বসন্তের পদাবলি : ০১



যখন ভালোবাসা নেমে আসে
অনিন্দিতা মিত্র

যখন ভালোবাসা নেমে আসে স্মৃতির ধুলোপথ বেয়ে তখন তোমার উঠোনে ছড়িয়ে পড়ে অভিমানের সোহাগ রেণু। নক্ষত্রের দল বুকে পাথর চেপে আছাড় খায় সমুদ্রের ফেনায়, শত শত পাখি ঘুরপাক খেতে খেতে মিলিয়ে যায় জলের গভীরে। গভীর থেকে আরো গভীরে যেতে যেতে তারা কুড়িয়ে নেয় শূন্যতা, একাকীত্ব জমা হয় বনভূমির পথে ,পথে পাইন ঝাউয়ের উচ্চতা ছোঁয় অন্ধকার। অপেক্ষার পারদ চড়তে চড়তে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় উপেক্ষার ভান্ডার। তবু ভালোবাসা নেমে আসে বসন্তের প্রজাপতি হয়ে। অনিন্দিতা মিত্র ,পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতা ।




বসন্তে পোড়া গন্ধ 
আফিয়া খানম রোমা

একবার ফাগুনে বাসন্তী শাড়িতে আগুন লেগেছিল
তুমি হুড়মুড় করে জ¦লন্ত আগুনে জল ঢেলে দিলে।
সেই থেকে আর বাসন্তী শাড়ি পরা হয়নি।
বহুকাল চলে গেলে, কত রঙের বসন্ত এলো গেলো
প্রতিবারেই ফাগুনের আগুনে হৃদয় পুড়ে পুড়ে ছাই হয়,
আর পোড়া গন্ধ বসন্ত বাতাসে ভেসে ভেসে বেড়ায়।
কিন্তু তুমি আসো না, পোড়া হৃদয়ে স্বস্তির জল ঢালতে।



মৃত্যুবরণ
শোয়াইব শাহরিয়ার 

আমি কেবল দৌড়াচ্ছি
গ্রাম থেকে গ্রামে
শহর থেকে শহরে;
নিজের থেকে দূরে—
গভীর অরণ্যে
দৌড়াতে দৌড়াতে নদীতে
একবার সমুদ্রে
একবার ঝর্ণায়;
মরতে মরতে বেঁচে যাই!
এভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে নারী
তোমার ভেতর চিরকাল—
প্রতিনিয়ত মৃত্যুবরণ করছি।



ফাগুন মাস
মিসির হাছনাইন 

ফাগুন মাস
বাঙালির কথা বলার মাস।

এক বৃদ্ধ পুরুষের চোখে খাঁ খাঁ করছে
উৎকণ্ঠা ফাগুন মাস।
রক্তে প্লাবিত হওয়া অঞ্জলির মাস।
শহীদ মিনারে মহান যুবকদের কথা
বলার মাস।
মৃত নেংটা উদ্ভিদে নতুন করে বাঁচার মাস।

ফাগুন মাস
বাঙালির নীরবে কাঁদার মাস।
ভর-দুপুরে অতিরিক্ত সঙ্গমে লিপ্ত,
নারীর আগত শিশুর মাস।
ফাগুন মাস
যুবক-যুবতীর সমকামী প্রেমের মাস।
ফাগুন মাস
পাখিদের স্বাধীনে গান গাওয়ার মাস।
ফাগুন মাস
নিষ্পাপ ফুলের ঘ্রাণ শোকার মাস।
ফাগুন মাস
ব্লেশরম বৃক্ষের পাতাঝরা শব্দে ঘুম
ভাঙার মাস।
ফাগুন মাস
কবিদের শব্দ তৈয়ার করা কবিতার
মাস।

পৌঢ় দুপুরে গাছের পাতাঝরা শব্দের মতো
আমিও শুনি, ফাগুন মাসের কিছু
পরিচিত শব্দের রোনাজারি।

কারন-
ফাগুন মাস
বসন্ত ঋতুর মাস।
ফাগুন মাস
রক্ত দিয়ে কথা কেনার মাস।


এক অপ্রেমিকের জন্য
ইয়াকুব শাহরিয়ার

প্রেমে পড়ুন
দক্ষিণ-পশ্চিম, উপর-নিচ সবদিক চেয়েই একবার প্রেমে পড়–ন।
যে প্রেমে পড়ে নি সে বুঝেনি ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীর মায়া কতটুকু।

কোনো মানবীর না হলেও প্রেমে পড়ুন-
ওাস্তার, নদীর, শীত-কুয়াশার, হাওরভরা ধান
জোয়াল বহণকরা কৃষক কিংবা সমাজ ও শহরের।
না হয় একটি ইতর প্রাণীর হলেও প্রেমে পড়ুন।

তবেই বুঝা হবে পৃথিবী কত মায়াময়।
থেকে যেতে চাইবেন জীবনের নির্যাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত।

আর যদি কোনো ষোড়শী কিংবা অষ্টাদশীর সঙ্গ
কপালে জোটে যায় আটঘাট বাঁধতে হবে না;
দেব-দেবী, নক্ষত্র-গ্রহানুপুঞ্জের অঞ্জলিও দিতে হবে না।
এ মায়ায়-ই থেকে যেতে চাইবেন মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে।
শুভ কামনা আপনার জন্য। একবার প্রেমে পড়েই যান।




শৈল্পিক কারুকাজ
সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা

আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে আটপৌঢ়ে
আয়েসি জীবন চলে খুঁড়িয় খুঁড়িয়ে..
ভবের এই জীবনে মানুষ বড়ই একা....
সময়ের ত্রাসে অখন্ড এ যাযাবর প্রাণ,
হণ্যে হয়ে ছুটে বেড়ায় সমূদ্র সীমানায়
উড়ে চলা গাঙচিলের ছড়ানো শ্বেত ডানায়,
তাইতো কিছু ক্ষণ হারিয়ে যায় অদেখা চাদোরে,
কিছু সুখ স্মৃতি আগলে রাখে সঙ্গোপনে,
কিছু প্রশান্তিময় কাল নিরবে পিছুডাকে ,
ইচ্ছে করেই অপয়া সময়ের
দীর্ঘশ্বাসটুকু যায় এড়িয়ে।
তবুও ভাবনায় পড়ে বিচ্ছেদ
পাথরের পাকা দালান জুড়ে শৈল্পিক কারুকাজের
ফাঁকে ফাঁকে জমেছে এক প্রস্থ ধুলো,
মর্তের হতবিহ্বল মানুষ সুখের মোহে
কঠিন বাস্তবতাকে অবলীলায় যাচ্ছে ভুলে !



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট