একসিডেন্ট









একসিডেন্ট
আহমদ মেহেদী

১. বিথী গাজীপুরে থাকে। এনজিওতে জব করে। আমি থাকি বাঞ্চারামপুরের বটতলিতে। একটি হাইস্কুলে জব করছি। হাতের কাজটা শেষ করে মাফলারটা মাথায় পেঁচিয়ে কালামের দোকানে গেলাম। খুব শীত পড়েছে, চারদিক কুয়াশাচ্ছন্ন। তার দোকানে অনেক ভিড়। আজ ভিতরে বসে চা খেতে পারলাম না। বাহিরে দাড়িয়ে চায়ে চুমুক দিতে যাব এমন সময় দেখি  বিথীর ফোন ।
কেমন আছ?
ভাল। তুমি কেমন আছ?
ভাল। আমিতো কাল কুমিল্লা আসছি।
কেন?
অফিসের কাজে। তুমি কি কালকে ছুটি নিতে পারবে ?
তুমি একা নাকি , আর কে যাবে?
না,আমি একাই যাব। আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
কখন রওয়ানা দেবে ?
এইতো সন্ধ্যায়।
ওকে, গাড়িতে উঠার সময় আমাকে কল দিও কেমন।
ওকে জান। বাই।
২. আমি ভাবছি অন্য কথা। একদিন বিথীকে বলেছিলাম বিয়ের পর তোমার চাকরি করা লাগবেনা। বিথী বলেছিল- এতো কষ্ট করে ভার্সিটি শেষ করলাম আর তুমি এসব কি বলছ! তারপরও সে চাকরি করবে বলে কখনো ভাবেনি। এখন করে শুধু আমার জন্যে। আমাদের প্রথম বেবি ডেলিভারির এক সপ্তাহ পরেই মারা যায়। বেবিটিকে বাঁচাতে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। বেবির চিকিৎসায় আমার অনেক ঋন করতে হয়েছে । ঋন থেকে আমাকে মুক্তি দিতেই বিথীর এমন পথচলা। সে আমার বুকে মাথা রেখে সব দুঃখ ভুলে গেছে। উল্টো আমাকে সাহস জুগাচ্ছে এগিয়ে যেতে।
 রাতে কল দিলাম  ।
জান ,এখন কোথায় আছ?
আরে জান, শহর থেকেই এখনো গাড়ি বের হয়নি। শহর জুড়ে সম্মেলন তাই সব রাস্তায় জ্যাম।
তুমি চিন্তা করোনাতো। দেখবে সকালে রোদ উঠার আগেই কুমিল্লায় হাজির। রাতের খাবার খেয়েছ?
না এখনো খাইনি। আজ শিউলি খালা আসেনি। তুমি তো জানো আমি হোটেলে খেতে পারিনা। তুমি আগে আস তো। আমি কালামের দোকানের চা-রুটি খেয়ে নেব। হাহাহা ।
ফাজিল বুয়াটা এমন করে কেন?
আরে সমস্যা থাকতে পারেনা মানুষের !
ঠিক আছে বুঝলাম, তোমাদের তো আর এখানে কোন আত্বীয়-স্বজন নেই যে তারা তোমাকে একবেলা খাওয়াবে। সে কাউকে বলে গেলেই তো পারতো ।
তুমি অযথাই টেনশন করছ। রাখলাম।
ইউটিউবে রকি হ্যান্ডসাম দেখতে দেখতে কখন জানি ঘুমিয়ে পড়েছি টেরই পাইনি। বিথীর ফোন পেয়ে ঘুম ভাঙলো । ভোর চারটা তিন মিনিট।
হ্যাঁ,এখন কোথায় আছো ?
এইতো ভবেরচর ।
আমিতো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
সমস্যা নাই। তুমি ঘুমাও। আমিই কল দিয়ে তোমাকে সজাগ করে দিবো। দশটার আগেই কুমিল্লা চলে এসো।
ওকে।







৩. এমনই কথা হয়েছিলো তার সাথে। সিএনজিটা গৌরিপুরের কাছাকাছি। হঠাৎ ফেইসবুকে দেখি ঢাক-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঈগল কোচ-বাস মুখোমুখি। ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। বিথীকে কল দিতেই দেখি সুইচড অফ। আমার চারদিক কেমন ঝাপসা মনে হলো। রাস্তার ট্রাফিক পুলিশকে জিজ্ঞেস করতেই বলল- চান্দিনা একসিডেন্ট করেছে। আমার পৃথিবী যেন ধুলছে। আমাকে মাঝবয়সী কেউ যেন ধরে একটি রাস্তার পাশের একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে মাথায় পানি ঢালছে। আমার চিৎকার দেখে অনেক মানুষ জমে গেছে। ট্রাফিক পুলিশকে হাতজোড় করলাম ভাই আমাকে একটু চান্দিনা নিয়ে চলেন। তারা আমার মনের অবস্থাটা বুঝলেন। আমি পুলিশের গাড়িতে, যারা জানে না তারা হয়তো ভাববে  আসামী তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ভাবুক এই পৃথিবীর মানুষত কত কিছুই ভাবে। যে জায়গাটায় একসিডেন্ট হয়েছে চারদিকে শুধু কাঁচ-ভাঙা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। আমি আমার বিথীকে খুজতে লাগলাম। এখানে পেলাম না। সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখি বিথী বিছানায় পড়ে আছে। তার টুকটুকে গালে বেন্ডেজ বাধা। পিঠে আর ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে । এখনো  জ্ঞান ফিরেনি।
বিথী সুস্থ্য হবার পরেই জানতে পারি ঐদিন তার অফিসের কোন কাজে সে কুমিল্লা আসেনি, এসেছিল আমাদের ভালবাসা-বাসির উৎযাপন করতে । এইদিনে আমাদের প্রথম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনে দেখা হয়েছিল তাই আমাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে ঠিক করে রেখেছিল। আমাকে নিয়ে কলেজের ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার খেতে চেয়েছিল।
শীতের এই সময়টায় কুয়াশাচ্ছন্ন মহাসড়কে ড্রাইভারের একটু সচেতনতার অভাবে কতো মানুষই রোজ সারপ্রাইজড হচ্ছে আমার মতো ! তার হিসাব কজনইবা  রাখে । ব্যস্ত এই পৃথিবীতে।
নোয়াগাঁও, দেবিদ্বার, কুমিল্লা




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট