একটি জীবননাশের গল্প !

 



একটি জীবননাশের গল্প

অনুপম হাজারী


মিতুর কবরের পাশে মারুফ হাঁটুগেরে বসে আছে। দু’হাত মেলে দিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে বেশ খানিকক্ষণ ধরে অঝোরে কাঁদছে। ক্লান্ত দু’চোখে সব কিছু যেন ঝাপসা, তবু মনের মধ্যে অনুশোচনার অনুভূতিটা বেশ স্পষ্ট। মিতুর জন্য আল্লাহর কাছে বিচার চাইতে চাইতে সেদিনকার কথাগুলোই একের পর এক মনে পড়ে যাচ্ছে মারুফের। 

মারুফ- হ্যালো।

মিতু- হ্যাঁ, হ্যালো কেমন আছ? 

মারুফ- জানি না, তুমি এখন পার্কের পাশের কাজী অফিসটাতে চলে আসতে পারবে? আজকে বিয়ে করব।

মিতুর বোধহয় ব্যাপারটা মজা লেগেছে, মজা নিয়েই সে বলল,

-অবশ্যই পারব, তা আজকে বিয়ে হলে কালকে কি হবে?

মারুফ ভীষণ গম্ভীর। সে জানে মিতু এটা বিশ্বাস করছে না, মজা ভাবছে, তবু সে কিছু বুঝানোর চেষ্টা করছে না, জবাব দিয়ে যাচ্ছে। কিছু বিষয় সে নিজে বুঝে নিক, তাতে তার আগ্রহ কতটুকু সেটা প্রকাশ পাবে।

-কালকে ফুলশয্যা।

-পরের দিন?

-সংসার।

এবার মিতু কিছুটা গম্ভীর হয়ে এল, সে বোধহয় বুঝতে পারছে। 

-তা কতদিন চলবে সে সংসার? 

-আজীবন।

-তুমি কি সত্যিই আজকে বিয়ে করার জন্য বলছ?

-বলছি, আসতে কতক্ষণ লাগবে বলে দিও, সবকিছু হাতের নাগালে করে রাখতে হবে।

-ঠিক আছে, আমি তাহলে ১১ টা নাগাদ পৌঁছে যাব। তুমি সব ঠিকঠাক করে রেখ।

-রাখব।


মিতুর তৎক্ষণাৎ সাড়ায় মারুফের বুকের বড় একটি চাপ যেন সরে গেল। ফোন কেটে সে বড় একটা দম নিল। যাক, এবার বাবা রাজি না হলেও তার আর দরকার নেই। দেড় বছর ধরে সে বেসরকারি একটি অফিসে মোটামুটি ভাল বেতনে চাকরি করছে, অল্প কিছু টাকাও জমিয়েছে ,তবুও আজ দেড়টা মাস ধরে তমার ব্যাপারে বলে বলেও বাবাকে কোনভাবেই রাজি করানো যাচ্ছিল না। তার সেই এক কথা, মেয়ে বেশি লম্বা, তার উপর হয়েছে সুন্দর আর বড়লোকের মেয়ে, এমন মেয়ের জমিনে পা পড়বে না, শ্বশুর-শাশুড়িকে বাঁকা বাঁকা কথা শোনাবে, কোনভাবেই রাজি হওয়া যায় না। না! আর ধৈর্য্য ধরা যাচ্ছে না, পালিয়েই বিয়ে করে নিতে হবে। আজ বাবাকে দেখিয়ে দিতেই হবে তার ভালবাসায় কতখানি জোর আছে, ঠিক কতখানি জোর, আর বাবার পুরনো দিনকার ধারণাটায় কতখানি ভুল আছে, ঠিক কতখানি ভুল! ভালবাসাটাই এখন ইম্পর্টেন্ট, কোন মিথ্যা অহংকার না। 


মিতু সেদিন নিজের মায়ের লাল বেনারসিটি পড়ে পার্কে হাজির হয়েছিল, কাজী অফিসে ঢুকল মারুফকে সাথে নিয়েই। তারপর বন্ধু-বান্ধব আর কিছু পরিচিতজনদের উপস্থিতিতে মারুফ আর মিতুর বিয়ে হয়ে গেল। তখন সবার মনে খালি একটাই দোয়া ছিল, ‘দুজনের সংসারটা অনেক সুন্দর হোক!’ সে সৌন্দর্য্য যে কোথায় গিয়ে শেষ হওয়ার ছিল তা কি কেউ আন্দাজ করতে পেরেছিল?


সেদিন বিয়ের পর মারুফ মিতুকে নিয়ে নতুন বাসায় উঠল, তাদের বাসর হল, নতুন বাসায় তাদের নতুন সংসার শুরু হয়ে গেল। কোন ঝামেলা ছিল না, মিতুর পরিবার মিতুকে খুঁজে পেয়েও কিচ্ছুটি বলল না, তাদের একমাত্র চাওয়া মেয়েটা সুখী হোক। মারুফের অফিস নিয়ম মতোই চলতে থাকল। সকালে অফিস, রাতে বাসায় ফেরা, তারপর মিতুর সাথে কখনো ছাদে বসা, ছাদে বসে ঠান্ডা হাওয়ায় আকাশ দেখা, কখনো বা খুঁনসুটি আর গল্পে মজে থাকা, কখনো কখনো শখের বশে দু’জনে একসাথে রান্নাবান্না করা, ছুটির দিনে ইচ্ছেমতো জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, সব মিলিয়ে দুজন মিলে স্বপ্নের মতো সুখী একটি সংসার পাতা।

সুখের ঘোরেই যখন দুজনের সুখী সংসারটা চলছিল তখনই বিশ্বব্যাপী একটু একটু করে গুঞ্জন শুরু হচ্ছিল নতুন এক বিপর্যয়ের। যে বিপর্যয়ের কথা মানুষ আগে শোনেনি, যে ঝড়, সর্বনাশা ঝড় মানুষ আগে দেখেনি, যে দিনের কথা মানুষ আগে কখনো ভাবতে পারে নি এমন দিন, কালো একটি ছায়া ধেঁয়ে আসছিল সবার জীবনের দিকে, যে কালো ছায়া এমনই হাজার-লক্ষ বা হয়ত কোটি কোটি সংসার, স্বপ্নকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। সে গুঞ্জন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল। সে গুঞ্জনের নাম দেয়া হল নভেল করোনা ভাইরাস, একটি ভাইরাস যেটা খুব সহজেই মানুষ থেকে মানুষে ছড়াবে আর একেকজন মানুষকে একেকটি যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু দেবে।


মাস কয়েক পর টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মানুষের গল্প-আড্ডা সবখানেই এ ভাইরাসের খবর, মূলত এ খবরটাই শুধু শোনা যেতে লাগল। কিছুদিন পর সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে দিল, সেনাবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সে নির্দেশনা অনুযায়ী  মানুষকে ঘরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে লাগল। কয়েক মুহূর্তে আমাদের পরিচিত পৃথিবীটা পুরোপুরি পাল্টে গেল যার কথা মানুষ আগে কল্পনা করে নি, এ যেন ভিন্ন এক গ্রহ যেখানে বাঁচতে হলে এভাবেই বাঁচতে হয়। মারুফদের অফিসটাও বন্ধ ঘোষণা করা হল। তবে মারুফের চিন্তা ছিল না। কয়েকমাস বন্ধ পড়ে থাকলেও তার খেয়ে পড়ে চলতে সমস্যা হত না,  চিন্তা যা ছিল তা শুধু এই যে তার চাকরির নিশ্চয়তাটা তারা দিতে পারল না। হতে পারে সব স্বাভাবিক হয়ে গেলে তাকে নতুন চাকরি খুঁজে দেখতে হবে। আরেকটা চিন্তা, আরেকটা! সে চিন্তা সকলের, তার যত আপন প্রিয় মানুষ, তারা সবাই এ মহাবিপর্যয় কাটিয়ে টিকে থাকতে পারবে তো? একদিন মিতুর সাথে বসে রাতের খবরটা দেখতে দেখতেই মারুফের মন কেমন করে উঠল। বাবার সাথে রাগ করে কথা বলা হয় না অনেকদিন, আজকে একটা ফোন দিয়েই দেখা যাক।

-আব্বা!

মারুফের গলা শুনেই তার বাবা যেন একেবারে আবেগাপ্লুত হয়ে উঠল। হওয়ারই কথা, বিয়ের পর পরিবারের সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল মারুফ, হঠাৎ করে যোগাযোগ করে বসলে বাবার মনে আবেগ তো উতলে উঠবেই।

-বাবা রে, কেমন আছিস বাবা?

-ভালো আছি আব্বা, তোমরা কেমন আছ?

-আল্লাহ্ ভালো রাখছে। বৌমা কেমন আছে রে? 

-আছে, ও ভালো আছে।

-তোরা তো একা থাকিস, দেখছিস তো দেশের কি অবস্থা, আশেপাশে কেউ না থাকলে দরকারে কেউকে হুট করে পাবি না, চলে আয় না বাবা।

-আব্বা এখন তো আর সম্ভব না, সবকিছু বন্ধ। তোমরা সাবধানে থেকো, বাইরে যেও না, বাজার লাগলে আবিরকে বলো, ও অনলাইনে অর্ডার করে নিবে। আর বাসায় সবাইকে বলবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে।

-করতেছি বাবা, সেভাবেই করতেছি, তোরাও সাবধানে থাকিস, আর কোন দরকার হলে ফোন করিস, কোন না কোন ব্যবস্থা হবে।

-ঠিক আছে আব্বা, আম্মা কোথায়?

-তোর আম্মা ঘুমায়, দাঁড়া ডাকি।

-না না আব্বা, থাক, পরে কথা বলে নিব। আম্মাকে আমার সালাম জানিও, আর আবিরকে বলো এ সুযোগে আউটসোর্সিংটা শেষ করে নিতে।

-বলব। শোন বাবা, একটা কথা বলি, বৌমার সাথে বিয়ের জন্য আমাদের মত ছিল না ঠিকই, কিন্তু ঐ মেয়েকেই যদি তোর বিয়ে করার ছিল সেটা আমাদের তখন বুঝাতেই পারতিস, একটা মত বজায় রাখার জন্য তো ছেলেকে ফেলে দিতে পারতাম না। তাই বিয়ের পর তোর ফিরে আসা উচিত ছিল বাবা। যাই হোক, যা হবার হইছে, তোর আম্মা নতুন বৌ ঘরে তোলার জন্য মুখিয়ে আছে, সবকিছু আগের মতো হলে বৌমাকে নিয়ে চলে আসবি, ঘরের বৌকে আর বাইরে রাখতে দেব না।


বাবার কথায় এমন মহাবিপর্যয়েও মারুফের মনে শান্তির একটা সজোর হাওয়া বয়ে গেল।

-ঠিক আছে আব্বা, তোমার কথা আর ফেলব না। যা করেছি তার জন্য ক্ষমা করে দিও।

-দিলাম বাবা, আর মন খারাপ রাখবি না, ভালো থাকিস।

-আচ্ছা আব্বা, তোমরাও সাবধানে থেকো।

-আচ্ছা।

-আচ্ছা রাখছি।


সেদিনের পর মারুফ আরো স্বস্তি, আরো বিশ্বাস নিয়ে দিন কাটাতে লাগল। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে, সব ঝড় থেমে যাবে, একদিন সবাই একই ছাদের নিচে বসে গল্প করবে, এক টেবিলে বসে ভাত খাবে, আর তার মা কথায় কথায় শুধু নতুন বৌয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে, আর রাতে খাওয়ার পর শুতে গিয়ে মারুফের বুকে মুখ গুঁজে মিতু ইচ্ছেমতো কাঁদবে, তার জীবনের প্রবল সুখের কান্নাটি কাঁদবে।


দিন যেতে লাগল, সপ্তাহ কেটে গেল, কেটে গেল একটি মাসও। ভালোই হত যদি এমন করেই কয়েকটা মাস কেটে যেত, তারপর সব ঝড় থেমে গেলে মারুফ বৌ নিয়ে তার পরিবারে গিয়ে উঠত, আপন মানুষগুলোর সাথে গিয়ে মিশত। কিন্তু মাস কেটে যাওয়ার পরের কয়েকটা দিন যেন আর কাটতে চাইল না। মিতুর একটা সমস্যা ছিল। তার হঠাৎ হঠাৎই শ্বাসকষ্ট উঠে যেত, বিশেষ করে ধূলো-বালি কিংবা রাঁধতে গিয়ে পোঁড়া মশলার ধোঁয়াটা সহ্যই হত না একেবারে। অ্যাজমার সমস্যাটা চরমে গিয়ে উঠত। কিন্তু তার জন্য মিতুর কখনো দুশ্চিন্তা হয় নি, ইনহেলারটা তো সাথেই থাকে সবসময়। একটা চাপ দিয়ে শ্বাসের সাথে ওষুধটা টেনে নিলেই সব ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু এমন বন্ধের মধ্যে ইনহেলারের ভেতরের ওষুধটা গেল শেষ হয়ে। মারুফকে পাঠাবে পাঠাবে করেও মিতু পাঠালো না বাইরে, ভাবল কয়েকদিন পর আবার বাজারে গেলে ফর্দের সাথে ইনহেলারের কথাটাও তুলে দেবে একপাশে। দিন কয়েক কেটে গেল, এদিকে মিতুর শ্বাসের সাথে সাথে সাঁ সাঁ শব্দ হওয়াটাও শুরু হয়ে গেল। এখনি যদি নতুন একটা ইনহেলার এনে পাশে পাশে রাখা না যায় তাহলে বিপদ এই ঘটল বলে! মারুফ কিছু টের পেল না, মিতুও তেমন গুরুত্ব দিল না, তবু সেদিন শুতে গিয়ে মারুফকে একবার বলল,

-বাজারে গেলে একটা ইনহেলার নিয়ে এসো তো, আমার ওটা শেষ হয়ে গেছে।

-তোমার কি সমস্যা হচ্ছে নাকি? নইলে বলছিলাম কালই গিয়ে নিয়ে আসি।

-না হচ্ছে না, তবে মনে হচ্ছে যেন শ্বাস ছোট হয়ে আসছে। তুমি চিন্তা কোরো না, ওতে আমার অভ্যাস আছে। পরের বার বাজারে গেলে তখন আনলেই হবে।

-দেখছি।

মারুফ অবহেলা করল না, মিতুর কথায় ঠিক আশ্বস্ত হতে পারল না। পরের দিনই ইনহেলারের জন্য সে বেরিয়ে গেল। পথে দেখা হল তার বাসার জমিদারের সাথে।

-কই যাচ্ছ মিঞা?

-জ্বি, আমাকে একটু ফার্মেসীতে যেতে হচ্ছে। মিতুর কাল থেকে একটু শ্বাসকষ্ট লাগছে তাই।

কথা শোনামাত্রই জমিদার কিছুটা পিছিয়ে গেল। জেনে শুনেই যেন কথা বাড়ালো না আর, বলল।

-ঠিক আছে যাও, যাও।

মারুফ জমিদারের অবস্থা বুঝে সেদিন হেসেছিল ঠিকই, কিন্তু মনে একটু অস্বস্তিও হল। তবু বেশি কিছু না ভেবে সে ফার্মেসীর দিকে আগালো। দুর্ভাগ্যবশত তাদের এলাকার ফার্মেসীটা সেদিন খোলা পাওয়া গেল না। ফার্মেসীর মালিক করোনায় আক্রান্ত, কাজেই সেটি বন্ধ। এতদূর এসে কাজ না হওয়ায় মারুফ আর আগালো না। মিতু বলেছে দুয়েকদিন ইনহেলার ছাড়া থাকতে তার সমস্যা হবে না, কাল না হয় বাজারে যাওয়ার পথে কোন একটা ফার্মেসী থেকে কিনে নেওয়া যাবে! 


মারুফ সেদিন ফিরে গেল। কিন্তু বাসায় ফিরে মিতুর মুখের দিকে তাকিয়ে তার মন পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেল। মিতুর মুখ ভীষণ শুকিয়ে গেছে। তার শরীরটা মনে হয় খারাপ করতে শুরু করেছে। মারুফ বুঝতে পেরেছে যে সে ফিরে এসে আসলে ভুল করেছে, বড় ভুল। তৎক্ষণাৎ  সে আরেকবার বেরুতে চাইল কিন্তু মিতু হাত ধরে ফেলল। বাঁধা দিয়ে বলল,

-যাচ্ছ কোথায়?

-মিতু তোমার ইনহেলার এলাকার ফার্মেসীটাতে পাওয়া যায় নি, ভেবেছিলাম কাল বাজার করতে গেলে ওটাও নিয়ে আসব কিন্তু এখন বুঝতে পারছি সে অবহেলাটা করা ঠিক হয় নি, তোমার কষ্ট বাড়ছে,আমি এক্ষুণি গিয়ে অন্য দোকান থেকে নিয়ে আসছি।

-পাও নি! আচ্ছা থাক, পরে যেও। দুপুর হতে বেশি বাকি নেই, দুপুরের খাবারটা খেয়ে একটু বসে তারপর না হয় যেও! 

-যেতে হবে যখন এক্ষুণি গিয়ে নিয়ে আসি।

-আহা! দাঁড়াও না, একটু দেরি করে গেলে আমি মরে যাব না, খেয়ে কিছুক্ষণ পর বের হলে কিছুই হবে না।

-এমনভাবে বলছ কেন মিতু! আচ্ছা খেয়ে তারপর যাব।

-হুম, ঠিক আছে। এসে একটু ফ্যানের নিচে বস।


মারুফ বসল, হয়ত একটু অবহেলাই করল। কিন্তু সেদিন সে অবহেলার কত বড়, কত নির্মম মূল্য তাকে দিতে হয়েছিল সেটা মনে করতেই চরম অস্থিরতায় তার বুক চাপড়াতে ইচ্ছে করে। চাপড়াচ্ছে! হ্যাঁ এখনো মিতুর কবরের পাশে বসে মারুফ এলোপাতাড়ি তার বুকটা চাপড়াচ্ছে, পৃথিবীর যত কষ্ট সব যেন সে নিজের বুকে ধারণ করে নিতে চাচ্ছে। খুব জোরে চাপড়াতে চাপড়াতে মারুফের কাশি চলে এল, কাশতে কাশতে একটু ঝুঁকে সে পড়ে গেল, তারপর গা এলিয়ে মিতুর কবরের পাশে মাটিতেই শুয়ে পড়ল। তারপর.... তারপর আবার সে কঠিনতম, যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতির কথা ভাবতে লাগল।


সেদিন একসাথে ভাত খেতে বসে দুজন মাত্র কয়েকটা গ্রাসই মুখে তুলেছিল, অমনি একটা হট্টগোলে দুজনের কান বাজতে লাগল। মনে হচ্ছিল যেন বড় কোন মিছিল দূর থেকে কাছে চলে আসছে। মারুফ উঠে দাঁড়াল, দেখতে হবে এত হৈ-চৈ কিসের। দরজা খুলে সে বেরিয়ে এলো, বেরিয়ে এসে যে ভয়ানক দৃশ্যটি দেখতে পেল সেটি দেখার জন্য সে কোনভাবেই প্রস্তুত ছিল না। এরা করছে টা কি! মারুফের বুঝতে বাকি রইল না যে এই আতঙ্কের দিনে জমিদারকে মিতুর শ্বাসকষ্টের কথাটা বলে সে কত বড় ভুল করেছে। তার আভাস এবার কিছুটা পাচ্ছে। জমিদার কয়েকজন স্থানীয় লোকজন নিয়ে এসে অনেক হৈ-চৈ করে গলির মুখের গেইটটিতে তালা লাগিয়ে দিল। তার পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের প্রতিটি তলায় একটি করে গলি আছে, প্রতিটি গলির মুখে একটি করে গেইট আছে, কিন্তু তালাটা তিনি এই চারতলার গেইটে এসেই লাগালেন। রাকিব ছুটে গেল, ছুটে গিয়ে সে গেইটটা ধরতেই সবাই যেন একপ্রকার লাফিয়েই পিছিয়ে গেল। জমিদার বলে উঠল,

-ভয় পাইয়ো না মারুফ মিঞা, আমরা হইলাম সচেতন নাগরিক। ঢাকা থেকে যতক্ষণ টেস্ট করার লোক না আইবো ততক্ষণ তুমি বাইর হইতে পারবা না।

-কিসের টেস্ট! কিসের লোক!

-কেন? তোমার বৌয়ের না শ্বাসকষ্ট! কয়দিন ধরে শ্বাসকষ্ট? এতদিন পরীক্ষা করাও নাই ক্যা?

-নাজমুল সাহেব, আপনি যেরকম ভাবছেন সেরকম কিছুই না, এটা করোনা নয়। মিতুর অ্যাজমার সমস্যা আছে, মাঝেমধ্যেই শ্বাসকষ্ট ওঠে, এটা ওর আগে থেকেই ছিল। এর জন্য ডাক্তার ওকে ইনহেলার দিয়েছে আর সেটার জন্যই আমি ফার্মেসীতে গিয়েছিলাম, পাই নি। আপনি প্লীজ গেইটটা খুলে দেন, আমি গিয়ে নিয়ে আসি।

-ধুর মিঞা রাখো তো। এমন ভাব করছ যেন আমরা তোমারে বন্দি বানাইতেছি। বেশিক্ষণ তো না। কাল সকালে টেস্ট করার লোক আসা পর্যন্ত। এর মধ্যে আমরা কোনো সুযোগ নিতে চাই না। একটা রাত কিছু হইবো না, একটা রাত ঘরে থাকলে কেউ মারা যাইবো না।

রাগের স্বরে মারুফ বলে উঠল,

-যদি হয় সে দায় কি আপনি নেবেন!

-তুমি মিঞা কথা প্যাঁচাও ক্যা? ভাবছিলাম একবার কইলেই তুমি বুঝবা আর অপেক্ষা করবা। কিন্তু তুমি তো উল্টা আমার উপর দিয়া যাইতে চাও। এটা ঠিক না মিঞা, আমি ভালো মানুষ বইলাই বের কইরা না দিয়া টেস্ট করার জন্য অপেক্ষা করতে বলতেছি। আমি হইলাম গিয়া সচেতন নাগরিক, নির্দয় না।

-সচেতন নাগরিক! এর অর্থ বুঝেন আপনি! এমন সময়ে গাদাগাদি লোক নিয়ে এসেছেন, আর নিজেকে দাবি করছেন সচেতন নাগরিক! গেইটটা খুলে দিন, ওষুধটা আনতে না পারলে বড় কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে। নাজমুল সাহেব, অনুরোধ করছি।


কথা শুনে নাজমুল সাহেবের কথিত সচেতন জনতা আওয়াজ দিয়ে উঠল, নিশ্চিত না হয়ে কোনভাবেই বের হতে দেওয়া যাবে না। হ্যাঁ এরা সচেতনতার লেভেলধারী, যারা জানেই না সচেতনতা কি! যাদের অনেকের মধ্যেই মাস্ক, গ্লাভস্ পড়ার কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বালাই নেই। এরা ভাবতেও পারছে না যে এখানে কোনভাবে একজনও যদি সংক্রমিত থাকে তাহলে বাকিদের কি অবস্থা হবে, কতটা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে! নাজমুল সাহেব বললেন,

-এসব বলে আমার কাছ থেকে পার পাইবা না মারুফ মিঞা, তোমারে বাইর হইতে দেওন যায় না, নইলে বৌয়ের জন্য ওষুধ আনার নাম কইরা সবাইরে রোগ দিবা।


ঘটনার এ পর্যায়ে মারুফ হতভম্ব। এরা তো কিছুই বুঝতে চাইছে না, কি হবে এখন! মিতুর অবস্থা তো ভালো না, অপেক্ষা করার প্রশ্নই ওঠে না, এই মুহূর্তে অপেক্ষার অর্থ হতে পারে মৃত্যু। না! সেটা কোনভাবেই হতে দেওয়া যায় না। মিতুর প্রকৃত সমস্যাটা মারুফ আরো কয়েক ধাপ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করল। কিছুতেই কিছু হল না, বিশ্বাসও করল না, বুঝতেও চাইল না। ক্ষুব্ধ হয়ে মারুফ তখন গেইট ঝাঁকাতে লাগল, আর ক্ষেপে গিয়ে জমিদার বাসা ছাড়াবার হুমকি ধমকি দিয়ে দলবল নিয়ে চলে গেল, গেইটটা তবু খুলে দিল না। আশেপাশের লোকজন কেউ বেরই হল না, প্রতিবাদ তো দূরের কথা। তারা বোধহয় ভয়ে আছে যদি করোনাই হয়! 

ঘটনার আকস্মিকতায় মারুফ ভীষণ আতঙ্কিত, সে ছুটে গিয়ে বাসার ভেতর ঢুকল। মিতু খাবারের থালাটা সরিয়ে রেখে মুখ নিচু করে বসে আছে, ভীষণ মৌন হয়ে। মারুফ তার কাছে গিয়ে বসে পড়ল, অসহায় অপরাধীর মতো মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল,

-মিতু ওরা আমাদের আটকে দিয়েছে।

মিতু সঙ্গে সঙ্গে শব্দ করে কেঁদে উঠল, মারুফকে ভীষণ করে জড়িয়ে ধরল, তারপর গোঙাতে গোঙাতে বলল, 

-আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মারুফ, শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

মারুফ হঠাৎ মেয়েদের মতো গোঙিয়ে উঠল। ঐ অবুঝ, মূর্খ মানুষগুলোকে এখন কে বোঝাবে! যে কাজটি করে, যে জেদ ধরে তারা নিজেদের সচেতন প্রমাণ করার চেষ্টা করছে সে জেদ, সে কাজ কোন প্রাণ বাঁচাবে না বরং একজনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে। দিলও বটে। সেদিন সন্ধ্যার পর মীরার শ্বাসকষ্টটা প্রচন্ডরকম বাড়ল, মারুফের সামর্থ্য শুধু ছোটাছুটি, গেইট ঝাঁকাঝাঁকি, মাঝেমধ্যে চিল্লাচিল্লি এসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইল। মীরার জন্য এর চেয়ে বেশি কিছু করা গেল না, কেউ এসে একবার খোঁজ নিয়েও গেল না। মারুফের একবারের জন্য মনে হল নিজের বুক থেকে ফুসফুসটা খুলে সে মীরার বুকে লাগিয়ে দেয়, কিন্তু সেটা সম্ভব হল না। সম্ভব হলে বোধহয় সে সেটাই করত, নিজের প্রাণ যাওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও। এ দৃশ্য চেয়ে থাকার মতো নয়, এ দৃশ্য সহ্য করার মতো নয়। মারুফ কি করবে বুঝতে পারছিল না, কিছু করারও হয়ত ছিল না, তার চিন্তা-ভাবনা সব এলোমেলো হয়ে এল। একে-ওকে, অনেককেই ফোন করল, কিন্তু কাছাকাছি কেউ না থাকায় তৎক্ষণাৎ কোন সাহায্য সে পেল না, অপেক্ষায় রইল কখন কেউ একজন ইনহেলার নিয়ে এসে তার হাতে দেবে, কখন তার ভেতরের জীবন বাঁচানোর ওষুধ মীরার ফুসফুসে ঢুকবে, কখন মীরার বুকের চাপটা আবার বুকেই মিলিয়ে যাবে। কাঁদো কাঁদো গলায় মারুফ মীরাকে সাহস দিল,

-মীরা একটু অপেক্ষা কর, বাবাকে ফোন দিয়েছি। উনি আবিরকে নিয়ে আসছেন, যত রাতই হোক তিনি একটা ইনহেলার নিয়ে চলে আসবেন, একটু অপেক্ষা কর।

মীরা কোন সাড়া দিতে পারল না, তার হাত-পা ছাড়া। মারুফ আরেকবার গোঙিয়ে কেঁদে উঠল, 

-মীরা, এই মীরা, তুমি কিছু বলছ না কেন!

মীরা তবু কিছু বলছে না, বলার শক্তিটাই যে আর থাকছে না। পুরো শক্তি তার ঐ শ্বাস নিতেই চলে যাচ্ছে, তবু যদি শ্বাসটা পুরোপুরি নেওয়া যেত! তাও নেওয়া যাচ্ছে না।

মারুফ ছুটে আরেকবার গেইটের কাছে গেল, কিছুক্ষণ চিৎকার করে সাহায্য চাইল, তারপর শেষটায় কোন ফল না পেয়ে গেইট ঝেঁকে দিয়ে চলে এল। মারুফ আবার বসে মীরার মাথাটা কোলে নিতেই মীরা একবারের জন্য কেমন কেঁপে উঠল। দুজন সে অবস্থাতেই ঘন্টাকয়েক বসে রইল, তারপর মারুফ লক্ষ করল মীরার শ্বাস আর অত জোরে চলছে না, বুকের চাপটা আর তেমন বোঝা যাচ্ছে না, গায়ের তাপটা আর স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না, ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। শ্বাস চলছে খুব ধীরে, এতই ধীরে যে খুব ভালভাবে খেয়াল না করলে বুঝাও যাচ্ছে না, কতক্ষণ পর পর একটা করে। মারুফ বেশ শান্ত স্বরে ডাকল,

-মীরা!

কোন সাড়া এল না। আবার বলল,

-তুমি কেন আমার এক কথায় সেদিন চলে এসেছিলে? 

মীরা একবার ‘উঁ!’ জাতীয় শব্দ করল, আর কিছুই শোনা গেল না। মারুফ বিলাপ করতে থাকল,

-আল্লাহরে! তোমাকে বিয়ের জন্য ফোন করার আগে এক্সিডেন্টে আমার মৃত্যু হল না কেন? সেদিন আমার এক কথায় তুমি চলে এসেছিলে কেন?

এভাবে আরো কিছুক্ষণ কাটল। তারপর দেখা গেল মীরার পুরো শরীরটা বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। হাত-পা টানটান হয়ে গেছে, পা দুটো একটি আরেকটির সাথে জড়াজড়ি খাচ্ছে, একেকটি শ্বাস নিতে গিয়ে মীরা একেকবার মাথা উঁচিয়ে কেঁপে উঠছে। মাথাটা মারুফের কোলে থাকছে না। এ দৃশ্য দেখে মারুফ পাগলপ্রায় হয়ে গেল। সে শুধু ‘মীরা’ ‘মীরা’ বলে চিৎকার করেই গেল। মীরা এভাবে কিছুক্ষণ কেঁপে কেঁপে উঠার পর হঠাৎ ধপাস করেই যেন পড়ে গেল। তারপর আর কোনো সাড়া পাওয়া গেল না, নীরবেই পড়ে রইল, একেবারে নীরব, নিস্তব্ধ, নিথর একটি দেহ। মারুফের বুঝতে কিছু বাকি রইল না, একদিন মারুফের এক কথায় যে মেয়েটি নির্দ্বিধায় ছুটে চলে এসেছিল তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য, তার জীবনসঙ্গী হওয়ার জন্য, তার হাজার ডাকেও সে আর সামান্য সাড়াটুকুও দেবে না। অনেক সাহস দিয়েও মীরাকে সে ধরে রাখতে পারল না, মীরা মারা গেল। ছোট ছোট ভুল, ছোট ছোট অবহেলা, কিছু মানুষের মূর্খতা কত সহজেই না কেড়ে নিল মীরার প্রাণ! মারুফ মীরার নিস্তেজ মাথাটিকে কোলে তুলে নিল, তারপর ঠাঁই বসে রইল পাথরের মতো। 


ঘন্টাখানেক পর গেইট খোলার শব্দ হল। বাবা এসেছে, মারুফের বাবা, হাতে ইনহেলার, বৌমার জীবন বাঁচানোর ওষুধ। কিন্তু জীবনই যে নেই, বাঁচাবে কী! খোলা দরজায় ঢুকে দেখা যায় একটি মানুষ পাথরের মতো স্তব্ধ, চরম বিস্ময় নিয়ে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে, তার কোলে নিস্তেজ একটি শরীর হাত-পা ছেড়ে শুয়ে আছে। মারুফের বাবা রহমত আলীর বুক ফাঁটা কান্না বেরিয়ে এল। মারুফ তখনো পাথর, তেমনি নিস্তেজ যেন তার প্রাণ থাকা শরীর প্রাণহীন শরীরের মানুষটির সাথে এক হয়ে মিশে থাকতে চায়।


মারুফ আর কিছু ভাবতে পারল না, অজ্ঞান হয়ে পড়ল। এটি তার নতুন একটি সমস্যা, হঠাৎ হঠাৎই অজ্ঞান হয়ে যায়, তারপর হুট করে জ্ঞান ফিরে আসলে আবুল-তাবোল বকে। এ সমস্যাটা প্রথমবারের মতো হয়েছিল সেদিন, যখন মিতুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য লোক এলো। মারুফ মাথা ঘুরে পড়ে গেল। তার বাবা ছেলেকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মিতুর লাশ নিতে কেউ বাঁধা দিল না, বাঁধা দেওয়ার মতো অবস্থাও তখন ছিল না। যে সন্দেহ, যে আতঙ্ক সবার মধ্যে সৃষ্টি হয়ে গেছিল তার শেষ না দেখে কেউ ছাড়ত না। একসময় রিপোর্ট এল, সেটা এল নাজমুল সাহেবের ঠিকানায়। তিনি বোধহয় একটু বাড়িয়েই বলেছিলেন, পরীক্ষার ফল নেগেটিভ শুনে খুব বিস্মিত হওয়ার ভান করে বললেন,

-এটা কেমনে সম্ভব! মেয়ের তো কয়েকদিন ধরে জ্বর, গলাব্যথা সবই ছিল। ওর স্বামী মারুফ কয়বার যে আমার কাছে জ্বর-সর্দির ট্যাবলেট নিতে আইছিল!

রিপোর্ট নিয়ে আসা লোকটি বলল, 

-তাহলে তো আপনারও টেস্ট করা উচিত।

-হ করমু নে।

নাজমুল সাহেবেরও টেস্ট করা হল, সাথে তার সঙ্গে সেদিন দলে থাকা কয়েকজন লোকজনের। দেখা গেল প্রায় সবার শরীরেই করোনা হানা দিয়েছে, সবার করোনা পজিটিভ। তাদের সচেতনতার ফল তারা পেল। কিন্তু মারুফ যা হারাল তার কথা সে ভুলতেও পারছে না, মেনে নিতেও পারছে না, কোনোভাবেই তা আর সহ্য করা যাচ্ছে না। সে ঠিক করল সে মারা যাবে, স্বেচ্ছায়। তবে মারা যেতে যেতেও যত পারে মানুষের সেবা করে যাবে। ভাবনা অনুযায়ী সে করোনা চিকিৎসার জন্য নিয়োজিত কিছু স্বেচ্ছাসেবকের দলে গিয়ে ভিড়ল। খামখেয়ালি, ক্ষত-বিধ্বস্ত মন নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করল করোনা রোগীদের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার। কিন্তু সে সেবা বেশিদিন আগাল না, তাকেও শেষমেষ করোনা পজিটিভ পাওয়া গেল। তাকে একঘরে করে দেয়া হল, মারুফ একা থাকতে শুরু করল, কিন্তু কোন স্বাস্থ্যবিধি, ডাক্তারের কোন পরামর্শ সে মানল না। তার যে মরে যাওয়াই ইচ্ছা। তার শরীরের অবস্থা খুব খারাপের দিকে গেল, বেঁচে যাওয়াটা এখন যেন একটা দুরাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই মারুফ আজ শেষবারের মতো মিতুর কবর দেখতে এসেছে, দেখতে এসে সেখানেই হুশ হারিয়ে পড়ে আছে। এ হুশ আর ফিরবে না, এ শরীরও আর নড়বে না, তার বুক মিতুর জন্য আফসোসে আফসোসে আর অস্থির হয়ে উঠবে না। ব্রেনস্ট্রোকে সে মারা গেছে, মিতুর মতো সেও পরপারে চলে গেছে, সেখানে কোন শুভক্ষণে হয়ত মারুফ-মিতুর ফের মিলন হবে! সেখানে থাকবে না কোন অজ্ঞতা, কোন মূর্খতা। যা থাকবে তা শুধু সুখ, শান্তি আর পরিপূর্ণতা, প্রাপ্তির পরিপূর্ণতা।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট