পদাবলি



জ্যোৎস্না
শারমিন আক্তার

এখনো; এখনো দূর কোন মরুভূমে মরীচিকা ওঁৎ পাতে। কাগজের নৌকোয় পাল তোলে খেঁয়ালী স্বপ্ন যত। কাঁচা রোদে চোখ মেলে যে নকশিকাঁথার পোঁড়া গ্রাম,  সেখানে সন্ধ্যেবেলায় পাহাড় ঘেঁষে নীরবতা নামে। ওদিকে জোৎস্না কোন সুবোধ বালকের মত খুলে বসে নিযুত কবিতার পাঠ্যবই। এখনো তুমি হেঁটে যাও মেঠোপথ আমার চোখের ভাঁজ গলে, সেখানে আমার কত জনমের মেঘ জল হয়ে গড়ায় বিশ্বচরাচর। এখনো...



শীতের বিকেল
মাহমুদ নোমান

পাখিদের ডাকাডাকিতে
পথ হারিয়ে
যাদুটোনার ছলে
ওয়াবীলতা ফুলের ঝলওয়া
দস্তানায় দিলখুশÑ
প্রজাপতির খেলা দেখতে দেখতে
পেটকাটা ধানগাছের ফুঁঝায়
দুলে উঠে নাইওরির
পাঁজরে আটকা কষ্ট,
কদমে কদমে এগোয় অন্ধকার



তুমি এবং তোমরা
সৈয়দ শরীফ

তোমার চোখে স্বপ্ন দেখি-
স্বপ্ন ভেঙে হৃদয়টিতে হচ্ছে এ কী?
প্রায় সেখানে কোরছে ব্যথা; কান্না শোনো?
ছিঃ ছিঃ কীসব বলছি, আজব !
তুমি তো আজ অন্য চোখে স্বপ্ন বোনো..

যাচ্ছে কেমন দিন তোমাদের?
চাঁদনী রাতে- জ্যোৎস্না মেখে;
ওর দু’হাতে হাতটি রেখে-
থাকছো কেমন? বড্ড সুখী?
কষ্ট কভু সুখটা ভেঙে দেয় না উঁকি?

এই তো আমার চাওয়া ছিলো-
দু’চোখ মেলে দেখবো তোমায়
সুখেই আছো.. সুখেই আছো..
আজ আমার আর কষ্ট তো নেই;
কারণ- তুমি সুখী হয়ে
আমার মতো আরেকজনার
বুকেই আছো ! বুকেই আছো !


বাসস্ট্যান্ড
অসীম মালিক

আগমন ও প্রস্থানের কোলাহল গায়ে মেখে
রাস্তাগুলি ছড়িয়ে গ্যাছে চাদ্দিকে ...

যারা এসেছিল ,
কাজ সেরে ফিরে গ্যাছে ঘরেÑ
বাস ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, প্যাসেঞ্জার ও ফেরিওয়ালার ডাকে,
বাসস্ট্যান্ডের অলিতে-গলিতে
থেকে গ্যাছে কিছু নমুনা .....

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাস্তাগুলিকে
এক ছাতার তলায় এনে
আদর্শ হিন্দু হোটেলের গলিতে হারিয়ে যায়নি বাসস্ট্যান্ড !

সম্প্রীতির ঈপ্সিত ইচ্ছেগুলি
বাসের সিটে সিটে ছড়িয়ে দিয়ে
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে
একাকী , নীরব বাসস্ট্যান্ড...

প্যাসেঞ্জার ঘরে নিয়ে আসেনি বাসস্ট্যান্ডের মুখ !

মৃত্যুর ডাকপিয়ন
শাহিন আলম

মেহেদী রাঙা বউয়ের মতো মৃত্যুকে বেসেছি ভালো
মাঝরাতে জোনাকীর আলোয় হেঁটে হেঁটে
মৃত্যুর শহরে গড়েছি ঠিকানা।
এ শহরের প্রতিটি কলোনীতে
সকালের রোদের সাথে নেমে আসে মৃত্যুদূত
দস্ত আর নখের ভিতরে গেঁথে রাখে
শত মানুষের প্রাণ।
প্রতিটি গলির মোড়ে মৃত্যুর ডাকপিয়ন থাকে দাঁড়িয়ে
নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছে দেয় চিঠি।
আমি দরজার কপাট রেখেছি খুলে
রঙিন খামের অপেক্ষায় চেয়ে আছি পথ।



কামনা
নাবিল তুরাব

তারচেয়ে ভালো তুমি ঘুমিয়ে পড়ো; হে রজনীসন্ন্যাসী... অলুকপাড়ায় সূর্য নামে যখন। রমণীর মুখ চেয়ে কাটানো যায় যখন কয়েক প্রশস্ত রাত্রি এবং অনাহারে কাটানো যায় কয়েক তুচ্ছ মাঝারি জীবন। ফুসফুসের কষ্টে ভোগা রজনী, তৃষ্ণাতুর বালকের গড়াগড়ি করা। এ সবই জরাজীর্ণ মূর্তির সবল পরশ্রীকাতর কামনার ফসল।


পাপ
অপু সরকার

ভালোবেসে বিছানায় গেলে পাপ হবে!
তোমার হবে যা, তাও কী আমার?
কোন এক সূর্য খুনের পরে
বুকের ভেতরে লেগে থাকা তামাটে অন্ধকার
আমি ভাবি; তুমি কার !
আমি কার !
আমাদের পাপগুলো
কীভাবে কেন শুধু আমার।
এভাবে দিন গেলে
নিঃসঙ্গ হতে আর কতো দেরী?
সঙ্গী কী কখনো ছিলে আমার ?
জলের প্রথম ভাগে পাপ ধুতে যেয়ে
হে প্রতিবিম্ব সঙ্গী প্রশ্ন আমার...




শব্দের পাঠ
মীর সাহাবুদ্দীন

পৃথিবীর মুদ্রনচলে
প্রতি পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠ হয় উচু উচু দালান।
এ বাংলায় ধান, পাট নিচু হতে থাকে
ডুবতে থাকে রেডিমেড গার্মেন্টস।
মানুষ গুলো ছুটে চলে আরব, নিউইয়ার্ক,
লন্ডন বা আরো কোন প্রবাসী পথে
চিটা ধানের মত ঝড়ে পরে উড়ে চলে বাতাসে বেগে...
তবুও কম্পন বাড়তে থাকে,
গাড়ির হর্ন ছুতে থাকে বহুতল ভবন।
জাপানের উপকূল বা দক্ষিণ প্রশান্ত
পাঠ না হতেই ফেটে যায় লাভা
আমাজানের গভীরের মতই মধ্যে
দুপুরে শব্দগুলো দ্রুত ছুঁতে পেয়ে বাংলা
ধান গম কিংবা জবের মাঠগুলো হয়ে উঠে উত্তপ্ত বালি।



ভরাডুবি
অভিষেক ঘোষ

প্রত্যুষের বিভূতি ছড়ানো, আভিজাত্য
আলোতে মাখামাখি নৈঋত কোণ
ঘেঁষে বয়ে যাওয়া আমার কল্পনার নদীতে
ভ্রাম্যমাণ শখের পানসীটার
ভরাডুবি ঘটলো আকস্মিকভাবে।।


পথিক
পাপুল চৌধুরী

অজানা দূরের দেশে আমি এক গন্তব্যহীন পথিক,
হাঁটিতেছি অচেনা পৃথিবীর পথে ভাগ্যের সন্ধানে,
সমাপ্তির জীবনে অসমাপ্ত ইচ্ছে পূরণে;
দিগন্তরেখার সীমান্ত পানে খুঁজেছি অবিচল, চির প্রশান্তির স্থল।
পথে মাঠে ঘাটে, সুদূর সাগর ললাটে
হেঁটেছি বহুদূর, চির প্রশান্তির খোঁজে;
ভোরের সূর্যোদয় থেকে, প্রিয় গোধূলির সাঁঝে
খুঁজে খুঁজে নিরাশায়, আমি আজ ক্লান্তির দলে।
পথকেই বানিয়েছি আশ্রয়, দুদ- বিশ্রামের ছলে
শয্যাতল রেখেছি মাটি,উপরে নীল আকাশ পরিপাটি।
আহার করিবো কিসে! ক্ষণিকের তৃষ্ণা মেটাই
অপূর্ণ এক ঘটি জলে।
চোখের চাহনিতে ঝাঁপসা আলোয়,
স্বলকিত জ্যোৎস্নার পর, নিশিথের কালোয়;
তবুও খুঁজেছি, খুঁজে চলেছি পৃথিবীর দ্বারে
চেয়েছি অনুরোধে, কড়া নেড়েছি শান্তির দুয়ারে;
আমায় একটু শান্তি দাও! হোক না সে ক্ষণিকের
তবুও আমার চাই; কিন্তু সে কোথায়?
চারদিকে শুধু হিংসা আর প্রতিহিংসার আগুন;
জ্বালিয়ে দিচ্ছে বিবেক, জ্বলছে মনষত্ব পৃথিবীর রোষানলে!
প্রেমিকের ভালোবাসায়, আসেনা প্রেম বসন্তের ফাগুন।
এ কেমন স্বার্থান্বেষী পৃথিবী!
চির প্রশান্তির আশায়, যেদিকেই তাকাই
শেষ থেকে সূচনায়, শুধু স্বার্থের সমারোহ;
স্বার্থান্ধ মনুষ্য কূলে, হিংসা- প্রতিহিংসা ভুলে
খুশির বার্তাবাহী প্রতিটি ফুলে,
এই তৃষ্ণার্ত মনের সাধ মেটাবো;
এমন দুদ- শান্তি এই পৃথিবীর কোথাও নাই।



একবার যদি ডাকো
অনার্য আমিন

একবার যদি ডাকো দেখবে তুমি
কতোটা উচাটন হৃদয় আমার
কতোটা কাঙাল ভালোবাসার।

দেখবে তুমি রিক্ত ভূমি
সেজেছে আবার সবুজে
ফুল ফুটবে; মধুপায়ীর অবাধ বিচরণে
মাতবে মালী।

শত কষ্ট ভুলে ছুটে চলে আসব
ছুঁতে সেই প্রণয়ের মুকুট।

একটি ডাক পেলে সবকিছু ফেলে
পাড়ি দেব সাত সমুদ্দুর,
হবো নাবিক নয়তো পাখি
দেখবো তোমায় ভালোবাসায়
জুড়িয়ে যুগল আঁখি।


বৃষ্টি সেতো কবেই থেমে গেছে
ঊষার মাহমুদ

ঝুমবৃষ্টিময় একটি দুপুর গুঁজে রাখি হৃদয়ের সিলিং জুড়ে;
খোলা বাতায়ন, উন্মুক্ত পথ; স্নিগ্ধবাতাসে বোতাম খোলা বুক।
ভেজাকাকের নয়নের কাতরতায় ভরাডুবি স্বপ্ন আমার;
দেয়ালের কার্নিশে বেড়েউঠা বটপাতার সংসারে
আটকে থাকা দৃষ্টি হতাশার ঘোর।
যোগল পাখির লেনাদেনায় ইচ্ছেগুলো ফেরারি হয়
অস্তিত্ব জুড়ে অচেনা স্পর্শে মাতাল ঘোড়ার ছুটেচলা;
বৃষ্টি, তুমি আরো জোরে আসো, অন্ধকার করে আসো
একটি লালশাড়ি আর নীল শার্টের বিনিময় হোক তোমার গভীরতায়....
চড়–ই পাখি উড়ে যাওয়ার শব্দে ধ্যান ভাঙে, 
বৃষ্টি সেতো কবেই থেমে গেছে, দ্যাখো, 
বাঁশপাতা চুয়ে চুয়ে এখনো ঝরছে জল কণা;
আমার আকাঙ্খা শেষ হয়েও হয়না...



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট