পদাবলি

 



গুপ্তচর

অনন্ত পৃথ্বীরাজ


মাটি সবাইকে খায় না, কফিনে বরফ আটা প্রলেপ; ওটাকে ঠিক মমি বলা যাবে না।ডিপ ফ্রিজারেটর থেকে সদ্য বের করা একটি কাটা লাশ; নিথর, ঠান্ডা, খুব শীতল। একটুও ঘ্রাণ নেই একদা বাবরি চুল ছিল; অথচ মাথা থেকে ঘিলু, চোখ সব মেডিকেলে জমা রেখে দেহ পাঠানো হয় গোরস্থানে। গভীর অন্ধকার নিঃসীম রাতে বাতাশের স্পর্শ পেয়ে ক্ষণিক লাশটি জেগে ওঠে। তারপর কবর থেকে বের হয়ে উঠে আসে মাটির পৃথিবীতে। হাত, পা, মাথারখুলি সব ঠিকঠাক অথচ চোখ, ভেতরের নাড়ি, পাকস্থলি, মাথার মগজ, রক্ত এসব কিচ্ছু নেই; নেই। শুধু হৃদয় আছে। একখানা প্রেমিক মন। আজকের এই লাশটা একদা একটা মেয়েকে ভালোবাসত। হৃদয় স্পন্দনে এখনো সেই প্রেম প্রবাহ রুধির ধারার বেগে। ভালোবাসা মৃত্যু বেদনাকে জয় করে। মনের গুপ্ত বাসনা প্রকাশ করেছিল ছেলেটা। ভালোবাসি, ভালোবাসি নিঃসীম। মানেনি তা মহাকাল। ক্ষণকালে চলে গেল সেই ভালোবাসা; গুপ্তচর।



বেয়াদব

বিটুল দেব


অসুস্থ সমাজ

তুই কবে সুস্থ হবি ?

তোদের ভদ্র সমাজে

যুক্তি তর্কে যে হেরে যায়,

সে পরাজয়ের পতাকা বহন করতে রাজি না!

বরং তরুণ অরুণকে পুরুষ্কার দাও

বেয়াদব! চরম বেয়াদব...




তোমাকে খুঁজি

মো. শাহাজাহান হোসেন


তুমি আকাশের তারা হয়ে প্রতি রাতে জ্বলো!

আমি শুধু চেয়ে থাাকি, কল্পনায় পাড়ি জমাই;

আমিও যদি তারা হতাম!

কিন্তু চাইলে কি আর তারা হওয়া যায়?


তাই শুধু অনুভবের প্রসারতা বাড়িয়ে

নিশ্চুপ আকাশের ভীড়ে তোমাকে খুঁজি!



আলোকরশ্মি 

সাদিয়া আফরিন 


আমাকে যদি বলো- সূর্য ও চাঁদের মধ্যে পার্থক্য কী?

তাহলে আমি বলবো- দুটোই এক!

যদি অবাক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করো-

‘দুটো এক কেনো?’

আমি বলবো- চাঁদ ও সূর্যে ‘আলোকরশ্মি’ থাকে;

আর সেই ‘আলোকরশ্মি’ দিয়ে আমি না হয়-

তোমার সব অন্ধকার গ্রাস করে 

তোমাকে আলোকিত করে দিলাম!


পাতা পতনের শব্দ

রফিকুল নাজিম 


পাতাদের উন্মাদনা বাড়ন্ত হয় দখিনা হাওয়ায়

দূরের বনে চলে স্বাগত কোরাস গান

পাখিদের ঠোঁটে ভীড় করে তুমুল সমৃদ্ধি

কৃষাণীর চোখে স্বর্গের ছবিখানা ছানির মত লেপ্টে থাকে

সুখ সুখ অনুভবে দোলে শরতের কাশফুল; মেঘপুঞ্জ,

বিলে শাপলার কত্থকনাচে অনিন্দ্য লাগে যাপিত জীবন। 


কেবল আমি পাতা পতনের শব্দ শুনি দূরের বনে

যেখানে তোমরা কেবলই দেখো ফুল, ফল দেখো।

অভিমানে ঝরে পড়া পাতার খোঁজ ক’জনই রাখে

অথচ হরদম পাতার গান চলে ঝরা পাতার শাখে!



ধরো আমার অন্তিম যাত্রাও তোমার দিকে

জোবায়ের সরকার

[নিবেদিত : তাসনিম ফারিয়া আশা]


ধরো, আইজ থিকা আরও কুড়ি বছর পার

এমনই বাতাস

হিম রাত

ঘেঙর ঘ্যাঙ

ব্যাঙের ডাক


ধরো

চাঁদ

কুয়াশা

অবশ হাইওয়ে


ধরো

ছুটছি

প্রিয়গান ধরে

বরাবরের মতো

তোমার দিকে


ধরো

ফোন

ক্রিং ক্রিং

ব্রেকফেইল

মৃত্যুসংবাদ হয়ে।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট