পদাবলি




অঘ্রানে
তমসুর হোসেন

অঘ্রানের রাতে টুপটাপ ঝরে ছন্দময় শিশিরের হিম
বাদুড়েরা দল বেঁধে নিমফল খেয়ে হল্লা করে সারারাত
সকালে বনের গভীরে শুকনো পাতার বুকে শেষকৃত্যের
করুণ কান্না, রোদের সাথে ঝরে গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘের পালক।

রোদের গন্ধে সটিফুলের অরণ্যে গোপন নেমে আসে
নির্বিষ সাপ বেনে বউয়ের কণ্ঠে গজমতি হার হয়ে দুলতে
মিষ্টি আলুর খেতে দোল খায় লজ্জারাঙা বেগুনি কুসুম
কালজিরা তিসি ধনেফুলে চকমকি পাথর জ¦লে দিনমান।

চাঁদের শরীর ছুঁয়ে উড়ে যায় দূরগামী সারিবদ্ধ মেঘ
বিলের পানিতে প্রবল ঠান্ডায় কাঁপে মিয়মান আকাশের ছায়া
শিশিরের স্বচ্ছ নেকাব পড়ে ধীরপদে হেঁটে যায়
নদীর পাড় ধরে বালুচরে বাতাসের ঢেউয়ে ধবল রঙের রাত।

ফুরফুরে হাওয়ার টানে শিমুল তুলোর মত রোদেলা দিনেরা
উড়ে যায় তেপান্তরের শূন্যতায় অজানা দানবের দেশে
প্রকৃতির সবখানে মউ মউ গন্ধের মাতাল কিশোরী সুবাস
উল্লাসে দুলে ওঠে খেতভরা সোঁদাগন্ধা কাঁচাপাকা মায়াবী ফসল।


রঞ্জু, একটা হাতিয়ার...
আকিব শিকদার

মিছিলটা হয়েছিলো প্রায় তিনশো গজ লম্বা। টানা পাচ দিন খেটেখোটে
লোক জড় করেছিলে। বিপক্ষ দলের সামনে ইজ্জত রাখা চাই।
গলিটা দখলে নিয়ে সাজালে প্যান্ডেল। ঝাঝালো ভাষণে
জনপদ কাপিয়ে স্বার্থক জনসভা।
নেতা তোমাকে কাছে ডেকে পরিপাটি চুলগুলো
আঙুলে উলোঝুলো করে দিয়ে বললো- “বেটা বাঘের বাচ্চা, তোর মতো
কেজো ছেলে আগে দেখিনি, একেবারে বিপ্লবী চে গুয়েভারা”।
তুমি বাহবা পেয়ে গলে গেলে রঞ্জু। বুঝলে না, ছোটদের বগলবন্দি রাখতে
বড়রা এমন প্রশংসার ফাঁদ প্রায়ই পাতেন।

পার্টি অফিসে প্রতিদিন কতো কাজ, কতো পরিকল্পনা। নেতারা তোমায়
পিতার মতোই ¯েœহ করে। গোলটেবিল বৈঠকে
জ্বালাময়ী আলোচনায় রক্ত গরম।
বাঁধা এলে অস্ত্র নেবে, প্রয়োজনে প্রাণ দেবে। অফিসের গোপন ঘরে
নেতারা গলা ভেজাতে ভেজাতে তোমাদের হাতে বুতল দিয়ে বলে-
“নে বাবারা, খা... শুধু খেয়াল রাখবি যেন হুষ ঠিক থাকে”।
ভেবে দেখেছোকি রঞ্জু, তাদের ছেলেরা এসব নোংরা জল
ছোবার কথা কল্পনাও করতে পাড়ে না। মায়েরা পড়ার টেবিলে
গরম দুধে গ্লাস ভরে রাখে।

কালো কাচ আটা পাজারু গাড়ি থামলো রাস্তাতে। জানালার কাচ খুলে
নেতা হাত বাড়িয়ে দিলেন হাজার টাকার দুটো নোট। বললেন-
“রঞ্জু... ঝাপিয়ে পর বাবা, মান সম্মানের বেপার”।
তুমি ঝাপিয়ে পরলে পেট্রোল-বোমা আর ককটেল হাতে। দুদিন পর
তোমার ঠিকানা হলো সরকারি হাসপাতালের নোংড়া বিছানা। হাত দুটু
উড়ে গেছে, দু’পায়ের হাটুঅব্দি ব্যান্ডেজ।

একবারও ভাবলে না, তিনি তোমার কেমন বাবা!
তার সম্পত্তির ভাগ পাবে? তার কালো কাচের পাজারুটা
তোমাকে দেবে? দেবে মখমল বিছানো বেডরোমে ঘুমানোর অনুমতি?
তার সম্মান রাখবে তুমি! তার ছেলে বিদেশে পড়ে,
নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে; সে তো ঝাপিয়ে পড়ে না!

তোমার হোষ কবে হবে রঞ্জু! তুমি ছিলে তাদের
স্বার্থের হাতিয়ার, কাটা তোলার কাটা।
তোমার মা হাসপাতালে গরাগরি দিয়ে কাদে, বাপ কাদে বাড়ান্দায়।
সেই নেতারা, তোমার পাতানো বাবারা, একবারও তো
দেখতে এলো না! বলি রঞ্জু, তোমাদের হুশ কবে হবে!



বাংলাদেশের সকাল
সাহিদা সাম্য লীনা

হলুদ রং এ ছেয়েছে মাঠ মাঠে আবার
নতুন ধানে কৃষক মনে খুশীর জোয়ার।
হেমন্তের সন্ধ্যায় জমে পিঠা পুলির ঘ্রাণ
শাড়ি চুড়ি পেয়ে গায় কৃষাণি গান।
হিমেল হাওয়ায় শিশির জমে গাছে,
দস্যি ছেলে মাতে খেজুরের রসের পিছে।
কুয়াশার ভোরে ওঠে  বাংলাদেশের সকাল
ধানের মাড়াই চলে সকাল আর বিকাল।


প্রিয় বিদ্যাপিঠ
নূর নাহার নিপা

নদীর মতো শীতল পাঠশালা ছিল আমাদের,
আমরাও ছিলাম কলকলে বয়ে যাওয়া কর্ণফুলির বোন।
আমাদের ছিল হাসির ঝর্ণা, রোদ চিক চিক জল।

প্রিয় বিদ্যাপিঠ,
আজ মনে পড়ে খুব, তোমাকে
মনে পড়ে দূরন্ত কিশোরী বেলা
মনে পড়ে প্রিয় স্যারদের আদর-শাসনে মাখা সেইসব মিঠাবুলি
তাঁরাও ছিলেন তোমারই মতো
দিলখোলা-কর্ণফুলি!

প্রিয় বিদ্যাপিঠ,
তুমি ভালো থেকো
তোমার সহজাত চঞ্চলতায়,
আজ কেন যেন খুব করে
তোমার কথা মনে পড়ে যায়।

অদৃশ্য বার্তা
হাসান মাসুদ

যখন তোমার গুলিবিদ্ধ ঠোঁটে
রক্তের প্রবাহ বিছিয়ে দেয়
সবুজ রঙের গালিচা,
তখন তোমার সেই দেবীত্বটুকু
পাঠিয়ে দিও - উৎসুক কামনায়।

যখন তোমার মনের ভিতর
বেদনার ভায়োলেটে আড়ষ্ট সুর
বাজায় উচ্ছ্বল কাকাতুয়া,
তখন টেলিফোন বার্তায় পাঠিয়ে
দিও - দৃঢ় কামার্ত কন্ঠস্বর।

যখন প্রতিনিয়ত একটা অদৃশ্য
ছায়া তোমাকে আবিষ্ট করে রাখে
হলুদ রঙের বসন্তের মতো,
তখন একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস পাঠিয়ে
দিও - বাতাসের ব্যাঞ্জনায়।



তোমার চোখে ভাগ্য নির্ধারণ
আহমাদ সোলায়মান

অনুভব করি বিদায় সাজের অশ্লীল চিৎকার
স্বার্থের মত ভয়ানক ব্যাধি ছিলনা আমার
চাঁদের প্রতি হিংসা তাই আকাশ দেখিনি কখনো
বলা হয়নি, অবকাশের জমানো কথা।

মধ্যরাত পান করে যার মিলে এক গ্লাস সুপ্তি
তাকে তুমি কা-পুরুষ বলতে পারো না
স্বপ্ন তোমার, এ দাবি করতেই পারো
অন্ধকার আমার বলে আজ আমি নিশ্চুপ।

একবার যদি তোমার চোখে তাকাতে পারতাম
তাহলেই হয়ে যেত আমার ভাগ্য নির্ধারণ
দেখতে পেতাম তোমার হৃদয়ের ছবি
হৃদয়ে থাকা মুখের ছবি।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট