পদাবলি : ২





জীবন এড্রেস কঙ্কাল শহরে
শাহমুব জুয়েল

হাঁটতে হাঁটতে একদিন পেছন থেকে আসবে সে
মায়াবী বাগান থেকে ছিঁড়ে নেবে দেহপ্রাণ।
উড়াল দিলেই জনতা পুতে দেবে কঙ্কাল শহরে
মাটি মাটি, হনহন হনহন,
বিধ্বস্ত বিধ্বস্ত, আবার মাটি...

জীবন এ্যড্রেস কঙ্কাল শহরে।

থলেহীন প্রাণ নিমেশেই হারিয়ে যাবে জনতার ¯্রােতে
কীর্তিগুলো সাজানো থাকবে স্বচ্ছকাঁচের ভাঁজে
লোকে ঠোঁটে অঙ্গুলি চেপে ধরে নেবে
উনি বড় চেনা মানুষ।
তা ভেবে
সময়ে এঁটে নাও হুশ।

জীবন এ্যড্রেস কঙ্কাল শহরে।
একটু খেয়াল করো প্রাণ
মিথ্যা ও খামখেয়ালে আলপিন রেখে
চলতি পথের বাঁকে
পূর্ণতার মাপে
পূর্ণ্য করো শতে শতে
বেহুদা সংসারে ক্ষতে ক্ষতে
থেমে যাবে এ বিহনে...

জীবন এ্যড্রেস কঙ্কাল শহরে।







নকশী কাঁথায় আঁকি সংসারের যৌথ সুখ
হুমায়ুন কবীর চৌধুরী
         
চলো- তুমি ও আমি শুধুই দু’জনের মুক্ত গগনে,
বিমল প্রবাদবাক্য গুলো আবারও গুছিয়ে তুলি;
তোমার ধী মতামতের ভিত্তিরেখা বলো গোপনে,
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যরীতি মুক্তির যতসব লেখা বুলি!

গ্রহণ করি প্রয়োজনে মাটির মানুষ চলো- খুঁজি,
দু’জনে পাশাপাশি পরির্বতন রূপের দর্শন আঁকি;
চলো- সুঘ্রাণ নেবো যৌথভাবে প্রস্ফুটিত পুঁজি,
যোগ-বিয়োগ মোকাবেলা করতে থাকবে না বাকি!

তুমি ও আমি দর্শনে অধিকার নামে বিস্তার ঘটাই,
জরাজীর্ণ নথিপত্র গুচ্ছ মূল আবিষ্কার করি চোখে-
ঘুমিয়ে থাকা শুভ্রদের চলো আবার পরশে জাগাই,
অধিকারের কথাগুলো ফুটিয়ে তুলি বীরের মুখে!

লোকালয়ের শেষ প্রান্তে পৌছে যাই পতাকা নিয়ে,
শান্তির হাওয়া বয়ে আসুক প্রতিটি মানব কল্যানে;
নব শিশু বৃক্ষরসে জাগিয়ে তুলি চেতনাযুক্ত দিয়ে,
ঐতিহ্যের হিসেবটা শিখিয়ে তুলি যৌথ অভিমানে!



শীতলবরণ
আদ্যনাথ ঘোষ

উঠোনে হেমন্ত বাতাস, নাচে কোজাগরি রাত
উদাসী বাউল আজ একতারায় বিবেকের গানে
নিজেকে পোড়ায়ে, দীপাবলির উৎসবে
ভাঙ্গে নক্ষত্ররাজি, ছড়ায় আলোর বিভা
তবুও প্রাণের হিল্লোলে জাগে রিক্ততা, হাহাকার
দুঃখ, দীর্ণ চোখের কন্দরে ভাসে শূন্যতা
বেদনার অবসাদে হৃদয়ের গহ্বরে ঢেকে যায় মুখ
আর ভাগ্যের পরিহাসে চোখের জলে ভেসে ভেসে
যৌবণা ধরণী হয় শীতলবরণ।




দেবদূত 
মিসির হাছনাইন 

দেবদারু গাছে ফুল ফুটেছে
বউ ঘুমায় আছে দেবতার ঘরে
মাঝ রাতের চান্দের আলোয়
মুখস্থ করি বাইশ নাম্বার তিল!
আমার গুরু যৌবনের গান গায়
গুরু কয়- দেবদূত’রা মানুষে থাকে
মানুষ তবে স্বর্গ নরক।



দেখা মেলে না স্বস্তির
নাবিল তুরাব

পথগুলো হয়ে ওঠে দীর্ঘ,
সীমানা হয়ে ওঠে গভীর অসীম,
চলতে চলতে দেখা তো মেলে না স্বস্তির।

এখানে সারাদিন সড়কের মস্ত বিপুল কোলাহল,
গাছপালাহীন, ঘাস ও শিশিরের অপ্রতুলতা;
এখানে শুধুই ধুলোবালি আর অপরিচিত মানুষের লাগামহীন নিষ্ঠুরতা;
চলতে চলতে দেখা তো মেলে না স্বস্তির।

সুখ ও স্বস্তির নির্জলা পথ আর কতটা দূর?



মৃত্যু ও পুনর্জন্ম
জাহিদ আল হাসান

তোমার কোলে মৃত্যু হলে
দাফন দিও বুকের ভেতর
সেখানে ফুটবে রেইনট্রি ফুল;
যার ঘ্রাণ শুকতে শুকতে
পুনর্জন্ম হবে তোমার।



সম্পর্ক রহস্য
শাহিন চাষী

সম্পর্কের গভীরতা মেপে কাটলো এ জীবন; বিশ্বাসের কোষে আজ ঘৃণার ছত্রাক, মস; আস্থার দেয়ালে ফার্ণ, স্যাঁতসেতে শ্যাওলা; দু’চোখে ঘন শ্রাবণের গান!

আকাশ দেখেই মনে হয় আপন; উর্বশী চাঁদ, উচ্ছল নক্ষত্র, উল্কা, নীহারিকা- ঠিক যেন পরিচিত স্বজন; কৌতুহলে বাড়াই হাত- অপরিবর্তিত দূরত্বের ব্যবধান।

পরম প্রিয়ার মতো ফুল- স্পর্শেই শ্লীলতাহানী; একান্ত সুহৃদ পাখি- উড়াল পরাঙ্গম; বিমূর্ত পাহাড়- বাকহীন মিত্র; কল্লোলিত নদীর মোহনাতেই- গোপনে সুক্ষ্ম টান।

প্রিয়ংবদা, সুহাসিনী-- স্বার্থের মোকামে সওদাগর; চেনা মুখ, প্রতিবেশী জন- সেলুলয়েড ফিতায় বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন; উদার আলো, বাতাস- বুকে তার অভিমান।

সম্পর্কের সম্পর্ক খোঁজে-- খুলে গেছে চোখ, জেগেছে অনুভব; কেটেছে মোহ; জেনেছি গহীন- বিশুদ্ধ সম্পর্ক কল্পনার কাগজে ভাবনা লিখিত স্বপ্নের উপাখ্যান।


স্টেজ হয়ে আসা দৃশ্য 
নিঃশব্দ আহামদ

দৃশ্যের ভেতর দৃশ্য, লুপ্ত হতে হতে জেগে উঠে ভয় । আর মানুষ মুখে খেলা করে গেছে মুখস্ত হয়ে যাওয়া যাপন অভ্যস্থতা । ঠিক অভ্যস্থের মতো আমি ও গলাধঃকরণ করি প্রেমিকা চোখে স্টেজ হয়ে যাওয়া আমার সমস্ত আকুল করা ব্যাকুলতা। তবু এখানে সকাল নামে সুচনার মতো ফিরে আসে সঞ্চারিত প্রত্যাশা।

এভাবে শুষ্কতায় কখনো নাব্যতা শুন্য নদীতেও ডাকে বান-কণ্ঠলগ্না কোনো গানে স্বস্তি হয়ে গেলে বারংবার ডুবে যায়
দৃশ্যে কেবল উঠে আসে অতিশয়োক্তি হয়ে যাওয়া উপমেয় কতেক নাম । মনঃস্থ হয়ে গেলে কখনো- না, আর ডাকা যাবেনা সে সব নাম । কেমন ওলটপালট হয়ে গেছে অনিন্দ্য কোনো দৃশ্যের অবতারণা।

হয়তো এভাবে বিকেল ডেকে ডেকে সব রাত দৃশ্যে মুর্ত হয়ে জেগে থাকে ঘোর শুন্যতা -তারপর তন্দ্রাহারা চোখ, স্পর্শে কাঁপা কোনো বুকে জেগে উঠে বৈতরনির গাঙ একখানা মনোলকানন্দা ভাসিয়েছি যেনো রূপমুগ্ধ তোমার অলিক মোহনায়।




এলোমেলো 
দীপাঞ্জন দাস

মুখ বুজে তোর ঘ্রাণ নেবো
কোনো এক বিকেলবেলায়।
স্যাঁতসেঁতে ভেজা কাপড়ে যখন কাব্য হয়ে আমায় ছুঁবি,
খোলা জানালা দিয়ে উঁকি মারবে
আধুনিক কবিতার স্রষ্টারা।
তুই বড় লাজুক,
তবু রাস্তা হারাবি আমার বুকে।
আলতো করে মিঠে রোদ ছড়িয়ে দেব,
মেঘের কোলে রোদ ওঠাব,
কাগুজে নৌকায় চড়ে বেড়াতে যাব,
সঙ্গে যাবি তুই।
অচেনা বাঁকা পথে চেনা গল্প শোনাবো বারবার,
রূপকথায়তোকে ছোঁবো ইচ্ছে মতো।
আমি তো সেই রাজপুত্র
জিয়ন কাঠি ছুঁইয়ে দিবি আমার আশ্বিনে?



 হেমন্ত এলে
 সুজাউদ্দৌলা

হেমন্ত এলে আমি ধান নয়, কবিতা কাটি
কৃষকতা হৃদয়ে রয়ে গেছে আজো
ভূমিহীন বলে নেই আবাদের সুখ
শস্যের ছোঁয়া পেতে উন্মুখ মন
ধান নিয়ে কবিতা লিখতে বসে
ধানের গোছার মতো কাটে শব্দ
হেমন্ত এলে নদীর ভাঙনে নিঃস্ব
সম্পন্ন গৃহস্থের মতো ভেতরে হাহাকার ওঠে
কবিতায় কাটাকুটি বেড়ে যায়


স্পর্শ চায় 
নাঈম হোসেন লেনিল 

আমি আমার আত্মা তোমার নামেই খুলে দিয়েছি
আমি ভালবেসে তোমাকে অস্তিত্বে ধারণ করেছি
অথচ,
তোমার সত্ত্বার নেশায় আমি মাতাল হইতে পারি না
অথচ,
তোমার প্রণয় চিত্তে আমি কবিতা ছুঁয়ে দিতে পারি না!

তুমি জানো কী?
আমার রক্তে বিষণœতা জড়ো হয়েছে
এই বিষণœতার স্পর্শে আমি যেন গুলিবিদ্ধ হয়েছি
আমার টকটকে লাল রক্ত কুচকুচে কালো হয়েছে!

তুমি দিবে কী সেই স্পর্শ?
যে স্পর্শে বিলীন হয়ে যাবে রক্তে জমে থাকা বিষাক্ততা
যে স্পর্শে আমি হবো দীপ্তিমান মুছে যাবে সমস্ত নিঃসঙ্গতা
যে স্পর্শে তোমার সত্ত্বার নেশায় আমি আবার মাতাল হবো
যে স্পর্শে তোমার প্রণয় চিত্তেই আমি আবার নিত্য কবিতা ছুঁয়ে দিবো
আমার এই অতৃপ্তিকর ফিকে আত্মায়-
তোমার রোদ্দুরে সত্ত্বার সেই স্নিগ্ধ কোমল নিবিড় রোদ্দুর স্পর্শ চায়।



জমিয়ে রাখো সহজে
দীপঙ্কর পাড়ুই 

কিছুই তো বলিনি এখনো, তুমিও জমিয়ে রেখে গেলে
অথচ মুখোমুখি দেখার জন্য গাছতলায় এলে

জমিয়ে রাখার অভ্যেসে তুমি মগ্ন অপেক্ষায়
কত দেখা বাকি থেকে গেছে নানা অছিলায়

বিষন্ন বিকেল আমাদের কাছে নিয়ম করে আসে
থেকে থেকে আত্মায় শুধু জমিয়ে রাখো কাছে


ছুঁয়ে দিলে চোপসে যাই
মজনু মিয়া

নিষ্ঠুর নিয়তি আমাকে রুদ্ধ করে রেখেছে
অথচ, আমার গায়ে শিশির জমে
ফুলে প্রজাপতি বসে
চুমু দিয়ে যায়, কালো ভ্রমর মধু শুঁষে নেয়।

আমার ভালো লাগা বলে কিছু নেই,
আমি যেই ভালোবাসি বলি-
অমনি হাতের স্পর্শে
চোপসে যাই, কিন্তু কেন, এটা হওয়ার কথা না?

ভালোবাসার জন্যও সুন্দর দেহ মন লাগে
সৌরভ যেনো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে
তবে, সবচে বড় কথা হলো পাবার আকাক্সক্ষার লিমিট,
আমাকে লিমিট করে বানিয়েছে;
চাইলেই দু’হাত পেতে চোপসে যাই স্পর্শে।



এক ফোঁটা বৃষ্টি
ইসমত জাহান লিমা

এক চাতকিনী এসে শুষেছে চোখের অমৃতরস
কাষ্ঠপোড়া খরায় দু’চোখ খাঁক হয়েছে  বহুকালে।
সেই হতে সাগ্রহে আছি অঝোর বৃষ্টি নামুক হেমন্তের প্রথমে
বৃষ্টিরসে টুইটুম্বর দু’চোখে বান আসুক।
বন্যার পানিতে ভেঙে চুরমার হোক এ দূষিত শহর,
অফুরন্ত জলে স্নান সারুক শহুরে গলির পঁচা আবর্জনা
বৃষ্টিতে ভেসে যাক মনের মরুদ্যান, লন্ডন, প্যারিস
আকস্মিক জোয়ারে হাজার বছর চলুক গঙ্গার স্রোতপ্রবাহ।
সাথে প্লাবিত হোক আমার হৃদয়ের প্রকা- বালুচর
লজ্জাবতী বৃষ্টির মুখে চন্দনের সুগন্ধি ছড়িয়ে পরুক দ্বিগদিক!
বন্যার্ত শরীর খুঁজে পাক কোন যুবকের সাহস
বৃষ্টিজলে ভিজুক অষ্টাদশী কুমারীর সর্বাঙ্গের অলিগলি।
নব্য প্রেমিক যুগলের আলিঙ্গনে উঠুক সেতারার ঝংকার,
প্লাবনের মহামারীতে চমকে উঠুক বৃদ্ধার অবশ তনু
আহাজারি রোনাজারিতে তোলপাড় হোক ব্রহ্মান্ড-পাতাল!!
দেশান্তরী হয়ে বন্যায় ভেসে যাক আমার আছে যা কিছু।
আমি জ্বালাভরা চোখে অপেক্ষা করবো সেই বানের,
কারো সিংহী গর্জনেও আহত হবে না আমার কর্ণদ্বয়!!
রবো প্রিয়দর্শিনী বানের আঁশে করুণ লোচনে,
যাক না একফোঁটা বৃষ্টিতে ভিজে চোখের বারান্দা ।


রাত্রীযাপন
জালাল জয় 

কোন এক দিনশেষে
নিরবতার দৃষ্টি ভেঙ্গে
মধুর আঘাতে রাতের শরীর
স্বপ্নকে হত্যা করে
ঝুলিয়ে রাখে গাছের ডালে
পাহাড়ির বুক জুড়ে রক্তের চুমু
উষ্ণ-কোমল হৃদয় কেটে
শীতল করে কুয়াশার ঠোঁট
আগুন চোখে, রাত্রীর কত ভয়
আদরের ফোঁটায় ফোঁটায়
রক্তমায়া টপটপ করে পড়ে 

ভাবছি নিজেকেও বিলিয়ে দেবো
এমনই এক আঁধার রাতে



পুরাতন প্রেম!
ধ্রুপদী শামীম টিটু

একযুগ আগে প্রেয়সীর লেখা চিঠি
হাতে পেয়েছি গতকাল; আধুনিক সব উপমায়
জঞ্জাল নয় মোটেই,
মনে হলো এইতো সবে লেখা!

কতটা সময়ে এক যুগ হয়
বারো বছর একশত চুয়াল্লিশ মাস
দিনের হিসেব নাইবা কসলাম
তবু কালের স্বাক্ষী চিঠি।

মালতী যখন আমার সাথেই স্কুলে পড়তো
কখনোই বলেনি, ‘জানিস তোকে ভীষণ ভালোবাসি।
বলেনি তুই মাথার বামপাশে সিঁথি করে
ডুবো তেলে চুল ভিজিয়ে স্কুলে আসবিনা;
বলেনি, অমন করে সুরঙ্গভেদী দাঁত কেলিয়ে হাসবিনা!

সেই মালতীই আমায় ভালোবাসতো!

নোটবুকের গুডবুকে আমি ব্যাডবয় ছিলাম।
না না! দুশ্চরিত্রে নয়; দূর্বল মেধায়।
সেই আমাকেই ভালোবেসেছিল, মালতী!

সুন্দরী মেয়েরা বোকা ছেলেদেরকেই বেশি ভালোবাসে!
নইলে অমন সুন্দর চাঁদ নিশুতি রাতে উঠবে কেন?



রংধনু
শোয়াইব শাহরিয়ার

আকাশ রঙধনু এঁকেছে চন্দনের ঘ্রাণে; ময়ূর উড়ে যাচ্ছে মধুচন্দ্রিমার টানে!
দিকভ্রান্ত বিকেলে সবুজ হয়ে উঠছে লাল, লালের ভেতর ক্রমশ লীন হচ্ছে
স্মৃতি। ফ্যাকাসে বৃষ্টি নামে স্মৃতির ঠোঁটে, এই ঠোঁট জানে- কেন ভ্রমণের
আশায় দিক্বিদিক ছুটে চলে হৃদয়!

ঋতু বদলায়। মেঘের রূপ নেয় কুয়াশা। ঠোঁট তবু ঠোঁটই থাকে, ধোঁয়া হয়ে উড়ে বাতাসে...!

...মধুচন্দ্রিমা ফিরে আসে না। হৃদয়ের উষ্ণতায় নামে শীতের শ্লীলতা। ঠোঁট
ভেজে না আর বর্ষার মতো। ভালোবাসা তবু এঁকেছে আকাশ; বাতাসে সুগন্ধ। তবুও- অধরা মধুর পৃথিবীতে নামে ক্রমশ মৃত্যু; জীবনে যোগ হয় ব্যর্থতার পশরা!



সুপ্তোত্থিত প্রেম 
আহমেদ ইউসুফ 

মেধহীন ছায়াশরীরের ঘ্রাণহীন দেহবল্লরী
আলোহারা রাতের কালোজিরা কান্নায়
প্রস্ফুটিত হয়- খন্ডকাব্যের মতো নির্ভেজাল স্বপ্নে
ঢলে পড়ে চাঁদ, জোৎ¯œা প্রপাত; প্রজাপতি হাত
বাড়িয়ে দেয়, কাছে টেনে নেয়, বুকে সেঁটে দেয়
সুপ্তোত্থিত প্রেম।

বায়স নয়ন জ¦লে প্রিয়তম চোখের কাজলে
বুকের দ্বীপের কুঁড়েঘরে বসে আছে কুঁড়ো বক
ফেনিল সমুদ্রের ঝড়ো বেগের মতো আবেগাপ্লুত
সেই কবে দেখা কবে গত অথচ এখনো স্বপ্নের মন্দিরে
পূজাম-পে পূঁজিত দেবীর মতো পূজারী  মনে
সুপ্তোত্থিত প্রেম।

আমিও হাত ধরে জলপাই নদী পেরুবো বলে 
হাতের দূরবীনে চোখ রেখে এই তরঙ্গপথে
মেঘছায়া পথে নিভৃতে অস¤পূর্ণ কারোর খোঁজে
এক যুগল অস¤পূর্ণতায় পূর্ণতা এনে দেয়
দীঘল শূন্যতা কেঁটে দেয় আর এই বুকে সেঁটে দেয়
সুপ্তোত্থিত প্রেম।



গন্তব্য
রাফাতুল ইসলাম আরাফাত

বুক পকেটে বাগান বিলাসের পাপড়িগুলোও জানে-
আমাদের গন্তব্য নির্দিষ্ট
আমরা এ পথে যাবো আরো অনেকগুলো সকাল,
বিকেল এবং সন্ধ্যা;
যেমন এ পথে বাড়ি ফিরে দূরপাল্লার ট্রেনগুলো!



অ্যাকসেপ্ট্যান্স স্পিচ
আরফান হাবিব

ছোটবেলায় অংকের খাতায়
শূন্য পাওয়ার মতো তোমার
মুখটি বিষ্ময়ে ভরা।
সে বিষ্ময় কেটেছে
ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠা গুলো দিয়ে
খাতার মলাট বাঁধার পর
এবং খেলনার দোকানে
প্লাস্টিকের ও পোড়ামাটির
পুতুল পাশাপাশি দেখে।


আহ্বান 
মাহবুব এ রহমান

মন ছুটে যায় ওই সে মনের দ্বারে
কেমন কেমন আপন লাগে তারে।
কারে?
না দেখলে রে যারে-
চিনচিনিয়ে বুকের মাঝে ব্যথা কেবল বাড়ে।
খুব সহজে ছাড়ে?
না তো!
ঘুমরা চোখে দে না তো চুম যায় কেটে যায় রাতও।

সে জানে কি আমার মনের ব্যথা?
না না!
কেমনে হবে জানা!
জানাইনি তো, আর জানাবে কে তা?
সে কী!
এত্তো টান আর ভালোবাসা ওসব তবে মেকি!

ধুত্তুরি ছাই ভাবছি কী যে, বলতে লাগে ভয়
হৃজমিনে জাগে কেমন দ্বিধা ও সংশয়!

দূর থেকে ঠিক চেয়ে থাকি বলতে পারি নাকো!
তুমিও কি আমার ছবি তোমার মনে আঁকো?

তাই যদি হয় আর দেরি নয় তাত্তাড়ি খুব এসো
লাজুক চোখে রঙিন ঠোঁটে মিষ্টি হাসি হেসো!
আর কারো নয় আমার তুমি আমায় ভালো বেসো !




খরঘ্রাণ
আজিজ কাজল

পুরনো প্রেমিকেরা যেমন করে ঘরে ফেরে;
সংসার জটলা-পাড়ে নিত্য ক্রিয়া বাড়ে

এই গুলতি খেলার পাখি,
নাও বানানোর দেরাজ-বৃক্ষ;
গেহে আর কতো বৈরাগ্য
মানাতে চাও সাধু! কেন তোমার
চোখে-মুখে রাজ্যভার?

এই রাতা কুরা মুখ, সবুজ বরবটি
খুঁটিনাটি; পাগলের ঘন্টায় ছুটছে
তোমার বিশ্ব গোলার খর-বাতাস।

তুমিময়
রুদ্র সুশান্ত

চাঁদটা এতো সুন্দর কেন? ছাদে একা একা জ্যোৎস্না স্নানে নিমজ্জিত হয়ে ভাবি- এই বুঝি তুমি এলে !
ছাদের কোণায় জাম গাছের পাতাগুলো আমার নাক-মুখ ছুঁয়ে যায়- অথচ কথা ছিলো তুমি ছুঁয়ে দিবে।

‘তুমি’ পাশে থাকলে আমি কখনো বলতাম না চাঁদটা সুন্দর,
চাঁদে তোমার অধিক মুগ্ধতা নেই,
আকাশ দেখো- রক্তের মতো লালচে মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশ। ঠিক তোমার রক্তিম ঠোঁটের মতো, তোমাতে বিহ্বল হলে আমি অশ্রু পেয়েছি, প্রেম পেয়েছি অল্প- তোমার ঠোঁটে কামদেবীর বাস, দেহের কথা নাই-ই বাললাম, মোহ আমার ছিলো বলেই তুমি বলতে - ‘বড্ড ছেলেমানুষ’।

দিনশেষে তুমি আমাকেই খুঁজো, ভেবে দেখো।
তোমার চে অধিক নেশা কিছুতেই নেই। ভালোবাসার স্লোগান ছিলো আমার, তুমি ছিলে মুগ্ধ স্রোতা, রাত্রির নির্বাসনে অষ্টাদশী তোমাকে মৈথুন করে চন্দ্র ঘুমিয়ে যেতো সূর্যের আবডালে।

গাছের সবুজাভ পত্রপল্লব পুষ্পঘ্রাণে লিখে রেখেছে তোমার নিদারুণ ইতিহাস।

তুমি আসবে আবার- জ্যোৎস্না যেদিন নিমিত হবে তোমার কোলে। তুমি আসবে- এই আর্তনাদে কেটে যাক আমার বাকিটা জীবন, আমার প্রেমের দলিল হোক তোমার কুঠিরের পর্দা।


কেউ ভালো নেই
তৌহিদ আহাম্মেদ লিখন

আমরা এখন কেউ ভালো নেই। কেউ কেউ ভালো থাকার অভিনয় করছি- সকাল থেকে রাত্রি অবধি;
ঝুলে থাকা লাশের মতো, আমরা এখন ঝুলে আছি।
ঝুলে আছি ব্যর্থতার রশি গলায় দিয়ে; একাকিত্বের
পাড়ায়-পাড়ায় আমরা এখন একা একা ঘুরে বেড়াই।

পিছুটানের মায়াবলে আমরা এখন বেঁচে আছি,
কেউ বা আবার  মৃতপ্রায়- কেউ বা আবার আধমরা;
পৃথিবীর সব দুঃখকষ্ট- আমরা এখন বয়ে বেড়াই।

ইতিহাসের পাতায় পাতায়;- নীল হরফে লেখা হবে
আমরা এখন কেউ ভালো নেই: কেউ ভালো নেই!

ভালোবাসা
বিদ্যুৎ মিশ্র

নতুন একটা গল্প লেখা হলো শুরু,
দু’টি কিশোর কিশোরী
ভালোবেসে ছিল অজান্তে কখন,
বুকের গভীরে একটা ছুরি
বসিয়েছিল। আজো বুঝতে পারেনি
ভালবাসা শুধু কান্না জানে।
সব স্বপ্নগুলো যখন ভেঙ্গে চুরমার,
একটা মানুষের কোন খানে
তুমুল ঝড় ওঠে কেও জানে না।
শুধু টুকরো টুকরো সব মন
আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে কিছু স্বপ্ন;
এই গুলো সারা জীবন
শুধু স্মৃতি হয়ে থাকে । আর কিছু নয়,
ভালবাসা শুধু কান্না তুমুল সংশয়।



কেমনে ছাড়ব তারে
সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির আলি

কেমন করে ছাড়ব তারে
কেমনে লিখিব কবিতা আমি,
কেমন করে ছাড়ব তারে
সে পাগল থাকে অন্তরে,
পাগলামি যদি না হয় আমার
কেমনে চিনিবে, সে আমার,
কেমন করে দেখব তারে
সে যদি আমায় চিনতে না পারে।
তবে কেমন করে লিখব আমি
কেমনে জাগবে মাতৃভূমি।
কি করে বা কবিতা হবো
কেমনে যাবো ভিন্নদেশে।
আমার সাথে বলবে কে কথা
ডাকবে কে আমায় ভালোবেসে।
কেমন করে ছাড়ব বলো
সেতো আমার অন্তরে।



বিবর্ণ স্মৃতি
রুহুল আমিন রাকিব

তোমাকে ভালোবেসে জীবনে কী বা পেলাম?
প্রণয়ের শেষ সমাধিতে দাঁড়িয়ে খুঁজে ফিরছি সেই প্রশ্নের উত্তর।
তোমার গোলাপ রাঙা ঠোঁটের ওই হাসিতে লেগে ছিলো নীল গরল;
অথচ আমি মধু ভেবে পান করছি!
কত সহজে না, আত্মার বাঁধন ছিন্ন কর চলে গেলে তুমি? এক মুঠো সুখের আশে!
বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে তুমি সেই প্রিয়জন!
এক মুহুর্ত চোখের আড়াল হলে কত পাগলামি ছিল তোমার।
অথচ আজ সব কিছুই স্মৃতি,
মরিচিকাময়’ করুণ ইতিহাস তোমার আমার প্রেমের গল্প।
একদিন যে ঠোঁটে এঁকেছি তোমার পবিত্র চুম্বন!
সময় হলে একবার এসে দেখে যেও অনুধা;
আজ সেই ঠোঁটে উড়ে লাল বাতির ধোঁয়া।
কেন এমন হলো অনুধা?
আমি তো প্রেমের দামে, পাপ কিনতে চাইনি কখনো।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট