পাঠক




পাঠক
আসিফ আহমদ

অনেকটা আচমকা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে মা কে বলল হাসান, তাড়াতাড়ি নাস্তা দাও মেলায় যাব। মা ছানা বড়ার মত চোখ করে জিগ্যেস করল, মেলায় যাবি, কোন মেলায়? হাসান বলে উঠলো, কোন মেলায় আবার বই মেলায়। তুই না
গতকাল মেলা শেষ করে ফিরলি? এই কথা শুনা মাত্র হাসান আকাশ থেকে পরল মিন মিন করে বলতে লাগলো সত্যিই কি মেলা শেষ, নাকি সবি আমার কল্পনা মাত্র?

এর মধ্যে হঠাৎ কে যেন অনরগল ডেকে চলছে হাসান,, হাসান বলে।
হাসান স্পষ্ট  শুনতে পাচ্ছে।
ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু,,
ধুসর অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে গোটা ঘর
আর একবার হাসান বলে ডাকা মাত্র চোখ মেলে তাকাল, নাক বারাবর দাড়িয়ে আছে মা। সে বিছানায় শোয়া। গোটা শরীর ভিজে একাকার, বুঝতে পারলো সে ঘামছে, এর মধ্যে মা বলে উঠলো এখন কেমন লাগছে জ¦র কমেছে? এই বলে মার একটি হাত হাসানের কপালে ছুঁইয়ে দিল, হু অনেকটাই কমেছে।
সেই যে মেলা শেষ করে এসে মরার মত ঘুমলি আর কোন খবর আছে? এক ঘুমে একদিন পার করেদিলি এর মধ্যে আবার তোর গায়ে জ¦র আমি তো ভিষন দুশ্চিম্তায় পড়ে গিয়েছিলাম জাক আল্লাহ বাঁচিয়েছে। নে এবার তাড়াতাড়ি মুখ হাত ধুয়ে সামনের রুমে আয় তো দেখি।
এই বলে আম্মু হন হন করে হেটে চলে
গেল।
হাসান যেন অনেকটা পাগলের মত মাথা চুল কোতে চুল কোতে বলতে লাগলো বই মেলা কি কখনো শেষ হতে পারে?
যারা প্রকৃত পাঠক তাদের জন্য তো প্রতিটি দিন বই মেলা। তারা রোজ কিনবে নতুন নতুন বই। এক বসাতে তা শেষ করে কিনবে আরো কয়েকটি। এভাবে কিনতে শুরু করবে পড়তে শুরু করবে সমস্ত বই। যদিও বা তারা কিনবেনা জমজমাট সাজসজ্জল ময় কোন দোকান হতে ,কিনবেনা কোন মেলা থেকে কোন লেখকের অটোগ্রাফ নিয়ে। তারা কিনবে রাস্তার পাশে বসা পুরাতন বই বিক্রেতা থেকে পছন্দ মত বই। তারা দেখবেনা বইটা ছেড়া নাকি নতুন চকচকে বাইন্ডিং, আকর্ষণ ময় প্রচ্ছদ। তারা দেখবেনা লেখক নবীন না প্রবীন। তারা শুধু দেখবে ভেতেরের কালো লেখা গুলো।
কি আছে এই বই গুলোতে?

      আছে কি কিছু শেখার
      নাকি সব কিছু বেকার?


চোখের সামনে ভেসে উঠল একদল পাঠকের প্রতিচ্ছবি যারা নাওয়া খাওয়া সব ভুলেগিয়ে এক ধ্যানে পড়ে চলছে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা,এর মধ্যে সেও বসে আছে এক কোণায় বই হাতে। পড়ছে কিনা বুঝতে পারছেনা চেয়ে আছে শুধু এক ভাবে বইয়ের দিকে। একটি কথা হঠাৎ তার মাথায় জট পাকাতে শুরু করল দু,কলম লিখেই আজকাল লেখক স্বীকৃতি পায়।
কিন্তু একজন পাঠক হাজার বই পড়েও পাঠক স্বীকৃতি পায়কি? যারা বই পড়ে তারা কি জ্ঞানী না? নাকি যারা দু,হাতে যা ইচ্ছে তা লিখে তারাই মহা জ্ঞানী?? হাসান খুজে পায়না এই প্রশ্নটির উওর, ভেবে পায়না কি করবে? কাকে করবে এই প্রশ্ন, কেও পারবে উওর দিতে প্রশ্নটির?

এর মধ্যে আবার আম্মু এসে হাক দিল কিরে তোকে না বললাম মুখ হাত ধুয়ে সামনের রুমে আসতে আর তুই কিনা এখানও বিছানায় পাগলের মত বসে আছিস?
অনিচ্ছা সত্বেও উঠে পা বাড়ালাম সোচা ঘরের দিকে।

সামনের রুমে পা দিতেই চোখে পড়ল সোফায় বসা মোটা সোটা লোক একটি, উলটো দিক করে বসায় চেহারাটা ঠিক দেখা যাচ্ছে না। হাল্কা গলা খাকানি দিতেই লোকটি পেছন ফিরে তাকাল হাসানের দিকে। লোকটিকে দেখা মাএ হাসানের চোখে মুখে ভেসে উঠলো এক বিস্মময় কর ছাপ, বড় মামা তুমি!
কি অবাক হলি? এইদিকে এসে বোস।
হাসান বসতে বসতে বলল, তাতো হবই।
তোকে অবাক করে দেবার জন্যই তো   
এভেবে হুট করে আসা।
শুধু আমাকে অবাক করে দেবার জন্য?
এনি ডাউট?
নো মামা, হাসান মনে মনে বলে উঠলো, আমি জানি মামা তুমি কাজ ছাড়া কখনও পা বাড়াও কোন দিকে, আর সেই তুমি কিনা শুধু মাএ আমাকে দেখার জন্য সুদুর সিলেট হতে পাড়িদিলে চিটাগং। ভাবতেই অবাক লাগছে!
আগে মাসান্তরে হলেও আমায়
একবার ফোন করতি, এখন তো তাও করিস না।
স্যরি মামা। বিভিন্ন যামেলার কারনে
ফোন করে উঠতে পারিনি
ওহ, তা কোন ব্যাপার না চিটাগং
আসলাম একটি জরুরি কাজে ভাবলাম
এসেছি যখন তোদের সাথে একটু দেখা করে যাই। তোর মার মুখে শুনলাম তোর নাকি জ¦র হয়েছে। এখন কমেছে?
হ্যাঁ কমেছে। হাসান মনে মনে হেসে নিল এক অতৃপ্তি হাসি, অবশেষে তাহলে মুখ ফুটে বেরিয়ে আসলো এখানে আসার আসল কারণ।
আরো শুনলাম এবারের মেলায় নাকি তোর একটা বই বিরিছে? হাসান অনেকটা লজ্জিত স্বরে বললাম, হ্যাঁ ঐ আরকি।

মামার হাতের দিকে চোখ যেতেই নজরে পড়ল তার স্বরচিত বই খানা, হাল্কা জলপাই রঙ তার সাথে লালের সংমিশ্রণে বেশ ফুটে উঠেছে বইটির প্রচ্ছদ মামার হাতেও দারুন মানিয়েছে বইটি।এর মধ্যে মামা বলে উঠলো, আমি তো তেমন একটা বই-টই পড়িনা তবে দু,চার পৃষ্ঠা পড়ে যা বুঝলাম তোর লেখার হাত বেশ পোক্ত তা শিকার করতেই হয়, তার জন্য তোকে অসংখ্যা ভালবাসা ও শুভেচ্ছা রইলো। তবে কি হাসান জানিস তোর বইয়ের বাইন্ডিংটানা আমার কাছে তেমন একটা ভাল লাগেনি. তার সাথে প্রচ্ছদ টাও আর বইয়ের পাতা
গুলো তো তারচেও বাজে।।


কথায় বলে না, আগে দর্শণদারী পরে গুন বিচারী। মামার কথা গুলো শুনে হাসানের ইচ্ছে করছে, ঘরের সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দিতে। ইচ্ছে করছে, মামা কে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে। তাকি কখনও সম্ভব? এই ভেবে চুপ হয়ে গেল, মনে মনে খুজতে লাগলো প্রকৃত পাঠকের ছবিটি।
কেন যেন খুজে পাচ্ছে না ছবিটি, কোথায় যেন হারি গেছে। তাহলে কি সে প্রকৃত পাঠক হয়ে উঠতে পারেনি? যদি প্রকৃত পাঠক হত তাহলে তো থেকে যেত ছবিটি তার হৃদয়ের চির গহীনে, চির স্থায়ী হয়ে। শত চেষ্টা করেও কেও মুছতে পারত না। এর মধ্যে নাস্তা নিয়ে উপস্থিত হল মা,
মামা ভাগনে মিলে খুব তো দেখছি আড্ডা জমিয়েছো আমায় বাদদিয়ে। কি এতো খোশ আলাপ হচ্ছিলো আমিও একটু শুনি? মামা এক চিলতে হাসি দিয়ে বলল, ও কিছুনা বোন। তোমার ছেলের বই নিয়ে একটু বল ছিলাম আরকি।
-- তাই বুঝি?
তা নয়তো কি? আমার ভাগনের বইটি গুণে, মাণে, কোন দিকে কমতি আছে, বলো দেখি?
মামার এমন দু,মুখো কথা শুনে হাসানের গোটা শরীর অগনী শিখার মত জ¦লে উঠল, হাসান আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সোজা উঠে হেঁটে চলল দরজার দিকে, মা, মামা উভয়েই ডেকে উঠল হাসান হাসান বলে। দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ল হাসান, কোন এক নতুন ভূখন্ডের খোঁজে যে খানে থাকবে শুধু প্রকৃত পাঠক থাকবে হাসানও।
এই কথা ভাবতেই হঠাৎ হাসানের মনে হল তবে কি সে প্রকৃত পাঠক হয়ে উঠতে পারেনি? যদি প্রকৃত পাঠক হত তাহলে তো থেকে যেত ছবিটি তার হৃদয়ের চির গহীনে, চির স্থায়ী হয়ে অনন্ত কাল। শত চেষ্টা করেও কেও মুছতে পারত না। তবেকি কি সে প্রকৃত পাঠক নয়?
শুধু ঐ ছবির মানুষ গুলোই প্রকৃত পাঠক? খানিক বাদেই মনে পড়লো হাসানের, ছবিটিতে সেও তো ছিলো প্রকৃত পাঠক রুপে। খুজে না পেলে কি হয়েছে ছবি খানা?

তাহলে আমিও একজন প্রকৃত পাঠক এই ভেবে হাসান খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলো, বলতে শুরু করল অনরগল, আমিও একজন প্রকৃত পাঠক, আমিও একজন প্রকৃত পাঠক, হাহা... হাহা...।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট