শব্দমালা : সাফওয়ান আমিন

 



এক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পেঁচাল


চায়ের কাপে সময় খেতে খেতে, কথা হচ্ছিল আমাদের। 

আলোচ্য: গতদিনের ট্রেন এক্সিডেন্টÑ  

কিভাবে ফিনকি দিয়ে রঙধনু’র একাংশ আকাশে চিত্রায়িত 

হয়েছিলো, সেই সব গপ্পো-সমৃদ্ধ আদ্যপান্ত!


চুরুটের শব্দে শব্দে একজন বলেছিলো, লোনলিনেস! লোনলিনেস!

সংসার-স্ট্রাগলে টিকতে পারে নাই-ওয়ার্থলেস ফেলো!


‘ইঞ্জিনের মরন শব্দে, এÑলোকটার মরা দেহি নাই, শুনিও নাই।

পরে শোনলাম, হইহই! রইরই! সব দৌড়াইতেছে-

(মাইনসের দুকখু দেইখতি, মানসের কত উৎসাহ!)’


ঘোন-রোদ ঝরছিলো সেই সময়টায়- আঁষ্টে-গন্ধ ভেসে

আসছিলো মাছ আড়ৎ থেকে- গুমরে ওঠার আনন্দ 

একটা ভিখারির চোখের জলে জমে উঠছিলো, বাকি সব 

ভদ্দরনোকেরা ‘হা’ করে তাকিয়ে; দেখছে, ডালিমের কোয়া থেকে

রসটুকু কি করে মাটিতে মিশে যায়...


স্ট্রাগল সংক্রান্ত জীবনপাঠ


জীবন হলো সলিড তেজপাতা-  মানবজনমের আগের পর্ব

পাতার পূর্ব অবস্থা (কচি লকলকে রক্তিম আমিষসমেত) ! 

আর মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীতে আসাই প্রথম মৃত্যু-

এই মরে যাবার আগ পর্যন্ত এক স্ট্রাগল; মরার পরে আরেক!  

মরার পরে মসলা বানিয়ে; এখানে ওখানে বসিয়ে, কষিয়ে নেয়-  

কোষানোর পরো নাকি আবার কষানো হয়...

রন্ধনে-রন্ধনে-রন্ধনে; তেজপাতা, আবার অর্থগত ব্যবহৃত তেজপাতাই হয়ে যায়!  


স্বপ্ন, ভেঙে যায়  


একটা জোনাকের সাধ হলো উড়ে উঠবে চাঁদে। দেখবে চাঁদের যত

আছে আভা আর বিভা। তারপর জোনাক এতো এতো স্বপ্ন সঙ্গে নিয়ে উড়লো আকাশেÑ

উড়তে উড়তে ভোর হলো। ফিঙে দেখে খেয়ে নিলো। 


একবার হাওড়ের এক কাঁকড়ার ইচ্ছে হলো যাবে সমুদ্দুর।

দিনে যেহেতু হিংস্র মানুষের তীব্র উপদ্রব। তাই চাইলো রাতে বেরবে।

এক বুক স্বপ্ন নিয়ে কাঁকড়া বেরলো রাতে, যাবে সুমুদ্দুরেÑ

হাওড় ছেড়ে হাতরে উঠলো বিলে, যেতে যেতে এলো চোখা-রাত;

মানুষের নেই উৎপাত! এরপর তাঁকে শিয়াল নিলো খেয়েÑ



সম্পর্কের দিন শেষে 


অর্থাৎ তোমার সাথে সম্পর্কের দিন শেষে Ñ নীড়ের দিকে পাখিকে

উড়ে যেতে দেখেছি।

পাখির পেছনে খসে পড়লো একটা পালকÑ মূলত কারো মুখে ছুঁড়ে

মারা বিস্মৃতি!  

কেউ কেউ দেখলো আমার চোখে ভাসছে বিলীন আটলান্টিস! 



ঝরে যাওয়া পাখিদের কথা বা রোড এক্সিডেন্ট 


পাতা ঝরে যাওয়াই নিয়মÑ যেমন মানুষ ঝরে যায়।

নিয়মটা আমরা জানি, তবু শত বিরহে কাতর হই;

বিলাপের অন্তর্বাস ছুয়ে।


একবার ঝরে যেতে দেখেছিলাম একটা পাখিকেÑ

ডালে সাজানো বাসাসমেত! ছিল তাতে দু'টো ছানা

আর একটা ডিমও; ফুটে বাচ্চা বেরোবে এমন।


ফুটো ডিম তুলে ধরেছিলাম হাতেÑ যদি পারি বাঁচাতে!

খুঁজেÑখুঁজে শেষে সেই পাখি, দু'টো ছানা, ফুটো ডিম 

তুলে দিলাম এক অজ্ঞাতনামা খামেÑ খামটি উড়তে

দেখলাম বাতাসে।


পরে একদিন গল্পে গল্পে শুনেছিলাম, আমারই মত

কেউ ঝরতে দেখেছিলো আরেকটা পাখিকে, বাসাসমেত।

দুটো ছানা, ফুটো ডিমও ছিল তাতেÑ



জোনাক-যাপন


জোনাকের শোভা অন্ধকারেÑ রীতি মেনে, আলো ছড়িয়ে বিমুগ্ধ

করাই তাঁর সফলতা। ওতো আলোতে যাওয়া ভালো না, যতখানিতে

তাঁর আলোর গুরুত্ব ক্ষয়ে যায়!


দূরে চাঁদের কণার মত জ্বল জ্বল করে জ্বলা আলোগুলি, জোনাকেরÑ

এ আলো তাঁর নিজের জন্যে নয়। যেমনটা ফুল,

ফুলের ঘ্রাণ অন্যত্র ছড়িয়ে দেয়।


কেমন সুন্দর সে উড়ে ওঠে মৃদু মৃদুÑ দারুণ ব্যঞ্জনে! উড়তেই থাকে

সানন্দে, বাতাসের প্রতিটা আবেদনেÑ জোনাকের এই উড়ে ওঠা,

তার নিজের জন্যে কি? নাকি পাখিদের মতো মানুষকে অনুপ্রেরণা

দিতেÑ? যেমন করে উড়োজাহাজ ওড়ে


আর যদি বলি জীবনের কথা, সেও কি জোনাকের? যেমন 

মানুষের যাপিত জীবন নিজের জন্যে না-


ও বেলি ফুল গো


রাতের বেলিফুল গো তুমিÑ গড়িয়ে পরেছ বুকে

এমন ঘ্রাণে আসেনি সুনামিÑ মাতিনি তীব্র সুখে!

তমসাও এতো মধুর হয়? ছুঁয়েছে দূরের-বিধুর

স্পর্শে কেঁপেও নিধুবন ঠিক হয়নি এতো নিগূঢ়। 


পাপড়িগুলো সরস ঠোঁটের মত উড়ছে বাতাসে

সবই যে কেঁপে কেঁপে উঠে সুখ আগমনী ত্রাসে।

হেলে-দুলে প্রজাপতি উড়ে আসে..কামের-ঘ্রাণে

পুনঃপুনঃ মেতে ওঠে ত্রিজগৎ, নিধুবনের তানে!


প্রজাপতি পাখা ঝাপটায়Ñ ডাকে নানান সুরে;

ঘ্রাণ ছড়াইয়া ফুল গো তুমি আছো ক্যানে দূরে?

রাত্রি পোরায় ফুরাই আইলো, ফুরাবে কি সুবাস? 

তোমার ঘ্রাণের তীব্রতা আমি চাই যে বারোমাস।


আঁজলা ভোরে তুলে নেই গো সই তোমারি অবকাশ 

গ্রীষ্ম আর বর্ষার অপেক্ষায় ফেলি আজও দীর্ঘশ্বাস! 



আব্বার ইচ্ছেঅনিচ্ছে এর থেকে একটুও ব্যতিক্রম ছিলো নাÑ


ভালোবাসা বা সৌন্দর্য বিষয়ক


ধরো, মৃদুমন্দ বৃষ্টি নামার দিনে- কথা হচ্ছে মনে মনে, তোমার সনে।

এবং আরো কল্পনা করো, জানালার ওপাশে একটা বিল। তাতে পড়েছে জোসনা, করছে ঝিলমিল। রোগা বাতাস এসে লাগছে গায়। হারিকেন নিবুনিবু ভাবে জ্বলছে বিলের মাঝে একটা ডিঙি নৌকায়। এদিকে তুমি জানালায় বসে, তাকিয়ে আছ অপলক সেদিকেÑ আমাকে দেখা যায় না, অথচ আমি আছি সে ডিঙায়Ñ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি চাঁদ। আর নেমেছি নির্ণয়ে, কে সুন্দর?  তুমি নাকি চাঁদ!

এমন সূদুরে, দুজন দুপাশ থেকে ভাবছি দুজনকে মনে-মনে অনন্তকাল ধরেÑ এমন মুহুর্ত বারবার ফিরে আসছে দ্রুতলয়ে। দিন ধরো ক’ সেকেন্ডে শেষ। আবার ফিরে আসছে রাত; সুদীর্ঘ অথচ সুসংগত। হাজারটা বছর ধরে কেটে গেলো এভাবেÑ তুমি এপাশে আর আমি ওপাশে বিলে; ডিঙা, চাঁদরাত এবং তোমাকে নিয়ে অন্যরকম ফিলে!

ভালোবাসা বা সৌন্দর্য আমি এভাবেই গ্রহণ করি; দূর থেকে, মনে-মনে, খুব গোপনে অথচ আকণ্ঠমগ্নে-


ফুল ও শৈশব


আমি মরে গেলে সমাধিতে একটা ফুলের চারা রোপণ করে দিও।

আমার অস্থিজুড়ে ফুলের ঘ্রাণ সেঁটে যাওয়া চাই। মৃত্যুর পরেও যেন

সুঘ্রাণ নেওয়া যায়-


আমি মরে গেলে সমাধিতে আমার শৈশব-স্মৃতি, বিস্মৃতি পুঁতে দিও।

প্রিয় সব, বুকে পঁচে পঁচে গলে পড়–ক। আর সেই শৈশবি মন এসে নিত্যদিনই ঝরুকÑ


ফুলের চারা; ফুল আর শৈশবি ফোয়ারা; মিষ্টি ভুল: ছিটিয়ে দাও

মুঠি মুঠি বুকের উপরে। রেখো না অজুহাত।

ওমন কিছু ফুল ও শৈশবি-ভুল দিয়ে কাটিয়ে দিতে পারবো অনায়াসে দীর্ঘ কয়েকটি আখিরাত!



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট