ধারাবাহিক উপন্যাস : রামবন্দনা : শাদমান শাহিদ : পর্ব ১০



রামবন্দনা
শাদমান শাহিদ

(গত সংখ্যার পর)
 তখনো আমি বোঝাতে চাইলাম—এ-বিষয় নিয়ে এখন কিছুই লেখবে না তুমি। তার চেয়ে বরং অন্যরা যেভাবে তেলতেলে লেখা দিয়ে কাগজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাংলা একাডেমির বইমেলায় চটকধারি বিজ্ঞাপনের বদৌলতে রাতারাতি নাম কামাচ্ছে। সিস্টেম করে ছোট-খাটো পুরস্কার থেকে শুরু করে  বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। তুমিও সে-পথে হাঁটো। দেখবে কোথাও কোনো ঝুট-ঝামেলা নাই। 
ও তখন বলে—আমার নাকি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। শুনে হাসি পায়। বলি, ‘মানলাম মাথা খারাপ হয়ে গেছে আমার কিন্তু তোমাকে যা বলছি এর ব্যত্যয় হয় না যেনো। শিল্পচর্চায় রাজনীতির পঁচা লাশ টেনে আনবে না। এতে দুর্গন্ধ ছড়াবে। তার চেয়ে বুদ্ধিজীবীদের মতো বাতাস বুঝে ছাতা ধরো। দেখবে লক্ষ-কোটি বছর ধরে বেঁচে আছো। দুনিয়ার কোনো আঁচড়ই তোমার গায়ে পড়বে না। সে তখন জানতে চায়—আমি তার সাথে ঠাট্ট্রা করছি কি না? আমি বললাম—না, ঠাট্টা করছি না, ‘আর্ট ফর লাইফ’ তো আমাদেরই মনের কথা। কিন্তু সময়টা এখন আমাদের পাশে নেই। পাকিস্তান বা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সাথে এ-সময়টাকে মেলানো ঠিক হবে বলে মনে হচ্ছে না। তখন মানুষ অতটা আত্মকেন্দ্রিক ছিলো না। এবং এ-কারণেই সন্তানহারা পিতাকে মিডিয়ার সামনে ‘এ-ছেলে আমার নয়/ আমি তাকে সন্তান বলে স্বীকার করি না/ তার লাশ যেখানে খুশি ফেলে দেয়া হোক ইত্যাদি ইত্যাদি’ চিৎকার করে বলতে হয়। কিংবা ‘শুভবুদ্ধির উদয় হোক’ অমরবাণী উড়িয়েও কেউ কেউ নিজের ভেতর সান্ত¦না খোঁজার চেষ্টা করেন। এজন্যেই বলছি, তুমি যে পথে হাঁটছো, ওটা সাংঘাতিক মৃত্যুময়। এখন যেহেতু লিখে ফেলেছো, তখন গোপন করে রেখে দাও। সময় হলে একদিন তা ঠিকই কথা বলবে। কিন্তু শোনেনি। আরেকদিন শুনি প্রফেসর বাসির আহমেদ সস্ত্রীক কানাডায় চলে গেছেন। তিনি চলে গেলেন কেনো? তাঁর ছোটো মেয়ে  ব্যারিস্টার কুহিনূরকে জিজ্ঞেস করলে জানায়, তিনি নাকি সাম্প্রতিক সময়ে ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে পত্রিকায় কী সব লেখালেখি করছিলেন। যে-কারণে ভিসি মহোদয় তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে অপমান করেন। শুধু এখানেই শেষ নয়, বিষয়টাকে কেন্দ্র করে বাসার বাইরেও তাঁর জন্যে চলা-ফেরা অসম্ভব হয়ে পড়েছিলো। মোবাইলে প্রায়ই নানান হুমকি-ধুমকি আসতো। কুহিনূর আমাদেরকে কয়েকটা এসএমএসও দেখায়। একজন লিখেছে, ‘কীরে নটির পুত ফোন ধরিস না ক্যান? আবার যদি উল্টা-পাল্টা লেখিস না, বাংলাদেশে বাস করা তোর জন্য হারাম কইরা দিমু’। আরেকজনকে দেখলাম সাত পা এগিয়ে। সে লিখেছে, ‘তোর বাসার ঠিকানাটা দে, তোর বউ-ঝি’রে একটু আদর কইরা আসুম নে, তাইলেই তোর মাথামুথা ঠিক অইবো’। এসব করেও যখন দমাতে পারেনি, তখন লেলিয়ে দিলো পেশাদার খুনি আকবরকে। ভাগ্যিস আকবর কোনো-এক সময় তাঁর ছাত্র ছিলো। তা না হলে...।
আকবর তো চলে গেলো। আবার হয়তো আকমলকে পাঠাবে। সে-ও লজ্জায় মাথা নুইয়ে চলে গেলে, পাঠাবে আফজলকে। সে-ও চলে গেলে, আসবে আকরম। আর সে যদি পরশুরামের মতো পিতৃআজ্ঞা-মাতৃআজ্ঞা মনে করে...তখন? সে- আতঙ্কেই হয়তো চলে গেলেন তিনি।
     মাঝখানে আমিও একবার ভেবেছিলাম, দেশের বাইরে কোথাও চলে যাবো। বড় খালা ইংলেন্ডে আছে, ইমু’তে কথা হয়। প্রায়ই বলে চলে যেতে। ওখানে একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেবে। যাইনি। মনে হলো মহল্লার পাতিদেবতারাও তাই চায়। আমি চলে গেলেই বাড়িটা দখল নেবে। একাত্তরের পর শীতল বাবু যেমন ইকরতলীর তালুক, খাটিংগার লিচুবাগ, রাধাগঞ্জের পাটগুদামটা আর ফিরে পায়নি, ঋষিদেবীর ভিটে যেভাবে নয়ামুক্তিযোদ্ধা রফিক কমিশনারের হয়ে যায়, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রহমানের নাম-সনদ যেভাবে গায়েব হয়ে গেলো, আমার বাড়িটাও সেভাবে পাতিদেবতার হয়ে যাবে। মেয়েমানুষ বলে কথা, যতোই রাজনৈতিক সচেতন হই, একপাল হায়েনার সামনে একটি হরিণ শাবকের কিছুই করার থাকে না। সবাই জানে, একাত্তরসহ তার আগে-পরে দেশের জন্যে বাবা কী করেছে। অথচ সবই আজ হাঙরের পেটে। কোথাও তার নাম-গন্ধটা পর্যন্ত পাওয়া যায় না।
‘সারভাইবল অব দ্য ফিটেস্ট। বেঁচে থাকতে পারাটাই যোগ্যতার পরমিাপ। মনীষী ডারউইনের এই তত্ত্ব ধরেই এগুতে হবে। কোনো তস্করের হাতে এই ঠিকানা ছেড়ে দেয়া যাবে না। বাঁচতে হবে অনন্তকাল। অনন্তকাল বাঁচতে হলে অভিনয় করতে হবে। আমরা অভিনয় করবো। দেবতারা সবাই যেখানে অভিনয় করে যুগ যুগ ধরে টিকে আছে, সেখানে বাদ যাবো কোন্ দুঃখে? আমরাও অভিনয় করবো। এতে পাছের লোক যা ইচ্ছে বলে বলুক। কান দেবো না। অভিনয় করবো। দেশের যতো স্থাপনা আছে সবকটাতে দেব-দেবীদের নাম লাগিয়ে দেবো। এতে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষা হবে। আবার সময় বদলে নতুন দেব-দেবীরা সামনে এসে দাঁড়ালে, সাবেক দেব-দেবীদের নাম মুছে দিয়ে নতুনদের নাম বসিয়ে দেবো।’ একদিন ক্লাব সভাপতি নজরুল আলম সাহেবের মুখ থেকে কথাগুলো শোনার পর মনে হলো,  উপস্থিত সদস্যরাও যেনো তাই চায়। এসবের কিছুই আমরা সরাসরি করবো না। কাঁটা তুলবো কাঁটা দিয়ে। আজকে যার প্রশংসা করবো, কালকে তার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়বো। এ-দোষও আমাদের ঘাড়ে পড়বে না। সুযোগ পেয়ে দেবতারাই একে অপরের দোষ শতমুখে বলে বেড়াবে। আমরা কেবল হাততালি দেবো। আনন্দ উল্লাস করবো। মিষ্টি বিতরণ করবো। সে-মিষ্টির টাকাও দেবতারাই দেবে। আমাদের কাজ শুধু তেলাপোকার মতো তেলতেলে আভিনয় করা। হাত কচলাতে কচলাতে বলবো—জি আজ্ঞে, জাঁহাপনা। আদতে আমরা কিছুই করবো না। কোনো সাহায্য করবো না দেবতাদের। সেদিন এক দেবতা ঘোষণা দিয়েছিলো; মহাশ্মশান থেকে স্বর্গে যাওয়ার জন্যে নরকের ওপর দিয়ে বিগ বাজেটে একটা ব্রিজ তৈরি করা হবে। ভক্তবৃন্দ যেনো যার যার এ্যাবিলিটি অনুযায়ী দান-খয়রাত করে। শুনে আমরা মনে মনে বলি—এক পয়সাও না। আমরা এক পয়সাও দিইনি। দেবতা নিজেই তার কেরামতি দিয়ে ব্রিজ তৈরি করছে। করুক। ওটা হলে আমাদেরই লাভ। আমরাই ওটার উপর দিয়ে আসা-যাওয়া করবো। যাদের হাত-পায়ে ভর করে জীবিকা খুঁজতে হয়, তাদের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ না হলে চলে না। কিন্তু দেবতাদের কোথাও যেতে ব্রিজের দরকার হয় না। তাদের তো রথই আছে। রথারোহীদের কাছে উত্তর-গোলার্ধ, দক্ষিণ-গোলার্ধ বলতে কোনো শব্দ নেই। তারা উড়ন্ত রথে বিশ্বব্রহ্মা-ে যেখানে খুশি নিমিষে চলে যেতে পারে। আর যদি কখনো সড়ক পথে নেমেও পড়ে, তাতেও আমাদের লাভ। ভেঙে পড়া পুরোনো রাস্তাগুলো দেখিয়ে বলবো, ‘দেখুন ভোলানাথ, কী চরম ভোগান্তিতে আছি। শুধু আপনার পূজারি বলেই আমাদের এই সিদ্দত। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বিরা আমাদেরকে দেখতেই পারে না।’ তখন উন্নয়নও হবে, পাশাপাশি দেবতায় দেবতায় মল্ল যুদ্ধও উপভোগ করা যাবে।
যে জিতবে তার নামেই হবে আমাদের বন্দনা। স্ক্রিপ্ট থাকবে আগেরটাই। আমরা শুধু কয়েকটা শব্দ বদলিয়ে নেবো। ‘জয় বাংলা’ ওঠে গিয়ে সংলাপে স্থান নেবে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। বাবা হয়ে যাবে আব্বা আর মা হবে আম্মা। সবুজ দা স্থলে লিখবো সবুজ ভাই। জনক-মহাজনক বলতে কোনো শব্দ স্ক্রিপ্টে স্থান পাবে না। সেখানে লেখা হবে নায়ক-মহানায়ক। আমরা সবকিছু সুচারুভাবে রপ্ত করে নেবো। কোথাও ভুল করবো না। অভিনয়ে ভুল করা যাবে না। এমনিতেই দেশে অভিনয়-বাণিজ্যের অবস্থা করুণ। সেখানে ভুল করলে বিএফডিসি’তে মানুষ তো দূরের কথা গরু-ছাগলও ঢুকতে দেবে না। ক্যান্টনমেন্ট এরিয়া ঘোষণা দিয়ে ওটাকে বানাবে বুট জাদুঘর। কোন ছায়াদেবতা কোন বুট পরে নরকের ওপর দিয়ে লাফিয়ে স্বর্গে প্রবেশ করেছিলো, কোন্ বুটের আঘাতে আমাদের ছালেহা-মালেকা-হরিদাসীর তলপেট ফেটে পদ্মা-যমুনার পানি লাল হয়ে গিয়েছিলো, কোন্ বুটের লাথি খেয়ে আব্বাস-কুদ্দুস-রঞ্জিতের মুখের সবকটা দাঁত মারবেলের দানার মতো পরে পিচ-ঢালা পথে গড়াগাড়ি খাচ্ছিলো; সবই সংরক্ষিত হবে ঐ-জাদুঘরে। আমাদের প্রজন্ম তখন পাঁচশো-এক হাজার টাকায় টিকেট কিনে পবিত্র বুটজুতো দেখতে সপরিবার লাইন ধরে জাদুঘরে ঢুকবে। আমাদের রক্তে তো আবার আবেগ বেশি, কেউ কেউ হয়তো বুটের রক্তছাপ দেখে আবেগে জিহ্বা দিয়ে চাটতে যাবে। তখন তাদের মরণ ব্যাধি হতে পারে। সুতরাং অভিনয়ে ভুল করা যাবে না। এখন অবশ্য পারত পক্ষে ভুল হয় না। সেদিন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে জসিমউদ্দীনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। দেখি আমাদের সম্মানিত বক্তারা চমৎকার অভিনয় করছে। ভুল হচ্ছে না কোথাও। তারা একবারও তাদের বক্তৃতায় জসীমউদ্দীনের নাম উচ্চারণ করেননি। যতোক্ষণ মঞ্চে ছিলেন ততোক্ষণই দশমুখে প্রধান অতিথি মন্ত্রী মহোদয়ের প্রশংসা করেছেন। আর আমরাও ঘন ঘন হাততালি দিয়ে তাকে সাপোর্ট করে গিয়েছি। শেষে মহান অতিথি খুশি হয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারে, সেজন্যে দশ রাস্তায় দশটি বাস নামানোর ঘোষণা দিলেন। ধন্য ধন্য করে রব উঠে গেলো সেমিনার জুড়ে। যাতায়াতের বিড়ম্বনা থেকে আমাদের সন্তানরা মুক্তি পাবে ভেবে খুশি হলাম আমরাও।
চিন্তা করলাম, এমন একটা অনুষ্ঠান তো আমরাও করতে পারি। বছরের শুরুতে ক্লাবের উন্নয়নের জন্য বেশকিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম, টাকার অভাবে একটিও বাস্তবায়ন করতে পারিনি। লোক-টোক ধরে যদি কোনো-মতে এই প্রধান অতিথিকে নেয়া যায়—তাহলে আর ঠেকায় কে? ‘সত্যেন সেন স্মারক বক্তৃতা’টা আবার শুরু করবো। প্রজন্মের সামনে সত্যেন সেনকে তুলে ধরতে হবে। সত্যেন সেন না পড়লে পৃথিবীর রাজনীতির নষ্টামির কোন চিহ্নই ওরা ধরতে পারবে না। তিনি যেভাবে উপন্যাসের ভেতর বিশ্বরাজনীতিকে পোস্ট-মর্টেম করে সিদ্ধান্ত টেনেছেন, এমন দৃষ্টান্ত এখন কল্পনাও করা যায় না। অথচ এ-নামটিই দিন দিন পাঠকের উচ্চারণের বাইরে চলে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্য তো এখানেই, অলেখকদের নিয়ে যতোটা মাতামাতি করি, সেখানে সত্যিকারের লেখকদের ততোটা চিনিই না। আবার এটাও ভাবি, হবেই বা কী করে? তাঁকে তুলে ধরার যাদের দায়িত্ব তারাই এখন পুঁজিবাদের দালাল। একদিকে মেহনতি মানুষের কথা বলে নিজেদের জিভ ছিঁড়ে ফেলছে, অন্যদিকে তারাই ব্যক্তিগত দুটো সুবিধার জন্যে পুঁজিবাদের দোর-গোড়ায় বসে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে অনুগত ভৃত্যের মতো অভিনয় করে। টিভিতে তাদের চেহারাটাও দেখার মতো। মনে হয়, ঊনিশ শতকের ইংরেজ পালিত হিন্দু জমিদার বুঝি। কথাও বলে আকাশে তাকিয়ে। আর ভাবটা এমন যে, কোথাকার কোন মালো লেখকের নাম উচ্চারণ করার সময় কোথায় তাদের? এজন্যেই আমাদের কোনো কাজে ওদেরকে ডাকি না। ওদের চাইতে আমাদের দেবতারা অনেক ভালো। বাসি ফুল দিয়েও যদি হাসিমুখে দুটো কথা বলি, তাতেই আমাদের দেবতারা গলে যায়। হৃদয়টা ছিঁড়ে হাতে তুলে দিতে চায়।
আমরা তখন মনে মনে হাসি।
যাক এসব। একটা অনুষ্ঠান করতে হবে। ‘সত্যেন সেন স্মারক বক্তৃতা’টাই আয়োজন করবো। এতে অবশ্য ব্যানারের সত্যেন সেন ব্যানারেই থেকে যাবে। যাক। তারপরও কিছু টাকা আয় হবে এবং ওটা দিয়ে সত্যেন সেন নামে একটা স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা যাবে। এটাও মন্দ হয় না।
এই ভেবে যখন পরস্পরের মধ্যে আলোচনা শুরু করছি, তখনই একদিন শুনি রাতের অন্ধকারে কে বা কারা ক্লাবের দরোজায় তালা লাগিয়ে দিয়েছে। ক্লাবে নাকি রাজনীতির চর্চা হয়। সরকার বিরোধী উল্টা-পাল্টা কথা হয়। ক্লাব হচ্ছে অবসর সময় কাটানোর স্থান। এখানে পত্রিকা থাকবে, লোকেরা পত্রিকা পড়বে। ইনডোর-আউটডোর খেলা-ধুলার সরঞ্জামাদি থাকবে, লোকেরা সেগুলো ব্যবহার করবে। কিন্তু রাজনীতির চর্চার জন্য ক্লাব নয়। রাজনীতির চর্চা করতে চাইলে রাজপথে যাও অথবা নিজেদের দলীয় অফিসে গিয়ে যা ইচ্ছে করো। এ-ধরনের কিছু কথা বাতাসের মুখ থেকে শোনার পর আমরা আর ক্লাবের দিকে পা বাড়াই না এবং আমাদের একবারও মনে পড়ে না যে, আমরাই ক্লাবটাকে প্রতিষ্ঠা করেছিলাম এবং আমাদের অনেকেই এ-ক্লাবের আজীবন সদস্য। ক্লাবটাকে প্রতিষ্ঠা করতে যেয়ে দিন-রাত পরিশ্রম করেছি। নির্ধারিত মাসিক চাঁদা উঠাতে গিয়ে কতো জায়গায় যে নাজেহাল হয়েছি, তা লিখে রাখলে পনেরো খ-ের বই হয়ে যেতো। এসব কোনো কিছুই আমাদের মনে পাড়ে না। মনে পড়ে কেবল ক্লাবে আড্ডা মারতে মারতে আমরা টিভিতে ডিসকভারি দেখতাম। দেখতাম গহীন জঙ্গলে বেকায়দায় পড়ে বেয়ার গ্রিল্স নামে ভদ্রলোক কীভাবে বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছু-কীট-প্রতঙ্গ কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে জীবন ধারণ করতো।
দৃশ্যগুলো এখন যার যার ঘরে দেখি। বাংলা চ্যানেলের কচকচানি বাদ দিয়ে শুধু ডিসকভারি দেখি। সেসব দৃশ্য দেখতে দেখতে এক সময় আমাদেরকে আবিষ্কার করি; কেউ যেনো আমাদেরকে প্যারাসুট জালে বন্দি করে অথবা সিরিয়ার উদ্বাস্তু শরণার্থীদের মতো নৌকোয় ভরে পৃথিবীর কোনো গহীন জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছে। পথহীন গহীন বনে আমরা ঘুরছি তো ঘুরছিই কিন্তু পথ মেলে না। শেষে কী আর করা। জীবন বাঁচাতে সাপ খুঁজি, বিচ্ছু খুঁজি। আমাদের চোখে কিছুই পড়ে না। তারপরও খোঁজা বন্ধ হতো না। খুঁজতে খুঁজতে এক সময় দেখি নিজেরাই নিজেদের পেটে ঢুকে গেছি।
(চলবে)

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট