হেমন্তগাঁথা



হেমন্তগাঁথা
মুহাম্মদ তাফহীমুল ইসলাম

ছয় ঋতুর দেশ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। বছর ঘুরে শরতের পরই আগমন হয় হেমন্তের। হেমন্ত এক চমৎকার ঋতু। হেমন্তের সাথে অন্য কোন ঋতুর তুলনা হয়না। মাঠে-মাঠে যখন আমন ধান পাঁকতে শুরু করে মানুষের আর বুঝার বাকী থাকে না যে- হেমন্ত হাজির। মাঠের আমন ধান যখন পেঁকে সোনালী রঙ্গ ধারণ করে কৃষকের চোখে-মুখে ফোটে ওঠে হাসির প্রতীক। মনে বয়ে যায় খুশির বন্যা। দীর্ঘ কষ্টের ফসল যখন ঘরে আসে শুরু হয়ে যায় অপেক্ষাকৃত ব্যস্থতা। ছেলে-মেয়ে সবাই মিলে ধান মাড়ানোসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হয়ে যায় নিজ দায়িত্বে আনন্দের সাথে। রাত-দিন পরিশ্রম করে ব্যস্থতা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর খুশিতে গ্রহণ করে পারিবারিক বিভিন্ন কর্মসূচি। তার মধ্যে পিঠা বানানো অন্যতম। কৃষক বধু নিজ হাতে পিঠা বানিয়ে তুলে দেয় সন্তানদের মুখে। এরপরে সে পিঠা নিয়ে বেড়াতে যায় বাপের বাড়ি, মেয়ের শশুরবাড়িসহ নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে। ঈদের সময় মানুষ যেভাবে ছুটে যায় আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে ঠিক তেমনি কৃষক পরিবার খুশিতে উদ্বেলিত হয়ে ছুটে যায় একে অপরের বাড়ি। তাদের পরিবারে ঈদটা যেন হেমন্তকালেই আসে।

মসজিদের মুয়াজ্জিনের সুমধুর কন্ঠে যখন ফজরের আযানের শব্দ ধ্বনিত হয়। গ্রামের ঘুমন্ত মানবকূল জেগে ওঠে। কনকনে শীত উপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে অযু করে লুটিয়ে পড়ে সিজদায় প্রভুর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষনায়। নামাজ-কালাম শেষে খেজুর গাছে ঝুলানো রসের হাঁড়ি নামিয়ে আনে গ্রামের রস ব্যবসায়ী ছালামত আলী। যিনি এলাকায় রস আলী নামে পরিচিত। তিনি সব গাছের রস একতত্রিত করে যখন বিক্রির জন্য পাড়ায় পাড়ায় ছুটে গিয়ে ‘রস লাগিবুনা রস?’ (রস লাগবে রস?) বলে ডাক দেন। রস প্রেমিকরা ছুটে আসে কিনতে। মূহুর্তেই খালি হয়ে যায় রস আলীর রসের হাঁড়ি। হেমন্ত কালে রস দিয়ে পিঠা খেতে কার না ভালো লাগে!

সকাল বেলায় মাঠের সবুজ ঘাসে দেখা মিলে বিন্দু বিন্দু শিশির কণার। যার ছোঁয়া পেতে শিশুরা খালি পাঁয়ে হাটতে আনন্দবোধ করে। সাজ সকালে কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে পুরো গ্রাম। মাঠে গেলে কুয়াশায় আবৃত থাকায় সবুজের দেখা মিলেনা। পুকুরের এক পাড় থেকে দেখা যায়না আরেক পাড়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশা দূর হয় সূর্যের কিরণের কাছে পরাজিত হয়ে। রাতের বেলায় কনকনে শীত। চোখ বন্ধ করলেই চলে আসে ঘুম। আরামে ঘুমাতে কষ্ট হয়না মোটেও। এক ঘুমেই আলো ফোটে ফজর হয়। তোষক মুড়ে দিয়ে একটু একটু শীতকে অনুভব করতে ভালো লাগে সবার। যদিওবা বৃদ্ধ বয়সীদের একটু কষ্ট হয়। গাছে গাছে দেখা যায় নতুন পাতা। মাঝে মাঝে আকাশ পানে উড়ে যেতে দেখা যায় ঐক্যবদ্ধ অতিথি পাখির দলকে। যা শুধুমাত্র গ্রামেই দেখা যায়। শহরে উঁচু উঁচু দালানের ভিড়ে এসব কিছুর দেখা মিলে না। গ্রামে পুকুর, পাহাড়, সবুজ মাঠ, খাল-বিল, নদী কতো কিছুর সাথে পরিচিত হওয়া যায়। তাই শহরের বাসিন্দারা হেমন্দের সাথে তেমন পরিচিত না। হেমন্তের কথা বললে তারা চিনে না। তারা গুড়ের পানি দিয়ে পিঠা খেয়ে খেজুর রসের ঢেঁকুর তোলে। কিন্তু গ্রামের অধিবাসীকে হেমন্তের কথা বললে তারা সহজে চিনতে পারে- হেমন্ত কি।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট