অণুগল্প- বিলকিছ



বিলকিস
অনন্ত পৃথ্বীরাজ

বিলকিসের বয়স সাত বছর। তবে ওর কোনো জন্মদিন পালন হয় না। সবাই যখন স্কুলে বান্ধবীদের বার্থডে উইস করেÑ তখন ওর খুব মন খারাপ হয়। বিলকিসের বাবা মা কেউ নেই।
বিলকিস গ্রামের এক কোণে  নানির সাথে থাকে। ওর  নানিও খুব অভাগী। কলেরা রোগে আপন সবাইকে হারিয়েছে। নানি অন্যের বাড়িতে সারাদিন কাজ করে। বিলকিস স্কুলে যায়। বাড়ির সব ছোট ছোট কাজ সে একা করে। নানি তাকে সব কাজ শিখিয়ে দিয়েছে। তবে সে আগুন আর পানির কাছে ঘেঁষে না। বিপদ হতে পারে।
 বর্ষাকাল। খুব বৃষ্টি। বিলকিস স্কুলে যায়নি। ঘরের মধ্যে একাকী তার ভালো লাগছে না। বৃষ্টি থেমে গেলে সে বাইরে বেড়িয়ে আসে। একদিনের বৃষ্টিতে চারদিকে যেন বন্যা হয়ে গেছে। অনেকেই মাছ ধরছে। ছোট বড় কত রকম মাছ।
হাঁটতে হাঁটতে বিলকিস রেললাইনের কাছে চলে আসে। সামনে নদী। রেলসেতুর নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে পানির প্রবাহ ছুটছে। সারাদিন বৃষ্টি ছিল। আজ এ দিকটায় কেউ আসেনি। এখন তার রেলগাড়ি দেখতে খুব ইচ্ছা করছে।
বিলকিস দেখতে পায় তীব্র ¯্রােতে রেলসেতুর পাশে মাটি সরে গেছে। চাপচাপ মাটি ভেঙ্গে পড়ছে নদীতে। রেললাইন আগলা হয়ে ঝুলে আছে। বিলকিস ট্রেনের হুইসেল শুনতে পায়। সে দূরে রেলগাড়িটি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। এখন কী করবে সে ঠিক বুঝতে পারছে না!
সর্বনাশ! এখন সেতুর উপর ট্রেন উঠলে সেতু ভেঙ্গে সবাই মারা যাবে। বিলকিস আশেপাশে কাউকে দেখতে পায় না। এখন সে কী করে! কিন্তু এত ভাবনার সময় এখন নাই। সে একটু সামনে এগিয়ে যায়। পরনের লাল জামাটি খুলে উঁচু করে তুলে ধরে।
রেল চালক সামনে লাল বিপদ সংকেত পেয়ে ট্রেন থামিয়ে দেয়। নির্ঘাত দুর্ঘটনা হাত থেকে ট্রেনটি রক্ষা পায়। বেঁচে যায় শত প্রাণ। তখন বিলকিসের আনন্দ যেন আর ধরে না!
উপদেশ : আমরা সর্বদা ভালো কাজ করার চেষ্টা করব।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট