শীতের পদাবলি : ০৩









অদ্ভুত শীত
তমসুর হোসেন

ভীতিকর অদ্ভুত রূপ নিয়ে বাংলার বুকে শীত আসে
সব চলমানতার শক্তিসন্ধিতে বিষময় জড়তা ঢেলে
আঁধারের আড়ালে হাসে দানব সদৃশ
খাড়া দুপুরে সূর্যটা হিমের সাগরে তলিয়ে যায়
কাঁথার ভেতর ধুকপুক করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের হৃৎপি-
মিশকালো কুয়াশা হাতড়িয়ে গন্তব্যে যেতে বিলম্ব করে রাতের গাড়ি
লঞ্চঘাট মহাসড়কে যাত্রীর দূর্দশা মারাত্মক বেড়ে যায়।

বড় বড় হেডলাইনে পত্রিকার পাতায় বিস্তর আশংকার খবর ছাপা হয়
মহাকাশে নাকি কী সব গোলযোগ!
জলবায়ুর বিপর্যয়ে পৃথিবী দ্রুত সরে যাচ্ছে
মারণযজ্ঞের গোলকধাঁধাঁয়।
উচ্চরক্তচাপ, এম.আই আক্রান্তদের হার্টএ্যাটাকের ঝুঁকি যায় বেড়ে
দুঃখজনকভাবে ঘন হয় মাইগ্রেণের তীব্র ইপিসোড
এ্যাজমা, সিওপিডি, আথ্রাইটিসের  যন্ত্রণায়  নিথর হয়ে যায়
হাজারো মানুষ।

হিমের জ্যাকেট পড়ে নগর বন্দরে
হেঁটে যায় সগৌরবে বেপরোয়া শীতের দানব
ফসলের খেতে বিছিয়ে যায় ছত্রাকের বিপুল মড়ক
সবকিছু স্তব্ধ করে মন্দার লিকার ঢেলে দেয় বাণিজ্য বেসাতে
ধূসর মৃত্তিকার জীর্ণ আবাসে মরণপূরী থেকে ভেসে আসে
নিরানন্দ মৃত্যুগন্ধ শোকের সংবাদ।


বসন্তবন্দনা
জোবায়ের সরকার

শীতের রুক্ষতা শেষে
বসন্তে কচি নরম পাতার সবুজ আলো যেন—
নগ্ন মহীরূহদের নৃত্যাৎসবে,
আমায় হরিৎ মদ পরিবেশন করে।
ঘেসো ঘ্রানে মোহগ্রস্ত হয়ে,
গেলাসে গেলাসে সেই মদ পান করি।
মাতাল আমি
পৃথিবীর সকল প্রেমের পটভূমি ভুলে,
অপরাহ্নে ঘুঘুর ডাকে ঘুমিয়ে যাই।



শীতকাব্য
মিসির হাছনাইন  

১.
আসছে শীতে
তোমাকে চুমু খাবো, প্রিয়তমা
আমি অপবিত্র।

২.
কবি, এই কবিতায়
চেয়ে দেখো-- লোকটা চুমু খাচ্ছে...!
দেখো, দেখো নারী’র শরীর ঢেউ খেলে,
পুরুষের পৌরুষ জোয়ারে।

একটা ফুলের পরাগায়ন হয়
কিছু ফল খাওয়া যায় না বলে!
আমরা যারা সেবন করি ভেষজ উদ্ভিদ
আপনাদের কাছে তা শীতকালীন ধুতরা।

ধুতরা ফুলটা ঘরে তুলবো
দোয়া রাখবেন, ঝরে যেন না যায়!


৩.
শীত আসলে
লাল চুড়ি আর আলতার কথা মনে পড়ে।

৪.
আঘ্রান মাস। গ্রামে শীত ঢুকেছে। মা সন্ধ্যার নামাজ শেষে, হাদীস পড়ে। বাবা ক্ষেতের পাকা ধান নিয়া সালিশ করে জবাদের উঠানে।

হ্যারিকেনে আলোয় আমি পড়ি-
“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে”।
মা আমার দিক তাকায় হাসে। আমার শীত করে, মা আমারে তাঁর পাখনার নিচে লুকায় রাখে। আমার শীত করে না।

৫.
এসব শীতে মনে পড়ে কনকলতার কথা; ঘরের কোণে খেঁকশিয়ালের ডাক; টিনের চালের টুপ টাপ শিশিরবিন্দু; সাপের নৃত্য; ডানা ঝাপটানো পাখির পালক; উঠানের খড়কুটোয় কুকুরের ওম; মাঝ রাতের জেলেদের গীত রচনা করেন নাগরিক কবি। বহু দূরের আলেয়া নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন গুটিশুটি।

মাঝরাতে কনকলতা বেয়ে বেয়ে উঠে আসে ঘরে। এসব শীতে কনকলতা বধূ সাজে, আর আমার ঘুম ভাঙে।








শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট