অক্ষরমালা : সাদিক আল আমিন




অক্ষরমালা
সাদিক আল আমিন


নিঃসঙ্গতার সঙ্গে কিছুক্ষণ

কিছুটা ভ্রান্ত হলেও হতে পারে উৎকণ্ঠা
নিমিষেই হাওয়া হয়ে যেতে পারেন বলে
গোচরের বাইরেও হাতরালাম
একদিন কিভাবে করে বুঝতে পেরে যেন
তিনি খোঁপা খুলে পিঠ ঢাকলেন
ইচ্ছের তখনো বহু বাকি হাত-পা গজানোয়
বোনদের সাথে কথা বলে দেখলাম,
নিতান্ত ভদ্রমহিলাও নন; তবে
সন্ধ্যের দিকে একা বসে আছি ভেবে
ঐদিন তিনিও কেমন ভুল-ভাল হাঁটছিলেন; আর
এদিকে দমকা হাওয়ায় আমার আধ-খোলা শার্ট
লোমশ বুক উন্মুক্ত করে দিলো অগত্যাই

প্রহেলিকা তুমি অন্য কারো

প্রত্যাশার বিকৃতি হয়না কখনো, একথা জানে নিখিল
শিমুল হাতে দৈনন্দিন বাসস্টপ, অপেক্ষা অবসর
কবিতা লিখতে পারলে চমৎকার হতো, কাব্যিক পরিবেশ
আবৃত্তি ওর পছন্দের কিনা! জানা যেতো
শাপলাচত্তরে উদ্দেশ্যহীন চক্কর খায় বেসুরো ঝড়
শ্রেফ ইমপ্রেস করার জন্য; মঞ্চনাটকেই মূল দাখিল
মেয়েটা হয়তো বুঝবেনা, বুঝলে কি আসে যায়!
সিরাজপর্ব যবনিকায়, এখন কি আর প্রণয় মানায়!

জীবনবোধের পদাবলি

অতঃপর যে বৃদ্ধ ভবিষ্যৎবাণী করেছিল ঝড়ের
এবং ‘সমূলে সবকিছু ধ্বংস হবে এ ধরায়’
মনোভাব নিয়ে যে সাফাই গেয়েছিলো চিরমুক্তির
তার কুঁচকানো গলা দিয়ে নামেনা বাস্তবতা
সর্বস্ব হজম করতে পারলেই তবে মুক্তি
তাই প্রভুর মতো অভিনয় করে; যদি আবার
ভবিষ্যৎবাণী করতে পারে অন্যকিছুর, যেমন-
‘পরবর্তী প্রজন্ম হবে অতিব সুজলা’
আর ‘এবারের মতো এ বৃদ্ধ পরিত্রাণ পাবে’
ধরণের কথকতা; তবে হয়তো ক্ষমাপ্রার্থনা
সময় নিয়ে সফল হতে পারে
বৃদ্ধ তার হাড়গিলে গলা নামিয়ে পেতে পারে
অমর-মুক্তি; দ্বিতীয় বাণী অনুসারে...
তবে যদি ঝড় ওঠে প্রকৃতির ধারা মেনে
হা-হুতাশ অনেকেই মাথা চাপড়িয়ে বলবে,
‘ইতিহাস যেনো বারবার ফিরে আসে!’
আরো বলবে, ‘বাণীপ্রার্থনার দরকার কি ছিলো!
খামোখা শুধু বুড়োটা মরলো
আমাদের তবে পথ দেখাবে কে!’
তখন ঝড় নিয়ে আসে অমর-বার্তা
তিলে তিলে শিখোয় কষ্টসাধ্য বেড়ে ওঠা
লোকেরা কাজ করে খায় সিন্ধুর দ্বীপে
অহেতুক কখনো মাথা চাপড়িয়ে বলে,
‘ও বুড়ো, তুমি শুধু তুমিই ছিলে’

আবাসন

তাই ঐচ্ছিকতাকেও খুব ঘরোয়া হতে দেখি
এমনকি দেখছি এখনও... যদিও
দৃশ্যপট থেকে খসে পড়েছে দর্শন-ইচ্ছা
আর প্রেরিত প্রেমিকার লোভনীয় আঙুল ধরে
হেঁটে চলেছে এক সুদর্শন অথচ বোকা পুরুষ
আবছায়া ঘটনায়, অনিশ্চিত গন্তব্যে
গৃহাগত হতে দেখি বনবাসীদের...
বনবাসিনী, কি নাম ছিলো তার!
একথান ময়লা কাপড় পুরো শরীরে জড়াতো
নাম হয়তো ‘ডুমুর’, স্বাদহীন সেও ছিল ফলের মতো
ঘরে ফিরেছে একদিন...
দুরন্ত দিন, গোছানো রাত, বিপন্ন সময়
ঘরোয়া হয়... ফিরে আসে নাভিমূলে
আমি মহাজাগতিক, ফিরতে পারিনা মনের ভুলে

জন্মবেদনা

জন্মের বেদনা কেমন লাগে জানতে চাই
ইদানীং সবাইকে খুব মৃত্যুচেতা হতে দেখি
কালীন সময়ের থরে থরে তাদের যাতনাবৃন্দ সাজানো
সেই নিয়ে চলছে সন্ধ্যাপরবর্তী আলোচনাসভা
কার মৃত্যু কেমন হতে পারে...
কার দুঃখ রথ পেরিয়ে যেতে পারবে স্বর্গে! এইসব
আমি এসবের মোটেই তোয়াক্কা করছি না
শুধু জানতে চাইছি জন্ম নিলে কেমন লাগে
জন্ম দিতে নয়, জন্ম নিতে কেমন লাগে!

আকুলতা

এক প্রহর বিরহ...
অথচ মনে হয় যেন শত প্রহর তোমাকে
বলা হয়না মনের গোপন অভিসার
যেন বহুযুগ ধরে জাহাজের খালাশি সেজে
ছুটে গেছি, ছিটকে পড়েছি অজানায়
তীর্থবাসী হয়েছি, ফিরে গেছি উল্টোপথে
ব্যথাতুর গতভূষণা আমার
গহীন বনে অসহায় তড়পায়
এক প্রহরে কত কিছুই না দেখেছি!
দেখিনি শুধু তোমাকে


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট