গল্প : দুপুরবেলা



দুপুরবেলা
রুমানা নাওয়ার

সুনসান দুপুর। চারদিক নিস্তব্ধ। পথঘাট জনমানব শূন্য। মা বলতো এ সময়টায় সাবধান থাকতে। অঘটন গুলো এ সময় বেশী ঘটে। দু’একটা কাজ ছিলো হাতের সেগুলো শেষ করে শাওয়ার নিতে যাবো এমন সময় ডোর বেলটা বেজে উঠলো। আমল না নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলাম। আবার বেল পড়ার শব্দ। অনবরত বেজেই চললো। ফকির টকির তো ঢুকতে পারে না। তাহলে এ অবেলায় কে হতে পারে ? চিন্তার রেখা অদিতির কপালে। মহসীনও অফিস ট্যুরে বাইরে। তাহলে কে হতে পারে ? চিন্তা করতে করতে দরজাটা খুলল। এবং ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো অদিতি।
-শাওন তুমি?
-হুমম, আমি।
-কোত্থেকে হঠাৎ!
-এ পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম তোমাকে একটু দেখে যাই। তাই আসা।
-এভাবে কিছু না বলে ?
-বাসায় কেউ থাকবেনা জানতাম। তাই আসা।
অদিতি একটু ভয় পেয়ে গেলো শাওনের কথায়। কি উদ্দেশ্যে আসলো শাওন? শাওন বুঝতে পারলো অদিতির মনোভাবনা। তাই প্রসঙ্গ ঘুরালো- কি একটু আপ্যায়নও করবেনা। বসতে বলবা না। প্রথম আসলাম তোমার বাসায়।
অদিতি লজ্জা পেল শাওনের কথায়- আরে বসো বসো। কি দেবো তোমাকে। জুস নাকি কফি?
-জুস দাও। বাইরে যে রোদ। একমাথা রোদ নিয়ে তোমার কাছে আসলাম। তেষ্টায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
অদিতি ভেতরে চলে গেলো। অতিথির আপ্যায়ন রসদ জোগাতে। শাওন অদিতির চলে যাওয়া দেখলো মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে। একটুও বদলায়নি মেয়েটি। বিয়ের পর আরো রুপবতী হয়েছে যেন। ঠিকরে পড়ছে রূপ মাধুরী তার। সাজহীন নিরাবরণ অদিতি। তবুও কত সুন্দর মায়াবী।
শাওন চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো পিছনের কথা। অদিতির সাথে পরিচয়, প্রেম-ভালোলাগা, প্রপোজ প্রথম চুমু সব সব স্মৃতিপটে জাবর কাটলো শাওন।
প্রথম প্রপোজটা অদিতির ছিলো। একটা চিরকুটে লেখা ‘ভালোবাসি’।
শাওন প্রথমে সায় দেয়নি ডাকে। ভেবেছিলো হয়তো কত অদিতিই প্রপোজ করবে। সবগুলোতে সাড়া দিতে নেই। কিন্তু যত দিন যায় অদিতির প্রতি ওর টানটা বাড়তে থাকে। ওর সঙ্গ পেতে ও চোখের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে খুব। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। অদিতি শাওনের সাড়া না পেয়ে কেমন জানি বিমর্ষ মনমরা হয়ে থাকে সারাক্ষণ। কাউকে বুঝতে দিলোনা ওর ভিতর কি ক্ষরণ চলছে। নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া চলতে লাগলো তার। শাওনকে এড়িয়ে চলতে লাগলো। ওকে দেখলে একধরনের আড়ষ্টতা কাজ করতো ওর ভিতর। এর পর শাওন অনেকবার চাইছে অদিতির কাছ ঘেঁষতে। ভালোবাসি কথাটা বলতে কিন্তু পারেনি। ওর দূরেদূরে গা-ছাড়া ভাব দেখে।
অদিতি প্রমিজ করলো আর কোন ভালোলাগার পাত্তা দেবেনা। পড়াশুনা টাই মোক্ষ। সুন্দরী ছিলো বলে বিয়ের প্রপোজাল আসতে লাগলো অনার্স কমপ্লিট না হতেই। মহসীন বাবা মায়ের পছন্দের পাত্র। শিক্ষিত বুদ্ধিমান ভালো সরকারি চাকুরে। অদিতিরও পছন্দ হলো ওর পার্সোনালিটি আর ব্যাকগ্রাউন্ড সব।
অনেক ভালো মানুষ মহসীন। আজ এতবছর পর ও অদিতির প্রতি ওর ভালোবাসা বিন্দুপরিমাণও কমেনি। সে বিয়ের প্রথম দিনের মতো।



জুস আর ও নানা স্ন্যাক নিয়ে আসলো অদিতি।
শাওন গা এলিয়ে বসে ছিলো এতক্ষণ অদিতি আসাতে সোজা হয়ে বসলো।
জুসটা এগিয়ে দিলো অদিতি শাওনের দিকে। এক চুমুকে পুরো গ্লাস সাবাড় করে দিলো। বুঝা গেল খুব তেষ্টা পেয়েছে শাওনের। আপাদমস্তক দেখলো ওকে অদিতি। শাওন ব্রিলিয়ান্ট চৌকষ ছেলে ও একসময় ভালোবেসে মন পেতে চেয়েছিল। ভালো বক্তা ভালো লেখক এ সময়ের। এক নামে সবাই চেনে তাকে। শাওন হাসনাত। অদিতির ভালোবাসার মানুষ। একটু হেসে দিলো যেন। খেয়াল করলো শাওন।
-হাসছো কেন অদিতি?
-না এমনি।
-বিয়ে করছো না কেন?
-তোমার  মতো কাউকে পাচ্ছি না বলে।
-কি বলো তুমি। আমার চেয়ে ঢের সুন্দরী মেয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তুমি ডেকে দেখ।
-শাওন হাসনাত। বিশাল সেলিব্রেটি এখন।
কিন্তু আমি যে ভুল করেছি অদিতি সে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত তো করতে হবে আমাকে। তোমায় পেয়েও আমি হারিয়েছি আমারই ভুলে। তুমি আমায় ক্ষমা করোনি আজও?
-আরে না। তোমার প্রতি আমার কোন রাগ বা ক্ষোভ নেই শাওন। আমি বর্তমান নিয়ে সুখী। মহসীন অনেক ভালো মানুষ।
শাওন কি যেন খুজে অদিতির চোখে। তারপর চোখ নামিয়ে ফেলে হঠাৎ করে।
অদিতি একটু তফাৎ নিয়ে বসে। শাওন চুপচাপ।
অদিতি কথা খুঁজে বলার জন্য।
-তোমার বাবা মা কেমন আছে ?
- ভালো সবাই ভালো। শুধু আমি ছাড়া।
- তুমি বিয়েটা করে থিতু হও। তারপর স্থিরতা আসবে জীবনে।
-আচ্ছা; আজ তবে আসি অদিতি। আবার যে কোনদিন হুট করে চলে আসবো তোমায় দেখতে। এ বলে সামনে পা বাড়ালো শাওন। অদিতিও এগিয়ে গেল বিদায় জানাতে। হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে অদিতির খুব কাছে চলে আসলো শাওন। কিছু বুঝে উঠার আগেই অদিতিকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে অদিতির।
-প্লিজ শাওন ছাড় আমাকে।
-না, অদিতি না। প্লিজ আমায় একটু আদর করতে দাও। কতদিন চেয়েছি তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরবো। আদর করবো।
অদিতি না না যতো বলে শাওন ততো জোড়ে আঁকড়ে ধরে। শেষে আর না পেরে অদিতির ঠোঁট দুটো চেপে ধরে নিজের উত্তাল ঠোঁটে।
অদিতির হঠাৎ মায়ের কথা মনে পড়লো। ঠিক দুপুরবেলা যত অঘটনগুলো ঘটে।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট