পদাবলি : ০১




প্রস্তাব

অসীম মালিক


উনুনে ফিরিয়ে দাও,

হিংসার আগুন !

সাঁঝ প্রদীপের দিকে তাকিয়ে

সলতে হও।


ইজরায়েল, ফিলিস্তিনের রান্নাঘরে এসো,

মায়ের হাতে রান্না খেতে খেতে

দু’জনে হব -

রান্নাঘরের দেশলাই কাঠি।



স্মৃতি সত্তা ও ভবিষ্যৎ 

ধীমান ব্রহ্মচারী


আমি মুক্তি পেতে চেয়েছিলাম বিকেল ঠিক পৌনে চারটে নাগাদ

ফসিলের আস্তারণ সরিয়ে ভাবলাম এবার ঘরে ফিরতে পারব    


অথচ পারলাম কি ?

বার বার কালো ছায়ার মতো প্রশ্ন গুলো আমাকে ঘিরে পাক খেল পূর্ব থেকে পশ্চিমে

ঘড়িটার কাঁটা ততক্ষণে আরো একটা ঘর পেরিয়েছে


অথচ আমি মরলাম কি?

কফিনের ভেতরকার স্থবির হয়ে পড়ে থাকা মৃত দেহ গুলো যেন ফিরে পেতে উৎগ্রীব তাদের জীবন 

অথচ জীবন ফিরে পাচ্ছে ওরা?


শ্লোগান দল তন্ত্রের ভিত্তি প্রস্তর, আর আমরা জনগণ গড়ছি ইমারত

অঝোর বর্ষায় মাঠ ভেসে যাচ্ছে, জলে হাবুডুবু খাচ্ছি, তবুও শালা মরছি না 


হয়তো মৃত্যু আমাদের ডাক দ্যায় না 


   


ক্ষয় 

তামিম হাসান 


রং পেন্সিলের মতো হচ্ছি ক্ষয়,

কিভাবে যেনো হয়েছিলো হঠাৎ 

আমাদের পরিচয়।

বরষার জলধারায়, 

কে যেনো মেঘের রেলিং ছুঁয়ে দাড়ায়!

বিদ্যুৎ চমকে ক্ষনিকেই হারায়। 

কিছু দৃষ্টি হঠাৎ আকর্ষনের সৃষ্টি! 

এই মেঘময় শহরে শিলাবৃষ্টি।


তোমারে আজ দ্যাখবো

রোদ্দুর রিফাত 


তোমারে দেখিনা অনেকদিন আজ দ্যাখবো;

পুষ্পশরীর নিয়ে এসো— আমি উল্লাস মোড়ের

পাশে জলাশয়ের কাছে রেইন্ট্রিতলায় দাঁড়িয়ে থাকবো।


আজ চুল খোলা রেখে মেরুন হিজাব আলনাতে তুলে

আমার দেওয়া কালো টিপের পাতা থেকে একটা টিপ

ললাটে চেপে নির্ভুল কাজল রেখা টেনে আমার সামনে দাঁড়িয়ো।


তোমারে আজ দ্যাখবো; যেভাবে দ্যাখে নারী

স্বর্ণালঙ্কারের দোকানে পছন্দের নেকলেস—

দ্যাখতে দ্যাখতে তোমার হাত ছোঁব, নাকে নাক ঘষে

নাকফুল থেকে সোনালী উজ্জ¦লতা ধার নিবো,

চিবুকের তিলে রাখবো আঙ্গুল আলতো করে

তখন নিসর্গ কালিমা পাঠ করবে আর আমি তোমার ভিতর যাবো তারপর নির্ভুল বানানে

লিখে দিবো এক দীর্ঘ কবিতা যেখানে হেরে যাবে একটি সন্ধ্যা।




আর কিছু হলো না;

রাকিবুল হাসান রাকিব 


তার সাথে... 

ক’দিন আগে দেখা হলো 

ক’দিন আগে কথা হলো... 


তার সাথে... 

কিছু রাগ; অভিমান; ঝগড়াঝাটি; 

কখনো হাসি; কখনো কান্নাকাটি। 

কভু পাশে; কভু দূরে; কভু মাঝামাঝি। 


তার সাথে... 

সবকিছু হলো জমানো হলো ঋণ;

কখনো আপন; কখনো পর বাজে বীণ 

যাবার বেলা হলো... মন উদাসীন।


তার সাথে... 

আর কথা হলো না; দেখা হলো না;

দিন কেটে রাত হলো দিন হলো না? 

তার সাথে কিছু হলো না। 

কারও প্রতি আমার প্রতি কারও 

রাগ; অভিমান; ভালোবাসা; বদনাম!

আর কিন্তু হলো না; আর কিছু রইলো না।



হেমন্তের বিকেলে

আহরাফ রবিন


হলুদ হেমন্তের বিকেল।

পাতা ঝরা ক্ষণে

ভেসে যেতে চাই চলে যেতে চাই।


হলুদের ভেতর আজ গুমোট

হাওয়া। অস্থির মাতাল সময়।


মাঠে কার্তিকের ধান-

ইছামতি আর কালিগঙ্গায়

শান্ত জল- মৃদু শীতল স্রোত।


নবনীতা

            বৃক্ষ

                 নদী

কবিতা- আমি চলে যাচ্ছি

এই হেমন্তের খোলা হাওয়ায়।



বেদনার নীল বালুচর

জান্নাতুন নাহার নূপুর


আজ আমি বলতে চাই

আমার স্বপ্নের পুরুষের কথা

স্বপ্নে আসা সেই পুরুষটি একজন বীর পুরুষ

স্বপ্নের ভেতর দেখি তাকে অনিমিখ লোচনে

কি মায়া! তার চোখে

কি ভালোবাসা! প্রশস্ত চওড়া বুকে

যে বুকে ঠাঁই পেয়েছিল এই বাংলা

ঠাঁই পেয়েছিল কুলি-মজুর

ঠাঁই পেয়েছিল কৃষক-শ্রমিক

ঠাঁই পেয়েছিল অনাহারে থাকা, কষ্টে থাকা

বঞ্চিত, লাঞ্চিত বেদনাহত মানুষগুলো।

ঠাঁই পেয়েছিল এই বাংলার প্রতিটি মানুষ।

অষ্টরম্ভা এই জন্মভূমিতে জন্ম দিয়েছিল স্বাধীনতার

বপন করেছিল সোনার দেশ, বাংলাদেশ।

সোনার দেশে আমার স্বপ্নের পুরুষটিই একদিন ‘বলি’ হলো,

তাঁকে শুইয়ে দিলো চিরনিদ্রায় লাল পাঞ্জাবী পরিয়ে

তাঁকে আর তাই ছুঁয়ে দেখা হলোনা আঙ্গুলের ডগায়।

স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে আজীবন

তাঁর স্মৃতিকে শূন্য বুকে আকড়ে ধরে বাকিটা পথ

হাঁটতে হবে অজানার পথে.....

ভালো থেকো স্বপ্নের  প্রিয় পুরুষ আমার,

আমি থেকে গেলাম

বেদনার নীল বালুচরে!



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট