ধারাবাহিক উপন্যাস : রামবন্দনা : পর্ব ০৩



রামবন্দনা
শাদমান শাহিদ

(গত সংখ্যার পর)
তারপর দাগ ধরে ধরে ডেকোরেশন থেকে শুরু করে প্লট-সংলাপ-চরিত্রসমূহকে কীভাবে বীণার তারের মতো সেট করতে হয়। এসব শিখতে শিখতে একদিন টের পাই ও ক্রমশ আমার ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। কিন্তু আমি? না, পারি নি। সে যে অভিনেতা। অভিনয়ই যার সারাজিন্দেগির পাথেয়— ইহকাল-পরকাল। সেখানে আমার স্থান কোথায়? আমিও যে নারী, হারিয়ে যাবার দলেরই একজন। সকালে সিরাজ-উদ্-দৌলা’র চরিত্রে নেমে বিকেলেই মীর জাফরের পোশাকে দাঁড়িয়ে যায়, একটা দিন পেরোতে না পেরোতেই হিজড়া হয়ে হাতে টেপ্পা মারতে মারতে সারা মঞ্চ নাচিয়ে তোলে। এতো ছলাকলা কি আমি বুঝতে পারি? আমি তো চেয়েছিলাম, বঞ্চিত মেহনতি মানুষের কণ্ঠস্বর হতে। যেখানে ছলাকলার কোনো স্থান নেই। যেখানে কেবল বেঁচে থাকা তাগিদেই খাদ্যগ্রহণ কিংবা অন্যকিছু। কখনো কখনো এমন ভাবও করতো, ভাবতাম এবার নিশ্চয়ই সিরিয়াস কিছু বলবে। ভেবে ভেবে সারাপথ বারবার শরীর চিড়িক দিয়ে ওঠেছে। জিভের ডগায় পানি বারবার পাতলা হয়ে এসেছে। পরে দেখি রিক্সা থেমে গেছে এক বিশাল হলরুমের সামনে। আমাকে ভিআইপি লাইঞ্জে বসিয়ে দিয়ে ও চলে গেছে সাজঘরে। যে সাজঘরে ইচ্ছে করলে আমিও যেতে পারতাম। ভাবলাম, সাজঘরের পাশাপাশি রাজঘরটাও তো দরকার। আর সেটা কোনোভাবেই উত্তরাধিকারসূত্রের উচ্ছিষ্ট হিসেবে নয়, নিজের হাত-পায়ের কামাই হিসেবে, মেধা-মগজের আউটপুট হিসেবে, রাজপথ ধাবিয়ে পেতে চাই। তবেই যদি আমাদের কিছু হয়। *****
এখন তো সবই পরিষ্কার। অভিনয়ই সব। কৃষ্ণ অভিনয় করেছে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার জন্যে, জিউস অভিনয় করেছে হীরার আড়ালে অজ্ঞাত কোনো পাহাড়ের গুহায় নিয়ে... মহাদেব তো আরো সাত পা এগিয়ে। আর কেউ নয়; সব তিনি একা ভোগ করবেন। যে-জন্যে নারী-পুরুষের প্রেম-প্রীতি তো দূরের কথা দৃষ্টির ত্রিসীমায়ও কেউ কারোর দেখা-সাক্ষাত হয়েছে, জানতে পারলে সাথে সাথে চিতায় নিক্ষেপের আদেশ। মা-ভগিনি-কন্যা সব কেবল তার জন্যে। কখনো একজনকে, কখনো অনেকজনকে। একসাথে। এভাবেই চলছে অদ্যাবধি। একেই বলে, জোর যার...। সব নিজের ভোগে রেখে দিয়ে গলায় লাল-সবুজের উত্তরীয় ঝুলিয়ে দিনের পর দিন অভিনয় করে যাচ্ছে। দেশপ্রেমের চমৎকার সব বাণী উড়িয়ে হাত তালি বাজিয়ে নিচ্ছে। কে হাত তালি দিলো আর কে দিলো না, কে মিটি মিটি হেসেছিলো, হাসিটা কি আবেগের ছিলো? নাকি অন্যকিছু। সবই রেকর্ড হচ্ছে অদৃশ্য ক্যামেরায়। স্বয়ং মহাদেব নাকি সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন এবং সিদ্ধান্ত নেন।
কথাগুলো যে ভিত্তিহীন নয়, তা বুঝতে দেরি হয় না কারোই। মিটিং-এ না যাওয়ার অপরাধে সিদ্ধিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, ফেসবুকে দু’কথার এক মন্তব্যের কারণে আহমেদ ফকিরের ছেলে তুষার কবিরকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়, ইউটিউবে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়, সে দোষ গিয়ে পড়ে ডা. সুমিতের ঘাড়ে। তারপর থেকে সে নাকে কর্পুরের গন্ধ পায়। ঘুমের ভেতর কীসব দেখে বিছানায় লাফিয়ে ওঠে। কেউ একজন বললো, শুধু আমাদের ঘুম কাড়ে নাই, ঘুম কেড়ে নেওয়া হয়েছে মৃত্যুদেরও। হয়তো তাই। এজন্যেই বোধ হয় রাত নেই দিন নেই, কালো বাহিনি, সাদা বাহিনিসহ আরো নানা বাহিনির পোশাকের আড়ালে মৃত্যুরা মৌজার খতিয়ানসহ একেবারে দোর-গোড়ায় এসে হাজির হয়। এসব আতঙ্কে আমার চোখেও ঘুম আসে না। আবার যে জেগে থাকি, তাও নয়। চিৎকার আর আর্তস্বরের স্্েরাতের ভাসানে হারিয়ে যেতে যেতে আমি হয়ে যাই প্যারালাইসিস রোগী। ঘুম-সজাগের মাঝামাঝি এক ধরনের অবশ হয়ে থাকি। তখন অনেক কিছুই ভাসে চোখে। অনেক কিছুই দেখি কিন্তু কোনো কিছুই স্পষ্ট করতে পারি না। ধোঁয়া দেখি। আগুন দেখি। আকাশ ফেটে-পড়া শব্দ দেখি। দেখি মৃত্যুদেরও।
ইদানিং মৃত্যুদেরকে শহরের গলি-ঘুঁজিতে বেশি দেখা যায়। তাদেরও নাকি দাবি-দাওয়া আছে। যখন-তখন মৃত্যুদেবের ডাকে সাড়া দিতে দিতে ক্লান্ত...। বিশ্রামের প্রয়োজন। চাকরির নীতিমালা প্রয়োজন। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গলায় পোস্টার ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে গলির মোড়ে মোড়ে। আমি দেখি, মহল্লার সবাই পোস্টার পড়ছে। পড়তে পড়তে কোথায় যেনো হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়া মানেই চোখে অন্ধকার দেখা। বাবা একদিন তার সহকর্মীদের নিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলো। ভেবেছিলো, গহীন অরণ্যে ঘুরতে ঘুরতে হয়তো পথ পেয়ে যাবে। কিন্তু পেলো কই। আসলে ওটা ছিলো তাদের চোখের ভেলকি। নয়মাস অভুক্ত আর ঘুমহীন থেকে হঠাৎ চোখ মেলেছিলো তো, তাই বুঝতে পারোনি। চরিত্রহীন দেবতারা তোমাদের চোখে ধাঁধা লাগিয়ে এক অরন্য থেকে বের আরেক অরণ্যে ছেড়ে দিয়েছিলো। যে অরণ্যের শেষ কোথায় আমাদের কারোই জানা নেই। যাক ওসব। মহল্লাবাসীদের কথায় ফিরে আসি। তারা কেবল অন্ধকার দেখতে থাকে। চোখে পড়ে একটা কায়া কালো আল-খেল্লা পরে দাঁড়িয়ে আছে। তখন কেউ একজন আল-খেল্লার আস্তিন ধরে টান দেয়। একটি একটি করে খসে পড়ে সবকটা বোতাম। তখন অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়। তারা কি তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে লাফিয়ে ওঠবে? কিংবা বেদনায় নীল হয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়বে? না, কোনোটিই করে না। কারণ তখনই টের পায়, কেউ তাদের নড়া-চড়ার স্বাধীনতাটাকে আমূল কেটে দিয়েছে। তখন আমার কেনো যেনো মনে হয় সবাই নিরীহ কচ্ছপের অভিনয় করছে। পরিবেশ অনুকূল দেখলে ভেতর থেকে গলা বের করে আর প্রতিকূল দেখলে সাপে ধরা ব্যাঙের মতো মরার ভান ধরে। এজন্যে শহরে পর্যটকদের মধ্যে অনেকেই বিটলামি করে বেড়ায়। বলে, মহল্লার পুরুষরা নাকি রক্তশূন্য বর্ণহীন রোগী। কেউ বলে, তাদের নাকি প্রাণ নেই। তাদের প্রাণ নাকি সময়ের উল্টোস্্েরাতে ভাসতে ভাসতে প্রাগৈতিহাসিক কোনো এক আদিম পাথরের নিচে চাপা পড়ে আছে। কোনোক্রমে সেখান থেকে ছাড়াতে না পারলে একবিংশ শতাব্দি তথা উত্তরাধুনিক ডিজিটালাইজ্ড যুগে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। ততোদিন পর্যন্ত তাদেরকে প্রাণহীন লাশের মতোই চলতে হবে। কেউ বলে, তারা অপ্রকৃতিস্থ। তাদের আচার-আচরণ নাকি বেশ দুবোর্ধ্য। ফাগুনের পাগলা বাতাসের মতো। কখন কী করে, কোথায় যায়, কোনো ঠিক-ঠিকানা নাই।
লোকের কথা শুনে আমার হাসি পাই। রেণু ফেসবুকে পোস্ট দেয়। ‘প্রাণ না থাকলে আমাদের পুরুষরা চলাফেরা করে কীভাবে? খায় কীভাবে? বিয়ে করে কীভাবে? সন্তান উৎপাদন প্রতিযোগিতায় বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন হয় কীভাবে? জ্যৈষ্ঠের শেষ দিকে যখন কারওয়ান বাজারের ফল ব্যাপারিরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রকার আম কিনে তাদের সামনে এনে নামায়, তখন তো তারা ঠিকই কোনটা ল্যাংড়া, কোনটা আশ্বিনা কিংবা কোনটা বোম্বাই-বৃন্দাবনি-লখনা, কোনটা খেতে চুক্কা, কোনটা মিঠা, কোনটার ঘ্রাণ কেমন, সবই ঠিকঠাক মতো বাছাই করতে পারে। তখন পারে কীভাবে? কিংবা আঠারো প্রকার একজিমা থেকেও শুধু চুলকানির ধরন দেখেই কার শরীরে কোন প্রকার একজিমা এবং এর জন্যে কোন বড়ি খেতে হবে, ডাক্তার-বৈদ্য ছাড়াই তারা ঠিকঠাক মতো ওষুধ কিনে সেবন করতে পারে। তখন পারে কীভাবে?’ পোস্টটা পাবলিক স্পেসে ছাড়তে না ছাড়তে লাইক-কমেন্টস্ এ ভরে যায়। শাকিলা নামে এক মেয়ে লিখেছে, আপনার সাথে একমত, সাথে আরেকটু যোগ করি, রমণক্রিয়ায়ও বাঙালি পুরুষরা যথেষ্ট দীর্ঘমেয়াদি। নাবিলা নামে আরেক মেয়ে লিখেছে, তাদের বাসার সাথের ইটভাটায় এক লোক মাথায় বত্রিশটা ইট তুলতে পারে। কেউ লিখেছে মুসা ইব্রাহিমের নাম। আরেকজন লিখেছে আমাদের এখানে একজন আধ্যাত্মিক সাধক যার সেক্স পাওয়ার কুকুরকেও হার মানায়। উদাহরণ হিসেবে সে কয়েকটা ঘটনাও উল্লেখ করেছে। আরো অনেকেই অনেক কথা লিখেছে। তবে বেশির ভাগ মন্তব্যই ছিলো, যৌন বিষয়ক। বিশেষ করে মেয়েদের মন্তব্যগুলোতে। তাছাড়া এটা যে আমাদের কাছে কতটা কৌত’হলের, তা আমরা কজন একসাথে বসলেই টের পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে মিথিলা অদ্বিতীয়া। একবার ওর মুখ ছুটে গেলে নিজেদের গোপন কথা থেকে শুরু করে ওদের বিল্ডিংয়ে ভাড়াটিয়াদের মধ্যে কার মরদ কতক্ষণ থাকে সবই শেয়ার করে দেয়। তখন হাসতে হাসতে আমাদের অনেকেরই পেটে ব্যথা ধরে এলেও ওর মুখ থামে না। আর যদি কোনো কারণে থামেও সঙ্গে সঙ্গে অন্যজন শুরু করে দেয়। বানু খালাও কম যায় না, এ বুড়ো বয়সেও নাকি কোনো রাত মিস নেই।
এতোকিছু পরও যখন বলে, আমাদের পুরুষরা প্রাণহীন। তখন আমি ওটাকে উসকানি বা বিটলামিই মনে করি। তবে কেনো যেনো মনে হচ্ছে শহরের লোকেরা কোনো কারণে নাটক করছে। হয়তো তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে যে, এখন থেকে ঠাডায় মরা লাশের মতো কেবল চেয়ে থাকবে। কোথাও কোনো অন্যায়-অপরাধ করবে না। দেবতাদের কোনো কাজে বাঁধাও দেবে না। এমনকি তারা ইতিহাসের সবকটা পাতা নিলামে কিনে নিলেও কেউ কিছু বলবে না। তাদের পাপের দায় গ্রহণ করতে গিয়ে পৃথিবীর সব শ্বেতপাথর কালো হয়ে গেলেও কিচ্ছু বলবে না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত কোনোকালেই ভালো কিছু বয়ে আনেনি। এবারো ব্যর্থ হলো। পণ করে যখন সবাই কিছুদিন চুপচাপ বসে থাকলো, তখনই শোনা যায় দেবতারা আমাদের উপর চটা।
কারণ কী?
তখন বিরোধী দলীয় এক দেবতা জানায়, চটবেই তো। তোমরা এভাবে পাপহীন বসে থাকলে তো দেবতাদের আয়ের সব উৎস লাটে ওঠে যে।
 ট্রেনে ফেরি করে যে ছেলেটা, সে তখন বিস্ময়ের দৃষ্টি মেলে বলে, এইডা কী কন সাব! আমরা তো কারো আগেও নাই, পাছেও নাই। ট্রেনত যায়া হারাদিন ঝালমুড়ি বেচি আর সন্ধ্যায় আইসা জাহাঙ্গীরের বস্তিত যায়। ওখানে পা-কাটা বাদইল্যার দোকানে দুই দান লুডু খেলি, পাতাবিড়ি টানি। তারপর কাশতে কাশতে নিজের ডেরায় আইসা হুইয়া থাহি। আমরা আবার কি দোষ করলাম!
উত্তরে তিনি তখন যা বলেন, শুনে আমরা ত্রিশঙ্কু দশায় পড়ে শূন্যে ঝুলতে থাকি। শাস্ত্রে নাকি লেখা আছে, পাপ না করাটাও একটা পাপ। এতে নাকি মনের ভেতর অহঙ্কারের জন্ম হয়। ব্যক্তির মনে অহঙ্কার থাকলে দেবতাদের আসন কেঁপে ওঠে। সুতরাং ব্যক্তিকে পাপ করতে হবে। ব্যক্তি পাপ করলেই বরং দেবতারা খুশি। তাহলেই সার্থক হয় দেবতাদের সৃষ্টিকর্ম। বেকার হয়ে যাওয়া লক্ষ লক্ষ দেবদূতও কাজ করার সুযোগ পায়। তাদের আয়ের যাবতীয় কার্যালয় সচল হয়। সেসব কার্যালয় সচল রাখতেই আমাদেরকে পাপ করতে হবে। আমরা না চাইলেও অগণিত অদৃশ্য দেবদূত নানাভাবে নানারূপে আমাদের রিপুগুলোকে হাত করে নেয় এবং তাদের মাধ্যমে একটা না একটা পাপ করিয়েই ছাড়ে। এতেও যদি কোনো কারণে ব্যর্থ হয়, তখন নিজেরাই ছদ্মবেশে একটা আকাম করে চালিয়ে দেবে আমাদের নামে। বিশেষ করে আমাদের পুরুষদের নামে।
তারপর সে-পাপের ছুতা ধরে পাঠাবে নরকে। আমাদের পুরুষেরা নরকের আগুনে জ্বলবে। বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে আকাশ-পাতাল কাঁপাবে। তাদের পরিবার-পরিজন তখন বস্তাভর্তি পুণ্য নিয়ে দেবতাদের ধারে ধারে পাগলের মতো হুমড়ি খেয়ে পড়বে। তাদের পাথর পায়ে মাথা ঠুকতে থাকবে। মনে চাইলে দেবতারা মুদ্রার তালে তালে নৃত্য করতে বলবে। নৃত্য করতে করতে বাংলাদেশি বেহুলারা দেবতাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারলে, তবেই পুরুষরা প্রাণ ফিরে পাবে। প্রাণ ফিরে পেয়ে খুশির দরিয়ায় ভাসতে ভাসতে সর্বোচ্চ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গড় ভক্তিতে লুটিয়ে পড়বে দেবতাদের পায়ে। দেবতারা তখন তাদের প্লান মোতাবেক কাজ হাসিল হয়েছে দেখে দেবতাসুলভ একটা হাসি দিয়ে বলবে—তথাস্থ তথাস্থ।
এভাবেই দেবতারা মহত্ত্বের পরিচয় দিয়ে থাকে।
সে-প্লানেই কিনা কে জানে। একদিন শুনি মহল্লায় মাইকিং হচ্ছে, পারুল নামে আট-নয় বছরের একটি মেয়ে হারিয়ে গেছে। মেয়েটির গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। পরনে লাল-সবুজের ডোরাকাটা ফ্রক। যদি কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি পেয়ে থাকেন তাহলে ০১৭৯৬৬৫৪৫৬৫ নাম্বারে ফোন করার জন্য অনুরোধ করছি। শত অনুরোধের পরও কেউ মেয়েটির খোঁজ দিতে পারলো না। মহল্লার সচেতন-অবচেতন নাগরিক, পুলিশ, কেউ মেয়েটির খোঁজ দিতে পারেনি।
এভাবে একদিন যখন সব খোঁজাখুঁজি থেমে যায়, তখন শুরু হয় আমাদের কল্পনার খোঁজ। কল্পনায় দেখি কসাই মিজানের সহকারি আবদুল করিমের ক্লাস থ্রি-তে পড়া আট-নয় বছরের মেয়েটা সন্ধ্যায় পড়তে বসে। পড়ার মাঝখানে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুৎ চলে গেলে মেয়েটা কিছুই দেখতে পায় না। তখন ঘরের ভেতর সে মোমবাতি খুঁজতে থাকে। মা আনোয়ারা খাতুন জানায়, ঘরে কোনো মোমবাতি নাই। তোর বাপের কাছে যা। গিয়া পাঁচ টেহার দামের দুইড্ডা মোমবাতি আর আড়াইশো গেরাম মুশুরি ডাইল নিয়া জলদি আয়। মেয়েটা তখন মহল্লার মোড়েই মাংসের দোকানে গিয়ে তার বাবা আবদুল করিমকে পায়। এবং পাঁচ টাকা দামের দুটো মোমবাতি আর আড়াইশো গ্রাম মুশুরি ডাল নিয়ে রেখে যাওয়া পড়াটা স্মৃতিতে ভাসাতে ভাসাতে মুন্সি বাড়ির চিপা গলি দিয়ে আসতে থাকে। সে-সময় মুন্সি বাড়ির কালো কুকুরটা কী কারণে যেনো ঘেউ ঘেউ করে ডেকে ওঠে।
(চলবে)

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট