শব্দমালা : মাজেদ বিন্ জসিমউদ্দীন

 


শব্দমালা

মাজেদ বিন্ জসিমউদ্দীন


প্রেতাত্মাদের ধ্রুপদী নৃত্য


সহসাই এক অদ্ভুত তাড়না প্রতিনিয়ত বিভ্রমের দিকে

ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে...

বন্ধনহীন, মমতাহীন এই নিñিদ্র লৌকিকতার

অন্তপুরে শুধুই দেখছি জৈবিক উল্লাস

করোটির ভেতর জন্ম নেওয়া

অনুষঙ্গ একত্রিত হয়ে স্বপ্নের ভেতর

ভাঙতে থাকে কালের নীরবতা

ভাঙতে থাকে জীবনের উপাখ্যান

ভাঙতে থাকে জীবনের সমস্ত জৌলুস

ভাঙতে থাকে কৃষাণের আলবাঁধা মেঠোপথ

ভাঙতে থাকে জোছনাময় রাতের মহেন্দ্রক্ষণ

ভাঙতে থাকে রৌদ্রজ্জ্বল দিনের সূচিশুদ্ধ চিত্রপট।


মেতে উঠা ইচ্ছা-অনিচ্ছার অদৃশ্য আলোর বিচ্ছুরণে সমাদৃত

প্রেতাত্মাদের ধ্রুপদী নগ্ননৃত্য...



অনাস্বাদিত সমীকরণ


ভুল হিসেবের নামতা পড়ে আর্তকে উঠি বারবার

তারপরও মস্তিষ্কের ভেতরে তাড়া খাওয়া

বেসুরো ভায়োলিন মগজের ভিতর-বাহির, হলি-গলিতে

জমায় বিবর্ণতা, পাপ ও প্রহেলিকা।

এক সময়Ñ

ভুলে যাওয়া অতীত কিংবা স্বপ্নে থাকা স্বপ্নেরা

বধির ভগ্নস্তুপ থেকে উঁকি দেয়...

জীবনের যাদুঘর ভরে উঠে এবড়ো থ্যাবড়ো, ভাঙাচোরা

অনাস্বাদিত সমীকরণে।


মুছে যাকÑ ধুয়ে যাক যতো আত্মপ্রতারিত কামাতুর

রাত্রির উদ্ধত বুক

অগ্নি নরক দীর্ঘস্বাস...



নৈবেদ্যের সারৎসার


যৌবনাবর্তী বেলুনের নিজস্ব যশ, খ্যাতি, প্রতিভা

ফেটে ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে যাযাবরী ভগ্নাংশের রাত।

প্রলম্বিত এই দীর্ঘ নৈঃসঙ্গের রাত শেষে

অবাধ্য, অনাবৃত উন্মুক্ত মনে একাকী আঁকছি

শূন্যতার নৈবেদ্য...।

অবরুদ্ধÑ

জীবনটা যেন আটকে আছে চিকন রোগাগ্রস্থ মার্জিনে।

করুণ সুর তুলে সুরের মূর্ছনায় রেওয়াজ করে যায়Ñ

উৎকর্ষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বসবাস করা নৃত্যরত ঘুনপোকা।

বিবর্ণ স্বপ্নের বিশাল পৃথিবী জুড়ে নির্মাণ করে

ধ্বংসের সা¤্রাজ্য।

প্রতিদিন একটু একটু করেÑ

জাগতিক সুখ খুজি অসমাপ্ত কবিতার পৃষ্ঠায়...



স্বপ্নের শিথানে বিপন্নতা


স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নের বেড়াজালে আবদ্ধ-

থমকে গেছে সময়, ঠাস ঠাস করে ভেঙে গেছে বিবেকের দেয়াল।


আগুনের ফুলকিতে ভস্ম হয়ে যাওয়া উদ্যমী উচ্চাশাকে দমিয়ে রেখেছি

করাতকলের সানে কেটে যাওয়া নিশ্চিদ্র ভাবনাগুলোকে জিঁইয়ে রেখেছি

কখনও শীতলতায়, কখনও উষ্ণ পরশে নির্ঘুম রাতের স্বপ্ন এঁকেছি

পাড় ভাঙা খেয়া খাটে স্বপ্নতরীদের নোঙর ফেলতে দেখেছি

ভোরের পোয়াতি সূর্যের ভ্রণগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত হাসি দেখেছি।


কিছু সুখ, কিছু অনুভূতি, কিছু স্বপ্ন খুঁজে পাবো এই বিশ্বাসেÑ


অথচ, অথচÑ  সব কেমন যেন এলোমেলো, অগোছালো

বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম অ নে-ক কাল; অনেক বছর 

যেমন বেঁচে থাকে সহ¯্র বছরের পুরোনো চাঁদ 

যেমন বেঁচে থাকে জনপথ, আততায়ী বিকেল

যেমন বেঁচে থাকে অদম্য ইচ্ছের কুচকাওয়াজ

যেমন বেঁচে থাকে এক ঝাঁক রোদ্রের ঝিলিক 

যেমন বেঁচে থাকে নিভৃতে, নিঃশব্দে ঘুনপোকা 

যেমন বেঁচে থাকে জনহীন, নির্জন পথের ছায়া।


তারপরও দেখি চেনা জানা মানুষগুলো কেমন যেন বদলে যায়


বদলে যায় বারান্দায় সাজানো টবের বনসাই

বদলে যায় ধূলি ওড়া অপরাহ্ন

বদলে যায শিস দেয়া গার্হস্থ্য সকাল

বদলে যায় ভরা ভাদ্রের জ্যো¯œারাত

বদলে যায় নুয়ে পড়া হেমন্তের হাওয়া

বদলে যায় জীবনের নান্দনিক প্রচ্ছদ

            বদলে যায় কবিতা লেখার পঙ্ত্তি। 



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট