মদিরাক্ষী সিরিজ : রাবাত রেজা নূর



মদিরাক্ষী সিরিজ 

রাবাত রেজা নূর


ভুল ফুলে ভরে গেছে অতসীফুলের

ডালদূরচারী হাওয়াদের তালে

কাঁপে বুনো কালিম পাখির ছানা

শিঙে ঘাসের গন্ধফেরে মহিষের পাল―

তীব্র নিনাদসুরে হাহাকার পাখি

রাত চিঁড়ে ছুটে চলে তারাদের ঝাঁক

চুমুর গন্ধ কোথায় লুকিয়ে রাখি?

জানে যদি কেউ তবে সব জেনে যাক―

জলের শিয়রে বসে দূরগামী চিল

মদির হাওয়ায় ঢুলে রঙধনু সুর―কেউ

কি মেপেছে কখনো? তোমার বাড়ি

থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব কতদূর―!

হুইসেল বেজে যায় জোনাকিট্রেনে

পুড়ছি দারুণ লোনলিনেসের জ্বরে

কেউ কি জানে―! কেমন করে একটা

পাতা ঝরে যায় কত অনাদরে―!




স্মৃতির সাইকেল টুংটাং বাজে

গোধূলিতে ডুবে আস্ত বনভূমি

সময়ের স্রোতে ভাসে থ্যালামাস

বিপরীতে কতদূর যাবে তুমি―?

পৃথিবীর গোলকে বৃথা হাঁটাহাঁটি

সময় সুড়ঙ্গ বেয়ে মহাকাল

সূর্যের বিপরীতে মাধবীলতা

হাতছানি দেয় আমার সকাল

স্বর্ণচাঁপার বাহুডোরে হাওয়া

হংসমিথুন ভাসে ময়ূরাক্ষী জলে

বিষাদপাখির নয়নজুড়ে মেঘ

সখি―প্রেম কাহারে বলে―?

বনের ওপাশে ময়ূর―রক্ত, মাংস,

প্রেম, লতাগুল্ম খুঁটে খুঁটে খায়―

আমার সকাল কেমন করে জানি

তোমার সকাল হয়ে যায়―!




তোমার দেহ মুবারকে এসে

থমকে গেছে মেহজাবিচাঁদ

মোকাম দূরে ফেলে রেখে―

জোছনা খুবলে খেয়েছে হাত

ফল্গুনদীর গভীরে ঊর্মিমালা

খুব ধীরে নেয় শুশুকেরা শ্বাস

ভূমি তো নদীর কাছে খাতা

লিখে রাখে ভ্রমণের ইতিহাস

সেঁওতি বাগানের পাশে একা

ফুটে আছে অ্যাসপ্যারাগাস―

তোমার মুখের ছায়া―হরিদ্রা

হাঁসুলি―কথা নেই ঠোঁটে―

কাঁথার ওম ফেলে বালকরোগ

এমন পূজারিদেবী জোটে?

হয়তো সবই তোমারই দেওয়া

তাই জপ করি মদিরাক্ষীনাম

তোমাকে ডাকলেই খুঁজে পাই

আলমে আরওয়ায় নিজ দেহখাম



শঙ্খসন্ধ্যায় নুনমাখা দেহ

উঠলে ওঠে পিরিতের জ্বর

মন্দিরে শুকতারার সেঁজুতি

ভীষণ শূন্য আমার ঘর―!

ঝিঁঝিঁ পোকার ডানায় সন্ধ্যা

শরীর রাখে না মনের খেয়াল

হয়তো প্রিয় কোনো ফুল রেখে

মাছকাঁটা খায় মায়ের শেয়াল―

শূন্য― ভীষণ এমন শুন্য যে

পৃথিবী যেন ঘুরতে ঘুরতে নাই

শূন্য খোলস অনাদরে শামুক

যেন―আরো গভীরে ডুবে যাই

এই যে এমন― হাওয়ায় উড়ে

যাওয়া নিখোঁজ হওয়ার ভান

যতই হারাই ততই বাড়ে দেবীর

প্রতি আমার মুহব্বতের টান―


**

সোনালু ফুলের জংলায়―

জোছনার চাঁদ একা হাসে

ঘাসের সুগন্ধি পায়ে মেখে

মন্দিরে পূজো দিতে কে আসে?

হয়তো কোচড়ে তার আধখানা

চাঁদ― ডুবে আছে পূরবী বাতাসে

দেবী দেয় তাকে মহুয়া প্রসাদ―

ডাহুকের চোখে নামে দীর্ঘরাত

পাতা আর ফুলের তোলপাড়

সুজনি বিছানো আকাশের গায়

মদিরাক্ষী দেবীর নীলাম্বরী উড়ে

বেপথু বালকঘুড়ি মদির হাওয়ায়

শরাবে ভেজানো চোখ জোনাকি

জ্বলে তোমার পায়ের প্রতি নখে

বালকঘুড়ি শুধু একটা আকাশে

ওড়ে― সেই তো গেছি আমি বখে


**

বুনোচারী হাওয়ার হাওদায় মেঘ

কামনা করি তোমার মাগফেরাত

জলকলমিতে হাঁসের ডানার ঘ্রাণ

ভুল করে ফেলি রুহের ক্বেরাত―

রাতচোরা বেভুল তিয়াসে ডাকে

চোখে ভাসে আমাদের কোঠাবাড়ি

গমের শীষে ঘাম মোছে শালিকেরা

জলসায় ভেজে আব্বার সাদা দাঁড়ি

ঘূর্ণি তুফানে শৈশব উড়ে গোপনে

বিঁচিকলার পির রোজ ভোরে ধুপি

সুগন্ধি ভেসে আসে লক্ষীপূজোর

প্রসাদ থেকে হৃদয়ে বাড়ে মধুকূপি

ফিরতে চাই তুলোমেঘ―হাওয়াঘড়ি

এলোচুলে পথে দাঁড়িয়ো মায়াবিনী

চোখের জল সব আকাশকে দিয়ে

তার কাছে চিরপ্রেম রঙধনু কিনি



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট