তুমি যার জন্যে কাঁদছ, সে তো তোমার জন্যে কাঁদে না...



 তুমি যার জন্যে কাঁদছ,
সে তো তোমার জন্যে কাঁদে না...
মীম মিজান

বাংলাদেশ এক বৈচিত্র্যের অধিকারীনি। আর তার বৈচিত্রের প্রধানতম কারণটি হলো বার মাসে বিচিত্র ছয়টি ঋতু। এদেশের আলো-বাতাশে বেড়ে ওঠা কবিগণের মনও তাই তাদের দেশ মাতৃকার বৈচিত্র্যের স্মৃতিতে ছিল সর্বদাই সরব। বসন্ত ও বর্ষা নিয়ে বাংলা সাহিত্যের লেখকরা যত রূপে লিখেছেন তা আর কোনো ঋতু নিয়ে ততটা লেখেননি। তার মধ্যে বর্ষা-ঋতু বাংলার কবিদের মন ও মননকে আন্দোলিত করেছে অনন্য এক আলোড়নে। সব যুগে সব সময়ে বর্ষা তার অপরূপ রূপের ছুরি নিয়ে হানা দিয়েছে প্রেমিক কবির মনে। কবিরাও অপরূপ রূপের রাণী বর্ষার ছুরিতে খুন হতে চেয়েছেন বারবার।
এ কথা অত্যুক্তি নয় যে, বাংলা কবিতায় বর্ষা ঋতুর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। বর্ষার চরিত্র বা সৌন্দর্যের যে বহুগামী বৈচিত্র্যতা অন্য পাঁচটি ঋতু থেকে স্বতন্ত্র। আমাদের বাংলা কাব্য সাহিত্যে মধ্যযুগের অনেক কবির কবিতায় বর্ষার বর্ণনার উল্লেখ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কবি কালিদাস, জয়দেবের কবিতায় বর্ষার সন্ধান মেলে। তা ছাড়া কবি বড়– চন্ডীদাসের শ্রী কৃষ্ণকীর্তনে, কবি বিদ্যাপতি, গোবিন্দ দাস, রায়শেখর, মনোহরদাস, বাসুদেব ঘোষ এদের প্রত্যেকের বৈষ্ণব পদাবলিতেও বর্ষার বর্ণনা রয়েছে। যেখানে দেখা যায় যে, তারা প্রত্যেকেই রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের যে অনুরাগ সেই অনুরাগের গভীরতাকে প্রকাশ করেছেন বর্ষার বিভন্ন রূপ বৈচিত্র্যের বর্ণনার মধ্য দিয়ে। এ ছাড়াও মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, খনার বচন, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, স্বর্ণকুমারী দেবী, অক্ষয় কুমার বড়াল, প্রমথনাথ রায় চৌধুরী প্রমুখের কবিতায় বর্ষার সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের হাত ধরেই বাংলা কবিতায় বর্ষার বিচিত্ররূপ বা সৌন্দর্য উঠে এসেছিল। এ প্রসঙ্গে কবি কালিদাস বর্ষাকে কিভাবে অনুভব করেছেন তা দেখা যেতে পারে। কালিদাস বর্ষাকে অনুভব করেছেন অনুরাগের গভীরতায়। কালিদাসের দৃষ্টিতে বর্ষার সৌন্দর্য-সখা যে মেঘ, সেই মেঘকে কবি লোভনীয় সম্ভোগের আভাস দিয়ে যক্ষের সহচররূপে যক্ষ প্রেমিকার কাছে পাঠান। সেখানে মেঘ সঙ্গত কারণেই প্রেমের বার্তাবহ দূতরূপে চিহ্নিত হয়। মেঘের সঙ্গে প্রেম আর বিরহের একটা অনড় সম্বন্ধ পাতিয়ে কালিদাস তার কবিতায় এক অনবদ্য চিত্রকল্প তৈরি করেছেন। কালিদাসের কবিতার অনুবাদের কিছু অংশবিশেষ পড়লে আমরা তার বর্ষা নিয়ে মননের অভিব্যক্তি বুঝতে পারব:


‘কেমনে প্রিয়তমা রাখবে প্রাণ তার অদূরে উদ্যত শ্রাবণে/যদি- না জলধরে বাহন করে আমি পাঠাই মঙ্গলবার্তা?/যক্ষ অতএব কুড়চিফুল দিয়ে সাজিয়ে প্রণয়ের অর্ঘ্য/স্বাগত-স্বভাষ জানালে মেঘবরে মোহন, প্রীতিময় বচনে।’
মধ্যযুগের আরেক কবিপ্রতিভা কবিকঙ্কন উপাধিখ্যাত মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ‘কালকেতু উপাখ্যানে’ কালকেতুর স্ত্রী ফুল্লরার বারমাসের দুঃখ বর্ণনা করতে গিয়ে বর্ষাকাল সম্পর্কে বলেছেন:
‘আষাঢ়ে পুরিল মহী নবমেঘে জল।
বড় বড় গৃহস্থের টুটয়ে সম্বর
মাংসের পসরা লয়্যা বুলি ঘরে ঘরে।
কিছু খুদকুঁড়া মিলে উদর না পুড়ে
শ্রাবণে বরিষে মেঘ দিবস রজনী।
সিতাসিত দুই পক্ষ একই না জানি’


বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান মহাপুরুষ বিশ্বকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় বর্ষাকে উপস্থাপন করেছেন বিভিন্ন আঙ্গিকে। তার হাত ধরেই কবিতার মাধ্যমে বর্ষা যেন পূর্ণতা পেয়েছে। তার কবিতায় বর্ষার বিচিত্র রূপ প্রকাশ পায় বর্ষাবন্দনা রূপে। রবীন্দ্রনাথের গানের কথা বাদ দিলেও বহু জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে আমরা বর্ষার অনুষঙ্গ খুঁজে পাই। তার ‘আষাঢ়’, সোনার তরী’, ‘বাঁশি’সহ বহু কবিতায় বর্ষা এসেছে বিভিন্ন আঙ্গিকে।
‘আষাঢ়’ কবিতায় তিনি মানুষকে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন। তবে আষাঢ় মাসের একটি নিটল বর্ণনা তার কবিতার দৃশ্যপটে ভেসে উঠেছে। আউশের খেত, কালিমাখা মেঘ, ধেনু ও ধবলীর বর্ণনায় সত্যিই গ্রামবাংলার অপরূপ দৃশ্য প্রস্ফুটিত হয়েছে। যা পাঠকমনে চিরজাগরুক হয়ে থাকবে।
‘সোনার তরী’ কবিতার দৃশ্যকল্প এ রকম আকাশে মেঘ গর্জন করছে। চারিদিকে বরষার পানি থৈ থৈ করছে। সঙ্গে খর¯্রােত বয়ে চলছে। জমির ধান কেটে একটি ছোট খেতে কৃষক একা বসে আছেন, পার হওয়ার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। ধান কাটতে কাটতে নদীর জল বেড়ে গেছে। খেতের চারিদিকে নদীর বাঁকা জল খেলা করছে।
‘বাঁশি’ কবিতায় দেখা যায়, বর্ষা এলেই ট্রামের খরচা বাড়ে। ছাতার অবস্থা জরিমানা দেয়া মাইনের মতো- বহু ছিদ্র তার। চারিদিকে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। তখন গলিটাকে ঘোর মিছে অন্ধকার মাতালের প্রলাপের মতো মনে হয়।
এছাড়া কবিগুরুর অন্যতম ছড়া কবিতা ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ আমাদের দুরন্ত শৈশবকে হাতছানী দিয়ে ডাকে। তারও অনেক পরে বর্ষার স্মৃতিতাড়িত হয়ে কবিই আবার বলেছেন:
‘কবে বৃষ্টি পড়েছিল, বান এলো যে কোথা
শিব ঠাকুরের বিয়ে হলো কবেকার সে কথা।
সে দিনও কি এমনিতরো মেঘের ঘনঘটা
থেকে থেকে বাজ বিজুলি দিছিল কি হানা।’
প্রেমের কবি কাজী নজরুলের কবিতায় বর্ষা এসেছে প্রেমের জারক হিসাবে। প্রিয়া বিরহ আরো দ্বিগুণ করেছে বাদল দিনের মেঘ। বাদল ধারা প্রিয়ার আগমনী সুরকে বিদায়ী সুরে পরিণত করেছে। বাদল রাতের বর্ষণ সিক্ত রাতের পাখি হয়ে ওঠে কবির বেদনা বিজয়ী চিত্তলোকের চিত্রল প্রতীক। বিরহ কাতর পাখিকে কবি তাই বলছেন, তুমি যার জন্যে কাঁদছো সে তো তোমার জন্যে কাঁদে না। যেমনটি ‘চক্রবাক’ গ্রন্থের ‘বাদল রাতের পাখী’ কবিতায় কবির উপদেশ:
‘বাদল রাতের পাখী।


উড়ে চল যেথা আজো ঝরে জল, নাহিক ফুলের ফাঁকি।’
কবি বর্ষার এই রাতে পাখিকে বন্ধু ভেবেছেন। পাখির বিরহের সাথে নিজের বিরহ একাকার করেছেন। আসলে সকল কোলাহল ছেড়ে কবি বর্ষার নির্জনতায় প্রেমের প্রকৃত মূর্তি গড়েন। অন্যদিকে নজরুল ইসলাম বর্ষার বিদায় মুহূর্তে ব্যথিত হয়েছেন। কবি বর্ষাকে বলেছেন, তোমার বিদায়ের কথা শুনে কেয়া রেণু পান্ডুর হয়েছে, প্রণয় অশ্রুসম শিশিরভেজা শেফালি ঝরছে আজ। ঝরে কদমের কেশর। ‘চক্রবাক’ কাব্যগ্রন্থের ‘বর্ষা-বিদায়’ কবিতায় কবি তাই বলেছেন:
‘সেথা যাও তব মুখর পায়ের বরষা নুপূর খুলি’
চলিতে চলিতে চমকি’ উঠ না কবরী উঠে না দুলি’!
সেথা রবে তুমি ধেয়ান-মগ্ন তাপসিদী অচপল,
তোমার আশায় কাঁদিবে ধরায় তেমনি ‘ফটিক-জল’!’


পল্লী কবি জসিম উদদীন বর্ষায় দেখেছেন গাঁয়ের কৃষক-মুঠেরা কি করে তাদের এ আলস্য সময়ে। দাওয়ায় বসে গল্প, গান কিংবা গৃহস্থালী কিছু উপকরণ তৈরির দৃশ্য। যেমনটি পল্লী-বর্ষা কবিতায় গাঁয়ের চিত্র বর্ণনায় লিখেছেন:
‘গাঁয়ের চাষীরা মিলিয়াছে আসি মোড়লের দলিজায়,
গল্পের গানেকি জাগাইতে চাহে আজিকার দিনটায়!
কেউ বসে বসে বাখারী চাঁচিছে, কেউ পাকাইছে রসি,
কেউবা নতুন দোয়াড়ীর গায়ে চাঁকা বাঁধে কসি কসি।’
আদিকাল থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় বর্ষাঋতু নিয়ে রয়েছে উচ্ছ্বসিত বন্দনা, অনুরাগ ও স্মৃতি। রহস্যময়ী এ বর্ষার রূপ, বৈচিত্র্য, চমক, বর্ণচ্ছটা এবং আকাশ- প্রকৃতির গভীর মিতালী শিল্প-সাহিত্যের সরস উপকরণ হিসেবে আবহমানকাল থেকেই অনুপ্রাণিত ও স্পন্দিত করছে শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকদের।
তার-ই ধারাবাহিকতায় কবি আহসান হাবীব বৃষ্টিকে ঘিরে আমাদের দারিদ্র্য, হতাশা আর স্বপ্নকে বুনেছেন নিজস্ব স্বপ্নময়তাকে অবলম্বন করে। তিনি যেন প্রবল কোনো ঘোরের মধ্যে থেকে পার করছেন অপেক্ষার নিরন্তর প্রহর। তার ‘রেনকোট’ কবিতায় লিখেছেন:
‘পঁচিশটি বর্ষা ত পেরিয়ে এলাম
দেখে এলাম
কত অন্ধকার অরণ্যশীর্ষ
কালো মেঘের অন্ধকারে ছাওয়া,
দেখলাম
কত ঝরঝর বর্ষা
আর কত নিঃসঙ্গ জানালার
ইতিহাস পড়লাম
আমার নির্বিকার জানালায়।’
আমরা যদি অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে বাংলা সাহিত্যের আধুনিকতার জনক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতার দিকে দৃষ্টি ফেরাই, তাহলে দেখতে পাই তিনি বর্ষাকে কল্পনা করেছেন প্রকৃতির অরূপ শক্তি হিসাবে। তার কবিতায় বর্ষার প্রকৃতি ও মানব প্রকৃতি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। যার সাথে একাত্ব ঘোষণা করেছেন দেবতাগণও। মধুসূদন দত্তের ‘বর্ষাকাল’ কবিতায় বর্ষার রূপকল্প বর্ণনা হয়েছে এভাবেই:


‘গভীর গর্জন করে সদা জলধর/উথলিল নদ-নদী ধরনীর উপর
রমনীর মন লয়ে/সুখে কেলি করে/দানবাদি দেবযক্ষ সুখিত অন্দরে।’
‘বিপ্লবী’ ও ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ ফররুখ আহমদ অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অনুপ্রেরণায় ইসলামী ভাবধারার বাহক হলেও তার কবিতায়ও বর্ষার দোল লেগেছে। বৃষ্টির ছন্দ তাকে নাচিয়েছে। মনে আনন্দের ঢেউ খেলিয়েছে। তিনি আনন্দে তবলার ছন্দের মতো শিশুতোষ কাব্য ‘বৃষ্টির গান’-এ গেঁথেছেন :
‘বৃষ্টি এলো কাশবনে
জাগলো সাড়া ঘাসবনে
বকের সারি কোথায় রে
লুকিয়ে গেলো বাঁশবনে।
নদীতে নাই খেয়া যে
ডাকলো দূরে দেয়া যে
কোন সে বনের আড়ালে
ফুটলো আবার কেয়া যে।’
বাংলা সাহিত্যের মহিলা প্রতিনিধিত্বকারী কবি সুফিয়া কামালের কবি মনন ও মানষে বর্ষার আগমন ও স্মৃতি এক বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। পোয়েট অ্যান্ড পেইন্টার খ্যাত ইংলিশ কবি উইলিয়াম ব্লেক যেমন ‘ ল্যাম্ব’ ও ‘টাইগার’ দুটি কবিতা দিয়ে স্রষ্টার সৃষ্টির দুটি বিপরীত কিন্তু অনিবার্য মহিমা তুলে ধরেন সুফিয়া কামালও তাই। বৈশাখের তপ্ত খরতাপের পরে আসে বর্ষা। বর্ষার নতুন জল ধারায় প্রাণে জাগে স্পন্দন। সজীবতায় প্রাণ ফিরে পায় বিশ্ব-ব্রহ্মা। ঝড়ের রুদ্রমূর্তির পরে সরস বর্ষার যে রূপের সন্ধান মেলে, তা কবির ‘ঝড়ের শেষে’ কবিতায় উঠে এসেছে :
‘মধুর মমতা ধারা বিথারিয়া আর্দ্র সমীরণে
ভুলিয়া বেদনা জ্বালা শুচিস্মিতা প্রশান্ত আননে
চাহিয়াছে ঊর্ধ্বমুখী সুকল্যাণী ঝঞ্ঝা বিশেষে
যত ক্ষতি যত ব্যথা ভুলাইয়া ভুলিয়া নিঃশেষে।’
ইয়সমিন সুলতানা ‘বর্ষার প্রতীক্ষা’ কবিতার ব্যাপারে বলেন, ‘কবি এই কবিতায় বর্ষা-প্রকৃতির চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। বর্ষার জলধারাকে কবি প্রিয়ার অভিমানিত অশ্রুর সঙ্গে তুলনা করেছেন। প্রিয়া এলায়িত ঘনকেশে দিগন্তের দিকে চেয়ে চেয়ে প্রিয়ের জন্য অপেক্ষা ও অশ্রু বিসর্জন করে।
 গ্রীষ্মের তপ্তরোদে বর্ষা তার ঘন মেঘ নিয়ে বর্ষণের জন্য অপেক্ষা করে। তারপর এক সময় তা ধরণীর বুকে ঝরঝর করে ঝরে পড়ে।’


বর্ষাকাল মানেই আকাশ কালো করা ঘন মেঘের আনাগোনা, যখন তখন ঝমঝমিয়ে পড়ে বৃষ্টি। পথে ঘাটে কাদাপানি। ঘরে স্যাঁতসেঁতে ভাব। তাই তো কবি শামসুর রাহমান বর্ষার বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন:
‘হঠাৎ আকাশ সাদা মুখটি কালো করে,
কালো মেঘে বুকটি ফুঁড়ে পানি পড়ে।
ঝর ঝর ঝর একটানা বৃষ্টি ঝরে,
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি ঝরে।’
এছাড়া কেতকীর মনমাতানো সুগন্ধ, কদমফুলের চোখ জুড়ানো শোভা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছ্বল নৃত্যের আবাহন থাকে এই আষাঢ়েই। তাই প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ আষাঢ়কে বলেছেন- ‘ধ্যানমগ্ন বাউল- সুখের বাঁশি’।
বর্তমান সময়ের বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি কবি আল মাহমুদ বর্ষাকে দেখেছেন অন্য এক দৃষ্টিতে। তার কবিতায় বর্ষা-প্রকৃতি অন্যমাত্রার এক কথা বলে। ‘আষাঢ়ের রাত্রে’ তিনি ব্যক্ত করেছেন :
‘শুধু দিগন্ত বিস্তৃত বৃষ্টি ঝরে যায়, শেওলা পিছল
আমাদের গরিয়ান গ্রহটির গায়।’
উপর্যুক্ত কবিগণ ছাড়াও প্রাচীনযুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের অনেক কবি বর্ষার বন্দনায় কাব্য স্তুতি করেছেন। যেমন সৈয়দ শামসুল হক, কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, নির্মেলন্দু গুণ, হুমায়ূন আহমেদ, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, সুকুমার রায়, কায়কোবাদ, ইসমাঈল হোসেন শিরাজী, শেখ ফজলল করীম প্রমুখের কাব্য মানসেও বর্ষার অপার সৌন্দর্য নিয়ে রয়েছে সরস বর্ণনা। বর্ষা আসে কবিগণের মানসকে উদ্বেলিত করে নস্টালজিয়ায়। অনেকেই কাছে পেতে চেয়েছেন তার আপনজনকে। কারো কাছে দাওয়ায় বসে গল্প করা। কিন্তু খেটে খাওয়া মজুর-মুঠেদের দূর্দশার বর্ননাও এসেছে অনেক মানবতাবাদী কবির কাব্যে। সবাই নিজেদের নস্টালজিয়ায় ভেসে বেড়ানো, প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার প্রত্যাশা ও একত্রে সবাই বসে গল্পে মশগুলের পাশাপাশি যেন দূর্দশাগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াই। বর্ষা হোক সবার জন্য আনন্দের!



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট