রামবন্দনা
শাদমান শাহিদ
আচ্ছা ধরো, কেউ একজন বললো, কিছু একটা হারিয়ে গেছে আমাদের অথবা কেউ কিছু বললো না, আমরা ধারণা করলাম। তারপর থেকে?... ওটার পেছনে আমরা জীবনানন্দীয় স্টাইলে হাজার বছর ধরে ছুটে বেড়াচ্ছি। কিন্তু কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। আর এদিকে সুযোগ পেয়ে আমাদের পথ দেখাতে অদৃশ্য থেকে নেমে এলো প্রেরিতপুরুষদের মতো একশ্রেণির বুদ্ধিপ্রাপ্ত প্রাণি। যারা পথ বাতলে দিতে খুবই পারঙ্গম। যদিও তাদের দেখানো পথের মাথায় কোনো ঠিকানার খোঁজ আজ পর্যন্ত কেউ পায়নি। তারপরও তাদের কথায় আস্থা রাখতে হয়। তাদের মোটা মোটা পা-ুলিপি পড়তে হয়। আমরা তাদের পা-ুলিপি পড়ি আর অক্ষরের অলিগলি ঘুরতে ঘুরতে আরো গহীনে হারিয়ে যাই। তখন আমাদের মাথার মগজে জন্ম নেয় অসংখ্য কল্পপথ। পথগুলো ধরে আমরা যার যার মতো যুগ যুগ ধরে...
লোকটি কথা শেষ করে না। থুথু ফেলতে গিয়ে রাস্তায় লোক চলাচলের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাস্তা দিয়ে মানুষ যায়, মুক-বদির-অন্ধ যায় আর কুকুর যায়। ফের তারা আগের কথায় ফিরে আসে। সোহাস বলছিলো, এখন নাকি অভিনয়ের সময়। এখন নাকি সবাই অভিনয় করছে। সে রেণুকে আহ্বান করে। ‘এসো আমরা কাজ-কাম রেখে কেবল অভিনয় দেখি। নাহয় নিজেরা ক্যামেরার সামনে যেয়ে অভিনয় করি। তাও যদি না পারি, তখন কোথাও নির্জনে যেয়ে গোল হয়ে বসে মেডিটেশন করবো। ধ্যানের খেলা খেলতে খেলতে একটা ব্রিজের কল্পনা করবো।’ সে তখন আবারো অশোক স্যারের প্রসঙ্গ তোলে। তিনি নাকি অনেকদিন আগে ক্লাসে বলেছিলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরাও নাকি সেই প্রগৈতিহাসিককাল থেকে একটা ব্রিজের কল্পনা করে গেছে এবং সেটা বাস্তবরূপ দেয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় রসদও আমাদের চোখের তার রোপণ রেখে গেছে। এখন কেবল দৃশ্যায়নের পালা।
‘সব ভাওতাবাজি। তরুণদেরকে ঘুম পারিয়ে রাখার এটা আরেক ষড়যন্ত্র। পূর্বপুরুষগণ গরিব-চাষা-ভূষা ছিলো। তারা দিনে কাজ আর রাতে নাক ডেকে ঘুমোনোকেই পছন্দ করতো। তারা কারো আগেও ছিলো না, পাছেও ছিলো না। তারপরও তাদের পিঠেই দৃশ্যায়ন হতো তাবৎ অবিচারের উপমা।’
তারা তখন লোকটির কথায় আর মনোযোগ দেয় না। তারপরও কথা বলতে বলতে লোকটা রেলিং ছেড়ে তাদের কাছে আসে। হাতলহীন প্লাস্টিকের চেয়ারটাকে জুতসই করে বসে পড়ে। সোহাস আর রেণু তারা দুজনেই তার দিকে তাকায়। লোকটি তখন তাদেরকে একটা সাপ-ব্যাঙের গল্প শোনায়— বলে, এক ব্যাঙ আদার খুঁজতে কুচুরি ফানার আড়াল থেকে বেরিয়ে খালের পাড় ধরে হাঁটতে থাকে। ঠিক এ-সময় এক সাপ এসে তাকে গপ করে ধরে মুখে আটকে নেয়। ব্যাঙ তখন জান বাঁচাতে ঘ্যাঁৎঘুঁৎ করতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই সাপের কামড় থেকে ছুটতে পারে না। আবার তার প্রাণও যায় না। প্রাণটা গেলেই বেঁচে যেতো। দুনিয়ার সব যন্ত্রণা অবসান হতো। কিন্তু তার প্রাণ যায় না। সাপও তাকে গিলে না। এমন এক বিষম যন্ত্রণায় পড়ে ছটফট করতে থাকে ব্যাঙ। এক সময় ব্যাঙ দেখে একটা বেজি তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ব্যাঙের তখন খুশি আর ধরে না। কারণ শত্রুর শত্রু বন্ধু। এই সূত্রটা ব্যাঙের জানা আছে। তাই সে বেজিকে ডেকে আকুতি-মিনতি করে বলে, ভাই আমাকে বাঁচাও। এ মরণ থেকে আমাকে বাঁচালে, তুমি যা চাবে, আমি তাই দেবো। বেজি তখন বলে, এটা তোমাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে আমার কিছুই করার নেই। কারণ আমার আর সাপের মাঝে উনিশ দফা চুক্তি এখনো বলবৎ রয়েছে। চুক্তির বাইরে যেয়ে আমি কিছু করতে পারবো না। আশাহত ব্যাঙ তখন হাল ছেড়ে দেয়।
গল্প শেষ হলে রেণু বলে, আঙ্কেল, গল্পটাকে কি অন্যভাবে ঘুরিয়ে দেয়া যায় না?
কীভাবে!
এই ধরুন, হাল ছেড়ে না দিয়ে ব্যাঙটাই এক সময় সাপ-বেজি দুটোকেই খেয়ে ফেললো।
লোকটা তখন প্রায় মিনিটখানেক সময় চুপ থেকে কী যেনো ভাবে। তারপর মাথা দোলাতে দোলাতে বলে—হুম।
রেণু বলে, তাহলে একথাই থাক। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এক সময় সাপ-বেজি দুটোকেই খেয়ে ফেলবো। ফোর জি-যুগে আর কারো জাদুমন্ত্র কিংবা লোক দেখানো মায়াকান্না কাজ করবে বলে মনে হয় না। কে, কোথা থেকে কলকাঠি নাড়ছে, মোটামুটি এখন সবাই বুঝতে পারে।
তখন লোকটা পাল্টা উত্তরে আরো কিছু কথা বলে। ঠিক এসময় বৃষ্টি নেমে আসায় আমি শুনতে পারি না। আমি জানলার পর্দা সরিয়ে বৃষ্টির দিকে চেয়ে থাকি। দেখি সোহাস-রেণুও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটিকে দেখা যাচ্ছে না। সম্ভবত বার্থরুমে যেয়ে থাকবে। কোথায় যেনো পড়েছি, বৃষ্টির সময় নাকি কারো কারো বার্থরুমের চাপ বেড়ে যায়। লোকটাকে হয়তো সে রোগেই পেয়েছে। বৃষ্টি যাকে বার্থরুমের কথা মনে করিয়ে দেয়।
আমি তখন বৃষ্টি দেখি। জানালার সামনে শাদা পর্দার মতো অনবরত নিচের দিকে নামতে থাকে। সে পর্দায় রূপোর নূপুর পরা একটি কিশোরী ভিজে আর নাচে। মুদ্রার তালে তালে তার চুল নাচে, বুক নাচে, মন নাচে। মহল্লার উঁচু উঁচু দালান এবং সেসব দালানের খোলা দরজা-জানালা নৃত্যদৃশ্য তাকিয়ে তাকিয়ে উপভোগ করে। মেয়েটা কোনোদিকে ভ্রুক্ষেপ করে না। তার মন ভরা আনন্দ, দেহ ভরা নাচ আর চোখ ভরা বিস্ময়। কেবলই বিস্ময়। বাবা তার দেশ উদ্ধারে বন্ধুদের সাথে গোপন থেকে গোপনে রাইফেল কাঁধে ঘুরে বেড়ায়। মা ডাকে, আর ভিজিস না, অসুখ করলে দেখার কেউ নাই কিন্তু—। মেয়েটার অসুখ হয় না, অসুখ হয় তার মায়ের। কলেরা।
তারপর কত ঘাট পেরোতে হয়। কখনো মনে হয়েছে, সামনে বিশাল দরিয়া। পাহাড় পাহাড় ঢেউ। ঢেউয়ের মাথায় ডাকাত কেহেরমান। নারীর রক্ত-মাংসের গন্ধ পেয়ে উন্মাদ হি হি করে হাসে আর মাথার চুল ছিঁড়ে ফুঁ দিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দেয়। মনে হয়েছে—এই বুঝি শেষ। ভয়ে চোখ বুজে রেখেছি। একসময় চোখ মেলে দেখি কীভাবে যেনো পাড়ে ওঠে গেছি। এভাবেই স্কুল থেকে কলেজ। মেয়েটা তখন কলেজে যায়। রাস্তার পাশের সারিবদ্ধ সহজিয়া গাছপালা-ফুল-পাখি আর কৌতূহলী মানুষের দৃষ্টির ইথারে কুমারিত্বের সুরভি ছড়াতে ছড়াতে নিয়ম করে সাইকেল চালিয়ে কলেজে যায়। আরেকটা ছেলে ঠিক একই টাইমে কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে স্বপ্নসমান চোখে দৃষ্টি মেলে মেলে কলেজে ঢুকতো। স্টুডেন্টেদের সাথে কথা বলতো আর কীসব কাগজপত্র বিলি করতো। সবকিছুতে ছিলো খুব সর্তকতার ছাপ। ওর সাবধানতা আর ক্রিয়াশীলতা দেখে কখনো কখনো মনে হতো একটা শিকারী ঘুঘু বুঝি কলেজে ঢুকেছে। যদিও পারিবারিকসূত্রে শৈশবেই অল্প-বিস্তর উপলব্ধি করে নিয়েছিলাম, তবুও একদিন কৌতূহলবশত জানতে চাইলাম, বুঝতে চাইলাম। তারপর অনেক কথা... ধীরে ধীরে অন্যজগতে, অন্য এক সময়ে আমি চলে গিয়েছিলাম। একদিন টিএসসিতে কথা প্রসঙ্গে বললো, আমরা সবাই একটা বাড়ির স্বপ্ন দেখছি...। বাড়িটা হবে ভালোবাসার আর পারস্পরিক সহযোগিতার, সহমর্মিতার। তুমি-আমিসহ ষোল কোটি মানুষ বাড়িটাতে থাকবো। একসাথে খাবো, একসাথে রাত জাগবো, একসাথে ঘুমোবো। একদিন পার্টির কাজে বরিশাল যাওয়ার পথে অপূর্ব গ্রেফতার হয়। তারপর...আর তাকে কোথাও পাওয়া যায় না। না জেলে, না বাইরে। তবে আমি এখনো বাতাসে কান পাতলে স্পষ্ট একটা স্বপ্নবাণী শুনতে পাই; একসাথে খাবো...একসাথে ঘুমোবো।
তখন থেকে ধীরে ধীরে সে-অন্যজগতের বড়ো বড়ো পথ থেকে শুরু করে চিকনগলি পর্যন্ত মুখস্থ করতে থাকি। তখন একটা বাড়ির অস্তিত্ব আমার ভেতরও উঁকি দিতে শুরু করে। আর ভাবি, সত্যিই কি হবে কোনোদিন! উন্নয়নের দেবতারা যেভাবে ট্রাক বোঝাই করে হাজার বছর ধরে পূর্বপুরুষদের জমানো ইট-পাথর-বালি লুট করে নিচ্ছে, তাতে কি আর সম্ভব হবে একটা বাড়ির অস্তিত্ব দাঁড় করানো? তাছাড়া একটা বাড়ি নির্মাণ করতে যেসব বিকট শব্দের প্রয়োজন, সেগুলোই বা কোথায়? অথচ একদিন কিন্তু শব্দগুলো আমাদের পাশে ছিলো। রাজপথ-বিক্ষোভ-মিছিল, ফেটে পড়া প্রতিটি মুহূর্তে, চেতনার অগ্নিগোলা হয়ে গলার সবকটা রগ ফুলিয়ে বাকপ্রতঙ্গ ছিঁড়ে তারা বেরিয়ে পড়তো। ঝরে পড়া প্রতিটি রক্তকণার হিসেব কীভাবে কষতে হয়, পাশে থেকে প্রেক্টিকেলি তারা সুহৃদবন্ধুর মতো শিখিয়ে দিতো। আজ তাদেরকেও দেখা যাচ্ছে না দৃষ্টির ত্রিসীমানায়? নিশ্চয়ই পুষ্টির অভাবে ঝরে গেছে মাঘের শুকনোর পাতা। কিংবা আমাদেরই অযতœ আর অবহেলায় অভিমানী বালকের মতো ঘাড় কাত করে মাথা ঝুলাতে ঝুলাতে চলে গেছে দূর দিগন্তে। যেখান থেকে খুঁজে বের করার শক্তি-সাহস আমরা হারিয়ে বসে আছি।
বৃষ্টি থেমে গেলে ওদের কথা আবার শুরু হয়। লোকটিকে দেখা যাচ্ছে না। দক্ষিণ দিক দিয়ে সোহাসদের আর আমার বাসা পাশাপাশি। জানালাগুলো পরস্পরের মুখোমুখি। রেলিং ঘেষে হাত বাড়ালেই স্পর্শ করা যায়। সোহাসকে জিজ্ঞেস করলাম, উনি কোথায়। বললো, তিনি কমরেড শামসুল। রেণুর দূর-সম্পর্কের মামা। চিরকুমার। তিনি অনেকটা অন্যরকম টাইপের মানুষ। বৃষ্টিতে ভিজেই চলে গেছেন।
তিনি কী ধরনের লোক তা আমি বুঝতে পেরেছি। হতাশার চোরাবালিতে পড়ে এভাবে অনেকেই স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে। যে-কারণে আমাদের সংসারটাও পুড়ে ছারখার হয়ে গেলো। আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির অন্যতম নেতা হয়েও সামান্য মত-পার্থক্যের কারণে বাবাকে খুন হতে হয়। ভাঙন দেখা দেয় পার্টিতে। দলে-উপদলে বিভক্ত হয় কর্মীরা। হয় একে-অপরের শত্রু। এ শত্রুতা শ্রেণিশত্রু চেয়েও ভয়ঙ্কর। আস্থার ঘরে ঢুকে যায় সন্দেহের বিষাক্ত সরীসৃপ। আর একবার ঢুকে গেলে সব শেষ হয়ে যায়। ছোবলে ছোবলে পার্টি তো মরেই, সাথে পায়ের তলার মাটিরও মৃত্যু ঘটে।
কমরেড শামসুল বেঁচে আছে ঠিক কিন্তু এটাকে বাঁচা বলা যায় না। আমি মানুষের এ অবস্থাকে মৃতই মনে করি। আমার কথাই বলি, আমি কি বেঁচে আছি। বাবার পার্টি মরে যাওয়ার পর থেকে মার্ক্সবাদ-সংশোধনবাদের দোলনায় দুলছি তো দুলছিই। এর শেষ কোথায় আপাতত তো চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছি না। তবে ‘আবার আসিবো ফিরে’র মতো যদি কেউ সত্যি সত্যিই ফিরে আসে, তাহলে ভিন্ন কথা। অঙ্কুরোদগম করতে হলে তো কাউকে না কাউতে মরতেই হয়। ফল পচে যায়, রেখে যায় বিচি। সে বিচিতে আবার প্রাণে সঞ্চার। তারপর বৃক্ষ। কত ডালপালা। কত বিস্তৃত ছায়া। হয়তো এজন্যেই নিজেকে বলতে পারছি—বেঁচে আছি। হয়তো এজন্যেই মানুষকে ভালো লাগে। তারা কে কী ভাবছে তা শুনতে ভালো লাগে। একটা সময় ছিলো প্রচুর কবিতা পড়তাম। বিশেষ করে লিটলম্যাগের। নতুন লিখিয়েদের কবিতায় ভিন্ন এবং একদম নতুন চিন্তা কাজ করে। সেগুলোতে অন্যরকম এক ভালোলাগাও লেগে থাকে, যা আমাকে খুব টানতো। কোনো কারণে শাহবাগ-আজিজ সুপার মার্কেটের দিকে গেলেই লিটল ম্যাগের দোকানগুলোয় ঢু মারতাম। এখন কোথাও যেতে ভাল লাগে না। মন চায় না। কেবলই মনে হয়, যেনো কোথাও থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। পরিচিত সব আলো-বাতাস থেকে। চোরাস্্েরাতের মতো। স্বরহীন। গতিক্ষীণ। মনে হয়, কেউ যেনো কানের ভেতর ওহি নাযিলের মতো বলছে, সরে যাও। যাতে কেউ না দেখে ফেলে। তাড়াতাড়ি কেটে পড়ো। কিন্তু কোথায় কেটে পড়বো। কেনো পড়বো। উত্তর নেই। তবে কি অশরীরী কোনো শয়তানী আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে!
কথা বলতে বলতে দেখি আকাশ আবার কালো হয়ে আসে। সোহাস-রেণুকেও দেখি কেমন করতে শুরু করেছে। আমার সাথে কথা বলছে ঠিক, কিন্তু ছেঁড়া ছেঁড়া। মনে হলো ওদেরকে সময় দেয়া দরকার। আমি তখন পর্দার আড়ালে চলে আসি। জানালা বন্ধ করে দিই। ওরা হয়তো তখন একে-অপরকে ভাঙতে থাকে। ভাঙতে ভাঙতে অনু-পরমাণু। তারপর কেবলিই বর্ষণ।
একদিন রেণু এসে বলে, আপা, আপনি সাজ্জাদ ভাইকে বিয়ে করে ফেলুন। ভাইয়া নাটক-ফাটক নিয়া থাকলেও আপনাকে খুব ভালোবাসে। আপনি একটু সিরিয়াস হলেই হয়।
ইচ্ছে তো আমারও হয়। বিয়ে করে সমাজের আর দশজনের মতোই সংসার করি। অ্যাকুরিয়ামের রঙিন মাছের মতো ঘরে বন্দি থাকা, ফেসবুকে ডুবে থাকা, বই পড়া কতো ভালো লাগে! তার চে’ বিয়ে করে নিলে সময়টা হয়তো অন্যভাবেই কাটতো। নগ্ন-নির্জন বাড়ি। সাজ্জাদ যখন ইচ্ছে আমাকে ভাঙতে পারতো। আমিও যখন তখন গুড়ো হবার আনন্দে বিভোর থাকতাম। কিন্তু সাজ্জাদকে আমি যদ্দূর জানি, এ ধরনের লোকদের কেবল ভালোই বাসা যায়, সংসার করা যায় না।
এজন্যেই মাঝে মধ্যে নিজেকে বলি, থাক, কিছুই করার দরকার নেই। একাই থাকো। টিভি দেখো। ফেসবুকে ফ্যাক আইডি খুলো। দূরের কারো সাথে গোপন চ্যাটিং করো। গুগলে সার্চ করে লাইভে সেক্স দেখো। তা না হলে আরো বই কিনে আনো। পুরোনো বইগুলো অযতেœ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঝেড়ে-মুছে সাফ করো। ঘ্রাণ শুঁকো।
..............