পদাবলি : ০২





অনন্ত মধ্যরাত
মিশির হাবিব 

আমি এপাড়ে বেদনার নীল বিষে মৃতবৎ,
তুমি ওপাড়ে নিঃসুখে জ্বলে জ্বলে বিবর্ণ গোলাপ-
আমাদের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে জীবননদী।
যেন অযুত কোটি মাইল দূরে তুমি-আমি!
কেউ কাউকে শত বছর বোঝার চেষ্টা করি না,
অথচ মধ্যরাত পেরোলেই আমার বুকে তোমার শরীরের জাফরানি গন্ধ পাই-
যেন সূচনা থেকেই মানুষের দুটি চোখের মতো অনন্ত
মধ্যরাত আমরা পাশেই থাকি
তবু কেউ কারো কান্না দেখি না!


মরিচিকার খোঁজে
আবু ইউসুফ সুমন

আমি যেখানে থাকি সেখানে আমার সাথে সুখ আর দুঃখ নামে আরো দু’জন থাকে।
সুখটা কেন জানি আমার থেকে পালিয়ে বেড়াতে চায়। মাঝে মধ্যে একটু এসে একটা হাসি দিয়ে আবার চলে যায়।
অথচ দুঃখ আমার সাথে ছায়ার মত লেগে থাকে। এক মুহুর্তও আমাকে চোখের আড়াল করতে চায়না।
অথচ আমি কতটা স্বার্থপর তবুও দুঃখকে ভালোবাসতে পারিনি।
সুখের একটুখানি হাসি দেখার প্রতিক্ষা আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিনিয়ত!
মানুষের স্বভাবই কি মরিচিকার খোঁজে জীবন পার করা?




করোনা 
হাসান মাসুদ 

তোমার করোনা
তুমি কাঁপছ জ্বরে
আমার করোনা
আমিও নড়বড়ে

আমাদের করোনা যদি প্রেমে বদলে যেত...

তোমার করোনা
আমার করোনা
মধ্যে বাঁশের সাঁকো।

আমরা ঝুলছি,
কাঁপছি
যেমনটা রুদ্রাক্ষ রুদ্রাক্ষের ভিতর।


কষ্টের ভাইরাস
শাহীন খান

চাখারী আর আহমেদের মধ্যে তেমন একটা তফাৎ আমি দেখি না।
দু’জনই আমার বন্ধু।
কদাচিৎ ব্যস্ততার ভীড়ে ফোনে খবরাখবর নেয়া হয়।
দু’জন দু’দিকে।
চাখারী চাখারে, আহমেদ বানারীপাড়ায়।
পলখালেখি ওরাও করে।
বন্ধুদের মধ্যে ওরাই সাহিত্য পক্ষত্রে স্বতন্ত্র।
দু’জনারই হস্তাক্ষর দারুণ, চটপটে, বাকপটু, সুখী।
আমি ওদের থেকে যোজন যোজন দূরে...
খানাখন্দরে পড়ে পড়ে বিরহ-ব্যথায় ধুঁকছি।
নামহীন, ঠিকাহীন, মস্তক কাটা একটি লাশ!
পচে পচে গলে গলে ক্ষয়ে ক্ষয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছি, হচ্ছে পরিবেশ কলুষিত।
আমি ভাইরাসে আক্রান্ত, কষ্টের ভাইরাস!
কতো কষ্টের কথা বলবো?
আমার কষ্ট শেয়ার করবো না কাউকেই,
চাখারী কিংবা আহমেদকেও না।




একটা যুদ্ধ
সব্যসাচী নজরুল

পদ্মার ধূ ধূ বালুচরে ঘর্মাক্ত দিনের শেষে কীর্তিনাশায় গা ভিজাই,
ক্লান্ত দেহখান কখন জানি ঝিমিয়ে পরে বটের ছায়ায়।
সুদূর বিস্তৃত ভূমি মাঝে নিরবতা ভেঙে জেগে ওঠা তোমার একাকী জীবনের বিরহগাথা, কষ্টরা, অমানিশায়-
ব্যথার গীত রাগে-অনুরাগে করুণ সুরে বেজে যায়।

শুনলেও যা শিহরণ জাগাতে পারে না পাথর-চাপা এ কঠিন প্রাণে!
আলিঙ্গনে আলিঙ্গনে কোমল পরশে জড়িয়ে রাখা,
 আমায় ঘিরে থাকা তোমার অস্তিত্ব টের পেয়েও আমি নিরুপায়?
ব্যথা, কি যে ব্যথা, নিদারুণ কষ্টে চোখে জল ঝরে যায়।
অনুভূতি, স্পর্শগুলো পাঁজর ভেঙে কলিজা ছিঁড়ে গলিত বিগলিত হয়ে গড়িয়ে পড়লেও, আহারে-
ওরে হায়, হায় হায় আমি নিরুপায়!

ক্রমাগত ধাবমান একটা যুদ্ধ,
এ জীবনময় চলমান একটা যুদ্ধ।
অস্ত্রহীন কম্পিত হৃদে ধীর পায়ে হেঁটে যাই,
তবুও লড়ে যেতে চাই।
একটা বিজয় চাই, একটা মুক্তি চাই
প্রিয় চিরচেনা জগতে আমৃত্যু তোমায় নিয়েই বাঁচতে চাই।

চারিদিকে ভয়-আতঙ্ক, মৃত্যু উপত্যকা খুলেছে দ্বার,
দলছুট এক নেকড়ে আধিপত্য বিস্তার করছে বারংবার।
পাহাড় বেয়ে নেমে আসা ভীষণ ক্ষুধার্ত শৃগালের দলে
তোমাকে আমাকে খেতে চায়
পলায়ন করে ঝাপ দেবো অথৈজলে
না, না, আমিতো এমন মানুষ নই?
পশ্চাৎপদে রবো, অগ্রগামী এ আমিতো এমন নই!
দেহের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত-
ওষ্ঠাগত শেষ দমটুকু পর্যন্ত প্রাণপণে লড়ে যেতে চাই,
স্বভূমে নিরোগ নিরাপদ আশ্রয়ে তোমায় নিয়ে বাঁচতে চাই।
বাঁচতে চাই, বাঁচতে চাই......



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট