বৃষ্টি ভেজা পদ্য





আমি বৃষ্টি ছুঁই
হাফিজ রহমান

তুমি বৃষ্টিকে ভালবাসতে,
যখনই বৃষ্টি আসুক, তুমি ছুটে গিয়ে বৃষ্টি ছুঁতে!
একদিন বৃষ্টি তাই বুঝে গেল,
তারপর তুমি যেখানেই যাও, বৃষ্টি পিছুপিছু যেতো!

এক ঘোর বৃষ্টিতে তুমি আমাকে ছুঁতে চেয়েছিলে,
তুমি জানতে তা সম্ভব না, তবু কি অনন্ত প্রয়াস!
তারপর যখন বুঝলে, এ জীবনে তুমি আমাকে ছুঁতে পারবেনা,
সেকি কান্না তোমার, বৃষ্টির মত অঝোর কান্নায় আমাকে ভেজালে।
আমি আজও তাই বৃষ্টি ছুঁতে যাই!
আমি তোমাকে ছুঁই!


তুমি এবং ওরা
সৈয়দ শরীফ

আজকে আকাশ খুব কেঁদেছে, জানো?
হয়তো শহর তুমিহীনা- তাই;
মেঘের ভাঁজে আবছা অভিমানও
ভাসছে- কোথায় তোমায় খুঁজে পাই !

তোমার খোঁজে বারান্দার ওপাশে
ফড়িং এসে অপেক্ষাতে রয়,
দৃশ্য তোমার অদৃশ্য আকাশে
প্রজাপতি ফড়িংকে তা কয়।

‘কোথায় তবে?’- প্রশ্ন করে পাখি
উত্তরে সব বললো ফুলের টব-
নেই তুমি আজ; জানি এ নয় ফাঁকি
নিলেন স্বয়ং ¯স্রষ্টা, মানে ‘রব’।

হুম জানি তা, নেই তো তোমার দোষ-ও
মানছে না মন; আসবো তোমার কাছে?
যাত্রাপথে একটু কোথাও বসো
আসবো দেখো তোমার মনের আঁচে।



বৃষ্টির দিনে
ইসরাফিল আকন্দ রুদ্র

মুষলধারায় বৃষ্টির দিনে ভিজতে ভিজতে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ
পাড়ি দিয়ে এসেছিলাম পড়ার অজুহাতে!
কেউ জানতো না, এমন দুর্যোগে কেন আমার আগমন
তোমার কথা ভাবি আর বৃষ্টি বিলাস করি
বোরিং ইংরেজি দ্বিতীয় ক্লাসটাতেও।

টিফিন টাইমে বন্ধু নয় যেন ভাই সম্পর্কের মানুষের সাথে ভেজা
তোমার সাথে ভেজার ক্ষমতা তো আমার নেই!

ক্লাসে ফিরতি আগমন, আমার কাঁপুনি
সবাই বলাবলি করছিল আমার জ্বর বাঁধবে,
জ্বরের আক্রমণে ক্রমাগত ভেস্তে যাবো আমি
না আমাকে আক্রমণ করলো না।

তুমি হয়তো আমার সাথে জোড়া বাঁধতে চেয়েছিলে?
বাসায় ফিরে তোমারও এক দফা ভেজা-
ব্যস্- পরদিন শুনলাম জ্বরের আক্রমণ তোমার উপর!

যাচ্ছিলাম তোমার কাছে চার আত্মাকে নিয়ে
যেন সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পার হচ্ছি-
বল, কত অব্যক্ত প্রেম ছিল ঐ বৃষ্টির দিনগুলোতে!


বৃশ্চিকা বৃষ্টি
ইয়ার ইগনিয়াস

বৃষ্টিকে ডাকিনি সেইদিন।
গন্তব্যের ফিতে জুড়ে সাথী ছিলো মেঘা
মলিন মুখবিবর!
অনুতাপের অনু অনু তাপে চেয়েছে ছুঁতে আমারে
কান্নার কলায় চেয়েছে ভাসাতে প্রেমজ প্লাবনে।
পৃথক কাদায় না-জড়ায়ে
কৌশলে বাঁচায়ে নিয়েছি নিজেকে
চাহিদায় চাহিবামাত্র সমর্পিত নই আর ...

সারাটা পথে মেঘার চাপাকান্না
আমিও ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে যাই
টলোমলো মনোবলে
হাঁটি কাছিমের ভঙ্গিমায়।

পথের পাঁচিলে
কত শোকে জমাট হয়েছে আরক্তিম কংক্রীট 
তা-কি কোনো রিখটারে মাপা যায়?
কিংবা অন্যকোনো স্কেলে?
আমিও তেমন জমে যাই 
প্রত্যাখ্যানের মতো অবহেলায়
হৃদয়ের হিমাঙ্কে জমে যায় বোহেমীয় ভাষা

মেঘার মায়াশ্রু কিংবা
বৃষ্টির কদর্যহীন কদমবুচি
কোনকিছুতেই ফেরে না সম্বিৎ

শুধু সম্মানটুকু ভেজার ভয়ে 
রুদ্ধ করি আঙিনার প্রধান ফটক
তবু উঠান অবধি এসে
টানা চুরাশি মিনিট কান্নাধারা শেষে
বৃশ্চিকা বৃষ্টি
একরকম অভিমান করেই ফিরে গেল।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট