দিনশেষে একটা মানুষের ‍মুখে হাসি ফুটাতে পারি; এটাই তৃপ্তি : মামুন বিশ্বাস

 



দিনশেষে একটা মানুষের ‍মুখে হাসি ফুটাতে পারি; এটাই তৃপ্তি...

-মামুন বিশ্বাস 


সময়ের দুর্বার এক সাহসী যোদ্ধার নাম ‘মামুন বিশ্বাস’। সিরাজগঞ্জের কৃতি সন্তান ‘মামুন বিশ্বাস’ ফেসবুকের মাধ্যমে গরীব-দুঃখী, অসহায়, নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষের কাছে প্রতিনিয়তি পৌছে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী । দিনরাত প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় অসহায় মানুষের অভাব মোচনের যে কঠিন ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন ‘মামুন বিশ্বাস’ সেটা সত্যি মানব ইতিহাসের এক বিরল উদাহরণ। তার এই মানবিক সেবা অব্যাহত থাকুক সারাজীবন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ‘ফেসবুক’ ব্যবহার করে যেভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন ‘মামুন বিশ্বাস’ সে বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন ‘সাপ্তাহিক ধানশালিক’ সম্পাদক ‘জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ’ । 





১.কেমন আছেন ভাইজান ?

মামুন বিশ্বাস : করোনা দুর্যোগের মধ্য আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। সবাইকে ঈদ মোবারক।

২.দিনকাল কেমন যাচ্ছে ?

মামুন বিশ্বাস: আলহামদুলিল্লাহ ভাল। পুরো রমজানে প্রত্যন্ত  গ্রাম থেকে যমুনার চরাঞ্চলের ছুটে চলেছি মানুষের ভ্যান গাড়ি, গরু, ছাগল  সহ ঈদ  খাদ্যসামগ্রী উপহার বিতরণ করার জন্য ।

৩.আপনি ফেসবুকের মাধ্যমে অসহায় মানুষদের সহায়তা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত । এই মানবিক সেবা কিভাবে এবং এর কবে থেকে শুরু করলেন ?




মামুন বিশ্বাস: ২০১৪ সালে আমার সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৩৮ ঘন্টা দুনিয়াতে বেঁচেছিল। এই ৩৮ ঘন্টায় ৪ টা হাসপাতালে নিয়েছিলাম তবুও সন্তানকে বাঁচাতে পারি নাই। সেই অর্থে সেদিন আমার পরিবারে টাকার অভাব ছিল না। কিন্তু আমার ছেলেকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। 

আমার একমাত্র বড় বোন প্রতিবন্ধী ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি বাবা-মা তাকে নিয়ে কত হাসপাতালে ছুটেছে চিকিৎসার জন্য । সেই অর্থে সেদিন আমার পরিবারে টাকার অভাব ছিল না। 

আর যাদের টাকা নেই তাদের তো আরও কষ্ট। আমার এই  কষ্ট থেকেই অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার কথা তখনই মাথায় আসে। তখন থেকেই ছুটে চলি অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে।  দুনিয়াতে সব চাইতে কষ্ট তার যার প্রতিবন্ধী সন্তান আছে। আর যাদের টাকা নেই তাদের তো আরও কষ্ট। সব কষ্ট থেকেই অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার কথা তখনই মাথায় আসে। তখন থেকেই ছুটে চলি ফেসবুকের মাধ্যমে অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে।

পাশাপাশি ২০১২ সাল থেকে বন্যপ্রাণী জন্য গাছে গাছে মাটির কলস বেঁধে বাসা বানানো, আটক বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও মানুষকে সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছি। 




৪.আপনি একা নাকি আপনার সাথে আরো কেউ আছে ?

মামুন বিশ্বাস : যখন আমি ফেসবুকের মাধ্যমে কাজ শুরু করি তখন পোস্ট দিলাম সাবেক শাহজাদপুর ইউ এন ও শামীম আহম্মেদ ও সাবেক এসিল্যান্ড আরিফুজ্জামান ব্যবস্থা করে দিতে সেই অসহায় মানুষদের পাশাপাশি ফেসবুকের বন্ধুদের পাঠানো টাকা দিয়ে চলতো প্রতিটি কাজ। ২০১৬ সালে জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত ইত্যাদি ‘ফেসবুকের ভিন্নতর ব্যবহার’ আমার একটি প্রতিবেদন প্রচার করে যা দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রচার পায়। এর পর দেশ-বিদেশের প্রত্রিকা ও টেলিভিশনে প্রচার হয়।

আমাদের প্রতিটি কাজে বাংলাদেশ ও প্রবাসী ভাই বোনেরা টাকা পাঠায়। প্রতিটি কাজের হিসাব ছবি আপডেট পোস্ট ফেসবুকে দেওয়া হয়। 

আমার প্রতিটা কাজে ফেসবুক বন্ধুরা, সাংবাদিক ভাই/বোন, সরকারি কর্মকর্তারা অংশ গ্রহণ করে। আমি শুধু প্রতিটি কাজ মাধ্যম থেকে শেষ  করি। আমি একা না লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালাবাসায় চলছে এই কাজ গুলো। 





৫.এই এতদিন হলো মানবিক সেবায় নিয়জিত আছেন ? কোনো বাঁধা-বিপত্তি কিংবা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন কি কখনো ?

মামুন বিশ্বাস : ভাল কাজে বাধা আসবেই। প্রথমে অনেকেই আমাকে পাগল বলতো। যেমন কাউকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভতি করি তখন ঝামেলায় পরি ওই রোগির কেউ হাসপাতালে আসতে চায় না। আমি ও আমাদের স্বেচ্ছাসেবক  বেশিভাগ হাসপাতালে থাকা লাগে। আবার যখন কোন আটক বন্যপ্রাণী উদ্ধার করতে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়, যদিও উদ্ধার করে বন্যপ্রাণী গুলো বন্যপ্রাণী অধিদপ্তরের জমা দিয়ে দেই।

৬.এই মানবিক সেবা নিয়ে আপনার একান্ত ভালোলাগার কথা জানতে চাই !

মামুন বিশ্বাস: দিন শেষে একটা মানুষের মুখে যখন হাসি ফুটাতে পারি, একটা অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করতে পারি, কিছু মানুষকে স্বাবলম্বী করতে পারি ও আটক বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে মুক্ত আকাশে উড়াল দিতে পারে এটাই তৃপ্তি, এটাই ভাললাগা। 




৭.এই আধুনিক সময় এবং আধুনিক মানুষ সম্পর্কে কিছু বলুন ।

মামুন বিশ্বাস : ভালো মানুষের কিন্তু অভাব নেই, কিন্তু বিশ্বস্ত মানুষের অভাব। আজ অবধি আমাদের কোন পোস্ট টাকা অভাব হয় নাই। আমি চেষ্টা করছি ফেসবুক দিয়ে ভাল কিছু করা যায় সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি। তবে করোনা দুর্যোগের সময় স্কুল বন্ধ থাকায় গ্রাম অঞ্চলের যুবকরা গেমের নেশায় আসক্ত হচ্ছে। প্রতিটি বাবার নিকট অনুরোধ আপনার সন্তানের প্রতি খেয়াল করবেন ও ভাল কাজের সাপোর্ট দিবে। আমি বিশ্বাস করি পরিবারে সাপোর্ট পেলে অবশ্যই প্রতিটি মানুষ এই সমাজের জন্য ভাল কিছু করতে পারবে। আমাকে  বাবা ও ভাইয়া আমাকে যে  সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে, তার জন্য আজকে এত মানুষের কাছে যেতে পারছি। ধন্যবাদ ফেসবুক বন্ধুদের তাদের জন্য প্রতিটি কাজ শেষে সেই অসহায় মানুষ গুলোর মুখে হাসি ফুটাতে পারি।

৮.আপনার প্রিয় রং, প্রিয় পাখি, প্রিয় মানুষ এবং প্রিয় বাণী ?

মামুন বিশ্বাস : আমার প্রিয় রং কালো, প্রিয় পাখি ময়না, প্রিয় মানুষ আমার বাবা। আমি স্বপ্ন দেখি অসহায় মানুষ ও বন্যপ্রাণীর জন্য সবাই এগিয়ে আসবে নিজেদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায়। জয় হবে মানবতা।



১০.আপনি এই সময়ের একজন দুর্বার সাহসী এক তরুণ। আর দেড় লক্ষ তারুণ্যের ভালোবাসার নাম ‘ধানশালিক’ । ধানশালিক নিয়ে কিছু বলুন মামুন ভাই ?

মামুন বিশ্বাস : ভালোবাসা ভালোলাগার প্রিয় ‘ধানশালিক’ যে ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তারুণ্যের শক্তি ‘ধানশালিক’ দেশ-বিদেশে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক। ধানশালিকের  ভালো ভালো লেখায় ভালো কাজে অনুপ্রেরণায় পাবে সবাই। আশা করি প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি আছে যারা ভালো কাজে যুক্ত এবং তাদের ভালোগুলো ধানশালিক বিশে^ও কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরবে । 

১১.সবশেষে ধানশালিকের পক্ষ থকে অনেক অনেক ভালোবাসা এবং শুভ কামনা ।

মামুন বিশ্বাস : ধানশালিকের জন্যও ভালোবাসা ।








শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট