আত্মকথন: বেদনা আমার জন্ম সহোদর



 আত্মকথন: বেদনা আমার জন্ম সহোদর
ইজাজ আহমেদ মিলন

ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র

বেদনা-ই জীবন । বেদনা তাঁর নিত্যসঙ্গী। জন্মের পর থেকেই বেদনার সাথে তাঁর বাস। বেদনা তাঁর সহোদর। হ্যাঁ, ইজাজ আহমেদ মিলন এর ‘আত্মকথন: বেদনা আমার জন্ম সহোদর’ এর কথাই বলছি। অকপটভাবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ৩৩৬ পাতায় লিখেছেন তাঁর বেদনার কথা। বইয়ের প্রতিটি পাতাই ভেঁজা ও স্যাঁতস্যাঁতে। প্রতিটি পাতায় বেদনা। যে পড়েছে শুনিনি সে না অম্বু ঝরিয়ে থাকতে পেরেছে। আমিও শেষ করলাম, কাঁদলাম ‘আত্মকথন: বেদনা আমার জন্ম সহোদর’। সত্যত অবাক হলাম তাঁর বলার ভঙ্গি দেখে। জন্ম থেকে শুরু করে ‘১৫ সাল পর্যন্ত অসমাপ্ত আকারে প্রকাশিত হয় তাঁর এ গ্রন্থটি। লোকে নিশ্চয়ই বলবে, ছেলেটা এমন কি হয়ে গেল, কি অর্জন করলো ? এই বয়সেই তাঁর আত্মজীবনী লিখতে হবে। তিনি সে জবাবটাও দিয়েছেন তাঁর প্রাক-কথনে। তাঁর চাওয়া খুব অল্পই ছিল। বেশি চাওয়া ছিলনা, ছনের ঘরে যখন বাস  করতো স্বপ্ন দেখতো চালটা যেন শ্রীঘ্রই টিনের হয় বৃষ্টির ফোঁটা যেন তীরবেগে উপর থেকে প্রবেশ করতে না পারে। সেই লোকটা আজ শ্রীপুর তথা গাজীপুরের নক্ষত্র, অহংকার। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা এলাকার আক্তাপাড়া গ্রামে নানাবাড়িতে। বেড়ে উঠা চকপাড়া ছয়শত পাড়ায় দাদা বাড়িতে। জন্মসময়ে মায়ের প্রসব বেদনা ছিল অতি তীব্রতর;যা সব নারীর ক্ষেত্রে-ই হয়। মশা তাড়ানোর জন্য কাঁঠাল মুচির ধোঁয়া ব্যবহার করতো তখনকার সময়ে। প্রসব যন্ত্রণায় মা ভুলে গেলেন ধোঁয়ায় কান্নার কথা!
নাম  তাঁর ইজাজ আহমেদ মিলন। নামটা নিয়েও বেশ কাহিনী আছে। প্রথমত নাম রাখেন বাহাউদ্দিন তাঁর নানা। বাহাউদ্দিন থেকে মিলন মিয়া-পরে মিলন হায়দার সবিশেষ বন্ধুর সাথে ভাবনায় নিজেই তাঁর
নাম রাখেন ইজাজ আহমেদ মিলন। পিতা ইদ্রিস আলীর ঔরসে মাতা জমিলা আক্তারের গর্ভে জন্ম। স্ত্রী নুরুন্নাহার ইজাজ, দুই ছেলে মিসাম, রাহি আর বাবা-মা কে নিয়ে তাঁর জীবন সংসার । হাতেখড়ি অ আ ক খ দিয়ে নয়; হয়েছিল আলিফ ,বা, তা, ছা দিয়ে। মসজিদের মুয়াজ্জিনও ছিল বেশ সময়, ধার্মিক কাজে লিপ্ত থেকে তাঁক লাগিয়ে দেয় এলাকাবাসীকে । সবাই বলতো,‘এতো ছোট ছেলে?’

জীবনে বহু সংগ্রাম করেছেন তিনি। সমুদ্রের অনেক জল সেঁচেছেন। ছেলেবেলাকার কথা মাওনা বাজারে বেগুনের ডোল ভরে দিতো; বিনিময়ে পেতো দশটা টাকা মাইনে, তা দিয়ে মায়ের জন্য পান-সুপারি কিনে আনতো। বাবার অসুখের সময় গামছা মুখে দিয়ে রিকশা চালানো, ঢাকা শহরে গিয়েও চাচাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন রিকশা চালানোর কাজে। বাসায় নিয়ে দু-এক কেজি চাল-ডাল। চাচার পুরনো কাপড়ে কাঁটিয়েছে জীবন। পঞ্চম শ্রেণী পাশের পর ভর্তি হন মাদ্রাসায়, ‘কেওয়া তমির উদ্দিন আলিম মাদ্রাসা’। অসাধারণ কৃতিত্ব পূর্ণ ছিল তাঁর শিক্ষাজীবন। অভাবের তাড়নায় আর লেখালেখির নেশায় পড়াশোনা হয়নি বেশিদূর। নিন্দুকের অপমান আর গালিতেও থমকে যায়নি। অনেকে শারীরিকভাবে আঘাতও করেছে। সাংবাদিকতা অষ্টম
কোনো এক জ্ঞানী লেখক বলেছেন,‘বাঙালি তার আত্মজীবনীতে ফেরেশতার মতো রূপ তুলে ধরে। ‘কিন্তু ইজাজের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম দেখলাম। নিজের ভালো খারাপ সকল দিকই তুলে ধরেছেন তাঁর আত্মজীবনী তে । বাংলাদেশ সহ ভারতেরও অনেক সাহিত্য ভাবনার ভাবুকেরা তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নষ্ট শরীর ভিজেনা রৌদ্রজ্জ্বলে’। এ গ্রন্থটির জন্য লাভ করেন ‘সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার-২০০৯’। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য সর্বোচ্চ পদক ‘বজলুর রহমান স্মৃতি পদক’ সহ বহু সম্মাননা লাভ করেন তাঁর এই তরুণ জীবনে। আপনারাও দেখুন, পড়–ন, ‘আত্মকথন: বেদনা আমার জন্ম সহোদর’।
শ্রেণীতে থাকাকালীন থেকেই দৈনিক গণমুখ থেকে। বর্তমানে তিনি দেনিক সমকালের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট