চির ভাস্বর কবি নজরুল




চির ভাস্বর কবি নজরুল
মীম মিজান

লেখক সুভাষ বসুর নজরুলকে নিয়ে বলা একটি উক্তি দিয়ে শুরু করছি যে উক্তিতে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখন যুদ্ধে যাব- তখন নজরুলের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাব-তখনও নজরুলের গান গাইব।’ আমরা তাই নজরুল কে শুধু কবি পুরোধা দিয়ে আবদ্ধ করতে চাই না। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক উচ্ছল যৌবনা নদীর ন্যায়। নদীর ঢেউ যেমন বয়ে চলে নিরবধি, ঠিক তেমনি নজরুল ও তাঁর কলমকে চালিয়েছিলেন সাহিত্যের সকল শাখায়। তিনি যেমন কবি, তেমনি একজন ঔপন্যাসিক ও গল্পকার। যেমনি একজন সম্পাদক তেমনি একজন নাট্যকার ও অনুবাদক। প্রাবন্ধিক বা চলচ্চিত্র পরিচালকও তিনি।
এই ভাস্বর কবি ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। চুরুলিয়া গ্রামটি আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া থানায় অবস্থিত। পিতামহ কাজী আমিনউল্লাহর পুত্র কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয়া পতœী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। তাঁর বাবা ছিলেন স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম। তাঁরা ছিলেন তিন ভাই এবং বোন। তার সহোদর তিন ভাই ও দুই বোনের নাম হল: সবার বড় কাজী সাহেবজান, কনিষ্ঠ কাজী আলী হোসেন, বোন উম্মে কুলসুম। কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। তিনি স্থানীয় মক্তবে (মসজিদ পরিচালিত মুসলিমদের ধর্মীয় স্কুল) কুরআন, ইসলাম ধর্ম , দর্শন এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেন। ১৯০৮ সালে যখন তাঁর বাবা মারা যান তখন তাঁর বয়স মাত্র নয় বছর।
এছাড়াও তাঁর শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন, বৈবাহিক জীবন, সাংবাদিক জীবন, সাহিত্যিক জীবন ইত্যাদি সম্পর্কে কমবেশী আমরা সবাই জ্ঞাত। বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ সালের ২৪শে মে ভারত সরকার থেকে অনুমতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরিয়ে আনেন। ১৯৭৬ সালে কবিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। দুরারোগ্য ব্যাধিতে কবি আক্রান্ত ছিলেন অনেকদিন, দেশ বিদেশের বহু জায়গায় চিকিৎসা করেও কবিকে সুস্থ করা সম্ভব হয়নি, জীবনের অনেক দশক তিনি নির্বাক ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯শে আগস্ট বাংলা সাহিত্যকে ঋণী করে তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তিনি তাঁর অনবদ্য সাহিত্য অবদানগুলির জন্যই আমাদের মনের মণিকোঠায় অনেক বড় স্থান দখল করে আছেন। সেগুলোর মধ্যে সব থেকে আবেদনমূলক সৃষ্টি হলো তাঁর কাব্য। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলির অন্যতম হলো,
অগ্নিবীণা, সঞ্চিতা (কবিতা সংকলন), ফনী-মনসা, চক্রবাক, সাতভাই চম্পা, নির্ঝর, নতুন চাঁদ, মরুভাস্কর, সয়ন, সাম্যবাদী, দোলন-চাঁপা, বিষের বাঁশি, ভাঙ্গার গান, ছায়ানট, চিত্তনামা, সাম্যবাদী ইত্যাদি।
তিনি নিজে নিজে গান রচনা করে সেগুলিতে সুরারোপ করেছেন ও নিজ কণ্ঠে গেয়েছিলেন। সংগীত গীতিকার ও সুরকার হিসেবে সম্যক খ্যাত ছিলেন তিনি। তাঁর গানের সংকলনগুলি নজরুলগীতি হিসেবে বাংলায় প্রচলিত হচ্ছে। এরুপ গীতি সংকলনের অন্যতমগুলি হলো, বুলবুল, সন্ধ্যা, চোখের চাতক, নজরুল গীতিকা, নজরুল স্বরলিপি, চন্দ্রবিন্দু ইত্যাদি। “নজরুল সর্বসমেত প্রায় তিন হাজারেরও বেশি সঙ্গীতের রচনাকার। পৃথিবীতে সঙ্গীত রচনার  ইতিহাসে এর চেয়ে বড় রেকর্ড আমার জানা নেই। রবীন্দ্র-প্রতিভা আনুমানিক দু’হাজারের কিছু বেশি গান রচনা করেছিল।” (নজরুল চরিত-মানস, ড. সুশীল কুমার গুপ্ত।) নজরুলের সঙ্গীত ভা-ারের অমূল্য সম্পদ হলো- ইসলামী সঙ্গীত। এ সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট নজরুল গবেষক কবি আবদুল আজীজ আল-আমান তার “নজরুলের ইসলামী সঙ্গীত” প্রবন্ধে বলেন, “বাংলা সাহিত্যের আদি থেকে আজ পর্যন্ত হাজার হাজার মুসলিম কবি-সাহিত্যিক সম্মিলিতভাবে জাতির আশা-আকাক্সা রূপায়নে যা না করতে পেরেছেন। মাত্র শ’ দুই ইসলামী সঙ্গীত রচনা করে এক নজরুল ইসলাম নিশ্চিতভাবে তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করেছেন।”


‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’- এই গানটির জনপ্রিয়তা সমকক্ষ আর একটি গান খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ গানটি ছাড়া বাঙালি মুসলমানদের ঈদুল ফিতর  উদযাপন প্রায় অসম্ভব।  এ গানটি রচনার ইতিহাসটি নিম্নে উল্লেখ করছি।

অমর কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমদের ‘গীতিকার নজরুল’ প্রবন্ধে নজরুলের সাঙ্গীতিক প্রতিভার পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে উক্ত গানটি রচনার ইতিহাস সম্পর্কে বলেন-
“কুচবিহার কলেজের ছাত্র আমি। স্কুল কলেজ মিলে প্রতি বৎসর মিলাদ করতাম। সেই মিলাদ মাহফিলে কবিকে আমন্ত্রণ করি। সেই থেকে পরিচয়ের সূত্রপাত। তিনি আমার গান শুনে আমাকে উৎসাহ দিলেন। বললেন, “সুন্দর মিষ্টি কণ্ঠ, কলকাতায় চল, তোমার গান রেকর্ড করা হবে।” ১৯৩০ সনে প্রথম গান রেকর্ড করে কুচবিহার চলে আসি। ১৯৩১ সনে আবার কলকাতায় যাই এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করি। গ্রামোফোন কোম্পানি রিহার্সেল ঘর তখন চিৎপুর রোডে। শুনলাম- কাজী সাহেব সেখানে রোজই যান। এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, “কাজী সাহেব কোথায়?” তিনি বললেন, “পাশের ঘরে গান লিখছেন।” আমি ঢুকলাম। তিনি মহাউৎসাহে বলে উঠলেন, “আরে আব্বাস, তুমি কবে এলে? বস বস বস।” ... সামনে এগিয়ে গিয়ে কদমবুছি করলাম। তিনি বললেন, “সবাই আমাকে কাজী সাহেব বলে, তুমি কিন্তু কাজীদা বলে ডাকবে আমাকে হ্যাঁ, তোমার জন্য গান লিখতে হয়। আচ্ছা ঠিক হবে।”
“আচ্ছা ঠিক হবে” তো বললেন, কিন্তু যতবারই যাই গ্রামোফোন কাবে ততবারই দেখি তাকে ঘিরে রয়েছেন অনেকে। আমি সংকোচে কিছুই বলতে পারি না। পাশের ঘরে পিয়ারু কাওয়াল রিহার্সেল দিচ্ছেন উর্দু কাওয়ালী গানের। বাজারে সে সব গানের কী বিক্রি। আমি কাজীদাকে বললাম- এমনিভাবে বাংলা কাওয়ালী গান লিখে দিতে পারেন আমার জন্য?” গ্রামোফোন কোম্পানির বাঙালি সাহেব বললেন, “না, না, ও ধরনের বাংলা গান বিক্রি হবে না।” অবশেষে প্রায় এক বৎসর পরে সাহেব রাজী হলেন।  কাজীদাকে বললাম, “সাহেব রাজি হয়েছেন।” কাজীদা তখনি আমাকে নিয়ে একটা কামরায় ঢুকে বললেন, “কিছু পান নিয়ে এসো।” পান নিয়ে এলাম ঠোঙা ভর্তি করে। তিনি বলেন, ‘দরজা বন্ধ করে দিয়ে চুপ করে বসে থাক।” ঠিক ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে লিখে ফেললেন, ‘ও মন রজমানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।” সুর সংযোগ করে তখনি শিখিয়ে দিলেন গানটা।”

নজরুল সঙ্গীত প্রতিভা সম্পর্কে আভাস পেতে উপরিউক্ত ঘটনাটি উল্লেখ করলাম।

বিশিষ্ট নজরুল-গবেষক সাহাবুদ্দিন আহমদ তার ‘বহুরূপে নজরুল’ গ্রন্থে বলেন-

“নজরুলের কবিতার মত নজরুলের সঙ্গীতের যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সে কথাটা আমি জোর দিয়ে বলতে চাই। এবং আমার ধারণা নজরুলের গানগুলো গীতি হিসেবে নয় সঙ্গীত হিসেবেই পরিচিত হওয়া উচিত। কেননা আসলেই নজরুলের গান ভাব-মিশ্রিত। চিত্র-মিশ্রিত, সুর-মিশ্রিত গান; তাই তাকে গীতি অপেক্ষা সঙ্গীত হিসেবে চিহ্নিত করাই যুক্তিসঙ্গত।
ক্ষণজন্মা এ ভাস্বর ছোট গল্প রচনায় ও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তাঁর ছোটগল্প গ্রন্থ গুলি হলো, ব্যথার দান, রিক্তের বেদন ও শিউলি মালা।
সাহিত্যের বৃহৎ শাখা উপন্যাস ও লিখেছিলেন। তাঁর বিখ্যাত সেই উপন্যাস গুলি হলো, বাঁধন হারা, মৃত্যুক্ষুধা ও কুহেলিকা।


নাট্যকার হিসেবেও নজরুল কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর অনবদ্য বিশ্বখ্যাত নাটক গুলি হলো, ঝিলিমিলি, আলেয়া, পুতুলের বিয়ে (কিশোর নাটক), মধুমালা, ঝড়। প্রবন্ধ এবং নিবন্ধের অঙ্গণেও মুন্সিয়ানা প্রদর্শন করেছেন নজরুল। জ্ঞান বিদগ্ধ সেই প্রবন্ধ এবং নিবন্ধ গুলি হলো, যুগবানী, ঝিঙ্গে ফুল, দুর্দিনের যাত্রী, রুদ্র মঙ্গল ও ধূমকেতু।
পবিত্র কুরআন থেকে শুরু করে বিশ্ব সাহিত্যের বিখ্যাত কিছু গ্রন্থও তিনি সাবলীল অনুবাদ করেছিলেন। সেই অনুবাদ গুলি হলো, রাজবন্দীর জবানবন্দী, দিওয়ানে হাফিজ, কাব্যে আমপারা ও রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম।
১৯২০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই ১২ তারিখে নবযুগ নামক একটি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হওয়া শুররু করে। অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন শেরে-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক- এই পত্রিকার মাধ্যমেই নজরুল নিয়মিত সাংবাদিকতা শুরু করেন। ঐ বছরই এই পত্রিকায় “মুহাজিরীন হত্যার জন্য দায়ী কে?” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেন যার জন্য পত্রিকার জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং নজরুলের উপর পুলিশের নজরদারী শুরু হয়। এছাড়াও তিনি লাঙ্গল ও ধুমকেতু পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন নিষ্ঠার সাথে।
অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করা বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে তাঁর সমসাময়ীক সাহিত্যবোদ্ধাগণ ও হিতৈষী প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্মাননা প্রদান করেছেন। নজরুলের সম্মাননাগুলো হলো, ১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতায় অ্যালবার্ট হলে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয়ভাবে সংবর্ধনা জানানো হয়। ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নজরুলকে ‘‘জগত্তারিণী’’ স্বর্ণপদক প্রদান করে। ১৯৬০ সালে ভারত সরকার নজরুলকে ‘‘পদ্মভূষণ’’ খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৬৯ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নজরুলকে সম্মানসূচক ডি. লিট প্রদান করে।


১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নজরুলকে সম্মানসূচক ডি. লিট প্রদান করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘‘একুশে ফেব্রুয়ারি স্বর্ণপদক’’ প্রদান করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম দু’জনই বাঙালি কবি এবং এ দু’জন বাংলা ভাষায় সৃষ্টি ধর্মী রচনা নির্মাণ করে গেছেন। তবে রবীন্দ্রনাথ একজন নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে এবং নজরুলকে মনে করা হয় নোবেল বিজয়ীদের একজন হওয়া উচিত ছিল, যদিও তিনি নোবেল পাননি। নজরুল ইসলাম মহাকবি হাফিজের ভাবশিষ্য। হাফিজ ও রুমীর প্রভাব তাঁর লেখায় খুঁজে পাওয়া যায়, পহেলা ফেব্রুয়ারি ২০০৬ইং তারিখে ইরানের রাজধানী তেহরানে ‘ফারসি ভাষা ও সাহিত্য সম্প্রচার কেন্দ্র’ মিলনায়তনে ‘‘নজরুল সেমিনার’’ অনুষ্ঠিত হয়; সেখানে হাফিজ ও নজরুলের ছবি পাশাপাশি ছিল। অনুষ্ঠান শুভ সূচনা হয়েছিলো হাফিজ ও নজরুলের কবিতার পঙক্তি দিয়ে।
তাঁকে নিয়ে দেশ-বিদেশে অসংখ্য গবেষণাকর্ম সম্পাদনা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে। তাঁর জীবন ও সাহিত্য দর্শন নানামুখী। জীবন সংসারের প্রায় সকল বিষয় তিনি তাঁর সাহিত্য ও গীতিতে ধারণ করেছেন। তেমনি নজরুল জীবন ও কাব্যে ধর্ম মূল্যায়নে নজরুল গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদ লিখেছেন, ‘‘নজরুলকে যারা সরল সহজ কবিতা বা কাব্য লিখিয়ে কবি বলে মনে করেন তাঁদের পক্ষেও এই জটিল রহস্যের উন্মোচন খুব সহজ হবে না মনে করি। এইসব কবিতার রহস্যময় কবিতার মর্মোঘাটন করতে পারবেন তারাই যারা একই সঙ্গে বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্র বিদ্যার বিশারদ, কাব্যশাস্ত্র বিশারদ, দার্শনিক ও কবি।’’
বাংলা সাহিত্যে মাইকেলই প্রথম বিদ্রোহী কবি। তবে আধুনিক যুগের প্রবক্তাকে ছাড়িয়ে সারা বিশ্ব ব্যপী বাংলার বিদ্রোহী কবি হিসেবে যিনি খ্যাত তিনিই আমাদের নজরুল। একবার যারা নজরুলের পৃথিবীতে প্রবেশ করেছেন তারা প্রত্যেকে নজরুল আদর্শের সৈনিক হয়ে হেঁটেছেন এবং নজরুলের মতো আজীবন অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। কলম যে বন্দুকের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হতে পারে তা তিনি প্রমাণ করেছেন তার ক্ষুরধার আগুনঝরা লেখনীর দ্বারা। তাঁর কলমকে ভয় করতো ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী, এ জন্যে তাঁর পাঁচটি গ্রন্থ ও বেশকিছু কবিতা, প্রবন্ধ এবং গান ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। যে পাঁচটি বই বাজেয়াপ্ত করেছিলেন, সেগুলো হলো-(১) যুগবানী, (২) বিষের বাঁশি, (৩) ভাঙার গান, (৪) প্রলয় শিখা এবং (৫) চন্দ্রবিন্দু। নজরুল যেমন তাঁর আসল দুশমন চিনেছিলেন, এ জন্যে সেই দুশমনরা তার পেছনে লাগিয়েছিল গোয়েন্দা, তাকে পাঠিয়েছিল এই সুন্দর বসুন্ধরার ফুলে-ফলে ভরা সবুজ-শ্যামল গাছপালার অক্সিজেনযুক্ত আলো-বাতাসের পরিবেশের পরিবর্তে-হতশ্রীর আবছা আলো আবছা আঁধারে নিমজ্জিত কারাগারে। কিন্তু তারা (ব্রিটিশ শাসক) অসির চেয়ে ধারালো শক্তিশালী নজরুলের কলম বন্ধ করতে পারেনি। তিনি কারাগারে থেকেই ডাক দিয়েছিলেন-
‘‘কারার ঐ লৌহ কপাট
ভেঙে ফেল কররে লোপাট
রক্তজমাট শিকল পুজোর পাষাণবেদী
ওরে ও তরুণ ঈশাণ, বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ
ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদী’’

ভয়ঙ্কর-নিষ্ঠুর অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে এতকঠোর ভাষায় ইতিপূর্বে আর কোনো ভাঙালি কবি রুখে দাঁড়াননি।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলতে পারি যে, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর হতে শিখিয়েছেন ও বজ্র্য কণ্ঠ হতে প্রেরণা যুগিয়েছেন। সাথে সাথে মানবতার প্রেমকে বুকে ধারণ করে সকলকেই ভালোবাসতে ও সমানচোখে দেখতে বলেছেন। তাঁর জীবনী ও সাহিত্য চর্চায় আমরা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে থাকা জরাকে ছুড়ে প্রগতির দিকে ধাবিত হই। তাইতো তাঁকে বাংলা সাহিত্যের চির ভাস্বর কবি বলা যুক্তিযুক্ত।




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট