ফাগুনগাছ অথবা আগুনফুল



ফাগুনগাছ অথবা আগুনফুল
সাদিক আল আমিন

আজকের দিনে রোদ ঝলমলে হয়ে উঠেছে পুরো জগত। স্নিগ্ধ বাতাসের মৃদু দোলায় শিমুলের ফুল কি মোক্তারের বহু বছর ধরে না ধোয়া চুলের বিন্যাস নড়ে উঠছে খুব কমই। অপরাধহীন মাজার শরীফের সামনের অবস্থানরত বেলগাছটা লাল সুতোর শত শত বাঁধনে নিজের আড়ষ্টভাব ফুটিয়ে তুলছে। মোক্তারের আজ শুক্রবার হওয়ায় খুব খুশির দিন। প্রতিনিয়ত যেমন কয়েকঘণ্টার নিরলস ফ্যাকাসে দৃষ্টি নিয়ে ধর্মভীরুদের দিকে তাকিয়ে থাকার পর মাত্র দুয়েক টাকার মতো জমা হয় তার পুরনো পিতলের প্লেটে, আজ শুক্রবার হওয়ায় তাদের তুলনামূলক বেশি আগমনের ফলে মোক্তারের প্লেটে খুচরো টাকার পুঁজি বাড়তে থাকে। এরি ফাঁকে একটা বিড়ি কিনে এনে খাবে কিনা চিন্তা করতেই প্রায় বড়লোক বলা চলে এমন এক মধ্যবয়সী মহিলা তার ভ্যানিটি থেকে একশ টাকার একটা চকচকে নোট বের করে দেয় পিতলের প্লেটে। মোক্তার ধ্যানাভাবে চোখ বুজে থাকলেও টাকার গন্ধে চোখ কিঞ্চিৎ অসাড় হলে সে এই দৃশ্য দেখে। দরগাশরীফের বড় পীরদের অনুমতিক্রমে এখানে নিয়তই বসা মোক্তারের মনে প্রশ্ন এবং চিন্তার ধোঁয়া নেশার মতো বাড়তে থাকে। খুব বেশি হলেও চল্লিশের বেশি বয়স তার হবেনা ঠাওর করে মোক্তার ভালোভাবে তার পিঁচুটি ভরা চোখ ধীরে ধীরে খুলে তাকাতে চেষ্টা করে। তবে স্বাভাবিক মানুষের মতো দেখার প্রথমেই কোনো অভিপ্রায়ে লিপ্ত হয়না মোক্তার। যেন বহু বছর অন্ধকারে থেকে হঠাৎ আলোতে এলে যেমন অপ্রস্তুত হয়ে যায় পুরো চেতনা, তেমনি দীপ্তমান ঔজ্জ্বল্যে নিজের নির্লিপ্ত চোখদুটো মেলে সে একই আবেগ অনুভব করে। ভদ্রমহিলার পুরো শরীর শাড়িতে ঢাকা। বাম চোখের নিচের কাটা দাগ নজর কাড়ে মোক্তারের। যেন কেউ ইচ্ছে করেই ছুড়ি চালিয়ে এমন দাগ করেছে, ধারণা করে সে। তবে সেই দাগকেও ছাপিয়ে ফুটে ওঠা বর্ণনাতীত সুন্দর চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের অতিশয় পরিচিত কৈশোর আর যৌবনের কথা মনে পড়ে যায় মোক্তারের। হঠাৎ যেন ঝটকা খায় নিজেই- না, ওসব কথা সে ভাবতে চায়না আর। অনিচ্ছা স্বত্বেও ভাবার চেষ্টা করতেই বহু বছরের ব্যবহারহীন মগজে স্মৃতি হাতরানোর যন্ত্রণা চেপে বসে। একবার চিনচিন করে উঠেই সব চকচকে আয়নার মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। সেই আয়নাই আবার ভাঙতে উদ্ধত হয় নিজের ওপর হওয়া প্রচন্ড আক্ষেপে।

খুব বেশি মেধার অধিকারী না হলেও পড়াশোনা শেষে করে খাওয়ার মতো একটা যোগ্যতা রাখার যোগ্য সে ছিলো ঠিকই, তবে এখন যেমন মাগনা কিছু টাকা আর দরগা থেকে রোজ দুবেলা খাওয়া পায়, এটাকেও মন্দ মনে হয়না তার। ভার্সিটির গন্ডি পর্যন্ত উঠতে পেরেছিল বলে সেই সম্বন্ধীয় সব আবেগ-অনুভূতি তার জানা। আজও দরগায় কোনো ছাত্র মানুষকে দেখলে তাদের মুফতে দোয়া করে দিয়ে এক ধরণের প্রশান্তি’ই অনুভব করে সে। সেকেন্ড ইয়ারে উঠে মা-মরা তরুণটির একমাত্র অবলম্বন রিক্সাচালক বাবাও যখন মায়ের পাশের কবরটিতে নিজের জায়গা করে নিলেন, তখন মোক্তারের টনক নড়লো। পরিজন বলতে কেউ কেউ থাকলেও একমাসের বেশি কেউ আর সাহায্য করতে চাইলো না। অথচ এমনটা হওয়াই যে স্বাভাবিক তা তখন নিরীহ অনুভূতিতে উপলুব্ধ হয়নি। বন্ধু-বান্ধবরা একথা জানলে তারা মনের বিপরীতে একান্তই কর্তব্য সহানুভূতি দেখালে মোক্তার কিছুটা আশা ফিরে পেলো। কিন্তু হঠাৎই নিষ্প্রভ বাতির মতো তা কখন যে মিলিয়ে গেলো সে টের’ই পেলোনা। এক বান্ধবী অবশ্য তাকে সাহায্য করতে চাইলেও ভীষণ রহস্যময় নারীর মনের ব্যাপারে উদাসীন মোক্তার নিজের হিম্মতকে শূন্য আবিষ্কার করলো।

ভীষণ বিষণœতায় কাটা আরো ছটা মাসে সিগারেটের নেশা পেয়ে বসলেও সেই বস্তু কতোটা বিষণœতা কমাতে পেরেছে তা আজকের দমে যাওয়া শুকনো চেহারার দিকে তাকালে টের পাওয়া যায়। অবশ্য উপায়ান্তর না দেখে বাবার পেশাটাকে ধরতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত আর কুলিয়ে উঠতে পারলোনা। পড়াশোনাটা ছেড়ে দিতে হলো তখনি। এমনকি একবেলা খাওয়া পর্যন্ত দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো। না পারলো খেতে, না পারলো পড়তে। প্রায় জীবন্মৃত অবস্থায় একদিন যখন মানতে এলো মাজারে, বাইরে বসা রঙিন পোশাকধারী সাধু যেন পলকেই তার দুর্দশা চোখের অভিজ্ঞতায় বুঝে নিলো। এরকম আত্মমর্যাদাহীন ভিক্ষার কাজ মোক্তারের দ্বারা সম্ভব নয়, একথা আকারে ইঙ্গিতে সাধুবাবাকে বোঝাতে চাইলে তিনি আর কিছু বললেন না। উপায়ান্তর না দেখে এটাকেই পেশা করে হাত-পা বেঁধে রাখা বেলগাছটাকে নিত্যদিনের সঙ্গী করে এখানে বসবাস শুরু করে দিলো। বসবাস বলা ঠিক ভুল হবে। কারণ বহুদিন তার গোসল হয়না। দাড়ি-গোঁফ সেই ভার্সিটি লাইফেই শেষ কেটেছিল। সবাই তাকে ‘পাগল’ আখ্যা দিলেও আদতে যে সে পাগল নয় তা কেবলমাত্র তার ঘুণেধরা মস্তিষ্ক’ই জানে। এখানে মাজার শরীফের সামনে অলস হয়ে বসে থেকে দুটো পয়সা কামাই করে যদি বিড়ির টাকাটা অন্তত জুটে, কোনো আপত্তি নেই তার। শুধু কেউ চিনে ফেলে এই ভয়ে দিন গোজরান হয় মোক্তারের। আত্মমর্যাদা বহু উঁচুতে নিয়ে গিয়ে ধপ করে ফেলে দিয়েছে তাকে। কবিতা লেখার সুনাম ছিলো ফাস্ট ইয়ারে। পত্রিকায় ছাপতো দেখে বন্ধুমহলে কিছুটা ব্যতিক্রম এবং অন্যদের থেকে একটু হলেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সাবিত করতে পেরেছিল নিজেকে। এখন যেন সবকিছু ঘন ধোঁয়ার মতো মনে হতে থাকে তার। ধোঁয়া সরে গেলেই সবকিছু আবার শূন্য।

মাঝবয়সী যেই মেয়েটা একশ টাকার একটা চকচকে নোট তার থালার দিকে বাড়িয়ে দিলো এই আশায় যে তাকে একটু দোয়া করে দেবে, সে আর কেউনা ফারজানা ছাড়া। পনেরো বছর আগে বাবা মারা যাবার পর যেই বান্ধবীটি নিঃস্বার্থভাবে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করতে চেয়েছিল সেই ফারজানা। এখন তার শরীরে জননীর ছাপ স্পষ্ট এবং সেটা প্রমাণ করতেই পরিপাটি হয়ে সাজা দশ বছরের একটা ছেলে ভীতু ভঙ্গিতে এসে মায়ের পেছনে দাঁড়ায়। বড় বড় দাড়ি-গোঁফ-চুল দেখে শিশুমনে ভয়ের সঞ্চার হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় তবে মোক্তারের দিকে তাকিয়ে আর কোনো পাগলের থেকে তার কোনো ব্যতিক্রম আছে কিনা ছেলেটি তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে খুঁজতে থাকে। নিশ্চয়ই হয়তো পরদিন স্কুলে গিয়ে মোক্তার সম্পর্কে অল্প-বিস্তর বর্ণনা তার সহপাঠীদের শোনাবে! ময়লা হাতে চোখের পিঁচুটি পরিষ্কার করে মোক্তার পিতলের থালায় রাখা চকচকে নোটের দিকে তাকিয়ে রইলো।

ধর্মকর্ম একদম পছন্দ করেনা এমন উদ্দমপরায়ণ এক ব্যক্তি, নিশ্চিত বোঝা যায় সেটা ফারজানার স্বামী, হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে ফারজানার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলে লোকটা যে ভীষণ অত্যাচারী আর তার কঠিন নির্যাতনে ফারাজানার দিন গোজরান হয় এবং চোখের একটু নিচের যে কাটা দাগ, তা সেই নির্যাতনেরই প্রকাশ- স্পষ্ট করে দেয় পুরো ধারণা। নির্বোধ মগজে জোর দিয়ে মোক্তার এটা ঠাওর করতে পারে যে তাকে বিয়ে করলে হয়তো ফারজানা এমন দুঃখী হতোনা। তবে তাকে কি গ্রহণ করতো ফারাজানা? কিংবা তার সর্বদা সেটেল্ড একটা ছেলে খোঁজা চিন্তিত পরিবার? কখনোই না। তবে এখন তার কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখে বোঝা যায় খেয়ে না খেয়ে থাকলেও অন্তত সুখে থাকতো ফারজানা। দশ বছর বয়সী ছেলেটা বাবার কান্ডে কি করবে বুঝতে না পেরে মাথা নীচু করে বাইরের দিকে চলে যেতে লাগলো। চকচকে একশ টাকা যে তারই স্ত্রীর দেওয়া বোঝার পর লোকটা সেটা তুলে নিয়ে আরেকটা চড় বসিয়ে দিলো স্ত্রীর গালে। দ্বিতীয় চড়টার কারণ জানলেও প্রথম চড়টার কারণ জানতে পারলোনা ফারজানা। প্রতিবাদও করলোনা এতোটুকু। ভার্সিটিতে দেখে আসা নিশ্চুপ ভদ্র সেই মেয়েটির অবকাঠামোগত পরিবর্তন হলেও অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন একেবারেই হয়নি; মোক্তার সচক্ষে তার প্রমাণ পেলো। ফারজানার স্বামী তার হাত ধরে নিয়ে গেলে সুবোধ বালিকার মতো সেও তাতে সায় দিয়ে চলে গেলো। এমনকি কিছুক্ষণ আগে মোক্তারের কাছে খুব কম কথা বলা শান্ত ঠোঁট দ্বারা ব্যক্ত প্রার্থনাগুলো পরিপূর্ণ হবে কিনা তা জানারও আগ্রহ প্রকাশ করলোনা একবার অন্তত পেছনে ঘুরে। পরিপূর্ণ হবে কিনা মোক্তারও জানেনা। সে চেয়েছে তার স্বামীর মৃত্যু। কারো মৃত্যু কামনা করে মোক্তার কোনোদিন দোয়া করেনি। তবে ফারজানার জন্য দুহাত তুলে খোদার কাছে দোয়া করলো। এতে খোদা তার ওপর নারাজ নিশ্চয়ই হবে, জানে মোক্তার।

দুপুরবেলা একথালি ডালভাত আর রাতে গমের বাসি রুটিতে দিন কাবার মোক্তারের পেটও বেশিকিছুর চাহিদা করেনা। তবে মাঝে মধ্যে ভালো কিছু হলে আপত্তিও করেনা। কিন্তু কখনো কখনো ক্ষুধার চেয়েও নিজের লজ্জা আর আত্মমর্যাদা নিজেকে বেঁধে ফেলে শক্ত বেষ্টনীর মতো। মাজারে তারি সাথে ভার্সিটিতে পড়া বন্ধু যখন শিরনী দিতে এসে তার দিকে তাকিয়ে নিজের তীক্ষœ মস্তিষ্কে জোর দেয় চেনা চেনা লাগা গোঁফ-দাড়িঅলা লোকটা তার সহপাঠী মোক্তার কিনা, তখন নিজেকে ঢাকতে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে মোক্তার। খাওয়া এবং ভিক্ষা করার একই পিতলের থাকিতে মুখ নামিয়ে আনে নিজের। আত্মসম্মানবোধ দ্বীপশিখার মতো জ্বলতে থাকে তখন। বোকা বন্ধু তার তীক্ষœ মস্তিষ্কে জোর খাটিয়েও যখন পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনা, তখন এক খাবলা খিচুড়ি মোক্তারের থালায় ঢেলে রোমন্থনের হাল ছেড়ে দেয়। সেই খাদ্য নিজের কাছে বিষাক্ত অনুদান মনে হতে থাকে মোক্তারের। পুরনো সহপাঠী চলে গেলে এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে যায়। মাথাভাঙ্গা ডালপাতাহীন বেলগাছটায় হেলান দিয়ে নিজের পুরো শরীর এলিয়ে দেয়। বিড়ির কড়া ধোঁয়া তার ফুসফুস হয়ে মগজে পৌঁছায়। লাল-হলুদ রঙের বিভিন্ন সুতো বেলগাছটার সাথে তাকেও যেন বেঁধে ফেলতে চায়! আর নয় এই জীবন; সিদ্ধান্ত নেয় মোক্তার। অপরের মৃত্যুকামনা করার জন্য অথবা পরিচিতদের চোখের নিশানা থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কিংবা সবার করুণার প্রার্থী হয়ে রোজ দুবেলা খাওয়ার জন্য তার এ জীবন নয়। এর চাইতে বরং মরে যাওয়া ভালো। সর্বহারা হওয়ার পর যখন কোনো পেশাতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলোনা, যখন দরগায় বসে অপরের করুণার ওপর নির্ভরশীল ভিক্ষাকেই বেছে নিলো একমাত্র পেশা হিসেবে, তখন নিজের কাছে খুব প্রিয় মনে হলেও আজ মাত্রাধিক বিষাক্ত মনে হচ্ছে তার। আর যাই করুক, দরকার হয় মরে যাক, এখানে আর থাকবেনা। কঠিন সিদ্ধান্তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মোক্তার।

মোক্তার দ্রুপ পদক্ষেপে দরগা থেকে বের হয়ে যায়। তারপর বের হয়ে যায় মহল্লা থেকে। তারপর পুরো গ্রাম থেকে। তারপর শহর থেকে। তারপর দেশ থেকে। তারপর বিশ্ব থেকে। ক্রমাগত হাঁটতেই থাকে মোক্তার। দিনের পর দিন যায়, রাতের পর রাত। মোক্তারের হাঁটা আর থামেনা। যেন পুরো বিশ্বজগত হেঁটে শেষ করে ফেলবে; শেষ করে ফেলবে পুরো ধরণী। পেটের ভেতর ক্ষুধার প্রজনন বাড়তে থাকলে পেটে বাড়ি মারে মোক্তার। ফারজানার দশ বছরের অবুঝ ছেলের মতো রাস্তাঘাটের ছেলেরাও তাদের পরিচিত পাগলটার সাথে মোক্তারকে মেলাতে থাকে। কিছু কিছু লোকও তার সহপাঠীর মতো মোক্তারের চেহারায় তাদের হারিয়ে যাওয়া আপন কাউকে খুঁজে পায় কিনা ভেবে খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে দেখে। মোক্তার বিড়ির ধোঁয়ায় পুরো পৃথিবী কুয়াশা করে তোলে। তারপর সেই কুয়াশার ভেতরে হারিয়ে নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন আঁকে। আবোলতাবোল কি যে আঁকে কেউ বুঝতে পারেনা সে ছাড়া। ছেড়ে আসা দরগায় একলা পড়ে যাওয়া নাড়িয়া বেলগাছটা সুতোর শক্ত বাঁধনে নিজেকে আরো একা এবং বন্ধী ভাবতে শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে ঘর্ষিত পায়ের চামড়া ছিলে গেলে রক্ত বের হয়ে যায়। পায়ের মাংস বেরিয়ে এলে ধুলোর সাথে তা লুটোপুটি খায়। তিন-চারটে কুকুর সেটাকে সুস্বাদু মনে করে খাওয়ার ধান্দায় মোক্তারের পিছু পিছু ছুটতে থাকে। খিদার চোটে নাড়িভুড়ি বের হয়ে গেলে ধোঁয়াশা চোখে জন্মের সময় হারানো কোনোদিন না দেখা মায়ের মুখটা দেখতে পায় যেন। বাবার মরে কঙ্কাল হয়ে যাওয়া মুন্ডুটাতে পুরনো ত্যালত্যালা গামছাটা বাঁধা আছে কিনা তা খুঁজতে থাকে মোক্তার। এক সময় একটা ইটের সাথে হোঁচট খেয়ে পাথরে থুবড়ে পড়ে মাথা ফাটালে সব বয়সের মানুষ তাকে দেখতে এসে ভিড় জমায়। যেন সে কোনো সার্কাসের জোকার! কুকুরগুলো তার গলগলিয়ে বের হওয়া রক্ত চেটেচেটে খায়। অর্ধেক বের হয়ে যাওয়া মগজ নিয়ে একটা কুকুর আবার কাউকে ভাগ দেবে না ভেবে সেটা মুখে নিয়ে দৌঁড় দেয়। মোক্তারের পুরো শরীর যেন সেঁটিয়ে যাচ্ছে। কেউ যেন শক্ত বাঁধনে বাঁধছে তার শরীর! তার দোয়ার পর হয়তো ফারজানার স্বামী মারা যাবে। নতুন স্বামীর সাথে সে হয়তো সংসার করবে সুখের। তার সংসার জীবনটা যে ভালো চলবে আর শিরনী দেয়া সেই সহপাঠী আজ বাসায় গিয়ে তার কথা ভেবে ভেবে যে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বে, একথা জানে মোক্তার। শুধু জানেনা নিজের জীবনের করুণ সারমর্মটুকু। ফুলে ফুলে ভরে আসে তখন সকল গাছপালা। সূর্য ফেরার কথা ভেবে বিদায় নিতে চাইলে পাখির কাকলী কুহুদল ঘরে ফেরে। সন্ধ্যা নেমে আসে পুরো বসুন্ধরায়। কাছ থেকে ভেসে আসা আজানের তীব্র ধ্বনি ক্রমেই স্তিমিত হয়ে আসে মোক্তারের কানে।
শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
নয়নপুর, সদর, দিনাজপুর

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট