ধারাবাহিক উপন্যাস : অনিঃশেষ অন্ধকার : পর্ব ০৭








অনিঃশেষ অন্ধকার
আবুল কালাম আজাদ

[গত সংখ্যার পর]
১২.
স্বাভাবিকভাবেই সে ভাল কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারল না। সে ভর্তি হল এমন একটা কলেজে যেখানে প্রায় সবাই তার মতোই রেজাল্ট নিয়ে এসেছে। সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। সে মূলতঃ ভাল সঙ্গি পেল না।
তারপরও সে প্রথম থেকেই মনোযোগ দিয়েই লেখাপড়া শুরু করল। কিন্তু সব বিষয়েই তার ভীত খুব দূর্বল হয়ে গেছে। বিশেষ করে ইংরেজি গ্রামার আর বাংলা ব্যাকরণ পড়তে গেলে সে চোখে অন্ধকার দেখে। অন্যান্য বই পড়তে গেলেও মাথা ঝিমঝিম করে। এস.এস.সি তে শুধু বোর্ডের বইটাই পড়তে হতো। এখানে একই বই অনেক লেখকের। এস.এস.সি’র পুরো বইয়ের সমান এখানে একটা টপিক। তার বোঝার ক্ষমতা যেন নষ্ট হয়ে গেছে। সব কিছুই না বুঝে মুখস্ত করতে চায়। কিছুক্ষণ পড়ার পরই মাথা ধরে উঠে। আর দীর্ঘদিন অনাভ্যাসের ফলে বেশিক্ষণ বইয়ের সামনে বসে থাকতে পারে না। কেমন বিরক্তি জাগে মনে। সে পড়া ছেড়ে উঠে যায়।
বিরক্তি দূর করতে সে নিলয়কে ফোন করে। নিলয় ফোন রিসিভ করেই গেয়ে উঠে-সেই তো আবার কাছে এলে/এতদিন দূরে থেকে বলো না কি সুখ তুমি পেলে।
গানের সুরটা সে বেশ ভালভাবেই আয়ত্বে নিয়েছে। গান শেষ হলেই কথা। তারপর তারা হারিয়ে যায় কথার সাগরে।
একদিন কলেজ ছুটির পর সে গেট দিয়ে বের হয়ে দেখে পলাশ গাড়ি নিয়ে বসে আছে। সে না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিল। পলাশ ডাকল। সে বিরক্ত হল খুব। ঝাঁঝাল কন্ঠে বলল, আপনি এখানে এসেছেন যে?
রাগ করছো কেন?
আমি তো আপনাকে বলেছি যে, আমার সামনে আর কখনো আসবেন না।
কেন?
কেন তা বোঝেন না? কত বার বলবো এক কথা? আপনার সাথে সম্পর্ক করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
তুমি না করে দিয়েছো, আমি তা মেনে নিয়েছি। আমি আর ও ব্যাপারে তোমার সাথে কখনোই কথা বলবো না।
তাহলে আপনি আবার আমার কাছে এসেছেন কেন ?
আগের মতোই বন্ধু হয়ে থাকতে তো কোনো দোষ নেই। না কি আছে বলো?
বন্ধুত্বে আমার আপত্তি নেই। তবে প্রেম-বিয়ের ব্যাপারে কোনো কথা বললে আমি আপনার সঙ্গে নেই।
বলবো না-বলবো না-বলবো না। আমি আর ও সব ব্যাপারে তোমার সাথে কোনো কথা বলবো না। আই অ্যাম জাস্ট ইওর ফ্রেন্ড। ইউ আর অলসো জাস্ট মাই ফ্রেন্ড। চলো, দু’জনে এক সাথে চাইনিজ খাবো। কত দিন তোমার সাথে খাই না!
আবার পলাশের সাথে বেড়ানো, শপিং, চাইনিজ, ফাস্ট ফুড, সবই চলতে লাগলো আগের মতোই। পলাশ তার বন্ধু। পাশাপাশি নিলয়ের প্রতি তার দূর্বলতা ফিরে এল অনেকটা। তার কেবলই মনে হতে লাগলো, তূর্যের সাথে সম্পর্কে জড়াবার পর সে নিলয়ের সাথে অবিচার করেছে। ওরকম খারাপ ব্যবহার করাটা তার মোটেও ঠিক হয়নি। মনের দিক থেকে তূর্যের চেয়ে নিলয় অনেক ভাল। নিলয়কে সে ভালোবাসে। তবে তার কেবলই মনে হয়, জীবনে জড়াবার মতো ভাল সে নিলয়কে বাসে না। কিন্তু জীবনে জড়ানোটা তো অনেক পরের ব্যাপার। সেটা নিয়ে এখন মাথা ঘামিয়ে লাভ কী?
নিজের অজান্তেই সে আগের কক্ষপথে চলে যেতে থাকলো। তার মনে হতে লাগলো-ধ্যাৎ! এসব ছাড়া জীবনের কোনো মূল্য আছে? বাবার চোখে তাকিয়ে সে বিশ্বাস ভঙ্গ না করার যে প্রমিজ করেছিল তা বেমালুম ভুলে গেল।
নিলয়ও মাঝে মাঝে আসে। নিলয় যে ক’দিন থাকে সে ক’দিন সে পলাশের সাথে যোগাযোগ করে না। পলাশ যোগাযোগ করলে একথা-সেকথা বলে কাটিয়ে দেয়। তখন নিলয়ের সাথেই থাকে। নিলয়ের পলাশের মত ব্যবসা, বাড়ি-গাড়ি নেই, তবে খরচ করার মতো প্রয়োজনীয় টাকা তার পকেটে থাকে। আর তার খরচের মনটাও পলাশের মতোই দরাজ।
বাবা-মা যেন এস.এস.সি রেজাল্টের ঘূর্ণিঝড়ের পাক কাটিয়ে উঠেছেন। তারা আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন স্ব স্ব কাজে। তারা মেয়ের কাছ থেকে যে প্রমিজ নিয়েছিলেন সেটাই তাদের ভরসা। রবীন্দ্রনাথের সেই কথাটা তাদের কারোরই মনে নেই-মানুষ পণ করে পণ ভেঙে হাফ ছেড়ে বাঁচার জন্য।







১৩.
আবার একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন। আবার নিজেকে প্রশ্ন-রিসিভ করবো কি করবো না? আবার নিজেরে ভেতরেই উত্তর-ফোন রিসিভ করলে কি আমাকে খেয়ে ফেলবে? উল্টাপাল্টা কিছু বললে কেটে দেব।
একটা ছেলে কন্ঠ-কেমন আছেন? খুব মিষ্টি। অনেকটা তূর্য’র কন্ঠের মতোই। তূর্য’র কন্ঠ তার কানে লেগে আছে।
এই প্রথম কোনো অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করে তাকে ‘আপনি’ সম্বোধন করল। এর আগে সবাই তাকে ‘তুমি’ সম্বোধন করেছে। সে ভাল করে বোঝার চেষ্টা করল তূর্য কি না। না, তূর্যের কন্ঠ আরও একটু ভরাট। সে বলল, কে বলছেন?
আপনার একজন শুভাকাঙ্খি।
শুভাকাঙ্খি!
হ্যাঁ শুভাকাঙ্খি।
আপনি আমাকে চেনেন কেমন করে?
না চিনলে কি আর ফোন করেছি?
কেমন করে চেনেন সেটাই জানতে চাচ্ছি।
আপনার প্রশংসা এত শুনেছি যে, শেষ পর্যন্ত আপনার সাথে কথা না বলে থাকতে পারলাম না।
প্রশংসা! আমার?
সে মুহূর্তকাল চিন্তা করে দেখল, প্রশংসা পাওয়ার মতো কি আছে তার। তেমন কোনো গুণ আছে বলে সে মনে করে না। স্টুডেন্ট লাইফে সবচেয়ে প্রশংসনীয় বিষয় হল ভাল ছাত্রত্ব। সেটা তো তার একেবারেই নেই। এছাড়া ছবি আঁকা, সংগীত, নৃত্য, অভিনয়, আবৃত্তি, বিতর্ক, লেখালেখি এসব কোনোটায়ই তার নূন্যতম যোগ্যতা নেই। তাহলে প্রশংসা কিসের? শারীরিক সৌন্দর্যের? ছেলেদের কাছ থেকে এই প্রশংসার বাইরে সে কিছুই শোনেনি।
সে বলল, কী প্রশংসা শুনেছেন আমার?
আপনি খুব সুন্দর।
এই কথাটা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত।
যার রূপ আছে তার রূপের প্রশংসা তো মানুষ করবেই। এতে ক্লান্তির কি আছে?
আর কিছু বলবেন?
আপনার হাসিটা আরও সুন্দর। খুব সহজ কথায় আপনি হাসতে পারেন। আর আপনার কন্ঠ তো নিজ কানেই শুনছি। খুবই মোহনীয় কন্ঠ।
এগুলো সব পুরনো কথা।
আপনি সহজেই সবার সাথে মিশতে পারেন। সহজে সবাইকে বন্ধু করে নিতে পারেন।
তবু একটু নতুন ঠেকছে।
আপনার মনটা খুব উদার। খুব ফ্র্যাঙ্ক আপনি।
ফ্র্যাঙ্ক মানে কি?
এই শব্দটা সে নিজেও অন্যের ক্ষেত্রে উচ্চারণ করেছে, কিন্তু সে এর মানে জানে না। মানেটা যে প্রশংসাসূচক তা সে বুঝতে পেরেছে। অপরিচিত একজনকে আচানক ইংরেজি শব্দের মানে জানতে চেয়ে সে লজ্জা পেল। ওপার থেকে বলল, হা-হা-হা। উদার আর ফ্যাঙ্ক প্রায় একই কথা।
আচ্ছা, আমার সম্পর্কে এসব কথা আপনাকে কে বলেছে?
যে আপনাকে খুব ভাল করে চেনে সে বলেছে।
তার নামটা জানতে চাচ্ছি।
এক সময় অবশ্যই তার পরিচয় আপনাকে দেব।
তার মানে আপনি আমাকে আরও ফোন করবেন?
অবশ্যই, আপাতত চব্বিশ ঘন্টায় একবার। তারপর আরও বেশি।
আমি আপনার ফোন রিসিভ করলে তো।
আপনি আমার ফোন রিসিভ না করে পারবেন না।
আচ্ছা দেখা যাবে।
আচ্ছা দেখা যাবে।
সে নানা রকম অনুমান করতে লাগলো। ফোনটা কে করতে পারে? তার আরও মামাতো, চাচাতো ভাই আছে। তাদের কেউ? কিন্তু তারা তো কেউ তাকে ‘আপনি’ করে সম্বোধন করে না। অনেকটা তুই-তোকারি সম্পর্ক। নাকি তাদের কেউ মজা করছে? তা হবার সম্ভাবনা কম। তাদের কারও কন্ঠ এত সুন্দর না। এত সুন্দর বাংলায় তারা কেউ কথা বলে না। নিলয়ের মতো তাদের সবার কথায়ই একটু আঞ্চলিক টান আছে।
এরকম ভাবনার মুহূর্তেই নিলয়ের ফোন এসে গেল। সে সব ভুলে ব্যস্ত হয়ে গেল নিলয়ের সাথে কথা, হাসি-তামাশায়।
পরের রাতে আবারও সেই নাম্বার থেকে ফোন। আবারও রিসিভ করবো কি করবো না এরকম সাত-পাঁচ ভাবনা। আবারও নিজেই উত্তর খোঁজা-রিসিভ করলে ক্ষতি কী? খারাপ কিছু তো বলেনি। কত মার্জিত কথা-বার্তা।
সে ফোন রিসিভ করে বলল, হ্যালো।
দেখলেন তো চব্বিশ ঘন্টা পার হবার আগেই আমি ফোন করলাম।
হ্যাঁ দেখলাম।
আপনি ফোন রিসিভ করবেন না বলেছিলেন, কিন্তু ঠিকই রিসিভ করে ফেললেন।
হ্যাঁ করলাম। এখন বলুন, কেন আপনি আমাকে ফোন করছেন?
আজ আবার নতুন করে আপনার কিছু প্রশংসা শুনলাম।
নতুন করে....... ?
হ্যাঁ, আপনি পোশাকের ব্যাপারে খুব চুজি। খুব আধুনিক ও মানানসই পোশাক পড়েন।
এটা বিশেষ প্রশংসনীয় দিক না।
কি যে বলেন! পোশাক সুন্দর রুচির পরিচয় বহন করে।
আর কিছু?
আপনি খুব বেশি সাজ-গোছ করেন না। ক্যাজুয়ালি আপনাকে বেশ মানায়। কথাটা ঠিক না?
জানি না, কিন্তু এসব কথা আপনাকে কে শোনাচ্ছে আমি তা জানতে চাচ্ছি।
সে আপনাকে খুব ভাল করেই চেনে।
দয়া করে তার নামটা বলুন।
সে আপনার টিচার।
টিচার!
সে তার টিচারদের কথা ভাবলো। না, বর্তমানে তার যে সব টিচার আছে তারা কেউ-ই তার ব্যাপারে কারও কাছে এরকম প্রশংসা করবেন না। সে ব্যাচে পড়ে কলেজের একজন টিচারের কাছে। তিনি বাংলা ব্যাকরণ এবং আনুসাঙ্গিক আরও কিছু বিষয় দেখান। আরেক টিচারের কাছে পড়ে আইসিটি বিষয়টা। এটা সব গ্রুপের জন্য বাধ্যতামূলক করে তাকে বেশ ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে।   সূত্র-টুত্র খুব কঠিন লাগে। আর প্রোগ্রামিং-এর ভাষা সে কিছুই বোঝে না। তারা সবাই বেশ বয়স্ক মানুষ। কোনো ছাত্রীর সম্পর্কে অল্প বয়স্ক কারও কাছে এরকম গল্প তারা করবেন না। আর বাসায় আসেন ইংরেজি টিচার। তিনি সরকারি চাকরি করেন। চাকরির অবসরে ছাত্র-ছাত্রী পড়ান। তারপর তার আছে লেখালেখি, আঁকাআঁকি, আবৃত্তি ইত্যাদি অনেক কাজ। তিনি রোমান্টিক মানুষ হলেও ছাত্রী প্রসংগে এসব প্রশংসা করবেন না। তা ছাড়া তার লেখাপড়া, এবং এ্যাকটিভিটিস নিয়ে তিনি বিশেষ সন্তুষ্টও নন। কয়েকবার পড়ানো বাদ দেবেন বলেও ভেবেছিলেন।
সে বলল, বর্তমানে যারা আমার টিচার তারা কেউ-ই অন্যের কাছে আমার সম্পর্কে এমন প্রশংসা করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি না।
সে আপনার বর্তমান টিচার নয়, অতীত টিচার।
তার নামটা কী?
তূর্য। তূর্য রহমান।
কী বলছেন!
আপনি যে কোচিং-এ পড়তেন সেই কোচিং-এ সে টিচার ছিল। আপনাদের ইংরেজি পড়াতেন।
ছিল। তার সাথে আপনার কী সম্পর্ক ?
সে আমার খুব ভাল বন্ধু। আমরা একই সাথে পড়ি, একই হলে থাকি, একই বিছানায় ঘুমাই। কয়েক দিন ধরে অবশ্য এক বিছানায় ঘুমাচ্ছি না।
কেন, ঝগড়া হয়েছে?
না না, আমাদের মধ্যে কখনোই ঝগড়া হয়নি, হবে না। তার একটা বদ অভ্যাসের জন্য.....।
কী বদ অভ্যাস ?
থাক....।
থাকবে কেন বলুন। টিচার আমার সম্পর্কে এত প্রশংসা করেছে, তার একটা বদ অভ্যাস শুনতে পারি না?
সে রাতে শরীরে পা তুলে দেয়। দশ কেজি ওজনের একটা পা শরীরে উপর নিয়ে ঘুমানো যায়? আমি এখন ফ্লোরে ঘুমাই।
আচ্ছা রাখি তাহলে।
সে ফোন কেটে দিল। সে নিজের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হল। এই নাম্বার থেকে ফোন এলে আর সে রিসিভ করবে কি না। তার রিসিভ করা উচিত কি না। ভাবতে ভাবতে তার মনে হয়-উচিত না হবার কোনো কারণ নেই। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত সে কী বলে। কোথাকার জল কোথায় গিয়ে পড়ে তা একটু দেখা দরকার না? নিশ্চয় তূর্য তার মাধ্যমে নতুন করে এগোতে চাচ্ছে। তার আরও কিছু অপমান বাকি আছে। সেটা না হয় পাইয়ে দেয়া যাবে। এরকম ভাবতে ভাবতে ফোনটার প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে গেল।
হ্যাঁ, চব্বিশ ঘন্টায় একবার সে ফোন আসতে থাকল। আর তার সাথে কথাও চলতে থাকল নানা বিষয়ে বেশ একটু সময় নিয়ে। কথা বলতে বলতে যে ফোন করে তার সম্পর্কে জানাও হল অনেকটা। তার নাম সুমন। তার গ্রামের বাড়ি যশোর। তারা তিন বোন দুই ভাই। সে সবার ছোট। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। ভাইয়েরা চাকরি-বাকরি করছে। সে লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করে। প্রাইভেট টিউশনি বা কোচিং সেন্টারে পড়ানো নয়। সে একটা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে প্রুফ রিডার হিসাবে কাজ করে। ৬০০০ টাকা বেতন পায়।
তবে তূর্যের সাথে যে তার স্বল্পকালীন প্রেম সম্পর্ক ছিল এ ব্যাপারে সুমন কখনোই কিছু বলেনি। সুমন সে ব্যাপারে কিছু জানে না, নাকি ইচ্ছে করেই ব্যাপারটা চেপে রেখেছে তা জানার জন্য সে নানা ভাবে টাচ করেছে। যেমন বলেছে, আচ্ছা, আপনি তো বলছেন তূর্য স্যার আপনার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড, আপনি কি তার সব কিছুই জানেন ?
মনে হয় জানি। ও প্যান্টের নিচে কখন কী রঙের আন্ডারওয়ার পড়ে তাও আমি জানি।
হি-হি-হি। কি বিশ্রী কথা বলেন! বলেন তো তার প্রেম-টেম সম্পর্কে কিছু।
তার প্রেম হল স্বপ্না। আমাদের এক ইয়ার নিচে পড়ে। ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রী। মাঝে-মধ্যে আমাদেরকেও এটা-ওটা বোঝায়। সাথে আছে এক্সট্রা মেরিট। ছবি আঁকে, অবৃত্তি করে, বিতর্ক করে। স্বপ্না নামে তূর্য দিওয়ানা। সে নাকি একটা বই লিখবে, বইটার নাম দেবে দিওয়ানা জিকির। সেখানে প্রেমিকার নামে কিভাবে জিকির করা যায় তা প্রকাশ করবে।
হি-হি-হি। এটাই কি তার একমাত্র প্রেম ?
প্রথম, একমাত্র, এবং শেষ। সারা দুনিয়া তার হাতে তুলে দিলেও সে স্বপ্না ছাড়া আর কিছু নেবে না।
আর কখনোই সে অন্য কোনো মেয়ের কথা মাথায় আনেনি?
আপনি এভাবে প্রশ্ন করছেন কেন? আপনি তো তার ছাত্রী ছিলেন। দেখেছেন কোচিং-এ কোনো মেয়ের দিকে সেই অর্থে চোখ তুলে তাকাতে? জগতে স্বপ্নার চেয়ে আরও অনেক সুন্দর ও প্রতিভাবান মেয়ে আছে তা সে বিশ্বাসই করে না।
আপনি সিওর ?
শোনেন, প্রেম আর খুন এই দুইটা চেপে রাখা যায় না। সে যদি আরও কোনো মেয়ের প্রতি তিল পরিমাণ আসক্ত হতো তাহলে আমি তা জানতাম। যার আন্ডারওয়ারের খবর রাখি তার প্রেমের খবর পাবো না?
হি-হি-হি।
সে নিশ্চিত হয় যে, স্বল্পকালীন প্রেমের কথাটা তূর্য বন্ধুর কাছে প্রকাশ করেনি। না করার কারণটাও সে বুঝতে পারে। স্বপ্না তাদেরই বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ইয়ার নিচে পড়ে। তাদের সবার সাথেই স্বপ্নার পরিচয় আছে। ব্যাপারটা অন্যের কাছে চলে গেলে স্বপ্নার কানে চলে যাওয়াটা স্বাভাবিক। যাকে নিয়ে দিওয়ানা জিকির নামে বই লিখবে তার কানে তার স্বল্পকালীন প্রেমের কথা পৌছুক তা নিশ্চয় সে চাইবে না।
[চলবে...]

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট