মহাকালের কথা



মহাকালের কথা
সকাল রয়

জানি মহাকালরাত্রী পেরুলেই সোনার প্রভাত। বর্ষণে-গর্জনে-ঢেউয়ে আমাদের অপেক্ষা। বৃষ্টিদেবীর দমকল বাহিনীর মহড়া চলছে আর তান্ডব মঞ্চে আমাদের দশজোড়া ভেজাচোখ।
বাবা, বলছে- ‘থেমে যাবে ঝড় এক্ষুনি’। মা, বলছে- আরেকটু ধৈর্য্য ধর। আমি চোখ বুঝে অন্ধকারে উড়ে উড়ে ফিরে আসছি পথের পর পথ।  হাত জড়াজড়ি করে আমরা ভাইবোন কতকাল যে দাড়িয়ে ভিজে যাচ্ছি তা বলা যাচ্ছেনা।
বৃষ্টিকুমারীর মহড়ায় উড়ে গেছে আমাদের ঘরের চাল! শিলানৃত্যের তান্ডবে জড়িয়ে আমরা ভাইবোনসব একটি ছাতার তলে। দুটো ছাতা নেই আমাদের। বাবা তার দু-হাত জড়িয়ে, মা তার আঁচল ধরে ভিজে যাচ্ছে একমনে। সকাল আর আসেনা বৃষ্টি আর থামে না শুধু আমাদের পায়ে খিল ধরে যায়। আমাদের দশজোড়া চোখে রাত নামে জলের মতো ভেজা ভেজা রাত। রাত জলে ডুবে ডুবে দীর্ঘ হয়।
উঠোন ডুবে গেছে। গেছে ডুবে সন্ধ্যা-বেলী আর টাইম ফুলের গাছগুলো। ভেসে গেছে কাগুজে নৌকা, শোলার শালিক পাখির ছানা। ভাঙ্গা টেবিলের উপর রাখা বইয়ের স্তপ উল্টে গিয়ে ভাজে ভাজে ঢুকে আছে শিলা আর বৃষ্টি। ভূগোল বইটি ভিজে ঢোল হয়ে এখন আর বৃষ্টি-শিলার পার্থক্যের কথা বলছে না।
মাথা নত প্রহরীর মতো বাঁশের বেড়া গুলো বেঁকে-ভেঙ্গে দাড়িয়ে আছে, ক্যালেন্ডার তার পথ পেরিয়ে পৌছে গেছে বছরের শেষ মাসে। বিছানা-বালিশ ডুবে ডুবে ভেসে ভেসে ঘুরে ঘুরে ঘরময় ঘুরছে। বাড়ছে ঢেউ হেসে যাচ্ছে না দেখা অনেক কিছু।
জানি রাত পেরুলেই সকাল হবে কিন্তু সে আর হয় না, বৃষ্টি আর থামে না। আঁধারে জড়োসড়ো আমাদের দশজোড়া চোখ। বেড়ে যায় চিরচেনা তরুণী রাত। বেড়ে যায় পায়ের পাতায় খেলা করা উর্বশী বৃষ্টিজলের আলোড়ন।
বৃষ্টিকুমারীর বাড়ন্ত তান্ডবে মা তার হাতদুটো কপালে ঠেকিয়ে ঈশ্বরকে ডেকে যান। বাবার ভয়ানক বিশ্বাস ঈশ্বর এসে আমাদের ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষে করবেন। অপরদিকে  ঈশ্বর ফ্ল্যাশ লাইট জে¦লে দেখে দেখে হেসে নেয় খুব !



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট