পদাবলি : ০১

 



প্রেম

আনোয়ার কামাল


শুকনো নদীর তলদেশে

জলের ধারা ঘুমিয়ে থাকে

আবারÑ

    সুপ্ত নদী কখনো

আগ্নেয়গিরির মতো জেগে ওঠেÑ

    প্রেমও কী তাই?



তালগাছ ও শিশুতোষ বই

দ্বীপ সরকার


শিশুতোষ বইয়ে

পুরনো একটা তালগাছ

পৃষ্টার এক কোণায়


একটা বাবুই এসে তালগাছে পড়তেই

বইটা নড়ে ওঠে

পাঠরত শিশু বই চেপে ধরে

বাবুইটা শিশুতোষ প্রাণী আগে জানিনি


আমি তালগাছ ধরতে গিয়ে ধরে আনি বাবুই

বাবুই ধরতে গিয়ে তালগাছ

অথচ শিশুদের ধরা শিখলে

গোটা জাতিকে ধরা শিখতাম



কবি ও কবিতা

আদ্যনাথ ঘোষ


এই খোলা চোখ দুটো 

কেবলই শূন্যে 

পড়ে থাকে।

শুধু কবিতার মাঠ সবুজের বুকে  

একাকী ঘুমহীন জেগে থাকে।

খোলা চুলে দুয়ারে দাঁড়ায়

পরাণে উথলিয়া ওঠে 

ঢেউ-নোনা জল

  যেমন মাধবী লতা দোল খায়

বাতাসের গন্ধে মেতে

  ভরা জোছনায়। 

অথচ ঝিলের কান্না 

মিশে যায় গাঙুরের জলের ভিতর।

চাঁদের বুকখানি কাঁদে 

শিবহীন পূজায়।

  যতনে শিল্পের ঢেউ খুঁজে চলে কবি

ছন্দ উপমার ভেতর

  শব্দের দোলায়। 


তবুও মনসার ছোবলÑ  

ভেঙে যায় কবিতার 

বুকের গড়ন।

আর তার রূপ রস 

ধ্বনির শরীর ঘেঁটে 

নারীর ভেতর 

যুবতী সংসারে করে ডুবুরি যাপন।



একটি অপূর্ণ ভালবাসা 

ফারিহা ইয়াসমিন 


শুনেছি ভালোবাসা নাকি রং বদলায়। 

বিশ্বাস করো, যদি তাই হতো বদলে যেতাম আমি। 

এই ছকে বাঁধা জীবনের অপূর্ণ ভালোবাসা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে তুমি।

 ভালোবেসেছি বটে, তবে তোমার কোন চাওয়াই করতে পারেনি পূরণ। 

 সত্যিই অভিমান হওয়ারই কথা, আর অনুরাগেরও আছে হাজার কারণ। 


কেনই বা ভালোবাসবে আমায় আমি যে বড্ড বেমানান,

কতটুকু ভালবাসি তোমায় কখনো দিতে পারিনি প্রমাণ।

যে ভালবাসায় পূর্ণতার পরিতৃপ্তি নেই, 

পাশে থাকার অঙ্গীকার নেই;

যে প্রেম এত বৈচিত্র্যময়।

সেখানে তো থাকবেই প্রতিমুহূর্তে তোমাকে হারানোর ভয়।


আমি তো তোমার কঠিন দুঃসময়ে পাশে থেকে নির্বিঘ্নে বাড়াতে পারেনি দু হাত।

তোমার কষ্টের সঙ্গী হয়ে কখনো জাগতে পারিনি রাত।

তাহলে কেনই বা মনে রাখবে আমায়, 

আমি যে ভালোবাসাকে দিতে পারিনি পূর্ণতার স্বাদ।


তাইতো হৃদয়ের গভীরে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে শ্যাওলা জমেছে রোজ রোজ,

 হয়তো মনের অজান্তে তুমিও করে চলেছো এক অজানা সুখের খোঁজ। 

 সত্যিই যদি তাই, হয় তবে তাই হোক। 

আমার জন্য ভিজবে না আর তোমার দুটি চোখ।

যত কষ্টই হোক আমার, আমিও নিয়ন্ত্রণ করবো আমার অবাঞ্চিত আবেগ। 

তবে হ্যাঁ শুধু এতোটুকুই মনে রেখো, আমার মনের গভীরতায় চিরদিন রবে তুমি। 

এই পবিত্র ভালোবাসার প্রতিটি পরতে সুখের লীলাভূমি।



সাধক কৃষাণ 

রতন ইসলাম 


কিণাঙ্কে শ্রমের মানচিত্র 

বাস্তবতার অপাঙ্গ চাহনি

চোখের কোণে জমানো ক্লান্তির কাদম্বিনী 

বুকে চাপা পড়া স্বপ্ন-কোঁড়ক 

পিঠ বেয়ে নেমে আসে বাহুচরে

রোদ পোড়াগন্ধ 

বর্ণহীন জীবনকে জিইয়ে রাখার 

জোড়াতালি প্রচেষ্টা 

নিঃসীম ধৈর্যে গিরিপথ ধরে তবুও চলা;

অন্যের উদরে তৃপ্তির-মুক্তির পিদিম জ¦ালাতে

ওখানেই যেন বিরাট স্বার্থকতার শিখর-ছোঁয়া 

সে স্বার্থকতা....

বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণার মন্ত্র জোগায়।





শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট