পদাবলি



মাটি
শাহীন মাহমুদ

মাটির সারাংশে ঝুলে আছে প্যারানইয়া প্রেম
অযাচিত অবিশ্বাস তোমাকে শেখাল বিরোধবাস
আমি অধিবিদ্যা মেনে নিয়েছি অমীমাংসার বাসনায় ।
মাটির বৃক্ষের এই যে ভোগের বৈশ্বিক কাল
তুমি তো একদিন পাহাড় চূড়া থেকে নেমে
সাগরে মিশেছিলে তাই না ?
আহা সাগর ,একদিন হারালে তুমি আপন কক্ষপথ
এখন তোমার গর্ভাগারে ভাগাড় নিস্তব্ধতা । 


তোমার নোলক হয়ে
নুরুল ইসলাম বাবুল

আমারও আছে বেদনার দিন
অহরহ বুকের ভেতরে নামে রাতের আঁধার,
তবু হেঁটে আসা ঢেউয়ের কাছে শুনি সাগরের বৃত্তান্ত;
দেখি, ফেলে আসা শস্যবীজ
সোনা হয়ে ফিরে আসে কৃষকের হাতে।

ক্ষতগুলো আমাকেও টেনে নিয়ে যায়
বারবার হয়ে উঠি শুকনো নদী
তবু আমি দখিনা হাওয়ায় খুঁজি জলের কণা,
শরতের নীল নীল আকাশে তুলো মেঘ
উড়ে যেতে যেতে ফিরে আসে কিশোরীর পায়

অতঃপর আমিও পুড়ে যেতে যেতে
ফিরে আসি তোমার এক রত্তি নোলক হয়ে।


উপাখ্যান
শোয়াইব শাহরিয়ার

দেখি আশ্চর্য এক সাঁকো। টগবগে জল নিচে।
তবুও যাই সন্তর্পণে।  যেন পথহারা মাছের বাচ্চা!
যেন আগুনে ঝলসে যাওয়া...

শহরে পরিযায়ী পাখির মতো আসে
বনচারী হাওয়া; সবুজাভ হয়ে।
সুদীর্ঘ ছায়া নিয়ে। আটকে যায় আয়ু।

...হাতের দশ আঙুলে লিখে যাই কপালের কৌতুক।

এইতো জীবন
হোসনা মুরাদ

সকাল দুপুর রাত
নিয়মিত তিন বেলা খেলেই খাওয়া হয়না
পাকস্থলীর পূর্নতা মানে জীবনের সম্পূর্ণতা নয়
সুন্দর কাপড় পরে পরিপাটি হয়ে চললে
কিংবা...
মুখভর্তি হাসি দিয়ে কথা বললেই
সুখী বলা যায় না
ভণিতা করলেও সব যেন ভান হয়না
তৃপ্তির ঢেকুর তুলে অতৃপ্তি’রা সদাই পুড়ে
ক্ষুদার অনলে 
ধূসর ভষ্ম হয়ে মিশে যায় মহাকালের গহ্বরে
ভাবের অন্তরালের অভাবটা এতটাই তীব্র
দ্রবীভুত হয়ে বের হয় নীরব লোনা জলে

এই খাওয়া পরা আর চলার মাঝেও
কতো মানুষ আধমরা হয়ে বেঁচে থাকে
কতো মানুষ একটু বেঁচে পুরোটাই মরে 
কেউবা পুরোটাই বেঁচে থাকে ফসিল হয়ে
এইতো জীবন- ‘আহা রে জীবন’ 
জগতের তাতে কী’ই বা যায় আসে
কীইবা তার দায়ভার ?
স্মৃতির খাতায় সময়ের কবিতা লিখে 
এক কাঁদে বয়ে বেড়ানো কিছু শুদ্ধ নিয়তি
অন্য কাঁদে নির্ভুল জীবনের সব পান্ডুলিপি...

বাদলা দিনের গান
টিপু সুলতান

তোমার ঘরে আগুন দেব, উদাস দুপুর
রৌদ্র মাখা বটের পাতায় জলের নূপুর।
তোমার মুখে রঙ মাখাবে মেঘলা কালো চুল
কদম কেয়া নাচবে তখন দুলবে কাশফুল।
তোমার বুকে কাটবে সাঁতার,বাদলা দিনের গান
চুমুর টানে ভাগ হবে সব; শ্রাবণের প্রাণ।
তোমার চোখে চোখ খুঁজিবে হিজলবনের পাখি
ঘাসফুলেরা দাঁড়িয়ে যাবে,নিত্যনতুন মাখি!
তোমার ঠোঁটে ঠোঁট বসাবে সরব নীরবতি
ঘাসফড়িং আর মাটির গন্ধ,উড়ুক প্রজাপতি।
তোমার মনে শুদ্ধ হবো, শুদ্ধ হবে তুমি
আগুন দেব-উদাস দুপুর, হঠাৎ বৃষ্টি আমি।
তোমার ভেতর ডুবে যাবো, খানিক ভরসা
নদ নদী আর পদ্মদিঘি,পল্লীগ্রাম-শহুর বরষা।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট