মিত্রকথা




মিত্রকথা 

হাসনাত আসিফ কুশল 


১ 

সংবাদপত্রের সঙ্গে প্রায় দুই দশকের সম্পৃক্তি খবরেন্দ্রনাথের। সঙ্গনাথ মজুমদার তার সমসাময়িক সহকর্মী। কণ্ঠস্বরবাংলায় খবরেন্দ্রনাথ নিউজ এডিটর আর সঙ্গনাথ অ্যাসিস্ট্যান্ট নিউজ এডিটর হিসেবে কাজ করে। মিত্রবহুল চ্যাটার্জি সাব এডিটর। সে ওদের অনেক জুনিয়র। ঢাবি থেকে জার্নালিজমে অনার্স শেষ করেছে। মাস্টার্সও করছে। একই সঙ্গে চাকরি করছে। যাতে করে গ্রামে থাকা মা, বাবা এবং বোনের জন্য কিছু পাঠাতে পারে। কণ্ঠস্বরবাংলায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেয়ে সিভি পাঠিয়ে দিয়েছে। অ্যাক্সপিরিয়েন্সের ঝুলি না থাকলেও দক্ষতা ও জ্ঞান থাকার ফলে খবরেন্দ্রনাথের উৎসাহেই তাকে নিতে সম্মত হয়েছেন এডিটর অমলচন্দ্র তালুকদার। সে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক কাভার করে। ন্যাশনাল ডেস্কে আছেন রঙ্গলাল মুখার্জি। কাজকর্মে পুরোদস্তুর সাধক। সবসময় ফেসবুকে গানবাজনা পোস্ট করতে থাকে। স্পোর্টস ডেস্কের কাজী মুস্তাফা অবশ্য এগুলো পছন্দ করে না। তার মতে এসব খুবই গর্হিত কাজ। একবার ফেসবুকে এর বিরোধিতা করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়ে সে। পরে রঙ্গলাল ওকে ব্লক করে দেয়। অফিসে তাদের মধ্যে ব্যাপক ঝগড়াবিবাদ হলেও মিত্রবহুল এসব শুনতে চায় না। সে মনে করে, তার একটা অ্যাম্বিশন আছে। গ্রামে মা, বাবা আছেন। তাদেরকে দেখাশোনার দায়িত্ব তার উপরেই চলে এসেছে। আর ছোট বোনের বিয়েটাও দেয়া প্রয়োজন। ছেলেপক্ষ অবশ্য ওর বোনকে দেখতে এসেছিলো গত মাসে। কিন্তু কালো হওয়ায় পছন্দ করে নি। 

মিত্রবহুল চ্যাটার্জি লেখালেখিতেও সিদ্ধহস্ত। অফিস থেকে বাসায় ফিরে না ঘুমিয়ে কবিতা লিখে সময় পার করে। মাঝেমধ্যে বড়সড় গদ্য লিখে ফেলে অফিসের অবসরে। সেসব অফিসের কম্পিউটারে একটা ফোল্ডারে সে রেখে দিয়েছে। ওতে আর কেউ হাত দেবে না। কারণ অফিসে যার যার জায়গায় বসা নিয়ম। গভীর রাতে চিন্তাভাবনা করার মধ্যে সে তৃপ্তি খুঁজে পায়। কবিতা লেখে দ্রোহের পক্ষে প্রেমের জবানে। দাম্ভিক রাজনীতির কবল থেকে একদিন এ দেশ মুক্ত হবেইÑএ নিয়ে তার তেমন মাথাব্যাথা না থাকলেও কবিতায় অসাধারণভাবে সেসব প্রশ্ন তোলে হরহামেশা। 


২ 

উপমা নামে মেয়ে আছে অফিসে। কাজ করে কালচারাল ডেস্কে। গানও করে বেশ। অফিসের কলিগদের সঙ্গে সহজে মেশে না। তবে যেদিন থেকে মিত্রবহুল চ্যাটার্জি যোগ দিয়েছে, সেদিন থেকে তার খুব মনে ধরেছে। মিত্রবহুল চ্যাটার্জি অবশ্য এগুলো গুরুত্ব দেয় না। মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতেই পছন্দ করে না। একদিন উপমা তার পাশে বেশ ঘুর ঘুর করছিলো। একটা মেয়ে পাশে ঘুর ঘুর করছে আর বারবার তাকাচ্ছেÑবিষয়টা অস্বস্তির মিত্রবহুলের জন্য। কিন্তু কিছুই বলছে না। বরং নিজের কাজ করতে চেষ্টা করছে। সিরিয়াসলি নিচ্ছে না। উপমা কিন্তু ওর দিকেই বারবার ঘুরছে। কিন্তু মিত্রবহুলের একটা আলাদা শক্তি আছে। সে কোনোভাবেই খেয়াল করে নি। অস্বস্তি একটু হচ্ছে। তারপরও না। তখন উপমা নিজেই গিয়ে বললো, অ্যাইযে। শুনছেন। মিত্রবহুল একটু সামলে নিলো। এটা কোনো অফিসিয়াল বিহেভ হলো ? অ্যাইযে ? বললো, জ্বী, বলুন। উপমা বললো, ইন্টারন্যাশনাল উইমেনস ডে সম্পর্কে কিছু লেখা লাগবে। আপনি দেবেন ? মিত্রবহুল বললো, কি ধরনের লেখা লাগবে ? উপমা বললো, নারীপ্রগতি টাইপ সামথিং। মিত্রবহুল তখন একটা কাগজ দিয়ে বললো, আপনার মেইল নম্বরটি দেন। লেখা পেয়ে যাবেন। উপমা কাগজটি একটু বিরক্তির সঙ্গে নিলো। তারপর নিজের মেইল নম্বর লিখে আবার মিত্রকে দিলো। মিত্র সেটা রেখে দিলো। উপমা চলে যেতে যেতে আবার ফিরে এসে বললো, আচ্ছা আপনার ফেসবুক আইডি কি যেন ? মিত্র বললো, কেন ? উপমা বললো, অফিসিয়াল মেটার নিয়ে আলোচনা করতাম। মিত্র তখন বললো, আমি অফিসের কারো সঙ্গে ফেসবুকে থাকি না। উপমা তখন ‘ওহ’ বলে নিজের কামরায় চলে গেল। 

উপমা বেশ সাজগোজ করেই এসেছিলো। মেয়েরা যখন কোনো ছেলেকে পছন্দ করে বসে তখন কোনো এক অজানা কারণে একটু বেশি সাজগোজ করে ওই ছেলের সামনে ঘুর ঘুর করে। উপমা চেয়েছিলো মিত্র ওকে দেখে একটু তাকাক। মিত্র তা বোঝেনি অথবা বুঝেও না বোঝার ভান করেছে। নিজের কামরায় এসে তাই মিত্রর উপর বেশ রাগ হচ্ছে উপমার। 

কম্পিউটারে অনেকগুলো ট্যাবে খোলা আছে। তাতে আছে বিভিন্ন প্রকার সংবাদপত্রের ওয়েবসাইট। যেকোনো প্রকার নিউজের আপডেট ঘণ্টায় ঘণ্টায় আসছে। কিন্তু সে ভাবছে অন্যকিছু। হঠাৎ কি যেন মনে করে সে পাশের ট্যাবে মেইল খুললো। এবার অবশ্য সে অবাক হয়ে গেল। মিত্রর লেখা দেখতে পেল। এত দ্রুত ? কিভাবে ? লেখা কি ওর রেডি ছিলো ? 


৩ 

মিত্র যে রুমে কাজ করে সে রুমেই খবরেন্দ্রনাথ আর সঙ্গনাথ একসঙ্গে তদারক করে। উপমা আরেকটি রুমে কাজ করে। সংবাদ আজকাল পাইকারি ব্যবসায় হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকদিন পর আলু, পটলের বিক্রেতারা যেমন এ মহল্লা থেকে ও মহল্লায় ছুটে যায় বিক্রির জন্য সেভাবে সংবাদও বিক্রি করা হবে। খবরেন্দ্রনাথ আজ বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লো। তাই তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হলো। এখন সঙ্গনাথ সামাল দিচ্ছে সব। এডিটর অমলচন্দ্র তালুকদার প্রতিদিন রাত আটটায় আসেন, এক ঘণ্টা বসেন। তারপর চলে যান। উপমা এখানে দুই বছর ধরে কাজ করছে। রাবির ম্যাস কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম থেকে অনার্স করার পর এখানে সে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেয়। পরে সঙ্গনাথ কালচারাল বিটে ওর দক্ষতা দেখে তাকে ওদিকটার দায়িত্ব দিয়ে দেন। সঙ্গনাথের সঙ্গে বিশেষ খাতির উপমার। অনেক দিন ধরে মিত্রকে এই পদে কাজ করতে দেখা উপমা এখন ভাবছে কিভাবে ওকে আরেকটু বড় জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। 

দুপুরে সঙ্গনাথের সঙ্গে মিত্রর বিষয়ে একটু খোলামেলা আলোচনা করলো উপমা। মিত্র তো অনেকদিন ধরে সাব এডিটর হিসেবে কাজ করছে। এবার একটু প্রমোশন হলে হয়তো ও উন্নতি করতে পারে। সঙ্গনাথও বিষয়টা ভাবলো। তাই তো, এ ব্যাপারে তো ভাবা হয় নি। আচ্ছা এডিটর আসুক। তারপর দেখা যাবে। এত কিছু যে হচ্ছে মিত্র কিন্তু কিছু জানে না। সে তার মতোই অভাবনীয় গতিতে কাজ করছে। কাজ শেষে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। মাস শেষে বেতন পাচ্ছে। র‌্যানডম। 

ওদিকে কাজী মুস্তাফার সাংবাদিকতা জীবন ১১ বছরের। এখানে তার প্রধান কাজ হলো রঙ্গলালের সঙ্গে দেখা হলেই যেকোনোভাবে বিবাদ তৈরি করা এবং তার পেছনে মিত্রের কাছে অনেকগুলো কথা বানিয়ে বানিয়ে বলা। উপমা অবশ্য ওকে কোনোভাবেই দেখতে পারে না। কারণ কাজী মুস্তাফা অনেক আগে একদিন ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলো। টেম্পুতে উপমার সামনেই বসেছিলো কাজী মুস্তাফা। হঠাৎ কি মনে করে সে উপমার পাশে ঘেঁষতে থাকে। উপমার অস্বস্তি হলেও কিছু বলেনি। সেই কাজী মুস্তাফা এ পত্রিকার শুরু থেকেই স্পোর্টসে কাজ করছে। আগে পাক্ষিক স্বকণ্ঠ নামে একটি পত্রিকায় সে কাজ শুরু করে। পরে ওই পত্রিকার প্রকাশক মারা যাওয়ার পর প্রকাশকের ছেলেমেয়েদের উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ভারপ্রাপ্ত এডিটরকেও অপমান করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এর প্রতিবাদ হিসেবে ওই পত্রিকার চিফ রিপোর্টার জাহিদ, ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক এডিটর বাবলু মালিক আর স্পোর্টসের কাজী মুস্তাফা একযোগে পদত্যাগ করে চলে আসে ওখান থেকে। বাবলু মালিক এখন সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে গেছে, জাহিদ এখন নিজেই একটি পত্রিকা সম্পাদনা করছে আর কাজী মুস্তাফা এখন কণ্ঠস্বরবাংলায় কাজ করছে। 

উপমার সঙ্গে এই রকম ঘটনা অবশ্য অফিসের কেউ জানে না। কাজী মুস্তাফাও আর এ বিষয়ে উপমার কাছে যায় না। উপমাও আর আসে না কাজী মুস্তাফার কাছে। ওদিকে মিত্রর প্রতি আলাদা ভালো লাগা উপমাকে নাওয়াÑখাওয়া ভুলিয়ে দিয়েছে। ফেসবুকে যেকোনো পোস্টে লাইক দিয়ে যাচ্ছে। আর মিত্র তাতে অতিষ্ঠ হয়ে উপমাকে ব্লক করে রেখেছে। ফলে উপমার ভেতরকার যন্ত্রণা আরও বেড়ে গেল। সারাদিন দমবন্ধ লাগে তার। মিত্রর কাছে যেতে চাইলেও অফিসের কাজের চাপে যেতে পারে না। যখন তার সময় হয়, তখন মিত্র বাসায় চলে যায়। 

একদিন সুযোগমতো অফিসের সামনের একটা চায়ের দোকানে উপযাচকের মতো দেখাও করে বসলো উপমা। মিত্র বিরক্ত হলেও কিছু বুঝতে দিলো না। উপমা বুঝতেও পারলো না। 

‘আচ্ছা আপনার অল্প বেতনে চলে ?’ 

মিত্র বললো, হ্যাঁ। খুব ভালো চলছে। 

উপমা বললো, আমি তো দেখতে পাচ্ছি চলছে না। 

মিত্র বললো, না। খুব ভালো চলছে। 

উপমা কিছু বললো না আর। 

মিত্র দাঁড়িয়ে চা খেয়ে শেষ করে নিলো। ততক্ষণ উপমা উপযাচকের মতো দাঁড়িয়ে থাকলো। মিত্রর অস্বস্তি হলেও কিছু বললো না। বরং অন্যদিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতে শুরু করলো। তারপর যখন টেম্পুর দিকে যাবে মিত্র, উপমা তার পাশে পাশে আসতে শুরু করলো। সে মিত্রকে বললো, আপনাকে পাঠাও কল করে দেই ? মিত্র বললো, নো থ্যাঙ্কস। উপমা বললো, না আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি টেম্পুতে গেলে আপনার কোনো ক্ষতি হতে পারে। মিত্র বললো, আমার বিশ্বাস কোনো ক্ষতি হবে না। আর অ্যাকটা কথা, আপনি আমার সামনে আর কোনো দিন আসবেন না। আপনাকে দেখলেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। উপমা তখন বললো, আচ্ছা ঠিক আছে। মিত্র বললো, আর একটি কথা, অফিসে বারবার ঘুরঘুর করবেন না আমার কাছে। উপমা সায় দিলো। তারপর বললো, আমার একটি ইচ্ছা আছে। তা হলো, তোমার কোনো ইচ্ছাই পূরণ করবো না আমি। 

উপমা দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে মিত্রের কাছ থেকে চলে এলো। ফেসবুকে আনব্লক করার ব্যাপারে বলতে চেয়েছিলো সে। ভেবেছিলো অন্তত ঘর করতে না পারলেও ফেসবুকে তার পোস্টগুলো দেখে মন ভরাবে। কিন্তু মিত্রর ভেতর ‘নৈব চ, নৈব চ’ মনোভাব তাকে হতাশ করে তুললো। এখন অফিসে মিত্রের রুমেও প্রয়োজন ছাড়া যায় না। 


৪ 

এর মধ্যে অফিসে এক বড় কা- বেঁধে গেছে। এর আগে এডিটরের কাছে বলা হয়েছিলো মিত্রর প্রমোশনের ব্যাপারে। কিন্তু এডিটর দেখি, দেখবো বলে উড়িয়ে দিচ্ছিলো। সঙ্গনাথ আর উপমা এ বিষয়ে বারবার আলোচনা করছে। কিন্তু এডিটরের সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো কিছু হবে না। খবরেন্দ্রনাথকেও জানানো হয়েছে। মিত্র এসবের কিছুই জানে না। রোজকার মতো কাজ করে যাচ্ছে ও। ভারত আর চীনের মধ্যে পূর্ব লাদাখের সীমান্তবিরোধ নিয়ে আজ মস্ত রিপোর্ট লিখতে হবে। তিন শ’ শব্দ বেঁধে দেয়া হলেও লিখে ফেলেছে পাঁচ শ’ শব্দ। এত শব্দের মধ্যে রিপোর্ট ছাপার উপযোগী নয়। তাই সে শব্দ কমাতে শুরু করেছে। কিন্তু এ নিউজে তো সবটাই দেয়া লাগবে। সে তুলনায় পত্রিকায় স্পেস নেই। আজ ইন্টারন্যাশনাল পেইজে তিনটে বিজ্ঞাপন আর একটা বিশ্লেষণী মত ছাপা হচ্ছে। বিশ্লেষণী মত যিনি লিখেছেন, তিনি স্বনামধন্য কলামলেখক অরুণেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ। তার লেখায় শব্দ আছে আটশো। আবার ছোট দুই বোনের রিপোর্টও যাচ্ছে। তাই শব্দ তাকে কমাতেই হবে। খবরেন্দ্রনাথই মিত্রকে বলে দিয়েছে এসব। 

রাতে এডিটর এলে আবার মিত্রর প্রমোশনের বিষয়টা তোলা হলো। সঙ্গনাথ আর উপমা এডিটরের সঙ্গে বসেছে। আজ মনে হচ্ছে এডিটর ফাইনাল কিছু বলবে। এর মধ্যেই মিত্র রিপোর্টটা সার্ভারে রেখে দিয়েছে। খবরেন্দ্রনাথ ওটা এডিট করছে। মিত্র গল্পগুজব করে না। কম্পিউটারে লেখালেখি করছে। হঠাৎ করে উপমা তার কাছে এসে বললো, এডিটর একটু ডাকছে। মিত্র মুষড়ে গেল। ভাবলো লেখার ব্যাপারে হয়তো। গিয়ে দেখলো সঙ্গনাথও আছে সেখানে। মিত্র এডিটরের সামনে বসলো। উপমা ওর পাশে বসলো। এডিটর বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর মিত্রর প্রমোশনের বিষয়টা জানিয়ে দিলো। তাকে শিফট ইনচার্জ হিসেবে রাখা হবে। মিত্র অবশ্য ভীষণ খুশিই হলো। এবার হয়তো বেতন কিছুটা বাড়বে। এর পেছনে যে উপমা সবসময় প্রস্তাবক হিসেবে ছিলো তা মিত্রকে জানতে দেয়া হলো না। 

৫ 

মিত্রকে পাওয়ার জন্য উপমার এই সংগ্রামে ভাটা পড়ে গেছে। ডিক্টেটরিদের পন্থাবলম্বন করেছে মিত্র। উপমা অফিস শেষ করে আর মিত্রর সঙ্গে দেখা করে না। দেখা হয়ও না। মিত্র বোঝে নি কেন উপমা তাকে চেয়েছিলো। আর তার প্রমোশনের পেছনে উপমা কীÑই বা করেছে। 

উপমা এখন এ পত্রিকা ছেড়ে দিয়েছে। এখন একটা রেডিওতে নিউজ হেডের কাজ নিয়েছে। মিত্র অবশ্য এখনও এখানকারই শিফট ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। তা ছাড়া উপমার স্বামী উৎপল একটা ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে। মিত্রর বোনেরও বিয়ে হয়ে গেছে। মিত্র এবার ঈদে বাড়ি যাবে না। কারণ ঈদের পর ব্যাংকের পরীক্ষা আছে। ছুটিতে একটু পড়াশুনা করে নিতে চায় সে। শিফট ইনচার্জ হয়ে আর কত দিন চলবে ? 


৬ 

ঈদের পর প্রথমবারের মতো অফিসে এসেই হুট করে তার পুরনো এক বান্ধবীকে দেখতে পেল। কেউ নেই অফিসে। একটু পর সবাই আসবে। ভোরবেলায় এই মেয়ে এখানেই বা কি করছে একা একা ? নাকি সে ভুল দেখছে ? ভুলই হবে। সে তার টেবিলে বসলো। কিন্তু তার ভুল ভাঙলো যখন মেয়েটি তাকে সশব্দে বলে উঠলো, আসসালামু আলাইকুম। মিত্র অবশ্য ওয়ালাইকুম আসসালাম বলে নিজের কাজের দিকে গেল। 

অপ্সরা নামের ওই মেয়েটি মিত্রর সঙ্গে ঢাবিতেই পড়েছে। ঈদের মধ্যে পত্রিকার অনলাইন বিভাগ খোলা ছিলো। তখনই চাকরি হয়েছে তার। অফিসে সারাক্ষণ হিজাব পরে থাকে সে। রঙ্গলাল বাবুকে অবশ্য এতে বিরোধিতা করতে দেখছে মিত্র। কিন্তু কাজী মুস্তাফা এ নিয়ে অফিসে শোরগোল বাঁধিয়ে দিচ্ছে। কয়েকদিন ধরেই রঙ্গলাল ওকে খেপাচ্ছে। মিত্রর পুরনো বান্ধবী বলে একটু গায়ে লাগছে তার। কিন্তু মিত্র এসবের মধ্যে তেমন থাকে না। যে যেমন থাকে, থাকুক, তার কি আসে যায়! উপমার মতো অপ্সরাও মিত্রকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু মিত্র কি তাকে ভালোবাসে ? 

তার এত ভালোবাসার সময় নেই। অপ্সরা চাইছে, প্রত্যেক ছেলেরই মেয়েদের প্রতি টান থাকে। হয়তো মিত্র নিজে থেকেই বলবে ওকে। এ অপেক্ষায় আছে। কিন্তু মিত্রর এসবের চিন্তা নেই। সে এখন অফিসে কাজের ফাঁকে বিসিএসের পড়াশুনা করে। সামনে শনিবার ও রোববার ছুটিও নিয়েছে বিসিএসের জন্য। ব্যাংক জবে রিক্রুটমেন্টে ও টিকে গেলেও বেতন খুব বেশি না হওয়ায় ও না করে দিয়েছে। বিসিএসটা টিকে গেলেই কেল্লাফতে। তারপর এই প্রফেশন থেকে সরে যাবে। ওদিকে খবরেন্দ্রনাথও ভাবছেন রিটায়ারের কথা। সঙ্গনাথও তাই ভাবছেন। অমলচন্দ্র তালুকদারের সঙ্গেও বনিবনা হচ্ছে না মালিকপক্ষের। দ্রুত তাকেও ছেড়ে দিতে হতে পারে এ পত্রিকা। মালিকপক্ষ এখানে নতুন লোক নিতে চাইছে। পত্রিকার আউটলাইনও নতুন করে করতে চাইছে। সকলের বেতনও সাত মাস ধরে আটকে আছে। কর্মীরাও বেশ ক্ষুব্ধ মালিকপক্ষের ওপর। তবে এখনই আন্দোলনে নামছে না তারা। ওদিকে মালিকপক্ষের ব্যবসায়ও ভালো যাচ্ছে না। 



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট