ধারাবাহিক উপন্যাস : অনিঃশেষ অন্ধকার : পর্ব ০৯
















অনিঃশেষ অন্ধকার
আবুল কালাম আজাদ

১৭.
একদিন সে বেশ আগেই কলেজ থেকে ফিরল। দুপুর দুইটার আগে। বরাবরের চাইতে অনেক আগে। তার হাতে অনেকগুলো শপিং ব্যাগ।
কুলসুম অবাক হল। না, তার হাতে সোপিং ব্যাগ দেখে সে অবাক হয়নি। এরকম ব্যাগ হাতে সে প্রায়ই ফেরে। অবাক হয়েছে এত আগে ফিরতে দেখে। সুমনের সাথে রিলেশন হবার পর থেকে কুলসুম তাকে এত আগে কখনো ফিরতে দেখেনি।
সে প্যাকেটগুলো নিয়ে নিজের ঘরে গেল। কুলসুমকে ডাকলো। ডেকে বলল, প্যাকেটগুলো খোল।
কুলসুম আরেক দফা অবাক হল। নিলয়, পলাশ, তূর্য, সুমন যার কাছ থেকেই সে যত উপহার পেয়েছে কুলসুম তাতে হাত দিতেও সাহস পায়নি। আর আজ সরাসরি তাকে খুলতে বলছে। কুলসুম বলল, আমি এইগুলান খুলুম ক্যান?
খুলতে বলছি খোল।
না, আপনের জিনিস আমি খুলুম না।
এগুলো আমার না, তোর জন্য এনেছি।
আমার জন্যি!
আমি বুঝি তোকে কিছু দিতে পারি না?
কুলসুম প্যাকেটগুলো খুললো। ২ সেট জামা। এক জোড়া স্যান্ডেল। কিছু কসমেটিকস। সে বলল, এগুলো সব তোর। পছন্দ হয়েছে?
জামাগুলান তো খুব দামি মনে হইতাছে।
অবশ্যই দামী। নামি ব্র্যান্ডের দামি জিনিস। এগুলো পরে যে কোনো অনুষ্ঠানে যেতে পারবি।
কাজের মানুষরা এইরকম জিনিস পরে?
এভাবে ভাববি না। কাজের মানুষ বলে কিছু নেই। তোর শরীরের রক্তের রঙ কি?
লাল-টুকটুকাা লাল।
আর আমার ?
লাল- টুকটকা লাল।
তাহলে? আমরা সবাই মানুষ। নিজেকে সংখ্যালঘু বানিয়ে ফেলবি না।
আম্মায় দেইখ্যা যদি কিছু কয়?
কী বলবে? আমি কি তোকে কিছু দিতে পারি না?
তারপরেও কুলসুম বিশেষ খুশি হল বলে মনে হল না। আসলে মানুষ সবকিছু নিজের সাথে মানিয়েই ভাবে। একজন গরিব দিনমজুর কখনোই স্যুট-টাই, পাম্প স্যু এসবের কথা ভাবে না। কেননা, এসব তার কাজের এবং পরিবেশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এসব সে ঘরে তুলে রাখতে পারবে, কিন্তু এসব পরে সে বাইরে যেতে পারবে না। তার চেয়ে সে বরং একটা লুঙ্গি বা একশ’ টাকা পেলে অধিক খুশি হবে।
যাকে বসতে হবে রান্না ঘরের কালি-ঝুলের মধ্যে, সে কেন নামি ব্র্যান্ডের দামি পোশাকে খুশি হবে? সে অখুশি মনে পোশাকগুলো নিয়ে তুলে রাখলো।
রাতে আবার তার ঘরে কুলসুমের ডাক পড়লো। সে হাত ধরে কুলসুমকে একেবারে তার পাশে নিয়ে বসালো। তার ঘাড়ে হাত রেখে বলল, কুলসুম, তোকে একটা কথা বলবো।
বলেন।
তুই তো জানিস, আমার একজন ছেলে বন্ধু আছে।
জানি না আবার? পরথমে ছিল নিলয় ভাই। তারপর তূর্য স্যার। তারপর মাঝখানে কয়দিন পলাশ ভাই। তারপর আবার নিলয় ভাই। এখন .......।
ধ্যাত্তারি! ওগুলো কি বন্ধু? ওগুলো ছিল টাইম পাস।
আইচ্ছা, এখনকারটার নামটা য্যান কি ?
সুমন-সুমন রহমান। খুব সুন্দর নাম না?
হ’ সোন্দর। বড়ই সৌন্দর্য। আমার এক চাচাতো ভাই আছে, নাম সুমন। আমরা তারে ডাহি সুমইন্যা।
তুই কথার মধ্যে ফালতু কথা টেনে আনিস, এইটা আমার ভাল লাগে না।
আইচ্ছা, কি কইতে চান তাই কন।
আমরা মাঝে মাঝে ঘুরতে যাই। এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করি, গল্প করি।
মাঝে মাঝে না, প্রত্যিক দিনই যান।
বাজে বকিস না, প্রত্যেক দিন যাব কেন? আমার আর দুনিয়ায় কোনো কাজ নেই যেন? লেখাপড়া নেই? এইচ.এস.সি পরীক্ষা দেব। এইচ.এস.সি কি মুখের কথা?
আইচ্ছা, কি কইতে চান তাই কন।
পরীক্ষা নিকটে চলে আসছে-নকিং এ্যাট দ্য ডোর। এখন বাইরে ঘোরাঘুরি করে সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
তাইলে ঘুইরেন না।
বেশি কথা বলিস। কি বলি তা আগে শোন।
কন।
আর বাইরে ঘোরার সেরকম পরিবেশও নাই।
আমার এই সব শুইনা কি লাভ?
তাই বলছিলাম কি, সুমনকে মাঝে মাঝে বাসায় নিয়ে আসবো। আমার ঘরে বসে দু’জন একটু গল্প-সল্প করবো। আবার আমার উপকারও হবে। ও ইংরেজির স্টুডেন্ট-ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। আমাকে ইংরেজি দেখাতেও পারবে।
তায়লে আম্মারে কন, হেরে ইংরেজির মাস্টার কইরা রাইখা দিক, আর আসাদ স্যাররে বাদ কইরা দিক।
আরে ধুর! তোর শুধু বাঁকা কথা। ও কি প্রতিদিন আসবে যে, আসাদ স্যারকে বাদ করে দেবো?
এহন আমি কি করুম তাই কন।
তোকে কিছু করতে হবে না। মানে বলছিলাম কি, তুই শুধু বাবা-মাকে কথাটা জানাসনে। মাঝে মাঝে আসবে। দু’/এক ঘন্টা থাকবে, তারপর চলে যাবে। আয়, আমরা লুডু খেলি। তুই যদি আমাকে হারাতে পারিস তো কাল তোকে দামি একটা মেকাপ বক্স কিনে দেব।
শোনেন আফা, এই সব ভালা না। আমি পরথমে যে বাসায় থাকতাম সেই বাসার মাইয়া বাপ-মারে না জানাইয়া তার বয় ফেরেন্ড নিয়া আসতো। তারপর কি যে কেলঙ্কারি হইল........!
কী হল?
একদিন সেই মাইয়ার মাথা ঘুরে। ওয়াক ওয়াক কইরা বমি করতে চায়। বাপ-মা তো অস্থির। মাইয়ারে নিয়া গেল ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার এইটা-ওইটা পরীক্ষা দিল। তারপর কইল, আপনেগো মাইয়া তো তিন মাসের পোয়াতি।
ধ্যাত্তারি! সে মেয়ের বয়স কত ছিল?
ইট্টুখানি মাইয়া। কিলাশ সেভেনে পড়তো।
এই জন্যই। আর আমি কলেজে পড়ি। আমার কি বুদ্ধি-শুদ্ধি কিছু হয় নাই?
আফা, ঐটা এমুন এক সময় যহন বুদ্ধি-শুদ্ধি কোনো কামে আসে না। আমার কথাই কই-সেই ভাইজানের কথা কইছিলাম না? পারছিলাম নিজেরে কনটোরল করতে? তহন দুনিয়ার কিছুই মনে থাকে না-থাকে শুধু শরীলডা।
তোর কনট্রোলিং পাওয়ার আর আমার কন্ট্রোলিং পাওয়ার এক হল? শিক্ষার একটা ব্যাপার আছে। সুমন বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখর ছেলে।
বুঝলাম আপনের কনটোরল পাওডার বেশি-আপনের শিক্ষা বেশি। শরীলের কাছে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব, মহান মানুষ সব এক। তখন শরীলের চামচা।
হি-হি-হি।
হাসেন ক্যান? শ্যাষে দোষ আইসা পড়বো আমার ঘাড়ে। যত দোষ-অমল বোস।
অমল বোস না, যত দোষ-নন্দ ঘোষ।
অই হইল। দুইজনই তো হিন্দু। বড়লোকের পোলাপান ঝামেলা করে, মরে গিয়া গরিবের কামের মাইয়া। পুলিশের মাইয়াডা কি করলো কন?      বাপ-মারে মাইরা ফালাইলো, অহন তো কামের ছেমরিও জেলে পঁচতাছে।
সেখানে কাজের মেয়ের দোষ ছিল। সে কফিতে ঘুমের ওষুধ মিশাতে দেখেছিল, কিন্তু তা বলেনি কাউকে। আবার খুন করতেও দেখেছিল সে, কিন্তু চিৎকার করে কাউকে জানায়নি, উপরন্তু আলামত মুছে ফেলার জন্য সাহায্য করেছে।
সেইরকম দোষ তো আমিও করতাছি। আমিও তো সবকিছু জানতাছি।
আমি কি সেরকম কোনো অপরাধ করছি?
করতেছেন না, কিন্তু কতক্ষণ ?
আচ্ছা, আমার এই বিষয়টাকে তুই অপরাধের মধ্যে ফেলছিস কেন?
পুলিশের মাইয়া মৃত্যু ঘটাইছিলো, আর আপনের বেলায় জন্ম হইতে পারে। অবৈধ মৃত্যু আর আর অবৈধ জন্ম দুইটাই সমান অপরাধ। পুলিশ পরথমেই আমারে রিমান্ডে নিবো। নাকের মধ্যি গরম পানি ঢাইলা কইবো-ঐ ছেমরি ক’ উকিল সাপের মাইয়া কারে নিয়া বাসায় আসতো? আমি যদি কই-জানি না ছার, পুলিশ খামচি দিয়া আমার চুল ধইরা কইবো-তুই জানোস না তায়লে জানবো ক্যাডা? সব তোর কারসাজি, তুই.......। ক’ নাইলে আন্ডা ঢুকায়া দিমু।
তুই বহুত প্যাঁচ দিয়ে কথা বলিস। শোন, আমি মানি যে তোর বুদ্ধি অনেক বেশি। তোর চিন্তা-ভাবনার প্রশংসা করছি আমি। এই তোর হাত ধরে প্রমিজ করছি-আমি খারাপ কিছুই করবো না। সত্যি বলতে কি, আমরা দু’জনই এ্যাডাল্ট। আমরা ভাল-মন্দ বুঝি। তোর কোনোই বিপদের সম্ভাবনা নেই। তুই আমাকে বিশ্বাস কর-বিলিভ মি।
আইচ্ছা করলাম।
আয় লুডু খেলি। দেখিস কাল তোকে কি অসাধরণ একটা মেকআপ বক্স এনে দেই।
মেকাপ বক্স-ফেকাব বক্সের আমার কোনো দরকার নাই। আমি কি সিনামা ছিনামার নাইকা হমু?
তারপর থেকে সে প্রায়ই সুমনকে নিয়ে বাসায় আসে। কুলসুমকে অর্ডার করে নানা রকম খাবার বানিয়ে নেয়। ঘরের দরজা বন্ধ করে সেসব খায় আর গল্প করে। আর মা’র ফিরে আসার আগেই সুমন চলে যায়। সে অবশ্য কুলসুমকে বলে-গল্প তেমন হয় না। লেখাপড়াটাই বেশি হয়। ইংরেজিটায় বেশ উন্নতি হচ্ছে। গ্রামারটা সুমন বেশ সহজ করে বোঝায়।
কুলসুম মাঝে মাঝে বলে, দেখুমনে এইবার কেমুন পাস দেন।
দেখিস, এ+ সিওর।

১৮.
বেশ চলছিল। তাদের মধ্যে কখনোই সামান্যতম মনোমালিন্য বা ভুল বোঝাবুঝি হয়নি। দু’জন দু’জনাতে মুগ্ধ। দু’জন দু’জনকে বেশ কমপ্রমাইজ করে। ভালোবাসা তো বই পড়ে শেখা যায় না। ভালোবাসা হল মন পাঠ করার বিষয়। একে অপরকে পাঠ করতে হয়। পরস্পরের আশা-আকাঙ্খা, ভাল লাগা, মন্দ লাগা, পছন্দ, অপছন্দ সব বুঝে তারপর চলতে হয়।
হঠাৎ একটুখানি পলকা হাওয়া এল। ছোট একটু বাউকুড়ানির মতো। ঝামেলা হল ফেসবুক ব্যবহার করা নিয়ে। সেকেন্ড ইয়ারে উঠে সে একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলে ফেললো। সে যে একাউন্ট খুলবে তা সুমনকে জানিয়েছিল। সুমন তখন বিশেষ বাধা দেয়নি। শুধু বলেছিল-পরীক্ষাটা শেষ করে ফেসবুকে যাওয়া ভাল। এখন ফেসবুক ব্যবহার করতে গেলে পড়াশোনায় ডিসটার্ব হবে।
সে অনেক ভেবে দেখল, লেখাপড়া ডিসটার্ব হবার মতো কোনো কারণ নেই। তার ক্লাশের প্রায় সব মেয়েরই ফেসবুক একাউন্ট আছে। যারা প্রথম সারির ছাত্রী তাদেরও আছে। এমন কি স্যার/ম্যাডামদেরও আছে। আর সুমনেরও তো আছে। তার ফ্রেন্ড লিস্টে ফ্রেন্ডের সংখ্যা ৪৫০০। সেও নাকি এইচ.এস.সি ফার্স্ট ইয়ার থেকেই ফেসবুক করছে।
সে ফেসবুকে নিজের সুন্দর সুন্দর ছবিগুলো আপলোড করতে থাকলো মহাআনন্দে।ফেন্ড রিকোয়েস্ট আসতে লাগলো জোয়েরর জলের মতো। সে রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করতে লাগলো। বন্ধুর সংখ্যা বেড়ে যেতে রাগলো হু হু করে।
তার কাছে মজার ব্যাপার দুইটা। এক-বন্ধুদের মাঝে নিজের ছবি ছড়িয়ে দেয়া। দুই-বন্ধুদের সাথে ইনবক্সে চ্যাট করা। যাদেরকে দেখেনি কোনোদিন, নামও শোনেনি, অনেক দূরে অথবা কাছে বসবাস সেই সব মানুষদের সাথে অনুভূতির আদান-প্রদান সত্যিই তাকে মুগ্ধ করে ফেলে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এক সাথে অনেকের সাথে চ্যাট বলা যায়, মোবাইল ফোনে যেটা সম্ভব নয়। অনেক সময় সে নিজেই অন্যের ইনবক্সে নক করে।
কেমন আছেন?
ভাল, আপনি কেমন আছেন ?
আমি ভাল আছি। আমি এবার এইচ.এচ.সি সেকেন্ড ইয়ারে।
আচ্ছা, কোন কলেজে ?
কলেজের নাম বলবো কেন?
বললে ক্ষতি কী?
ক্ষতি নেই, কিন্তু বলবো না।
না বললেও আমি ঠিকই জেনে গেছি আপনি কোন কলেজে।
কেমন করে জানলেন?
আপনার প্রফাইলে লিখেছেন যে?
ও! হি হি হি। আপনি আমার প্রফাইল দেখেছেন?
দেখবো না? তাহলে আমি আপনার বন্ধু কেমন করে? সত্যিই আপনি খুব সুন্দর। আচ্ছা, আপনার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?
বয়ফ্রেন্ড থাকবে কেন? আমার হাজব্যান্ড আছে।
আপনি বিবাহিত!
হ্যাঁ।
বিশ্বাস হয় না।
বিশ্বাস হবে না কেন?
আপনার হাজব্যান্ড কী করেন?
রিকশা চালায়। হি হি হি।
যাক বাবা, বাঁচা গেল। সত্যিই খুব আপসেট হয়ে গিয়েছিলাম।
আপসেট হবেন কেন? আমার হাজব্যান্ডের কথা শুনে আপনি আপসেট হবেন কেন?
তাইতো! আমি কেন আপসেট হবো? সত্যি, তারপরেও বুকের মধ্যে কেমন ধক করে উঠেছিল।
বুঝেছি, আপনার সাথে আর বেশি চ্যাটে যাওয়া ঠিক হবে না।
না না, প্লিজ আপনি আমার সাথে চ্যাটে আসবেন।
লাঞ্চ করেছেন?
করেছি।
আমি এখন লাঞ্চ করবো।
আচ্ছা, আপনি আবার কখন অনলাইনে আসবেন ?
তা বলবো কেন?
এই আমার ফোন নাম্বার। আপনি আবার যখন অন লাইনে আসবেন তখন আমাকে একটা মিস দেবেন প্লিজ।
কি যে বলেন না!
সে খুব আনন্দের সাথে ফেসবুক বিষয় নিয়ে সুমনের সাথে কথা বলতে থাকে। কার সাথে কি চ্যাট করলো, কার সাথে কেমন মজা করল, কাকে কেমন বোকা বানালো ইত্যাদি বিষয়গুলো বলে আর হাসিতে লুটোপুটি যায়।
কিন্তু সুমন বিষয়টাকে আনন্দের সাথে নেয় না। সুমন যে মুখ গোমড়া করে থাকে তা বুঝতেও পারে না। এক সময় সুমন বলেই ফেলল, তুমি ফেসবুক করলে তোমার সাথে আমার রিলেশন টিকবে না-ব্রেক হয়ে যাবে।
কেন?
আমি চাই না তুমি ফেসবুক করো।
তুমি তো করছো, খারাপ কী? বেশ ইন্টারেস্টিং না? তোমার সাথেও তো চ্যাট করা যায়, অনেক কিছু শেয়ার করা যায়।
চার বছরে আমার ফ্রেন্ড ৪৫০০, আর এক মাসেই তোমার ফ্রেন্ড ৩০০০ ছাড়িয়েছে।
তাতে কি ? এটা তো জাস্ট ফান।
তুমি যে কোনো ছেলের সঙ্গেই চ্যাট শুরু করে দাও।
তাতে কী? আমি তো ভালোবাসি শুধু তোমাকে। অন্যের সাথে চ্যাট করলেই কি তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কমে যাবে ?
ওসব মুখস্ত করা কথা বাদ দাও।
তার মানে তুমি আমাকে বিশ্বাস করছো না?
যদি বলো তবে তাই। আমার সাথে রিলেশন টেকাতে হলে তোমার ফেসবুক বাদ দিতে হবে।
সুমনের এই আচরণটা তাকে অনেকটা আহত করল। মনে মনে ভাবল অনেক কিছু। তোমাকে আমি ভালোবাসি। তোমার সঙ্গে সারাটা জীবন কাটাবো বলে নিজের কাছে অঙ্গিকারাবদ্ধ। অথচ তুমি আমাকে এখনই অবিশ্বাস করছো। সামান্য ফেসবুক ব্যবহার মানতে পারছো না। বিয়ের পর তুমি কি অফিস বাদ দিয়ে ঘরে বসে আমাকে পাহারা দেবে?
এসব ভাবতে ভাবতেই সে সব ভাবনা ছুড়ে ফেলে দিল। সে সুমনের সাথে কোনো ঝামেলায় জড়াবে না। সুমন যেমন চাইবে তেমনই করবে। ভালোবাসা টেকাতে যা করার দরকার তাই করবে। কারণ, সুমনের মতো ছেলে সে আর নাও পেতে পারে। তার মতো মেয়ে সুমন অবশ্যই পাবে। হ্যাঁ, এরকমই তার বিশ্বাস। সে ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ করে দিল। ঠিক নিজে করলে না। সুমনের হাতে ফেসবুক আইডি আর পাসওয়ার্ড তুলে দিল। যা করার সুমনই করল।
পরাধীনতা স্বীকার করেও, নতি স্বীকার করেও সে সুখি। এই দেশে একটা মেয়েকে প্রেমপর্ব থেকেই বশ্যতা স্বীকার করে নিতে হয়। যে মেয়ে আজ প্রেম টেকানোর জন্য ফেসবুক করতে পারল না, সে একদিন সংসার টেকানোর জন্য আরও অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করবে তাতে সন্দেহ কী। এদেশের বেশির ভাগ মেয়েই নির্যাতিত হয়েই সুখি। তাদের মুক্তির ব্যাপারে সভা-সেমিনার-সংগঠন করে সফল হওয়া কঠিন।
তারপর সময় বেশ কেটে যেতে লাগল প্রেম-ভালোবাসায় মাখামাখি করে। এরই মাঝে আবার আরেকটা পলকা হাওয়া এল। এবার ভুল করলো সুমন।
সুমনের সাথে দেখা করতে যায়ার সময় সে একদিন তার চাচাতো বোন মিলিকে নিয়ে গেল। উদ্দেশ্য সে কত সুন্দর একটা ছেলের সাথে প্রেম করছে তা তাকে দেখানো। মিলি একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ ফার্স্ট সেমিস্টারে। চেহারায় ও কথাবার্তায় বেশ স্মার্ট। সারাদিন তিনজন এক সাথে ঘুরলো। অনেক গল্প হল।
দু’দিন পর সুমন ফোন করে বলল, তোমাকে একটা কথা বলতে চাই, আবার কিভাবে নিবে....।
কী বলতে চাও বলো?
একটা জিনিস চাইবো তোমার কাছে।
তোমাকে তো আমার দেয়ার কিছু বাকি নেই।
ঠিক তোমার কাছ থেকে নয়।
আচ্ছা, বলো তুমি চাইবে আর আমি দেবো না, তা তো হতে পারে না।
মিলি আপুর নাম্বারটা একটু দিবে?
সে মনে প্রচন্ড একটা শক খেল। কিভাবে সুমন মিলি আপুর নাম্বারটা চাইতে পারলো? ফোন কেটে দিয়ে সে স্তব্ধ হয়ে বসে রাইলো। সুমন বার বার কল করতে লাগলো, কিন্তু সে ফোন রিসিভ করে না।
এরই মাঝে আসাদ স্যার এলেন। সে দুঃখিত মনে আসাদ স্যারকে ঘটনাটা বলল। আসাদ স্যার শুধু ভেবে নিলেন-এই ছেলে কলেজ লেভেলের নিচু মানের ছাত্রীতে সন্তুষ্ট নয়। সে তার লেভেলের কোনো মেয়ে চাচ্ছে, কিন্তু পাচ্ছে না বলে.....।
তবে আসাদ স্যার কোনো মন্তব্য করলেন না। কেননা, তিনি ভালো করেই জানেন সুমনের প্রতি তার এই অভিমান থাকবে না। সুমন পরে নাম্বার চাওয়ার পেছনে দু’একটা কার্যকরী অজুহাত দাঁড় করালেই সে ভুলে যাবে সব রাগ, দুঃখ, অভিমান। সুমনকে ম্যানেজ করা তার পক্ষে কঠিন হলেও তাকে ম্যানেজ করা সুমনের জন্য কঠিন কিছু নয়। কারণ, সে এখন অসহায়-নিরুপায়।
আসাদ স্যারকে বসিয়ে রেখেই সে মিলির নাম্বারসহ মেসেস লিখল-মিলি আপুর নাম্বার দিলাম। তবে তুমি আর আমাকে ফোন করবে না। আমার সঙ্গে কেনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।
তবে আসাদ স্যার পরের ক্লাশে গিয়েই দেখেন সব আগের মতো।
[চলবে...]

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট