের। ভুলে গেল পেছনের সমস্ত গ্লানি। আজ বেশ আনন্দমনা সাজিদ। বই পড়া শেষে ফের বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
এভাবে সুখময় রাত পার করছে সাজিদ। তার দৌড়হীন কলমে স্বচ্ছতা জোগাচ্ছে প্রতিদিন। লিখে যাচ্ছে রোজ নামচা, গল্প, কবিতা। প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে!  লিখনির ছোঁয়ায় কেড়ে নিচ্ছে পাঠকের মন-প্রাণ। পাঠকরা মত্ত হচ্ছে তার মনমুগ্ধকর লিখনিতে। সব যখন ঠিকঠাক চলছে, ঠিক তখনি মাথার উপর বয়ে যেতে শুরু করল ব্যার্থতার ধমকা হাওয়া। আটিয়ে উঠতে দিলো না সাজিদকে। পাঁও মুচড়ে ফেলে দিল ব্যার্থতার গর্তে।
সাজিদের বাবার মাথায় টাকা-কড়ির ভূত চেপে বসছে।
অবশেষে তাকে পড়ি জমাতে হলো ভূ্ঁই ছেড়ে বিভুঁই পানে। তার এখন প্রবাস জীবন।  এখন সাজিদ পরের গোলামী করছে। গ্রামের সেই বই পড়ার সুযোগ আর হয় না। সারাবেলা কাজ। এই সবের ফলাফল সরুপ। হেরে যেতে থাকে তার প্রতিভা। হেরে যায় তার পুষ্পময় মন-মানসিকতা! হেরে যায় তার সবই-সব!  আহ!

এমন হাজারো সাজিদের মত সম্ভাবনাময় তারুণ হেরে যাচ্ছে আর্থিক স্বচ্ছলতার কাছে। হেরে যাচ্ছে পরিবারের কাছে। হেরে যাচ্ছে নিজের কাছেও। কেন তোমরা কি নজরুলের নানরুটির দোকানে চাকরি করার মত সাড়াজাগা গল্প শোননি? তোমরা কি নজরুল যুবকের অনুসারী নয়? সে নজরুল যুবকই হলো সবুজঘেরা বাংলার জাতীয় কবি। তাই না! 
এসো আমরা আমাদের কাজকে ভালোবেসে করি, দৃঢ়তার সাথে করি। তার উপর পরিপূর্ণ আস্থাশীল হই!  ইনশাল্লাহ সফলতা আসবে।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট