চোখে দেখা নীলকণ্ঠ !

 



চোখে দেখা নীলকণ্ঠ

শফিক নহোর 


ক.

আজ থেকে প্রায় সাতাশ আটাশ বছর আগে ফাগুনের একসকালে স্কুলে যাওয়ার পথে দেখলাম। পাঁচজন মানুষ বাঁশের সঙ্গে বেঁধে একটি মরা গরু নিয়ে যাচ্ছে।

তা দেখে গফুর ভাইকে প্রশ্ন করলাম, 

কথা প্রসঙ্গে বিভিন্ন কথা বলল, জানতে পারলাম। ফকির বাড়ির গাভিন গাই মরে গিয়েছে, তা বাড়ির পাশের হালটের দক্ষিণ দিকে চেয়ারম্যানর বাড়ি যাওয়ার পথে ফেলে দিতে যাচ্ছে ছোট জঙ্গলে।

আমি স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখি আকাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন নেমে পড়ছে। নখ দিয়ে ছিঁড়ে খেতে দেখে আমি অদ্ভুত ভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম। আশপাশের গ্রামের লোকজন শকুন দেখার জন্য ঢল নেমেছিল সেদিন। একদৃষ্টিতে চেয়ে দেখছে মানুষ কাচা গোসত কী ভাবে খাচ্ছে। কেউ কেউ হাহুতাস করছে; ‘আহা রে !' 

-তাই গরুটা মরে গেছে।

-কয়দিন পরেই বাছুর হত; ‘ধূর গাধা খালি বাছুর নাকি?' তার সঙ্গে যে দুই ভাঁড় করে দুধ দিত এই কালো গরুটা।

আমি আরোও দেখলাম মানুষও ঠিক এভাবেই গরুর গোশত খায়। 


ফকির সাহেবের স্ত্রী চোখের জলে ছোট্ট একটা নদী  বানাইয়া ফেলেছে। পুত্র সন্তান হারানোর মতো বিলাপ করে কান্নাকাটি করছে, পাশের বাড়ির সদ্য বিবাহিত বউ, বেটি মানুষ এসে শাড়ির আঁচল ধরে ফকির সাহেবের বউরে কইল,

-বু চুবি, বু চুবি, কাঁদিস না। আল¬øাহর মাল আল¬øাহই নিয়ে গেছে। মন খারাপ করিস না। দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে ফকির সাহেব এর স্ত্রী কইল,

-কত আউশ করছিলাম, গাই বিয়ান দিবার পর, গরুর দুধ দিয়ে খেজুর-গাছের রস দিয়ে পায়েস রান্না করে ছোট বেটির শুশ্বর বাড়ি পাঠাব।

-বু আফসোস করিস নি,

-আমা গের গাই বিয়াইছে, আমি তোর খেজুর গাছের রস দিয়ে পায়েস রান্না করে দিবো। এখন চাঁদির উপর একটু নারকেল তেল নিয়ে পুকুরে কয়ডা ডুব দিয়ে লায়া-নে।

-উঠ বু বেশি কাঁদলে তোর মাথা ধরবে। কাঁদিস না, পালের গরু মরলে তার ব্যথা আমি বুঝি। গরুডা দুই ভাঁড় করে দুধ দিত, সংসারে তোর কাছের মানুষ কই, এক ছাওয়াল বিয়ে দিচ্ছিস, শ্বশুর বাড়ি ছিড়াব্যাগ ভরছে, বাপ মা কি খাইয়া আছে খবর নেয় তোর লো বু।

-কালটি মাগি তো আমার কাছেই থাহে, ওর চোপা আমার দেখপির মনে কয়না।

-গোসল দিয়ে দুডি ভাত মুহি দে, সারাদিন না খেয়ে কি হয়েছিস যা বু উঠ।

-ইলো শিউলি মাগি, বড় দেহি একখান পান বানাইয়া নিয়া আয়, সঙ্গে একটু পানের পাতা নিয়ে আয়। ত, গোরে বাড়ির পর আসলাম; খালি মুহি ক্যামবা জানি লাগতেছে।


- সেলিনা বু , নে লো তোর পান। 

-ইলো মাগি তোর পেট সুন্নি দেখতেছি, আবার কিছু হবি না কি?’

-তোমার যে আবার কথা মিনসির বাড়ি আসার খোঁজ নাই, ছয় মাস। ইরাকের সাথে যুদ্ধ লাগছে, মিলিটারি গরে না কি এখন ছুটি দিচ্ছে না। নিয়ে ফেলাইছে খাগড়াছড়ি, চিঠির জন্ন্যি পিয়নের বাড়ি গেলাম সে নাকি বিলে গেছে ধান লাগাতি।

-তোর মিনসি কবে আসবিলো?

-সে আসলিই কি আর না আসলিই কী দুদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি আসলে, মায়ের পাছ ছাড়ে না। বাড়ির সাথেই তো তার আবার বোনের বাড়ি। আসার পথেই বোনরে নিয়ো আসবি, একপাল ছাওয়ালপল নিয়ে। মিনসি আসলে রাতে তো আর আমার কাছে থাহে না। বোনের কথা মায়ের কথা শোনে। 

চৈত্র মাসের শুকনা মাঠের মতো যৌবন শুকিয়ে গেছে মনের ধুলোবালির মতো উড়ে গেছে মনের আবেগ। সহজতর জীবনের বলিরেখার মতো ভাঁজেভাঁজে লুকিয়ে থাকে গোপন পারমাণবিক বিমান ধ্বংসের চূর্ণ কণিকার ধোঁয়া ধরা। অভিশপ্ত অনূঢার মত একদলা অবজ্ঞা।

উপেক্ষার দেয়াল ডিঙিয়ে ও অবহেলার লাল দাগ মুছে জীবনের কোনো সীমারেখা ভাঙতে পারিনি আমি। নিজের স্বামী তার পরিবারের কাছে বন্ধি আমি তো আমার শশুড়-শাশুড়ি থেকে আলাদা করতে পারি না। 

-আজ যাই লো, বেলা চলে গেল। এ বলে সেলিনা সেদিন শিউলির কাছ থেকে বিদায় নিল। গ্রামের অনেকই সে সময় সরকারি চাকরি করত, তবে গ্রামের নতুন বউদের মনের ভেতরে একধরনের কষ্ট ছিল! শশুর-শাশুড়ি তেমন একটা গুরুত্ব দিত না বউদের। ছেলেকে গরুর মতো সংসারের জন্য খাটতে হত, সংসারের সমস্ত দায়িত্ব চলে আসত; সে সময় যে চাকরি করত তার উপর। আর সবচেয়ে অনাদরে থাকত বাড়ির নতুন বউ। 


‘এই নাইমেন , এই না-মেন , চন্দ্রার যাত্রী নামেন।

গাড়ির ভেতর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বাসের  কন্ট্রাক্টরের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুমঘুম ভাব নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। আশপাশে তাকিয়ে দেখলাম কোথাও বসে একটু চা খাওয়া যায় কী- না। চা খেলে ঘুমঘুম ভাবটা কেটে যাবে। রাস্তার পাশের টং দোকানে বসে এক কাপ রঙ চা, খেয়ে উঠে দাঁড়ালাম।

একজন সুন্দরী বেটিরে দিকে চোখ আটকে গেল। পেছন থেকে একজন তাকে ধাক্কা দিচ্ছে, সামনে থেকে একজন টানছে, আর একজন বুকের উপর দিয়ে হাত দিয়ে বেটির হাত ধরবার চেষ্টা করছে, তখন ঠিক আমার স্কুলে যাওয়ার পথে ফকির সাহেবের মরা গরু ফেলানোর দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠল।

শকুন গুলো কী ভাবে গরুর দেহ থেকে গোশত ছিঁড়ে খাচ্ছিল। কিছুদিন আগে বাসের ভেতর রুপা নামের একটি বেটিকে গাড়ির ড্রাইভার ও কন্টাকটার মিলে ভোগ করেছিল। অজ্ঞান অবস্থায় বেটিকে ঘাটাইল জঙ্গলের পাশে ফেলে রাখতে দেখে একটি ছেলে কৌতূহল বশত ছবি তুলেছিল। চলন্ত গাড়ি থেকে এমন একটি বেটিকে মাটিতে ছুড়ে ফেলতে দেখে তার কিছুক্ষণ পরে কিছু মানুষ জড়ো হয়েছিল। তখন বেটি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে শান্তির খোঁজে সপ্তম আসমানে চলে গেছে। আর একজন  আমার হাতের পত্রিকার দিকে তাকিয়ে যতটুকু দেখা যায় পড়বার চেষ্টা করছে। বাঙালি সহজে পত্রিকা পড়বে না কিনবেও না। পথেঘাটে পড়ে থাকলে শকুনের চোখ দিয়ে দেখবে। এদের দেখেই তৃপ্তি। এই কাগজে কত খবর আসে প্রতিদিন। একজন চেয়ে বসল ভাই,

- দেখি খেলার পাতায় তামিম না কি আজ খুব ভাল করছে।’

ইচ্ছা না থাকা শর্তেও দিতে হল ভদ্রতার খাতিরে। মনের ভিতের থেকে কে যেন বলতে লাগল , এই ফকিন্নির বাচ্চা জামা কাপড় তো ভালোই গায় দিছে। হাতে দামি ফোন নিয়ে ছাতার ফেসবুক চালায়,তার না কি ডাটা না থাকায় নিউজ ফিডে যেতে পারছে না। ফ্রি কোনো বেটির সঙ্গে পিরিতের খায়খাতির মার্কা কথা বলে পটানোর চেস্টা করছে। ছেলে জাত। মানুষ যত সহজ ভাবুক এত সহজ না। ‘এরা মুতে চোখ ধোয়ানো মানুষ।’

আমরা এখন সহজে মানুষের কাছে সাধু সেজে যাই, নিজেরে ভেতরে যে মানুষত্ব পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে তা দেখছি না। শুধু অন্য মানুষের দিকে নজর। বিড়বিড় করে পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল, 

-ভাই রাস্তা জুড়ে দাড়াই আছেন ক্যান। একটু সরে খাড়ান। এতক্ষণে হুস আসল আমার। ভেতরে ভেতরে ঘুমের একটা ভাব রয়ে গেছে। 

-ভাই, আমি আর দেরি করতে পারছি না। পত্রিকাটি দিন। আমার গাড়ি চলে আসছে।  




খ.

সেলিনা চরিত্রের মানুষটি আমার পাশের বাড়ির। স্বামী সংসার নিয়ে তিনি এখন ঢাকার শহরে থাকেন। রংপুর শহরে তিনি প্রথম যখন বাড়ি করেন। বাবা যে খাটে ঘুমাতো তা নিয়ে যেতে সেলিনা ভাবি, যে পরিমাণ কুট কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন। ইরাক  আমেরিকায় যুদ্ধ করবোর সময় প্রেসিডেন্ট বুশ এমন কুট কৌশল অবলম্বন করেছিল না। বাবা মনে মনে  ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল। কিন্তু করো কাছে কখনো মন খুলে কিছু বলেনি। অন্য ছেলের বউ যদি কিছু বলে। বাবা শুধু সন্তানের সুখের জন্য ব্যস্ত ছিল। বউমার কুট কৌশলে পরিবারের সবার কাছে নিজেকে সে এমন একজন খারাপ মানুষ হিসেবে বহি প্রকাশ করেছে; এ বাড়ির কাকপক্ষী তো দূরের কথা। কুত্তাও তার মুখের দিকে তাকাবে না। ঢাকার শহরে এখন বাড়ি। বাবা মাটির নিচে চাপা পরে আছে বছর সাতেক হল। একদিনও মনের ভুলে বাড়ির সদর দরজায় বউকে নিয়ে বাড়ি আসা ত দূরের কথা ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সে নষ্ট করছে একের পর এক কুট কৌশলে।


সোনালি বাড়ির উঠোনে আগুনের স্তুপ হৃদয়ে নাড়া দেয় গভীর থেকে। বুকের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে হাজারো সাজানো স্বপ্ন মৃত শামুকের মতন পড়ে থাকে বিস্তৃত মাঠ জুড়ে। হালচাষের লাঙলের ফলার মতো বুকে দাগ কেটে যায় প্রতিনিয়ত। সেলিনা ভাবির কুট কৌশলে।  আত্মীয়স্বজন ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ছিল। কেউ কী সেচ্ছায় নিজেরে খারাপ মানুষ হিসাবে দাঁড় করাতে চায়? হয়তো কখনো চায় না। চাওয়া বেড়ে গেলে হয়তো কষ্ট বা ব্যথা বেড়ে যায়। সংসারের প্রতি সেলিনা ভাবির  প্রেম ছিল ঘৃণ্যতম ভাবনার এক বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল তার প্রত্যেকটি আচার-আচরণে। শহরমুখী হয়েছিল সেলিনা ভাবি।  গ্রাম, গ্রামের মানুষ, বাড়ির সদর দরজা তার কাছে সব সময় মনে হত জঙ্গল। গ্রামের প্রতি ঘৃণা থেকেই পরিবার ও আত্মীয়স্বজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখলেও তা ছিল শুধুই মাত্র মানুষ দেখানো মেকি সবকিছু।

একটা সময় তার আলিশান বাড়ি হয় রাজধানীর বুকে একাধিক। সেখানে সুখের শহর গড়ে উঠবার কথা হলে দাবানল বহমান ছিল মনের গহিনে। সংসারের কোনো মানুষকে মা-বাবা, ভাইকে অবহেলা করে নিজে কখনো সুখি হওয়া যায় না। চাকচিক্য অভিজাত্যের ভেতরে নিজে সে কথা নিশ্চয়ই ভুলে গিয়েছিল। একবিন্দু অনুসূচনা তার ঠোঁটের কিণার দিয়ে উচ্চারিত হয়নি কখনো। 


গ.

বিশাল জমিদারি ফকির সাহেবের কিন্তু এ সম্পত্তি ভাগের জন্য ছেলের বউ রাত নেই দিন নেই। জমি ভাগের জন্য একটা সময় মরিয়া হয়ে ওঠে। শকুনের মতন সামনে পেলেই বুঝি ছিঁড়ে খাবে এ সংসার এ সংসারের মানুষকে।

‘মনের ভেতরে ঘৃণা ঢুকে গেলে মানুষকে খেয়ে ফেলতে পারে মানুষ।’ 

শিউলি এখন ঠিক তেমনটি হয়েছে। একটা সময় স্বামী সংসার, শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কাছে এমন হয়েছিল স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়। চলে যাওয়ার পরে সে বুঝতে পারে মা হতে চলছে। তখন না ফিরে যেতে পারছে না পেটের? ভেতরের মানুষটাকে বড় করতে পারছে। দিনদিন পেটে ভেসে উঠতে লাগল, মানুষের চোখ শকুনের চোখের মত পেটের দিকে তাকিয়ে থাকতে লাগল, একটা সময়। লোকজন দিয়ে সমঝোতা করবার একটা মাধ্যম খুঁজে বের করবার জন্য চেষ্টা করে শেষ অবদি ব্যর্থ হয়েছিল শিউলি।

অনেক দিন হয়ে গেল। শ্বশুর বাড়িতে কেউ কখনো খোঁজ নেয়নি। স্বামী হয়তো চক্ষু লজ্জায় কখনো কারও কাছে কিছু খুলে বলেনি। আষাঢ় মাসের বৃষ্টির দিনে শিউলির কোল জুড়ে সুজন আসে। সেদিন রাতে এমন বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। মনে হয়েছিল আকাশ ফুঁটা হয়ে গিয়েছিল। কাঁচা রাস্তায় কাদা মাড়িয়ে দাই বেটিকে আনতে যেতে হয়েছিল। সেই সব পুরোনো দিনের স্মৃতির পাতা খুলে বসেছিল সেদিন পুকুর ঘাটে ফকির সাহেব এর স্ত্রী । আমি ঢাকা থেকে আজই কিছুক্ষণ আগে বাড়িতে এসেছি, সেকথা কোন ভাবেই বোঝাতে পারলাম না। অনর্গল কথা বলে যেতে লাগল। আমি বধির ব্যক্তির মতো তার মুখের দিকে তাকিয়ে শুনতে লাগলাম। 

-চাচি, তোমার ঘরে নাতি আসলো শোনলাম। তারে এবার ঘর আনতে হবে না?

-ঘরে কি করে আনবো রে বাজান। হারামজাদি তো কোনো রাস্তা রাখেনি।

-আমি তোমার নাতির ছবি দেখছি কী সুন্দর পরীর মতো মুখ। 

- তোমার ছেলে তো একটা অমানুষ, তোমরা কি তার সঙ্গে বউয়ের মতো আচরণ করছো কোনোদিন। 

ফকির সাহেবের  স্ত্রীর মুখ কালো হয়ে গেল। পৃথিবীর যে কোন মানুষকে তার মুখের সামনে সত্য কথা বললে তার মুখ মেঘের মতো কালো হয়ে ওঠে। ঠিক তেমনি ফকির সাহেবের স্ত্রীর মুখ কালো মেঘের মত হয়ে রইল কিছুক্ষণ। পরের দিন চাচি আমার খুব কাছে এসে বলল, 

-খোদার দোহাই লাগে, তোর হাত জোড় করে বলছি, আমার নাতিরে তুই এনেদে। এক নজর আমার বংশের আলো আমি দেখব। 

-এতকাল তো তোমরা বলছো বন্ধ্যা বউমা। তোমরা তো কম নাজেহাল করোনি তাকে। তোমার ছাওয়াল হয়েছে, তোমাদের দলের নেতা। চাচি একখান কথা কই, কিছু মনো কইরো না। ছাওয়াল বিয়ে করলে তাদেরকে নিজেদের মত করে সংসার করতে দেওয়া উচিত। তোমার ছাওয়াল বাড়ি আসলে, তোমার বেটি, মেয়ের জামাই তোমার বাড়ি দখল করে রাখে। তোমার বাড়িতে ঘর একটা তোমার বাড়িতে তোমার ছেলের, বউ আগে। হ্যাঁ ঠিক আছে তোমার বেটি আসবে, জামাই আসবে, থাকবে খাবে। তোমরা কি করো, বউরে পাশের রুমে রেখে তোমারা সবাই মিলে এক রুমে থাকো। এ গুলো অন্যায়। তোমরা শুধু নিজের স্বার্থ দেখছো। এমন ঠিক না চাচি। ছেলের টাকা পয়সা বউকে না দিয়ে সব সময় বেটির দিকে দেখছো কেন?’

তোমার বেটির জামাই জুয়া খেলে, মদ খায় তাকে তো একটা কাজের কথা তোমরা বলতে পারতে, নিজের বেলায় তোমরা ষোলো আনা বুঝ। 

এমন করলে তোমার সংসারে কোন বেটি সংসার করবে  কও তো দেহি? 

শিউলি ভাবি তো তাও এত বছর সংসার করছে। ছেলের মা হয়েছে, তোমরা তাকে জবরদস্তি করে বাধ্য করছো ডিভোর্স দিতে। 

-বাপ রে আমার নাতির জন্ন্যি আমার অন্তর পুড়ে তারে একবার চোখে দেখা যাতে দেখতে পারি সে ব্যবস্থা করে দে না। 

-আমার কাছে কইয়ে কি লাভ চাচি! তোমার বেটার বউ ভালো মানুষ। কেউ তো তারে কখনো খারাপ বলেনি। শুধু তোমার বেটির কথা শুনে আর এক মায়ের বেটিরে স্বামীর ভাত-কাপড় থেকে পৃথক করে দিছো। 

আমি তখন কামারহাট স্কুলে পড়তাম, ভাবি দেখতাম গরুর চাড়িতে পানি দিবার জন্য পুকুর থেকে পানি নিত, তোমার গরু বাছুর সেই তো দেখত, সংসারটা একেবারে নিজের করে নিয়েছিল কিন্তু তোমারা সবাই তার বিপক্ষে ছিলে। সংসারে নতুন বউ কী বাঘ না সাপ তার সঙ্গে সবাই মিলে কুত্তার ল্যাহান ব্যবহার করছো।


গরমে ঘেমে বৃষ্টিতে ভিজে উঠত রোদে পুড়ে সারা দিন ধান শুকাতো, সংসারী মেয়ে ছিল। তার কপালে ডিভোর্স জুটছে। যেখানে কাচ আর হিরের একই দাম হয়, সেখানে নিজেকে প্রকাশ করতে যাওয়াও একটা বোকামি।

স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে শিউলি ভাবির সেই ডাক , সেলিম স্কুলে যাবার পথে তুই আমার তেঁতুল আর একটা ডাব পেড়ে দিবি ভাই। মনে হতো এই মানুষটা আমার আপন আমার শত জনমের পরিচিত মানুষ।

আহা রে সত্যি তার এই বেদনাময় ব্যথার সাগরে ভেসে যায় না বলা কষ্টের স্রোত। আমি মনে মনে ভেবেছি, দু একের ভেতরে গিয়ে  শিউলি ভাবির হাত ধরে বলল,

-ভাবি আপনি আপনার ছেলে সহ আমার সঙ্গে চলেন। 

চাচি আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে। তাঁর নাতিকে দেখতে চায়। সাত পাঁচ ভেবে পরের দিন সকালে বাজারে যাব ঠিক সে সময় দেখলাম। আয়নাল ভাই একটা সুন্দরীর হাত ধরে বাড়ির অভিমুখে এগিয়ে আসছে, না-কি আমি ভুল দেখছি, হয়তো কোনো কোনো দেখা চোখের ভুল হতে পারে।  



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট