নিজস্বগল্প : পাণ্ডুলিপির কান্না !

 


পাণ্ডুলিপির কান্না 

মজনু মিয়া 


কারো মিষ্টি কথায় কান দিতে নাই, কথাটা শুনেছিলাম কিন্তু মনে ছিলো না ভেতরের আকাঙ্খা এতোটা প্রবল ছিলো যে, নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। 

শাহ আলম সরকার, আমার বন্ধু রনজিতের বন্ধু। সে গান লেখে সুর করে গান গায় এবং কি গীতিকার হিসাবে দু-এক জন লোককে তালিকাভুক্ত করিয়ে দিতে পারে, এমন কথা বলেছিলো আমার বন্ধু রনজিত। আমার দীর্ঘ দিনের আশা গীতিকার হবো, বন্ধুর কথায় মন গলে গেলো। বললাম বন্ধু তুমি ভালো করে শোনো। কি কি লাগবে?  তখন সব কিছু বন্ধু রনজিত শুনলো এবং শাহ আলম সরকারের ফোন নম্বর সহ আমার সাথে আলাপও করিয়ে দিলো। সে পুরো নাম বলল, আলহাজ শাহ আলম সরকার। এমন নাম মুখে দাড়িওয়ালা ছবি আর কথা এতো মিষ্টি মধুর যে, যে কেউ তার কথায় রাজি হয়ে যাবে। 

যাইহোক, বন্ধু রনজিত কে, সে বলল, টাকা লাগবে, আমি চাই না,, যাদের দিয়ে কাজ করাব তারা খালি খালি কাজটা দ্রুত করে দিতে চায় না। পনেরো বিশ হাজার টাকা লাগবে। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, এতো টাকা পাব কোথায়? কিছু দিন চলে গেলো। আবার একদিন বন্ধু রনজিত ফোন দিল, কি খবর তোমার? বললাম, এতো টাকা নাই। পাঁচ দশ হাজার হলে না হয় কষ্ট করে জোগার করে দেবো। তখন বন্ধু রনজিত বলল, আচ্ছা আমি আলাপ করে দেখব। পরের দিন বলল, মজনু তোমার জন্য,, বিশেষ অনুরোধে শাহ আলম ভাই দশ হাজার টাকায় করে দেওয়ার জন্য রাজি হয়েছে দু এক দিনের মধ্যে পঁচিশ টি গান সহ অন্য কাগজপত্র টাকা নিয়ে জমা দিয়ে আসতে হবে, উত্তরার শাহ আলম ভাই র পত্রিকা অফিসে। 

ঠিক মতো কাগজ পত্র ও এনজিও থেকে দশ হাজার টাকা তুলে সাথে নিয়ে চললাম। শাহ আলম এর ফোনে যোগাযোগ করে। দেখা হলো, কথায় মন গলিয়ে দিলো, পারে তো সাথে সাথে গীতিকার হওয়ার চিঠি টা দিয়ে দেয়!  সব দিয়ে আসলাম, বলল, তিন মাসের মধ্যে চিঠি চলে যাবে। 

ছয় মাস চলে গেলো, চিঠি আসে না, ডাক পিয়নের কাছে খবর নেই, বলে না নাই চিঠি!  এক বছর চলে গেলো, ফোন দেই, বলে হবে, আমি অফিসে গিয়ে চিঠি নিয়ে আসব। দু বছর তিন বছর আর চিঠি এলো না! এখন ফোন দিলে ধরে না! বন্ধু রনজিত কে বললে ফোন দেয় কথা বলে ছলাকলায় নানান কথা বলে সান্ত¡না দেয়। সাত বছর পর, দেখি অনেক বন্ধু যারা আমার ফেসবুক বন্ধু তাদের অনেকে গীতিকার হয়েছে পোস্ট করেছে তারা। মনের ভেতর চিৎকার দিয়ে উঠলো, আমি গীতিকার হতেও পারলাম না একটা বছর ধরে এনজিও ঋণ শোধালাম আবার টাকাটাও মাইরা দিলো!!

এখন আর আমার সাথে ফোনে বা ফেসবুকে কথা বলে না! টাকা মানুষ কে অমানুষ করে দেয়, এই দশ হাজার টাকা দিয়েই আমি মজনু বুঝলাম। বন্ধু রনজিত মুখ কালা করে থাকে সেও আহাম্মুক হয়ে গেছে,, লোভ হাজী কাজী যাই বলুন কাউকে ছাড় দেয় না!

আমার পান্ডুলিপি আজও বাক্স বন্ধ হয়ে কেঁদে ফেরে!!

হৃদয়ের কান্না লুকাতে মাঝে মধ্যে নিজেকে ধিক্কার দেই, ছিঃ ছিঃ টাকা! একজন হাজী মুখে দাড়িওয়ালা বয়স্ক লোক এক পা কবরে চলে গেছে নাতী নাতনীর মুখ দেখেছে পত্রিকা অফিস করেছে, কুসুম কলি নামে একটা সংগীত একাডেমি করেছে অথচ একজন গরীব কবির কয়টা টাকা নিয়ে কাজ করে দেয় না, টাকা ফেরতও দেয় না কথা বলা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়!!!

একটা কথা জেনেছি তাহলো,, গীতিকার হতে টাকা লাগে না,, জানলাম কিন্তু আমার লোকসান দিয়ে তারপর,, আমার গল্প যারা পড়লেন তাদের মধ্যে কেউ যদি এমন কোনো ইচ্ছে মনে পোষণ করেন,, তবে মনে রাখবেন টাকা পয়সা দিয়ে কখনো নয়!! আমার মতো বোকামি কভু নয়।


মির্জাপুর , টাংগাইল



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট