পদাবলি




দুটি রূগ্ন পা ও পাদুকার কথা
শাহীন মাহমুদ
(বীর নারী রমা চৌধুরীকে নিবেদিত)

প্রিয় মৃত্তিকা-এক জোড়া পায়ের খবর শুধু তুমি জানো
তোমার বুকের ধূলোয় যে ধূসর হতো রোজ,যে বই হাতে ছুটে যেতো
উত্তর আবার দক্ষিণে ।তাকে তুমি স্বজন বলে ডেকেছ এত দিন ।
পাদুকা তুমিও তো জানো রমাদিকে ।
মনে পড়ে তোমার-কোন অভিমানে তুমি পর হলে?  
যুদ্ধ৭১ তুমিও কি কিছু বলতে চাও?
প্রিয় কর্ণফুলী তুমিও তো তার মনের খবর জানতে। বলতো কোন
সে নদী ? নির্লোভ নির্মোহ এক নদী এক নারী ।
সবাই শোকে কুঁকড়ে গেলে-মৃত্যু যেখানে আলিঙ্গনের মাছি
সেখানে তুমি সেলফিবাজ শোকের পূজারি !
এবার তবে না হয় উল্টো থেকে লিখ রমানামা,তাঁর কিশোরী কাল
দুরন্ত যৌবনে হায়েনাদের তাড়া খাওয়া উপোসকালের দিন গুলির কথা ।




এখনও মানুষ খুঁজি
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

এখন আর চোখে মানুষ পড়েনা
যেদিকে তাকাই শুধুই কংকাল
মানুষ কি মরে কংকাল হয়েছে
নাকি পোড়া মনের কংকাল সবখানে ?
এখন সময়টা অনেক দীর্ঘ মনে হয়
মনে হয় মানুষ বাসা বেঁধেছে স্মশানে কিংবা গোরস্থানে
কসম করে বলছি এ মন জানে
বিশ্বাস হারিয়ে মানুষ এখন কেমন ভাঙা আয়নার কাঁচের মতো
হারামখোরদের মতো মানুষের মাংস চিবিয়ে খায় মিষ্টি শ্রাবনে
মেতে উঠে পড়ন্ত বিকেলের দুর্বিসহ দগ্ধ মাটির ঝাপসা উঠোনে  ।
একটু অবাক চোখ, শরীরের নিচ থেকে খসে পরে মাংসপিন্ড
মানুষের অনুসন্ধান করি, আগাছা পরগাছা সবখানে ঘুরে মরি
মুখটা তারার মতো আকাশ থেকে মাটিতে গড়াগড়ি  খায়
বুকটা কান্নার ভূমিকম্পে কম্পিত হয়
কুনঠে আছেন বাহে চিৎকার করি
আর মধ্যরাস্তার মিছিলের দাঁড়িয়ে খোলা চোখ মোর মানুষের মতো বুজি
আর গোয়েন্দাদের মতো  দুরন্ত জল তরঙ্গের মতো মানুষ খুঁজি
তখনও আমি বোরো অসহায় 
কান পেতে শুনি অদৃশ্য আওয়াজ কোথাও কেউ নেই
জন্মানোর আগেই বিক্রি হয়েছে মানুষ রঙ্গমঞ্চের পান্থশালায়
তবু বসে থাকে মন,
যদি ঘরে ফিরে আবার মানুষ বেলায় কিংবা অবেলায়
এক মহাকাল থেকে আরেক মহাকালের
কিংবদন্তি লেখা কাব্যের কবিতায়
কিংবা নির্বাসিত নারীর দুর্ভেদ্য যাতনার
বিড়ম্বিত প্রতীক্ষায় ।


আনন্দপুর ০২
রুদ্র সাহাদাৎ

মিলেমিশে থাকা যৌথ পরিবার
এক একটি বেহেস্তী ঘর।

দাদা-দাদু, নানা-নানী,চাচা-চাচী,
ভাইবোন দেখতেই চমৎকার।

আকাশ সুন্দর, মৃদু বাতাস সুন্দর, সবুজ প্রকৃতি সুন্দর
একত্রে মিলেমিলে থাকা প্রতিটি মানুষ সুন্দর, প্রতিটি মন সুন্দর ।

সহস্র সহস্র কথা সুন্দর, কাজ সুন্দর
সহস্র সহস্র স্বপ্ন সুন্দর, অগোছালো প্রিয়জনও সুন্দর ।



দরদের প্রদীপ
বিটুল দেব

মানবতার অভাবে জ¦রে ভোগে সমাজ
থার্মোমিটার নিয়ে আসে না বিবেকের ডাক্তার।
বাড়ায় না হাত
করে না চিন্তা;
কেউ জ¦ালায় না দরদের প্রদীপ।

অতীত ইতিহাসের ঐতিহ্য বিলিনের পথে
মুছে যাচ্ছে
খুলে যাচ্ছে বন্ধনের বাঁধন।
তরুণ পাতার নেই ব্যথা,
শোকের মহোৎসবে নগণ্য সমাজ!
আনন্দ আয়োজনে লক্ষ চোখ
চেয়ে আছে নিমন্ত্রণের আগাম বার্তা।                               


হাঁটছি সেই কবে থেকে জানা নেই
সবুজ আহমেদ কক্স

ভালোবাসা খুঁজতে খুঁজতে এখন ভালোবাসাহীন
ভালোবাসা আজ মোটেই ভালো নেই
পুনর্বার যদি শিমুল তুলার মতো উড়িয়ে দাও মন
যদি দরোজায় পড়ে আকস্মিক টোকা
সেই থেকে আমিও বাতাসে মেলে দেবো নন্দিত ডানা
কেননা ভালোবাসাহীন মানুষ কেমনে বাঁচে, জানা নেই

প্রাণোচ্ছ্বল শিমুল তুলাদৃশ্য মনে পড়ছে
মনে পড়ছে হরিণীর চোখের কাজলে আঁকা
আমার মুগ্ধ অবয়ব
অথচ, হরিণীর কাজল চোখের ভেতরেই
সিংহিনীর তাড়া খাওয়া আমি এক দিকভ্রান্ত প্রেমিক
তবুও
       দিকখুঁজি  পথখুঁজি
                              ভালোবাসা খুঁজি
হাঁটছি মেঠোপথ, রাজপথ, সহস্র অলগলি
হাঁটছি সেই কবে থেকে জানা নেই...


নিষ্ফলতা
আকিব শিকদার

নিষ্ফলতা কাকে যে বলে শুনুন, নবজাতকের
হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি মুষ্টিবদ্ধ শূন্য হাত
মৃতের হাতও শূন্য, মুষ্টিবদ্ধ। মাঝে কিছুকাল
এ হাতটাকেই পূর্ণ করতে মানুষ কুপোকাত।


সেই তো আবার এলে
রেবেকা ইসলাম

সেই তো আবার এলে
আবার হলো দোলনচাঁপা সকাল
আবার উঠলো দুপুরে সূর্যমুখী রোদ
উজালা নীল বিকেলে মেঘেদের ওড়াউড়ি
গোধুলির আহ্বানে পাখিদের ঘরে ফেরা
জোনাক জ্বলা রাতে মদিরা নেশায় ঢুলুনি,
আর মধ্যরাতের ধোঁয়া ধোঁয়া নির্জনতায়
বেয়াড়া যৌবনের বাধভাঙ্গা দুরন্তপনা,
মাঝখানের দিনগুলো অযথাই নিঃশেষ হলো
পতিত হলো কোন এক অতল গহবরে
সহস্র রাত বিনষ্ট হলো চূর্ণ কাঁচের মত
অভিমানে জ্বলে পুড়ে গেল মুহূর্তগুলো
ভস্ম হয়ে হারিয়ে গেল অসংখ্য ক্ষণ
মনের ঘরে উষ্ণতা ঢেলে,
সেই তো আবার এলে।



আমি শুদ্ধতা চাই, আমি শুভ্রতা চাই
নাঈম হোসেন লেনিল

হয়তো আমি তোমার বোধের চোখে অনর্থক
তোমার রূচিবিররুদ্ধ
কিংবা তোমার অননুরাগ বিরাগের কেউ
তবুও আমি আমার চোখের ক্রন্দনে ক্রন্দনে
তোমাকে একটি সদ্য ফোটা ফুলের মতো করে ফোটাই।

ধূমায়িত কফির ধোয়ার মতোন উড়ে উড়ে তুমি উধাও হয়ো না,
কাছে এসো, রোদ্দুরের রৌদ্রোজ্জ্বল ছড়িয়ে দাও
আমার ভিতরে আলয়ে জমে থাকা বিষাক্ততা মুছে দাও
আমি বিষাক্ততায় আহত হয়েছি, তিক্ত হতে চাই না,
আমি শুদ্ধতা চাই, আমি শুভ্রতা চাই।





শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট