গুচ্ছকবিতা



গুচ্ছকবিতা
নাবিল তুরাব


বাহুমূলপীড়িত কম্পন

তোমার বাহুমূলের অতি নিবিড়ে সন্ধ্যাতারার মতো শতবর্ষীয় প্রেম দেখতে পেয়েছিলাম, যা অঙ্কুরোদগম হয়ে জোরালো স্বপ্নের মতো তীব্র কম্পন সৃষ্টি করেছিলো আমার হৃদযন্ত্রে, উদ্যত পেশীকোষে। এমনই প্রবল যাচ্ঞা ও ঝঞ্ঝায় আর সুচিন্তিত কামনায় পুরোটি দিবস-রাত মধ্য দিবাকরের মতো আমি জ্বলেছিলাম, কামনায়, প্রচ- দাপুটে কামনায়।



বৃক্ষপত্র

কোনো কোনো বৃক্ষপত্র ঝরে যায় অকালে,
গভীর সম্ভাবনাময় এবং বহুদূর এগুনোর কথা যার।
যেহেতু শীতের রাতগুলো কষ্টের, নিয়তি বড়ো নির্দয়;
এবং বৃষ্টিফোটাগুলো ঝরে পড়ে কম্বলে।
ফলত, এক একটি মানুষ একএকটি বৃক্ষপত্র।

গ্রাম ও শহর

আনন্দচিৎকারে এক ঝাঁক শালিক উড়ে যায়,
পাকা ধানের মাথায় পোকারা বসত গড়ে,
আর আমি কথানির্ভর বিশ্বাসে দু’িট কবুতর উড়িয়ে দিই শূন্যে।
দুঃখিনী মায়ের মতো যদিও গ্রামটি শব্দহীন অথবা বোবার মতো যদিও ভাষাহীন প্রতিবাদী;
কিন্তু, মা-প্রকৃতি জানেন, শহর কখনো গ্রামের
অপার সৌন্দর্য বা রক্তঝরা ঘামের চিহ্ন বয়ে চলে না, চলতে পারে না।

স্বপ্নমুখর লাশ 

ভেজা নর্তকীর মতো আমাদের সড়কে একদিন ঢুকে যায় প্রবল কৃষ্ণ তুফান, কম্পমান দালানকোঠাগুলির গায়ে লাগে আসন্ন ধ্বংসের ঝড়োহাওয়া; আকাশে চাপা-কালো মেঘ। বাস ট্রাক রিক্সা সবই জলের নিচে চাপা পড়ে যায়। একটি চড়ুইদম্পতি আর দু’চারটি অভিজাত কবুতর তাদের জীবনের অবিশ্বাস্য মৃত্যু দেখে কোনো রকমের পূর্বকসংকেত বা অ্যালার্মছাড়াই তোলে এক সুখদ গভীর প্রার্থনা। চলমান  ট্রেন তার যাত্রীদের উগলে ফেলে ঘোষণা করে অনির্দিষ্টকালের কিম্ভূত হরতাল; ডুবন্ত লালচে ট্রেনলাইন। ঘাটের নৌকো আর ঘাটে ফেরে না; তলিয়ে যায় ভাটিয়ালি গানের পদ্মার মাঝি। ধ্বংসস্তুপ থেকে আবিষ্কার হয় এক একটি স্বপ্নমুখর লাশ।


আগন্তুক সকালে একদিন

মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে বাদলা সকাল, প্রতœভাষার মতো সগৌরবে ক্ষণেক্ষণে করে মিছিল।
বলে, এ আকাশ আমার, এ বাতাস শুধুই মরীচিকা, যখন তারকাবিদরা চিৎকার করে ওঠে।
কিন্তু হ্যাঁ, এ কাঁটাতারের ভূলোক তোমার নয়।
ও উত্থিত সত্য, দেখা হয় না কখনো পরমাদরের কল্পিত শহর?
পাকশালায় অনাহারী ভুবন আর একটি একাহারী চামচ পড়ে থাকে।
কে তুলবে তাকে? কার হয় অমন দরদ?
টেবিলে ভেসে থাকে কিছু প্রাচীন নোটপ্যাড, সোফাসেটে গতকালের না পড়া বাসি পত্রিকা।
অমন ঘৃণার সকালে পত্রিকা হাতে নিতে কারো ইচ্ছে হয়?
মৌমাছি এসে বসুক আমার চেয়ারে, হতাশাগুলো চুষে খাক। আমায় একটু বিষমুক্ত করো মাছি!
দু ঘণ্টা ধরে খোলা পড়ে থাকা অপঠিত পাঠ্যবইয়ে মাকড়সা বাসা বাঁধুক, আমার আপত্তি েেনই।
আজ দিন নয় আপত্তি করার।




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট