পদাবলি : ০২

 



সমঝোতা

স্বপন গায়েন


সমঝোতা করতে করতে শিরদাঁড়া বেঁকে গেছে

জীবনের পথ হারিয়ে যাচ্ছে ধূসর অন্ধকারে

গভীর অসুখে আক্রান্ত মানুষ, তার নাম সমঝোতা।


ঘরে বাইরে সমঝোতা করতে করতে সব্বাই এখন বোবা

সমঝোতা তোমাকে করতেই হবে নইলে অশান্তি সর্বত্র

জীবন থেকে চলে যাবে ভালোবাসা।


একফালি রোদ্দুর খুঁজতে খুঁজতে বসন্ত পেরিয়ে যায়

ভাঙা সংসার যেন ¯্রােতহীন রুগ্ন নদী

সমঝোতা করলেই সব সমস্যার সমাধান।


সুখের বিছানা কাঁটাতে ভরে যায়-

বিবর্ণ রোদ্দুরে পুড়ে যায় ভালোবাসার মধুর সম্পর্ক

মুখে হাসি নেই, রামধনু রঙ ক্রমশ ফিকে হয়ে যায়।


ভাঙছে মাটির বাঁধ-

আর্তনাদ করছে হৃদয়ের উঠোন

সমঝোতা করো, শান্তি পাবে...

নতজানু হয়ে স্বীকার করো সব অঙ্গীকার।



যদি মাটি হও মৃত্তিকার বুকে

গোলাম রাব্বানী 


নীল সমুদ্রের জলে নীলিমার মতো মিশে যাবো 

সুবিস্তৃত রাজ্য বেড়ে তোমাকে-ই রাজরানী করে

নিয়ে যাবো মালে- আরও জেইরেঞ্জারফোর্ডে..


নিয়ে যাবো তোমাকেই, আরও লাও চাই প্রভিন্সে,

দিতে পারি পাড়ি বহুদূর নিঃশ্বাস প্রশ্বাস পড়ার আগে

যদি চোখে চোখ রেখে ছবির মতো সৌন্দর্য হয়ে-

নুয়ে পড় প্রেম পিপাসিত ঠোঁটে; এই মৃত্তিকার বুকে


নিয়ে যাবো তোমাকেই ঝিলমিল হ্রদে, জলপ্রপাতে

প্রেমউপত্যকা ঘেঁষা; সেই জুরিখ, বার্ন, লুসান-ভেনেজা

একটি প্রেমের চকোলেট, চৌষট্টিটি দাঁতের সংস্পর্শে 

আজ প্রেমের সুগন্ধ ওঠে; দু’দুটো হৃদয়ের বন্ধনে 


যদি শক্ত কথা দাও, ভানুসিংহের গল্পগুচ্ছের মতো-

শেষ হয়েও কখনও হবে না শেষ; পাথরে ফুল ফোটাব 

এক পলকেই টপকাবো পৃথিবীর পাঁচটি চূড়াশৃঙ্গ



পুঁথিপাঠ শুনে কান 

রুদ্র সাহাদাৎ 


মেঘে ঢেকে গেছে যৌবন ক্ষণে ক্ষণে কাঁদে জীবন 

আমার বারো মাসই আষাঢ় শ্রাবণ।

তবুও পুঁড়ামন মাঝে মাঝে হাসে, শুনে গান 

ধ্যানে জ্ঞানে শাহ আব্দুল করিম, আব্বাস উদ্দীন

ফকির লালনশাহ,হাসন রাজায় ডুবে থাকে পাগলামন ।

সনাতনী সুর, পুঁথিপাঠ শুনে কান অষ্টপ্রহর...



মৃত্যুর কান্না

তাপস চক্রবর্তী


মৃত্যুর কান্না শুনি রোজ রোজ

কাঠঠোকরার আদলে খট খট খট খট

নাকডাকা ঘুম ভাঙে মধ্যরাতে— 

দেখি নগ্ন চাঁদ খেলছে রুপোর থালায়।


বালিশের বুকে একা- একেলা 

এখনও 

আঁকি রোজ অন্য কারো স্বপ্ন

যেমন পেঁচার স্বরে বিঁধে যায় পোকাদের সারাংশ।


পোকাদের মতো বুকের বাঁপাশে এখনও 

শুন্যতায় ঘিরে ধরে

যেমন ঠুমরীর খেয়াল- হারমোনিয়ামে সরগম

বিষাদ স্মৃতির হাড়গোর।


ঝর্ণার শীতল হাওয়ায়— অনিন্দ্য জ্যোৎন্সা-

চোখ বুজে আসে ক্ষয়ে যাওয়া স্বপ্ননামা...

মিছে আবেগ


আজকাল পোনামাছের ঝোলেও বিস্বাদ হয়ে ওঠে 

নির্বাণ আঁধারে।



কোনকিছু স্থির নেই

হাফিজ রহমান


আলোকের স্পর্শ পেতে সেই কোন ভোরে

হাত পেতে আছি মিছিলে

আলোকরশ্মি নিভু নিভু হতেই

ঝলকে ওঠে মিছিলের বাকানো শরীর

অস্থির সুরঙ্গের মতো আগ্রাসী জিহ্বা

লকলকে জিঘাংসায় নড়ে ওঠে।

শব্দ রশ্মি যেন ছুটে যায় ইথারে ইথারে

বিশ্বব্যাপ্ত সেই শব্দ কুহরে জেগে ওঠে পাহাড়

ঢেউ ভাঙে সমুদ্রের শরীর

আভূমিনত সরলরৈখিক ধ্বনি-প্রতিধ্বনি

সামনে এক উদ্যত সঙিন

সহসা স্তিমিত কলরব, বিপন্ন বিমূঢ়,

নিস্তব্ধতা ভেদ করে জেগে ওঠে মহাপ্রলয় ধ্বনি!  




মৃত্যুর ঘ্রাণ যখন নীম ফুলে মিশে যায়

শুভ মন্ডল


নীম ফুলের গন্ধ সাথে নিয়ে এসেছে যে অন্ধকার, অস্ফুট আর্তনাদ কিংবা নিষ্প্রভ বিড়ালে চোখ, তা দেখে আমি আতকে উঠি; পড়ে দেখতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই এ রাতের ঘ্রাণ। আমার সেন্ডেল অর্ধেকটা ডুবে যায় পৃথিবীর কান্নায় নরম হয়ে যাওয়া উঠানে। হাঁটতে পারিনা শরীর কেঁপে-কেঁপে উঠে; যেন ধ্বংসের  প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমি; তবুও প্রকৃতির খেয়ালে ডোবার ব্যাঙ গলা ফুলিয়ে ডাকে। অপরিচিত লাগে এই পরিচিত চারপাশ। অপরিচিত লাগে আতংকিত বাদুরের ডানা ঝাপটানোর শব্দ; মনে হয় মৃত্যু যন্ত্রণা যেন রসুনের কোয়া অথবা জোনাক পোকা। আকাশ যেন অপঘাতে সিঁদুর মোছা নারী মুখ, রিলিফের চালের জন্য মৃত্যু সমান্তরাল অপেক্ষা। অবশেষে চৌরাসিয়ার বাঁশি যখন ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের সাথে মিশে যেতে থাকলো, আমি অনুভব করতে শুরু করি এই নীমের ঘ্রাণময় অন্ধকার আসলে জীবন বোধের সারাংশ, গোয়ালা বধূর বানানো ঘী। এই আর্তনাদ আর নীম ফুলের গন্ধময় রাত আমার ঘ্রাণ ইন্দ্রিয়কে জানান দেয়  বৃত্তে বাঁধা পুরাণের সেই শরীর পোড়া পাখির গন্ধ। এতোকিছুর পর আমার মরে যেতে ইচ্ছে হয় অথচ বেঁচে আছি বাজপাখির  ঠুকরে খাওয়া কলিজা নিয়ে।





শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট