শব্দমালা : সাদিক আল আমিন

 



শব্দমালা

সাদিক আল আমিন



একটা কবিতা ছাড়া আর কিছুই নেই দেবার


জন্মদিনে একটা কবিতা ছাড়া আর কিছুই নেই দেবার 

সতেরো বসন্ত পেরিয়ে ফুটলো যখন নতুন দিন,

তখন একটা কবিতাই বলে গেছে সব কথা কানে কানে

যদি কখনো আমাদের হতো দেখা!

দিতে পারতাম সতেরোটা গোলাপ, দিতে পারতাম ভাগ্যের রেখা...


জন্মদিনে একটা কবিতা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারি না

আমার তো নই ঈশ্বর!

হলে মুক্তোর মতো দানা দানা ঐশ্বর্য দিতাম

দিতাম তরতাজা কৃষ্ণচূড়া গুজে খোঁপায়

দিতে পারতাম সমুদ্রের সবুজ, আকাশের নীল

দিতে পারতাম শীতল বাতাস, হাসি অনাবিল

কিন্তু আমাদের দেখাই বা হলো কবে!

দিতে পারলাম না তাই জোনাকিঘুম, অবাধ মুগ্ধতার মাঠ

অপার প্রান্তরজুড়ে শালিকের ওড়াওড়ি, মৌন বৈরাগ্যপাঠ

পারলাম না দিতে এক টুকরো পাহাড়, আমার প্রিয় নদী

পারলাম না দিতে একটা শিমুল, পারতাম দিতে যদি!


জন্মদিনে আর কিছুই দিতে পারলাম না 

একটা কবিতা ছাড়া

অথচ দেখো, কবিতার নাম করে 

কতো কিছুই না দিলাম তোমায়!

হোক সেটা কল্পনায়, না দিতে পারার বেদনায়...



আত্মোৎসর্গে রাজি আছি তবে


যে বাঁধ জেগেছে এতোদিনে, ক্ষণে ক্ষণে

বুকের ভেতরÑ যে দূরত্বে দুটো পাখি উড়ে

গেছে পরস্পরকে ফেলে, সেসব আনমনে

আমি হারিয়ে ফেলেছি সত্যই, দূরত্বের কিছু 

অনাগত দিন আঁকড়েই আছি বেঁচেÑ

নাকি আরও ছিল কিছু শূন্যপ্রাপ্তির খাতায়?

জানা নেই বলে নরোম দুঃখ ছিটিয়েছি দানা দানা...

পাখিদিন উড়ে এসে তুলে নিলে অন্নশোক,

আমার প্রায়শ্চিত্ত হয়ে গেছে ভাবিÑ

ভাবি, যদি আবার কখনো বুকের ধমনীগুলো

থামিয়ে দেয় সূর্যরক্ত চলাচল, অনুভূতির খোরাক;

যদি মনপাখি আবার ধরা দেয় আগন্তুক শিকারিকে,

তখন আবার নিজের নির্যাসটুকু ছেঁচে ছেঁচে

তৈরি করবো অন্নশোক, অন্তিম আহার্য

ছদ্মবেশী দেবতারা আসলে নেমে, 

খুঁটে খুঁটে ভক্ষণ করবে আমাকে ওরা

হৃদয়বাঁধের পাশে, চিরচেনা মনদূরত্বে...

যেখানে পরস্পরকে ফেলে সরে গিয়েছিল

দুটো বিশ্ব, দুটো সত্ত্বা, দুটো অবয়ব 

কোনো এক কালে... 


আমাকে চিবিয়ে খেলেই যদি ঘুঁচে যায়

তোমাদের পারস্পরিক বিরোধ,

আমি আত্মোৎসর্গে রাজি আছি তবেÑ



চাইলেও আর পারো না


চাইলেই চলে যেতে পারি সবুজ পাহাড়ে, দূর মেঘদলে

চাইলেই চলে যেতে পারি অতল জলধিতে, আরও দূর নীলে

আত্মকথনের বুলি ভেসে থাকে তার দীঘল শরীরে 

চাইলেই পারি যেতে চলে অফিস-আদালত, কোর্ট-কাচারিতে

নগরে, বন্দরে, সীমান্তের একাকী প্রহরী হয়েও থাকতে পারি বেশ

পারি হতে বৃষ্টিভেজা ঘাস, ব্যস্ত সড়কের ওপর অবহেলায় 

পড়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া অথবা ঝরাকদম

পারি হতে নৈমিত্তিক ব্যবহার্য আসবাবÑ চশমা, মানিব্যাগ, সিগারেট

কিংবা তোমার নীলাভ সুগন্ধি রুমাল, নেইলপলিশ অথবা ভ্যানিটিব্যাগ


কেমন করেই যেন জড়বস্তু আমি খুঁজে পাই সমস্ত প্রাণ

কেমন করেই যেন তুমি টের পাওÑ কোথাও একটা ফাঁক আছে তবু

আমি চাইলেই যেতে পারি গোলাপ বাগানে, শুভ্র প্রাসাদে

চাইলেই দখিনের দীর্ঘতম শ্বাস হয়ে তোমাকে ছুঁতে পারি খুব...


অথচ তুমি চাইলেও পারো না সেসব

আমার এ অব্যক্ত আহ্বান তোমার পৃথিবীতে ঠোকর খেয়ে আসে ফিরে

এমন অদৃশ্য এক বাঁধ বলয়জুড়ে তৈরি করেছো যে,

চাইলেও আর পারো না বলয় ভেঙে মুক্তপ্রাণ ভালোবাসতে



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট